পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলছেন একটা একটা করে। মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে তৈরি হয়েছে আপাত কার্যকর ভ্যাক্সিন। এখনো বাকি আছে বেশ কিছু নিরাপত্তা পরীক্ষা, এইসব ভ্যাক্সিন যখন সব নিরাপত্তা পরীক্ষায় উৎরে যাবে তখন একে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে এর সাফল্য ততই বাড়বে। কারণ একটি ভ্যাক্সিন একটি সমাজের যত বেশি মানুষকে পৌঁছানো সম্ভব হবে ততই নতুন সংক্রমণের হার এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার কমবে। ফলে ভাইরাসটিকে মোকাবেলা করা অনেকটি সহজ হয়ে আসবে।
কিন্তু সমাজের বিশালসংখ্যক মানুষের কাছে ভ্যাক্সিন পৌঁছানোর পথে আছে অনেক বাঁধা। এর মাঝে একটি হলো ‘কোল্ড-চেইন’ এর বাধা, অর্থাৎ বেশিরভাগ ভ্যাক্সিনকেই সংরক্ষণ এবং পরিবহন করতে হয় অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায়।
ভ্যাক্সিন কোথাও উৎপাদন হলে, উৎপাদনের পর থেকে সংরক্ষণ এবং ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয় নিম্ন তাপমাত্রার ফ্রিজে। উন্নয়নশীল দেশ তো বটেই অনেক উন্নত দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও অবকাঠামোগত বাধা আছে, তবে উন্নত দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংস্থা পরিচালিত ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্রগুলো আশার জায়গা হয়ে উঠতে পারে। তবে উন্নয়শীল দেশ এবং অনুন্নত দেশে যেখানে এই অবকাঠামোর বিশাল সংকট সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে ভ্যাক্সিন পৌঁছাবার প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারে এই ‘কোল্ড-চেইন’ সংক্রান্ত বাধা।
হাতে আছে কয়টি ভ্যাক্সিন?
ভ্যাক্সিনের সাফল্যের দিক থেকেও এগিয়ে আছে আমেরিকান ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি ফাইজার আর জার্মান কোম্পানি বায়োন্টেকের সম্মিলিত একটি ভ্যাক্সিন। আমেরিকান আরেকটি কোম্পানি মডার্নার ভ্যাক্সিনও প্রায় দৌড়ে একই অবস্থানে আছে। তাদের চালানো পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে দুইটি ভ্যাক্সিনই আপাতভাবে নব্বই শতাংশের উপরে কার্যকরী। তবে দুইটি ভ্যাক্সিনকেই রাখতে হবে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায়।
আশা জাগানো ফাইজার-বায়োন্টেকের ভ্যাক্সিন
তথ্য উপাত্ত অনুসারে ৯৫ শতাংশ কার্যকর ফাইজার-বায়োন্টেকের ভ্যাক্সিনটিকে রাখতে হবে হিমাংকের নিচে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং অন্য সব গবেষণা বলছে, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নিতে হবে দুইটি ডোজ। -৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার অবকাঠামো বা ফ্রিজার নিয়ে রয়েছে শঙ্কা, কারণ ভোক্তা পর্যন্ত পরিবহনকালে এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পৌঁছাতে না পারলে এই ভ্যাক্সিনের পুরো প্রক্রিয়াটি বৃথা যাবার সম্ভাবনা আছে। পৃথিবীতে যে কয়টি ভ্যাক্সিনকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কোনোটিরই এত নিম্ন তাপমাত্রা দরকার ছিল না। পাশাপাশি অতি নিম্ন তাপমাত্রার জিনিসপত্র ব্যবহার করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের দরকার হতে পারে সময়সাপেক্ষ প্রশিক্ষণের, তাই এইখানেও রয়েছে বড় বাঁধা।
এই সমস্যা কিছুটা দূর করতে ফাইজার অভিনব একটি পরিবহন বাক্সের চিন্তা করছে, যেখানে বিশেষায়িত ‘ড্রাই-আইস’ ব্যবহার করে পরিবহন করা যাবে। বিশেষ করে বিমানে এবং গাড়িতে করে লম্বা দূরত্বে পাঠাবার জন্য এই ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছে তারা, এভাবে অবশ্য দশ দিনের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে না, আবার মধ্যবর্তী সময়ে কোনোভাবেই একে খোলা যাবে না। এরপর বিমান থেকে নামিয়েই তাকে পাঠাতে হবে -৭০ ডিগ্রিত ফ্রিজে, সেখানে রাখা যাবে ছয় মাস পর্যন্ত। সেখান থেকে আবার ড্রাই আইস প্যাকে করে দূরের ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্রে দশদিনের মাঝেই পাঠাতে হবে। সেখানের সাধারণ ফ্রিজে যার তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি থেকে আট ডিগ্রির মাঝে, সেখানে পাঁচদিনের মাঝেই ভ্যাক্সিনটি প্রয়োগ করতে হবে, অন্যথায় কার্যকর থাকবে না এটি।
তবে ফাইজারের মতে এই ড্রাই-আইসের বাক্সগুলো পুনরায় ব্যবহারযোগ্য, জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করে কোথায় কত ডোজ যাচ্ছে হিসেব করা যাবে। পাশাপাশি বাক্সগুলো ব্যবহার শেষে ফিরিয়ে এনে আবার কাজে লাগানো যাবে। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের এই তাপমাত্রা এবং বিশেষায়িত ভ্যাক্সিনগুলো দেওয়ার প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি থেকেই যায়। কোভিড-১৯ মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তাই এইদিকে মনোযোগ দিতে হবে বলে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটু আশা দেখাবে কি?
ফাইজারের ভ্যাক্সিনের মতোই মডার্নার ভ্যাক্সিনের সাফল্যের হারও প্রায় নব্বই শতাংশের ঘরে। কাগজে কলমে ত্রিশ হাজার মানুষের মাঝে ট্রায়াল করে এর আপাত সাফল্যের হার পাওয়া গেছে ৯৪.৫ শতাংশ। ফাইজারের মতো এই ভ্যাক্সিনটিও আবেদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এফডিএ’র কাছে, ‘জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায়’ ব্যবহারে অনুমোদন পাওয়ার লক্ষ্যে। তবে আশার কথা এই ভ্যাক্সিনকে প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণ এবং পরিবহন করতে হবে -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই তাপমাত্রায় রাখা যাবে প্রায় ছয়মাসের মতো। স্থানীয় ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্রগুলোর ফ্রিজ যার তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি থেকে আট ডিগ্রির মাঝে, সেখানে রাখা যাবে ত্রিশ দিনের মতো। ফাইজারের মতো এই ভ্যাক্সিনেরও দুইটি ডোজ নেওয়া জরুরী বলে জানিয়েছে তারা।
তাই ফাইজারের ভ্যাক্সিনের চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে এই ভ্যাক্সিনটি, আর বিশ্ববিদ্যালয় বা বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাদেও স্বাস্থ্যসেবার অনেক প্রতিষ্ঠানেই -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ফ্রিজ কিংবা অবকাঠামো ইতোমধ্যেই আছে, অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর এই তাপমাত্রায় কাজ করা বা ভ্যাক্সিন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও আছে। তাই মডার্নার ভ্যাক্সিন নিয়ে আশা দেখছেন অনেকেই।
অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সিন আছে আরেকটু এগিয়ে
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সিন নিয়েও প্রাথমিক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে এই ভ্যাক্সিন সত্তর শতাংশের মতো কার্যকর। কিন্তু এই ভ্যাক্সিনকেও দুই ডোজ দেওয়া হলে নব্বই শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা দেখাতে পারে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনের বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন, বিশেষ করে কয়টি ডোজ দিলে সবচেয়ে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যেতে পারে এই নিয়ে।
তবে এই ভ্যাক্সিনের সবচেয়ে আশার দিকটি হলো একে সংরক্ষণ করা যাবে সাধারণ ফ্রিজেই। আর কোল্ড-চেইনের দরকার পড়ছে না বলে এই ভ্যাক্সিন ফাইজার আর মডার্নার চেয়ে কয়েকগুণ সস্তা হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মহামারির শুরু থেকেই এস্ট্রাজেনেকা ঘোষণা দিয়েছিল তারা এই ভ্যাক্সিন থেকে উচ্চ মুনাফা করতে আগ্রহী না বরং তাদের লক্ষ্য কীভাবে বেশি মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া যায়। ইতোমধ্যেই ইংল্যান্ডের সরকারের পক্ষ থেকে এই ভ্যাক্সিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজের সরবরাহের জন্য এস্ট্রাজেনেকাকে নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়েছে। এস্ট্রাজেনেকা আশাবাদী যে ২০২১ সালের মধ্যেই হয়তো তারা তিন বিলিয়ন ডোজ তৈরি করে ফেলতে পারবে।
যেখানে আলাদা ভ্যাক্সিনগুলো
মূলত ফাইজার-বায়োন্টেক এবং মডার্নার ভ্যাক্সিন দুইটি ‘এমআরএনএ-ভিত্তিক’ ভ্যাক্সিন। এখানে আসলে ভ্যাক্সিন গ্রহীতাদেরকে মূলত ‘এমআরএনএ’ নামের একটি জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল ইনজেকশনের মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হবে। এই এমআরএনএ-তে থাকা নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দেহের কোষ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রোটিন বানাবে। এই প্রোটিনের বিরুদ্ধে আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সজাগ হয়ে উঠবে, চিনে রাখবে তার প্রতিপক্ষকে, দুইটি ডোজ নিলে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সজাগ অবস্থায় থাকবে।
সুতরাং, আসল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি যখন আমাদের দেশে প্রবেশ করবে তখন তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই সজাগ তাই সে বেশি সুরক্ষা দিতে পারবে। ফাইজার বা মর্ডার্না এই ভ্যাক্সিন যদি অনুমোদন দেওয়া হয় এবং লম্বা দৌড়ে কার্যকর প্রমাণিত হয় তাহলে এটি হবে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ‘এমআরএনএ-ভিত্তিক’ ভ্যাক্সিন। এখন বিজ্ঞানীদের দেখার পালা কত দীর্ঘমেয়াদে এই ভ্যাক্সিন কার্যকর থাকে।
তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে অন্য একটি প্রক্রিয়া। অক্সফোর্ডের গবেষকরা একটি ভেক্টর বা বহনকারী ভাইরাস তৈরি করেছেন যার নাম দেওয়া হয়েছে ChAdOX1- Chimpanzee Adenovirus Oxford one। শিম্পাঞ্জির কাছ থেকে নিয়ে ল্যাবে একে ভেক্টর বা বহনকারী হিসেবে বানানো হয়েছে। এই বহনকারী ভেক্টরকে বলা হচ্ছে আণুবীক্ষণিক এবং উচ্চসংবেদনশীল জৈব বাহক, যেটির ডিজাইনে সামান্য পরিবর্তন করে বারবার বিভিন্ন মহামারি সৃষ্টিকারী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইন্সটিটিউটে এই কাজটি কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। ২০১৪-১৬ সালে ইবোলা মহামারি চলাকালীন এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল, এমন একটি ভেক্টর যদি বানানো যায় যাকে ক্ষুদ্র পরিবর্তন করেই বারবার দ্রুত একটি ভ্যাক্সিন বানানো যাবে। অক্সফোর্ড এবং এস্ট্রাজেনেকার সমন্বয়ে এই প্রক্রিয়াটি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে ব্যাপক গতিশীলতা পেয়েছে, বিশ্বজুড়ে সবার চেয়ে বেশি গণমাধ্যমের মনোযোগও পেয়েছে এটি। কিছু গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞ মতামত বলছে এই ভ্যাক্সিনটি ‘এমআরএনএ-ভিত্তিক’ ভ্যাক্সিনের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে কার্যকর প্রতিরক্ষা দিতে সম্ভব। তবে সবই বুঝা যাবে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে।
তবে আপাতত কোল্ড-চেইনের দরকার পড়ছে না বলে এগিয়ে আছে এই ভ্যাক্সিনটি। একই ধরনের ভেক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ এও, এই ভ্যাক্সিনের কার্যকরীতাও ৯২ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে, তবে এ সংক্রান্ত অনেক তথ্যই এখনো অবমুক্ত করা হয়নি। তাই গবেষকরা বলছেন, যদি পরীক্ষা নিরীক্ষার বাধা পেরিয়ে অক্সফোর্ড এবং রাশিয়ার ভ্যাক্সিন দুইটি বাজারে আসতে পারে তবে এই দুইটি ভ্যাক্সিনের সফলতার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশেই রয়েছে কোল্ড-চেইনের অভাব।
কোল্ড চেইনের কেন বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে?
ভ্যাক্সিন নিয়ে পৃথিবীতে যারা কাজ করছেন সেই বড় সংস্থাগুলো বলছে, উন্নয়শীল দেশের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোগুলোতে কোল্ড চেইন চালাবার মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবাই নেই। আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় ৭০ শতাংশের উপরে স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সেবা নেই, বাংলাদেশের দিকে তাকালেও দেখা যাবে প্রায় একই অবস্থা। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই নেই পর্যাপ্ত ফ্রিজ এবং বিদ্যুৎ সেবা। এছাড়াও আছে প্রাকৃতিক বাধা যেমন চরাঞ্চল, দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন এলাকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে উৎপাদনের স্থান থেকে দূরে পাঠানো ভ্যাক্সিনের ৫০ শতাংশের বেশি শুধুমাত্র পরিবহন এবং সংরক্ষণকালে নষ্ট হয়ে যায় সঠিক তাপমাত্রায় রাখার অভাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সমস্যার সমাধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা মিলে সৌরশক্তি চালিত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এই অবকাঠামোর বেশিরভাগেই তাপমাত্রা রাখা হয়েছে সাধারণ ফ্রিজারের কাছাকাছি অর্থাৎ শুন্য থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। অর্থাৎ এখানে সাধারণ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দ্রব্যের পাশাপাশি অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনটিকেও রাখা যাবে। আরেকটি হলো অর্থনৈতিক বাঁধা, ভ্যাক্সিন নিয়ে রাজনীতি এবং বৈষম্যের নতুন যুগ হয়তো আমরা আগামী দিনে দেখতে যাচ্ছি। যেখানে উৎপাদক দেশ তার সব নাগরিককে সরবরাহের আগে বাইরে পাঠানোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
সেটি থেকে মুক্তি পেলে আসবে খরচের বিষয়টি, কোল্ড-চেইন অবকাঠামো চালাতে গেলে ভ্যাক্সিনের খরচও বেড়ে যায় বহুগুণে। সেক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো ফাইজার কিংবা মডার্নার ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহী হবে কিনা তাও একটি প্রশ্নের ব্যাপার। তাই অক্সফোর্ড কিংবা রাশিয়ার স্পুটনিক কার্যকরী হয়ে উঠলে দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারে এবং এই ভ্যাক্সিনের উপর চাপও বাড়তে পারে। তাই কয়েকটি কার্যকর ভ্যাক্সিন বাজারে পাওয়া গেলে মানুষের হাতে সুযোগ থাকবে বেশি, চাপ কমে আসবে কোনো একক কোম্পানির উপর, পাশাপাশি উচ্চ দাম হাঁকানোর সুযোগটিও সীমিত হয়ে আসবে।