অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। এসব ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে।
গত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইউরোপের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবচেয়ে বড় হুমকি বায়ু দূষণ। প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বায়ু দূষণের ফলে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ৪,০০,০০০ ইউরোপীয় নাগরিক অকালে প্রাণ হারায়। এর মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যেই প্রাণ হারায় প্রায় ৪০,০০০ জন। এছাড়া যুক্তরাজ্য প্রতিনিয়ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক নির্ধারিত বায়ু দূষণের সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের বিবেচনাতেও অত্যন্ত আশংকাজনক। লন্ডন এ বছর মাত্র ১ মাসে তার দূষণের নির্ধারিত বৈধ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত মে মাসে একটি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে যে, ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডের ৩০টি শহর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত দূষণ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার, সোয়ানসি, লাইচেস্টার এবং নিউ ইয়র্কের মতো শহরও রয়েছে।
বায়ু দূষণের ফলে শুধুমাত্র ফুসফুসকেন্দ্রিক রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে এমনটি নয়। এর মাধ্যমে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মতো মারাত্মক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি অনেক ছোটখাট রোগবালাই, যেমন- প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে মানসিক অবসাদ এবং শিশুদের মধ্যে অ্যাজমার মতো রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে।
আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, বায়ু দূষণ অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যদি কোনো নারী বায়ু দূষণে আক্রান্ত হন, তাহলে তার গর্ভে থাকা সন্তানটিও এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি গত মাসে আরেক গবেষণায় জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের শিশুরা স্কুল গমনের সময় যানবাহনের ডিজেল চালিত ইঞ্জিন থেকে নির্গত ক্ষতিকর কালো কার্বন গ্যাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, এমনকি ক্লাসরুম ও খেলার মাঠেও তারা দূষিত বায়ু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
তাহলে এসবের সমাধান কী হতে পারে? এ ব্যাপারে সবাই সম্ভবত একমত হবে যে, ব্যাপকভাবে বায়ু দূষণের উৎস হ্রাস করাই এর সবচেয়ে বড় সমাধান। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বায়ু দূষণ মুক্ত শহর না পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য কী করতে পারি? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর দেয়ার জন্যই এই আয়োজন।
দূষিত রাস্তা এড়িয়ে চলুন
আপনার যদি বিকল্প কোনো রাস্তা থাকে, তাহলে আপনি রাস্তা পরিবর্তন করে সেই রাস্তায় প্রবেশ করুন, এর দ্বারা আপনি বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
বায়ু দূষণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজে দেয়া এক ভাষণে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ আদ্রে ডি নাজেলি এই পরামর্শটি দেন। গত বছর লন্ডনের কিংস কলেজ কর্তৃক এক গবেষণায় দেখা যায়, সচেতনতা সহকারে রাস্তার ব্যবহার করলে এবং এক পার্শ্ব দিয়ে পথচারীরা চলাচল করলে প্রায় ৫৩ শতাংশ বায়ু দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সফলতা প্রায় ৬০ শতাংশে উন্নীত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ সারের ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লিন এয়ার রিসার্চ’-এর পরিচালক প্রশান্ত কুমার বলেন,
আপনি বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে একটি সূচকীয় হ্রাস ঘটাতে পারেন। যারা রাস্তার মাত্র কয়েক মিটার মধ্যে বসবাস করছেন তারা এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে পারেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারেন। যারা ৫০ থেকে ৬০ মিটারের মধ্যে বসবাস করছেন তাদের বিষয়টি দূষণকারী বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা তাদের পরিবেশের কমপক্ষে অর্ধেক বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে পারেন।
রাস্তার পাশের উঁচু উঁচু ভবনগুলো পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে তুলছে। এসব শহুরে গিরিখাত যেন দূষণকারীদের জন্য একেকটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, গাছ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল প্রকার দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করতে পারবে। এজন্য আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে। লম্বা গাছগুলো তাদের শীর্ষগুলো একত্রিত করে আমাদের বায়ু দূষণ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে, বিশেষত তারা যদি কোনো উঁচু ভবনের পাশে অবস্থিত হয়। আর গাছগুলো যদি নিচু প্রকৃতির হয় সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কুমার বলেন,
এসব নিচু গাছ দূষণকারী যানবাহন ও পথচারীদের মধ্যখানে নিরাপত্তা ঢাল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।
ফলে আমাদের হাতে যদি দূষিত পথ এড়িয়ে চলার কোনো উপায় থাকে তাহলে সেটি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে উত্তম কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে; পাশাপাশি গাছ রোপণ ও অন্যান্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি করতে হবে।
অ্যাপের ব্যবহার
বায়ু দূষণ রোধে অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটনের বায়ু দূষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর স্টিফেন হলগেট বলেন,
বায়ু দূষণ রোধে অ্যাপের ব্যবহার খুব ভাল একটি উপায় এবং দিন দিন তা আরও উন্নতি সাধন করবে। যেসকল শহরের অ্যাপে নিয়মিত সঠিকভাবে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আপডেট দেয়া হচ্ছে- বায়ু দূষণ কী তা গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে, এক্ষেত্রে তারা কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা তুলে ধরা হচ্ছে, সেসব জায়গায় সত্যিকার অর্থেই অ্যাপ অনেক ভালো ভূমিকা পালন করতে পারছে।
কিংস কলেজ কর্তৃক ‘লন্ডন এয়ার‘ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দেখানো হয় সমগ্র শহরের কোথায়, কখন, কী পরিমাণে বায়ু দূষণ হচ্ছে। এই অ্যাপটি খুব দ্রুত সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
হটগেট আরও উল্লেখ করেন যে, এটি ক্রমবর্ধমান বিশ্ব বাজারে একটি ব্যক্তিগত সেন্সর আকারে কাজ করতে পারে। যখন এই অ্যাপটি আপনার ফোনে ইন্সটল করা থাকবে, তখন আপনি দূষণকারী পণ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। যেমন- নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ও এ ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস সমৃদ্ধ পণ্য এড়িয়ে চলতে পারবেন। এছাড়া বিজ্ঞানীগণ ও বিভিন্ন সংস্থা, যেমন- দ্য ডিপার্টমেন্ট ফর এনভায়রনমেন্ট, ফুড এ্যান্ড রুরাল অ্যাফেয়ার্স এবং ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি ইত্যাদি সংস্থা বর্তমানে নিজেদের মধ্যে অ্যাপের মাধ্যমে সতর্কতা বৃদ্ধি করছে। যদিও এ বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে তাদের পরিমাপ পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। সর্বোপরি, আগামী দিনগুলোতে অ্যাপের ব্যবহার বায়ু দূষণ রোধে বড় ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভিড়ের মধ্যে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকুন
পরিবেশবিদ আদ্রে ডি নাজেলি বলেন,
যুক্তরাজ্যে, এমনকি আমাদের মধ্যেও অনেক সময় অবৈধভাবে তীব্র বায়ু দূষণ করার প্রবণতা রয়েছে। শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা এসব দূষণের ক্ষতিকর দিককে অতিক্রম করে যেতে পারি। তাত্ত্বিকভাবে চিন্তা করলে, এটা সহজেই বোঝা যায় যে শরীরচর্চা বায়ু দূষণের ক্ষতিকর দিক থেকে আমাদেরকে অনেক নিরাপদ রাখতে পারবে।
তিনি আরও বলেন,
শরীরচর্চার নানা উপকারী দিক রয়েছে। তবে বায়ু দূষণ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার প্রধান প্রক্রিয়া, যা আপনার শারীরিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। শারীরিক চর্চার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীর থেকে বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অতিক্রম করতে পারবেন নিশ্চিত- তবে এটি প্রমাণ করে দেখানো বেশ কঠিন কাজ যে, এভাবে এভাবে এই প্রক্রিয়াটি কাজ করবে।
বায়ু দূষণ যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, সেই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে ডি নাজেলি বলেন,
এটি বলা খুব মুশকিল যে, বড় বড় রাস্তায় একাকী দৌড়ানোর মধ্যে বিশেষ কোনো লাভ আছে, এ বিষয় সত্যিকার অর্থেই আমাদের কোনো তথ্য জানা নেই। আপনি যদি যুবক হন অথবা বৃদ্ধ হন অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হন, অথবা কোনো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে থাকেন- তাহলে সম্ভবত দিনের বেলায় উচ্চ মাত্রার দূষিত পরিবেশে শারীরিক চর্চা করার চেয়ে ঘরে বসে সময় কাটানোই উত্তম কাজ।
তিনি আরও বলেন,
যদি বলা হয়, সারাদিনের মধ্যে শারীরিক চর্চা করার জন্য সর্বোত্তম সময় কোনটি? আমি বলবো, ভিড়ের সময় এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ ভিড় তৈরি হওয়ার আগে অথবা ভিড় শেষ হওয়ার পর আপনি শারীরিক চর্চা করুন। এজন্য সম্ভবত একেবারে সকাল বেলা উত্তম সময় হতে পারে।
ডি নাজেলির এসব পরামর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বায়ু দূষণ যখন দিনকে দিন বেড়ে চলছে, তখন শরীর চর্চার মতো বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এমন প্রেক্ষিতে নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘরের মধ্যে মাস্ক পরিহার করুন
প্রফেসর স্টিফেন হলগেট বলেন,
অধিকাংশ মাস্ক ছিদ্র যুক্ত, এতে সভজেই ধুলোবালি প্রবেশ করতে পারে। এগুলো আসলে কোনো কাজ করে না।
তিনি এ বিষয়ে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন। অনেকে আবার খুব টাইট মাস্ক ব্যবহার করেন, তিনি তা-ও পরিহার করার পরামর্শ দেন,
অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরিধান করার পর অস্বস্তি অনুভব করে, মূলত এদের সহ্য ক্ষমতা বেশ কম।
এডিনবার্গের ইন্সটিটিউট অফ অকুপেশনাল মেডিসিন ও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেইজিংয়ের ভোক্তাদের মধ্যে মোট নয় ধরনের মাস্কের ব্যবহার রয়েছে, যেখানে বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশ মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে কাজের সময় ব্যবহৃত মাস্কগুলোতে ৩-৬৮ শতাংশ পর্যন্ত এবং অন্যান্য সময় ব্যবহৃত মাস্কগুলোতে ৭-৬৬ শতাংশ পর্যন্ত ছিদ্র দেখতে পাওয়া যায়।
বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য আরও নিরাপদ মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি ঘরের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। এজন্য ঘরের পরিবেশও বায়ু দূষণমুক্ত রাখা উচিৎ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন
এ বিষয়ে ক্রমবর্ধমান প্রমাণ আমাদের হাতে আছে যে, ভালো খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর আরোপিত বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমিত করতে পারি। এ বছরের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিন থেকে প্রকাশিত এক গবেষণায় ৫,০০,০০০ এরও বেশি মানুষের উপরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর বায়ু দূষণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, যখন আমরা বায়ু দূষণের প্রভাব কমিয়ে আনতে চাইবো, তখন আমাদের এমন সব খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যা আমাদের হৃদরোগ ও অন্যান্য প্রাণঘাতী সঙ্কট থেকে রক্ষা করবে। হলগেট বলেন,
শরীরের জন্য এসব দূষকের মোকাবিলায় যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ গ্রহণ না করি, যেমন- ভিটামিন সি ও অন্যান্য ভিটামিন যুক্ত ফল ও সবজি না খাই- তাহলে এসব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সমস্যা হচ্ছে, দেশের মানুষের মধ্যে বড় একটি অংশ তাদের খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সচেতন নয়- হোক সে ধনী অথবা অত্যন্ত গরীব পরিবারের সদস্য।
ফলে বায়ু দূষণের সঙ্কট মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।
আপনার শিশুর প্র্যাম বা পুস-চেয়ার সব সময় ঢেকে রাখুন
এ বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ু দূষণের প্রভাব বড়দের তুলনায় নবজাতক ও শিশুদের উপর প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। এ বিষয়ে প্রশান্ত কুমার বলেন,
এ গবেষণা যারা চালিয়েছে, তারা উঁচুতে বসবাসরত শিশু- অর্থাৎ যারা প্র্যামে (শিশু লালন-পালনের উপযোগী ভাঁজ করা যায় এমন চেয়ার) করে চলাচল করে তাদের নিয়ে কাজ করেছে, যা শিশুদেরকে মাটি থেকে তাদের প্রায় ১ মিটার উচ্চতায় রাখে। কিন্তু যারা ১ মিটারের নিচে বসবাস করে, গাড়ির হর্ন ও যানবাহনের আওয়াজ তাদের অতিষ্ঠ করে তোলে। আপনি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিলে এ থেকে উত্তরণের কোনো যথার্থ উপায় খুঁজে পাবেন না।
তিনি আরও বলেন-
শিশুদের নিরাপত্তা পদ্ধতি এখনো পর্যাপ্ত উন্নত নয়। পাশাপাশি শিশুরা বড়দের নেতিবাচক প্রভাব থেকেও মুক্ত নয়।
গবেষকগণ সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের প্র্যামের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখছেন, কোন ধরনের প্র্যাম শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অধিকতর ভালো হয়। এজন্য তারা পিছনমুখি ও সম্মুখমুখি উভয় ধরনের প্র্যাম পরীক্ষা করে দেখছেন।
কিন্তু প্রশান্ত কুমার এসবের চেয়ে ব্যস্ত সড়কে শিশুদের প্র্যামের উপরে একটি পাতলা পর্দা ব্যবহারের প্রতি অধিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে বলে তার ধারণা, তবে এতেও ক্ষতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে না। বিশেষত ট্র্যাফিক লাইট, বাস স্টপেজ এবং জংশনগুলোর মতো জায়গায় এ পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে না।
এক্ষেত্রে একটি প্লাস্টিকের রেইনকভার বা বৃষ্টি প্রতিরোধক ভালো ফলাফল দিতে পারে। কিন্তু মানুষের হাতে তা-ও নিরাপদ রাখা মুশকিল। তারা এটি ছিদ্র করে ফেলতে পারে এবং এটি শিশুর জন্যও স্বস্তিদায়ক হবে না। বিশেষত গরমের দিনে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
শিশুদের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত অন্যান্য দ্রব্য, যেমন- বেবি পিলো বা শিশুর বালিশ আবহাওয়ার ফিল্টার হিসেবে কাজ করতে পারে। শিশু যে জায়গায় অবস্থান করবে সে জায়গার আবহাওয়া সে দূষণমুক্ত করে দিবে। কিন্তু এমন প্রযুক্তির কোনো বেবি পিলো এখনো বাজারে আসেনি। প্রশান্ত কুমার বলেন,
এর স্থায়ী সমাধান হলো দূষণের উৎস নির্মূল করা- যানবাহন পরিবেশবান্ধব করা।
ফলে আমাদের বসবাসের জন্য আগামীর দিনগুলো খুব বেশি নিরাপদ হবে এমন আশা করা দুরূহ। তবে এখন থেকেই আমাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সে অনুসারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা আমাদেরকে অনেকটা নিরাপদ রাখতে পারবো। এজন্য আমরা আলোচিত ৬টি পরামর্শ অনুশীলন করে দেখতে পারি।