গুপ্তসংঘ নামটি শুনলেই আমরা সবাই নড়েচড়ে বসি। ভাবতে শুরু করে দিই এমন কিছু মানুষের কথা যারা বিশেষ কোনো পোশাক পরে বসে আছে গোপন কোনো স্থানে, পরিকল্পনা করছে বিশ্বকে বদলে দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ব্যাপারে আমাদের কল্পনাগুলো খারাপ হয়ে থাকে; এর পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাল আমলের থ্রিলার মুভি আর উপন্যাসগুলো।
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ জন প্রেসিডেন্ট সরাসরিই যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন গুপ্তসংঘের সাথে। আর ভ্রু আরো কুঁচকে যায়, যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলে ওঠেন, ভার্সিটিতে তিনি যে গোপন সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন, সেটার কার্যাবলী এতটাই গোপন যে নাম ছাড়া আর কিছুই জানানোর অনুমতি নেই তার!
সেই ২০ জন প্রেসিডেন্টের গুপ্তসংঘের সাথে জড়িত জীবনের প্রতি একনজর আলোকপাত করতেই আজকের এই লেখার আগমন।
১) জর্জ ওয়াশিংটন
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৭৮৯ – ১৭৯৭
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন গুপ্তসংঘ ফ্রিম্যাসনের সদস্য। এদিক থেকে চিন্তা করলে তিনি দেশটির প্রথম ম্যাসনিক প্রেসিডেন্টও বটে। রন চার্নো’র লেখা ‘Washington: A Life’ বইতে লেখক মন্তব্য করেছেন, সম্ভবত সংগঠনটির সংস্কারমুক্ত মনোভাবই ওয়াশিংটনকে ম্যাসনিক অর্ডারের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলো।
মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি এই গুপ্তসংঘের সদস্য হয়েছিলেন। এরপর বাকিটা জীবন এর বিশ্বস্ত সদস্য হিসেবেই কাটিয়ে দেন তিনি। তার স্মরণে স্থাপিত ‘জর্জ ওয়াশিংটন ম্যাসনিক ন্যাশনাল মেমোরিয়াল’-এর কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে।
২) থমাস জেফারসন
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮০১ – ১৮০৯
গুপ্তসংঘ: এফ. এইচ. সি. সোসাইটি
কলেজ অফ উইলিয়াম এন্ড মেরির শিক্ষার্থী থাকাকালে এফ. এইচ. সি. সোসাইটি নামে এক গুপ্তসংঘের সদস্য ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এ স্থপতি। তিনি দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এফ. এইচ. সি. সোসাইটির সাথে জেফারসনের সম্পৃক্ততা যে খুব বেশি একটা ছিলো না, তা বোঝা যায় ১৮১৯ সালে তার লেখা এক চিঠি থেকে,
“… সেখানে এফ.এইচ.সি. সোসাইটি নামে একটি সংঘের অস্তিত্ব ছিলো। এর সদস্য সংখ্যা ছিলো মাত্র ছয়, আমিও ছিলাম যাদের মাঝে একজন। তবে এর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য ছিলো না। এমনকি আমি জানিও না এখনও এটি টিকে আছে কিনা।”
এফ.এইচ.সি ছিলো ল্যাটিন ‘Fraternitas, Humanitas, et Cognitio’ এর পূর্ণরুপ, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘ভ্রাতৃত্ব, মানবতা, এবং জ্ঞান’। এর সদস্যরা নিজেদের মাঝে বিশেষভাবে করমর্দন করতো। এছাড়া তাদের পোশাকে আটকানো থাকতো একটি ব্যাজ, যাতে খোদাই করা ছিলো ‘stabilitas et fides’ কথাটি। এর অর্থ ‘স্থায়িত্ব এবং বিশ্বাস’।
৩) জেমস মনরো
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮১৭ – ১৮২৫
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন মুল্লুকের শাসনের দায়িত্ব পালন করা এ ব্যক্তি ছাত্রজীবনেই গুপ্তসংঘের সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন। ১৭৭৬ সালে তিনি যখন ফ্রিম্যাসনের সদস্য তালিকায় নাম লেখান, তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৭ বছর। থমাস জেফারসনের মতো তিনিও তখন কলেজ অফ উইলিয়াম এন্ড মেরির শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তখন তিনি রাজশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।
৪) অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮২৯-১৮৩৭
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
সৈনিক থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়ে পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। তিনি ফ্রিম্যাসনের মামুলি কোনো সদস্য ছিলেন না, বরং সংঘটিতে তার পদমর্যাদা ছিলো বেশ উঁচু স্থানে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার শাসনামলেই বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছিলো ফ্রিম্যাসনকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো নিউ ইয়র্কের এক ব্যক্তিকে অপহরণ সংক্রান্ত, যে কিনা সংঘের বিভিন্ন গোপন বিষয়াদি ফাঁস করে দিবে বলে হুমকি দিয়েছিলো। এমনকি ফ্রিম্যাসনের উপর বিদ্বেষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তৃতীয় রাজনৈতিক দলের উত্থানও ঘটেছিলো তখনই।
৫) জেমস কে. পক
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮৪৫ – ১৮৪৯
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
১৮২০ সালে পক যখন ফ্রিম্যাসনে যোগদান করেন তখন তার বয়স ছিলো ২৫ বছর। ১৮৪৫ সালে তিনি যখন দেশটির একাদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন তার বয়স ৫০ বছর চলছিলো।
৬) জেমস বুকানন
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮৫৭ – ১৮৬১
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের একমাত্র চিরকুমার প্রেসিডেন্ট বুকানন। ম্যাসনিক এ মানুষটি প্রেসিডেন্টের তালিকায় আছেন পঞ্চদশ স্থানে। ইতিহাস বলে, তিনি দেশটির নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্টদের মাঝেও শীর্ষস্থানীয়।
৭) অ্যান্ড্রু জনসন
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮৬৫ – ১৮৬৯
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন আততায়ীর হাতে নিহত হবার সময় দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন অ্যান্ড্রু জনসন। ফলে লিঙ্কনের মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব বর্তায় জনসনের কাঁধে। সপ্তদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্টের আসন অলঙ্কৃত করেন।
নিজের ম্যাসনিক সত্ত্বা নিয়ে আজীবন বেশ গর্ববোধ করতেন প্রেসিডেন্ট জনসন। তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে স্থানীয় ম্যাসনিক টেম্পলও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।
৮) ইউ. এস. গ্র্যান্ট
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮৬৯ – ১৮৭৭
গুপ্তসংঘ: ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস
গৃহযুদ্ধের সময় আর্মি জেনারেল এবং যুদ্ধের শেষের দিকে কমান্ডিং জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইউ. এস. গ্র্যান্ট ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঠারোতম প্রেসিডেন্ট। তিনি যে গুপ্তসংঘটির সাথে যুক্ত ছিলেন, তার নাম অনেকের কাছেই অপরিচিত ঠেকতে পারে। ইউরোপ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো এ সংগঠনটি। ১৮১৯ সালে বাল্টিমোরে কার্যপরিচালনার মধ্য দিয়ে আমেরিকায় তারা কার্যক্রম শুরু করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো বিভিন্ন দাতব্য কার্যাবলী পরিচালনা করা। কালক্রমে নারী-পুরুষ উভয়েই তাদের সদস্য তালিকায় নাম লেখাতে শুরু করে।
৯) রাদারফোর্ড বি. হায়েস
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮৭৭ – ১৮৮১
গুপ্তসংঘ: ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস
১৮৫০ থেকে ১৮৮৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোসের বিভিন্ন সম্মেলনে পাঁচবার বক্তব্য রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট হায়েস। উদাহরণ হিসেবে ১৮৮৭ সালে ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের ফ্রিমন্টে সংঘের নতুন অফিসারদের বরণ করে নেয়ার সময় তিনি এই সংঘ এবং এর মতো অন্যান্য আরো সংঘ সম্পর্কে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছিলেন,
“The beneficial societies, commonly known as secret societies, these societies gather under the same friendly roof in close intimacy persons differing widely in occupation, politics, religion, and conditions of life and fuse them easily and naturally into complete harmony and cordial friendship.”
১০) জেমস আব্রাম গারফিল্ড
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ৪ মার্চ, ১৮৮১ – ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৮১
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
আততায়ীর বুলেট প্রাণ কেড়ে নেয়ার আগপর্যন্ত মাত্র মাস ছয়েকের মতো দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন দেশটির বিংশতম এ প্রেসিডেন্ট। অবশ্য অনেক আগে থেকেই ফ্রিম্যাসনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৮৬৪ সালে তিনি সংগঠনটির পূর্ণ সদস্য হন।
১১) উইলিয়াম ম্যাককিনলে
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৮৯৭ – ১৯০১
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আততায়ীর বুলেটে প্রাণ হারান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঁচিশতম এই প্রেসিডেন্ট। আজকের লেখায় এখন পর্যন্ত যতজন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তারা সবাই যেকোনো একটি গুপ্তসংঘের সদস্য ছিলেন। এদের মাঝে ব্যতিক্রমের শুরু প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলেকে দিয়ে। কারণ তিনি ফ্রিম্যাসন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস উভয় সংঘের সাথেই জড়িত ছিলেন।
১২) থিওডোর রুজভেল্ট
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯০১ – ১৯০৯
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন, ইন্টারন্যাশনাল কনক্যাটেনেটেড অর্ডার অফ হু-হু
রাজনৈতিক নেতা, লেখক, ভ্রমণকারী, সৈন্য ও প্রকৃতিবিজ্ঞানী- এতসব গুণের অধিকারী থিওডোর রুজভেল্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন দেশটির ছাব্বিশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পঁচিশতম ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলের মতো রুজভেল্টও দুটি গুপ্তসংঘের সদস্য ছিলেন। ফ্রিম্যাসনের সাথে অবশ্য মাঝে মাঝে কিছু তিক্ততার মুখোমুখি হয়েছে তাকে। একবার ফ্রিম্যাসনের এক সদস্য রুজভেল্টের প্রভাব খাটিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির পাঁয়তারা করলে তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় সংঘের নামটি যেমন অপরিচিত, তেমনি অদ্ভুত। এটা নিজেদের কাজকারবার ততটা গোপন রাখতো না। তারা ছিলো একটি ব্যবসায়িক ভ্রাতৃত্বসংঘ, সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে কাঠের ব্যবসায়ীদের ভ্রাতৃত্বসংঘ।
১৩) উইলিয়াম এইচ. টাফ্ট
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯০৯ – ১৯১৩
গুপ্তসংঘ: স্কাল এন্ড বোন্স, ফ্রিম্যাসন
প্রথম জীবনে ‘ওল্ড বিল’ এবং পরবর্তীকালে ‘বিগ লাব’ ডাকনামে পরিচিত হওয়া উইলিয়াম টাফট ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাতাশতম প্রেসিডেন্ট। তার বাবা, অ্যাটর্নি জেনারেল আলফন্সো টাফ্ট, ছিলেন স্কাল এন্ড বোন্স সংঘটির একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ফলে এর সদস্যপদ পেতে টাফ্টকে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। এখানে থাকাকালেই তিনি সম্মানজনক ‘ম্যাগগ’ উপাধি পেয়েছিলেন, যার অর্থ গোপন এ ক্লাবের সদস্য থাকাকালে তিনি সবচেয়ে বেশি যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন!
১৯০৯ সালে টাফ্ট ফ্রিম্যাসনেও যোগ দেন। ১৯১২ সালের রেকর্ডবুক ‘Proceedings of the Grand Lodge of Free and Accepted Masons of the State of New York’ থেকে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে টাফ্ট ম্যাসনিক রীতিনীতির দ্বারস্থ হতেন।
১৪) ওয়ারেন হার্ডিং
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯২১ – ১৯২৩
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন, ইন্টারন্যাশনাল কনক্যাটেনেটেড অর্ডার অফ হু-হু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস
১৯০১ সালে ফ্রিম্যাসনে যোগ দিয়েছিলেন ওয়ারেন হার্ডিং। উনিশ বছর পর তিনি সংঘের একজন মাস্টার ম্যাসন হয়ে ওঠেন। তার পদোন্নতিতে এত দীর্ঘ সময় লাগার পেছনে আফ্রিকান পূর্বপুরুষদের বিষয়টিই মূলত কাজ করেছে বলে গুজব রয়েছে। এর পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল কনক্যাটেনেটেড অর্ডার অফ হু-হু ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস গুপ্তসংঘেরও সদস্য ছিলেন তিনি।
১৫) ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯৩৩ – ১৯৪৫
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস
প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট রেকর্ড চারবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছিলেন। ১৯১১ সালে ফ্রিম্যাসনে যোগ দেয়ার সময় তার বয়স ছিলো ২৯ বছর। ১৯৩৪ সালে তিনি সংঘটির গ্র্যান্ড মাস্টারও হয়েছিলেন। একবার সংঘটির প্রশংসা করে তিনি বলেছিলেন,
“To me, the ceremonies of Freemasonry in this state of ours, especially these later ones that I have taken part in, always make me wish that more Americans, in every part of our land, could become connected with our fraternity.”
ফ্রিম্যাসনের পাশাপাশি ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোসের সদস্যও ছিলেন বিংশ শতকে বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম ভূমিকা রাখা এ মানুষটি।
১৬) হ্যারি এস. ট্রুম্যান
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯৩৩ – ১৯৫৩
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেত্রিশতম এ প্রেসিডেন্ট বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন ফ্রিম্যাসনের সাথে। ১৯১১ সালে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের বেল্টনে তিনি একটি ম্যাসনিক লজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে তিনিই সেই লজের প্রথম মাস্টার হিসেবে নির্বাচিত হন। সেখানে তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণের কারণে মুগ্ধ ছিলেন সংঘের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। একসময় তিনি এর গ্র্যান্ড মাস্টারও হয়েছিলেন। ফ্রিম্যাসনের পাশাপাশি ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোসের সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
ফ্রিম্যাসনের সাথে যে তার সম্পর্ক বেশ গভীর ছিলো, তা বোঝা যায় তারই এক উক্তি থেকে-
“Freemasonry is a system of morals which makes it easier to live with your fellow man, whether he understands it or not.”।
১৭) রিচার্ড নিক্সন
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯৬৯ – ১৯৭৪
গুপ্তসংঘ: দ্য অর্ডার অফ দ্য রেড ফ্রায়ার্স
যুক্তরাষ্ট্রের সাইত্রিশতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে রিচার্ড নিক্সন দেশটির ছত্রিশতম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯১৩ সালে ডিউক ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু করে সেমি-সিক্রেট সোসাইটি দ্য অর্ডার অফ দ্য রেড ফ্রায়ার্স। লাল হুড ও আলখেল্লা পরিহিত একজন সদস্য নতুনদেরকে অভ্যর্থনা জানাতেন। অবশ্য এটা তেমন গোপনীয় কিছুই ছিলো না। ডিউক চ্যাপেলে প্রকাশ্য দিবালোকেই এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হতো। সংঘটির কাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তা করা।
১৮) জেরাল্ড ফোর্ড
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯৭৪ – ১৯৭৭
গুপ্তসংঘ: ফ্রিম্যাসন
রিচার্ড নিক্সনের পর মার্কিনীদের আটত্রিশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেরাল্ড ফোর্ড। ১৯৪৯ সালে তিনি ফ্রিম্যাসনে যোগ দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, তিনিই দেশটির সর্বশেষ ম্যাসনিক প্রেসিডেন্ট।
১৯) জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ১৯৮৯ – ১৯৯৩
গুপ্তসংঘ: স্কাল এন্ড বোন্স
জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচল্লিশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্কাল এন্ড বোন্সের দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে তিনি ওভাল অফিসে প্রবেশ করেছিলেন।
২০) জর্জ ওয়াকার বুশ
প্রেসিডেন্সির মেয়াদকাল: ২০০১ – ২০০৯
গুপ্তসংঘ: স্কাল এন্ড বোন্স
বাবার মতো ছেলেও নির্বাচিত হয়েছিল দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে, তেতাল্লিশতম প্রেসিডেন্ট। তবে বাবার চেয়ে দ্বিগুণ সময় ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জুনিয়র বুশও স্কাল এন্ড বোন্সে নাম লিখিয়েছিলেন। তবে গুপ্তসংঘটিতে তার সময় সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে জর্জ ডব্লিউ. বুশ লিখেছিলেন, “My senior year I joined Skull and Bones, a secret society, so secret I can’t say anything more”।