আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগে আমেরিকায় ১২ বছরের এক শিশু তার জমানো ৫০ ডলার এক গরীব কৃষককে ধার দেয়। ডলারগুলো সে মায়ের সাথে টার্কি পালন করে, বন্ধুদের কাছে চকলেট বিক্রি করে আর প্রতিবেশীদের কাজ করে পেয়েছিল। মায়ের অনুরোধে এগুলো ঐ কৃষককে ৭% মুনাফার শর্তে এক বছরের জন্য ধার দেয় সে। ঐ কৃষক এক বছর পর তাকে মুনাফাসহ ডলার ফিরিয়ে দেয়। এটা তাকে এতটাই প্রভাবিত করে যে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে আমি বুঝতে পারি, টাকার জন্য কাজ করার চেয়ে টাকাকে আমার জন্য কাজ করানোই ভালো।”
সেদিনের সেই শিশু পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন আমেরিকা তথা সারা বিশ্বেরই সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী। তিনি চাইতেন ১০০ বছর বাঁচবেন এবং এক লাখ ডলারের মালিক হবেন। প্রথম চাওয়াটি মাত্র ২ বছরের জন্য পূরণ হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় ইচ্ছাকে তিনি ছাড়িয়ে গিয়ে আমেরিকার ইতিহাসের প্রথম বিলিয়নিয়ার হয়ে যান। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল আজকের দিনের হিসেবে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার! তার মতো প্রভাবশালী আর ধনী ব্যবসায়ী তার মৃত্যুর প্রায় ১০০ বছরেও আসেননি। তিনি জন ডেভিডসন রকফেলার সিনিয়র, যিনি জন ডি রকফেলার নামেই পরিচিত। তিনি ছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল কোম্পানির কর্ণধার।
জন ডি রকফেলার ১৮৩৯ সালের ৮ জুলাই নিউ ইয়র্কের টিওগা কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা উইলিয়াম এ রকফেলার ছিলেন একজন সেলসম্যান যিনি বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতেন। আর মা এলিজা ডেভিডসন রকফেলার ছিলেন খুবই ধার্মিক একজন মহিলা। বাবা-মায়ের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখা হয়।
তার বাবা নিজেকে একজন চিকিৎসক দাবী করতেন আর বলতেন, তিনি ক্যান্সার রোগ নিরাময় করতে পারেন। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন খুবই ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। তিনি আসলে ঘুরে ঘুরে হোমিওপ্যাথির ওষুধ বিক্রি করতেন। বিভিন্ন শহরে তার অনেক স্ত্রী আর সন্তান ছিল, যা জন রকফেলার সবসময় গোপন রাখতেন। তিনি ‘ডেভিল বিল’ নামে পরিচিত ছিলেন। তবে জন রকফেলারের ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানে বাবার অবদান ছিল। কিন্তু তার মা ছিলেন বাবার একেবারেই উল্টো। তার বাবা বছরের বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকায় সংসারের খরচ বেশিরভাগ সময় মাকেই চালাতে হতো। তিনি রকফেলারকে কাজ করা, টাকা জমানো এবং দান করার শিক্ষা দেন। তিনি ছিলেন খুবই বিনয়ী প্রকৃতির।
তার পরিবার এক জায়গায় বেশিদিন থাকতো না। প্রথমে তারা মোরাভিয়া ও পরে ১৮৫১ সালে নিউ ইয়র্কের ওসওয়েগো শহরে চলে যান।সেখানে ওয়েগো একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন রকফেলার। তিনি গণিতে খুবই ভালো ছিলেন, যা পরবর্তীতে ব্যবসায় তাকে খুব সাহায্য করেছে।১৮৫৩ সালে ওহায়োর ক্লিভল্যান্ডে পাড়ি জমান তারা। সেখানে সেন্ট্রাল হাই স্কুলে ভর্তি হন রকফেলার।
স্কুলে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত পড়ে তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেন। পরে তিনি ফলসম মার্কেন্টাইল কলেজে একটি ব্যবসায়িক কোর্সে ভর্তি হন। ছয় মাসের কোর্স তিনি তিন মাসে শেষ করে আসেন। এরপর তিনি চাকরি খোঁজা শুরু করেন। একসময় পেয়েও যান। ১৮৫৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হেওয়িট এন্ড টাটল নামে একটি ছোট কোম্পানির সহকারী হিসাব রক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি কোষাধ্যক্ষ এবং হিসাবরক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বরকে ‘জব ডে’ হিসেবে উদযাপন করেন।
কিন্তু একসময় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পারিশ্রমিক নিয়ে মতের মিল না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। তখন নিজেই একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর চিন্তা করলেন। তখন তার দুই বছরের কিছু জমানো অর্থ আর বাবার কাছ থেকে কিছু ধার করেন। প্রতিবেশী মরিস ক্লার্ককে ব্যবসায়িক পার্টনার বানান। হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করার সময় তার দক্ষতা ও কাজের জন্য সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে ব্যাংক থেকে তিনি চার হাজার ডলার ঋণ পান, যা ছিল তখনকার সময়ে অবিশ্বাস্য!
তারা তখন কমিশন বণিক হিসেবে কাজ করেন। কমিশন বণিকরা বিভিন্ন পণ্য অন্যদের জন্য বিক্রি করিয়ে সেখান থেকে একটা পার্সেন্টেজ পায়। তারা শস্য, খড়, মাংসসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা শুরু করেন। ১৮৬০ সালে ৪,৪০০ ডলার এবং ১৮৬১ সালে ১৭,০০০ ডলার লাভ করেন তারা। তখন এই ব্যবসা ছিল খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। রকফেলারের দক্ষতাই তাদেরকে ব্যবসাসফল করে তোলে।
এ সময় আমেরিকা জুড়ে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের কমিশনও বেড়ে যায়। তাদের ব্যবসা পুরো ক্লিভল্যান্ড জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রকফেলার ছিলেন খুবই পরিশ্রমী। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চাইতেন না। এত সফলতার পরও তিনি দেখতে পেলেন, কমিশন ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল না। তিনি তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে বুঝলেন, ভবিষ্যতে কৃষিপণ্যের চেয়ে শিল্প কারখানার কাঁচামালের ব্যবসাই লাভজনক হবে। তখনই পেলেন বিপুল সম্ভাবনার উৎস- তেল।
১৮৫৯ সালে পেনসিলভানিয়া রক ওয়েল কোম্পানির কর্মী এডউইন ড্রেক পেনসিলভানিয়ার টিটুসভিলাতে একটি তেলের খনির খোঁজ পান। ড্রেক তখন ইয়েল ইউনিভার্সিটির একজন রসায়নবিদকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখেন, ঐ এলাকার তেল খুবই উন্নতমানের। পরবর্তীতে এই এলাকা তেলের এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়। তখন ঐ খনির তেল উত্তোলনের মাধ্যমে উন্মোচন হয় নতুন ব্যবসার।
তেলচালিত গাড়ি তখনও আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু কেরোসিন চালিত ল্যাম্প বাড়িঘরে ব্যবহার করা হত অনেক। রকফেলার হিসেব করে দেখলেন, তেল উত্তোলনে অনেক প্রতিযোগিতা আর ব্যবসাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি অনুভব করলেন, তেল উত্তোলনের চেয়ে তেল শোধনের ব্যবসা করলে সেটা লাভজনক হবে বেশি। তখন ক্লার্ক ও তার ভাইদের সাথে স্যামুয়েল এন্ড্রু নামে আরেকজনকে যুক্ত করেন, যার তেল শোধনের ব্যবসার অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের নিয়ে ১৮৬৩ সালে ‘এন্ড্রুজ, ক্লার্ক এন্ড কোম্পানি’ দিয়ে তেলের জগতে পা রাখলেন জন রকফেলার।
তখন ক্লিভল্যান্ডের সাথে পেনসিলভানিয়ার নতুন রেল সংযোগ তৈরি হয়। তিনি রেল লাইনের ঠিক পাশেই তাদের তেল শোধনাগারটি নির্মাণ করেন। এতে তাদের তেল পরিবহনে অনেক সুবিধা হয়। তেলের ব্যবসাতেও রকফেলারের সাফল্য অব্যহত থাকে। এদিকে ক্লার্ক ভাইরা কোম্পানির সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিতে না চাইলে ১৮৬৫ সালে জন রকফেলার ৭২,৫০০ ডলার দিয়ে তাদের অংশ কিনে নেন। তখন কোম্পানির নাম দেন ‘রকফেলার এন্ড এন্ড্রুজ’। তখন তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা পেলেন। ব্যাংকগুলোও তাকে টাকা দেয়ার জন্য ঘুরতো। তখন তিনি কোম্পানিকে প্রতিটি দিকেই সম্প্রসারিত করেন। কোম্পানির মান বাড়ানোর জন্য অনেক কঠিন সিদ্ধান্তও নেন এ সময়।
১৮৬৬ সালে তার ভাই উইলিয়াম রকফেলারের সাথে ক্লিভল্যান্ডে আরেকটি শোধনাগার খোলেন। এর নাম দেন ‘স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্কস’। তারা নিউ ইয়র্ক সিটিতেও এর আরেকটি অফিস খোলেন। সেখানের দায়িত্বে ভাইকে রাখেন তেল রপ্তানীর বিষয় দেখাশোনার জন্য। দেশের চেয়ে দেশের বাইরে তাদের ব্যবসা আরো বেশি সফল হয়। ১৮৬৭ সালে রকফেলার হেনরি এম ফ্ল্যাগার নামে আরেকজন লোককে তার অংশীদার করেন স্যামুয়েলের সাথে। তখন কোম্পানির নতুন নাম হয় ‘রকফেলার, এন্ড্রুজ এন্ড ফ্ল্যাগার’। ফ্ল্যাগার ছিলেন রকফেলারের পূর্ব পরিচিত। তিনি যখন শস্যের ব্যবসা করতেন, তখন তার কাছ থেকে একবার পণ্য কিনেছিলেন। তখন থেকেই তার সাথে ভালো সম্পর্ক।
১৮৬৮ সালে তাদের কোম্পানি হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল শোধনকারী কোম্পানি। তারা জানতেন, শুধু তেল শোধন করলেই ব্যবসা লাভজনক হবে না, এর সাথে বর্জ্য পদার্থগুলোও সঠিকভাবে ব্যবহার করা লাগবে। অন্যান্য শোধনাগারগুলো যেখানে তেলের বর্জ্য গ্যাসোলিন নদীতে ফেলে দিত, রকফেলার সেগুলোকে জ্বালানীর কাজে ব্যবহারোপযোগী করলেন। বেনজিনকে প্রক্রিয়াজাত করে পরিষ্কারক হিসেবে তৈরি করলেন। প্যারাফিন থেকে মোমবাতি বানালেন। এছাড়া ন্যাফথা, পেট্রোলিয়ামের মতো বর্জ্যকেও বিভিন্ন কাজে লাগালেন। এগুলোই অন্যদের থেকে তাদের এগিয়ে দিলো। রকফেলার মনে করতেন, ব্যবসায়ে সফলতার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে প্রত্যেক সূক্ষ্ম জিনিসের দিকে মনোযোগ রাখা।
রকফেলার তখন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিদের তার রাস্তা থেকে সরাতে থাকলেন। ১৮৬৫ সালে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ছিল ২৬টি। পাঁচ বছরের মধ্যে চারটি কোম্পানি বাদে সবগুলোকে কিনে নেন। এসব কোম্পানির মালিকদের তার কোম্পানিতে উচ্চ পদে নিয়োগ দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসতেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নির্দয় হৃদয়ের ।প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিক্রি করতে না চাইলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিতেন। অনেক সময় পণ্যের দাম ইচ্ছা করে অনেক কমিয়ে দিতেন, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষতি হয়।
এ সময় তার ব্যবসার বিস্তৃতি অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০ জানুয়ারি ১৮৭০ সালে গঠন করেন ‘স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল কোম্পানি অব ওহায়ো’। ৩০% শেয়ার নিয়ে তিনি হন কোম্পানির সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী। ১৮৭২ সালে তিনি ক্লিভল্যান্ডের প্রায় সব তেল শোধনাগার কিনে ফেলেন। এরপর ক্লিভল্যান্ডের বাইরের শোধনাগারগুলোও কেনা শুরু করেন।
১৮৭৯ সালের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল আমেরিকার ৯০% তেল শোধনাগারই নিজেদের করে নেয়। এর মধ্যে ৭০% ই বিদেশে তেল রপ্তানি করতে পারত। তখন ব্যবসা এতটাই প্রসারিত হয় যে, রকফেলার শুধু কোম্পানির খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোই দেখতেন। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৪০ বছর!
১৮৮২ সালে রকফেলার গঠন করেন স্ট্যান্ডার্ড অয়েল ট্রাস্ট। এখান থেকে ৪০টি স্থানীয় তেল কোম্পানীর পৃষ্ঠপোষকতা করা হতো। তখন ব্রডওয়েতে স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের সদর দফতর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এ সময় রকফেলার এবং তার কোম্পানির অনেক সমালোচনা শুরু হলো। একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানো ও ঘুষ দেয়ার অভিযোগ আনা হলো।
তখন পণ্য পরিবহনের জন্য রেলগাড়ি ব্যবহার করা হতো। রেল মালিকদের এজন্য টাকা দিতে হতো।র কফেলার রেলমালিকদের সাথে গোপন আঁতাত করে অনেক কম দামে পণ্য পরিবহন করতেন। এই তথ্য প্রকাশ পেয়ে গেলে অন্যান্য শিল্পপতিরা ক্ষেপে যান। আইনপ্রণেতারাও চাইছিল স্ট্যান্ডার্ড অয়েলকে ভেঙে তাদের একক আধিপত্য দূর করতে। মিডিয়া ও পত্রিকার পাতায় রকফেলার পরিণত হন সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিতে!
১৯০২ সালে ইডা টারবেল নামে ওহাইয়োর এক শিল্পপতির মেয়ে ‘দ্য হিস্টোরি অব স্ট্যান্ডার্ড অয়েল’ বইয়ে রকফেলারের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে আসেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের অফিসে গুপ্তচর নিয়োগের অভিযোগও ওঠে রকফেলারের বিরুদ্ধে। শ্রমিক নেতা, রাজনীতিবিদ, জনগণ সবার কাছেই হঠাৎ ভিলেনে পরিণত হন তিনি।
তিনি বাধ্য হয়ে জনসম্মুখের আড়ালে চলে যান। এ সময় প্রচন্ড মানসিক চাপে তার সমস্ত চুল পড়ে যায়। ১৯০৪ সালে প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট ঘোষণা দেন, তিনি স্ট্যান্ডার্ড অয়েলকে ভেঙে দেবেন। শেষপর্যন্ত, ১৯১১ সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট স্ট্যান্ডার্ড অয়েলকে ভেঙে ৩৪টি কোম্পানিতে ভাগ করে দেয়। বর্তমানের শেভরন, এসসো, মোবিলের মতো কোম্পানিগুলো একসময় স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন খুবই দানশীল। তিনি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন মানব কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করেছেন। বাচ্চাদের সাথে দেখা হলে তিনি তাদেরকে একটি ডাইম (দশ সেন্টের মুদ্রা) উপহার দিতেন। ধনী-গরীব সবাইকেই দিতেন। তিনি জীবনের প্রথম আয়ের ১০% চার্চে দান করেন। এরপর থেকে আয় যত বাড়তে থাকে, চার্চগুলোতে তার দানের পরিমাণও বাড়তে থাকে। শুধু চার্চের জন্যই নয়, শিক্ষাখাতেও অনেক ব্যয় করেছেন তিনি। আফ্রিকান-আমেরিকানদের জন্য স্পেলম্যান কলেজ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর জন্য ৮০ মিলিয়ন ডলার দান করেন, যেটা ছোট একটি কলেজকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করেছিল। তিনি নিজেও বলেছিলেন, এটা ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ!
তিনি ছেলের অনুরোধে রকফেলার ইনস্টিটিউড ফর মেডিকেল রিসার্চের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার দান করেন। বর্তমানে এটি রকফেলার ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রকফেলার স্যানিটারি কমিশন। এটি ১৯২৭ সালের মধ্যে হুকওয়ার্ম ডিজিজকে বিলুপ্ত করতে সাহায্য করে। ১৯১৩ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করেন রকফেলার ফাউন্ডেশন। এতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে গেছেন।
অত্যন্ত প্রতিভাধর এই মানুষটি ১৯৩৭ সালের ২৩ মে মারা যান। তাকে ক্লিভল্যান্ডের লেকভিউতে সমাহিত করা হয়। তাকে শুধু আধুনিক তেল শিল্পের পথিকৃত হিসেবেই নয়, একজন মানবসেবক হিসেবেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।