বহুদিন পর জেগে উঠেছে বেনু। কোনো এক অজানা কারণে তার ঘুম ভেঙে গেছে। ছোট শিশু যেমন ঘুম থেকে জেগে উঠেই কয়েক মুহূর্ত নিজের চারপাশ অবলোকন করে ভীষণ কৌতূহলে, ঠিক তেমনি বেনু ধীরে ধীরে সবকিছু তন্ময় হয়ে দেখে নিচ্ছে। কিন্তু, কোথাও কেউ নেই! কোথাও কিছু নেই!
চারদিকে শুধু আঁধার আর আঁধার। যতদূর চোখ যায়, শুধু নিকষ কালো আঁধার। এই ঘোর আঁধারে যেন ভয় পেয়ে গেলো বেনু। পরমুহূর্তেই অস্থিরভাবে বিকট শব্দে চিৎকার শুরু করে দিলো সে। বেনুর চিৎকারে যেন অন্ধকারও ভয় পেয়ে গেলো। অন্ধকারের বুক বিদীর্ণ করে ফুটে উঠতে থাকলো কোটি কোটি নক্ষত্র। অন্ধকার গলে বের হয়ে আসতে লাগলো খেলনা মার্বেলের ন্যায় গোলাকার গ্রহমণ্ডল।
কিন্তু বেনুর চিৎকার থামার কোনো লক্ষণ নেই। এসব দেখে সে যেন আরো ভড়কে গেলো। সে আরো জোরে চিৎকার করা শুরু করলো। এই চিৎকারে নক্ষত্র-গ্রহগুলো যেন অস্থির হয়ে গেলো। তারা অস্থিরভাবে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগলো। দেখতে দেখতে জ্বলে উঠলো নক্ষত্রগুলো। এদের মাঝে গোলাকার সূর্যটাও আছে। সূর্যের প্রখর আলো এসে পৃথিবী নামক এক ছোট গ্রহের গা আলতো করে ছুঁয়ে গেলো। ব্যস!
শুরু হয়ে গেলো এক নতুন সম্ভাবনা। শুরু হলো জীবনের গান। বিস্ময়কর জীবিত পৃথিবীকে ঘিরে বিস্মিত সূর্য আর গ্রহগুলো অনুগত দাসের ন্যায় আবর্তিত হতে লাগলো। এই জাদুকরি দৃশ্যে অভিভূত হলো বেনু। বিশাল ডানা মেলে আনন্দে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে উঠলো সে। থেমে গেলো তার চিৎকার। তবে সেটা কিছুদিনের জন্য মাত্র!
উপরে উল্লেখিত উপকথাটুকু কোনো মনগড়া উপাখ্যান নয়। মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কিত এই উপকথাটুকু প্রাচীন মিশরীয়দের মাঝে প্রচলিত ছিল যুগ যুগ ধরে। ‘বেনু’ নামক এক বিশাল পাখির ডাকে শুরু হওয়া পৃথিবীর শুরুর গল্প যেন কখনও হারিয়ে না যায়, সে উপলক্ষ্যে তারা বিভিন্ন সাংকেতিক বর্ণমালা এবং চিত্রের সাহায্যে পুরো উপকথা লিপিবদ্ধ করে রেখেছে বেশ কয়েকটি স্তম্ভের বুকে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং মন্দিরের ফটকে স্থান পেলো বিস্ময়কর স্তম্ভগুলো। ইতিহাসবিদদের নিকট এই স্তম্ভগুলো ‘ওবেলিস্ক’ নামে পরিচিত।
ওবেলিস্ক কী?
গ্রীক ভাষায় ‘ওবেলিস্ক’ (Obelisk) অর্থ ‘স্পিট’। স্পিট প্রাচীন গ্রিসে ব্যবহৃত রান্না করার বিশেষ চামচ, যার একদিক বেশ সরু। আবার মিশরীয়দের নিকট ওবেলিস্কগুলো ‘তেখেনু‘ (Tekhenu) নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ ‘আকাশ ভেদ করে যা’। এই দুই অর্থ থেকে ওবেলিস্কগুলোর আকার-আকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। ওবেলিস্ক একপ্রকার স্তম্ভ, যার শীর্ষ বেশ সরু। প্রায় ২০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ওবেলিস্কগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকলেও ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক থেকে মিশরীয় ওবেলিস্কগুলো ইতিহাসবিদদের নজর কেড়েছে।
একটি মজার তথ্য হচ্ছে, মিশরের প্রতিটি ওবেলিস্ক সম্পূর্ণ একটি পাথরখণ্ড থেকে তৈরি করা হয়েছে। সুদীর্ঘ ওবেলিস্কগুলোর মাঝে কোনো নতুন পাথরের জোড়া নেই। বেশ দক্ষভাবে লাল গ্রানাইট পাথর দিয়ে খোদাই করা হয়েছে বিভিন্ন বিস্ময়কর তথ্য। তবে ইতিহাসবিদরা এতে মোটেও বিস্মিত নন। যে মিশরীয়রা পিরামিড নামক বিস্ময়কর স্থাপত্য নির্মাণ করতে পারে, তাদের কাছে ওবেলিস্কগুলো নিতান্ত ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
ইতিহাসবিদগণ বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এর নির্মাণশৈলী আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেও একটি ব্যাপারে তারা আজও ঘোরের মধ্যে আছেন। ওবেলিস্কগুলো তৈরি করার পর সেগুলো সুনিপুণভাবে বিভিন্ন মন্দিরের ফটকের সামনে লম্বভাবে স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই লম্বা ভারি ওবেলিস্কগুলো স্থাপন করা হলো, সে হিসাব মেলাতে পারেননি তারা।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ওবেলিস্কগুলোর দিকে তাকিয়ে যেকোনো পর্যটকের মনে প্রথম প্রশ্ন জেগে উঠে, “এই স্তম্ভ তৈরির কারণ কী?” সুদীর্ঘ ওবেলিস্ক তৈরির বিকল্প বিভিন্ন পদ্ধতি মিশরীয়দের জানা ছিল। কিন্তু তারা ওবেলিস্ককেই বেছে নেয় সেগুলোর মধ্য থেকে। কারণ ওবেলিস্ক শুধু ঠাকুরমা’র গল্পের ঝুলির ন্যায় কোনো গল্প সংকলন ছিল না। মিশরীয়দের নিকট ওবেলিস্কের ব্যবহার বহুবিধ। বিভিন্ন উৎসব, উৎসর্গে তারা ওবেলিস্ক ব্যবহার করতো। বিভিন্ন রাজার আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ওবেলিস্কগুলো তৈরি করা হতো। বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরের ফটকেও দেখা মিলেছে সুদীর্ঘ ওবেলিস্কের। ধারণা করা হয়, ওবেলিস্কের বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার উপর বিশ্বাস ছিল মিশরীয়দের। তার বিশ্বাস করতো, ওবেলিস্ক তাদের বিভিন্ন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। মিশরীয়দের সূর্য দেবতা ‘রা’ এর সম্মানার্থে মন্দিরগুলোতে ওবেলিস্ক নির্মাণ করা হতো।
ঠিক কখন প্রথম ওবেলিস্ক তৈরি করা শুরু হয়, সে তথ্য জানতে হলে আমাদের যেতে হবে সবচেয়ে প্রাচীন ওবেলিস্কের কাছে। রাজা সেনুস্রেত নির্মিত ওবেলিস্কগুলো পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকা সবচেয়ে প্রাচীন ওবেলিস্ক হিসেবে চিহ্নিত। প্রাচীন মিশরের হেলিওপলিসে অবস্থিত ওবেলিস্কটি ১৯৭১ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টপূর্বের কোনো এক সময়ে নির্মিত হয়েছিলো। সূর্যদেবতা রা স্বয়ং এই ওবেলিস্কটির উপর ভর করেছিলেন বলে বিশ্বাস করতেন মিশরীয় পুরোহিতরা।
ওবেলিস্ক নির্মাণ অনেক আগে থেকে শুরু হলেও ফারাওরা এর পূর্ণতা দান করে। ফারাওদের পূর্বের ওবেলিস্কগুলোর উচ্চতাও বেশি ছিল না। ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস প্রায় ৮২ ফুট উঁচু ওবেলিস্ক নির্মাণের আদেশ দেন। রামেসিসের পরের ফারাওরা আরো উঁচু ওবেলিস্ক নির্মাণ করা শুরু করেন। কিন্তু সর্বোচ্চ ওবেলিস্ক নির্মাণের রেকর্ডে ফারাও রাজাদের পেছনে ফেলেছেন এক রানী। তার নাম ফারাও হাতশেপসুত।
রানী হাতশেপসুতের ওবেলিস্কটির উচ্চতা প্রায় ১৩৭ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই ওবেলিস্ক পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ কাজ সম্পাদন করার পরে ওবেলিস্কটির গায়ে ফাটল দেখা দেয়। নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়ে রানী ওবেলিস্ক নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়ার আদেশ দেন। স্থাপিত হবার পূর্বেই ধ্বংস হয়ে যায় সেই ওবেলিস্ক। ইতিহাসবিদগণ রানী হাতশেপসুতের ওবেলিস্কটিকে ‘অসমাপ্ত ওবেলিস্ক‘ বা ‘Unfinished Obelisk’ নামে চেনেন। বিভিন্ন পাণ্ডুলিপির বর্ণনামতে, ওবেলিস্কটি কার্ণাক শহরে স্থাপিত হবার কথা ছিল।
ওবেলিস্ক নির্মাণ
ওবেলিস্ক নির্মাণে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এর নির্মাণকৌশল নিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, প্রাচীন মিশরীয় দাসদের নির্মাণকৌশল বর্তমান যুগের অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলীকে হার মানিয়েছে। কারণ, ওবেলিস্ক নির্মাণে ব্যবহৃত গ্রানাইট অত্যন্ত শক্ত পদার্থ। তৎকালীন যন্ত্রপাতির সাহায্যে গ্রানাইট সূক্ষ্মভাবে কাটা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু মিশরীয় দাসরা গ্রানাইটে বেশ কয়েক জায়গায় বড় ছিদ্র তৈরি করে বিশেষ কায়দায় পানির সাহায্যে নির্দিষ্ট ছাঁচের গ্রানাইট কাটতে পারতো।
তবে তারা ঠিক কীভাবে ওবেলিস্কগুলো সোজা অবস্থায় স্থাপন করত, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। তবে ইতিহাসবিদ মার্গারেট বুনসনের মতবাদ সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি দড়ির সাহায্যে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ওবেলিস্ক স্থাপন করার একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। ওবেলিস্ক উত্তোলনের সময় বেশ বড় একটি গর্ত বালি দ্বারা পূর্ণ করা হয়। এরপর ওবেলিস্কের গোড়া সেই গর্তে ধীরে ধীরে প্রবেশ করাতে থাকলে সেটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে থাকে।
ওবেলিস্ক সম্পর্কিত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি ও চিত্রলিপি থেকে নানা অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু বেশিরভাগ পাণ্ডুলিপি অস্পষ্ট এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার অনেক তথ্যই অজানা রয়ে গেছে।
দেয়ালের উপকথা
ওবেলিস্কের দেহে ফারাওরা বিভিন্ন ধর্মীয় বাণী প্রচারের পাশাপাশি পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কিত বিভিন্ন মতাদর্শ এবং উপকথা হায়ারোগ্লিফিক বর্ণমালা এবং চিত্রের সাহায্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। মিশরের অবস্থিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওবেলিস্কের দেয়াল ঘেঁটে উদ্ধার করা একটি উপকথা তুলে ধরা হলো–
“পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে দেবতা অটাম ‘বেনবেন’ নামক একটি বেদীর উপর আসীন ছিলেন। তখন মিশরীয় পুরাণের ‘ফিনিক্স’ খ্যাত বেনু নামক পাখির চিৎকারে পুরো মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। মহাবিশ্বে প্রাণের সঞ্চারের মাধ্যমে বেনু পাখি তার চিৎকার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পাখিটি আবার চিৎকার করে উঠবে। অদূর ভবিষ্যতে তার চিৎকারের মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু বেনু পাখি নিজের খেয়াল খুশিমতো চিৎকার করতে পারবে না। তাকে নির্দেশ প্রদান করবেন সূর্যদেবতা রা। এর মাধ্যমে মৃত্যু ঘটবে সকল দেবতার। দেবতাদের মৃত্যুর সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে মানুষ”।
এরূপ শত শত উপকথা নিয়ে মিশরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে ওবেলিস্কগুলো। উপকথা ছাড়াও এর মাঝে বিভিন্ন চিহ্ন খোদাই করা আছে। ইতিহাসবিদগণের মতে, ওবেলিস্কের শীর্ষ ধীরে ধীরে সরু হয়ে পিরামিডের আকৃতি ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে ফারাওরা তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি পিরামিডকে বংশীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। জেনে রাখা ভালো, ওবেলিস্ক স্থাপনকালে মিশরে পিরামিড নির্মাণ শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
হায়ারোগ্লিফিক পাঠোদ্ধারের সময় গবেষকরা বেশ কিছু ওবেলিস্কের সহায়তা নিয়েছিলেন। রানী ক্লিওপেট্রার নামের বানানের সাথে কিছু হায়ারোগ্লিফিক বর্ণমালার তুলনার মাধ্যমে তারা এই রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হন।
দেশে দেশে মিশরীয় ওবেলিস্ক
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত ওবেলিস্ক। এদের মধ্যে বাদ যায়নি যুক্তরাষ্ট্রও। রাজধানী শহর ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অবস্থিত সুদীর্ঘ ওবেলিস্কটি বর্তমান বিশ্বে উচ্চতম ওবেলিস্ক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই ওবেলিস্কের নির্মাতা মিশরীয়রা ছিলেন না। মিশরীয়দের বাইরেও অন্যান্য রাজা-বাদশাহগণ ওবেলিস্ক নির্মাণ করেছিলেন। তেমনি মিশরীয়রাও শুধু মিশরের অভ্যন্তরেই ওবেলিস্ক নির্মাণকাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি। মিশরে অবস্থিত ৮টি ওবেলিস্কের বাইরে ইস্তাম্বুল, ফ্রান্স, ইতালি, ভ্যাটিকান সিটি, যুক্তরাজ্য এবং পোল্যান্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিশরীয়দের নির্মিত ওবেলিস্কের সন্ধান মিলেছে।
এই ওবেলিস্কগুলোর অধিকাংশই ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের শাসনামলে নির্মিত। মাঝারি আকারের ওবেলিস্কগুলো দেখতে প্রায় একরকম। রোমের ওবেলিস্কগুলো ইতিহাসবিদদের নিকট বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রোমের বাইরে অবস্থিত ওবেলিস্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ওবেলিস্কটির অবস্থান যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে। লন্ডন প্রবাসী এই মিশরীয় ওবেলিস্কের নামটাও বেশ মজার। মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার স্মরণে এর নাম রাখা হয় ‘Cleopatra’s Needle’, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ক্লিওপেট্রার সুঁই!
এখন স্বাভাবিকভাবেই পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, “মিশরের ওবেলিস্ক ভিনদেশে নির্মাণ করার উদ্দেশ্য কী?”
এই প্রশ্নের উত্তরটাও বেশ মজার। প্রাচীনকালে নানা কারণে বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিকট মিশরীয়রা ঋণী হয়ে পড়েছিলো। ফারাও রাজারা অর্থের বিনিময়ে সে ঋণ শোধ করা পছন্দ করতেন না। তারা ঋণ শোধের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ওবেলিস্ককে। তাই ঋণশোধ হিসেবে দেশে দেশে ওবেলিস্ক নির্মাণ করেছে মিশরীয়রা। শক্তিশালী সম্রাটদের সম্মাননা জানিয়ে উপঢৌকন হিসেবে ওবেলিস্ক নির্মাণেরও প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে।
প্রাচীন মিশরের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল বিশাল পিরামিড, যেগুলো মরুর বুকে হাজারো রহস্য নিয়ে সগৌরবে অবস্থান করছে। কিন্তু মিশরীয় সভ্যতাকে কয়েকটি পিরামিডের গোলকধাঁধায় সংজ্ঞায়িত করা নিতান্তই বোকামি! পিরামিডের বাইরেও মিশরীয়দের নানা কীর্তি, স্থাপত্য, নির্মাণকৌশল বর্তমান যুগের অত্যাধুনিক বিজ্ঞানকে হার মানিয়েছে। ওবেলিস্কগুলো সেই কীর্তির স্বাক্ষর হয়ে এখনও টিকে আছে মিশর সহ পৃথিবীর নানা দেশে। ওবেলিস্ক সম্পর্কিত সকল রহস্য সমাধান শেষ এই কথা ভেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই গবেষকেরা। প্রতিনিয়ত তারা কাজ করে যাচ্ছেন নতুন কিছু আবিষ্কারের সন্ধানে। হয়তো একদিন নতুন কিছু মিলবেও। হয়তো সেই নতুনত্বের জাদুতে আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে রচিত হবে নতুন ইতিহাস।
ফিচার ইমেজ- Etsy