২৭ মার্চ, ১৯৯৯; পুরোদমে চলছে কসোভো যুদ্ধ। ইউরোপের সামরিক জোট ন্যাটোর বোমারু বিমানগুলো হামলা করেছে সার্বিয়ার (প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া) গুরুত্বপূর্ণ সামরিক টার্গেটে। কিন্তু মার্কিন স্টেলথ বোমারু বিমানগুলোকে মিসাইল মেরে ধ্বংস করা তো দূরের কথা, রাডারেই দেখা যাচ্ছে না! ২৫০ তম এয়ার ডিফেন্স মিসাইল ব্রিগেডের থার্ড ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোতান ড্যানি পরপর কয়েকদিন সন্ধ্যাবেলা সামান্য সময়ের জন্য রাডারে একটি অদ্ভুত সিগন্যাল দেখতে পেলেন। পরদিন সন্ধ্যায় ‘ন্যাটোর বিমান বোমা হামলা চালাতে আকাশে উঠেছে‘ – গোয়েন্দা মারফত এই খবর পেয়ে তিনি তার মিসাইল ব্যাটারি নিয়ে প্রস্তুত থাকলেন। অদ্ভুত বিমানগুলো রেঞ্জে আসতেই ফায়ার করলেন দুটো মিসাইল। তাতেই হয়ে গেলো ইতিহাস। প্রথমবারের মতো ভূপাতিত হলো পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান। কিন্তু এসব বিমান রাডার ফাঁকি দেয়ার মতো আধুনিক টেকনোলজির অধিকারী। তাহলে কীভাবে সম্ভব হলো এই অসাধ্য সাধন?
কসোভো যুদ্ধ
প্রসঙ্গত কিছু বাড়তি কথা না বললেই নয়। নব্বইয়ের দশকে পূর্ব ইউরোপের টালমাটাল যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি ধারণা না থাকে তবে এই আর্টিকেলের ঘটনাটি কোন যুদ্ধের সময়কার সেটি বুঝতে পাঠকের কষ্ট হতে পারে। তাই সংক্ষেপে জেনে নিই ইতিহাসের পাঠ।
১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া ভেঙে মেসিডোনিয়া, স্লোভেনিয়া, মন্টেনিগ্রো, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়া নামক ৬টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এদের মধ্যে মন্টেনিগ্রো সার্বিয়ার সাথে ফেডারেল ইউনিয়ন সরকার গঠন করে, বাকিরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তাই সার্বিয়ার সাথে স্লোভেনিয়ার (১৯৯১), ক্রোয়েশিয়ার (১৯৯১-১৯৯৫) সাথে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার (১৯৯২-১৯৯৫)। এতে ইউরোপের ইতিহাসে ভয়ংকরতম গণহত্যা ও শরণার্থী ঢলের সৃষ্টি হয়। সার্বিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও কসোভো ও ভজভোদোনভ তার স্বায়ত্বশাষিত দুটো প্রদেশ ছিল। ক্রমাগত সার্বিয়ান শোষণের প্রতিবাদে ১৯৯৮ সালে মুসলিম অধ্যুষিত কসোভোতে বিদ্রোহ দানা বেধে ওঠে। সেটি দমন করতে সার্বিয়ান সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা শুরু করে। বসনিয়ার ন্যায় আরেকটি গণহত্যাকান্ড এড়াতে ইউরোপ ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটো এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ শুরু করে। আজকের লেখার ঘটনাটি এই কসোভো যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।
F-117 Nighthawk
যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড করপোরেশনের তৈরি এফ-১১৭ নাইটহক ছিল বিশ্বের প্রথম অপারেশনাল স্টেলথ যুদ্ধবিমান। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি আধুনিক মিসাইলগুলোর হামলায় মার্কিন বোমারু বিমানগুলো ভূপাতিত হচ্ছিল দেখে যুক্তরাষ্ট্র স্টেলথ বিমানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এধরনের বিমানের বিশেষ ডিজাইন ও স্টেলথ কোটিংয়ের কারণে এরা শত্রুর রাডার নির্গত তরঙ্গকে হয় প্রতিফলিত করে দিকভ্রান্ত করে অথবা শুষে নেয়। ফলে বিমানটি রাডারে নির্দিষ্ট রেঞ্জ পর্যন্ত অদৃশ্য থাকে। মূলত স্টেলথ বিমানের রাডার ক্রস সেকশন (RCS) মান সাধারণ বিমানের চেয়ে অনেক কম থাকে বিধায় এরা রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। এজন্য অনেকে স্টেলথ মানে অদৃশ্য মনে করে। প্রকৃতপক্ষে এটি আসলে Less Detectable অর্থাৎ ধরা পড়াটা কঠিন। এই প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ুন।
১৯৮৩ সাল থেকে মোট ৬৪টি এফ-১১৭ বিমান নির্মাণ করা হয়। ৬৫ ফুট লম্বা বিমানটি ডুয়েল ইঞ্জিন চালিত যা ঘন্টায় ১,১০০ কি.মি. (ম্যাক ০.৯২) বেগে ৪৫,০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়তে সক্ষম ছিল। এই বিমানটি ২,৩০০ কেজি ওজনের বোমা বহন করতে পারত। যে এফ-১১৭ বিমানটি ভূপাতিত করা হয় তার সিরিয়াল নাম্বার ও রেডিও কলসাইন ছিল যথাক্রমে 82-0806 এবং Vega 31। বিমানটি ওড়াচ্ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ড্যারেল প্যাট্রিক ‘ডেল’ জেলকো। ১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া এই অভিজ্ঞ মার্কিন এয়ারফোর্স পাইলট ছিলেন পার্সিয়ান গালফ যুদ্ধের একজন ভেটেরান। অপারেশন ডেজার্ট স্ট্রম চলাকালে সাদ্দাম হোসেনের ইরাকি বাহিনীর একাধিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে শিকার বানিয়েছিলেন সেই এফ-১১৭ নাইটহক বিমান দিয়ে। কিন্তু সেদিন নিজেই হয়ে গেলেন শিকার।
যুগোস্লাভিয়ান মিসাইল ব্রিগেড
যুগোস্লাভিয়ান এয়ার ডিফেন্সের বেশিরভাগই ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি একাধিক Surface To Air Missile (SAM) সিস্টেম। এই ঘটনার সাথে সংযুক্ত ছিল S-125 শর্ট রেঞ্জ এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল। একে Neva অথবা Pechora (রাশিয়ান ভাষায় Нева/Печора) নামেও ডাকা হয়। এই মিসাইলের ন্যাটো রিপোর্টিং নেম SA-3 ‘Goa’।
এস-১২৫ সিস্টেমের একাধিক সংস্করণ রয়েছে যাতে ৩ ধরনের মিসাইল ব্যবহার করা হয়। এই আর্টিকেলের সাথে প্রাসঙ্গিক V-601M মিসাইলটি লম্বায় ৬.০৯ মিটার। ৯৫৩ কেজির এই মিসাইলে ৭০ কেজি ওয়ারহেড (বিস্ফোরক পদার্থ) থাকে। এসব মিসাইলে সলিড ফুয়েল চালিত বুস্টার রকেট ব্যবহার করা হয়। ফলে ফায়ারিং এর ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যেই গতি শব্দের গতির সাড়ে তিন গুণ (ম্যাক ৩.৫) হয়ে যায়। ফলে এটি ৩৫ কিলোমিটার রেঞ্জের ভেতর সর্বোচ্চ ১৮ কি.মি. (৫৯,০০০ ফুট) উচ্চতায় থাকা বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম।
অভিনব রণকৌশল
১৯৮২ সালের প্রথম লেবানন যুদ্ধের সময় সিরিয়ান আর্মির এয়ার ডিফেন্স ব্রিগেডের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি এয়ারফোর্সের বিধ্বংসী বিমান হামলা দেখে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোতান ড্যানি উপলব্ধি করেন যে শত্রুর তীব্র বিমান হামলার সময় মিসাইল ব্যাটারিগুলোকে বারবার স্থান পরিবর্তন করার মাধ্যমে এদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত সিরিয়ান স্যাম ব্যাটারির বেশিরভাগই ছিল মোবাইল স্যাম ইউনিট। অর্থাৎ মিসাইলগুলো একটি আর্মার্ড ভেহিকেলের উপর বসানো। কোথাও গিয়ে মিসাইল ছুড়ে এলাকা ত্যাগ করতে মাত্র ২/৩ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু জোতান ড্যানির ব্যাটালিয়নের S-125M Neva মিসাইলগুলো সেরকম নয়। এগুলো ফিক্সড লঞ্চারে বসানো থাকে যা ট্রাকে করে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় মোতায়েন করতে হয়। কাজ শেষে লঞ্চার খুলে আবার ট্রাকে করে সরাতে হয় যা করতে গড়ে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে।
ড্যানি তার ক্রুদের এমনভাবে ট্রেইনিং দেয়া শুরু করেন যে পুরো রেজিমেন্ট (৩ ব্যাটারি×৬ লঞ্চার) অপারেশনাল করতে গড়ে ৯০ মিনিট সময় লাগছিলো যা আদর্শ সময়ের চেয়ে এক ঘন্টা কম! এই কাজ করতে তিনি ৪টি V-601M মিসাইলের লঞ্চারকে ভেঙে ২টি মিসাইলের লঞ্চার বানান যা মোতায়েন/পরিবহন তুলনামূলক সহজ। এর আগে ২৪ মার্চ, ১৯৯৯ সালে ড্যানির ঘাঁটিতে ন্যাটোর বিমান হামলায় ৩০ ফুট মাটির নিচের সুরক্ষিত কংক্রিট বাংকারে থাকা ৮০টি V-601M সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছিল। ফলে বিরাট এলাকা কাভার করতে লঞ্চার ভেঙে ছোট করা ছাড়া তার কোনো উপায় ছিল না।
এছাড়া ড্যানি আরো নিয়ম সৃষ্টি করেন যে প্রতিটি ব্যাটারির সার্চ এন্ড ট্র্যাক রাডার প্যাসিভ মুডে (শত্রু বিমানের সিগন্যাল পর্যবেক্ষণ) কাজ করবে এবং প্রতিটি লঞ্চার ইউনিটের ফায়ার কন্ট্রোল রাডার (FCR) সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ডের জন্য চালু করা হবে। প্রতিবারে দুটো লঞ্চারের FCR একসাথে অনলাইনে থাকবে। ২০ সেকেন্ডের পরপরই মিসাইল ফায়ার করুক বা না করুক, উক্ত লঞ্চার ইউনিট দুটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে রাডার ব্যাটারি ইকুইপমেন্টগুলো একেবারে ভেঙে ফেলতে হবে!!
লে. কর্নেল ড্যানির এ ধরনের পাগলাটে নির্দেশের পেছনে কারণ ছিল ন্যাটোর AGM-88 HARM নামক এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল। যে সমস্ত যন্ত্র বিভিন্ন ধরনের তরঙ্গ নিয়ে নির্গত করে তার সবই কম-বেশি রেডিয়েশন তৈরি করে। এই যন্ত্রের আওতায় সামরিক বাহিনীর রাডার থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও রয়েছে। প্রতিটি রাডারের নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যসহ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন আছে। উক্ত মিসাইল রাডারের রেডিয়েশন সোর্স খুঁজে বের করে হামলা চালায়। এমনকি অফলাইনে থাকা রাডারও স্বল্প মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত করে। এই অতিমাত্রায় সতর্কতার কারণে অন্যান্য সার্বিয়ান এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের তুলনায় লে. কর্নেল ড্যানির রেজিমেন্টের ক্ষেত্রে শত্রুর বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা একেবারে কম ছিল।
ড্যানির ইউনিটের ‘সার্চ এন্ড ট্র্যাক’ এর কাজ করতো সোভিয়েত যুগের পুরনো ভিন্টেজ পি-১৮ রাডার। এখানে মিটার ব্যান্ড ইলুমিনেশনের জন্য ভ্যাকুয়াম টিউব ও লার্জ রোটেটিং ইয়াগি গ্রিড এন্টেনা ব্যবহার করে টার্গেট খুঁজে বের করা হয়। এই রাডার বড় RCS বিশিষ্ট বিমানকে ১২৫ থেকে ২০০ কি.মি. দূর থেকে শনাক্ত করতে পারত। তবে এর প্রধান সমস্যা ছিল এটি বেশি দূরের টার্গেটের অবস্থান শনাক্তের ক্ষেত্রে কয়েকশ মিটার সামনে-পিছনে করে ফেলত।
অ্যাকুরেসি সংক্রান্ত এই সমস্যা দূর করতে গিয়ে লে. কর্নেল ড্যানি রাডারের ফ্রিকোয়েন্সি যথাসম্ভব কমিয়ে দেন যেন মিটার ব্যান্ড তরঙ্গ বিমানের গায়ে প্রতিফলিত না লেগে বিমানের ভেতরের যন্ত্রাংশে প্রতিফলিত হয়। কারণ স্টেলথ বিমানগুলোর গায়ে রাডার তরঙ্গ শুষে নেয়ার মতো বিশেষ কেমিক্যালের প্রলেপ থাকে যা বিমানের ভেতরে থাকে না। এছাড়া খুবই স্বল্প মানের ফ্রিকোয়েন্সি ন্যাটো যুদ্ধবিমানের রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার ধরতে পারে না। তাই আকাশে প্রতি মিনিটে রাডারের তরঙ্গ ছুড়ে দেয়ার হার বৃদ্ধি করতে ক্রুদের নির্দের দেন ড্যানি। এই মডিফাইড রাডার দিয়ে কয়েকদিন অনুশীলন করার পর তিনি ২৫ কি.মি. দূর থেকে অদ্ভুত কিছু সিগন্যাল ধরতে পারেন। ড্যানি বুঝে যান এটাই স্টেলথ বিমানের সিগনেচার! তিনি পি-১৮ রাডারকে তার মিসাইল ব্যাটারির রাডার নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করেন। উল্লেখ্য, সার্চ এন্ড ট্র্যাক রাডার ছাড়াও একটি ইউনিটে একাধিক মিসাইল গাইড করার জন্য ফায়ার কন্ট্রোল রাডার, টার্গেটের উচ্চতা সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য হাইট মেজারমেন্ট রাডার থাকে।
লে. কর্নেল ড্যানি তার ক্রুদের একর্ড মিসাইল সিমুলেটরে খুবই কঠোরভাবে ট্রেনিং দিতেন যেন ক্রুরা যুদ্ধকালীন মানসিক চাপের সাথে অভ্যস্ত হতে পারেন। যারা এ ধরনের পরীক্ষায় টিকতে পারতেন না তাদেরকে বদলি করে দিতেন। বেশ কয়েকজন একাডেমিতে ট্রেনিং পাওয়া রাডার অপারেটরকে তিনি সাধারণ গার্ড হিসেবে ব্যাটালিয়ন সিকিউরিটি পোস্টে বদলি করেন। এছাড়া প্র্যাকটিস সেশন ও বাস্তবে যুদ্ধের সময়, প্রতিটি শত্রু বিমানের দিকে দুটো মিসাইল একবারে ফায়ার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এছাড়া রাডার চালু থাকা অবস্থায় এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল ফাঁকি দিতে তিনি এমন এক কৌশলের প্রয়োগ ঘটান যার কথা শুনে ন্যাটো জেনারেলদের মতো বিস্ময়ে আপনার চোখও কপালে উঠে যাবে। তিনি অবসরে যাওয়া/ধ্বংস হওয়া মিসাইল ইউনিটের রাডারগুলোকে এক্টিভ ইমিটার ডিকয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। এছাড়া সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত আক্রমনের আগে ইরাকি বিমানবাহিনীর বেশ কিছু মিগ-২১ ও মিগ-২৩ যুদ্ধবিমান তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ায় ওভারহোলিং (মেরামত) করতে পাঠানো হয়েছিল। কুয়েত যুদ্ধের সময় দেশটি আন্তর্জাতিক চাপে সেগুলো ফেরত না পাঠিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ড্যানি তার ঘাঁটির মূল রাডার স্টেশনের প্রতিরক্ষার জন্য একাধিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখেন যা শত্রু বিমান হামলার সময় ইঞ্জিন ও রাডার চালু করে দিয়ে ক্রুরা সরে যেত। এতে বিমানগুলো উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন ডিকয় হিসেবে কাজ করতো। এভাবে একটি-দুটি নয়, ২৩টি AGM-88 HARM মিসাইলকে ভুল টার্গেটে হিট করিয়েছে তার ইউনিটের ক্রুরা! এজন্য জোতান ড্যানিকে ওয়েস্টার্ন ইউরোপের ইতিহাসের সেরা এয়ার ডিফেন্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
স্টেলথ বিমান শুটডাউন
২৭ মার্চ, ১৯৯৯; সন্ধ্যা সাতটায় ইতালির আভিয়ানো ন্যাটো বিমানঘাঁটি গোপনে পর্যবেক্ষণ করা যুগোস্লাভিয়ান গোয়েন্দারা চারটি এফ-১১৭ বিমানের উড্ডয়নের সংবাদ পাঠান। ঠিক পাঁচ মিনিট পর ড্যানির পি-১৮ রাডারটি কারিগরি ত্রুটির কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়! ৪৫ মিনিটের টানা প্রচেষ্টার পর রাডারটি চালু করতে সমর্থ হয় তার ক্রুরা। রাত ৮:৪০ মিনিটে রাডারে চারটি অদ্ভুত সিগন্যাল দেখা যায়। এগুলো যে এফ-১১৭ বিমান তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইলো না। টার্গেটের রেঞ্জ ২৩ কিলোমিটার এবং দূরত্ব ক্রমেই কমছে!
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোতান ড্যানি সাথে সাথে একজোড়া লঞ্চারের ফায়ার কন্ট্রোল রাডার (FCR) চালু করার নির্দেশ দেন। মুহূর্তেই মিসাইলগুলো ফায়ারিং মুডে চলে যায়। প্রথম FCR তার নির্ধারিত ২০ সেকেন্ডের মধ্যে টার্গেট লক করতে ব্যর্থ হয়। ড্যানি জানতেন যে তিনি FCR এ শত্রু বিমানকে টার্গেট লক করার চেষ্টা করা মাত্রই বিমানের রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার (RWR) পাইলটকে সতর্ক করে দিবে। তাই তিনি ডোরডে এনিচিক নামক একজন অধীনস্থ মেজরকে (যাকে ২০০৯ সালের আগপর্যন্ত সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল) টার্গেট লক না করেই মিসাইল ফায়ারিংয়ের নির্দেশ দেন! কিন্তু তিনি আবার চেষ্টা করতে চাইলেন। ১৭ সেকেন্ড চেষ্টা করে লক করতে ব্যর্থ হয়ে মেজর ডোরডে ১৩ কি.মি. দূর থেকে প্রথম মিসাইল ফায়ার করেন।
এ সময় টার্গেটের উচ্চতা ছিল ভূমি থেকে ৮ কি.মি. উপরে! কিন্তু বিমান যদি আগের স্পিড, কোর্সে না থাকে তবে বিমানের হিট সিকিং সেন্সর টার্গেট খুঁজে পাবে না। তাই মিসাইলকে পুনরায় টার্গেট লককৃত বিমানের দিকে ধাবিত করার জন্য ফায়ারিংয়ের পরপরই মিসাইলে টার্গেট ডাটা ট্রান্সফার করা হয়। কিন্তু সিঙ্গেল শটে সাফল্যের সম্ভবনা ১০০% নয় বিধায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোতান ড্যানি সবসময় এক টার্গেটের পেছনে দুটো মিসাইল মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আবার এটাও নির্দেশ দিয়েছিলেন যে শত্রুর এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল থেকে বাঁচতে একবারে ২০ সেকেন্ডের বেশি ফায়ার কন্ট্রোল রাডার চালু রাখা যাবে না। তাই মেজর ডোরডে রাডার বন্ধ করে দেন। কিন্তু ড্যানি আবার সেটা চালুর নির্দেশ দেন!
নিজের তৈরি নিয়ম নিজেই ভাঙার কারণ ছিল সেদিন তার গোয়েন্দারা আরো জানিয়েছিল যে ন্যাটোর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান EA-6 প্রাউলারগুলো এখনও ঘাঁটিতেই বসে আছে। তিনি ধরে নিলেন রাডারের অবস্থান শনাক্ত করার মতো বিমান এই মুহূর্তে আকাশে নেই। তাই তিনি নিজের এয়ার ডিফেন্স ইউনিটের ভাগ্য নিয়ে জুয়া খেললেন। নাইটহক স্টেলথ টেকনোলজির অত্যাধুনিক বিমান হলেও প্রাউলারের মতো স্বল্পতম সময়ের তার রাডারের অবস্থান খুঁজে বের করতে পারবে না বলে ধরে নেন। তাই দ্বিতীয়বার রাডার চালু করে আরো দ্রুততার সাথে টার্গেট লক করে ফেলেন এবং দ্বিতীয় মিসাইল ফায়ার করেন। দুটো ফায়ারিংয়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র ৮ সেকেন্ড!
পাইলটের বর্ণনা থেকে জানা যায় তিনি তার মিসাইল ওয়ার্নিং রিসিভারে (MWR) দুটো ব্লিপ দেখতে পান এবং প্রায় সাথে সাথেই কাউন্টারমেজার (চ্যাফ/ফ্লেয়ার) ছুড়েন। এগুলো দেখতে অনেকটা আতশবাজির মতো। চ্যাফ আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে রাডারকে সাময়িক সময়ের জন্য অন্ধ করে দিয়ে টার্গেট লক ভেঙে দেয়। ফ্লেয়ার জ্বলে উঠে বিমানের ইঞ্জিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি তাপ উৎপন্ন করে। ফলে মিসাইলের হিট সিকার বিভ্রান্ত হয়। উক্ত এফ-১১৭ পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ড্যারেল জেলকো অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে মিসাইলটি হালকা মেঘ ভেদ করে তার বিমানের সামনের দিক থেকে উড়ে এসে বিমানের মাথার উপর খুবই কাছে দিয়ে ঘেঁষে চলে যায়। তিনি প্রবল ঝাঁকুনি অনুভব করেন, কিন্তু কেন সেটি বিস্ফোরিত হয়নি তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। চ্যাফ/ফ্লেয়ারের কারণে এটি বিভ্রান্ত হতে পারে। মিসাইলগুলো তো টার্গেটের নিকটবর্তী হলে প্রক্সিমিটি সেন্সরের কল্যাণে আকাশে বিস্ফোরিত হওয়ার কথা।
দ্বিতীয় মিসাইল ফায়ারিং টের পেয়ে তিনি সেটি ফাঁকি দিতে ম্যানুভার করতে শুরু করেন। এটি তার পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরিত হয়। প্রক্সিমিটি সেন্সর এক্টিভেট হওয়ার রেডিও পিং শুনে ড্যানি ও ক্রুরা আনন্দে ফেটে পড়েন। শকওয়েভের ধাক্কায় তার বিমানটি আকাশেই উল্টে যায়। শ্ৰাপনেলের কারণে বিমানের ডানা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাইলট ড্যারেল বিমান সোজা করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। মাইনাস সিক্স G (নেগেটিভ জি-লোড)-তে বিমানটি নিচের দিকে পড়তে থাকায় তার শরীরের উপর প্রচন্ড মাত্রায় অভিকর্ষ বল কাজ করছিল। বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি এতটাই প্রকট ছিল যে পাশ্ববর্তী দেশ বসনিয়ার আকাশে থাকা একটি KC-135 Stratotanker এরিয়াল রিফুয়েলার (মাঝ আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় জ্বালানী সরবরাহকারী বিমান) এর ক্রুরা সেটি পরিস্কার দেখতে পান।
ড্যারেল বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর বিমান সোজা করতে সক্ষম হন এবং ইজেক্ট (স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্যারাশুটসহ বেরিয়ে আসা) করেন। তিনি আকাশে ভেসে থাকতেই তার সার্ভাইবাল রেডিও সেটটি ব্যবহার করে সাহায্য প্রার্থনা করেন যেন উচ্চতার কারণে তার রেডিও সিগন্যাল সর্বাধিক দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। তাছাড়া ভূমিতে নেমে আসার পরপরই যে শত্রু সেনাদের হাতে গ্রেফতার/নিহত হবেন তা জানতেন। তাই নিজের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার (অক্ষত এবং সুস্থ) কথাও রেডিওতে প্রচার করেন। সাথে সাথে তার সঙ্গে উক্ত কেসি-১৩৫ বিমানের ক্রুরা যোগাযোগ করেন। তারা ড্যারেলের ভূপাতিত হওয়ার খবর ন্যাটোর বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান। সার্চ এন্ড রেসকিউ টিম তাকে খুঁজে নেয়ার আগপর্যন্ত তাকে কোথাও লুকিয়ে পড়তে পরামর্শ দেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ড্যারেল জেলকো এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সেই সম্পর্কে বেশ ভালো রকমের ট্রেনিং পেয়েছেন। তিনি সার্বিয়ার দক্ষিণ রুমা অঞ্চলের ৪ লেন ন্যাশনাল হাইওয়ের এক মাইল দক্ষিণে বুডানোভচি গ্রামের একটি ফসলের মাঠে নিরাপদে ল্যান্ড করার পর প্যারাশুট মাটিতে গর্ত করে লুকিয়ে ফেলেন এবং নিকটস্থ একটি পয়ঃনিষ্কাশন নালায় লুকিয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ৪৫ কি.মি. দূরে রাজধানী বেলগ্রেডে বি-২ স্টেলথ বোম্বারের ফেলা শক্তিশালী বোমাগুলোর বিস্ফোরণের শকওয়েভ টের পান। পাইলট ড্যারেল জেলকো তার এফ-১১৭ এর ক্র্যাশ সাইট থেকে প্রায় এক মাইল দূরে ল্যান্ড করেন। সার্বিয়ান সৈনিক, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন মিলে তাকে খুঁজতে অনুসন্ধান করে।
তারা ড্যারেলের খুবই কাছে এসে গেলেও তিনি ধরা পড়েননি। ভূপাতিত হওয়ার ৮ ঘন্টা পর ইউএস এয়ারফোর্সের ‘কমব্যাট সার্চ এন্ড রেসকিউ’ টিমের একদল কমান্ডো একটি Sikorsky MH-53 হেলিকপ্টার নিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ড্যারেল পরবর্তীতে সাংবাদিকদের বলেন যে তিনি কয়েক মিনিটের জন্য শত্রুর হাতে ধরা পড়েননি। বিধ্বস্ত বিমানের ককপিটে ক্যাপ্টেন ‘ক্যান উইজ ডেউলে’ এর নাম লেখা থাকায় সংবাদ মাধ্যমে ড্যারেলের ঘটনাটি ভুল নামে প্রকাশ পায়। উক্ত ক্যাপ্টেন ক্যান অপারেশন ডেজার্ট স্ট্রমের সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল ড্যারেল জেলকোর এফ-১১৭ নিয়ে ৩৯ বার মিশনে গিয়েছিলেন। তার ককপিট ক্যানোপিতে তার নাম লেখা ছিল।
২৭ মার্চ, ১৯৯৯ সালে এফ-১১৭ ভূপাতিত করার পর একই বছরের ২ মে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোতান ড্যানির ২৫০ তম এয়ার ডিফেন্স মিসাইল ব্রিগেড আরেকটি ন্যাটো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এই বিমানের নাম ছিল এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যা এফ-১১৭ নাইটহকের মতো স্টেলথ নয় বটে তবে অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতির। এই ঘটনাতেও পাইলট ডেভিড গোল্ডফেইন অল্পের জন্য শত্রুর হাতে ধরা পড়া থেকে বেঁচে গিয়ে উদ্ধার হন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন বিমানবাহিনীর চীফ অব স্টাফ হন। এই দুই পাইলটের সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে হলিউডে ‘Behind The Enemy Line‘ নামক একটি মুভি নির্মিত হয়েছে যেখানে এফ-১৮ যুদ্ধবিমানের মিসাইল ফাঁকি দেয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা ও শত্রু এলাকায় ভূপাতিত পাইলটের টিকে থাকার লড়াইয়ের চমৎকার দৃশ্যায়ন ঘটানো হয়েছে।
ঘটনার পরবর্তী ঘটনা
ড্যারেল জেলকোর বিমানটি ভূপাতিত হলেও এটি একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়নি। ফলে বিমানের স্পর্শকাতর প্রযুক্তির সার্বিয়ার হাত ধরে তাদের মিত্র রাশিয়ার কাছে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্র কেন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার বা একেবারে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়নি তা নিয়ে পাইলট, বিশ্লেষক, ইতিহাসবিদরা বিস্মিত।
এফ-১১৭ মূলত ‘৭০ দশকের প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১৯৮৮ সালের আগে মানুষ এই বিমানের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত না। জেনারেল ব্রুস কার্লসন বলেছিলেন রাশিয়ার হাতে এর ধ্বংসাবশেষ গেলে ক্ষতির মাত্রা তেমন বেশি হবে না ভেবে ক্র্যাশ সাইটের উপর বোমা ফেলেনি ন্যাটো। শোনা যায় স্টেলথ এফ-১১৭ যুদ্ধবিমানের কয়েকটি টুকরা বিক্রির জন্য সার্বিয়াকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত প্রস্তাব করেছিল চীন! বর্তমানে এর ধ্বংসাবশেষ সার্বিয়ার বেলগ্রেডের এভিয়েশন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
স্টেলথ বিমান ও এর শনাক্তকারী রাডার বানানোর জন্য বিমানটির অংশবিশেষ চীন ও রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল বলে শোনা যায়। জোতান ড্যানি স্যুভেনির হিসেবে বিমানটির ইঞ্জিনের টাইটেনিয়াম আউটলেটের ঘুড়ির ন্যায় দেখতে একটি অংশবিশেষ নিজের বাড়ির গ্যারেজে রেখেছিলেন। তিনি যুদ্ধের পর অবসর নিয়ে বেকারি ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে এফ-১১৭ বিমানকে পুরোপুরি অবসরে পাঠায় মার্কিন এয়ারফোর্স। ২০০৯ সালে একটি হাঙ্গেরিয়ান মিলিটারি এভিয়েশন ম্যাগাজিন তার সাক্ষাৎকার নেয় যার মাধ্যমে এফ-১১৭ ভূপাতিত করার ঘটনা প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। ২০১১ সালে একটি ডকুমেন্টারি তৈরির সময় ড্যানির সাথে পাইলট ড্যারেল জেলকোর সাক্ষাৎ ও বন্ধুত্ব হয়।
২০২০ সালে একজন এফ-১১৭ পাইলট দাবি করেন যে তার উইংম্যানের বিমানটি ২৭ মার্চের পর একটি মিশনে মিসাইল হামলার শিকার হয়। প্রক্সিমিটি সেন্সরের কারণে মিসাইলটি এফ-১১৭ এর খুব কাছে বিস্ফোরিত হয়। তবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সেটি ঘাঁটিতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার পক্ষে মার্কিন এয়ারফোর্স এখনও কোনো গোপনীয় নথি প্রকাশ করেনি। তবে ড্যানির ক্রুরা ২৭ মার্চের উক্ত ঘটনার পর আবার একই রকম ঘটনার সম্মুখীন হয় এবং আরেকটি আনকনফার্মড হিট করে। তারা স্টেলথ বোম্বার বি-২-তে আঘাত করার দাবি করলেও জোতান ড্যানি মিসাইল এনগেজমেন্ট ডাটা পর্যালোচনা করে ক্রুদের দাবী নাকচ করে দেন।
তিনি বলেছিলেন ক্রুরা ডিকয়ে আঘাত করেছেন। এ ধরনের ডিকয় মূল বিমানের মাদার সিগন্যালকে কপি করে মিসাইলের সামনে নিজেকে টার্গেট হিসেবে উপস্থাপন করে। উক্ত পাইলটের দাবি সত্য হয়ে থাকলে এফ-১১৭ তার রাজত্বের শেষদিকে এসে খেই হারিয়েছিল বলা যায়। তার উত্তরসূরি স্টেলথ বি-২ বোম্বার ও এফ-২২ ফাইটার জেট অবশ্য এখনও অজেয় বিমান। তবে আধুনিক রাডার ও মিসাইলের যুগে সেগুলো কতদিন অজেয় থাকবে সেটিও দেখার বিষয়।