তাসকানি; ইতালির কেন্দ্রে অবস্থিত একটি অঞ্চল। অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতির প্রাচুর্যের জন্য এর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, তাসকানির ঐশ্বর্য বর্ণনায় তা যেন কমই হয়ে যায়। এটি সেই জায়গা, যেখানে জন্ম হয়েছিল ইতালীয় রেনেসাঁর। বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অনেক মনীষীই জন্মেছেন এর কোলে। বিশ্ববিখ্যাত অনেক মিউজিয়াম ও স্থাপনার পীঠস্থান তাসকানি। এই অঞ্চলটি ইতিহাসের শুরু থেকেই মোহনীয় ছিল।
রোমানরা তাসকান ভূমিকে আরো উর্বর করেছে, খ্রিস্টানরা বানিয়েছে ধর্মীয় তীর্থভূমি আর নেপোলিয়ন রাজ্যের শিল্পকর্ম জড়ো করেছেন এখানে। মধ্যযুগীয় দুর্গ, রেনেসাঁ মাস্টারপিস, গথিক ক্যাথেড্রাল, রোমাঞ্চকর হাইকিং ট্রেইল বা লোভনীয় স্বাদের খাবার- কী নেই এখানে! সকালের কুয়াশাভেজা পাহাড়, সাইপ্রাসে ছাওয়া পথ, সবুজ জলপাই বাগান আর আঙুর ক্ষেত- তাসকানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনো কবির কল্পনাকেও হার মানায়। আজ তাসকানির স্বপ্নময় ভুবনের কিছু স্থানেই হারানো যাক।
ফ্লোরেন্স
ফ্লোরেন্স তাসকানির রাজধানী। এ শহরের গোড়াপত্তন করে রোমানরা। ইতালির গুরুত্বপূর্ণ নগররাষ্ট্র ছিল ফ্লোরেন্স। চৌদ্দ থেকে ষোল শতকে শহরটি সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করে। এ সময় ফ্লোরেন্সের শাসনক্ষমতায় ছিল প্রভাবশালী মেদিচি পরিবার।
পৃথিবীর ইতিহাসে ফ্লোরেন্সের অবদান সীমাহীন। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মিকেলেঞ্জেলো, গ্যালিলিও, দান্তের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বরা। ফ্লোরেন্সেই সূচনা হয়েছিল রেনেসাঁ আন্দোলনের। শহরটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এর ক্যাথেড্রাল কমপ্লেক্সটি, যা ক্যাথেড্রাল, ব্যাপ্টিস্ট্রি, মিউজিয়াম ও বেল টাওয়ার নিয়ে গঠিত।
এখানে ইতালীয় রেনেসাঁর সেরা শিল্পীদের মাস্টারপিস দেখার সৌভাগ্য হবে আপনার। ১৩ শতকে ফ্লোরেন্সবাসী একটি চার্চ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল। ১০০ বছর ধরে পিসানো, জটোদের মতো শতাব্দীর সেরা নির্মাতাদের তত্ত্বাবধানে চললো নির্মাণকাজ। ১৫ শতকে ব্রুনোলেস্কি ফ্লোরেন্সের আকাশে আধিপত্য বিস্তার করা চোখধাঁধানো লাল গম্বুজটি নির্মাণ করেন। এটি এখনও স্থাপত্যজগতের এক বিস্ময়।
বিভিন্ন রঙের মার্বেলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথটি নির্মিত হয় ১৮ শতকে। চার্চের অভ্যন্তরের জৌলুসও কম নয়। সুসজ্জিত জানালা ও মনোহর কাচের সজ্জা আপনার নজর কাড়বে। এছাড়া রয়েছে নানারকম শিল্পকর্মের সংগ্রহ। ব্রুনোলেস্কির গম্বুজের পর ফ্লোরেন্সের দ্বিতীয় প্রধান ল্যান্ডমার্ক জটো কম্প্যানাইল- ৮১ মিটার উঁচু বেল টাওয়ার। এটি ক্যাথেড্রালের প্রবেশপথের সাথেই লাগানো। এরপর আসা যাক সেইন্ট জনের ব্যাপ্টিস্ট্রির প্রসঙ্গে। এটি মূলত একটি রোমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত। ঊনিশ শতকের শেষ অবধি শহরের সব ক্যাথলিকের ব্যাপটিজম সম্পন্ন হতো এখানে। তিনটি বিশাল দরজা ও তাদের বিচিত্র সজ্জার জন্য এই ভবনটি বিখ্যাত। অতীতের সেরা নিদর্শনগুলো দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে উফিজি গ্যালারিতে। ইউ আকৃতির এই প্রাসাদটি জর্জিও ভাসারির তৈরি।
মেদিচিদের প্রাসাদের একাংশকে ১৫৯০ সালে ব্যক্তিগত প্রদর্শনীতে পরিণত করা হয়। তারপর থেকেই এটি পরিণত হয়েছে প্রাচীন সব চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের বিশ্বস্ত সংগ্রহশালায়। বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে গ্যালারিতে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে রয়েছে গ্রিক ও রোমান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মধ্যযুগীয় অংশে মধ্যযুগের চিত্রকর্ম ও রেনেসাঁ অংশে রেনেসাঁ যুগের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। ফ্লোরেন্সে গেলে আপনাকে গ্যালারি দেল একাদেমিয়াতে যেতেই হবে। এটি দর্শকদের স্বাগত জানায় হল অব কলোসাস দিয়ে। এর কেন্দ্রে রয়েছে মার্বেলের ভাস্কর্য জাম্বোগনা’স রেইপ অভ স্যাবাইন উইমেন। এই হলে হাঁটার সময় আপনার দৃষ্টি গিয়ে পড়বে বেশ কিছু প্যানেল পেইন্টিংয়ের উপর। তারপর আপনি প্রবেশ করবেন সমৃদ্ধ রেনেসাঁ সংগ্রহশালায়। তবে গ্যালারির সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ হল অভ প্রিজনার। এখানেই রয়েছে মিকেলেঞ্জেলোর বিখ্যাত ভাস্কর্য ডেভিড।
গথিক পেইন্টিং রয়েছে আলাদা একটি অংশে। ১২৯৯ সালে ফ্লোরেন্সের অধিবাসীরা তাদের প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে একটি ভবন নির্মাণ করতে চাইল। শহরের চত্বরে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মেদিচিরা পরে এটাকে বাসভবন বানায়। পিটি প্রাসাদে মেদিচিদের বাসভবন স্থানান্তরের আগপর্যন্ত এটাই ছিল তাদের বাসভবন। পরে ভবনটির নামকরণ করা হয় পালাজো ভেক্কিও। এটি এখন টাউনহল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর একটি।
ফ্লোরেন্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক পন্টে ভেক্কিও। আর্নো নদীর উপর তৈরি সেতু। সেতু বলা হলেও আদতে সেতুর মতো দেখায় না এর উপরে নানারকম দোকানপাট তৈরি হওয়ার কারণে। ১৪ শতকে দোকানগুলো কসাইদের দখলে থাকলেও এখন সেখানে স্বর্ণকারদের আধিপত্য। দূর থেকে দেখতে পন্টে ভেক্কিও অসাধারণ সুন্দর।
পিসা
পিসা ইতালির পশ্চিম তীরে অবস্থিত। আয়তনে ছোট হলেও এটি ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নগর। খ্রিস্টীয় ১১ শতকে নির্মিত অবকাঠামোগুলো এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পিসার বন্দর এর অর্থনীতির সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে।
পিসার সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা সম্ভবত এর হেলানো মিনার। মিনারটি ক্যাথেড্রাল কমপ্লেক্সের বেল টাওয়ার। তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণের পর মিনারটি ডানদিকে পাঁচ ডিগ্রি বেঁকে যায় নিচের মাটির অস্থিতিশীলতার কারণে। পরে একে সোজা করে নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মিনারটি বাঁকতেই থাকল। পরে অবশ্য হেলা কিছুটা কমে।
মিনারের পাশেই ক্যাথেড্রাল। এটি রোমান রীতিতে তৈরি সাদা মার্বেল পাথরের ব্যাসিলিকা। ১০৬০ সালে পিসার নৌবাহিনী আরবদের পরাজিত করার পর এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর দেয়ালে দেয়ালে রয়েছে সুসজ্জিত তোরণ। ক্যাথেড্রালের পশ্চিমে ব্যাপ্টিস্ট্রি। মার্বেলপাথরে নির্মিত হলেও স্থাপত্যরীতির দিক থেকে এটি গথিক।
পিসার আরেকটি অনবদ্য আকর্ষণ বিশালাকৃতির মঠ ক্যাম্পোজেন্টো বা স্যাক্রেড ফিল্ড। কথিত আছে, চতুর্থ ক্রুসেড থেকে ফেরার পথে এক আর্চবিশপ গলগাথা থেকে জাহাজভর্তি পবিত্র মাটি নিয়ে আসেন, যেন পিসাবাসী সে মাটিতে সমাহিত হতে পারেন। সেই মাটি নিয়েই স্যাক্রেড ফিল্ড। মিউজিয়ামের মধ্যে আছে মিউজি ন্যাজিওনেল। বিভিন্ন চার্চ থেকে সংগ্রহ করা নানা প্রত্ন-উপাদান আশ্রয় পেয়েছে এখানে। পালাজ্জো দে ক্যাভেলরি পিসার আকর্ষণীয় ভবনগুলোর একটি। সুসজ্জিত প্রবেশপথ ও দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি সম্বলিত এ ভবনে একসময় নাইটদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
সিয়েনা
সিয়েনা শহরটি ফ্লোরেন্সের দক্ষিণে অবস্থিত। ইতিহাসের পুরোটা জুড়ে ক্ষমতা ও সম্পদের দিক থেকে ফ্লোরেন্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সিয়েনা। পুরোনো সিয়েনার প্রধান আকর্ষণ এর প্রশস্ত নগরচত্বর পিয়াজ্জা দেল ক্যাম্পো। প্রাসাদসমূহের রাজকীয় প্রবেশপথ আর নান্দনিক পালাজ্জো পাবলিকার সাদা চূড়ার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই চত্বরটি ইতালির সেরা নগরচত্বর।
পালাজ্জো পাবলিকা বা টাউন হলের ভেতরের ফ্রেসকোতে ফুটে উঠেছে ১৪ কিংবা ১৫ শতকের বাগা পরিবারের গল্প। টাউনহলের বাহ্যিক সৌন্দর্য অনন্য। মনোহর জানালার সারি ও ইট-নির্মিত প্রবেশপথ এর শোভা বাড়িয়েছে। পালাজ্জো পাবলিকার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে সরু টাওয়ার টরে দেল ম্যাঞ্জা। ইটের টাওয়ারের চূড়ায় আছে শত্রুর বুকে গুলি চালানোর ব্যবস্থা। সিঁড়ি বেয়ে টাওয়ারের মাথায় উঠলে চোখে পড়ে পাহাড়ঘেরা তাসকানির চমৎকার দৃশ্য।
জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত হয় ঘোড়দৌড়। পালাজ্জো দেল ক্যাম্পোতে দশটি ঘোড়া একসাথে দৌড়ায়। এ সময় কস্টিউম পরা বাদকদলের বিচিত্র যন্ত্রসঙ্গীতে মুখরিত থাকে চত্বর। এমনকি বর্মসজ্জিত নাইটদেরও দেখা মেলে এখানে। সিয়েনার গথিক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ক্যাথেড্রাল অভ সান্তা মারিয়া আসুন্তা। গাঢ় ও হালকা মার্বলের স্ট্রাইপে সজ্জিত এর বহির্ভাগ। ভেতরে ঠাঁই পেয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান শিল্পকর্ম।
কর্টনা
দক্ষিণ তাসকানির আরেজ্জো প্রদেশে অবস্থিত ছোট্ট শহর কর্টনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দেয়ালঘেরা শহরটির একনজর দর্শন এর রোমান ও এট্রুসকান অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। কথিত আছে, এ শহর প্রতিষ্ঠা করেন ট্রয়ের প্রতিষ্ঠাতা দার্দানেস। ছোট হলেও কর্টনা আকর্ষণীয়। ডায়োসিসে মিউজিয়ামে বিয়াতো এঞ্জেলিকোর প্যানেল পেইন্টিং দেখার মতো। এট্রুসকান একাডেমি মিউজিয়ামে এট্রুসকান অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খু্ঁজে পাওয়া যায়। পাহাড়ের উপর রয়েছে সান্তা মার্গারিটা স্যাংচুয়ারি ও গিরিফ্যালকো দুর্গ।
শহরের দেয়ালপার্শ্বের পথ ধরে হাঁটার সময় চোখে পড়বে আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের নজরকাড়া দৃশ্য। কর্টনার দেয়ালের ঠিক বাইরেই পাবেন সেইন্ট ফ্রান্সিসের মঠ। শহরের সরু গলি দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়বে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য- রঙিন দরজা, লতায় ছাওয়া দেয়াল, নান্দনিক সব সজ্জা। গলির দেয়ালগুলোরও যেন বলার মতো গল্প আছে।
আরেজ্জো
আরেজ্জো শহরটি আরেজ্জো প্রদেশের রাজধানী। শহরটির গুরুত্ব বুঝতে হলে ফিরে তাকাতে হবে এর ইতিহাসের দিকে। প্রথমদিকে এটি ছিল একটি প্রধান এট্রুসকান নগররাষ্ট্র। তারপর একসময় গুরুত্বপূর্ণ রোমান বন্দর হয়ে ওঠে। মধ্যযুগে ছিল স্বাধীন। ১৪ শতকে ছিল ফ্লোরেন্সের অধীনে। এই ছোট্ট জায়গাতে প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন মিলেমিশে একাকার। শহরের প্রধান চত্বর পিয়াজ্জা গ্রান্ডে।
এখানে নানারকমের ক্যাফে-রেস্তোরাঁর ছড়াছড়ি। একধরনের মধ্যযুগীয় আবহ আছে ভবনগুলোতে। শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে আছে গথিক ক্যাথেড্রাল। পিয়েরো দেলা ফ্রান্সেসকাতে রয়েছে মেরি ম্যাগদালিনের ফ্রেসকো। ভাসারির রেনেসাঁ আমলে নির্মিত বাড়িটি দেখতে ভুলবেন না। বাড়ির আর্কাইভে আছে মিকেলেঞ্জেলোর চিঠি।
লুকা
এট্রুসকান শহর লুকা পিসার কাছাকাছি অবস্থিত। একসময় লুকা ছিল নেপোলিয়নের অধীনে। লুকার সবচেয়ে বিখ্যাত আকর্ষণ শহরের পুরনো দেয়াল। দেয়াল ধরে হাঁটতে থাকলে চোখে পড়ে লুকার অনেক লুকানো সৌন্দর্য- পুরোনো দুর্গ, পিকনিক গ্রাউন্ড, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি। হাঁটা শেষে আপনি প্রবেশ করবেন শহরের কেন্দ্রে। ‘শত চার্চের শহর’ নামে লুকার পরিচিতি আছে। ক্যাথেড্রাল অভ সেইন্ট মার্টিনটা ট্রেন স্টেশনের পাশেই।
সেইন্ট মার্টিন স্কয়ারে আছে আরেকটি চার্চ, সেইন্ট মিশেল চার্চ। বিখ্যাত লুকা স্ট্রিট ধরে হাঁটলে শহরের দর্শনীয় সব দোকানপাট পেয়ে যাবেন। লুকার কেন্দ্রে রয়েছে চোখ ধাঁধানো ব্যাসিলিকা দি স্যান মিচেলে ইন ফোরো। টরে দেল ওরে টাওয়ারটি ১৪ শতকে নির্মিত দুর্গ ও ক্লক টাওয়ার। তবে লুকার সবচেয়ে সুন্দর আর আইকনিক টাওয়ার গুইনিজি টাওয়ার। ৪৫ মিটার উঁচু ইট-নির্মিত গথিক এই টাওয়ারের মাথায় হোম আর ওকের জঙ্গল দূর থেকে চোখে পড়ে।
এলবা
এলবা তাসকান দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। অন্যান্য আটটি দ্বীপ ও এলবা মিলে গঠন করেছে ন্যাশনাল পার্ক অভ তাসকান আর্কিপালাজো। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় মেরিন পার্ক। এলবা বিখ্যাত নেপোলিয়নের কারণে। ফরাসি সম্রাটকে ১৮১৪ সালে এখানে নির্বাসিত করা হয়।
একসময় এট্রুসকান ও রোমান নিবাস ছিল দ্বীপটিতে। এলবার গৌরবোজ্জ্বল অতীতের স্মারকের দেখা মেলে এর দুর্গ ও জাদুঘরগুলোতে। স্ফটিকস্বচ্ছ নীল জল আর মনোমুগ্ধকর সমুদ্রসৈকতের জন্য এলবা অনন্য। আউটডোর স্পোর্টসের জন্য সেরা জায়গা এটি। ডাইভিং ও স্নোরকেলিং করে সামুদ্রিক জীবন দেখার সুযোগ পাবেন এখানে। থার্মাল বাথে স্নানটাও সেরে নেয়া যেতে পারে।
তাসকানির গ্রামাঞ্চল
তাসকানির গ্রামের কথা ভাবলেই মাথায় আসে ঢেউ খেলানো উঁচু-নিচু পাহাড়, জলপাই বাগান, সারি সারি সাইপ্রাস গাছ, আঙুরক্ষেত, পাহাড়ের পটভূমিতে ছবির মতো সুন্দর খামারবাড়ি আর প্রাচীন দুর্গ। তাসকানির এই গ্রামগুলোতে বিস্ময়কর প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান ছড়িয়ে আছে। শত বছরের পুরোনো সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত এ সৌন্দর্য অবলোকন করতে আপনি পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে বা বাইকে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
তবে তাসকানির সব রঙকে কাছ থেকে দেখার সবচেয়ে ভালো উপায় পদব্রজে যাত্রা। কিয়ান্টি উপত্যকায় পা রাখতে ভুলবেন না। এর বন, আঙুর বাগান, গ্রাম সবকিছুরই অনবদ্য আকর্ষণ রয়েছে। তাসকানির গ্রামে আপনার হতে পারে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা। জলপাই মৌসুমে গেলে চাষীদের সাথে জলপাই তুলতে পারবেন। কিয়ান্টিতে তাসকান কুইজিনের রান্না শিখতে পারবেন। তাসকানির গ্রামে গেলে পাখির গান শুনুন, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনুন। দিগন্তবিস্তৃত মাঠের বিশালতাকে অনুভব করুন।