১৯৭৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গুলিতে ভূপাতিত হয়েছিল লিবিয়ান আরব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১৪ এর একটি যাত্রীবাহী বোয়িং ৭২৭ বিমান। এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছিল আমাদের পূর্ববর্তী একটি আর্টিকেলে, যা আপনি পড়ে নিতে পারেন এই লিংক থেকে। ঐ ঘটনায় প্লেনটির ১১৩ জন যাত্রীর মধ্যে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিল ১০৮ জন, যাদের অধিকাংশই ছিল লিবিয়ান এবং মিসরীয় নাগরিক। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক লিবিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সালাহ বুসেইর।
সে সময় লিবিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন তরুণ বিপ্লবী নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফী। মাত্র কয়েক বছর আগেই পশ্চিমাপন্থী রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসীকে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে লিবিয়ার ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি। আরব জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ গাদ্দাফী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হাতে নিজ দেশের এত বড় ক্ষতি তার মতো নেতার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসরায়েলের উপর প্রতিশোধ নিবেন। ফাইটার জেট দিয়ে আক্রমণ করবেন ইসরায়েলের উপর।
ইসরায়েল কর্তৃক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদ শোনার সাথে সাথেই গাদ্দাফী ফোন করেন মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের কাছে। সে সময় লিবিয়া উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি হলেও সামরিকভাবে ছিল অত্যন্ত দুর্বল। অন্যদিকে মিসরের সেনাবাহিনী ছিল আরব বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী। কাজেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গাদ্দাফী সাদাতের কাছে মিসরীয় সেনাবাহিনীর সাহায্য কামনা করেন।
গাদ্দাফীর পরিকল্পনা ছিল প্রথমেই ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী হাইফাতে ফাইটার জেট দিয়ে আক্রমণ করবেন। পরবর্তীতে পূর্ণ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে মিসরীয় সেনাবাহিনীকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু সাদাত গাদ্দাফীর প্রস্তাবে রাজি হলেন না। বরং তিনি গাদ্দাফীকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাই না নেওয়ার পরামর্শ দিলেন, যদিও তার পরামর্শের পক্ষে তিনি ভালো কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি।
সাদাতের সাহায্য না পেলেও গাদ্দাফীর পক্ষে ফেরত আসার কোনো উপায় ছিল না। গাদ্দাফী ক্ষমতায় এসেছিলেনই মূলত ইসরায়েল এবং পশ্চিমাবিরোধী আদর্শকে সামনে তুলে ধরে। তাছাড়া সে সময় গাদ্দাফীর উপর লিবিয়ার জনগণের প্রত্যাশাও ছিল আকাশ ছোঁয়া। সাদাতের নির্লিপ্ততায় ক্ষুদ্ধ লিবিয়ান জনতা নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠানের দিন বেনগাজীতে মিসরীয় কনস্যুলেট আক্রমণ করে বসে। ফলে গাদ্দাফী সিদ্ধান্ত নেন, সাদাতের সাহায্য ছাড়া তিনি নিজেই ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করবেন।
সে সময় লিবিয়ার সাথে মিসরের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি বিরাজমান ছিল। চুক্তির অধীনে ফ্রান্স থেকে ক্রয় করা কয়েকটি লিবিয়ান মাইরেজ থ্রি ফাইটার প্লেন নিয়োজিত ছিল মিসরে, যেগুলো দিয়ে মিসরীয় বিমান বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে ক্রয় করা কয়েকটি মিসরীয় সাবমেরিন নিয়োজিত ছিল লিবিয়ার সমুদ্রসীমায়, যেগুলো লিবিয়ান নৌবাহিনীর অধীনে থেকে সমুদ্রে টহল দিচ্ছিল।
১৯৭৩ সালের ১৭ই এপ্রিলের ঘটনা। সে সময় ইসরায়েলের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে ১,৪০০ ইহুদী যাত্রী বোঝাই একটি জাহাজ ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইসরায়েলের আশদুদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। গাদ্দাফী সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসরায়েলের উপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই জাহাজটিকেই তিনি ধ্বংস করবেন। তিনি লিবিয়ার নৌবাহিনীর অধীনে থাকা মিসরীয় সাবমেরিনের ক্যাপ্টেনকে তলব করে বসলেন। তাকে নির্দেশ দিলেন, টর্পেডো নিক্ষেপ করে ‘কুইন এলিজাবেথ টু’ নামের ঐ জাহাজটিকে ভূমধ্যসাগরের বুকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে হবে।
এত বড় একটি অপারেশন পরিচালনা করার জন্য ক্যাপ্টেন মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি সাহস করে গাদ্দাফীর কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ চেয়ে বসলেন। গাদ্দাফীও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত নির্দেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। পরদিনই যাত্রা শুরু করল সাবমেরিন। পুরো একদিন ভূমধ্যসাগরের পানির নিচ দিয়ে পূর্ব দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর ভেসে উঠল গন্তব্যস্থলের কাছাকাছি। কিন্তু অপারেশনটির রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করার পূর্বে ক্যাপ্টেন মিসরীয় নৌবাহিনীর কমান্ডারের সাথে রেডিওতে যোগাযোগ করে বসলেন। তিনি তাকে গাদ্দাফীর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করলেন।
বিস্ময়ে বিমুঢ় কমান্ডার নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারলেন না। ক্যাপ্টেনকে অপেক্ষা করতে বলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এই সংবাদ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেন প্রেসিডেন্ট সাদাতের কাছে। সাদাত সাথে সাথে মিশন বাতিল করে ক্যাপ্টেনকে আলেক্সান্দ্রিয়া বন্দরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ‘কুইন এলিজাবেথ টু’ নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন সাদাত। এরপর গাদ্দাফীকে ফোন করে জানালেন, সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন জাহাজটি ধ্বংস করতেই চেয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সে জাহাজটিকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে।
স্বাভাবিকভাবেই গাদ্দাফী সাদাতের কথা বিশ্বাস করেননি। তিনি ইসরায়েলের উপর আক্রমণের নতুন পরিকল্পনা শুরু করেন এবং সাদাতের উপর পুনরায় চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। তার চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সাদাতও রাজি হন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন একটি অপারেশন পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সাদাত তখনও চাইছিলেন না ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লিবিয়া কোনো অভিযান পরিচালনা করুক। গাদ্দাফী এবং সাদাতের এই অদ্ভুত সম্পর্ক, অর্থাৎ গাদ্দাফীর প্রতিশোধস্পৃহা এবং সাদাতের বিরোধিতা, আবার তা সত্ত্বেও দুজনের শীতল মৈত্রীর প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে ফিরে তাকাতে হবে একটু পেছনের দিকে।
ছাত্রজীবন থেকেই গাদ্দাফী ছিলেন আরব জাতীয়তাবাদের জনক গামাল আবদেল নাসেরের আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। তিনি ছিলেন প্রচন্ড ইসরায়েল বিরোধী মনোভাবের অধিকারী এবং আরব রাষ্ট্রগুলোতে পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপের কঠোর বিরোধী। তিনি ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্যানসার হিসেবে বিবেচনা করতেন। ১৯৬৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই গাদ্দাফী লিবিয়া থেকে মার্কিন এবং ব্রিটিশ ঘাঁটি উচ্ছেদ করেছিলেন। একইসাথে তিনি সে সময় লিবিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২,০০০ সদস্যের ইতালিয়ান সম্প্রদায় এবং ৫০০ সদস্যের ইহুদী সম্প্রদায়কেও লিবিয়া থেকে বহিষ্কার করেছিলেন এবং তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন।
গাদ্দাফীর লিবিয়ার ক্ষমতা দখলের পটভূমির সাথেও ইসরায়েলের পরোক্ষ একটা ভূমিকা ছিল। ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় রাজা ইদ্রিসের নির্লিপ্ত ভূমিকায় লিবিয়াব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মানুষ রাজা ইদ্রিসকে পশ্চিমাপন্থী হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। ত্রিপলী ও বেনগাজীতে পশ্চিমাবিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং মিসরের প্রতি সমর্থন দেখাতে গিয়ে লিবিয়ান শ্রমিকরা তেল শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেয়। এসব ঘটনা গাদ্দাফী এবং তার গুপ্ত সংগঠন ফ্রি অফিসার্স মুভমেন্টকে অভ্যুত্থানের ব্যাপারে অনুপ্রেরণা যোগায়।
ইসরায়েল নিজেও অবশ্য বুঝতে পেরেছিল, জনগণের এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে লিবিয়াতে শীঘ্রই বিপ্লবী কোনো সেনা অফিসার অভ্যুত্থান করে বসে পারে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান জাভি জামির নিজেও স্বীকার করেছেন যে, সে সময় মোসাদ রাজা ইদ্রিস এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এ ধরনের অভ্যুত্থানের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু তাদের এত সতর্কতা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি।
১৯৬৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, রাজা ইদ্রিস যখন তুরস্কে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, তখন প্রায় বিনা বাধায় সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতায় গাদ্দাফী এবং তার ফ্রি অফিসার্স মুভমেন্টের সদস্যরা মাত্র দুই ঘন্টায় ত্রিপলী এবং বেনগাজীর সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যদিও পরবর্তীতে গাদ্দাফীর নেতৃত্বে সংঘটিত সম্পূর্ণ বিপ্লবটি আউয়্যাল সেপ্টেম্বর (পহেলা সেপ্টেম্বর) বিপ্লব, আল-ফাতাহ বিপ্লব প্রভৃতি নামে পরিচিত হয়, কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে গাদ্দাফী সেদিনের সেই অপারেশনটির নাম দিয়েছিলেন ‘আমালিয়াত আল-ক্বুদস’ তথা ‘অপারেশন জেরুজালেম‘।
ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পরপরই গাদ্দাফী পশ্চিমা হস্তক্ষেপ বন্ধ করার এবং ইসরায়েলের মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলো নিয়ে একটি একীভূত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তার উদ্যোগে এবং নাসেরের সমর্থনে সে বছরই ডিসেম্বরে ‘ত্রিপলী চার্টার’ ঘোষিত হয়, যেখানে লিবিয়া, মিসর এবং সুদানের সমন্বয়ে একীভূত আরব রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক রূপরেখা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে সিরিয়াও এতে যোগ দেয়। কিন্তু ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে নাসেরের আকস্মিক মৃত্যুর পর আনোয়ার সাদাত ক্ষমতায় আসলে এই উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে পড়ে।
সাদাতের চিন্তাভাবনা ছিল গাদ্দাফী এবং নাসেরের চেয়ে ভিন্ন। গাদ্দাফী এবং নাসেরের মতো সাদাত আরব জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। সমগ্র আরব বিশ্ব, মুসলিম বিশ্ব, ফিলিস্তিন বা জেরুজালেমের জন্য সংগ্রামের পরিবর্তে তার মূল লক্ষ্য ছিল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে হাতছাড়া হওয়া মিসরের সিনাই উপদ্বীপকে ইসরায়েলের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা। আর সেজন্য প্রয়োজনে তিনি ইসরায়েলের সাথে আংশিক সমঝোতায় গিয়ে ফিলিস্তিনের উপর তাদের দখলদারিত্ব মেনে নিতেও রাজি ছিলেন।
১৯৭৩ সালে গাদ্দাফী যখন একের পর এক ইসরায়েল বিরোধী অপারেশনের পরিকল্পনা করে যাচ্ছিলেন, তখন সাদাত সেগুলোতে বাধা দিচ্ছিলেন এই কারণে যে, সে সময় তিনি গোপনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের সাথে মিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যে যুদ্ধ পরবর্তীতে রমাদান যুদ্ধ, অক্টোবর যুদ্ধ বা ইওম কিপুর যুদ্ধ নামে পরিচিত হবে। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা বা ইসরায়েলকে ধ্বংস করা অবশ্য এ যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল না। এটি ছিল ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত সীমিত আকারের যুদ্ধ, যেন ইসরায়েল দখলকৃত সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান পার্বত্যভূমি ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
এরকম সময়ে গাদ্দাফী যদি হঠাৎ করে ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে বসতেন, তাহলে বড় ধরনের যুদ্ধ বেধে গিয়ে সাদাতের পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর যদি বড় কোনো যুদ্ধ না-ও বাধত, তাহলেও ওরকম আক্রমণের পর ইসরায়েল অনেক বেশি সতর্ক হয়ে যেত, ফলে সাদাতের আক্রমণের মধ্যে কোনো চমক না থাকায় তা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। এসব কারণেই সাদাত প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও গাদ্দাফীর পরিকল্পনায় বারবার বাধা সৃষ্টি করে আসছিলেন।
সাবমেরিন হামলা ব্যর্থ হওয়ার পর ক্ষুদ্ধ গাদ্দাফী ছুটে যান কায়রোতে। তিনি পূর্বের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে সাদাতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন, যেন লিবিয়া এবং মিসর একত্রে যুক্ত হয়ে একীভূত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেটা সফল হলে মিসরের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সাথে লিবিয়ার তেল বিক্রয় লব্ধ বিপুল পরিমাণ অর্থের সমন্বয়ে ইসরায়েল বিরোধী শক্তিশালী একটি জোট সৃষ্টি হতে পারত। সাদাতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে লিবিয়া থেকে ৪০,০০০ মানুষ মিসর অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে। কিন্তু মিসরীয় সেনাবাহিনী রোডব্লক এবং স্থলমাইন স্থাপন করে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়।
হতাশ গাদ্দাফী লিবিয়াতে ফিরে আসেন এবং সাদাতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তিনি বিপ্লবের মাধ্যমে সাদাতকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মিসরীয়দেরকে আহ্বান জানাতে থাকেন। গাদ্দাফীর এ ধরনের প্রকাশ্য শত্রুতা সাদাতের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে শুরু করে। ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত সাদাত গাদ্দাফীর সাথে সমঝোতায় আসেন। ১৯৭৩ সালের আগস্টের শেষ দিকে তারা দুই রাষ্ট্রকে একীভূত করার ব্যাপারে প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু গাদ্দাফী তখনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেননি। তার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত হওয়ার জন্য এবং সুযোগ অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাদাত গাদ্দাফীকে শর্ত দেন, তিনি ইসরায়েলে আক্রমণের ব্যাপারে গাদ্দাফীকে সাহায্য করবেন, তবে তাকে কথা দিতে হবে তিনি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা মিসরের সাথে আগে থেকেই শেয়ার করবেন। গাদ্দাফী অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হন।
গাদ্দাফীর সাথে মিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য বিশেষ দূত হিসেবে সাদাত নিয়োগ দেন তার অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন সিনিয়র উপদেষ্টা আশরাফ মারোয়ানকে। আশরাফ মারোয়ান ছিলেন সাদাতের পূর্বসূরী গামাল আবদেল নাসেরের মেয়ে মুনা নাসেরের স্বামী এবং প্রেসিডেন্টের চীফ অফ স্টাফের সহকারী। কিন্তু সাদাত জানতেন না, বছরের পর বছর ধরে মিসরের প্রেসিডেন্টের অফিসে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করা এবং সাবেক প্রেসিডেন্টের জামাতা এই আশরাফ মারোয়ানই ছিলেন ইসরায়েলের কুখ্যাত গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুপ্তচর! অনেক বছর পর তার গুপ্তচর জীবনের অবিশ্বাস্য কাহিনী উঠে আসে ইসরায়েলি গবেষক ইউরি বার জোসেফের লেখা ‘দ্যা এঞ্জেল: দ্য ইজিপশিয়ান স্পাই হু সেভড ইসরায়েল‘ নামক গ্রন্থে।
নাসেরের মেয়ে মুনাকে আশরাফ মারোয়ান বিয়ে করেছিলেন প্রেম করে। তখনও অবশ্য তিনি মোসাদে যোগ দেননি। তারপরেও নাসের মিসরের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী দ্বারা মারোয়ানের উপর তদন্ত করিয়েছিলেন। তার অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় প্রথমে এ বিয়েতে নাসের রাজি ছিলেন না, কিন্তু পরবর্তীতে মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন তিনি। বিয়ের পরে মারোয়ানকে সামরিক বাহিনীতে না রেখে নিজের অফিসে নিয়ে আসেন নাসের, যেন তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখা যায়।
কিন্তু নাসেরের এ সিদ্ধান্তই হয়তো শেষপর্যন্ত কাল হয়েছিল। ইউরি বার জোসেফের ধারণা, মূলত শ্বশরের কাছে পাত্তা না পাওয়ার ক্ষোভে এবং আর্থিক লোভেই মারোয়ান স্বপ্রণোদিত হয়ে মোসাদের সাথে যোগাযোগ করেন। মোসাদের জন্য এ যেন ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। মোসাদের দেওয়া মারোয়ানের ছদ্মনামের মধ্যে দিয়েও ব্যাপারটি প্রকাশ পায়। মোসাদে মারোয়ানের কোড নেম ছিল ‘হালামাশ’, যার অর্থ এঞ্জেল বা স্বর্গীয় দূত। প্রাথমিক তদন্ত শেষে মোসাদ ১৯৭০ সালে মারোয়ানকে নিজেদের গুপ্তচর হিসেবে বরণ করে নেয়। কালক্রমে তিনিই হয়ে ওঠেন, ইসরায়েলের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা!
যা-ই হোক, পরপর দু’বার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর গাদ্দাফী সিদ্ধান্ত নেন, কোনো সমুদ্র বন্দর বা জাহাজ না, বরং তার দেশের যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস করার প্রতিশোধ নিতে হবে পাল্টা ইসরায়েলের একটি বিমান ধ্বংস করার মধ্য দিয়েই। চূড়ান্ত পরিকল্পনার দায়িত্ব এসে পড়ে লিবিয়ান কর্মকর্তাদের এবং সেই সাথে আশরাফ মারোয়ানের উপর। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ইতালির রাজধানী রোমের প্রধান বিমানবন্দর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এয়ারপোর্টেই এই অভিযান চালানো হবে।
মারোয়ানের নির্দেশে মিসরীয় গোয়েন্দা বাহিনীর দুই সিনিয়র কর্মকর্তা রোমে যান এবং এয়ারপোর্টের লে-আউট, আশেপাশের এলাকার মানচিত্র, বিভিন্ন ফ্লাইটের সময়সূচী সংগ্রহ করে আনেন। সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়নের পরপরই পাশের একটি ভবন থেকে এসএ-৭ স্ট্রেলা অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলের মাধ্যমে ৪০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট ইসরায়েলের এল আল এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান ভূপাতিত করা হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে পাওয়া অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলগুলো রোমে পৌঁছে দিবে মারোয়ানের নেতৃত্বে মিসরীয় গোয়েন্দারা, আর সেখান থেকে সেগুলো গ্রহণ করবে ফিলিস্তিনের ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সংগঠনের সদস্যরা, যাদেরকে নিয়োগ করার দায়িত্বে থাকবে লিবিয়ানরা। ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের সাথে গাদ্দাফী প্রশাসনের আগে থেকেই সুসম্পর্ক ছিল। এর আগে জার্মানীর মিউনিখ অলিম্পিকে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের যে দলটি ১১ জন ইসরায়েলি খেয়োয়াড়কে প্রথমে জিম্মি এবং পরে হত্যা করেছিল, তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা এবং পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আশ্রয় দিয়েছিল লিবিয়া।
আগস্টের ২৯ তারিখে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের বিশেষ দলটির দলনেতা আমিন আল হিন্দি দলটির আরো চার সদস্য সহ রোমে এসে পৌঁছে। এর কিছুদিন পরই মারোয়ানের নির্দেশে মিসরীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্রভান্ডার থেকে দুটি মিসাইল এবং মিসাইল লঞ্চার গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়। মারোয়ান সেগুলোকে তার স্ত্রী মুনার নামে একটি ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে প্যাক করেন। মুনার সে সময় ভিন্ন একটি কাজে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মারোয়ান তাকে অনুরোধ করেন ব্যাগ দুটি নিয়ে তার সাথে রোমে দেখা করার জন্য।
মুনা মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসেরের মেয়ে, বর্তমান প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টার স্ত্রী, তার ব্যাগ কূটনৈতিক ব্যাগ, কাজেই কাস্টমসের কর্মকর্তাদের সেগুলো পরীক্ষা করার প্রশ্নই ওঠে না। মুনার অজান্তেই মিসর থেকে কূটনৈতিক ব্যাগের ভেতরে করে মিসাইল দুটি ইতালিতে গিয়ে পৌঁছে। মিসরীয় কর্মকর্তারা ব্যাগগুলো নিয়ে রোমে অবস্থিত ইজিপশিয়ান এয়ার অ্যাকাডেমিতে পৌঁছে দেয়।
মারোয়ান রোমে এসে পৌঁছেন পরদিন সকালে। তিনি নিজের গাড়িতে করে ব্যাগ দুটি নিয়ে নিকটবর্তী একটি বাজারে যান এবং ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটির সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে গোপন সাংকেতিক কোড বিনিময় করার পর পরস্পরের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তাদের হাতে ব্যাগ দুটি বুঝিয়ে দিয়ে ফিরে আসেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটির একটি গাড়িতে করে মিসাইলগুলো নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদেরকে যে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে, সে তথ্যটি কেউ তাদেরকে আগে জানায়নি। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে তারা বাজারের একটি কার্পেটের দোকান থেকে কার্পেট কিনে এবং ব্যাগগুলোকে কার্পেটে পেঁচিয়ে ট্রেনে করে প্রকাশ্যে সবার সামনে দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসে।
ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটির জানার কথা না, তারা রোমে পা দেওয়ার পর থেকে শুরু করে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ গোপনে নজরদারি করছিল মোসাদের একদল এজেন্ট। মিসাইলগুলো এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছা, সেখান থেকে মিসরীয় এয়ার অ্যাকাডেমিতে স্থানান্তর, মারোয়ানের কাছ থেকে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের মিসাইলগুলো গ্রহণ, ট্রেনে করে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফেরত আসা- কোনো কিছুই তাদের চোখ এড়ায়নি। পরিকল্পনার শুরু থেকেই মারোয়ান ঘটনার বিস্তারিত মোসাদকে জানিয়ে রেখেছিলেন। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে মোসাদের প্রধান জাভি জামিরও এসে হাজির হয়েছিলেন রোমে।
জামির একেবারে শেষ মুহূর্তে রোমের পুলিশ বাহিনীকে জানিয়েছিলেন যে, এয়ারপোর্টে একটি সন্ত্রাসী হামলা হবে। কিন্তু এর আগে থেকেই তিনি নিজেদেরও একটি বিশেষ কমান্ডো বাহিনী প্রস্তুত রেখেছিলেন এই উদ্দেশ্যে যে, যদি রোমের পুলিশ ব্যর্থ হয়, তাহলে নিজেরাই যেন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার প্রয়োজন হয়নি। পরদিন সকালে, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে, ইতালির নিরাপত্তা বাহিনীর বিশাল একটি দল অভিযান চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র সহ আটক করে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলের পাঁচ সদস্যকে। রক্ষা পেয়ে যায় ৪০০ নিরীহ যাত্রীর প্রাণ।
সেদিন গাদ্দাফীর পরিকল্পনা যদি আসলেই সফল হতো, তাহলে তার ফলাফল কী হতো, বলা মুশকিল। ইসরায়েলের অন্যায়ভাবে ১০৮ জন নিরীহ যাত্রীসমেত বিমান ধ্বংসের প্রতিশোধ হিসেবে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানো যেতে পারে, কিন্তু পাল্টা আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস করা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মধ্যেই পড়ে। আর সেই সন্ত্রাসী হামলার খেসারত হয়তো শেষপর্যন্ত গাদ্দাফী এবং লিবিয়ার জনগণকেই দিতে হতো।
পরিকল্পনা সফল হলে হয়তো লকারবির ঘটনার অনেক আগেই গাদ্দাফীকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতো। অথবা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে হয়তো ইউরোপ-আমেরিকা একজোট হয়ে লিবিয়ার উপর পাল্টা হামলাও চালিয়ে বসতে পারত, যা প্রতিরোধ করার মতো সামর্থ্য লিবিয়ার তখন ছিল না। গাদ্দাফী পশ্চিমের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের অধিকারী ছিলেন সত্য, কিন্তু তরুণ গাদ্দাফীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব ছিল। এর আগে-পরেও গাদ্দাফী একাধিকবার পশ্চিমা বিশ্বের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জবাবে পাল্টা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে আশরাফ মারোয়ান যে মোসাদের এজেন্ট হিসেবে গাদ্দাফীর পরিকল্পনা আগেই ইসরায়েলের কাছে ফাঁস করে দিয়েছিলেন, তাতে মোটের উপর লিবিয়ার লাভ হয়েছিল, না ক্ষতি হয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। যদিও ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা স্বীকার করেন আশরাফ মারোয়ান তাদেরই এজেন্ট ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যেই কেউ কেউ সন্দেহ করেন, আসলে হয়তো মারোয়ান ছিলেন মিসরের ডাবল এজেন্ট! কারণ এই ঘটনায় আসলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল মিসর। গাদ্দাফীর পরিকল্পনা সফল হলে ইসরায়েল তো সতর্ক হয়ে যেতই, তদন্তে মিসরীয় মিসাইল প্রমাণিত হলে মিসরও বিপদে পড়তে পারত। ফলে ইওম কিপুর যুদ্ধের মাধ্যমে সিনাই উপদ্বীপ উদ্ধার করার পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হতো না।
তবে কি আশরাফ মারোয়ান আসলেই ডাবল এজেন্ট ছিলেন? ইসরায়েলের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মিসরীয় গুপ্তচর কেন, কীভাবে মোসাদে যোগ দিয়েছিলেন, তিনি আসলে কার এজেন্ট ছিলেন, ইওম কিপুর যুদ্ধে তার ভূমিকা কী ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত কারা তাকে রহস্যজনকভাবে হত্যা করেছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়ুন আমাদের পরবর্তী পর্ব এই লিংক থেকে।
এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে পড়তে পারেন একই বিষয়ের উপর এই লেখকের লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ: এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি“।
বইটি সংগ্রহ করতে পারেন এখান থেকে: roar.cm/spy-stories