সম্রাট হুমায়ুনের হিন্দুস্তান পুনরুদ্ধার: কান্দাহার, কাবুল আর বাদাখশানের যুদ্ধ

১৫৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাসিত মুঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন পারস্যের সিস্তান ত্যাগ করে কান্দাহারের মাটিতে পা রাখলেন। সম্রাটের সাথে সেখানে পা রাখে পারস্যের শাহের দেওয়া ১২ হাজার সৈন্যের মাঝারি আকারের সেনাবাহিনীটিও।

এ সময় আসকারি মির্জা কামরান মির্জার অধীনে থেকে কান্দাহার শাসন করছিলেন। হুমায়ুন যখন কান্দাহারের সীমান্তে এসে পৌঁছান, আসকারি মির্জা তখন কান্দাহারেই ছিলেন। আর কামরান মির্জা ছিলেন কাবুলে। সম্রাট হুমায়ুন এবার আর কূটনৈতিক তৎপরতায় কোনো সময়ক্ষেপণ না করেই সোজা বুস্ত দুর্গ অবরোধ করে বসলেন। কামরানের যোদ্ধারা দুর্গ ধরে রাখতে না পেরে আত্মসমর্পণ করলো। সম্রাট এরপর গেলেন গরমশিরের দিকে। দুর্গপতি মীর আবদুল হাই গরমশিরের দুর্গটি সম্রাটের নিকট সমর্পণ করে দিলেন। 

এদিকে হুমায়ুনের পারস্যের সাহায্যপ্রাপ্তির কথা কামরান মির্জা ও আসকারি মির্জা জানতেন। তারা মোটামুটি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু টানা দুটি দুর্গের পতনে আসকারি মির্জা বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তাই তিনি কান্দাহার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। নিজের সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজকোষ একত্রিত করলেন। কিন্তু প্রচণ্ড শীত আর বরফঢাকা পথের দুর্গমতার জন্য কাবুলের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করা সম্ভব হচ্ছিলো না।

এদিকে আসকারি মির্জার পলায়নের তৎপরতার সংবাদ শোনা মাত্র সম্রাট ৫ হাজার পারস্য যোদ্ধাকে পাঠিয়ে দিলেন তাকে আটক করার জন্য। এই সেনাবাহিনীটি কান্দাহার দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছালে তিনি কামরান মির্জার কাছে জরুরি ভিত্তিতে সামরিক সহায়তা চেয়ে বার্তা পাঠালেন। কামরান মির্জাও তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়ে সম্রাটের বাহিনীকে বাঁধা দিতে কাসিম হুসেনের নেতৃত্বে একটি ছোট সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিলেন।

একইসাথে কুরবান করাকল বেগীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল পাঠানো হলো সম্রাট পুত্র আকবরকে কান্দাহার থেকে কাবুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আসকারি প্রথমে আকবরকে সম্রাটের হাতে তুলে দিতে চাইছিলেন, কিন্তু সব ভেবে তাকে কাবুলে পাঠানোই ভালো মনে করলেন। পথের দুর্গমতা সত্ত্বেও দ্রুত তাকে কাবুলের উদ্দেশ্যে পাঠানো হলো। এ সময় আকবরের সাথে গেলেন তার দুই দুধ মা মাহম আগা আর জীজী আগা। সাথে আরো ছিলেন এটকা খানসহ কিছু আমীর।

আকবরকে নিয়ে কামরান মির্জার পরিকল্পনা খুবই সহজ ছিল। কোনোভাবেই বিপদ এড়ানো না গেলে আকবরকে নিয়ে দর কষাকষি করা হবে! 

এদিকে কাবুল থেকে কামরান মির্জার পাঠানো যোদ্ধাদের নিয়ে হুমায়ুনের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিলেন আসকারি মির্জা। ফলস্বরুপ সম্রাট হুমায়ুনকে আসকারি মির্জার সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামতে হলো।

ইস্ফাহানের চেহেল সতুন প্রাসাদের দেয়ালে ঝোলানো শাহ তামাস্পের একটি ফ্রেসকো; Image Source: Wikimedia commons

১৫৪৫ সালের মার্চ মাসের শুরুর দিকে দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো। প্রচণ্ড লড়াই হলো। পারস্যের সেনাবাহিনী নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিলো এ যুদ্ধে। আসকারি মির্জাকে বাধ্য হয়ে পিছু হটতে হলো। দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাবাহিনী নিয়ে পিছু হটে তিনি কান্দাহারের দুর্গে আশ্রয় নিলেন। তার আশা ছিলো কান্দাহার দুর্গের শক্তিমত্তা আর দুর্গমতার জন্য হুমায়ুন কান্দাহারকে এড়িয়ে অন্যান্য অঞ্চল দখলে মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু আসকারির সব ধারণা উড়িয়ে দিয়ে ২১ মার্চ সম্রাট হুমায়ুন কান্দাহার দুর্গ অবরোধ করে বসলেন।

সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এই দুর্গটি ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতো। এটি কান্দাহার আর পারস্যের মধ্যকার একটি সংযোগ সেতু হিসেবে ভূমিকা পালন করতো। কাজেই এই দুর্গটি এড়িয়ে যাওয়া কোনো বিচক্ষণ জেনারেলের কাজের মাঝে পড়ে না। তাছাড়া সম্রাট শাহকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন যে কান্দাহার তিনি শাহকে দিয়ে দেবেন। কাজেই দুর্গটি দখল করা সম্রাটের জন্য আবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।

এদিকে কান্দাহার দুর্গের শক্তিমত্তার কথা সম্রাট জানতেন। তাই তিনি অযথা আক্রমণ করে নিজের শক্তিক্ষয় না করে আলাপ-আলোচনার জন্য দূত হিসেবে বৈরাম খানকে কাবুলে পাঠালেন।

বৈরাম খানের এই কূটনৈতিক মিশন শুধু যে কামরান মির্জার সাথে আলাপ আলোচনার জন্যই ছিল তা না। বরং বৈরাম খানকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব দিয়ে কাবুলে পাঠিয়েছিলেন সম্রাট।

বৈরাম খানের কাবুল যাত্রার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল হিন্দাল মির্জাসহ অন্যান্য মুঘল আমীরদের সাথে সাক্ষাৎ করা। একইসাথে সম্রাটের প্রতি তাদের সমর্থন আদায় করে সম্ভব হলে সামরিক সহায়তার ব্যবস্থা করা।

এই কূটনৈতিক মিশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল কামরানের দরবার ও সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা যাচাই করা। তাছাড়া আকবরের অবস্থাও জানা প্রয়োজন ছিল।

বৈরাম খান; Image Source: Wikimedia commons

বৈরাম খান দ্রুতই কাবুলে পৌঁছে গেলেন। কামরানের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানালো হলো বটে, তবে তার উপর নজরদারী করার জন্য কিছু গুপ্তচরও নিয়োগ করা হলো। গুপ্তচররা বৈরাম খানের প্রতিটি পদক্ষেপের খবর কামরান মির্জাকে জানাবে।

কাবুলে পা রাখার তিনদিন পর কামরান ও বৈরাম খানের সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করা হয়। তাদের মাঝে ঠিক কী আলোচনা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। তবে কামরানের সাথে সাক্ষাৎ শেষ করে বৈরাম খান হিন্দাল মির্জা ও সুলেমান মির্জার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা মূলত কামরানের বন্দী হিসেবে কাবুলে অবস্থান করছিলেন।

বৈরাম খান এরপর ইয়াদগার নাসির মির্জাসহ অন্যান্য মুঘল আমিরদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। সব শেষে সাক্ষাৎ করলেন শিশু রাজপুত্র আকবরের সাথে। এরপর খালি হাতে সোজা কান্দাহারে সম্রাটের নিকট ফিরে গেলেন।

বৈরাম খানের কূটনৈতিক মিশন ঠিক কতটা সফল হয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা না গেলেও পরে বোঝা যায় মিশন সম্পূর্ণ সফল হয়েছিল।

বৈরাম খান কান্দাহারে আসার পরই কামরান হিন্দালকে মুক্তি দিয়ে খানজাদা বেগমকে সন্ধির আলাপ আলোচনার জন্য কান্দাহারে প্রেরণ করলেন। সুলেমান মির্জাকেও মুক্তি দেওয়া হলো। তিনি ফিরে গেলেন বাদাখশানে। সুলেমান মির্জার সাথে বাদাখশান গেলেন ইয়াদগার নাসির মির্জা।

আর অন্যদিকে মুক্তি পেয়েই হিন্দাল মির্জা যে পরিমাণ আমির একত্রিত করতে পেরেছিলেন, তাদের নিয়েই কান্দাহারের সম্রাটে সাথে মিলিত হলেন। আমিরদের মাঝে উলুগ মির্জা, কাসিম হুসেন সুলতান উল্লেখযোগ্য ছিলেন।

পরিণত বয়সে যুবরাজ মির্জা হিন্দাল। তবে ছবিটি আসলেই মির্জা হিন্দালের কি না, তা নিশ্চিত নয়; Image Source: Wikimedia Commons

কামরান খানজাদা বেগমকে আলোচনার জন্য তো প্রেরণ করলেন, কিন্তু একইসাথে কান্দাহার দুর্গে গোপন বার্তা প্রেরণ করলেন। বার্তায় তিনি আসকারিকে জানালেন, আলোচনার নাম করে তিনি আসলে সময়ক্ষেপণ করছেন। শীঘ্রই তিনি কান্দাহারে আসবেন। ততদিন পর্যন্ত আসকারি যেন দুর্গ ধরে রাখে।

এদিকে বৈরাম খান ফিরে আসার সাথে সাথে হুমায়ুন কান্দাহার অবরোধ আরো শক্ত করলেন। অবস্থা সঙ্গিন দেখে আসকারি মির্জা বুঝলেন এভাবে চলতে থাকলে কামরান আসার আগেই দুর্গের পতন ঘটে যাবে। কাজেই বাধ্য হয়ে আসকারি মির্জা সম্রাট হুমায়ুনের নিকট যুদ্ধবিরতির প্রার্থনা জানিয়ে বার্তা পাঠালেন।

সম্রাট হুমায়ুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পাত্তা না দিয়ে আরো শক্ত করলেন অবরোধ। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে আসকারির বাহিনীতে দলত্যাগের ঘটনা বাড়তে লাগলো। উপায় না পেয়ে আসকারি মির্জা সম্রাট হুমায়ুনের সাথে সন্ধি করতে চাইলেন। তিনি প্রস্তাব দিলেন, তাকে কাবুল যেতে দিলে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু সম্রাট হুমায়ুন তার এই শর্ত মানলেন না।

অনেকটা বাধ্য হয়েই বিনা শর্তে আসকারি মির্জাকে সম্রাটের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হলো। অবশেষে দীর্ঘ ৫ মাস অবরোধের পর ১৫৪৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সম্রাট হুমায়ুন কান্দাহার দুর্গের দখল বুঝে নিলেন।

আসকারি মির্জা ইতোপূর্বে হুমায়ুনের সাথে যে আচরণ করেছিলেন তার পরিণামস্বরূপ ভবিষ্যতে তার উপর কী হতে যাচ্ছে, তা তিনি ভালোই বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু আসকারির এ দুঃসময়ে তার জন্য এগিয়ে এলেন সম্রাট বাবরের অতি আদরের ছোটবোন খানজাদা বেগম। তিনি আসকারির জন্য সম্রাট হুমায়ুনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।

ফুপুর এ অনুরোধ সাম্রাজ্যহারা সম্রাট হুমায়ুন অগ্রাহ্য করতে পারলেন না। আসকারিকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। তবে তাকে পরবর্তী কিছুদিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

শাহের সাথে পূর্বে করা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সম্রাট হুমায়ুন কান্দাহার দুর্গ শাহের পুত্র শাহজাদা মুরাদের নিকট সমর্পণ করেন। শাহজাদা মুরাদ নাবালক হওয়ায় তার পক্ষে দুর্গ রক্ষার ভার গ্রহণ করলেন বুদাগ খান। কান্দাহার থেকে প্রাপ্ত অর্থ সম্রাট শাহের জন্য পারস্যে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে চারবাগ চলে যান।

শাহের নিকট যখন এ রাজকোষ গিয়ে পৌঁছাল, তখন সম্রাট হুমায়ুনের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টিতে অভিভূত হয়ে যান। তিনি সম্রাটকে উপহার হিসেবে রাজকীয় খেলাত আর একটি দ্রুতগামী খচ্চর প্রেরণ করলেন।

এদিকে পারস্যের সেনাবাহিনীর দুর্গের দখল বুঝে পাওয়ার পর বাধে আরেক বিপত্তি। মুঘলদের সাহায্য করায় বুদাগ খান নিজেদের উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ভেবে অদ্ভুত এক আত্মগরিমায় ভুগতে লাগলেন। নিজের এ নির্লজ্জ মনোভাব প্রকাশ করলেন খুবই বিচিত্র আর অদ্ভুত এক দাবির মাধ্যমে।

বুদাগ খান স্বয়ং সম্রাটকে ধনরত্নসহ শাহের নিকট উপস্থিত হওয়ার এবং আসকারিকে শাহের নিকট বন্দী হিসেবে পারস্যে প্রেরণ করার দাবি করে বসলেন। সম্রাট হুমায়ুন তার এ দাবি শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন।

প্রথমত, তাদের দাবি মোতাবেক শাহের নিকট উপস্থিত হওয়াটা সম্রাটের জন্য রীতিমতো অসম্মানজনক এবং এটা কোনো যুক্তিতেই বাস্তবসম্মত নয়। দ্বিতীয়ত, আসকারি মির্জা যতই অন্যায় করুক না কেন, তিনি স্বয়ং সম্রাটের ভাই। এভাবে বন্দী হিসেবে আসকারি মির্জাকে অন্য সাম্রাজ্যের অধিপতির নিকট প্রেরণ করাটা স্বয়ং সম্রাটের জন্যই অপমানের বিষয়।

কিন্তু বুদাগ খানও নাছোড়বান্দার মতো ক্রমাগত একই দাবি জানাতে লাগলেন। সম্রাট হুমায়ুন বুগাদ খানের এ ধরনের স্পর্ধায় বিরক্তবোধ করতে লাগলেন। তিনি দ্রুত সেনাবাহিনীর সবগুলো কামান আর পঞ্চাশজন অশ্বারোহীকে সম্রাটের শিবিরের পাশে অবস্থান নিতে বললেন। অবস্থা বেগতিক দেখে বুদাগ খান শুধুমাত্র ধনরত্ন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হলো।

ঘটনাটা এভাবেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু শেষ হলো না। এই ঘটনার কিছুদিন পরের কথা। সম্রাট দুর্গের অভ্যন্তরের সুন্নীদের থেকে বেশ কিছু বার্তা পান। বার্তায় তাকে জানানো হয়, দুর্গের দখল বুঝে পাওয়ার পর দুর্গে অবস্থানরত সুন্নীদের উপর পারস্যের শিয়ারা অবর্ণনীয় অত্যাচার নির্যাতন চালানো শুরু করে।

এ বিষয়টি পুরো ব্যাপারটিকে আরো খারাপের দিকে ঠেলে দেয়। এদিকে পারস্যের সৈন্যরা ভেবেছিল সম্রাট হুমায়ুন হিন্দুস্তানে মাটিতে পা রাখলেই খুব সহজে হিন্দুস্তান দখল করে নিতে পারবেন। আর তারাও দ্রুত নিজেদের সাম্রাজ্যে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে তারা কান্দাহারেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিরোধ দেখে কিছুটা দমে গেল। ফলশ্রুতিতে, কান্দাহার দখলের পর যোদ্ধারা আর কান্দাহার থেকে অগ্রসর হয়ে হুমায়ুনকে সঙ্গ দিতে ইচ্ছুক ছিল না।

ইতোমধ্যেই কান্দাহার দুর্গ থেকেই পারস্যের যোদ্ধাদের পলায়নের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছিল। যদিও সম্রাটের সাথে শাহের চুক্তি হয়েছিল যে, শাহের দেওয়া এ বাহিনীটি সম্রাট কাবুল দখল করা পর্যন্ত তাকে সাহায্য করবে।

এরই মাঝে ঘটে আরেক বিপত্তি। সম্রাট হুমায়ুন তখন কাবুল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় কান্দাহার দুর্গের অধিপতি শিশু শাহজাদা মুরাদ হঠাৎ করেই মারা গেলেন। কাবুল অভিযানের প্রস্তুতি নিতে নিতেই প্রচণ্ড শীত পড়ে গিয়েছিল। এই শীতে সম্রাট হুমায়ুনের বাহিনীর পক্ষে চারবাগের খোলা মাঠে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারপরও শীত উপেক্ষা করে পুরুষরা না হয় কোনোভাবে টিকে থাকবে, কিন্তু নারীদের কী হবে? উপায় না পেয়ে সম্রাট বুদাগ খানের নিকট দুর্গের অভ্যন্তরে নারীদের জন্য নিরাপদ স্থান আর প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রীর সহায়তা চান। বুদাগ খান সম্রাটের এ দাবিকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন।

পার্সিয়ানদের এ ধরনের অসহযোগীতা আর ঔদ্ধত্য দেখে সম্রাটের কিছু আমির সম্রাটকে পুনরায় কান্দাহার দুর্গ দখলের পরামর্শ দিতে লাগলেন। সম্রাটও ভেবে দেখলেন, পার্সিয়ানদের কাছ থেকে যেহেতু আন্তরিক কোনো সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না, কাজেই দুর্গ পুনরায় দখল করে নিতে অসুবিধা কোথায়?

এদিকে সম্রাট এতদিনে কিছুটা স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন। পুরনো মুঘল যোদ্ধারা সম্রাটের বাহিনীতে এসে যোগ দিয়েছে। আরো নতুন সৈন্য ভর্তি করা হচ্ছে। এ বাহিনী নিয়ে কাবুল দখল করতে চাইলে আগে অন্তত শীতটা টিকে থাকতে হবে। কিন্তু নিরাপদ কোনো আশ্রয় ছাড়া এ বাহিনী টিকবে কীভাবে?

সব ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন দুর্গ দখলের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিছুদিন পরে হাজী মুহাম্মদ কোকার নেতৃত্বে রাতের এক ঝটিকা হামলার মাধ্যমে সম্রাট অনায়াসে কান্দাহার দুর্গ দখল করে নিলেন। অপ্রস্তুত অবস্থায় জাপটে ধরায় পার্সিয়ানরা কোনো বাঁধাই দিতে পারেনি। বুদাগ বেগ তার বাহিনী নিয়ে দ্রুত দুর্গ ত্যাগ করে পারস্যের দিকে চলে গেলেন।

দুর্গ দখলের পর প্রথমেই সম্রাট বৈরাম খানকে দুর্গের অধিপতি হিসেবে ঘোষণা দিলেন। এরপর শাহের কাছে পত্র লিখলেন,

বুদাগের ব্যবহার ঠিক ছিল না। আর শাহজাদা মুরাদ মারা যাওয়ায় বৈরাম খানকে কান্দাহার জায়গীর হিসেবে দেয়া হলো।

বৈরাম খান শিয়া মতাবলম্বী হওয়ায় শাহ সম্রাটের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। কান্দাহার বিজয়ের পর কান্দাহারকে বিভিন্ন জায়গীরে ভাগ করে সম্রাট তার আমিরদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। এরপর সম্রাট দ্রুত কাবুলে অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।

সম্রাট হুমায়ুন এ সময় বেশ অর্থসংকটে ছিলেন। কান্দাহার দুর্গের রাজকোষ আগেই শাহের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাজেই নিরুপায় হয়ে কাবুলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধারে বিপুল সংখ্যক ঘোড়া কিনলেন। চুক্তি হলো হিন্দুস্তান বিজয়ের পর সম্রাট তাদের অর্থ শোধ করে দেবেন। এ ঘটনা থেকেই সম্রাটের প্রতি জনগণের ভালোবাসার পরিমাণ টের পাওয়া যায়।

যতটা সম্ভব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মাত্র ২ হাজার সৈন্য নিয়ে সম্রাট কিছুদিনের মাঝেই দুর্গম পথে কাবুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলেন।

গুপ্তচরদের মাধ্যমে কামরান হুমায়ুনে এ অভিযানের সংবাদ পেয়ে দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নিলেন। কাবুল রক্ষায় তিনি তার সেনাবাহিনী একত্রিত করলেন। একইসাথে কাসিম বারলাসের নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠালেন। এই বাহিনীটি সম্রাটকে খিমার গিরিপথের প্রবেশ মুখে বাঁধা দেবে। এই বাহিনীর সাথে কামরান মীর আতিশ কাসিম মুখলিস তুরবাতীর নেতৃত্বে একটি গোলন্দাজ বাহিনীও প্রেরণ করলেন।

কামরানের পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্রাট হুমায়ুনের খুব সহজেই পরাজিত হয়ে পিছু হটার কথা ছিল। কিন্তু খ্বাজা মুয়াজ্জম বেগ, হাজী মুহাম্মদ কোকা, তোলক তোরচী আর শের আফগানের মতো জেনারেলদের দক্ষতায় খিমার গিরিপথ থেকে কামরানের বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। এরপর সম্রাট সেই গিরিপথ থেকে বেরিয়ে এলেন।

এদিকে ক্রমাগত অগ্রগতি আর সফলতা দেখে সম্রাট হুমায়ুনের দলে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকল। এর মাঝে সাধারণ সৈন্য থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের আমির পর্যন্ত ছিলেন। কামরানের অনুগত কর্মকর্তারাও দলে দলে সম্রাটের আনুগত্য স্বীকার করছিল। এ দলে স্বয়ং কামরানের প্রধানমন্ত্রী বাবুস বেগ থেকে শুরু করে মীর আতিশ কাসিম মুখলিস তুরবাতী আর মীর আরজ সাইয়্যিদ আব্বাসও ছিলেন।

এদিকে সম্রাটের অনুগতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় কামরান গেলেন ভড়কে। তিনি সম্রাটের নিকট সন্ধির প্রস্তাব দিলেন। সম্রাট শর্ত দিলেন কামরানকে নিজে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কামরান হুমায়ুনের এই বার্তার কোনো উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এক রাতে নিজের স্ত্রী, পুত্র মির্জা ইব্রাহীম আর অনুগত সেনাবাহিনী নিয়ে কামরান গজনীর দিকে পালিয়ে গেলেন। তাকে ধাওয়া করার জন্য সম্রাট মির্জা হিন্দালকে নির্দেশ দিলেন। হিন্দাল কামরানের পেছন পেছন ছুটলে লাগলেন। এদিকে কামরান হাজারা জেলা হয়ে সিন্ধুতে গিয়ে থিতু হলেন। পূর্বে করা সন্ধি অনুযায়ী সিন্ধুর শাসক শাহ হুসেন আরগুনের কন্যাকে বিয়ে করলেন।

কামরান কাবুল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর খুব সহজেই কাবুল বিজয় করা হয়। ১৫৪৫ সালের ১৭ নভেম্বর সম্রাট কাবুলে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ব্যাপক অভ্যর্থনা পেলেন।

এরপর সম্রাট দ্রুত নিজের প্রশাসন গোছাতে শুরু করলেন। বাবুস বেগকে নগর রক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলেন। হিন্দাল মির্জাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো গজনীর। আর উলুগ মির্জা পেলেন জমীনদাওয়ার আর তীরনীর দায়িত্ব।

সম্রাট হুমায়ুন কিন্তু চৌসা আর কনৌজের যুদ্ধে মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য জীবন দেওয়া যোদ্ধাদের কথা ভুলে যাননি। সুযোগ আর সামর্থ্য হওয়া মাত্রই কাবুলে সম্রাট হুমায়ুন সেসব নিহত বীর যোদ্ধাদের পরিবারকে যথাসম্ভব আর্থিক সহায়তা দিলেন।

সম্রাটের কাবুল বিজয়ের পর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। বাদাখশান থেকে ইয়াদগার নাসির মির্জা সম্রাটের নিকট ফিরে আসেন। হুমায়ুনের কাছে তিনি তার পূর্বের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। হুমায়ুন তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু কিছুদিন পরই আবার তিনি তার স্বভাবমতো সম্রাটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবার তাকে বন্দী করা হয়।

কিছুদিন পরেই তিনি কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। এতে সম্রাট চূড়ান্ত বিরক্ত হলেন। তাকে আর ক্ষমা না করে তার কৃতকর্মের তালিকা প্রস্তুত করা হলে দেখা যায় তিনি মোট ৩০টি অপকর্মের জন্য দায়ী। বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এর সাথে সাথে পতন ঘটে সম্রাটের সাথে বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করা ইয়াদগার নাসির মির্জার।

এদিকে সুলেমান মির্জা তার পূর্বপুরুষদের ভূখণ্ড বাদাখশানে গিয়ে খুব সহজেই তা দখল করতে সক্ষম হন। বাদাখশান দখলের পর খুব দ্রুতই খুস্ত, আন্দরাব আর কুন্দুজ বিজয় করে নেন। নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথেই তার ভেতরে সার্বভৌমত্বের চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সম্রাট হুমায়ুনের বিরুদ্ধে তিনি সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কারণ তিনি জানেন, শীঘ্রই সম্রাট বাদাখশানে আসবেন।

এদিকে সম্রাট সুলেমান মির্জার বিদ্রোহের ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে তাকে কাবুলে উপস্থিত হওয়ার জন্য রাজকীয় ফরমান পাঠান। সুলেমান মির্জা রাজকীয় ফরমানের জবাবে বললেন, কামরান মির্জার সাথে আমার চুক্তি হয়েছে বিনা যুদ্ধে যেন আমি আপনার কাছে ধরা না দিই। আমি এই চুক্তি রক্ষা করব।

সম্রাট হুমায়ুন বুঝলেন যুদ্ধ আসন্ন। ১৫৪৬ সালে বাদাখশান দখলের উদ্দেশ্যে তিনি সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন। কাবুল অধিকারের পর পরই সম্রাটকে শুভেচ্ছা জানাতে পারস্যের দূত হুমায়ুনের দরবারে এসেছিলেন। এই অভিযানে পারস্যের দূত আর কিছু পারসিক সৈন্য হুমায়ুনের সাথে অভিযানে অংশগ্রহণ করলেন। পারস্যের এই ক্ষুদ্র বাহিনীটির চরম রণদক্ষতায় সম্রাটের বাদাখশান অভিযান খুব সহজেই সফল হয়েছিল।

সম্রাট হুমায়ুন; Artist: Kailash Raj

হুমায়ুনকে বাঁধা দিতে সুলেমান মির্জা তীরগরানে নিজের সৈন্য মোতায়েন করলেন। এখানেই মুঘল সেনাবাহিনী সুলেমান মির্জার বাহিনীর মুখোমুখি হয়। সুলেমান মির্জা বেশ বীরত্ব দেখালেও দীর্ঘদিন ঠোকর খেয়ে খেয়ে পরিণত হওয়া মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলেন না। অল্পতেই তিনি পরাজিত হয়ে খুস্ত থেকে কুলাবে চলে যান। সম্রাট হুমায়ুন আরো অগ্রসর হয়ে খুস্ত বিজয় করলে তিনি কলাগান হয়ে দ্রুত কিশমে পালিয়ে যান।

সুলেমান মির্জার শোচনীয় পরাজয়ের ফলে তার বাহিনীর বড় একটি অংশ সম্রাটের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। তাছাড়া বাদাখশান দরবারের প্রভাবশালীরাও সম্রাটের আনুগত্য স্বীকার করে নেয়।

যুদ্ধের পরপরই অধিকৃত ভূখণ্ড তার আমিরদের মাঝে বন্টন করে দিলেন সম্রাট। বন্টন প্রক্রিয়ায় হিন্দাল পেলেন কুন্দুজ, মুনিম খা খুস্ত আর বাবুস পেলেন তালিকান।

এরপর শীতকালটা সম্রাট কিল্লা-এ-জাফরে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু দুর্গে যাওয়ার পথে ১৫৪৬ সালের ১৫ নভেম্বর শাখদান নামক স্থানে তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে পুনরায় রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। এই অসুস্থতায় সম্রাট প্রায় চারদিন অজ্ঞান ছিলেন। এই সুযোগে গুজব রটিয়ে দেওয়া হয় যে সম্রাট মারা গেছেন।

সম্রাটের মৃত্যু গুজবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হলেন সুলেমান মির্জা। সুলেমান মির্জার শুভাকাঙ্ক্ষীরা সম্রাটের মৃত্যুগুজবে পুনরায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে লাগলো। 

সম্রাটের অসুস্থাবস্থায় চরম আনুগত্য প্রকাশ করলেন করাচা বেগ। তিনি দ্রুত সম্রাটের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। তার অসুস্থতার সুযোগে কেউ যেন কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক ফায়দা লুটতে না পারে তা নিশ্চিত করলেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে তিনি ভোলেননি। কাবুলে আসকারিকে রেখে আসলে তিনি সেখানে ঝামেলা পাকাতে পারেন, এই আশঙ্কায় সম্রাট তাকে সাথে করে বাদাখশান নিয়ে এসেছিলেন। সম্রাটের অসুস্থতার সুযোগে তিনি যেন পালিয়ে যেতে না পারেন, করাচা বেগ তা নিশ্চিত করেছিলেন।

সম্রাট হুমায়ুন তার নির্বাসিত জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছিলেন। এই ছবিটিতে সেসব অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে; Image Source: farbound.net

চারদিন অজ্ঞান থাকার পর পঞ্চম দিনে সম্রাট জ্ঞান ফিরে পেলেন। কিছুটা সুস্থ হয়েই তিনি দ্রুত তার অসুস্থতাজনিত ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর চেষ্টা করলেন। দ্রুত ফজিল বেগকে কাবুলে পাঠিয়ে দিলেন যাতে সেখানে কোনো গুজব ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে যা দেখলেন, তা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সম্রাটকে তিনি কী জানাবেন?

সম্রাটের অসুস্থতায় সবচেয়ে বেশি লাভ ঘরে তুললেন কামরান মির্জা। সম্রাট কাবুল অধিকার করলে কামরান মির্জা পালিয়ে সিন্ধুতে চলে যান। সেখানে তিনি শাহ হুসেন আরগুনের সাথে সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সামরিক চুক্তি করেন।

সম্রাটের মৃত্যু গুজব শুনে সেই চুক্তি অনুযায়ী শাহ হুসেন আরগুনের থেকে ১ হাজার অশ্বারোহী যোদ্ধা নিয়ে দ্রুত গজনী চলে আসেন। গজনী আসার পথে আফগান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক ঘোড়া লুট করে নিজের শক্তি আরো বাড়িয়ে নেন। গোটা রাস্তাটাই তিনি লুটপাট চালাতে চালাতে গজনী উপস্থিত হলেন। এ সময় গজনী ছিল হিন্দাল মির্জার শাসনাধীন এলাকা।

হিন্দাল মির্জা গজনী না থাকায় তার পক্ষে গজনী শাসন করছিলেন জাহিদ বেগ। হঠাৎ আক্রমণে জাহিদ বেগ কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেন না। জাহিদ বেগকে ধরা পড়লেন। তাকে হত্যা করা হলো। কামরান খুব সহজেই গজনী হাতে পেয়ে গেলেন।

দৌলত সুলতানকে গজনীর প্রশাসক নিযুক্ত করে কামরান কাবুলের দিকে রওনা হলেন। কামরান যখন কাবুলে প্রবেশ করেন, তখন কেউই তাকে বাঁধা দেওয়ার সাহস করেনি। কারণ গুজবের কারণে সবাই জানে সম্রাট হুমায়ুন মৃত। কাবুলের অধিবাসীরা কিংবা সেনাবাহিনী কামরানকে বাঁধা দেবে কার জন্য?

কামরান বিনা বাঁধায় কাবুলে প্রবেশ করলেন। কাবুলের হাকিম মুহাম্মদ তগাই এ সময় গোসল করছিলেন। তাকে সেখান থেকে টেনেহিচড়ে বের করে সবার সামনেই হত্যা করা হলো। কামরান মির্জা খুব সহজেই কাবুল দখল করে নিলেন। আর দ্বিতীয়বারের মতো শাহজাদা আকবর আবারো কামরান মির্জার হাতে চলে গেলেন।

কামরান মির্জার সুসময় আবারো ফিরে এলো। এবার শুধু বিশ্বাসঘাতকদের উপর প্রতিশোধ নেবার পালা!

[এই সিরিজের পূর্বের প্রকাশিত পর্বটি পড়ুন এখানে। সিরিজের সবগুলো লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।]

Description: This article is in Bangla language. It's a short discussion about the redemption of Kandahar, Kabul and Badakhshan by Emperor Humayun after his long exile.

References:

1. মোগল সম্রাট হুমায়ুন, মূল (হিন্দি): ড হরিশংকর শ্রীবাস্তব, অনুবাদ: মুহম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৫

2. তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াত, মূল: জওহর আবতাবচি, অনুবাদ: চৌধুরী শামসুর রহমান, দিব্য প্রকাশ, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ (চতুর্থ মুদ্রণ)

3. হুমায়ুননামা, মূল: গুলবদন বেগম, অনুবাদ: এ কে এম শাহনাওয়াজ, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০১৬

4. মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়, সাহাদত হোসেন খান, আফসার ব্রাদার্স, ২য় মুদ্রণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৩

Featured Image: Wikimedia Commons

Related Articles

Exit mobile version