আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগেকার কথা। ১৯৬৫ সালের ২২ আগস্ট কানাডার ম্যানিটোবা প্রদেশের রাজধানী উইনিপেগে রোনাল্ড ও জ্যানেট রেইমার দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় দুটি জমজ পুত্র সন্তান। বাবা-মা নবজাতক দুই ভাইয়ের নাম রাখলেন ব্রুস রেইমার ও ব্রায়ান রেইমার।
সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে পরিবারে আগত নতুন দুই আশীর্বাদকে নিয়ে অসাধারণভাবেই কেটে যাচ্ছিলো রোনাল্ড ও জ্যানেটের দিনগুলো। কিন্তু সমস্যা শুরু হলো বাচ্চাদের ছয় মাস বয়স থেকে। হঠাৎ একদিন তারা খেয়াল করলেন যে, তাদের দুই ছেলেরই প্রস্রাব করতে সমস্যা হচ্ছে। এরপর আর দেরি না করে তারা ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানালেন যে, তারা ফিমোসিসে (Phimosis) আক্রান্ত।
উল্লেখ্য, ফিমোসিস এমন এক শারীরিক অবস্থা যখন লিঙ্গের অগ্রভাগের ত্বককে গ্ল্যান্সের পেছনে টেনে নেয়া যায় না। ফলে প্রস্রাবের সময় লিঙ্গের অগ্রভাগের ত্বকের নিচের অংশ বেলুনের মতো ফুলে ওঠে। এছাড়া কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের বেলায় লিঙ্গোত্থানের সময় ব্যথা হয়। সাধারণত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তিন বছর বয়সের মাঝে এ সমস্যাটি সেরে যায়।
ব্রুস ও ব্রায়ানের এমন অবস্থা দেখে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন তাদের খৎনা করিয়ে দেয়ার। বাবা-মা রাজি হলে মাত্র ৮ মাস ৫ দিনের মাথায় ১৯৬৬ সালের ২৭ এপ্রিল তাদের খৎনা করান এক ইউরোলজিস্ট। কিন্তু সমস্যা বেধে যায় এখানেও।
খৎনা করাতে প্রথম নেয়া হয়েছিলো ব্রুসকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ডাক্তাররা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেভাবে কটারাইজেশন করাতে পারেন নি। ব্রুসের জননাঙ্গ এতটাই পুড়ে যায় যে, তা আর অপারেশন করেও ঠিক করার উপায় ছিলো না। ব্রুসের এমন দুর্ঘটনা দেখে ডাক্তাররা আর ব্রায়ানের খৎনা করাতে চাইলেন না। ফিমোসিস থেকে পরবর্তীকালে আপনাআপনিই সেরে উঠেছিলো ব্রায়ান।
উল্লেখ্য, কটারাইজেশন এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে শরীরের কোনো অংশ অপসারণ করতে বা বন্ধ করতে সেই অংশটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। রক্তপাত বন্ধ করতে, শরীরের কোনো অবাঞ্ছিত অংশের বৃদ্ধি বন্ধ করতে কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পাওয়া না গেলে ইনফেকশন রোধে কটারাইজেশন করা হয়।
কিন্তু ব্রুসের কী হবে?
দুর্ঘটনার মাসখানেক পরের কথা। একদিন বসে বসে টিভি দেখছিলেন রেইমার দম্পতি। সেদিন টিভিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সুবিখ্যাত সেক্সোলজিস্ট, সাইকোলজিস্ট ও লেখক জন মানি ট্রান্সসেক্সুয়ালদের সেক্স চেঞ্জ অপারেশনের সপক্ষে নিজের মতামত ব্যক্ত করছিলেন। সেদিন টিভিতে ডাক্তারের স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ কথাবার্তা শুনে যেন নতুন আশার আলো দেখতে পেলেন ব্রুসের বাবা-মা।
কিন্তু আসলেই কি সেই আলোটা ‘আশা’র ছিলো? নাকি সেটা ছিলো এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের সূচনা?
জ্যানেট রেইমার ভাবলেন যে, যেহেতু ব্রুসের জননাঙ্গের এমন অপূরণীয় একটা ক্ষতি হয়ে গেছে, তাহলে সেক্স চেঞ্জ অপারেশনের মাধ্যমে তাকে ছোট বেলাতেই মেয়েতে রুপান্তরিত করে ফেলাটাই হবে বুদ্ধির পরিচায়ক। স্বামী-স্ত্রী একমত হলে অবশেষে জ্যানেট চিঠি লিখলেন ডাক্তার জন মানিকে। এমন এক রোগীকে পেয়ে ডাক্তারই বা ফেরাবেন কেন? তিনিও দ্রুতই তাদের চিঠির জবাব দিলেন, আমন্ত্রণ জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরে এসে তার সাথে দেখা করার।
১৯৬৭ সালে জন্স হপকিন্স হাসপাতালে ডাক্তার মানির সাথে দেখা করতে আসেন রেইমার দম্পতি। মানি ছিলেন ‘থিওরি অভ জেন্ডার নিউট্রালিটি’র এক বিখ্যাত প্রস্তাবক। এ থিওরি অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি আসলে কোন লিঙ্গের, তা পুরোপুরি তার জননাঙ্গের উপর নির্ভরশীল না। বরং শৈশব থেকে সমাজের সাথে তার মিথস্ক্রিয়াই তার মাঝে লিঙ্গবোধ, অর্থাৎ সে ছেলে না মেয়ে, সেই ধারণার জন্ম দেয়। আর নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এটা পরিবর্তন করাও সম্ভব।
ডাক্তার মানি তার আগের বিভিন্ন রোগীর ইতিহাস জানালেন ব্রুসের বাবা-মাকে। সেই সাথে জানালেন যে, ব্রুসের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায় নি। তিনি একে অভিহিত করলেন ‘জেন্ডার গেট’ নামে, জানালেন যে দুই বছর বয়সের আগ পর্যন্ত একটি শিশুর জন্য জেন্ডার গেট খোলা থাকে। এই সময়ের আগে যদি অপারেশন করা হয়, তাহলে শারীরিক গঠনের পরিবর্তে ব্রুসকে যেভাবে, যে মানসিকতায় বড় করে তোলা হবে, সেটাই তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে দিবে।
ব্রুসের বাবা-মাকে এভাবে জোরাজুরির পেছনে অবশ্য ডাক্তার মানিরও আলাদা একটা স্বার্থ ছিলো। কারণ ব্রুসের আগে কোনো নন-ইন্টারসেক্স শিশুর উপর তিনি তার এ থিওরি বাস্তবে প্রয়োগ করেন নি। অন্যদিকে ব্রুস আর ব্রায়ান ছিলো জমজ ভাই। এখন তাদের একজনকে যদি হঠাৎ করে ‘বোন’ হিসেবে বড় করা হতে থাকে, তাহলে সমবয়সী এ দুজনের মানসিকতায় কেমন পরিবর্তন আসবে, তা পরীক্ষা করতে পারার এক সুবর্ণ সুযোগও হাতছাড়া করতে চাচ্ছিলেন না মানি।
অবশেষে মাত্র ২২ মাস বয়সে অপারেশনের মাধ্যমে ব্রুসের অন্ডকোষ অপসারণ করা হয় এবং একটি অবিকশিত ভালভা তৈরি করে দেয়া হয়। সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির পর ব্রুসকে তার বাবা-মা একজন মেয়ে হিসেবেই বড় করতে থাকেন। তার নতুন নাম দেয়া হয় ব্রেন্ডা। পরবর্তী এক দশক ধরে ব্রুসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে, তাকে মানসিক সমর্থন দিতে এবং নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে দেখা করতে আসতেন জন মানি।
ব্রেন্ডার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন থেকেই তার বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করেন ডাক্তার মানি। তবে সরাসরি ব্রেন্ডার নাম ব্যবহার না করে তিনি ‘John/Joan’ ছদ্মনামটি ব্যবহার করতেন। এ ঘটনাটি তখন ভালোই সাড়া ফেলেছিলো। ফেমিনিস্টরাও এমন কিছু একটার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলো। ব্রেন্ডার ঘটনাটিকে পুঁজি করে তারা বলতে লাগলো যে, গণিতে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে ভালো কিংবা কর্মক্ষেত্রে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি বেতন পাবে- এমন কিছুর কোনো বায়োলজিক্যাল ভিত্তি নেই। “আমাদের শারীরিক গঠন নয়, বরং কিভাবে আমাদেরকে বড় করা হচ্ছে তার উপরই নির্ভর করে আমরা ভবিষ্যতে পুরুষ না নারী হবো”- এমন কথাও তখন শোনা যেতে থাকলো অনেকের মুখ থেকে!
কিন্তু আসলেই কি এই অপারেশন চালানোর পর একটি স্বাভাবিক জীবনে যেতে পেরেছিলো এককালের ব্রুস কিংবা পরবর্তীকালের ব্রেন্ডা রেইমার? আজকের কাহিনীর সবচেয়ে হৃদয় বিদারক অংশটুকু শুরু হচ্ছে এখান থেকেই।
বিশ্বজুড়ে লোকে কি বলছে তা আসলে খুব একটা আমলে নেয়ার সময় ছিলো না রেইমার দম্পতির জন্য। কারণ ব্রেন্ডাকে একটি মেয়ে হিসেবে বড় করার সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার মাঝে বরঞ্চ ছেলেদের বৈশিষ্ট্যই বেশি প্রকাশ পেতে লাগলো। পাড়ার অন্যান্য ছেলেদের সাথে দৌড়াদৌড়ি, মারামারি, গাছে চড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো সে। শৈশবে পুতুল নিয়ে খেলাধুলার মতো যেসব বিষয়ে মেয়েদের বেশি মেতে থাকতে দেখা যায়, সেগুলোতে ছিলো তার প্রচন্ড অনীহা। আস্তে আস্তে ব্রেন্ডার চারপাশের জগত যেন ছোট হয়ে আসা শুরু করলো। অন্যান্যদের সামনে জমজ ভাই ব্রায়ানও তার সাথে খেলতে আপত্তি করতো। ছোট্ট ব্রেন্ডাও বোধহয় বুঝতে পেরেছিলো যে, তার এই অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী ডাক্তার মানি। তাই তার সাথে দেখা করতে যাওয়াটা ব্রেন্ডার জন্য ছিলো খুবই অপছন্দের একটি কাজ।
ডাক্তারও বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন বিষয়টি। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতির সাথে ব্রেন্ডাকে খাপ খাইয়ে নিতে তিনি কিছু কাজ করলেন।
- প্রায় সময়ই বাচ্চা মেয়েটির সাথে তিনি তার জননেন্দ্রিয় নিয়ে কথা বলতেন। অবশ্য এর উদ্দেশ্য ছিলো পুরুষ ও নারী জননাঙ্গের পার্থক্য সম্পর্কে ব্রেন্ডাকে ধীরে ধীরে সচেতন করে তোলা।
- ডাক্তার মানি প্রায় সময়ই ব্রেন্ডা ও ব্রায়ানকে যৌনকর্মের মহড়া করতে বাধ্য করতেন। একটু খেয়াল করুন, নাহলে অর্থে গোলমাল লেগে যেতে পারে। এখানে আলাদাভাবে এসেছে ‘মহড়া’ শব্দটি যা বোঝাচ্ছে যে, সেটি প্রকৃত শারীরিক মিলন ছিলো না। বরং সেখানে থাকতো কিভাবে এটি করা হয় সেই সম্পর্কে জ্ঞান।
তবে জমজ দুই ভাই-বোনের মাঝে এমন কাজ যে কেউই স্বাভাবিকভাবে নিবে না তা তো না বললেও চলে। তাহলে একবার ভাবুন তো তখন ছোট্ট ব্রেন্ডার মনের অবস্থাটা কেমন হয়েছিলো যার আসলে তার এমন শারীরিক অবস্থা হওয়ার পেছনে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাই ছিলো না? - আরো একটা কাজ করতেন ডাক্তার। মাঝেমাঝেই তিনি ভাই-বোনকে কাপড় খুলে একে অপরের জননাঙ্গ পরীক্ষণ করতে বাধ্য করতেন। এমনকি একবার তিনি তাদের এরকম অবস্থার একটি ছবিও তুলে রেখেছিলেন।
- ব্রেন্ডার বয়স যখন সাত বছর, তখন মানি একজন নারীর সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ার ছবি তাকে দেখিয়েছিলেন। অপারেশনের মাধ্যমে ব্রেন্ডাকে পূর্ণাঙ্গ নারী জননেন্দ্রিয় তৈরি করে দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করতেই এমনটা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডাক্তার মানির সকল প্রচেষ্টাই ব্যাকফায়ার করেছিলো। শরীর আর মনের এমন বৈপরিত্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না ব্রেন্ডার পক্ষে। ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা তার কাছে চিকিৎসার পরিবর্তে আতঙ্কের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। মেয়ের মনের অবস্থা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন বাবা-মা। তাই ডাক্তার যখন অপারেশন করে ব্রেন্ডার শরীরে ভ্যাজাইনা তৈরি করে দেয়ার কথা বললেন, এর পর থেকেই আর তার সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখছিলেন না রেইমার দম্পতি।
২২ মাস বয়স থেকে শুরু করে কৈশোর পর্যন্ত তলপেটে করা একটি ছিদ্রের মাধ্যমেই প্রস্রাব করার কাজটি সারতো ব্রেন্ডা। কৈশোরে ব্রেস্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য তাকে দেয়া হতো হরমোন ট্যাবলেট। ১৩ বছর বয়সে ব্রেন্ডার মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে শুরু করে। সে তার বাবা-মাকে সরাসরিই জানিয়ে দেয় যে, তারা যদি মানির সাথে তাকে আর একটিবারও দেখা করতে বাধ্য করে, তাহলে সে নিজেই নিজেকে শেষ করে দিবে।
অবশেষে ১৯৮০ সালের ১৪ মার্চ সকল লুকোচুরির অবসান ঘটালেন ব্রেন্ডার বাবা। মেয়েকে কাছে নিয়ে অতীতের ঘটনা সব খুলে বললেন তিনি, জানালেন শৈশবে তার সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির মূল কারণ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে নিজের জীবন সম্পর্কে নির্মম এ সত্যটি জানতে পেরে আর দেরি করে নি ব্রেন্ডা। ডাক্তার মানির জেন্ডার নিউট্রালিটি থিওরিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সে তার জন্ম পরিচয়ে, অর্থাৎ ছেলে হিসেবে বেঁচে থাকার সিদ্ধান্তটিই নেয়, নিজের নাম হিসেবে বেছে নেয় ‘ডেভিড রেইমার’।
১৯৮৭ সালে রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির ফলাফল পাল্টাতে পুনরায় অপারেশন থিয়েটারে যায় ডেভিড। টেস্টোস্টেরন ইনজেকশন, ডাবল ম্যাসেক্টমি ও দুবার ফ্যালোপ্লাস্টি অপারেশন (Construction or reconstruction of a penis or the artificial modification of the penis by surgery) করা হয় তার উপর।
কিন্তু এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে ডেভিডের (সাবেক ব্রুস, পরবর্তীতে ব্রেন্ডা) সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে তার ভাই ব্রায়ানের। ব্রায়ান ভাবতে শুরু করে যে, ছোটবেলা থেকে পরিবারের সকল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু আসলে ডেভিডই ছিলো, সে না। পরবর্তীতে পরিবারে নতুন এ ভাইয়ের উপস্থিতি তাকে রাগিয়ে তোলে। আস্তে আস্তে ব্রায়ানের মাঝে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। একসময় স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয় ব্রায়ান। দুবার বিয়ে করলেও কোনোটাই খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। অবশেষে ড্রাগ ওভারডোজের কারণে ২০০২ সালের ১ জুলাই মৃত্যু হয় ব্রায়ানের। এ ঘটনাকে অনেক আত্মহত্যাও বলে থাকেন।
১৯৯০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জেন ফন্টেইন নামক এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন ডেভিড। পড়াশোনা কখনোই তেমনভাবে করার সৌভাগ্য জোটে নি তার কপালে, কাজকর্মেও তেমন দক্ষ ছিলেন না তিনি। ফলে প্রায় এক বছর ধরে বেকার হয়েই বসে থাকতে হয় ডেভিডকে। তার কাহিনী নিয়ে সিনেমা তৈরির স্বত্ব তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ীর কাছে। কিন্তু একসময় সেই লোকও টাকা মেরে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে বিপাকে পড়ে যান ডেভিড। ওদিকে ভাইয়ের এমন মৃত্যুও তাকে মানসিকভাবে পীড়া দিচ্ছিলো।
চারদিক থেকে আসা এতসব চাপে বৈবাহিক জীবনটাও খুব একটা সুখের যাচ্ছিলো না ডেভিডের। এমন পরিস্থিতিতে তার স্ত্রী কিছুদিনের জন্য আলাদা থাকতে চাইলেন। স্ত্রীর এমন কথাও খুব একটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেন না তিনি। এটাকে বিচ্ছেদের ইঙ্গিত মনে করে বিষণ্ন ডেভিড কিছুদিন কাটিয়ে আসলেন বাবা-মায়ের সাথে। অবশেষে ২০০৪ সালের ৪ মে এক গ্রোসারি স্টোরের সামনে থাকা পার্কিং লটে Sawed-off Shotgun দিয়ে সরাসরি নিজের মাথায় গুলি করে বসেন ডেভিড, ইতি টানেন ৩৮ বছর ধরে বয়ে চলা দুঃসহ এক জীবনের।
এত বড় দুর্ঘটনার পরেও নিজেকে দোষী হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন ডাক্তার মানি। তার ভাষ্যমতে, ডেভিড নিজেকে একজন নারী হিসেবে মেনে নিতে না চাওয়াটাই এই কেসে আত্মহত্যার মূল কারণ। এছাড়া ডেভিডের বাবা-মা তাকে জেন্ডার গেট বন্ধ হবার অল্প কিছুদিন আগে নিয়ে আসায় এর সফলতার সম্ভাবনা খুব কমে গিয়েছিলো। তবে অনেকের চোখেই মূল দোষটা ডাক্তার মানিরই। কারণ ব্রেন্ডার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার অনেক দিন পরে, এমনকি ব্রেন্ডা নিজেকে ডেভিডে পরিবর্তন করার পরেও তিনি বারবার জনতাকে এটাই জানাতে চেয়েছেন যে, তিনি সফল।