মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে অতি জল্পনা-কল্পনা ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মৃত্যুর পর সঠিক পথে পরিচালিত হবার জন্য তারা কিছু ধর্মীয় নথি অনুসরণ করত। প্রাচীন মিশরের এই ধর্মীয় নথি সমূহের সংকলনকেই মূলত প্রাচীন মিশরীয় ধর্মীয় পাঠ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সহজ ভাষায়, এগুলো ছিল পরকালে যাওয়ার জন্য গোছানো এক মানচিত্র। সকল ধর্মীয় পাঠের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল ফারাওদের সমাধিসৌধতে। ধর্মীয় এই পাঠসমূহ সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়ে প্রাচীন সাম্রাজ্য থেকে শুরু হয়ে মধ্যবর্তী সাম্রাজ্যের কফিন পাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
থোথের গ্রন্থ
প্রাচীন মিশরে থোথকে মানা হতো জ্ঞানের দেবতা হিসেবে। তাই, যেগুলোকে তার লেখা গ্রন্থ মানা হতো, সেগুলোই পরিচিত ছিল থোথের গ্রন্থ হিসেবে। মিশরবিদ মানেথোর মতে, থোথ সর্বমোট ৩৬,৫২৫টি গ্রন্থ লিখেছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে, থোথের গ্রন্থে বেশকিছু চিহ্নিত মন্ত্র আছে, যা পাঠ করলে দেবতা থোথ ওই পাঠককে দুনিয়ার সকল পশুর ভাষা বুঝার ক্ষমতা প্রদান করেন। আর কিছু মন্ত্র আছে, যেগুলো পাঠ করলে পাঠক দেবতাদের মনোভাব বুঝার সক্ষমতা অর্জন করবেন। আর যিনি গ্রন্থটির পুরো বিষয়বস্তু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আয়ত্ত করতে পারবেন, তিনি তামাম দুনিয়া এবং মহাজগতের সকল নিগুঢ় রহস্য উদঘাটন করা তার জন্য হবে বাঁ হাতের খেল।
প্রাচীন এক মিশরীয় গ্রন্থে দাবি করা আছে,
“থোথের গ্রন্থ পাওয়া যাবে কপ্টস নামের এক শহরে। ওই শহরের নীল নদের অতল গভীরে আছে লৌহ-নির্মিত এক বাক্স। এর ভেতরে আবার তামার নির্মিত এক বাক্স, তার ভিতরে কাঠের বাক্স, তার ভিতরে গজদন্ত ও আবলুস কাঠের তৈরি এক বাক্স, তার ভিতর রূপার বাক্স, এবং তার ভিতরে পাওয়া যাবে সোনার এক বাক্স। স্বর্ণের সেই বাক্সতেই মিলবে অধরা থোথের গ্রন্থ। তবে, লোহার বাক্সের বাইরে পাহারা দিচ্ছে অনেক বড় বড় সাপ ও বিচ্ছু। সবকিছু ছাপিয়ে বৃহৎ এক সাপ বাক্সটিকে সার্বক্ষণিক নজরে রাখছে, যে সাপকে কোনো মানুষ বধ করতে পারবে না।”
স্বভাবতই থোথের গ্রন্থ হাসিলের মাধ্যমে কেউ না কেউ নিজের ক্ষমতা বাড়াতে চাইবে। এই নিয়ে মিশরীয় পুরাণে অনেক গল্প চালু আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মিশরীয় রাজকুমার নেফেরকাপ্তাহ-এর গল্প, যিনি শেষ পর্যন্ত গ্রন্থটিকে নিজের বাগে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেতনা ও নেফেরকাপ্তাহের গল্পে সে দুঃসাহসী কাহিনীর বর্ণনা পাওয়া যায়।
পিরামিড পাঠ
পিরামিড পাঠ হচ্ছে প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় পাঠ, যা লিখা হয়েছিল প্রাচীন সাম্রাজ্যের আমলে। খ্রিঃ পূঃ ২৪০০ অব্দ থেকে খ্রিঃ পূঃ ২৩০০ অব্দের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পিরামিড পাঠের অস্তিত্ব মেলে। পিরামিড পাঠ প্রথম লিখা হয়েছিল পঞ্চম রাজবংশের শেষ ফারাও উনাসের পিরামিডে। মোট ২৮৩টি মন্ত্র লিপিবদ্ধ করা ছিল সেখানে। এরমধ্যে ২৭৩ এবং ২৭৪ নম্বর মন্ত্রকে বলা হয় Cannibal hymns বা নরখাদক স্তবগান। ফারাও উনাস ছাড়াও টেটির পিরামিডেও নরখাদক স্তবগানের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। এখানে বর্ণনা করা ছিল, ফারাওরা নিজ শত্রু এবং ঈশ্বরের মাংস ভক্ষণ করেন। সেজন্য প্রথমদিকে মিশর তত্ত্ববিদেরা ভেবেছিলেন, প্রাচীন মিশরীয়রা নরমাংস ভক্ষণ করত। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়, এই নরখাদক স্তবগানগুলো ব্যবহৃত হয়েছিল রূপক অর্থে।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল বলে একে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ধর্মীয় পাঠও বলা হয়। পিরামিড পাঠে প্রায় ৭৬০ এর মতো মন্ত্র পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ফারাও দ্বিতীয় পেপির পিরামিডে সবচেয়ে বেশি মন্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। ৬৭৫টি। পিরামিড পাঠকে বলা যায়, মৃতের গ্রন্থ বা বুক অভ দ্য ডেড-এর পূর্বপুরুষ। শুধুমাত্র রাজকীয় সমাধিতেই এই পাঠ ব্যবহারের চল ছিল।
তবে ক্ষেত্রবিশেষে শুধুমাত্র রানীর জন্য তা ব্যবহারের অনুমতি ছিল। এগুলো লেখা হয়েছিল হায়ারোগ্লিফিকে। অর্থবোধক ভাষার পরিমাণ ছিল কম। অধিকাংশই প্রত্নতাত্ত্বিক ও অপ্রয়োজনীয় পরিভাষাতে পরিপূর্ণ। প্রাচীন সাম্রাজ্যের পঞ্চম ও ষষ্ঠ রাজবংশের সময়ে সাক্কারা এলাকার পিরামিডের দেয়ালে তা উৎকীর্ণ করা হয়েছিল। পিরামিড পাঠ লেখা হয়েছিল মৃত ফারাওদের সেবার জন্যই, যাতে তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত থাকেন।
কফিন পাঠ
পিরামিড পাঠের সাথে কফিন পাঠের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, পিরামিড পাঠের ব্যবহার শুধুমাত্র রাজাদের পিরামিডে ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও, কফিন পাঠ ব্যবহার করা যেত সাধারণ মানুষের জন্য। তাই রাজপরিবার ছাড়াও প্রাচীন মিশরের অনেক ধনকুবের তাদের সমাধিতে এই শোক-লিপি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিলেন। তাই, সে সময় ধারণা করা হতো ফারাও ছাড়াও সাধারণ মানুষ মৃত্যু পরবর্তী জীবনে সঠিক রাস্তায় প্রবেশ করতে পারবে। মধ্য সাম্রাজ্যকালীন সময়ে (খ্রিষ্টপূর্ব ২১৩৪ – খ্রিষ্টপূর্ব ২০৪০ অব্দ) উত্থান ঘটা এই কফিন পাঠের সংখ্যা সম্ভবত ১১৮৫টি। কফিন পাঠের মধ্যে ‘দ্য বুক অভ দ্য টু ওয়েস’ এবং ‘দ্য বুক অব দ্য মুন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দ্য বুক অভ দ্য টু ওয়েসকে সভ্যতার জন্য প্রথম অঙ্কিত মানচিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। পরবর্তী জীবনের নির্দেশনা নিয়ে আঁকা এসব মানচিত্র মূলত পিরামিড পাঠের পরবর্তী সংস্করণ, যা থেকে উৎসাহ নিয়ে আবার মৃতের গ্রন্থ বা ‘বুক অভ দ্য ডেড’ লেখা হয়েছে।
বুক অভ দ্য মুন সরাসরি চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো হলো কফিন পাঠের ১৫৪-১৬০ নম্বর মন্ত্রগুলো নিয়ে গঠিত একটি অংশ, যেখানে শুধু চাঁদ নিয়েই সুস্পষ্ট সকল বর্ণনা রয়েছে। যেমন- মাসের উৎপত্তি (১৫৪), চন্দ্রগ্রহণ (১৫৫), পূর্ণিমা (১৫৭), চাঁদের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি (১৫৬) ইত্যাদি। কফিন পাঠে জোর দেওয়া হয়েছিল ওসাইরিস শাসিত পরকালের পাতালপুরী ‘দুয়াত’কে নিয়ে।
মৃতের গ্রন্থ
মৃতদের গ্রন্থ লেখা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দের কাছাকাছি সময় থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ অব্দ পর্যন্ত। মৃতের গ্রন্থের সূচনা মূলত দ্বিতীয় মধ্যবর্তী সময়ে। তবে এর বহুল ব্যবহার শুরু হয় নতুন সাম্রাজ্যের আমলে। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থানের পর মৃত ব্যক্তিকে ঠিক কী করতে হবে, তা নিয়ে মৃত ব্যক্তি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগবে। তাদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্যই এই ‘মৃতের গ্রন্থ’ নামক ব্যবস্থার আয়োজন। ‘বুক অভ দ্য ডেড’ এর বিস্তর ক্রমবিকাশ ঘটে মিশরের নতুন সাম্রাজ্যের উত্থানকে সাথে নিয়ে। তখন থেকে মৃতের গ্রন্থ দেয়ালে লেখার বদলে প্যাপিরাসের নথিতে লিখে সমাধিতে মৃতদেহের একপাশে রেখে দেওয়া হতো।
তৃতীয় মধ্যবর্তী সময়ে মৃতদের গ্রন্থ লেখা হতো হায়রাটিক লিপিতে। মৃতের গ্রন্থে খণ্ড খণ্ড আকারে প্রায় ১৯২টি মন্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থানের পর কীভাবে কী করতে হবে- এই মন্ত্রসমূহে সে নির্দেশনাই বলে দেওয়া ছিল। কার্ল রিচার্ড লেপ্সিয়াস টলেমি যুগের একটি লিপি অনুবাদের পর এর নাম দেন বুক অভ দ্য ডেড। মন্ত্রগুলোর বিন্যাস ঘটেছিল মূলত তার হাত ধরেই। তিনি সর্বমোট ১৬৫টি মন্ত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। পিরামিড-কফিন পাঠসমূহে নরখাদক স্তবগানের উল্লেখ থাকলেও, মৃতদের গ্রন্থে এমন কিছুর উল্লেখ ছিল না। (মৃতের গ্রন্থ নিয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন- বুক অভ দ্য ডেড: প্রাচীন মিশরীয়দের মৃত্যু পরবর্তী পথ প্রদর্শক)
আমদুয়াত
প্রাচীন মিশরের নতুন সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কিত যেসব গ্রন্থ পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে আমদুয়াত অন্যতম। একবিংশ রাজবংশ পর্যন্ত শুধুমাত্র ফারাওদের জন্য এটি ব্যবহারের একচেটিয়া চল ছিল। নতুন সাম্রাজ্যের ফারাও তৃতীয় তুথমোসের সমাধিতে আমদুয়াতের প্রাথমিক সংস্করণের সম্পূর্ণ অংশ পাওয়া গিয়েছিল। আমদুয়াতে সূর্য দেবতা ‘রা’ এর কিছু কাহিনী বেশ খোলাখুলিভাবেই বর্ণনা করা আছে।
বলা হয়েছে, যখন পূর্বদিকে সূর্য উদিত হয় এবং পশ্চিমে অস্ত যায়, তখন দেবতা ‘রা’ পাতালপুরীর ভেতর দিয়ে যাত্রা করেন। ধারণা অনুযায়ী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা মৃত ফারাও একই পথে যাত্রা শুরু করে রা’র সাথে অমর হয়ে থাকতেন। পাতালপুরীর এই দীর্ঘ যাত্রার প্রতি ঘণ্টায় ফারাওকে বিভিন্ন রাক্ষস ও দানবদের মুখোমুখি হতে হয়। আমদুয়াতে এসব রাক্ষস-খোক্কস ও দানবের নাম বর্ণনা করা আছে। আমদুয়াতের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত ফারাওয়ের আত্মাকে এসব দানবদের নাম জানানো, যাতে তিনি সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় দেবতাদের স্মরণ করতে পারেন।
ফটকের গ্রন্থ
আমদুয়াতের মতো ‘ফটকের গ্রন্থ’ও নতুন সাম্রাজ্যের আমলের একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার গ্রন্থ। একটি আত্মাকে পরকালে যেতে হলে মোট বারোটি ফটক পার হতে হয়। প্রতিটা ফটক নির্দিষ্ট কিছু দেব-দেবীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফটক পার হতে হলে অবশ্যই সে দেবদেবীকে চিনতে হবে ওই আত্মার।
মানবজাতিকে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে বলে এই গ্রন্থে উল্লেখ করা ছিল। ভাগগুলো হচ্ছে, রেথ (মিশরীয়), আমু (এশিয়াটিক), নেহেসু (নুবিয়ান), থেমেহু (লিবিয়ান)। নতুন সাম্রাজ্যের বহু সমাধিতেই ফটকের গ্রন্থ সংশ্লিষ্ট লেখা ও চিত্রের সন্ধান মিলেছে। এছাড়াও, নতুন সাম্রাজ্যের ফারাওদের সমাধি নির্মাণকারী শ্রমিকদের প্রাচীন গ্রাম দেইর-এল-মদিনাতে সেননেডজেম নামের একজন শ্রমিকের সমাধিতেও ফটকের গ্রন্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গুহার গ্রন্থ
গুহার গ্রন্থ থেকে প্রাচীন মিশরীয়দের নরকের ধারণার শক্তপোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। এই গ্রন্থের উৎপত্তি খ্রিষ্টপূর্ব তেরশ’ শতাব্দীর রামেসাইড যুগে। সূর্য দেবতা রা পাতালপুরীতে যাত্রা কালে ছয়টি গুহা অতিক্রম করার কাহিনী পৃথিবীতে বিপথগামীদের জন্য নরকের অনন্ত বিভীষিকাময় শাস্তি- এসবই বর্ণনা করা হয়েছে গুহার গ্রন্থে। এর প্রাচীনতম সংস্করণ আবিদোসের ওসাইরিয়নের বামদিকের দেয়ালে অবস্থিত। চতুর্থ রামেসিসের সমাধিতেও গুহার গ্রন্থ পাওয়া গেছে।
পৃথিবীর গ্রন্থ
পৃথিবীর গ্রন্থ মূলত গুহা গ্রন্থের সহযোগী হিসেবে সুপরিচিত। Book of the Earth নামে খ্যাত এই গ্রন্থ প্রাচীন মিশরীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি গ্রন্থ। প্রাথমিকভাবে এটি ফারাও মেরনেপ্তাহ, টুসরেট, তৃতীয়, ষষ্ঠ, ও সপ্তম রামেসিসের সমাধিতে পাওয়া গেছে। এই গ্রন্থের মূল কাহিনী হচ্ছে ওসাইরিস এবং রা, এবং বা-কে ঘিরে। এই গ্রন্থে উল্লেখ আছে, সূর্যদেবতা পৃথিবীর দেবতা আকারের ভিতর দিয়ে যাত্রা করেন।
স্বর্গীয় গাভীর গ্রন্থ
স্বর্গীয় গাভীর গ্রন্থের পাঠসমূহের কিছু অংশ প্রথম মধ্যবর্তী সময় এবং মধ্যবর্তী রাজবংশীয় যুগে লিখিত হলেও বিস্তৃতভাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল নতুন রাজবংশের আমলে। ফারাও তুতানখামুন, সেটি দ্য ফার্স্ট, রামেসিস দ্য সেকেন্ড, রামেসিস দ্য থার্ড, এবং রামেসিস দ্য সিক্সথ-এর সমাধিসৌধে এই গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছিল। দেবতা রা’র বিরুদ্ধে মানবসমাজের বিদ্রোহ, দেবী হাথোরের সাহায্যে সে বিদ্রোহীদের দমন, পরবর্তীতে রা’র মনে অনুগ্রহের সঞ্চার, সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এবং পৃথিবীকে সুমহান মর্যাদায় আসীন করা- এসবই স্বর্গীয় গাভীর গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়াবলী।
একে মেসোপটেমিয়ান মহাপ্লাবন পুরাণ, এবং বাইবেল ও কুরআনে বর্ণিত নুহ (আ) এর নৌকা এবং মহাপ্লাবনের কাহিনীর সাথে তুলনা দেওয়া যেতে পারে। এই গ্রন্থে কোনো বিভাজন ছিল না। পরবর্তীতে মিশর তত্ত্ববিদেরা এটিকে ‘মানবজাতির ধ্বংস’, ‘রা’র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার’, ‘স্বর্গীয় গাভী’, ‘নয়া পৃথিবী’, ‘নুট ও রা’র জাদু’ এই পাঁচটি অংশে বিভক্ত করেছেন। সমাধিতে প্রাপ্ত কোনো পাঠই সম্পূর্ণ ছিল না। গবেষকরা মোটামুটি একটা কাহিনী দাঁড় করাতে পারলেও, এর উপসংহার খুঁজে পাননি।
শ্বাস-প্রশ্বাসের গ্রন্থ
শ্বাস-প্রশ্বাসের গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে আত্মার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। এটি মৃতের গ্রন্থের একটি সরল রূপ। এর প্রাচীনতম সংস্করণের সময়কাল হলো আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ অব্দ। বাকি সংস্করণগুলো পাওয়া গেছে মিশরের টলেমিক ও রোমান যুগে, খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষ ভাগে। এই গ্রন্থের নাম শ্বাস-প্রশ্বাস রাখা হয়েছে রূপক অর্থে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে, মৃত ব্যক্তির আত্মা মৃত্যুর পর কীভাবে জীবিত থাকবে।
অনন্তকালের গ্রন্থ
The Book of traversing বা অনন্তকালের গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায় টলেমিক ও রোমান যুগে। এর প্রাচীনতম সংস্করণ লেখা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ – খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ অব্দের দিকে। মৃত আত্মা কীভাবে দেবতা ওসাইরিসের সাথে সম্পৃক্ত, সেটাই বর্ণনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এছাড়াও মৃত আত্মা মিশরের বিভিন্ন দেব মন্দির পরিদর্শন করছে, বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে- এসবই ঘুরে ফিরে এসেছে এই গ্রন্থে।
প্রাচীন মিশরের এই ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ ইতিহাস খণ্ডের এক অমূল্য সম্পদ। যা দ্বারা উদঘাটন হয়েছে প্রাচীন মিশরের অজানা ইতিহাস ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এক পৌরাণিক উপাখ্যান।