America is the friend of all Iraqi people
২০০৩ সালে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোর মুহুর্মুহু আক্রমণে ইরাকে সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু স্থাপনা দখল করে নেয়। এসবের মধ্যে আবু গারিব কারাগার ছিল অন্যতম। দখল হওয়ার সাথে সাথে কারাগারটির প্রবেশদ্বারের চেহারাও বদলে যায়। আবু গারিব কারাগারের প্রবেশদ্বারে থাকা সাদ্দাম হুসাইনের পোর্ট্রেইটের স্থান দখল করে নেয় উপরে উল্লিখিত উক্তির একটি সাইন বোর্ড।
ইরাকের আবু গারিব শহরে অবস্থিত আবু গারিব কারাগারটি সাদ্দাম হুসাইনের আমলে পৃথিবীর অন্যতম কুখ্যাত কারাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। বাগদাদ শহর থেকে ২০ মাইল পশ্চিমে ২৮০ একর জমির ওপর তৈরি করা হয়েছিল এই কারাগারটি। সাদ্দাম হুসাইনের সময় সেখানে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মতো বন্দী আটক ছিল। আটককৃত বন্দীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর জন্য কুখ্যাতি ছিল কারাগারটির। ২০০৩ সালে সাদ্দাম সরকারের পতনের পর জনগণ কারাগারটির সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে মার্কিন বাহিনী দখল করে নেয় কারাগারটি। তারা কারাগারটিকে নিজেদের মতো গুছিয়ে নেয় এবং একে একটি মিলিটারি বন্দীশালায় পরিণত করে। ইরাক জুড়ে আমেরিকার যতগুলো আটক কেন্দ্র ছিল তার মধ্যে আবু গারিব ছিল সবচেয়ে বড়। ২০০৪ সালের দিকে ঐ কারাগারে ৭,৪৯০ জনের মতো বন্দী আটক ছিল। আমেরিকার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকাকালে কারাগারটিতে যেসব পদ্ধতিতে বন্দীদের ওপর অত্যাচার চালানো হতো তা ইতিহাসে বিরল।
আবু গারিব কারাগারে তিন ধরনের বন্দীদের আটক রাখা হত। সাধারণ চোর-ডাকাত, বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা এবং মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলাকারী বিভিন্ন সন্ত্রাসীরা ছিল এই তিন শ্রেণীর অন্তর্গত। বন্দীদের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশই ছিল নিষ্পাপ এবং সন্দেহের বশে আটককৃত। বন্দীদের মার্কিন আর্মি এবং সিআইএ’র সদস্যরা বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, অত্যাচার, ধর্ষণ এবং হত্যা করতো। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কারপিনস্কি ছিলেন এই কারাগারের প্রধান কমান্ডার, যিনি পূর্বে কখনো কোনো কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন না।
আবু গারিব কারাগার আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেখানে বন্দীদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চলছে বলে দাবি করতে থাকে। কিন্তু তাদের আশঙ্কা সেভাবে আলোচনায় আসেনি। অবশেষে ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল সিবিএস নিউজ তাদের ‘’60 Minutes II” নামক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কারাগারটিতে চলতে থাকা বিভিন্ন নির্যাতনের বেশ কিছু ছবি প্রচার করে। ওই অনুষ্ঠানে প্রচারিত নির্যাতনের ছবিগুলো গোটা পৃথিবীকেই যেন নাড়িয়ে দিয়ে যায়। এত নিষ্ঠুরভাবেও যে মানুষ মানুষকে নির্যাতন করতে পারে তা বিশ্ববাসীর জানা ছিল না। ছবিগুলো আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে। চারদিক থেকে সমালোচনা ধেয়ে আসতে থাকে নির্যাতনকারী সৈন্যদের দিকে। এর জের ধরে একে একে বেরিয়ে আসে কারাগারে ইরাকি বন্দিদের সাথে ঘটে যাওয়া নৃশংস সব ঘটনা। কিন্তু এতকিছুর পরও আমেরিকার বেশ কিছু রক্ষণশীল গণমাধ্যম নির্যাতনকারী সৈন্যদের পক্ষে সাফাই গেয়ে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ এসব নির্যাতনের ছবিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেন এবং এগুলো আমেরিকান বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের নিছক ভুলের ফসল বলে দাবি করেন।
এই ঘটনার জের ধরে আমেরিকান প্রতিরক্ষা দপ্তর সতেরজন সৈন্য এবং অফিসারকে বাহিনী থেকে অপসারণ করা হয়। কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। কিন্তু এসব কিছুই যেন ছিল অনেকটা লোক দেখানো। কারণ বন্দী নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তাই থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এমন কী ছিল ওই ছবিগুলোতে যার কারণে চারদিকে এত সাড়া পড়ে গেল? আসলে সেসব ভাইরাল ছবি থেকে আবু গারিবে চালানো বর্বর নির্যাতন সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাওয়া যায়। কারাগারটিতে চালানো বন্দী নির্যাতনের একটি চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।
ইলেক্ট্রিক শকের ভয় দেখানো
মাথায় হুড পরে একটি বক্সের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গিলিগান (ছদ্দনাম) এর ছবিটি আবু গারিব ট্রাজেডির সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি। এই ছবিটি একসময় আবু গারিব কারাগারের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল।
আব্দু হুসাইন সাদ ফালেহ নামের একজন বন্দী গিলিগানের সাথে ঘটে যাওয়া ঐ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তাকে সেদিন কারাগারের ৩৭ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়, যেটি ছিল একটি শাওয়ার রুম। সেখানে আব্দু হুসাইন ‘গিলিগানকে’ দেখতে পান, যাকে একটি বক্সের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে এবং তার শরীর একটিমাত্র কম্বল দিয়ে ঢাকা ছিল। এসময় একজন সৈনিক গিলিগানের মাথা বস্তা জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে দেয়।
স্পেশালিস্ট সাবরিনা হারমান এবং স্টাফ সার্জেন্ট ইভান ফ্রেড্ররিক গিলিগানের হাত-পায়ের আঙুল এবং পুরুষাঙ্গের সাথে বৈদ্যুতিক তার লাগিয়ে দেয়। সাবরিনা এ সময় গিলিগানকে বলে, যদি সে বক্স থেকে নিচে পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যাবে। প্রচন্ড আতঙ্কে গিলিগান ঐ অবস্থায় প্রায় এক ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে ছিল।
পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাবরিনা স্বীকার করেন যে, তিনি গিলিগানের সাথে সামান্য মজা করেছিলেন! অন্যদিকে ফ্রেডরিক তদন্তের সময় বলে, ‘গিলিগান’ যদি বক্স থেকে পড়ে যেত, তাহলে সে সত্যি সত্যিই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হত।
গিলিগানের মতো আরও বেশ কয়েকজন বন্দীকে এই পদ্ধতিতে নির্যাতন করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
মান্দেল আল-জামাদির মৃত্যু
মান্দেল আল-জামাদির মৃতদেহের সামনে হাস্যোজ্জ্বল মার্কিন সার্জেন্ট চার্লস গ্রানারের ছবিটি আবু গারিব স্ক্যান্ডালের অন্যতম বেদনাদায়ক একটি ছবি। এই ছবিটি যেন ছিল আমেরিকা বিরোধীদের জন্য ভয়ঙ্কর এক সতর্কবার্তা।
আবু গারিব কারাগারে ঘটে যাওয়া নির্যাতন সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, নেভি সিলের একটি দল মান্দেলকে আবু গারিব কারাগারে ধরে আনে। এ সময় তার মুখ একটি বালুর বস্তা দ্বারা ঢাকা ছিল। কারাগারে আনার পরপরই শুরু হয় নির্যাতন। নেভি সিলের সদস্যরা অনবরত তাকে ঘুষি মারছিল, কেউ একজন তার গলা টিপে ধরে এবং তার চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গেল একজন তার মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে সজোরে আঘাত করে।
একদফা নির্যাতনের পর মান্দেলকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি শাওয়ার রুমে। সেখানে সিআইএ এবং আর্মি ইন্টিলিজেন্সের কয়েকজন সদস্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর এক ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে মান্দেল আল-জামাদির মৃত্যু ঘটে।
যৌন নির্যাতন
বন্দীদের ওপর বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতন করা ছিল আবু গারিব কারাগেরর আরেকটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ২০০৯ সালের দিকে বিশ্ববাসী জানতে পারে, আবু গারিবে বন্দীদের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন ছবি এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
ঐ কারাগারে আটক থাকা একজন বন্দী তদন্তের সময় বলেন, আবু গারিবে থাকার সময় তিনি এক ইরাকি কিশোরকে ধর্ষণ করার একটি দৃশ্য দেখেছিলেন। তিনি দেখতে পান, একজন আর্মি ট্রান্সলেটর ঐ কিশোরকে ধর্ষণ করছে এবং একজন নারী সৈনিক সেই ঘটনার ছবি তুলছে।
একটি ছবিতে দেখা যায় একজন আমেরিকান সৈনিক একজন নারী বন্দীকে ধর্ষণ করছে। অন্যান্য ছবিগুলো থেকে বন্দীদের ওপর লাঠি, টিউব লাইট, ইলেক্ট্রিক তার ইত্যাদি দ্বারা যৌন নির্যাতনের দৃশ্য দেখা যায়। এসব ছবি প্রকাশিত হলে পৃথিবীজুড়ে আমেরিকা-বিরোধী মনোভাব মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারত। তাই বারাক ওবামা প্রশাসন এসব ছবি জনসম্মুখে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে।
অন্যান্য অভিযোগ
২০০৪ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা আমিন সাঈদ আল-শেখ নামক এক ব্যক্তির সাথে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের খবর প্রকাশ করে। আমিন সাঈদের ভাষ্যমতে, তাকে সবার সামনে নগ্ন করা হয়েছিল এবং একজন সৈনিক তাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল। ঐ সৈনিক সাঈদের পশ্চাতে একটি মেয়ের ছবি এঁকে তাকে লজ্জাজনক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল।
১২ জানুয়ারি ২০০৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা আবু গারিব কারাগারে কাটানো কয়েকজন বন্দীর সাক্ষ্য প্রকাশ করে। পত্রিকাটির ওই রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বেশ কয়েকজন আমেরিকান সৈন্য কারাবন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাত। তারা বন্দীদের শরীরে মূত্র ত্যাগ করত, আহত অঙ্গে লোহার রড দিয়ে প্রহার করত, বন্দীদের ওপর ফসফরিক এসিড ঢেলে দিত, অনেকের পায়ে এবং পুরুষাঙ্গে দড়ি বেধে টেনে নিয়ে যেত অনেক দূর।
এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে হাশেম মুসেন নামক একজন বন্দী বলেন, “তারা আমাদের উলঙ্গ করে হামাগুড়ি দেওয়াতো এবং একেকজন সৈন্য গাধা বানিয়ে আমাদের পিঠে চড়ে বসত।“ বন্দীদের উলঙ্গ করে তাদের দিয়ে মানব পিরামিড বানানো হত আবু গারিব কারাগারে। হাশেম মুসেন নিজেও এই মানব পিরামিড নির্যাতনের ভুক্তভোগী ছিলেন। তিনি বলেন, “তারা সবসময় আমাদের অপমান করার চেষ্টা করত। নারী সৈন্যরা দ্বিধাহীনভাবে আমাদের উলঙ্গ অবস্থার ছবি তুলত, যেন এসব কিছুই না!”
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়
২০০৪ সালের দিকে ভাইরাল হওয়া এসব ছবিকে বুশ প্রশাসন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু ঐ বছরেই রেডক্রসের একটি দল ইরাকে আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত বেশ কিছু বন্দীশালা পরিদর্শন করে। তারা পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট করে যে, আবু গারিবসহ অন্যান্য ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে যেসব নির্যাতন চলছে তা মোটেও কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং সুপরিকল্পিতভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সৈনিকদের দ্বারাই এসব করানো হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া
আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের ঘটনা পৃথিবীজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে। ভ্যাটিকান সিটি এই নির্যাতনের ঘটনাকে ৯/১১ এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা বলে উল্লেখ করে। ডেইলি ট্রিবিউন লেখে, “রক্ত হিম করা এসব ছবি ইরাকের ভেতরে এবং বাইরে আরও অসংখ্য মানুষকে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করবে।” আমেরিকান জনগণও তীব্রভাবে এই ঘটনার নিন্দা জানায়।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে আমেরিকা ২০০৬ সালের দিকে আবু গারিব কারাগারে থাকা ৪,৫০০ বন্দীকে অন্যান্য কারাগারে পাঠিয়ে দেয় এবং আবু গারিবের নিয়ন্ত্রণ ইরাকি সরকারের হাতে তুলে দেয়। ঐ বছরের আগস্টের মধ্যে পুরো কারাগার খালি করে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকি সরকার পুনরায় আবু গারিব কারাগার চালু করার ঘোষণা দেয় এবং ঐ কারাগারের নাম পরিবর্তন করে ‘বাগদাদ কেন্দ্রীয় কারাগার’ রাখা হয়। কিন্তু এরপরও দুর্ঘটনা পিছু ছাড়েনি কারাগারটির। ২০১৩ সালে প্রায় ৫০০ জনের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসী জেল থেকে পালিয়ে যায়। এছাড়াও এটি সহ ইরাকের বিভিন্ন কারাগারে আইএস জঙ্গীরা হামলা চালাতে থাকে। এতে করে বিপুল পরিমাণ সরকারি কর্মকর্তার প্রাণহানী ঘটে।
অবশেষে ১৫ এপ্রিল ২০১৪ সালে পুনরায় আইএসের হামলার আশঙ্কায় ইরাক সরকার আবু গারিব কারাগারকে বন্ধ ঘোষণা করা। সেই সময় কারাগারে থাকা ২,৪০০ বন্দীকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
২০১৪ সালে আবু গারিব কারাগার হয়তো বন্ধ হয়। কিন্তু তার প্রতিটি কক্ষ বছরের পর বছর ধরে আর্ত মানুষের যে বুকফাটা হাহাকারের সাক্ষী হয়ে আছে, সেই হাহাকার আজও ভূত হয়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে, ইরাকের প্রতিটি নাগরিককে।