১
গুজরাটের মুজাফফরি সালতানাতের সাথে সম্রাট জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবর প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্যের এমনিতে কোনো বিরোধ ছিলো না। কিন্তু বাহাদুর শাহের শাসনামলে গুজরাটের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তাকে নতুন করে সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণের দিকে ঠেলে দেয়। নিজের নতুন রাজ্যবিস্তার নীতির আওতায় তিনি মালব দখল করে নেন। মালব বিজয়ের পর তিনি সিলহদীর অধিকারে থাকা ভিলসা, উজ্জয়িনী আর রায়সীন জয় করেন। এরপর তিনি তার পরবর্তী লক্ষ্য চিতোরের দিকে দৃষ্টিপাত করেন।
বাহাদুর শাহ সাম্রাজ্যবিস্তারে তার প্রাথমিক সফলতায় এতটাই উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেন যে, একপর্যায়ে তিনি মুঘল সালতানাতের দিকেও হাত বাড়িয়ে বসেন!
মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে তখনো সরাসরি যুদ্ধে নামতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না, তবে ভেতরে ভেতরে প্রস্ততি নিচ্ছিলেন তিনি। মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি তার দরবারে বিভিন্ন আফগান আর মুঘল বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিতে শুরু করেন, যারা মনেপ্রানে মুঘল সালতানাতের পতন কামনা করতো। গুজরাটের দরবারে আশ্রয়প্রার্থী আফগানদের ভেতরে সুলতান ইব্রাহীম লোদির চাচা সুলতান আলাউদ্দিন আলম খান আর তার পুত্র তাতাত খান উল্লেখযোগ্য ছিলেন। আর মুঘল বিদ্রোহীদের মাঝে সম্রাট বাবরের মেয়ের জামাই মুহাম্মদ জামান মির্জা উল্লেখযোগ্য। সরাসরি মুঘল পরিবারভুক্ত হওয়ায় বাহাদুর শাহ জামান মির্জাকে অর্থ সহায়তা প্রদান করে অন্যান্য মুঘল বিদ্রোহীদের তার অধীনে নিয়ে আসার জন্য।
ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, বাহাদুর শাহের দরবারে একই সাথে এমন দুটি উপদল সৃষ্টি হয়, যারা নিজেরাই মুঘল সিংহাসন অধিকার করতে চায়। কিন্তু তারা তো আর বাহাদুর শাহের আসল উদ্দেশ্য জানে না! সত্যিকার অর্থে বাহাদুর শাহ নিজেই মুঘল সিংহাসন দখল করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তবে তিনি তার মনোভাব আগফান কিংবা মুঘল বিদ্রোহী- কাউকেই বুঝতে না দিলে উভয় দলের সাথেই ভারসাম্য রক্ষা করে চললেন। মোটের উপর, মুঘল সাম্রাজ্য অধিকারের প্রশ্নে গুজরাটের দরবারে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়।
এদিকে মুঘল দরবার থেকে মুঘল বিদ্রোহীদের প্রত্যাবর্তণ করার আহ্বান জানানো হলে, বাহাদুর শাহ সরাসরি হুমায়ুনকে কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আশ্বস্ত করে যাচ্ছিলেন। হুমায়ুন যে একেবারেই বাহাদুর শাহের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছিলেন না, তা না। তবে তিনি আশা করছিলেন কূটনৈতিকভাবে এই সংকট মুকাবিলা করতে পারবেন তিনি।
২
বাহাদুর শাহকে এখনি বাঁধা না দিলে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি ডেকে আনবেন, এই ব্যপারটা শেষ পর্যন্ত মুঘল সম্রাট হুমায়ুন অনুধাবন করতে সক্ষম হলেন। ইতোমধ্যেই তাতার খানের নেতৃত্বে বাহাদুর শাহের ইশারায় ৩টি বাহিনী আলাদা আলাদাভাবে মুঘল সালতানাতের উপড়ে আছড়ে পড়েছিলো, যদিও কোনো বাহিনীই সফল হয়নি। এই ঘটনার পর সম্রাট হুমায়ুনের আর হাত গুটিয়ে বসে থাকার উপায় ছিলো না। পরিস্থিতি তাকে সামরিক অভিযানের দিকেই ঠেলে দেয়। অবশেষে গুজরাটের বাহাদুর শাহর সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ১৫৩৫ সালের শুরুর দিকে হুমায়ুন সারাংপুর এসে পৌছান। সারাংপুর হচ্ছে বাহাদুর শাহের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার দূরবর্তী একটি স্থান।
এদিকে, হুমায়ুনের সারাংপুরে উপস্থিতির সংবাদ শুনে বাহাদুর শাহ খুব চিন্তিত হয়ে পরেন। তিনি তখন চিতোর অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। হুমায়ুনের আগমনের প্রেক্ষাপটে তিনি চিতোর অবরোধ তুলে নিয়ে মুঘল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছিলেন। তবে হুমায়ুন সারাংপুর থেকে আর সামনে এগিয়ে যাননি। তিনি সারাংপুর অবস্থান করেই নিজেকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিলেন।
সম্রাট হুমায়ুন মূলত এসময় উজ্জয়িনী আর সারাংপুর অবস্থান করে মালব এবং আশেপাশের রাজপুতদের সমর্থন আদায় করে নেন। রাজপুতরা জানতো হুমায়ুনের আগমনের উদ্দেশ্য গুজরাটের বাহাদুর শাহ। আর বাহাদুর শাহ চিতোরের রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। সুতরাং, হুমায়ুনকে সহায়তার মাধ্যমে তারা বাহাদুর শাহর উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছিলো।
১৫৩৫ সালের ৮ মার্চ চিতোর দুর্গের পতন ঘটে। দুর্ভেদ্য এ দুর্গটি দখলের পর বাহাদুর শাহ দ্রুত দুর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে দুর্গের দায়িত্ব দেন মালিক নাসান খানকে। বাহাদুর শাহেরই আরেক দক্ষ্য জেনারেল রুমি খান এই দুর্গটির দায়িত্ব প্রাপ্তির আশা করছিলেন। বাহাদুর শাহ দুর্গটি তাকে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি রুমি খানকে বিশ্বাস করতে পারেননি। চিতোর দুর্গটি এমনিতেই দুর্ভেদ্য। একে জয় করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অবিশ্বস্ত কারো হাতে দুর্গটি পরলে তা গুজরাটের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে, এটাই ছিলো বাহাদুর শাহের মূল চিন্তার কারণ। ঠিক একই কারনে এর পূর্বে রুমি খানকে রণথম্বোর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাহাদুর শাহ পিছু হটেন।
৩
বাহাদুর শাহ সিংহাসনে বসে হিন্দুস্তানের তৎকালীন প্রেক্ষাপটে কামানের প্রয়োজনীয়তা বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। এ কারণে তিনি বিভিন্ন দক্ষ বিদেশি গোলন্দাজদের নিয়োগ দেন, যারা মূলত বাহাদুর শাহের সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ আর মাস্কেটিয়ারের দায়িত্ব পালন করতেন। রুমি খান ছিলেন এমনই একজন বিদেশি, জাতিতে যিনি একজন তুর্কী ছিলেন।
গুজরাটের সাথে পর্তুগীজ জলদস্যু দমনের চুক্তির আওতায় রুমি খান ইসলামবুল (ইস্তাম্বুল) থেকে গুজরাটের দিউ বন্দরে এসেছিলেন। রুমি খান বাহাদুর শাহের বাহিনীতে যোগদানের সময় মিশরের তৈরি একটি কামান নিয়ে এসেছিলেন, যেটির সাহায্যে গোলাবর্ষণ করতে প্রায় ৩০০ গোলন্দাজের দরকার পড়তো, আর কামানটি একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় মোতায়েন করতে বিপুল সংখ্যক ষাড়ের প্রয়োজন পড়তো। সে যা-ই হোক, রুমি খান বাহাদুর শাহের সৈন্যদের নেতৃত্বে দিয়ে দিউ থেকে পর্তুগীজ জলদস্যুদের বিতারিত করেন। জলদস্যুরা এরপর গোয়াতে ঘাটি গাড়ে।
রুমি খানের প্রকৃত নাম ছিলো মুস্তফা। দিউ বন্দরে তার সফলতায় মুগ্ধ হয়ে বাহাদুর শাহ তাকে রুমি খান উপাধি দেন। এরপর থেকে হিন্দুস্তানে মুস্তাফা রুমি খান নামেই পরিচিত হয়ে যান।
যা-ই হোক, বাহাদুর শাহ বিদেশিদের সহজে বিশ্বাস করতেন না। যে কারণে রুমি খানকেও তিনি মন থেকে বিশ্বাস করতে পারেননি। আর এই অবিশ্বাস থেকেই তিনি রুমি খানের সাথে বারবার প্রতিজ্ঞা করেও তা ভঙ্গ করছিলেন। বাহাদুর শাহের এই আচরণে রুমি খান রুষ্ট হন এবং গোপনে হুমায়ুনের সাথে পত্রযোগে যোগাযোগ করেন। তিনি হুমায়ুনের প্রতি তার আনুগত্য স্বীকার করেন এবং বাহাদুর শাহের বিভিন্ন গোপন তথ্য হুমায়ুনের কাছে পাঠাতে থাকেন।
অন্যদিকে হুমায়ুন উজ্জয়িনীতে অবস্থানের পূর্বেই ছোটখাট অভিযানের মাধ্যমে মালব আর গুজরাটের কিছু এলাকা দখল করে নিয়েছিলেন। উজ্জয়িনীতে নিশ্চুপ হয়ে বসে না থেকে তিনি তার সদ্য দখলীকৃত এসব এলাকার প্রশাসনিক দায়িত্ব তার অনুগতদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
৪
১৫৩৫ সালের ৮ মার্চ চিতোর দুর্গের পতন ঘটলে চিতোরে বাহাদুর শাহ চূড়ান্তভাবে জয়লাভ করেন। কিন্তু জয়লাভ করলেও তার বাহিনীর সেনাসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। তাছাড়া দীর্ঘ অবরোধজনিত কারণে গুজরাটের বাহিনী কিছুটা ক্লান্তও ছিলো। ফলে গুজরাটের বাহিনী তুলনামুলক বেশ দুর্বল ছিলো। তাছাড়া চিতোরের পতন ঘটলেও অন্যান্য রাজপুতরা তখনো তাদের ভূখন্ড নিজেদের অধিকারে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো। এদিকে উজ্জয়িনী, সারাংপুর আর মালবের হিন্দু রাজপুতদের বিশাল একটি অংশ হুমায়ুনকে সমর্থন দান করে। আর অন্যদিকে বাহাদুর শাহ নিজেই নিজের বাহিনীর অনেক জেনারেলকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। রুমি খানের বিরুদ্ধে অকাট্য কোনো প্রমাণ না থাকলেও বাহাদুর শাহ রুমি খানকে কিছুটা সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন। সুতরাং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চিতোরের নিজের বিজয়লাভের পরেও বাহাদুর শাহ নিশ্চিন্ত তো হতেই পারলেন না, বরং মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু তার কাছে সংঘাত এড়ানোর মতো কোনো উপায়ও ছিলো না।
যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে, চিতোর অবরোধ সমাপ্ত করে বাহাদুর শাহ সম্রাট হুমায়ুনের নেতৃত্বাধীন মুঘল সেনাবাহিনীর দিকে এগিয়ে আসেন। বাহাদুর শাহের চিতোর অবরোধ সমাপ্ত হওয়ায় হুমায়ুনও নিজের অবস্থান ছেড়ে সামনের দিকে এগোতে থাকেন। মন্দসৌরে উভয় বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়। এই দুই বাহিনীর মাঝে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ না হলেও ক্রমাগত ছোটখাট সংঘর্ষ হচ্ছিলো। এসব সংঘর্ষে বাহাদুর শাহের সৈন্যই বেশি মারা যাচ্ছিলো। বাহাদুর শাহ আসলে এসময় রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি লড়াইয়ে নামার মতো অবস্থাতে ছিলেন না। তাই তিনি সাহায্যের জন্য আগেই বঙ্গের সুলতান আর শের শাহের নিকট পত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গের সুলতান সরাসরি সাহায্য করতে না পারলেও তিনি শের খানকে আশা করছিলেন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
বঙ্গের সুলতান আর শের খানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বাহাদুর শাহের মুঘল সাম্রাজ্য আক্রমণের দিকটিই ইঙ্গিত করে। আর আক্রমণের সময় মুঘল বাহিনীকে যাতে বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে লড়াই করতে হয়, যে কারণে বাহাদুর শাক শের খানকে অর্থ সহায়তাও প্রদান করেছিলেন। মূল আক্রমণের সময় শের খানের কাজ ছিলো মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে গোলযোগ সৃষ্টি করা।
এদিকে সরাসরি লড়াই করার মতো অবস্থায় না থাকায় বাহাদুর শাহ তুর্কী জেনারেল রুমি খানের পরামর্শে একদিকে একটি জলাশয় রেখে অন্য তিনদিকে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি ইত্যাদি দিয়ে একটি বাঁধা তৈরি করেন। বাঁধার ফাঁকে ফাঁকে কামান মোতায়েন করেন। আর গাড়ির বাঁধার সামনে গভীর পরিখা খনন করান। এরপর একদল অশ্বারোহী মোতায়েন করেন, যাদের কাজ হবে টোপ দিয়ে মুঘল সৈন্যদের কামানের আওতার মাঝে নিয়ে আসা। এটা সেই কৌশল, যে কৌশল ব্যবহার করে সম্রাট বাবর পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।
বাহাদুর শাহের এই কৌশলের ফলে অগণিত মুঘল সৈন্য মারা যেতে থাকলো। হুমায়ুন বুঝতে পারলেন এভাবে হবে না। তিনিও কৌশল পাল্টালেন। তিনি বাহাদুর শাহের বাহিনীকে অবরোধ করার জন্য মুঘল সৈন্যদের চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে অবরোধ তৈরির নির্দেশ দেন। তবে মুঘল সৈন্যদের গুজরাটি সৈন্যদের কামানের আওতায় যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করে দেন। হুমায়ুনের এই পরিকল্পনা কাজে দিয়েছিলো। এর ফলে, আক্ষরিক অর্থেই মুঘল সেনাবাহিনী দ্বারা বাহাদুর শাহ সম্পূর্নরুপে অবরুদ্ধ হয়ে যান।
এদিকে কয়েকদিনের মাঝেই বাহাদুর শাহের রসদে টান পড়লে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠে। মুঘল সেনাবাহিনীর অবরোধ এড়িয়ে কোনোভাবেই বাইরে থেকে সাহায্য পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাহাদুর শাহের বাহিনীতে চরম হতাশা নেমে এলো।
বাহাদুর শাহের পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থে এতটাই নাজুক হয়ে গিয়েছিলো যে, শেষপর্যন্ত যুদ্ধের প্রধান বাহন ঘোড়া জবাই করে তার মাংস খাওয়া শুরু হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই মাংসেও টান পড়তে থাকে। বাহাদুর শাহ চূড়ান্ত রকমের ঘাবড়ে যান।
এদিকে বর্ষাকাল প্রায় চলে আসায় সম্রাট হুমায়ুন তার অবরোধ দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছিলেন না। তাই তিনি ১৫৩৫ সালের ২৫ মার্চ বাহাদুর শাহের উপর হঠাৎই একটি প্রচন্ড আক্রমণ চালান। এই আক্রমণে ভয় পেয়ে বাহাদুর শাহ প্রায় ১৬ দিন অবরুদ্ধ থেকে পালিয়ে যান। তিনি এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যে, তার ঘনিষ্ঠ সভাসদ কিংবা সেনাবাহিনী- কাউকে জানানোর কিংবা সাথে নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তবে, পালানোর আগে কিছু অপ্রিয় কাজ তিনি করে যান। মুঘল সেনাবাহিনীর হাতে যেন না পড়ে, এজন্য তিনি তার প্রিয় দুটি হাতি ‘শারজাহ’ আর ‘পতসিঙ্গার’-কে হত্যা করেন। তার বাহিনীর বিশাল এবং কার্যকরী দুটি কামান ‘লায়লা’ এবং ‘মজনু’-কেও ধ্বংস করা হয়। কথিত আছে, এ সময় গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ শিশুর মতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন। বিদ্রোহী জামান মির্জাকে আশ্রয় দান, মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে উষ্কানীমূলক আক্রমণ আর হুমায়ুনকে উদ্ধত পত্র পাঠানোর মূল্য বাহাদুর শাহকে এভাবেই পরিশোধ করতে হয়েছিলো। তবে বাহাদুর শাহের দুর্ভোগের আরো বাকী ছিলো তখনও!
৫
মন্দসৌর থেকে বাহাদুর শাহ কেন পালিয়ে গেলেন? এই প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে আসতে পারে। মন্দসৌরে তার সেনাবাহিনী মুঘল সেনাবাহিনীর তুলনায় খুব যে দুর্বল ছিলো তা না। তার খাদ্য সংকট ছিলো বটে, তবে হুমায়ুনও যে একেবারে নিশ্চিন্ত ছিলো তা না। বাহাদুর শাহের সৈন্যরা সদ্যই চিতোর বিজয় করে এসেছিলো। কাজেই তাদের উৎসাহ এবং আত্মবিশ্বাস- দুই-ই বেশ ভালো ছিলো। বাহাদুর শাহ সামান্য উৎসাহ দিলেই তারা তাদের সুলতানের জন্য নিজেদের জীবন বাজী নিয়ে মুঘল সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতো।
তাহলে সমস্যা কী ছিলো? আসলে সমস্যা ছিলো, বাহাদুর শাহ সে সময়ে কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি তার তুর্কী জেনারেল রুমি খানের বিশ্বস্ততার ব্যপারে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন, তার গোলন্দাজ বাহিনীর এই জেনারেল গোপনে মুঘলদের সাথে পত্র আদান প্রদান করছে। হঠাৎ করেই তিনি জীবনের আশঙ্কা করতে লাগলেন। আর তিনি বুঝতেও পারছিলেন না, এই দুরাবস্থায় কে তার বিশ্বস্ত আর কে বিশ্বাসঘাতক। তাই কাউকে না জানিয়েই তিনি মন্দসৌর থেকে পালিয়ে মাণ্ডু দুর্গে আশ্রয় নেন।
এদিকে বাহাদূর শাহের পলায়নের খবর শুনে বাহাদুর শাহের সভাসদরা হতবাক হয়ে গেলো। আর সৈন্যরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন। তবে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মাঝেই ইমাদ উল মুলক আর সদর খান বেশ সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। তারা দ্রুত যত সংখ্যক সৈন্য একত্র করা সম্ভব করে দক্ষিণের দিকে যাত্রা করলেন। যারা তাদের সাথে যেতে পারেনি, তাদের যেভাবেই হোক পালিয়ে পরবর্তীতে তাদের সাথে একত্র হওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান।
হুমায়ুন বাহাদুর শাহের বাহিনীর এই বিশৃঙ্খলার মাঝে চাইলেই পারতেন তাদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। কিন্তু Humayun Badshah গ্রন্থের লেখক S. K. Banerji লিখেছেন, হুমায়ুন এতোটাই ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন যে, তিনি দুর্বল অবস্থায় কাউকে আক্রমণ করতেন না। এর ফলে সুযোগ পাওয়া স্বত্বেও তিনি বাহাদুর শাহের বাহিনীকে আক্রমণ না করে পালিয়ে যেতে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, ড. হরিশংকর শ্রীবাস্তব এই ঘটনাকে হুমায়ুনের অদূরদর্শীতার ফল হিসেবে মত দিয়েছেন। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, বাহাদুর শাহ এত দ্রুতই পালিয়ে যাবেন, তা-ও তার পুরো বাহিনী পেছনে ফেলে, এই ব্যপারটি হুমায়ুন বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন বাহাদুর শাহের পালিয়ে যাওয়ার ব্যপারটি হয়তো তাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য প্রচার করা হয়েছে। তাই তিনি সবদিক বিবেচনা করে বাহাদুর শাহের উপর আক্রমণ করেননি।
এদিকে বাহাদুর শাহের পলায়নের পর গুজরাটের গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান রুমি খান সরাসরি সম্রাট হুমায়ুনের সাথে যোগদান করেন।
৬
মন্দসৌর থেকে পালিয়ে বাহাদুর শাহ তার অন্ততম শক্তিশালী দুর্গ মাণ্ডুতে আশ্রয় নেন। হুমায়ুন ইয়াদগার নাসির মির্জা, কাশিম হোসেন আর হিন্দু বেগকে বাহাদুর শাহকে ধাওয়া করতে পাঠিয়ে নিজেও মাণ্ডু অভিমুখে যাত্রা করেন।
মুহাম্মদ জামান মির্জা এই সময় পর্যন্ত বাহাদুর শাহের সাথেই ছিলেন। বাহাদুর শাহ মাণ্ডুর দিকে গেলে তিনি পাঞ্জাবের দিকে যাত্রা করেন। পাঞ্জাবে তখন সম্রাট হুমায়ুনের ভাই কামরান মির্জা উপস্থিত ছিলেন না। এই সুযোগে তিনি পাঞ্জাবে ব্যাপক গোলমাল সৃষ্টি করেন। আর অন্যদিকে বাহাদুর শাহের দুর্ভাগ্যের সুযোগ নিয়ে রাজপুতরা আবারও চিতোর দখল করে নেয়।
মাণ্ডুর দুর্গটি একদিকে যেমন বিশাল ছিলো, ঠিক তেমনি দুর্ভেগ্য আর প্রচন্ড শক্তিশালী ছিল। প্রায় ২৩ মাইল পরিধিবিশিষ্ট এ দুর্গটি বিশালায়তনের হওয়ায় হুমায়ুন বুঝতে পারেন এই দুর্গটি তিনি দীর্ঘদিন অবরোধ করে রাখতে পারবেন না। তাছাড়া শীঘ্রই বর্ষাকাল এসে পড়বে। আর বর্ষার তীব্র বর্ষণে মুঘল সেনাবাহিনীর পক্ষে কোনোভাবেই দুর্গের বাইরে অবস্থান করে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে, অবরুদ্ধ গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহও বেশ ভালো বুঝতে পারলেন, এই দুর্গে বেশিদিন অবস্থান করলে তিনি শুধু নিজের বিপদই ডেকে আনবেন। কারন, কোনরকমের প্রস্তুতি ছাড়াই দুর্গে আশ্রয় নিয়ে তাকে অবরুদ্ধ হতে হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন টিকে থাকার মতো রসদ এই দুর্গটিতে ছিলো না। অবশ্য প্রয়োজনীয় রসদ থাকলে তিনি দুর্গের দখল ধরে রাখতে পারতেন। আর বর্ষা শুরু হলে মুঘল সেনাবাহিনী এমনিতেই অবরোধ প্রত্যাহার করে সরে যেতে বাধ্য হতো। আবার, নিজেদের এ ভাগ্যবিপর্যয়ে গুজরাটের সৈন্যরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলো। এ সময় তাদের দীর্ঘ পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত চিতোরও হাতছাড়া হয়ে যায়। রুমি খানের মতো বিখ্যাত আর জাঁদরেল জেনারেলের দলবদলের ঘটনা তাদের মনের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাছাড়া বিগত দিনগুলোর দীর্ঘ ঘটনাপ্রবাহে গুজরাটের বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মুঘল বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলো। এটাও গুজরাটের বাহিনীর হতাশার অন্যতম কারণ ছিলো।
বিস্ময়করভাবে সবদিক বিবেচনা করে হুমায়ুন এবং বাহাদুর শাহ উভয়ই সমঝোতার একটি রাস্তা খুঁজছিলেন।
৭
সমঝোতার এই রাস্তা খোঁজায় সম্রাট হুমায়ুনই আগে হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি বাহাদুর শাহের নিকট দূত পাঠিয়ে এই অবস্থার নিরসন করার চেষ্টা করেন। বাহাদুর শাহকে তিনি প্রস্তাব করেন, তার পূর্বপুরুষের মূল ভূখন্ড গুজরাট তার হাতেই থাকবে। আর গুজরাট ছাড়া বাহাদুর শাহের অধিকারে থাকা সকল ভূখন্ড মুঘল সাম্রাজ্যের হাতে অর্পণ করতে হবে। বাহাদুর শাহ আনন্দের সাথেই এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। আসলে তিনি শুধু এই অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাইছিলেন। তবে বাহাদুর শাহের সভাসদ সদর খানের আপত্তির কারণে শেষপর্যন্ত বাহাদুর শাহের অধিকারে গুজরাট আর চিতোর (রাজপুতরা ইতোমধ্যেই চিতোর অধিকার করে নিয়েছিলো। তাহলে এই চুক্তির মানে দাঁড়ায়, বাহাদুর শাহ যদি আবারও চিতোরে অভিযান চালিয়ে চিতোরের দখল নিতে পারেন, তাহলে চিতোর তিনি নিজ অধিকারে রাখতে পারবেন।) থাকবে, আর মাণ্ডু ও এর আশেপাশের এলাকা মুঘল অধিকারে থাকবে, এই মর্মে চুক্তি সমাপ্ত হয়।
বিচক্ষণ এবং চতুর সদর খান বর্ষার কারণে মুঘল সেনাবাহিনী যে হুমকির মুখে পড়বে, তা বুঝতে পেরেই চাপ দিয়ে চিতোর আদায় করে নেন। তাছাড়া এই চিতোর অধিকার করতে গিয়েই বাহাদুর শাহের আজ এই দুর্দশা, এই চিতোর ছেড়ে যেতে তিনি কীভাবে রাজী হবেন?
সম্রাট হুমায়ুন ও সুলতান বাহাদুর শাহের মধ্যকার এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর গুজরাটের সৈন্যরা নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছিলো। দুর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ মুঘলদের দিক থেকে আক্রমণের আর কোনো আশঙ্কাই আর রইলো না। কিন্তু রাতের দিকে হঠাৎই মই আর দড়ির সাহায্যে মুঘল সৈন্যরা মাণ্ডুর দুর্গে প্রবেশ করতে থাকে। এই খবর পাওয়ার পর হুমায়ুনও মাণ্ডুর দিল্লি দরজা দিয়ে দুর্গে প্রবেশ করেন।
আকস্মিক এই মুঘল আক্রমণে হতভম্ব হয়ে গেলেও গুজরাটি সৈন্যরা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাহাদুর শাহ পরিস্থিতির ভয়াবহতা আচ করতে পেরে মাণ্ডু ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।
৮
এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন মাথায় চলে আসে- চুক্তি সম্পাদনের পরও হুট করে কেন মুঘল সেনাবাহিনী বাহাদুর শাহের উপরে আক্রমণ চালালেন?
বিষয়টি নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু কোনোটি সম্পর্কেই নিশ্চিত হওয়া যাবে না। কারণ, সমসাময়িক মুঘল ঐতিহাসিক কিংবা গুজরাটি ঐতিহাসিক, কোনো পক্ষই এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত কিছু লিখেননি। তাদের লিখনী থেকে শুধুমাত্র আক্রমণের ব্যাপারটি সম্পর্কেই নিশ্চিত হওয়া যায়।
এখন এই ঘটনার একটি ব্যাখ্যা এমন হতে পারে, হুমায়ুন নিজেই এই আক্রমণটি করেছিলেন। আর চুক্তিটি ছিলো প্রতারণাস্বরূপ, যাতে রাতে দুর্গের নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় ঢিল পড়ে। কিন্তু সম্রাট হুমায়ুনের ব্যাক্তিত্ব কিংবা বীরত্ব, কোনটিই এই আচরণের সাথে যায় না। কাজেই হুমায়ুন প্রতারণা করে চুক্তি করেছিলেন, এই সম্ভাবনা বাদ দেয়াই যায়।
আরেকটি কারণ হতে পারে, মুঘল সেনাবাহিনীর একটি উৎসাহী অংশ নিজেরাই দুই শাসকের চুক্তিটি অগ্রাহ্য করে আক্রমণটি পরিচালনা করেছে। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছিলো। বাহাদুর শাহ তখন চিতোর অবরোধে ব্যাস্ত ছিলেন, সম্রাট হুমায়ুন তখন উজ্জয়িনীতে ঘাটি গেঁড়ে বসেছিলেন। মুসলিম ঐতিহ্য রক্ষার্থে হুমায়ুন এই সময় বাহাদুর শাহকে আক্রমণ না করে নিশ্চল অবস্থায় অবস্থান করছিলেন তিনি। এসময় মুঘল সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০০ উৎসাহী সৈন্য হুমায়ুনকে না জানিয়ে নিজেরাই বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করতে বেরিয়ে পড়েন। পড়ে অবশ্য তাদের ধরে আনা হয়েছিলো, বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদন্ডও দেয়া হয়েছিলো। কাজেই চুক্তি সম্পাদনের পরেও মান্ডু দুর্গে আক্রমণের এই ঘটনার পেছনে এমন উৎসাহী কোনো মুঘল সেনাদলের কর্মকান্ডই দায়ী করা যায়।
অন্য আরেকটি সম্ভাবনা দাঁড় করানো যায় যে, চুক্তির পরে হয়তো এমন কোন ঘটনা গটেছিলো, যার কারণে চুক্তি রক্ষার আর কোনো প্রয়োজনীয়তাই ছিলো না। এই সম্ভাবনাটাও প্রবল। কারণ বাহাদুর শাহ এই আক্রমণের পর মাণ্ডু থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর হুমায়ুন তাকে সেনাবাহিনী নিয়ে ধাওয়া করেছিলেন।
ঘটনা যা-ই হোক না কেন, আর ত্রুটি যে পক্ষেরই হোক না কেন, এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো মুঘল সাম্রাজ্যই। এই ঘটনার পর গুজরাটিরা আর মুঘল সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা মুঘল সেনাবাহিনীকে চুক্তির বরখেলাপকারী হিসেবে বিবেচনা করতো। যার ফলাফল পরবর্তীতে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধেই গিয়েছিলো। ঘটনা যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, একজন মহান ব্যক্তিত্ববান মানুষ আর বীর যোদ্ধা হিসেবে যেকোনো মূল্যে সম্রাট হুমায়ুনের চুক্তিরক্ষা করা উচিত ছিলো বলেই ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।
তথ্যসূত্র
১। মোগল সম্রাট হুমায়ুন, মূল (হিন্দি): ড হরিশংকর শ্রীবাস্তব, অনুবাদ: মুহম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০০৫
২। History of the Rise of the Mahomedan Power in India, Till the Year AD 1612, Mohamed Kashim Ferishta, Translator: John Briggs
৩। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়, সাহাদত হোসেন খান, আফসার ব্রাদার্স, ২য় মুদ্রণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৩
৪। The Evolution of the Artillery in India: From the Battle of Plassey (1757) to the Revolt of 1857, Romesh C. Butalia
এই সিরিজের আগের পর্বসমূহ
১। প্রাক-মুঘল যুগে হিন্দুস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা || ২। তরাইনের যুদ্ধ: হিন্দুস্তানের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া দুই যুদ্ধ || ৩। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: দাস শাসনামল || ৪। রাজিয়া সুলতানা: ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক || ৫। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: খিলজী শাসনামল || ৬। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তুঘলক শাসনামল || ৭। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তৈমুরের হিন্দুস্তান আক্রমণ ও সৈয়দ রাজবংশের শাসন || ৮। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: লোদী সাম্রাজ্য || ৯। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর গঠন এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস || ১০। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কিছু অস্ত্রশস্ত্র || ১১। জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবুর: ‘একজন’ বাঘের উত্থান || ১২। বাদশাহ বাবরের কাবুলের দিনগুলো || ১৩। বাদশাহ বাবর: হিন্দুস্তানের পথে || ১৪। বাদশাহ বাবরের হিন্দুস্তান অভিযান: চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি || ১৫। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান: হিন্দুস্তানে বাবরের চূড়ান্ত লড়াই || ১৬। খানুয়ার যুদ্ধ: মুঘল বনাম রাজপুত সংঘাত || ১৭। ঘাঘরার যুদ্ধ: মুঘল বনাম আফগান লড়াই || ১৮। কেমন ছিল সম্রাট বাবরের হিন্দুস্তানের দিনগুলো? || ১৯। মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যু: মুঘল সাম্রাজ্য এবং হিন্দুস্তানের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের অকাল পতন || ২০। সিংহাসনের ষড়যন্ত্র পেরিয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের অভিষেক || ২১। মুঘল সাম্রাজ্যের নতুন দিগন্ত: সম্রাট হুমায়ুনের ঘটনাবহুল শাসনামল || ২২। দিল্লি সালতানাত থেকে মুজাফফরি সালতানাত: প্রাক-মুঘল শাসনামলে গুজরাটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস || ২৩। মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযানের প্রেক্ষাপট
ফিচার ইমেজ: mptourism.com