২০১১ সালের ২ মে গভীর রাতে যখন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল, তখন হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন অপারেশনের সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। শুধুমাত্র একজন বাদে- সিআইএর কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের (সিটিসি) প্রধান, মাইকেল ডি’ আন্দ্রিয়া, বিন লাদেনকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে যার ভূমিকা ছিল নেতৃস্থানীয়।
সবাই যখন সিচুয়েশন রুমে বসে অভিযানের গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করছিল, বিন লাদেনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার পর সবাই যখন উল্লাস করছিল, সেই মুহূর্তেও ডি’ আন্দ্রিয়া বসেছিলেন সিআইএর হেডকোয়ার্টারে নিজের অফিসের ভেতর। সেই গভীর রাতেও তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন আপন মনে।
অপারেশন শেষ হওয়ার পর যখন তার কাছে সংবাদ পৌঁছেছিল, তখন কেবল পাঁচ মিনিটের জন্য তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন অফিস সংলগ্ন বারান্দায়। একটা সিগারেট শেষ করে এরপর আবার ফিরে গিয়েছিলেন নিজের কাজে। পরবর্তী টার্গেটকে চিহ্নিত করার জন্য। বিন লাদেনের মৃত্যুতে তিনি আনন্দ করার মতো কিছু খুঁজে পাননি। কারণ তার বিশ্বাস ছিল, এই যুদ্ধ জয়-পরাজয়ের যুদ্ধ না। এটা হচ্ছে চলমান যুদ্ধ, যার কোনো শেষ নেই।
মাইক ডি’ আন্দ্রিয়া ছিলেন সিআইএর রহস্যমানব। সিআইএর অভ্যন্তরে তার পরিচয় ছিল ডার্ক প্রিন্স হিসেবে। তার চরিত্র ছিল অদ্ভুত রকমের বৈপরীত্যের সমাহার। একদিকে তিনি ছিলেন চেইন স্মোকার, কিন্তু অন্যদিকে কাজের বাইরে বড় একটা সময় তিনি কাটাতেন ট্রেড মিলে চড়ে ব্যায়াম করে। একদিকে তিনি ছিলেন ভয়ংকর রকমের বদমেজাজি, অধীনস্থদের চক্ষুশূল, কিন্তু অন্যদিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন জয় করে তিনি সিটিসির শীর্ষপদ ধরে রেখেছিলেন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত।
এবং সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তিনি নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, অথচ সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার পদক্ষেপের কারণেই সিআইএর হাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেসামরিক মুসলমান নিহত হয়েছে!
মাইকেল ডি’ আন্দ্রিয়া সিআইএতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৭৯ সালে। ‘দ্য ফার্ম’ নামে পরিচিত দক্ষিণ ভার্জিনিয়ার ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিতে যখন তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তখন সবার দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতাসম্পন্ন। তার গ্রেড ছিল গড়পড়তা। তার সহপাঠীরা প্রায় সময়ই তাকে অবজ্ঞা করত। আর তার প্রশিক্ষক প্রায়ই তাকে ডেকে পাঠিয়ে উন্নতি না করতে পারার জন্য তাকে তিরস্কার করতেন।
পেশাগত জীবনে আন্দ্রিয়া উন্নতি করতে শুরু করেন বিদেশে পোস্টিং পাওয়ার পর থেকে। বিদেশে তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল পূর্ব আফ্রিকায়। তাঞ্জানিয়ার রাজধানী দার-এস-সালামে তিনি কূটনৈতিক কর্মকর্তার ছদ্মবেশে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আফ্রিকাতে থাকা অবস্থায় হেডকোয়ার্টার থেকে নজরদারির অভাবে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধা, সেখানকার গোত্রগত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং সরকারগুলোর অযোগ্যতা তার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছিল, যা পরবর্তী জীবনে তার কাজে আসে।
আফ্রিকাতে পোস্টিংয়ে থাকা অবস্থাতেই তার সাথে পরিচয় হয় ফারিদা কারিমজি নামের এক গুজরাটি বংশোদ্ভূত মরিশিয়ান মুসলিম তরুণীর। ফারিদাকে বিয়ে করার শর্তে আন্দ্রিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, যদিও তিনি খুব বেশি ধর্মকর্ম করতেন বলে কেউ দেখেনি। তার অফিসে কোনো জায়নামাজ ছিল না। বড়জোর তাকে মাঝে মাঝে তসবিহ জপতে দেখা যেত। বয়সে আন্দ্রিয়ার চেয়ে বছর দশেকের ছোট ফারিদা ছিলেন ধনী পরিবারের সন্তান। টেলিকম, রিয়েল এস্টেট, ট্যুরিজমসহ তাদের নানাবিধ ব্যবসা আছে। ফারিদা নিজেও কারিমজি গ্রুপের সিনিয়র পরিচালকদের মধ্যে একজন। বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাদের ফার্মগুলোকে আন্দ্রিয়া বিভিন্ন সময় সিআইএর কভার হিসেবেও কাজে লাগান।
সিআইএর অভ্যন্তরে ডি’ আন্দ্রিয়া ধীরে ধীরে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে থাকেন এবং পদোন্নতি পেয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকেন। তিনি সিআইএর কায়রো স্টেশনের প্রধান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। আফ্রিকা থেকে ফিরে যাওয়ার পর তিনি সিআইএর কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের চিফ অফ অপারেশনসের দায়িত্ব পান। ইরাক যুদ্ধের প্রাক্কালে তিনিই ছিলেন ইরাকে সিআইএর স্টেশন চিফ।
প্রশিক্ষণ চলাকালে গড়পড়তা মেধাবী হিসেবে ডি’ আন্দ্রিয়ার পরিচিতি থাকলেও কঠোর পরিশ্রম আর কাজের প্রতি ভালোবাসাই তাকে ধীরে ধীরে সিআইএর অভ্যন্তরে তাকে যোগ্য এবং অপরিহার্য করে তোলে। তিনি ছিলেন ওয়ার্ক্যাহোলিক (কাজের প্রতি নেশাসক্ত)। সিআইএর হেডকোয়ার্টারে নিজের অফিসে তিনি যেতেন ভোরবেলা অন্য কেউ যাওয়ার আগে, এবং বের হতেন গভীর রাতে, অন্য সবাই চলে যাওয়ার পরে। তার অফিসের ভেতরেই তিনি একটি বিছানা স্থাপন করে নিয়েছিলেন। এবং মাঝে মাঝে রাতের পর রাত তিনি অফিসেই কাটিয়ে দিতেন।
সিআইএর বাইরে যে ডি’ আন্দ্রিয়ার একটা পারিবারিক জীবন ছিল, সেটাই কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। নিজের অফিসে তিনি পরিবারের কারো ছবি রাখতেন না। এমনকি নিজের ছবিও তিনি কোথাও দেখতে পছন্দ করতেন না। তার এক সহকর্মী একবার তাকে তার একটা স্কেচ উপহার দিয়েছিল। তিনি সেটা মুচড়ে ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন, “আমি নিজের ছবি দেখতে পছন্দ করি না”। তার আরেক সহকর্মী একবার তার কাছে জানতে চেয়েছিল, অবসর সময়ে তিনি আনন্দের জন্য কী করেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “কাজ করি।”
সিআইএর অভ্যন্তরে মাইকেল ডি’ আন্দ্রিয়ার প্রথম ছদ্মনাম ছিল ‘রজার’। সাধারণত ফিল্ড থেকে ফিরে এসে উঁচু পদ গ্রহণ করার পর সিআইএ কর্মকর্তারা তাদের ছদ্মনাম পরিহার করেন এবং নিজের আসল নামেই পরিচিত হন। কিন্তু ২০০৬ সালে কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরেও ডি’ আন্দ্রিয়া তার নিজের আসল নাম-পরিচয় গোপন রাখেন। ২০১৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস তার পরিচয় ফাঁস করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি পরিচিত ছিলেন কেবলই রজার নামে, অথবা তার রহস্যময় ভূমিকার কারণে ডার্ক প্রিন্স নামে, অথবা মুসলমান হওয়ার কারণে আয়াতুল্লাহ মাইক নামে।
কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের প্রধানের দায়িত্ব মোটেও সহজ না। আন্দ্রিয়ার আগে কেউই এই পদে তিন বছরের বেশি টেকেননি। কিন্তু সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে আন্দ্রিয়া এই পদ আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন টানা ৯ বছর। এ সময়ের মধ্যে দুই দলের দুজন প্রেসিডেন্ট এবং চারজন সিআইএ পরিচালকের অধীনে কাজ করেছেন। কেবলমাত্র এফবিআই-এর সাবেক পরিচালক রবার্ট মালার ছাড়া এত দীর্ঘ সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উঁচু কোনো পদে দায়িত্ব পালন করার নজির আমেরিকার ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই।
ডি’ আন্দ্রিয়া ছিলেন অত্যন্ত রুক্ষ মেজাজের। অধীনস্থ কর্মকর্তাদের সাথে তার ব্যবহার এবং ভাষা ছিল খুবই কর্কশ। প্রতিটি খুঁটিনাটি রিপোর্ট তিনি নিজে তদারকি করতেন, এবং সেগুলো একটু পছন্দ না হলেই তীব্র ভাষায় তার অধীনস্থদের তিরস্কার করতেন। “এরকম জঘন্য রিপোর্ট আমি আমার জীবনে দেখিনি”- এটা ছিল তার নিয়মিত মন্তব্যগুলোর একটি।
স্বাভাবিকভাবেই সিআইএর ভেতরে ডি’ আন্দ্রিয়ার খুব একটা জনপ্রিয়তা ছিল না। সিআইএর অনেক কর্মকর্তা তার অধীনে কাজ করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে তার সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে তার অনেক সহকর্মীই ‘কর্কশ’ বিশেষণটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাকে অপছন্দ করা কর্মকর্তারাও কেউ কখনো তার যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতা নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ পোষণ করেননি।
২০০১ সালের ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর প্রথমে ডি’ আন্দ্রিয়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ছিলেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে তার পদোন্নতি ঘটতে থাকে। ২০০২-০৩ সালে তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের সল্ট পিট নামক কুখ্যাত কারাগারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সেখানে তার অধীনস্থ কর্মকর্তারাই সন্দেহভাজন আল-কায়েদা সদস্য আবু জুবায়দা, আব্দুর রহমান আল-নাশিরি এবং খালিদ শেখ মোহাম্মদের উপর ওয়াটার বোর্ডিংসহ আইন বহির্ভূত বিভিন্ন পদ্ধতিতে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায়। যদিও তার নাম কখনোই প্রকাশ্যে আসেনি, কিন্তু সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রস্তুতকৃত রিপোর্টে তার কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করা হয়েছিল।
২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের প্রাক্কালে ডি’ আন্দ্রিয়া ছিলেন বাগদাদে নিযুক্ত সিআইএর স্টেশন চীফ। সেখান থেকে ফিরে আসার পর, ২০০৬ সালে তিনি কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের পরিচালকের পদ গ্রহণ করেন। তার তত্ত্বাবধানেই ২০০৮ সালে সিআইএ অপারেটিভরা দামেস্কে গাড়ি বোমা হামলার মাধ্যমে লেবানিজ মিলিশিয়া সংগঠন হেজবুল্লাহ’র ইন্টারন্যাশনাল অপারেশন্স চীফ ইমাদ মুগনিয়াকে হত্যা করে।
আল-কায়েদার উপর উপর্যুপুরি হামলা চালিয়ে তাদেরকে দুর্বল করে তোলার পেছনে ডি’ আন্দ্রিয়ার বিশাল ভূমিকা ছিল। ২০০৬ সালে মাইকেল হেয়ডেন সিআইএর নতুন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ডি’ আন্দ্রিয়া পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ড্রোন হামলার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য তাকে রাজি করান। তিনি যুক্তি দেখান, বিরতি দিয়ে ড্রোন হামলা পরিচালনা করলে আল-কায়েদা সদস্যরা পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। কাজেই তাদের উপর এত বেশি হামলা চালাতে হবে, যেন তারা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ না পায়।
ডি’ আন্দ্রিয়ার পীড়াপীড়িতেই হেয়ডেন সিআইএর ড্রোন প্রোগ্রামকে ত্বরান্বিত করেন। তারা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য আল-কায়েদা সদস্যদেরকে টার্গেট করতে শুরু করেন। এ সময় থেকে ড্রোন হামলাই হয়ে ওঠে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের প্রধান অস্ত্র। ২০০৬ সালে যেখানে ড্রোন হামলা হয়েছিল মাত্র তিনটি, ডি’ আন্দ্রিয়া এবং হেয়ডেন ২০০৮ সালে সেই সংখ্যাকে উন্নীত করেন ৩৫টিতে।
২০০৮ সালে যখন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ডি’ আন্দ্রিয়ার সাথে তার কর্মপন্থা পুরোপুরি মিলে যায়। ফলে ডি’ আন্দ্রিয়া যখন ‘সিগনেচার স্ট্রাইক’ নামে নতুন একটি প্রস্তাব নিয়ে আসেন, যেখানে সম্ভাব্য সন্ত্রাসীর উপর ড্রোন হামলা চালানোর জন্য তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না, শুধুমাত্র তাদের আচার-আচরণ দেখে সন্দেহ হলেই হামলা করা যাবে, তখন ওবামা সহজেই সেটার অনুমতি দিয়ে দেন।
ওবামার সম্মতিতে, ডি’ আন্দ্রিয়ার এবং সিআইএর নতুন পরিচালন লিওন প্যানেট্টার উদ্যোগে ড্রোন হামলার পরিমাণ বেড়ে যায় অকল্পনীয়ভাবে। ২০০৯ সালে ড্রোন হামলা চালানো হয় ৫৩টি, ২০১০ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১১৭টিতে। আর স্বাভাবিকভাবেই এসব হামলায় সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি আহত এবং নিহত হতে থাকে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক ব্যক্তি, যাদের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
২০১১ সালে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করার পেছনেও ডি’ আন্দ্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সিটিসির প্রধান হিসেবে অপারেশনগুলো তদারকি করা ছাড়াও তার দায়িত্ব ছিল অ্যাবোটাবাদের সেই বাড়িতে বিন লাদেন ছাড়া অন্য আর কে কে থাকতে পারে, সেটা বিশ্লেষণ করা।
তবে ডি’ আন্দ্রিয়ার সিআইএর ক্যারিয়ারে শুধু সাফল্য না, বেশ কিছু বড় ধরনের ব্যর্থতাও ছিল। ২০০১ সালে ৯/১১-এর হামলার পূর্বে তার উপর দায়িত্ব ছিল সন্দেহভাজন সৌদি নাগরিক নাওয়াফ আল-হামজির উপর নজরদারি করার। কিন্তু হামজি তাকে ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে এই হামজি ছিল ৯/১১-এর ১৯ জন হাইজ্যাকারের মধ্যে একজন। ২০০৯ সালে তিনি যখন সিটিসির পরিচালক, তখন তার অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণেই আফগানিস্তানে সিআইএর ঘাঁটিতে এক আল-কায়েদা সদস্য অনুপ্রবেশ করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে সাত জন সিআইএ কর্মকর্তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়।
ঐ ঘটনার ফলে ডি’ আন্দ্রিয়াকে বেশ মূল্য দিতে হয়। তার একাধিক পদোন্নতির প্রস্তাব আটকে যায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে যখন পাকিস্তানের কোয়েটায় আল-কায়েদা ঘাঁটিতে সিআইএর এক ড্রোন হামলায় সেখানে থাকা দুই মার্কিন বন্দীও নিহত হয়, তার কয়েকমাস পরেই, দীর্ঘ ৯ বছর পর তাকে সিটিসির পরিচালকের পদ থেকে বদলি করে দেওয়া হয়।
মাইকেল ডি’ আন্দ্রিয়ার শেষ বছরগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে যখন ইরানের সাথে আমেরিকার নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন ডি’ আন্দ্রিয়াকে সিআইএর ‘ইরান অপারেশন্স’-এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে যে আমেরিকা ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার, মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে হত্যা করে, তার পেছনেও ডি’ আন্দ্রিয়ার ভূমিকাই প্রধান ছিল।
ডি’ আন্দ্রিয়ার বর্তমান অবস্থান ধোঁয়াশাপূর্ণ। জানুয়ারির শেষের দিকে আফগানিস্তানে সিআইএর একটা প্লেন ভূপাতিত হয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ইরানের নিউজ চ্যানেলগুলো দাবি করে, নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন মাইকেল ডি’ আন্দ্রিয়া। আমেরিকা অবশ্য এখনও এই দাবি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।
ফিচার ইমেজ: জিরো ডার্ক থার্টি চলচ্চিত্রে ডি’ আন্দ্রিয়ার চরিত্র রূপায়ন করা অভিনেতা।
এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে পড়তে পারেন বাস্তব জীবনের সত্যিকার স্পাইদের কাহিনি নিয়ে এই লেখকের লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ: এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি“।
বইটি সংগ্রহ করতে পারেন এখান থেকে: roar.cm/spy-stories