একজন মাকে নয় মাস গর্ভধারণ ও এরপর সন্তান প্রসবকালীন সময়ে যে পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তার সাথে পৃথিবীর অন্য কোনো কষ্টেরই তুলনা চলে না। এবং এই কষ্ট তো কেবল দীর্ঘ এক পথচলার শুরু মাত্র। সন্তানকে লালন-পালন ও মানুষের মতো মানুষ করতে মায়ের কষ্টের যেন কোনো ইয়ত্তা নেই। সন্তানকে ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় করে তুলতে একজন মা তার জীবনের বাদবাকি সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশকেই উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন।
তবে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে একজন মায়ের জন্য সবচেয়ে দুরূহ কাজ কোনটি? জানি, অনেকগুলো সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যাবে। সেগুলোর মধ্যে কোনটি যে আদতেই সবচেয়ে কঠিন, তা হয়তো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে না কোনোদিনই। তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলা যায়, দুরূহ কাজগুলোর তালিকায় একটি কাজের উল্লেখ অবশ্যই থাকবে। সেটি হলো: নবজাতককে ঘুম পাড়ানো।
সন্তান জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস একজন মা মাত্রাতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এই প্রথম কয়েক মাসেই নবজাতকের ঘুমের রুটিন সবচেয়ে বেশি অনিয়মিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সারাদিন ঘুমিয়ে মাঝরাতে জেগে উঠছে সে। কিংবা প্রচন্ড কান্না করছে। আর সন্তানের শরীরে কোনো জটিলতা হলো কি না, তার কোথাও কষ্ট হচ্ছে কি না, এ নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন তার মা।
সারাদিন তিনি সন্তানের দেখভাল, সংসারের কাজ ও অন্যান্য সকল দায়িত্ব তো সামলেছেনই, এবং মাঝরাতে সন্তান জেগে উঠলে, তখন তাকে ঘুম পাড়ানোর লক্ষ্যে মা তার নিজের ঘুম ও বিশ্রাম বিসর্জন দিয়ে দেন। ফলে ইতিমধ্যেই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে মায়ের দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া শরীরের আরও অবনতি হতে থাকে।
তবে নবজাতকের ঘুমের ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক তথ্য জানা থাকলে, মায়েদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারে; সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রাতের বেলা সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে তারা নিজেরাও একটু ঘুমিয়ে নিয়ে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নিতে পারেন। সেটি নিশ্চিত করতেই আমাদের এই প্রয়াস। তাই চলুন, আর দেরি না করে জেনে নিই নবজাতকের ঘুমের আদ্যোপান্ত।
নবজাতকের ঘুমের সাধারণ প্যাটার্ন
নবজাতকেরা প্রচুর ঘুমিয়ে থাকে – সাধারণত দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে অধিকাংশ নবজাতকই জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ একটানা বেশিক্ষণ ঘুমায় না। দুই ঘণ্টা থেকে বড়জোর চার ঘণ্টা অবধি ঘুমানোর পরই জেগে যায় তারা।
আর এর ফলাফল? নবজাতক অনিয়মিতভাবে হলেও প্রতিদিন লম্বা সময় ঘুমিয়ে কাটায়, কিন্তু সেটির সাথে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে না পারার ফলে ঘুমের পরিমাণ কমে যায় তার মায়ের। দৈনিক পর্যাপ্ত যে পরিমাণ ঘুম তাদের প্রয়োজন, সেটুকু ঘুমাতে পারেন না তারা। সারাদিন তো তারা সন্তানের পেছনে ব্যয় করেনই, পাশাপাশি রাতেও সন্তান জেগে গেলে সাথে সাথে জেগে যেতে হয় তাদেরও। তাছাড়া এমনিতেও কিছুক্ষণ পর পর উঠে সন্তান শ্বাস নিচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হয়, সন্তানকে দুধ খাওয়াতে হয়, এবং প্রয়োজন বোধে সন্তানের কাপড় পরিবর্তনও করে দিতে হয়।
কেন নবজাতকের ঘুমের প্যাটার্ন অনিয়মিত ও অননুমেয়?
নবজাতকের ঘুমের চক্র প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে ঢের সংক্ষিপ্ত থাকে। এছাড়া নবজাতকেরা ঘুমের মধ্যে বেশিরভাগ সময় চোখের পাতা হালকা নাড়াতে থাকে। এর কারণ, তখন তাদের হালকা ও অগভীর, র্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম) ঘুম হয়। নবজাতকের মস্তিষ্কের বিকাশে এটি খুবই প্রয়োজনীয়।
নবজাতকের জন্য ঘুমের এই অনিয়ম ও অননুমেয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফেজ, এবং এটি খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। সাধারণত জন্মের ছয় সপ্তাহ পর থেকেই নবজাতকের ঘুমের রুটিন নিয়মিত হয়ে উঠতে শুরু করে।
কখন থেকে শিশু একটানা লম্বা সময় ঘুমাতে শুরু করবে?
৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়স থেকেই অধিকাংশ শিশু দিনের বেলা অপেক্ষাকৃত কম সময়, এবং রাতের বেলা অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ঘুমাতে শুরু করে। অবশ্য বেশিরভাগ শিশুই রাতের বেলা খিদে পেয়ে জেগে ওঠা অব্যহত রাখে। তবে এই সময় থেকেই তাদের আরইএম ঘুমের পরিমাণ হ্রাস পায়, এবং তারা নন-আরইএম, গভীর ঘুম ঘুমাতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অধিকাংশ শিশুই রাতের বেলা একটানা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমানোর ক্ষমতা অর্জন করে। কিছু কিছু শিশু হয়তো মাত্র ৬ সপ্তাহ বয়স থেকেই এই অসামান্য সাফল্য লাভ করে, তবে বেশিরভাগ শিশু এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ৫ থেকে ৬ মাস লাগিয়ে ফেলে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কিছু কিছু শিশু এমনকি তাদের হামাগুড়ি দেয়ার বয়সেও রাতের বেলা জেগে থাকার ‘বদভ্যাস’ ধরে রাখে।
যেভাবে এই ‘বদভ্যাস’ থেকে শিশুকে বিরত রাখা যায়
কোনো শিশু যদি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পরও রাতের পেঁচা হয়ে থাকা বন্ধ না করে, তাহলে কী করা যাবে? তাকে গালমন্দ করে তো লাভ নেই, কারণ তাতে তার কিছুই এসে যাবে না! এমনকি ভাগ্যকে দোষারোপ করেও এক্ষেত্রে লাভ নেই। বরং ওই যে কথায় আছে না, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর, শিশুর ঘুমের ক্ষেত্রেও একই কথাই প্রযোজ্য। শিশু যাতে রাত জেগে থাকার বদভ্যাসটি আয়ত্ত করে না ফেলে, সেজন্য আগে থেকেই সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। কী কী ব্যবস্থা? বলছি, শুনুন!
শিশুকে শব্দের সাথে মানিয়ে নেয়া শেখান: অনেক মা-ই মনে করেন, তার বাচ্চা যখন ঘুমাবে, তখন চারিদিকে পিনপতন নীরবতা জারি রাখতে হবে। কোথাও এতটুকু শব্দ হওয়া চলবে না। এটি খুবই ভুল ধারণা। জন্মের পর থেকেই যদি নবজাতক একদম নিস্তব্ধতার মাঝে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে সেই অভ্যাস ছাড়ানো খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। এর চেয়ে বরং ভালো হয়, যদি নবজাতক ঘুমানোর সময় আশেপাশে হৈ-হট্টগোল না হলেও, স্বাভাবিক আওয়াজগুলো যেন বন্ধ করা না হয়। তাহলে নবজাতক শব্দের মাঝে ঘুমানো শিখে যাবে, ফলে পরবর্তীতে শব্দের কারণে তার কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
শিশুকে দিন-রাতের পার্থক্য শিখিয়ে দিন: একদম অল্প বয়স থেকেই শিশুকে দিন ও রাতের মধ্যকার ফারাক শিখিয়ে দিতে হবে। শিশু যখন দিনের বেলা ঘুমাবে, তখন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখার প্রয়োজন নেই। প্রাত্যহিক সাধারণ শব্দ ও প্রাকৃতিক আলোর মাঝেই তাকে ঘুমানো শেখাতে হবে। এবং যখন সে জেগে থাকবে, তখন তার সাথে খেলতে হবে। এভাবে দিনের বেলাটা যে সক্রিয় থাকার সময়, এটি তাকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু রাতের বেলা একদম ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে। তখন ঘরের আলো কমিয়ে দিতে হবে, তার সাথে বেশি কথা বলা যাবে না, বললেও খুব নিচু স্বরে বলতে হবে, দুধ খাওয়ানো ও কাপড় পরিবর্তন করানো হয়ে গেলেই তাকে কোল থেকে নামিয়ে শুইয়ে দিতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া তার কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না, এবং অবশ্যই মাঝরাতে তার সাথে খেলতে বসা যাবে না।
শিশুর ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব নিরূপণ করুন: শিশুর ঘুম আসছে কি না, বা তার ক্লান্ত লাগছে কি না, এগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। দেখতে হবে সে চোখ পিটপিট করছে কি না, আঙ্গুল দিয়ে চোখ ডলছে কি না, কান চুলকাচ্ছে কি না, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অস্থির ভাব করছে কি না, কপাল কোঁচকাচ্ছে কি না। সাধারণত এগুলো হলে বোঝা যায় শিশু ক্লান্ত ও তার ঘুমের প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতিটি শিশুর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও থাকে, যা একজন মা তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজে লাগিয়ে বুঝে ফেলতে পারেন। যখনই মা বুঝতে পারবেন তার সন্তান ক্লান্ত ও ঘুম পাচ্ছে, তখনই তাকে ঘুমের জন্য শুইয়ে দিতে হবে।
প্রতিদিন ঘুমের জন্য একটি রুটিন গড়ে তুলুন: নবজাতকের প্রাত্যহিক ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন গড়ে তোলা ও নিয়মিত তা অনুসরণ করা খুবই সহায়ক হতে পারে। যেমন: মা যখন সংসারের বাকি সব কাজ সেরে ঘুমাতে যাবেন, তার আগে একবার নবজাতককে জাগিয়ে তুলে দুধ খাইয়ে নিতে পারেন, যাতে করে তার পেট ভরা থেকে এবং সে পরবর্তীতে লম্বা সময় ঘুমাতে পারে। এর ফলে মা নিজেও নবজাতক পুনরায় জেগে ওঠার আগে মোটামুটি লম্বা একটি ঘুম দিতে পারবেন।
শিশুর বয়স যখন ৩ মাস হবে, অর্থাৎ যখন তার অনুভূতি শক্তি আরও সক্রিয় হবে, তখন তাকে আরও কিছু অতিরিক্ত বেডটাইম রুটিনের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়া যেতে পারে।
- ঘুমের আগে উষ্ণ গরম পানিয়ে গোসল করানো;
- ঘুমানোর জন্য বিশেষ পোশাক ও ফ্রেশ ন্যাপি পরিয়ে দেয়া;
- দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেয়া (যদি দাঁত থাকে আরকি!);
- ঘুমানোর নির্দিষ্ট স্থানে শুইয়ে দেয়া (সেটি আরামদায়ক ও সহনশীল তাপমাত্রার হতে হবে);
- গান শোনানো বা গল্প বলা;
- ঘরের আলো কমিয়ে দেয়া;
- কপালে চুমু খাওয়া বা জড়িয়ে ধরা।
যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে
- অনেক মা-ই আছেন যে সন্তান পুরোপুরি ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে তাকে কোল থেকে নামিয়ে রাখতে চান না। এই কাজটি আসলে করা উচিৎ নয়। বরং সন্তানের বয়স ৬ সপ্তাহের বেশি হয়ে যাওয়ার পর তাকে নিজে থেকেই ঘুমানোর সুযোগ করে দিতে হবে। যখন দেখা যাবে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়তে পারে, তখনই তাকে নামিয়ে রাখতে হবে, যাতে করে সে নিজে নিজেই ঘুমানোর অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।
- অনেক মা আছেন যারা সন্তানকে কোলে তুলে দোল দিতে দিতে ঘুম পাড়ান। এই কাজটি থেকেও বিরত থাকা উচিৎ। একবার যদি শিশু দোল খেতে খেতে ঘুমানোয় অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে বড় হওয়ার পরও সে আশা করবে তাকে কেউ দোল দিতে দিতে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। ফলে সহজে তার ঘুম আসবে না। তাই যেমনটা আগেই বলেছি, শিশুকে নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা দিতে হবে।
- শিশুকে যেখানে ঘুমাতে দেয়া হবে, তার আশেপাশে ভারি কোনো বালিশ, কোলবালিশ বা খেলনা রাখা যাবে না। কারণ এতে ঘুমের মাঝে শিশুর সাফোকেশন হতে পারে। এছাড়া শিশুকে অবশ্যই মাথা নিচে দিয়ে, মুখ উপরে রেখে শোয়াতে হবে। কোনোভাবেই শিশুকে পাশ ফিরে বা উপুড় হয়ে শুতে দেয়া যাবে না। কেননা এর ফলে তার সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোমের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
- ঘুম পাড়ানোর আগেই শিশুর ডায়পার পরিবর্তন করা লাগবে কি না তা দেখে নিতে হবে। এছাড়া তার শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না, সেটিও যাচাই করে দেখতে হবে। শিশুর পোশাকের নিচে হাত ঢুকিয়ে দেখতে হবে ত্বক ঘেমে আছে কি না, বা ঠান্ডা হয়ে আছে কি না। ঘেমে থাকলে অপেক্ষাকৃত পাতলা কাপড় পরাতে হবে, কিংবা কাপড়ের একাধিক লেয়ার থাকলে একটি খুলে নিতে হবে। অনুরূপভাবে ত্বক ঠান্ডা হয়ে থাকলে অপেক্ষাকৃত ভারি কাপড় পরাতে হবে, কিংবা কাপড়ের একটি লেয়ার বাড়াতে হবে।
- শিশুরা ঘুমের মাঝে অনেক সময় চিৎকার করে ওঠে, যা খুবই স্বাভাবিক। তাই এটি নিয়ে সাধারণত চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যদি দেখা যায় টানা এক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সে কেঁদে চলেছে, তাহলে নির্ঘাত তার কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে। হয়তো সে ডায়পার ভিজিয়ে ফেলেছে, তার ঠান্ডা বা গরম লাগছে, তার সাফোকেশন হচ্ছে, তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কিংবা কোনো কিছু তাকে কামড়ে দিয়েছে বা সে শরীরের কোথাও আঘাত পেয়েছে। আবার এমনও হতে পারে যে তার খিদে লেগেছে। কারণ যা-ই হয়ে থাকুক, সেটি খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি কোনো কারণ খুঁজে বের করা না যায়, তাহলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর কতটুকু ঘুম জরুরি?
অধিকাংশ মা-ই চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন যে, তার শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কি না, বা সে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সময় ঘুমাচ্ছে কি না। চিন্তিত হওয়াই স্বাভাবিক। হাজার হোক, মায়ের মন কিনা! আসুন জেনে নিই শিশু স্বাভাবিকভাবে কোন বয়সে কতটুকু ঘুমাবে:
- জন্ম থেকে ৩ মাস: অধিকাংশ নবজাতকই দিনে যতটুকু জেগে থাকে, তারচেয়ে ঘুমিয়েই থাকে বেশি। প্রতিদিন তারা ৮ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমায়। রাতের বেলা তারা একাধিকবার জেগে ওঠে, কেননা তখন তাদের খাওয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়া অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডাও তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- ৩ থেকে ৬ মাস: শিশু বড় হতে থাকলে তার রাতের বেলা খাওয়ার প্রয়োজন হ্রাস পায়, ফলে তারা রাতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় একটানা ঘুমাতে পারে। এই বয়সে অধিকাংশ শিশুই দিন ও রাত মিলিয়ে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে। কিছু কিছু শিশু রাতে ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ঘুমিয়ে থাকে, পাশাপাশি দিনের বেলা ২ থেকে ৩ বার অল্প সময়ের জন্য ঘুমাত। ৪ মাস বয়সের পর থেকে সাধারণত শিশু দিনের বেলা যত সময় ঘুমায়, রাতের বেলা তার দ্বিগুণ সময় ঘুমায়।
- ৬ থেকে ১২ মাস: এই বয়সে রাতের বেলা খাওয়ার একদমই প্রয়োজনই থাকে না। ফলে কিছু কিছু শিশু রাতের বেলা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমিতে থাকে। দাঁতে দাঁত লাগতে থাকলে বা খিদে পেলে কিছু শিশু অবশ্য রাতের বেলা জেগে উঠতে পারে।
- ১ বছর: এই বয়সের শিশুরা দৈনিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে।
- ২ বছর: অধিকাংশ ২ বছর বয়সী শিশুই দিনে ১১-১২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে, পাশাপাশি দিনের বেলা ১ বা ২ বার স্বল্প সময়ের জন্য ঘুমায়।
- ৩ থেকে ৪ বছর: এই বয়সের অধিকাংশ শিশুই দৈনিক ১২ ঘণ্টার মতো ঘুমিয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু শিশুর ঘুমের পরিমাণ ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। সব শিশুর না হলেও, কিছু কিছু শিশুর দিনের বেলাও সামান্য সময় ঘুমিয়ে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/