প্রথম পর্ব: নাইটস টেম্পলারদের গোপন রহস্য
দ্যু মোলেঁ একেবারে শান্ত। সাতটা বছর! সাতটা বছর তিনি এই যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, আজকেই সম্ভবত তার জীবনের শেষ দিন। প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে, বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, রাজার অনুচরদের গালাগাল আর বিদ্রূপের পাশাপাশি তাদের নারকীয় অত্যাচার তো রয়েছেই, কিন্তু তার মুখ থেকে অভিযোগের স্বীকারোক্তি বের করতে পারেনি। সীন নদীর উপরে ভেসে থাকা লে অঁ জুইঁয়ের সামনে তাকে যখন আনা হলো, তখনও মোলেঁ নির্বিকার। মৃত্যুর ভয়ে তিনি কেঁদে ওঠেননি, এমনকি সামান্যতম কাঁপেনওনি।
বৃদ্ধ মানুষটার মৃত্যু দেখতে লে অঁ দ্বীপে উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো। কখন এই ধর্মদ্রোহীকে পোড়ানো হবে আর তার আত্মা সোজা নরকে চলে যাবে তা-ই দেখতে মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। দ্যু মোলেঁর একসময়কার সাদা আলখেল্লা ন্যাকড়ায় পরিণত হয়েছে, সেটুকু ধরেই টান দিয়ে তাকে চিতার সামনে নিয়ে আসা হলো। টানের চোটে ছিঁড়ে গেলো তার পরিধেয় বস্ত্রটুকু, বেরিয়ে এলো তার শীর্ণ, পাণ্ডুর দেহ। অবশেষে মুখ খুললেন নির্বাক মানুষটি। নটরডেম ক্যাথেড্রালের দিকে মুখ ফিরিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলেন। তাকে অনুমতি দেওয়া হলো। চিতায় আগুন জ্বলে উঠলো, তার জিহ্বা চলার সাথে সাথে আগুনের জিহ্বাও তার কাছে চলে আসতে লাগলো। শেষবারের মতো তিনি কথা বলে উঠলেন, কাঠ পোড়ার শব্দ ছাড়িয়ে শোনা গেলো তার কণ্ঠস্বর।
“ঈশ্বর জানে কে ভুল পথে রয়েছে আর কে পাপ করেছে! দুর্ভাগ্য তাদের জন্য যারা আমাদের উপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে দিয়েছে, ঈশ্বর অবশ্যই আমাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে!” আগুনের শিখা আরও উপরে উঠে এলো, কিন্তু মোলেঁর চেহারায় যন্ত্রণার কোনো ছাপ নেই। “পোপ ক্লেমেন্ট! রাজা ফিলিপ! শুনে রাখো!” গর্জন করে উঠলো সে। “আর এক বছরের মধ্যেই তোমাদের পাপের জন্য ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।” কথা শেষ হতেই নীরব হয়ে গেলো নাইটস টেম্পলারদের শেষ গ্র্যান্ডমাস্টার, আগুনের শিখার মধ্যে হারিয়ে গেলো তার দেহ।
দ্যু মোলেঁর অভিশাপের এক বছর শেষ হওয়ার আগেই পোপ ক্লেমেন্ট আর চতুর্থ ফিলিপ পরলোকে পাড়ি জমালো। রোগে ভুগতে থাকা ক্লেমেন্ট মারা গেলো এক মাসের মধ্যেই, আর ফরাসী রাজা মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই মারা গেলো শিকার অভিযানের দুর্ঘটনায়!
দ্যু মোলেঁ তার শেষ কথাগুলো হয়তো কখনোই উচ্চারণ করেননি, নাইটস টেম্পলারদের অন্যান্য গুজব আর কিংবদন্তীর সাথে সাথে এই ঘটনাও হয়তো কিছুটা অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। আর মৃত্যুর আগে এই গ্র্যান্ডমাস্টার তার বিশ্বাসঘাতকদের সত্যিই অভিশাপ দিয়েছিলেন কিনা তা জানার কোনো উপায় নেই। মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান জগতের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংগঠনের এই হঠাৎ পতনকে নিয়ে তাই গড়ে উঠেছে গালগল্প, গুজব আর বেশ কিছু কন্সপিরেসি থিওরি। তাহলে ফিরে যাওয়া যাক আরও বেশ কয়েক বছর আগে।
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
১২৯১ সাল। হাত্তিনের যুদ্ধের পর পবিত্র ভূমির যেটুকু দখলে ছিল সেটুকুও মিশরের মামলুক বাহিনীর কাছে হারিয়ে ফেললো ক্রুসেডাররা। অ্যাকার শহরের পতন ঘটলো, পবিত্র ভূমির শেষ সুরক্ষিত দুর্গও চলে গেলো শত্রুদের দখলে। দ্যু মোলেঁ দুই বছর পর যখন গ্র্যান্ডমাস্টারের পদে অভিষিক্ত হলেন তখন তার মনে একটাই পরিকল্পনা, যে করেই হোক পবিত্র ভূমি আবারো দখল করতে হবে। সেজন্য ইউরোপের এ মাথা থেকে ও’মাথা চষে বেড়ালেন সাহায্য পাওয়ার আশায়। পোপ বোনিফাস আর ইংল্যান্ডরাজ প্রথম এডওয়ার্ড সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসলেন, কিন্তু পুরো অভিযানটাই মুখ থুবড়ে পড়লো। দ্যু মোলেঁ তার সেরা ১২০ জন নাইট হারালেন সিরিয়ায় পা রাখার আগেই।
অ্যাকার থেকে সাইপ্রাসে স্থানান্তর করা হলো টেম্পলারদের হেডকোয়ার্টার। এদিকে সাইপ্রাসের রাজপরিবারের দুই রাজপুত্রের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ক্রমেই বেড়ে উঠলো। টেম্পলারদের সহায়তায় সাইপ্রাসের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় হেনরিকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় বসলেন তার ভাই আরাগন। এই ঘটনায় টনক নড়ে উঠলো ইউরোপের অন্যান্য রাজাদের। টেম্পলারদের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী যদি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাদের অবস্থাও সাইপ্রাসের চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না। এদিকে টেম্পলাররাও নিজেদের আলাদা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে, যেমনটা টিউটনিক নাইটরা করেছে প্রুশিয়ায় কিংবা নাইটস হসপিটালাররা রোডস দ্বীপে!
ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি- সবখানেই ছড়িয়ে রয়েছে টেম্পলারদের আস্তানা আর তাদের জবাবদিহিতার কোনো উপায় নেই স্ব স্ব দেশের রাজাদের। এমনকি যেকোনো দেশের সীমানায় ঢুকতে গেলেও কোনোরকম অনুমতির প্রয়োজন হয় না তাদের। বলা যায়, রাজ্যের মধ্যেই আলাদা রাজ্য গড়ে তুলেছে টেম্পলাররা। তাছাড়া, বিভিন্ন ব্যারনের সাথে তাদের খাতির আর আর্থিক লেনদেন শঙ্কিত করে তুললো ইউরোপের রাজাদের।
ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প
১৩০৬ সাল। দ্যু মোলেঁর কাছে চিঠি পাঠালো পোপ ক্লেমেন্ট, খুব সম্ভবত হসপিটালার আর টেম্পলাররা এক হয়ে যাবে। মোলেঁ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বসলেন। হসপিটালার গ্র্যান্ডমাস্টার ফোলকেঁই দ্যু ভিলারেই-ও এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। যা-ই হোক, বছর না ঘুরতেই পোপ দুজনের কাছেই চিঠি পাঠালেন যত দ্রুত সম্ভব প্যারিসে আসতে, আর এই আগমন যতটা সম্ভব গোপন রাখার জন্য। দ্যু মোলেঁ তা-ই করলেন, কিন্তু ভিলারেইয়ের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। দ্যু মোলেঁ আর ক্লেমেন্ট তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন, আর এই সময় হঠাৎ করেই আলোচনার বিষয় পরিবর্তন হয়ে গেলো।
দুই বছর আগের ঘটনা। কোনো এক অপরাধের জন্য টেম্পলার হাউজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো এক নাইটকে, সে-ই প্যারিসে এসে টেম্পলারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছিলো। যদিও সবাই এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিয়েছিলো, ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ সেই অভিযোগগুলো আবারো সবার সামনে নিয়ে আসতে চান! ক্লেমেন্টও এসব অভিযোগ বিশ্বাস করেননি , কিন্তু ফিলিপের চাপে পড়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করে পারলেন না। জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ক্লেমেন্ট ফিলিপকে বললেন আর কিছু না করতে। কিন্তু ফিলিপের ষড়যন্ত্র মাত্র শুরু হলো। ১৩ অক্টোবর, ১৩০৭। ভোর হওয়ার আগেই ফ্রান্সের মাটিতে যে কয়জন নাইট ছিল সবাইকে গ্রেফতার করা হলো, আর ইতিহাসে এর জায়গা হলো ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’ হিসেবে।
চতুর্থ ফিলিপের এ ধরনের কাজকারবার নতুন কিছু নয়, উগ্র আর অত্যাচারী রাজা হিসেবে তিনি ভালোই পরিচিত ছিলেন। ফিলিপ আগেও পোপ অষ্টম বোনিফাসের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। কারণ? পোপদের ক্ষমতা হ্রাস করে ফ্রান্সের সর্বময় কর্তৃত্ব নিজের দখলে রাখা। এই লক্ষ্য পূরণ করতেই পোপকে অপহরণ করার ষড়যন্ত্র আঁটলেন তিনি, বোনিফাসকে ফ্রান্সে নিয়ে এসে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাকে পোপের পদ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবেন। কিন্তু তার আগেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগে মারা যান বোনিফাস। তার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হন বৃদ্ধ একাদশ বেনেডিক্ট, কিন্তু তিনিও নয় মাসের মধ্যেই তার পূর্বসূরিদের পথ ধরেন। অবশেষে ফিলিপ তার নির্বাচিত ব্যক্তি ক্লেমেন্টকে পোপ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পেলেন।
ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধ বাঁধানোর ফলে ফিলিপের কোষাগারে এমনিতেই টান পড়েছিলো, এজন্য তার প্রয়োজন ছিল খ্রিস্টান চার্চের অগণিত সম্পদ। এর আগেও প্যারিসে থাকা ধনী ইতালীয় ব্যাংকারদের গ্রেফতার করে লুটপাট চালিয়েছিলেন, তারপর ইহুদিদের উচ্ছেদ করে তাদের সম্পদও নিজের কুক্ষিগত করলেন। শেষমেশ তার নজর পড়লো টেম্পলারদের উপর। টেম্পলারদের কাছে এমনিতেই তার অনেক ধার-দেনা ছিল, তারপরও যুদ্ধের খরচ মেটাতে তার আরও টাকা প্রয়োজন। তাছাড়া টেম্পলারদের সাথে চার্চের সম্পর্ক ফিলিপকে আরও সহজেই তার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করার সুযোগ করে দিলো। সাইপ্রাসে টেম্পলারদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দাবি টেম্পলারদের নিজেদের জন্যই বিপদ ডেকে আনলো। ফিলিপের উত্থানের জন্য টেম্পলারদের পতন ঘটতেই হতো, আর ঠিক সেটাই হলো!
অতঃপর পতন
‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’-এ ফ্রান্সে থাকা প্রায় ১৫ হাজার টেম্পলারকে আটক করার পর তাদের বিরুদ্ধে ধর্মবিরোধিতা, ঈশ্বর-নিন্দা আর সমকামিতার অভিযোগ আনা হলো! এই মিথ্যা অভিযোগ শুনে যারপরনাই অবাক হয়ে গেলো টেম্পলাররা, সরাসরি অস্বীকার করলেন তারা। কিন্তু কী করে স্বীকার করাতে হয় তা খুব ভালো করেই জানতেন ফিলিপ, আর তা হলো নির্যাতন। ফিলিপের অধীনে কাজ করা জেরাকারীরা টেম্পলারদের এই দৃঢ়, অনমনীয় ইচ্ছাকে মুহূর্তের মধ্যেই নিঃশেষ করে দিতে হাজির করলো ‘র্যাক’ নামক বিশেষ যন্ত্র, যার সাহায্যে আসামীর দেহকে টেনে ধরে অস্থিসন্ধি আলাদা করে ফেলা হয়! পায়ে গ্রিজ মাখিয়ে আগুনে পোড়ানো হলো, দাঁত টেনে ওঠানো হলো, অঙ্গ আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করা হলো আর শেষমেশ তীব্র শীতের মধ্যেই জামাকাপড় ছাড়াই রেখে দেওয়া হলো। যারা এই নির্যাতন সহ্য করতে পারলো না, তাদেরকে গোপনেই গোর দেওয়া হলো! আর যারা দাঁতে দাঁত চেপে এই অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে, তারা যেন মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়ে রইলো।
এই ভয়াবহ অত্যাচারের পর অনেকেরই আগের মতো আর মনের জোর রইলো না। তাই যখন তাদেরকে আবারও ট্রায়ালের সামনে হাজির করা হলো, তখন অম্লানবদনে তাদের উপর আনা অভিযোগ স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করলো না টেম্পলাররা। আর যতই দিন যেতে থাকলো, ততই তাদের উপর নবজাতক পোড়ানো কিংবা কুমারীর সতীত্ব হরণের মতো অদ্ভুত অদ্ভুত অভিযোগ আনা হতে থাকলো। নির্যাতনের পর ১৩৮ জন টেম্পলারের মধ্যে ১৩৪ জনই একাধিক অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছিলো। এমনকি টেম্পলার গ্র্যান্ডমাস্টার দ্যু মোলেঁর গোপনাঙ্গের চামড়া কেটে ফেলার পর তিনিও এই অভিযোগ স্বীকার করে নেন!
ফিলিপ যে এতটা বেশি করে ফেলবে তা ক্লেমেন্ট কল্পনাও করেননি। তাই শেষমেশ টেম্পলারদেরকে চার্চের অধীনে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আদেশ দিলেন পোপ। পোপের বিশেষ কমিটির সামনে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বললেন দ্যু মোলেঁ, বললেন নির্যাতনের ভয়েই ফিলিপের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছিলেন তিনি। অন্যান্য টেম্পলাররাও একই জবাব দিলেন এবং নিজেদের আগের স্বীকারোক্তি অস্বীকার করলেন। এদিকে ফিলিপ পোপ ক্লেমেন্টকে চাপ দিতে থাকলেন, তার ঘরবাড়ি অবরোধ করে রাখলেন, এমনকি এটাও ঘোষণা করলেন যে, তার কথামতো কাজ না করলে পোপের আসন থেকে ক্লেমেন্টকে উৎখাত করা হবে। শেষমেশ বাধ্য হয়েই ক্লেমেন্টকে টেম্পলারদের বিরুদ্ধে আরেকবার তদন্ত করার নির্দেশ দিতে হলো।
টেম্পলারদের স্বপক্ষে বলার মতো তেমন কোনো উকিল পাওয়া গেল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে পাওয়া গেলো দুজন নাইটকে যাদের ওকালতির ওপর প্রশিক্ষণ রয়েছে। তারা এসেই ট্রায়ালের সামনে ঘোষণা করলেন, টেম্পলাররা শুধু নির্দোষই নয়, বরং তারা এক সুগভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এই ঘোষণার পর টেম্পলারদের দিকে ওজনের বোঝা ভারী হয়ে গেলো। ফিলিপ আর দেরি করলেন না, তার শেষ অস্ত্রটা প্রয়োগ করলেন।
তারিখটা ছিল ১৩১০ এর ১২ই মে, পরবর্তীতে অভিযোগ অস্বীকার করা ৫৪ জন টেম্পলার নাইটকে পুড়িয়ে মারা হলো বিচারকের রায়ের আগেই! আর যে দুজন টেম্পলারদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, তারাও হারিয়ে গেল ফ্রান্সের কোনো পাতাল সুড়ঙ্গে। তাদেরকে আর কখনোই জনসম্মুখে দেখা যায়নি। বিতর্কিত এই মামলায় টেম্পলারদের স্বপক্ষে বলার মতো কেউ না থাকায় পুরো মামলাটাই মুখ থুবড়ে পড়লো। ক্লেমেন্টও ফিলিপের এই চাপ সহ্য করতে পারলেন না, শেষমেশ ‘নাইটস টেম্পলার’কে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। এর মানে এই না যে টেম্পলাররা অপরাধী ছিল, বরং চিরতরের জন্য নাইটস টেম্পলারদের অস্তিত্ব বিলোপ করা হলো।
ইউরোপে ছড়িয়ে থাকা টেম্পলারদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলো। দ্যু মোলেঁ সহ প্রধান প্রধান নেতাদেরকে পুড়িয়ে মারা হলো কয়েক বছর আটকে রাখার পর। বেশিরভাগ টেম্পলার নাইটকেই বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে আটকে রাখা হলো, কয়েকজনকে দ্বীপান্তরে নির্বাসিত করা হলো। কয়েকজন আবার সুযোগ পেয়ে নাইটস হসপিটালারে যোগ দিলো। কিন্তু এরপরেও প্রায় দশ হাজারের মতো নাইট সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। সামরিক অর্ডারটির কোনো আর্কাইভ খুঁজে পাওয়া যায়নি, এমনকি এদের সম্পদও! এজন্য অনেকেই মনে করেন, টেম্পলাররা আগেই কোনো সতর্ক সংকেত পেয়ে তাদের সম্পদ নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন এবং গোপনে অন্য কোথাও পাড়ি জমিয়েছিলেন। এমনও গুজব ছড়িয়েছে যে, টেম্পলাররা পশ্চিম স্কটল্যান্ডে তাদের জাহাজবহর নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। তাদের এই হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়াই অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে ফরাসি বিপ্লব কিংবা ইলুমিনাতির সাথে তাদের সম্পর্ক থাকার মতো। আসলে কী হয়েছিলো তাদের? অমীমাংসিতই থেকে যাবে হয়তো।
ফিচার ইমেজ: Getty Images