১.
ইন্দোনেশিয়ার মলাক্কাস বা মালাকু দ্বীপপুঞ্জ ‘মসলার দ্বীপ’ নামে পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকেই মলাক্কাসের দ্বীপগুলোতে গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল ইত্যাদি মসলার চাষ হতো। এই দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপের নাম বান্দা। ছোট-বড় ১১টি ভূখন্ড নিয়ে দ্বীপটি গঠিত। এই বান্দা দ্বীপ ছিল পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে জায়ফল নামক মসলার চাষ হতো।
ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে উৎপন্ন হওয়া মসলাগুলো একসময় ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান দ্রব্য। আরব বণিকদের কল্যাণে মসলা ইউরোপে পৌঁছানোর পর থেকে মসলার চাহিদা বেড়েছিল আর দুষ্প্রাপ্যতার জন্য বেড়েছিল দাম। বিভিন্ন মসলার মাঝে জায়ফলের দাম ছিল বেশ চড়া। চৌদ্দ শতকে আধা কেজি জায়ফলের দাম ছিল একটা গরু বা তিনটা ভেড়ার সমান। এখনকার সময়ে একটা জায়ফলের দাম পড়ত ৪-৬ ডলার। দুই আউন্সের দাম পড়ত ৬২৫ ডলার। মধ্যযুগের ইউরোপে একজন নাবিক এক প্যাকেট জায়ফল বিক্রি করে সারাজীবন বসে খেতে পারত।
জায়ফলের এত দামের পেছনে কারণ ছিল এর বহুবিধ উপকারিতা। খাবারে স্বাদবর্ধক বা সুগন্ধিবর্ধক হিসেবে যেমন অব্যর্থ ছিল জায়ফল, তেমনই নানা রকম রোগ সারাতে কাজে আসতো এটি। প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে জায়ফল দিতে পারতো কার্যকর সুরক্ষা। ইউরোপে দীর্ঘ শীতকালে মাংসের পচন রোধে জায়ফল ব্যবহার করা হতো। শরীরে কোনো ক্ষত হলে তার উপর ছিটিয়ে দেয়া হতো জায়ফল। জায়ফলকে প্লেগ রোগের প্রতিষেধক বলে বিশ্বাস করতো ইউরোপীয়রা। গৃহস্থালি বা রাস্তাঘাটকে সুগন্ধময় করতেও ব্যবহৃত হতো এই মসলা। রোমান সম্রাট ষষ্ঠ হেনরি তার অভিষেকের সময় রাস্তায় জায়ফল পুড়িয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশকে সুগন্ধময় করতে চেয়েছিলেন।
নানাবিধ উপকারিতার কল্যাণে ইউরোপ একটু বেশিই প্রেমে পড়েছিল জায়ফলের। এত বেশি যে এর জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাধাতেও পিছপা হয়নি তারা।
২.
ইউরোপের মসলার সাথে পরিচয় খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকের দিকে। তখন মসলার বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আরব বণিকদের। তারা ভারববর্ষ থেকে মসলা কিনে সিল্ক রোড হয়ে পৌঁছে যেত কনস্টান্টিনোপলে। সেখানে ভেনেশীয় বণিকদের কাছে চড়াদামে বেচতো দুষ্প্রাপ্য মসলা। মসলার উৎস গোপন রাখতে নানা রুপকথা ফাঁদতো আরবরা। মসলা নামের এই মহামূল্যবান সম্পদ যে কতটা দুর্লভ তা বোঝাতে মসলা খুবই অল্প পরিমাণে সরবরাহ করত তারা। ভেনেশীয় বণিকরা মসলার দাম আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে রীতিমতো আগুনমূল্যে বিক্রি করতো ইউরোপে। দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল এভাবেই জায়গা করে নিয়েছিল ইউরোপীয় অভিজাতদের খাবার টেবিলে। ক্রুসেড-পরবর্তী মধ্যযুগীয় ইউরোপে মসলার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছিল।
ইউরোপ মসলার প্রেমে পড়ল ঠিকই, কিন্তু মসলার আকাশছোঁয়া দাম আর দুষ্প্রাপ্যতার কারণে তা রয়ে গেলো তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে পনের শতকে কনস্টান্টিনোপলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধিকারে চলে গেলে ইউরোপে মসলা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ততদিনে রেনেসাঁর হাওয়া লেগে ইউরোপ বদলাতে শুরু করেছে। নতুন দেশ আবিষ্কারের নেশায় শুরু হয়েছে এইজ অব ডিসকাভারি। তখনই মসলার প্রেম আর সম্পদের নেশা ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের জাহাজে করে নিয়ে এলো দূরপ্রাচ্যে।
৩.
ভাস্কো ডা গামা ১৪৯৭ সালে আফ্রিকা ঘুরে ভারতবর্ষে আসার নৌপথ আবিষ্কার করেন, এবং জাহাজবোঝাই প্রাচ্যের সম্পদ ও মসলা নিয়ে পর্তুগালে ফিরে যান। এভাবে ইউরোপীয়দের মাঝে পর্তুগিজরা মসলার সন্ধানে এগিয়ে যায় একধাপ।
পর্তুগিজরা মসলার দ্বীপ আবিষ্কার করে ১৫১২ সালে। মালাক্কা প্রণালীর বান্দা দ্বীপে ভেড়ে পর্তুগিজ জাহাজ। কিন্তু তারা দ্বীপের মসলার ব্যবসার নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘ওরাং কায়া’ অভিজাতদের সাথে ঠিক সুবিধা করতে পারেনি। তারা পর্তুগিজদের সাথে ব্যবসা করতে রাজি হয়নি। পর্তুগিজরা যুদ্ধ করে ষোল শতক পর্যন্ত টিকে ছিল। তারপর ডাচদের কাছে মার খেয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে বিদেয় হয়।
মসলার দ্বীপে ডাচরা এসেছিল ১৫৯৯ সালে। তারা শক্তিপ্রয়োগে ছিল পর্তুগিজদের থেকে কঠোর। ডাচ বণিকরা স্থানীয় রাজাদের বাধ্য করে তাদের সাথে চুক্তিতে আসতে। চুক্তিতে বলা হয়, বান্দার লোকজন শুধু ডাচদের কাছেই জায়ফল বিক্রি করতে পারবে। এই চুক্তি ভঙ্গ করার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ঐতিহাসিকদের মতে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চুক্তি জিনিসটা বুঝত না। ডাচ নৌবহর দ্বীপ ত্যাগ করামাত্রই তারা অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে জায়ফল বিক্রি শুরু করে। জায়ফলের বিনিময়ে প্রতিবেশী দ্বীপ থেকে খাদ্যশস্য কিনত তারা। ডাচরা তাদের এই আচরণকে চুক্তিভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে।
স্থানীয়দের চুক্তিভঙ্গের সাজা দিতে আর ব্রিটিশদের তাড়াতে তাই বান্দা আসেন ডাচ ইস্ট কোম্পানির নতুন আঞ্চলিক প্রধান জান পিয়েটার্জ কোয়েন। কোয়েন কাউকে ছাড় দেননি। জায়ফল ব্যবসায় ডাচ মনোপলি নিশ্চিত করতে বেশ নিষ্ঠুরতার পথ অবলম্বন করেন তিনি। কোয়েন ভেবেছিলেন, দ্বীপের অধিবাসীদের মেরে বা তাড়িয়ে দিয়ে ভূমি দখল করে সেখানে দাসদের দিয়ে জায়ফল চাষ করাবেন।
এই লক্ষ্যে তিনি ১৬২১ সালে আক্রমণ করেন বান্দা দ্বীপের সবচেয়ে বড় ভূখন্ড বান্দাবেসারে। ১,৬০০ ডাচ সৈন্য, ৮০ জন জাপানি মার্সেনারি, এবং স্থানীয় কিছু দাস নিয়ে আক্রমণ করেন দ্বীপের নিরীহ মানুষদের উপর। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ ছিল এটি। স্থানীয়দের বিপুল প্রতিরোধের মুখে পড়ে ডাচরা। তবে জাপানি মার্সেনারির গেরিলা আক্রমণের মুখে রণেভঙ্গ দেয় স্থানীয়রা। দ্বীপ দখলের পর ডাচদের বিরোধিতাকারী সব রাজাকে হত্যা করে বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। দ্বীপের যেসব চাষী ডাচদের চোখ বাঁচিয়ে অন্য কোথাও জায়ফল বিক্রি করত, তাদের খুঁজে বের করে মারা হয়। ১৫ বছরের উপরে সব পুরুষদের মেরে ফেলা হয়। অনেককে বন্দী করে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। অসহায় অনেক মানুষ বন্দী হওয়ার ভয়ে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন দেয়। ডাচদের নির্যাতনের মুখে দ্বীপের জনসংখ্যা ১৫,০০০ থেকে কমে নেমে আসে ৬০০-তে।
৪.
এরই মাঝে ঘটে যায় আরেক ঘটনা। ১৬০৩ সালে দ্বীপে আসে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ডাচদের সাথে জবরদস্তি বাণিজ্য থেকে রেহাই পেতে বান্দার অধিবাসীরা ব্রিটিশদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ব্রিটিশদের দখলে ছিল একমাত্র দ্বীপ রান। একটি দ্বীপেই ব্রিটিশরা জায়ফল ফলিয়ে বিক্রি করতো। কোয়েন সেই দ্বীপের জমিও ব্রিটিশদের হাতে দিতে চাননি। ব্রিটিশদের সাথে রান নামের এই দ্বীপের দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে অনেকবার। ১৬১৬ সালে ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্য দ্বীপে আক্রমণ করেন কোয়েন। গাছ কেটে দেন, গাছে আগুন ধরিয়ে দেন। ১৬২১ সালের বিশাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটা শুধু স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও। ব্রিটিশরা হারলেও ডাচদের হাড় জ্বালাতন করে গেছে পরের কয়েক দশক ধরে। কিন্তু ১৬৬৬ সালের এক যুদ্ধে ডাচদের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় ব্রিটিশরা। তাদের দ্বীপের দখল চলে যায় ডাচদের হাতে।
এদিকে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করা ইংরেজ অভিযাত্রী হেনরি হাডসন ১৬০৯ সালে আটলান্টিক পার হয়ে আবিষ্কার করেন লং আইল্যান্ড, ম্যানহাটন আর একটা নদী যাকে এখন আমরা হাডসন নদী নামে চিনি। তার কল্যাণে ডাচরা এই এলাকার মালিক বনে যায়। এখানে তারা পশম উৎপদন করত। এই ব্যবসা মোটেও লাভজনক ছিল না। তাতে ডাচদের বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাথাব্যথা শুরু হয় যখন ব্রিটিশরা ১৬৬৪ সালে ম্যানহাটন দখল করে।
বিপদে পড়ে দু’পক্ষই পৃথিবীর দুই প্রান্ত থাকা দুটো দ্বীপ বিনিময় করে এক শান্তিচুক্তিতে আসার কথা ভাবল। ১৬৬৭ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া এই চুক্তির নাম ব্রেডা চুক্তি, যা ইতিহাসে ‘ম্যানহাটন ট্রান্সফার’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ডাচরা ৩ কি. মি. আয়তনের মসলার (রান আইল্যান্ড) দ্বীপের বিনিময়ে বিশাল ম্যানহাটনের দাবী ত্যাগ করে। কালক্রমে ম্যানহাটন হয়ে ওঠে ব্যস্ত বন্দর নগরী নিউ ইয়র্ক।
৫.
যুদ্ধের পর কোয়েন দখল করা দ্বীপগুলোকে ৬৮টি প্লানটেশনে ভাগ করেন। তারপর দাস কিনে জায়ফল চাষ শুরু করেন। কিন্তু এই দাসেরা জানত না কীভাবে চাষ করতে হয়। শুধু স্থানীয়রাই জানত সেই কৌশল। ফলে তখনও জায়ফল ফলানোর জন্য স্থানীয়দের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় কোয়েনের।
শুধু নিজের দখলে জায়ফল চাষ করেই ক্ষান্ত হননি কোয়েন। জায়ফল ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে তার ছিল আরো নানা অপকৌশল। জায়ফলের চারা দ্বীপের বাইরে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। চুরি করলে ফাঁসি দেয়া হতো।
অন্য কোনো দেশ যেন জায়ফল চাষ না করতে পারে সেজন্য জায়ফলকে চুনের ভেতর চুবিয়ে তারপর বিক্রি করা হতো। চুনের পরত জায়ফলের বীজের অঙ্কুরোদগম রোধ করে রাখত। একবার আমর্স্টারডামের গুদামে থাকা সব জায়ফল পুড়িয়ে দেয় ডাচরা, যেন ব্রিটেনে জায়ফলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সুযোগে জায়ফলের দাম বাড়ানো যায়।
১৭৬৯ সালে পিটার পিপার নামক একজন ফরাসি উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ থেকে জায়ফলের চারা চুরি করে লাগান আফ্রিকার উপকূলের ফরাসি উপনিবেশ মরিশাসে। সেখানে প্রথম বান্দা দ্বীপের বাইরে তার নিজের বাগানে জায়ফলের চারার বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।
ব্রিটিশরা ১৮১০ সালে সব চুক্তি ভুলে আক্রমণ করে ডাচদের মসলার দ্বীপ। তারপর শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, পেনাং, ক্যারিবিয়ান দ্বীপের মতো ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে জায়ফলের চারা লাগায়। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রেনাডা হয়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জায়ফল উৎপাদনকারী দেশ।
ডাচদের কপাল পুড়েছিল এভাবেই। এত রক্ত ঝরিয়ে দখল করা মসলার দ্বীপ ডাচদের হাতে থাকলেও জায়ফল ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য আর তাদের থাকল না। ডাচ মনোপলি না থাকলেও জায়ফলের দাম কমেনি সহজে। অন্য দেশও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডাচদের চেয়ে কম নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেনি।
৬.
কোয়েনের আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়ে দ্বীপের কিছু মানুষ পালিয়ে আশেপাশের দ্বীপে আশ্রয় নেয়। তারা সেখানে খাদ্যশস্যের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। ডাচদের বান্দা দ্বীপে আধিপত্য থাকলেও আশেপাশের দ্বীপগুলোর উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তখন স্থানীয় অর্থনীতি শস্য ফলিয়ে ও ব্যবসা করেই টিকে থেকেছে।
বান্দা দ্বীপের সরল মানুষজন ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে বিলুপ্ত হলেও প্লানটেশনের দাসদের মাঝে রেখে যায় তাদের জীবনধারার ছাপ। এখনকার দিনে দ্বীপে বাস করা ১৮,০০০ অধিবাসী স্বীকার করে যে তারা দ্বীপের মূল বাসিন্দা নয়। তারপরও তারা বান্দিজদের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তারা পুরনো বান্দিজদের ভাষায় গান গায়, কথা বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশ যুগ শেষ হয়। ১৯৮২ সালে জায়ফল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আসে স্থানীয় সরকারের হাতে। সব জমি ভাগ করে দেয়া হয় চাষীদের মাঝে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপেই সবচেয়ে বেশি জায়ফল উৎপাদিত হয়, এবং এখানকার জায়ফল গুণে-মানে পৃথিবীর সেরা।
জায়ফল এখনও পুরো পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত একটি মসলার নাম। এর সাথেই থাকে জয়ত্রী নামের আরেকটি মসলা। জায়ফল ও জয়ত্রী দুটো আলাদা মসলা হলেও জন্মে কিন্তু একইসাথে। Myristica Fragrans নামের গাছ থেকে এদের পাওয়া যায়। প্রথমে চিরসবুজ গাছে ফোটে সুগন্ধী ফুল। তারপর সবুজের ছোপ থাকা লালচে হলুদ ফল দেখা যায়। অনেকটা এপ্রিকটের মতো দেখতে হয় ফলগুলো। এই ফল ফেটে বের হয়ে আসে বীজ।
বীজের গায়ে জালের মতো করে লেগে থাকা অংশটি জয়ত্রী, আর বাদামের মতো দেখতে জিনিসটা জায়ফল। জায়ফল থেকে গুঁড়ামসলা পেতে হলে শুকাতে হয় ৬-৮ সপ্তাহ। জায়ফলের গুঁড়ার স্বাদ হয় ঝাঁঝালো, দারুচিনি বা গোলমরিচের মতো। অন্যদিকে জয়ত্রীর স্বাদ কিছুটা মিষ্টি। ঝাল বা মিষ্টি যেকোনো খাবারকে সুস্বাদু বা সুগন্ধময় করতে, এমনকি আইসক্রিম, পুডিং বা কেকের মতো মিষ্টান্ন সাজাতে কাজে আসে জায়ফলের গুঁড়ো। আপনার প্রিয় বিরিয়ানির রাজকীয় স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য অনেকটাই দায়ী জায়ফল ও জয়ত্রী। পরেরবার কোনো উৎসবে বিরিয়ানি খাওয়ার সময় ডাচ সহিংসতায় প্রাণ দেয়া বান্দা দ্বীপের নিরীহ মানুষজনের কথা স্মরণ করতে ভুলবেন না যেন।