আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগেকার কথা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা অবাক হয়ে দেখছিলো গোটা বিশ্ববাসী। ১৯১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এমনই এক দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো বলে দাবি করা হয়, যার জন্য আজও আক্ষেপ করেন অনেকেই। তারা বলেন, “ইশ, সেদিন যদি অমনটা না হতো!” ওদিকে সন্দেহবাদীরা বলেন, “হেহ্, সব ভুয়া! এমন ঘটনা জিন্দেগীতেও ঘটে নাই।”
কিন্তু কোন ঘটনার কথা বলছেন তারা? আর কেনই বা সেই ঘটনার সত্য-মিথ্যা নিয়ে এত সন্দেহ?
এজন্য প্রথমেই আমাদের জানতে হবে হেনরি ট্যান্ডি নামে এক ব্রিটিশ সেনা সম্পর্কে। ১৮৯১ সালের ৩০ আগস্ট ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ার কাউন্টির লেমিংটন শহরে জন্ম হয় ট্যান্ডির। তার বাবাও ছিলেন একজন সেনাসদস্য। খুব ছোটবেলাতেই মাকে হারানো ট্যান্ডি বড় হন এক এতিমখানায়। ১৯ বছর বয়সে গ্রীন হাওয়ার্ডস রেজিমেন্টে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সেনাজীবনে পদার্পন করেন। ১৯১৪ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইপ্রার প্রথম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ট্যান্ডি (ইপ্রা বেলজিয়ামের একটি শহর)। ১৯১৬ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া সমের যুদ্ধেও অংশ নেন ট্যান্ডি। তবে সেই যুদ্ধে পায়ে আঘাত পাওয়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ হলে তাকে পাঠানো হয় ফ্রান্সের নবম ব্যাটালিয়নে। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে প্যাশেনডেলে সংঘঠিত ইপ্রার তৃতীয় যুদ্ধে আবারো আহত হন ট্যান্ডি। ১৯১৮ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিউক অফ ওয়েলিংটন রেজিমেন্টের ৫ম রেজিমেন্টের হয়েও যুদ্ধ করেন তিনি। সেই সময় ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত মার্কোনিং কমিউন দখলে তার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে ‘ভিক্টোরিয়া ক্রস’ পুরষ্কারটি দেয়া হয়।
পাঠকদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, “লেখার শিরোনামে আছে জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের নাম, কিন্তু এখনো তার সম্পর্কে একটা কথাও না বলে কেন হেনরি ট্যান্ডি নামে এক ব্রিটিশ সেনার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হচ্ছে?” আসলে আজকে যে ঘটনাটি নিয়ে আলাপ করা হচ্ছে, তাতে হিটলার আর ট্যান্ডি, এ দুজনকে নিয়েই সমানভাবে আলোচনা করা দরকার। কারণ এটি ইতিহাসের অন্যতম একটি প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা।
মার্কোনিং নিয়ে যুদ্ধে থাকাকালেই ঘটে যায় এক ঘটনা। দিনটি ছিলো ১৯১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। যুদ্ধ তখন বেশ গুরুতর রুপ ধারণ করেছে। জার্মান বাহিনী পিছু হটতে শুরু করেছে। এমন সময় হঠাৎ করেই এক আহত জার্মান সেনাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে আসতে দেখলেন ট্যান্ডি। সেনাটি তার গুলির রেঞ্জের ভেতরে চলে আসলো একেবারে। তবে আহত সেই সৈন্যটিকে দেখে মায়া হলো তার। তাই বন্দুকের নিশানা ঠিক করার পরও তা নামিয়ে নিলেন তিনি। আহত সৈনিকটি, যে কিনা তখনই তার জীবনের শেষ দেখতে পেয়েছিলো, ট্যান্ডির এমন মহানুভবতায় অবাক না হয়ে পারলো না। তাই ট্যান্ডিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ধীরে ধীরে আবারো হারিয়ে গেলো সে, ট্যান্ডিও মনোযোগ দিলেন নিজের কাজে।
ঘটনাটি কেবল শত্রুপক্ষের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শনের একটি চমৎকার নমুনা হিসেবেই থাকতে পারতো। কিন্তু তা আর হয় নি, বরং সেটি এমনই এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিস্মিত করেছে পুরো মানবজতিকে, করবে অনাগত দিনগুলোতেও।
পরবর্তী ঘটনার সূত্রপাত ১৯৩৮ সালে। একটু আগেই জানানো হয়েছে ১৯১৪ সালে ইপ্রার প্রথম যুদ্ধে ট্যান্ডির অংশগ্রহণের কথা। সেই যুদ্ধে তিনি এক আহত সেনাকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেবা-শুশ্রূষার উদ্দেশ্যে। তার সেই অবস্থার ছবি তুলে ছাপিয়ে দেয় লন্ডনের বেশ কিছু সংবাদপত্র। বেশ বাহবাও পান তিনি। পরবর্তী সময়ে ইতালির চিত্রশিল্পী ফর্তুনিনো মাতানিয়া যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর গৌরবময় দিক তুলে ধরতে এ ছবিটি তার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন।
১৯৩৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেইন গিয়েছিলেন জার্মানিতে। আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপে আরেকটি বড় ধরনের যুদ্ধ এড়াতে হিটলারকে বোঝানোই ছিলো তার এ সফরের মূল উদ্দেশ্য। ফুয়েরার তখন চেম্বারলেইনকে আতিথ্য দেন তার বাভারিয়ার বাসায়। আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে হিটলার তার কাছে থাকা মাতানিয়ার ছবিটি দেখান চেম্বারলেইনকে। তখন নাকি তিনি বলেছিলেন, “এ মানুষটা আমাকে মারার এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছিলো যে, আমি ভেবেছিলাম আর কোনোদিনই আমি জার্মানিকে দেখতে পাবো না। ঈশ্বরই আমাকে সেদিন এতটা নির্ভুল নিশানার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন…।”
চেম্বারলেইন আর ট্যান্ডির মাঝে এরকম কথা হয়েছিলো কিনা তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। ১৯২৩ সালে গ্রীন হাওয়ার্ডস রেজিমেন্টের মিউজিয়ামে মাতানিয়ার আঁকা ছবিটি স্থান পায়। আর ১৯৩৭ সালের শুরুর দিকে হিটলারও সেই ছবিটি পুনরায় আঁকিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। হিটলারের অ্যাড্জুটেন্ট ক্যাপ্টেন ফ্রিৎজ ওয়েইডাম্যানের একটি চিঠি সেই জাদুঘরে রাখা আছে। সেখানে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, “নিজের যুদ্ধ অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে ফুয়েরার বরাবরই বেশ আগ্রহী। এ ছবিটি তাকে দেখানোর পর তিনি সত্যিই বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন।”
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এ ছবিটি হিটলারের দেয়ালে স্থান পেলো কীভাবে? এ প্রসঙ্গে সন্দেহের তীর ঘোরানো হয় নাৎসি বাহিনীরই আরেক সদস্য ডাক্তার অটো শোয়েন্ডের দিকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এক ব্রিটিশ সেনার সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে। এর সূত্র ধরেই সেই সেনা শোয়েন্ডকে এই ছবির একটি পোস্টকার্ড দিয়েছিলেন। ১৯১৪ সালের প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে আঁকা সেই ছবিটি দেখেই হিটলার সম্ভবত ১৯১৮ সালে তার সাথে দেখা হওয়া হেনরি ট্যান্ডিকে চিনতে পেরেছিলেন।
হেনরি ট্যান্ডির জীবনীকার ড. ডেভিড জনসন অবশ্য হিটলারের এ দাবির সাথে পুরোপুরিই দ্বিমত পোষণ করেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি তার দ্বিমতের কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
তার মতে, ছবি আর হিটলারের সাথে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার মধ্যকার সময়ের ব্যবধান প্রায় চার বছর। দীর্ঘ এ সময়ের ব্যবধানে অপরিচ্ছন্ন, ধুলোবালি ও রক্তমাখা একজন সৈনিককে হিটলার দেখামাত্রই চিনে ফেলবেন- এমন কথা তার কাছে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ড. জনসন দাবি করেছেন হিটলার আর ট্যান্ডির সেদিন দেখা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না। তার মতে, ট্যান্ডির বাহিনী ক্যাম্প করেছিলো মার্কোনিংয়ে। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ হিটলার তার বাহিনীর সাথে চলে যান মার্কোনিংয়ের ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ক্যাম্ব্রাই নামক এলাকায়। প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী, হিটলার আর ট্যান্ডির দেখা হওয়ার কথা ছিলো ২৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু বাভারিয়ান স্টেট আর্কাইভে সংরক্ষিত বিভিন্ন দলিল থেকে জানা যায়, ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর হিটলার ছুটিতে ছিলেন। এজন্য হিটলারের এ ঘটনা সম্পর্কে ড. জনসন তাই বলেছেন, “এর অর্থ হিটলার হয় ছুটিতে ছিলেন, নাহয় ছুটি থেকে ফিরছিলেন, নাহয় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে তার রেজিমেন্টের সাথেই ছিলেন (ছুটি নিয়েই)।”
অর্থাৎ ড. জনসন বলতে চাইছেন অ্যাডলফ হিটলারের প্রাণভিক্ষা পাওয়ার পুরো ব্যাপারটিই ভুয়া, লোক দেখানো, লোকের সমর্থন আদায় করা ঘটনা। কিন্তু কেন হেনরি ট্যান্ডি? কেন অন্য কেউ না? এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হলো, ট্যান্ডি যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ ভিক্টোরিয়া ক্রস সহ বিভিন্ন ধরনের পুরষ্কারই পেয়েছিলেন, ইংল্যান্ডে তখন তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এমন এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের হাতেই যদি নিজের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা ছড়ানো হয়, তাহলে সেটা বেশি জনপ্রিয়তা পাবে। এমনটা চিন্তা করেই হিটলার নাকি ট্যান্ডিকে ঘিরে উদ্ভট এ গল্পটি সাজিয়েছিলেন। পাশাপাশি একবার সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। সুতরাং তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উপরওয়ালার অবশ্যই কোনো না কোনো বৃহৎ উদ্দেশ্য আছে। জনগণকে এমনটা বোঝাতেও এ গল্প সাজানো হয়েছে বলে মনে করেন ড. জনসন।
আরো বলা হয়ে থাকে, জার্মানি থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেইন নাকি ট্যান্ডিকে ফোন করেছিলেন হিটলারের সাথে তার কথোপকথন জানানোর জন্য। কিন্তু তিনি তখন বাইরে থাকায় পরিবারের অন্য কোনো সদস্য সেটা রিসিভ করে। এ ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করেছেন ড. জনসন। কারণ তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর মতো এত ব্যস্ত একজন মানুষ শুধু অমন একটা বিষয় জানাতে ট্যান্ডিকে ফোন করবেন এটা তার বিশ্বাস হয় না। সেই সাথে আগুনে ঘি ঢালার মতো কথা হলো, ব্রিটিশ টেলিকম আর্কাইভ জানিয়েছে ট্যান্ডির বাড়িতে তখন কোনো টেলিফোন সংযোগই ছিলো না! আবার চেম্বারলেইন বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে অনেক দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তার বোনদের কাছে, নিয়মিত লিখতেন ডায়েরিও। কিন্তু কোথাও হিটলার-ট্যান্ডির ঘটনাটি আসে নি।
কিন্তু তারপরেও কোনো না কোনোভাবে ট্যান্ডির হাত থেকে হিটলারের বেঁচে যাওয়ার এ ধোঁয়াশামূলক কাহিনী ঠিকই ছড়িয়ে পড়তে থাকে, জনগণও সেটি গোগ্রাসে গিলতে থাকে, নাৎসি বাহিনীর সমর্থকেরাও হিটলারকে সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারণ খুঁজে পায়, ‘ঐশ্বরিক কারণ’!
ড. জনসনের মতে, হিটলার-ট্যান্ডির এ ঘটনাটি সবার সামনে আসে ১৯৩৮ সালে। সেই বছর রেজিমেন্টের একটি অনুষ্ঠানে একজন অফিসার, যিনি কিনা চেম্বারলেইনের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছিলেন বলে দাবি করেন, ট্যান্ডিকে ঘটনাটি জানান। তবে এ কথাটি কি ট্যান্ডিকে ব্যক্তিগতভাবে আলাদা স্থানে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছিলো নাকি খাওয়াদাওয়ার পর সবাই যখন গল্পগুজবে মত্ত তখন ঠাট্টার ছলে বলা হয়েছিলো, তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। ট্যান্ডি অবশ্য স্বীকার করেছিলেন যে, ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি কিছু সৈন্যকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে তাদের একজন হিটলার কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে তার আরো তথ্য দরকার বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে কভেন্ট্রি হেরাল্ড নামক একটি দৈনিকে ট্যান্ডি জানান, “তাদের মতে হিটলারের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। তারা সঠিকও হতে পারে, কিন্তু আমি সেটা মনে করতে পারছি না।”
তবে এক বছর পর ট্যান্ডির বাড়িতে বোমা হামলার পর এক সাংবাদিক তার সাথে দেখা করতে গেলে তাকে অনেকটা নিশ্চিতই মনে হয়েছিলো হিটলারের ব্যাপারে। সেদিন তিনি আক্ষেপ করে কেবল বলেছিলেন,
“যদি আমি শুধু জানতে পারতাম সে ভবিষ্যতে কী হয়ে উঠতে যাচ্ছে! যখন আমি দেখলাম এতগুলো নরনারী ও শিশুকে সে হত্যা করেছে, আহত করেছে, তখন তাকে সেদিন ছেড়ে দেয়ার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম।”
এরপরই সংবাদপত্রটি তাকে নিয়ে লিখেছিলো কিছু কথা-
“এটি এমনই এক লজ্জাবোধ, যা তিনি আমৃত্যু বয়ে বেড়িয়েছেন।”
“তিনি হয়তো এটা থামাতে পারতেন। তিনি ইতিহাসের পুরো গতিপথটাই পাল্টে দিতে পারতেন।”
ট্যান্ডি যদি সেদিন হিটলারকে গুলি করে মেরে ফেলতেন, তাহলে হয়তো গত শতাব্দীর মাঝপথ থেকে পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লেখা লাগতো। কিন্তু ২০ বছর পর সেদিনের সেই আহত সেনাটি কী করতে যাচ্ছেন, সেটাই বা ট্যান্ডি কী করে বুঝবেন? ড. জনসনও তাই শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন,
“We must not forget that in 1918, no-one knew who Hitler was. Why would Henry remember and regret that specific encounter, especially when Hitler would also have been extremely disheveled and covered in mud and blood, not looking like he did 20 years later”।