হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মক্কাবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন আল-আমিন (বিশ্বস্ত) নামে। সকলেই তাঁকে ভালোবাসত, সম্মান করত, ছিলেন সকলের আস্থাভাজন। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে যায় যখন তিনি আরব পৌত্তলিকদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন। কেউ কেউ তাঁর প্রতি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে যে, নিজ মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হন মুহাম্মাদ (সা.)।
মদিনায় যাওয়ার পর সেখানকার ইহুদী গোত্রগুলো বাদে অধিকাংশই মুহাম্মাদ (সা.) এর দাওয়াত গ্রহণ করে এবং চলে আসে ইসলামের পতাকাতলে। অল্প সময়ের মাঝেই মদিনাতে গড়ে ওঠে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো। সেই সাথে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে ইসলাম।
ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে মুহাম্মাদ (সা.) বিভিন্ন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমনও হয়েছে যে, সমাধানের অনিবার্য পথ হিসেবে যুদ্ধ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ফলে মুহাম্মাদ (সা.) স্বয়ং কিছু যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার কখনো তাঁর নির্দেশনায় যুদ্ধ করেছেন সাহাবীগণ (রা.)।
আজকের নিবন্ধে জানানো হবে এমনই এক যুদ্ধের ব্যপারে, যে যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী মাত্র তিন হাজার সৈনিক নিয়ে মূ’তাহ প্রান্তরে বিশাল রোমান বাহিনীর মোকাবিলা করেছিল। এ যুদ্ধে রাসূল (সা.) নিজে অংশগ্রহণ করেননি। তবে তিনজন সেনাপতি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন, যাদের প্রত্যেকে যুদ্ধে শহীদ হন। শেষে দায়িত্ব এসে পড়ে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) এর উপর, যার অসাধারণ বীরত্ব ও সুনিপুণ সমরকৌশলে সেদিন নিশ্চিত পরাজয় থেকে রক্ষা পায় মুসলিম বাহিনী।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)
মক্কার কুরাইশদের অভিজাত তিন গোত্রের একটি বনী মাখযুম। তাদের দায়িত্ব ছিল যেকোনো যুদ্ধের অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ও শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধসহ কুরাইশদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফলে এই গোত্রের প্রত্যেকেই বেড়ে উঠত একেকজন দক্ষ যোদ্ধা হয়ে।
আনুমানিক ৫৯২ খ্রিস্টাব্দ, বনী মাখযুমের গোত্রপ্রধান আল-ওয়ালিদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে ছেলে; নাম রাখা হয় খালিদ। কুরাইশদের অভিজাত গোত্রপরম্পরা অনুযায়ী সদ্যোজাত শিশুকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মরুভূমির এক বেদুঈন পরিবারের কাছে; দুধমাতার তত্ত্বাবধানে।
ধু ধু মরুভূমির বৈরী পরিবেশে পৃথিবীর আলো-বাতাসের সাথে পরিচিত হন খালিদ। ৫/৬ বছর বয়সে ফিরে আসেন নিজ পরিবারে। এরপর শুরু হয় কুস্তি, অশ্বচালনা, উটচালনা, অস্ত্রচালনা আর যুদ্ধের প্রশিক্ষণ।
ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হওয়ায় খালিদকে কখনোই রুটিরুজির ব্যাপারে ভাবতে হয়নি। ফলে সমরবিদ্যাই হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যানজ্ঞান; চালিয়ে যান কঠোর প্রশিক্ষণ। এরূপ অধ্যবসায়ের ফল পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মক্কাবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তার বীরত্ব আর শৌর্যবীর্যের কথা।
খালিদ বিন ওয়ালিদের জন্মেরও বহুকাল আগে থেকে কুরাইশ বংশ ছিল মক্কা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। অন্যান্য গোত্রগুলো সহসাই তাদের বিরোধিতা করতো না। তবে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর হঠাৎ করেই বিপর্যয় নামে বহু পুরনো কুরাইশ আধিপত্যে। তিনি তাদের ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে জানালে হাতেগোনা কয়েকজন বাদে সকলেই ঘোর বিরোধিতা করে। একসময় এই বিরোধিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছলে মদিনায় হিজরতে বাধ্য হন মুহাম্মাদ (সা.), এবং সেখান থেকেই প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন।
কিছুদিন পরেই দেখা গেল মদিনাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেসমূহের বেশিরভাগ মানুষই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। দিনকে দিন মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এমনকি মক্কা থেকেও লোকজন দলে দলে মদিনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে।
ক্রমাগত মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তায় পড়ে যায় অমুসলিম কুরাইশরা। তাই তারা মুহাম্মাদ (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অগ্রগতি রোধ করতে যুদ্ধের পথ বেছে নেয়। ফলে মুসলিম বাহিনী ও কুরাইশদের মাঝে বেশ কিছু যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবী মুহাম্মাদ (সা.) চূড়ান্তভাবে মক্কা বিজয়ের আগপর্যন্ত এরকম সব ক’টি যুদ্ধে বনী মাখযুম গোত্রের বীর যোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদের অবস্থান ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ ও মূ’তাহ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
৬২৮ খ্রিস্টাব্দ, মুহাম্মাদ (সা.) মনস্থির করলেন ওমরাহ পালন করতে মক্কায় গমন করবেন। শীঘ্রই প্রস্তুত হলো কাফেলা। চৌদ্দশ সাহাবী ও কোরবানির পশু নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন মুহাম্মাদ (সা.)।
মুসলমানদের আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়লে কুরাইশগণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তারাও তিনশ সদস্যের এক বাহিনী প্রেরণ করে যেন পথিমধ্যেই সেই কাফেলা রুখে দেওয়া যায়। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কুরাইশদের সাথে সংঘাতে জড়াতে চাননি, চেষ্টা করেন বিকল্প পথে মক্কায় পৌঁছাতে। কিন্তু খালিদের বুদ্ধিমত্তার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে দু’পক্ষের সমঝোতায় স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি। মুসলিমরাও সে বছর ওমরাহ না করেই মদিনায় ফিরে যায়। তবে চুক্তি অনুযায়ী পরের বছরই জিলক্বদ মাসে মক্কায় এসে হজ্জ পালন করতে পেরেছিল।
এসবের পর খালিদের মনে হঠাৎ করেই নতুন ভাবনার উদয় হয়। আসলে তিনি ছোটকাল থেকেই আরব পৌত্তলিকদের ধর্মে খুব একটা বিশ্বাসী ছিলেন না। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর প্রচারিত ধর্মকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। সর্বশেষ হুদাইবিয়ার প্রান্তরে যুদ্ধ না করে কিছু অসম শর্ত মেনে নিয়ে মুসলিম বাহিনী মদিনায় ফিরে যাওয়ার ঘটনাও মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয় খালিদের মনে।
বেশ কিছুদিন চিন্তা-ভাবনার পর খালিদ বিন ওয়ালিদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। ৩১ মে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ, তিনি আরও দুজনের সাথে মদিনায় পৌঁছে ইসলাম গ্রহণ করলেন।
আপাতদৃষ্টিতে হুদাইবিয়ার সন্ধিকে বেশ অসম মনে হলেও কিছুদিন পরই মুসলিমরা এর সুফল পেতে শুরু করে। কুরাইশ ও তাদের মিত্র গোত্রগুলোর সাথে দশ বছরের যুদ্ধবিরতি থাকায় ইসলামের প্রচার আরও সহজ হয়ে ওঠে। রাসূল (সা.) পত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের রাজা-বাদশা ও গোত্রপ্রধানদের নিকট দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন।
খালিদ (রা.) ইসলাম গ্রহণের কয়েক মাস পরের কথা। মদিনা থেকে ইসলামের দাওয়াত পত্র পাঠানো হয় বুসরার গাসসান গোত্রপ্রধানের কাছে। সেই চিঠি প্রাপকের হাতে পৌঁছাবার আগেই ঘটে আরেক কাণ্ড। পত্রবাহক বুসরায় যাওয়ার পথে বালক্বায় নিযুক্ত তৎকালীন রোমান সম্রাটের প্রতিনিধি শুরাহবিল বিন আমর আটক করে তাকে। এরপর হাত-পা বেঁধে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন এবং শেষে হত্যা করা হয়।
দূত হত্যা সকল সময়েই জঘন্য ও নিন্দনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এটা ছিল যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। মদিনায় খবর আসতেই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অন্যায়কে আশকারা নয়, বরং অপরাধীকে পাকড়াও করতে বেছে নেয়া হলো যুদ্ধের পথ।
যুদ্ধের প্রস্তুতি ও মূ’তাহ অভিমুখে যাত্রা
শীঘ্রই তিন হাজার সৈনিক নিয়ে রণসাজে সজ্জিত হয় মুসলিম বাহিনী। একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে খালিদ বিন ওয়ালিদও (রা.) যোগ দিলেন। মুহাম্মাদ (সা.) প্রধান সেনাপতি নির্বাচন করলেন যায়েদ বিন হারিসা (রা.)-কে। যদি তিনি শহীদ হন তবে দায়িত্ব নেবেন জাফর বিন আবু তালিব (রা.) এবং তারপর আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.)। আর সর্বশেষ এই তিনজনের কেউই জীবিত না থাকলে সৈনিকরা তাদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে সেনাপতি হিসেবে বেছে নেবে।
মা’আন নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করে মুসলিম বাহিনী। এ সময় গুপ্তচর মারফত খবর আসে- রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস ১ লক্ষ সৈনিক নিয়ে যোগ দিয়েছেন শুরাহবিল বিন আমরের দলে, তাদের সাথে আছে গাসসানের আরও ১ লক্ষ স্থানীয় খ্রিস্টান সৈনিক।
এ খবরে মুসলিম শিবিরে সাধারণ সৈনিকদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। কোনো কোনো সৈনিক চিঠির মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সা.)-কে সব জানাতে বলেন। কেউ কেউ আবার অগ্রসর হতে বলেন। এরূপ মতানৈক্যে মা’আন নামক স্থানেই দু’দিন পার হয়ে যায়।
যায়েদ বিন রাওয়াহা (তৃতীয় নির্ধারিত সেনাপতি) সকলের উদ্দেশ্যে এক আবেগঘন বক্তৃতা দেন এবং আর বিলম্ব না করে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তার অনুপ্রেরণায় নতুন উদ্যমে যাত্রা করে মুসলিম বাহিনী।
মূ’তাহ প্রান্তরে তুমুল সংঘর্ষ
৬২৯ খ্রিস্টাব্দ, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ; মুসলিম বাহিনী ও শুরাহবিল বিন আমরের মিত্র রোমান বাহিনী মুখোমুখি মূ’তাহ প্রান্তরে (বর্তমান জর্ডানের অংশ)।
গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসারে উত্তরমুখী হয়ে অবস্থান নিয়েছে মুসলিম সৈন্যদল। বামপার্শ্বে আছেন কুতায়বা বিন কাতাদা (রা.), ডানপার্শ্বে উবাইয়া ইবনে মালিক (রা.), আর মধ্যভাগে প্রধান সেনাপতি যায়েদ বিন হারিসা (রা.)। তার সাথেই আছেন খালিদ (রা.)।
শুরু হলো যুদ্ধ। বিশাল রোমান বাহিনীকে প্রচণ্ড আক্রমণে ব্যস্ত রাখা হয় ঠিকই, কিন্তু রক্ষা করা যায়নি মুসলিম বাহিনীর মধ্যভাগও। কিছুক্ষণ পরেই যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন যায়েদ বিন হারিসা (রা.)।
পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব নেন জাফর বিন আবু তালিব (রা.)। কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় মুসলিম বাহিনী। একপর্যায়ে ঘোড়া থেকে নেমে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন জাফর (রা.)। এমন সময় হঠাৎ এক রোমান সৈনিকের তরবারির আঘাতে কাটা পড়ে তার এক হাত। অন্য হাতে উঁচিয়ে ধরেন পতাকা। কিছুক্ষণ পর আরেক হাতও কাটা পড়ে। তবুও তিনি পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি! আঁকড়ে ধরেন কাটা দুই হাতের অবশিষ্টাংশ দিয়েই। দু’হাত কাটার পর তাকে আরও আঘাতের পর আঘাত করা হয়। শহীদ হয়ে যান তিনিও।
জাফর (রা.) শহীদ হলে মুসলিমদের পতাকা তুলে নেন আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.)। পর পর দুজন সেনাপতির মৃত্যুতে কিছুটা অগোছাল অবস্থায় পড়ে মুসলমানরা। এ অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ বীরদর্পে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.)। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনিও।
একে একে তিনজন সেনাপতি হারিয়ে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে মুসলিম বাহিনী। তবে নতুন সেনাপতি নির্ধারণ করতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন খালিদ (রা.)। তাঁর বীরত্ব আর রণকৌশলের কথা কে না জানে! সর্বসম্মতিক্রমে খালিদ (রা.)-কেই মনোনীত করা হয় নতুন সেনাপতি।
খালিদ (রা.) দায়িত্ব নিয়েই প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ শুরু করেন। কারণ তিনি জানতেন এই সময় আক্রমণই হবে আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়। মুহূর্তেই ঘুরে দাঁড়ায় মুসলিম সৈন্যদল। প্রথম দিনের মতো শেষ হয় যুদ্ধ।
খালিদ (রা.) ছিলেন মূ’তাহ যুদ্ধে অংশ নেওয়া সবচেয়ে দক্ষ সমরবিদ। প্রথম দিন যুদ্ধ শেষে তিনি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলেন যে, বিশাল রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হলে গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা চলবে না। তাই পরদিন এক অভিনব কায়দায় যুদ্ধে নামলেন তিনি।
সামনের সৈনিকদের পেছনে, ডানের সৈনিকদের বামে নিয়ে কৌশলী ফর্মেশন সাজালেন। তাঁর নেতৃত্ব আর পরাক্রমে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ আরম্ভ করে মুসলিম সৈনিকেরা। এদিকে পরিবর্তিত বিন্যাসের ফলে রোমান বাহিনী ভাবলো মুসলিমরা হয়তো সৈন্য সহায়তা পেয়েছে। এতে মনোবল ভেঙে যায় তাদের। এ সুযোগে মুসলিমরাও আক্রমণ চালিয়ে যায়।
খালিদ (রা.) মধ্যভাগ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এতটাই পরাক্রম দেখান যে, নয়টি তরবারি ভাঙে তাঁর হাতে, শেষে মাত্র একটি ইয়েমেনি তরবারি অবশিষ্ট থাকে। সুযোগ বুঝে মুসলিম বাহিনীর কমান্ডার কুতায়বা বিন কাতাদা (রা.) হত্যা করেন রোমান বাহিনীর কমান্ডার মালিককে। এতে রোমানরা কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং পেছাতে থাকে। আর তখনই খালিদ (রা.) এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন।
খালিদ (রা.) বুঝতে পেরেছিলেন তিন হাজার সৈন্য নিয়ে কখনোই রোমানদের বিশাল বাহিনীকে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতেও পারতেন না। কারণ তাহলে তা হতো পরাজয় মেনে নেওয়ার শামিল। ফলে রোমানরা যখন যুদ্ধে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে, তখন মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধ করতে করতে পিছিয়ে আনেন খালিদ (রা.)। এতে রোমানরাও বেশি দূর যুদ্ধ করতে আসেনি, কারণ মুসলিম বাহিনী পিছিয়ে যে দিকটায় যাচ্ছিল তা ছিল বালুময় মরুভূমি। রোমানদের জন্য মরুভূমিতে যুদ্ধ করতে আসা মানে ছিল মরণফাঁদে পা দেওয়া। ফলে তারাও পিছিয়ে যায়।
নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছানোর পর দু’পক্ষই মূ’তাহ থেকে প্রস্থান করে ও নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। এই যুদ্ধে মুসলমানদের বারোজন যোদ্ধা শহীদ হন। রোমানদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ যায়নি।
মূ’তাহ যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকে ইতিহাসবিদ মনে করেন, যেহেতু যুদ্ধটি রোমানদের পিছিয়ে পড়ার মূহুর্তে শেষ হয়েছিল, তাই জয় হয়েছিল মুসলমানদের। আবার অনেকেই বলেন, যুদ্ধটি ছিল অমীমাংসিত।