১৯৭৮ সালের এপ্রিল মাস। আফগানিস্তানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দাঊদ খানের সরকারে বিরুদ্ধে সেনাঅভ্যুত্থান ঘটলো। এতে নিহত হলেন দাঊদ খান ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই অভ্যুত্থানে ব্যাপক জনসমর্থন থাকায় এটাকে বলা হচ্ছিল জনগণের অভ্যুত্থান। আফগানিস্তানের মানুষ আক্ষরিক অর্থেই দাঊদ খানের পতনকে স্বাগত জানিয়েছিল। তারা ভেবেছিল এতে পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে, তারা একটা নিরাপদ জীবন পাবে। কিন্তু তারা জানত না নতুন কমিউনিস্ট সরকার তাদেরকে নয় বছরব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ উপহার দেবে, যে যুদ্ধে তারা হারাবে জীবন, সম্পদ, আপনজনসহ সবকিছু। ১৯৭৯ সালে রাশিয়ান আর্মি আফগানিস্তান আক্রমণের পর তাদের সীমাহীন বর্বরতায় আফগানিস্তান হয়ে উঠল মৃত্যপুরী। আফগানিস্তানের মানুষ নিজেদের ভূমিতে অত্যাচারিত হচ্ছিল, খুন হচ্ছিল, জেলে যাচ্ছিল।
স্বদেশের এই অবস্থা দেখে প্যারিসে অবস্থানরত হোসাইনি পরিবার আফগানিস্তানে ফেরার সাহস আর করতে পারল না। অবশেষে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তাদের আবেদন গৃহীত হলে তারা ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় নতুন জীবন শুরু করেন।
তাদের এই নতুন জীবন আক্ষরিক অর্থেই ছিল নতুন যুদ্ধ। লেখক খালেদ হোসাইনির বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। আমেরিকায় আসার দুই সপ্তাহের মাথায় তাকে হাই স্কুলে ভর্তি হতে হলো। অথচ তার ইংরেজি জ্ঞান ছিল শুধু কয়েকটি শব্দে সীমাবদ্ধ। ভাষাশিক্ষায় কাঁচা হোসাইনিকে তাই ইংরেজি শেখার সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হলো। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সংস্কৃতি থেকে উঠে এসে নতুন এক সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রত হতে হলো। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই ব্যাপারটিকে বলেছেন, “সাংস্কৃতিক সংঘাত“।
সত্যিকার অর্থে হোসাইনির নিজের চেয়ে তার বাবা-মায়ের জন্য ছিল এটা আরও বেশি কষ্টকর। তার বাবা-মা দুজনই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, অভিজাত সমাজের বাসিন্দা। আমেরিকায় এসে তারা শুধুই শরণার্থী বনে গেলেন। তারা তাদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। তবে হোসাইনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা ছিলাম খুবই ভাগ্যবান আফগান, কারণ আমরা আমেরিকায় এসে নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ পেয়েছিলাম, যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন আফগান পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরে পঁচে মরছে।“
‘দ্য কাইট রানার’ উপন্যাসে আমরা আমেরিকায় অভিবাসী আফগান জীবনের যে চিত্র দেখতে পাই সেটা হোসাইনির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই এসেছিল। পাঠক, দ্য কাইট রানারের মতো অনবদ্য উপন্যাসের স্রষ্টা আফগান বংশোদ্ভুত আমেরিকান লেখক খালেদ হোসাইনির জীবন ও লেখালেখির নানা দিক নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
খালেদ হোসাইনি ১৯৬৫ সালের ৪ঠা মার্চ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। কাবুলের অভিজাত ওয়াজির আকবর খান এলাকায় কেটেছিল তার শৈশবের প্রথম দিনগুলো। তার বাবা ছিলেন আফগান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কূটনীতিক, আর মা ছিলেন মেয়েদের হাই স্কুলের ফার্সি ভাষার শিক্ষিকা। তিনি ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়।
১৯৭০ সালে হোসাইনির বাবা ইরানে আফগান দূতাবাসে বদলি হন। তারা সপরিবারে চলে আসেন ইরানে। ১৯৭৩ সালে তারা আবার কাবুলে ফিরে আসেন। ১৯৭৬ সালে হোসাইনির বয়স যখন ১১ বছর, তখন তারা ফ্রান্সে পাড়ি জমান। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হলে তারা আমেরিকায় চলে আসেন এবং অভিবাসী জীবন শুরু করেন। আমেরিকায় হোসাইনি হাই স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। অবশেষে ১৯৮৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান জোসের ইন্ডিপেন্ডেন্স হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন এবং সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটিতে নাম লেখান।
সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে তিনি বাগিয়ে নেন বায়োলজিতে একটি ব্যাচেলর ডিগ্রী। পরের বছর তিনি ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো স্কুল অব মেডিসিনে। সেখান থেকে ১৯৯৩ সালে তিনি এম.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি লস অ্যাঞ্জেলসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টার থেকে ইন্টার্নাল মেডিসিনে রেসিডেন্সি সম্পন্ন করেন। হোসাইনি চিকিৎসক হিসেবে ১০ বছর কাজ করেন। ডাক্তারি পেশা বেছে নেয়ার অভিজ্ঞতাকে তিনি বলেছেন, “অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ”। তার সত্যিকার ভালোবাসা ছিল লেখালেখি।
হোসাইনি খুব ছোটবেলা থেকেই গল্প লিখতেন। ছোটবেলায় তার ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। বিশেষ করে রুমি, হাফিজ, ওমর খৈয়াম, আব্দুল কাদির বেদিলদের সুফিবাদী কবিতা তিনি প্রচুর পড়েছেন। “দিওয়ান-ই-হাফিজ” ছিল তার প্রিয় কবিতার বই। ছোটবেলার গল্প লেখার অভ্যাস থেকে আজ তিনি পরিণত হয়েছেন বেস্টসেলার লেখকে।
২০০১ সালে তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য কাইট রানার’ লিখতে শুরু করেন। এটি প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। প্রকাশের পর পৃথিবীজুড়ে বইটি ছয় মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। তখন যেন হঠাৎ করেই তিনি চলে আসেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। সবাই তার কাছে জানতে চাইত পরবর্তী বই তিনি কবে লিখবেন, সেটা কী নিয়ে হবে ইত্যাদি। প্রথম উপন্যাস ব্যাপক পাঠকপ্রিয় হলেও হোসাইনি ডাক্তারি ছেড়ে পুরোপুরি লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করবেন কি না এই ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, তার লেখালেখির ক্যারিয়ার আসলে কতদিন টিকবে। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন এয়ারপোর্টে বসে মানুষজন তার বই পড়ছে, তার রোগীরা তার লেখা বইতে অটোগ্রাফ নিচ্ছে, তখন তিনি সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন।
হোসাইনির স্ত্রী রয়া হোসাইনি। তাদের দুটি সন্তান আছে- হ্যারিস ও ফারাহ। হোসাইনি ২০০৬ সালে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর এর শুভেচ্ছা দূত নিযুক্ত হন এবং শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন।
হোসাইনির লেখায় আফগানিস্তান ও একটি পর্যালোচনা
হোসাইনির লেখায় আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসের গভীর ও নিরীক্ষাধর্মী বর্ণনা পাওয়া যায়। যদিও তিনি ইতিহাস ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় খুব বেশি জড়িয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চান। কিন্ত শেষ পর্যন্ত তিনি আবিষ্কার করেন, চরিত্রগুলোর নিজেদের জীবনের গল্প এবং আফগানিস্তানের গল্প একে অপরের সাথে ডিএনএ সূত্রকের মতোই সমান্তরালভাবে চলে যায়।
তিনি তার লেখায় মানুষকে আফগানিস্তান সম্পর্কে জানাতে চান। আফগানিস্তানের লোকজন তার লেখা পড়ে কি না এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
সেখানে ৭০-৭৫ শতাংশ লোক নিরক্ষর। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার আরো বেশি, ৮০ শতাংশ। তাই ওখানে যারা বই পড়ে তারা শিক্ষিত, সুবিধাপুষ্ট শ্রেণী। আমি ঠিক জানি না, তবে সম্ভবত আমার লেখা সম্পর্কে তাদের ধারণা হচ্ছে- আমি তাদের নিয়ে বই লিখে তাদের দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রামের ফায়দা উঠাচ্ছি। এই ব্যাপারে আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমি এমন বিষয় নিয়ে লিখি যা মানুষের জীবনকে রুপ দেয়, সমাজ গঠন করে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তারা যা-ই ভাবুক, আমি আফগানিস্তানকে আমার ব্যক্তিগত সাফল্যের অংশ বানাতে চাই।
হোসাইনির লেখায় আফগানিস্তানের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক জীবনের চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। দ্য গার্ডিয়ানে একটি সাক্ষাৎকারে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, গত ত্রিশ বছরের যুদ্ধ আফগানিস্তানের সংস্কৃতিতে কেমন প্রভাব ফেলেছে। তিনি এ ব্যাপারে বলেন,
এটা একটা অপরিমেয় ক্ষতি। আফগানিস্তানে নানামুখী যুদ্ধের ফল আমরা এখনও ভোগ করছি। আফগানিস্তান এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে গরীব অ-আফ্রিকান রাষ্ট্র। এখানে বেশিরভাগ লোকজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যুদ্ধের পর মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ইরান ও পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ফিরে এসেছে। এসব শরণার্থীদের সেখানে নতুন জীবন শুরু করতে প্রচন্ড সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
হোসাইনির উপন্যাসগুলোর পর্দার আড়ালের গল্প
দ্য কাইট রানার
১৯৯৯ সালের একদিন। টিভিতে খবর দেখছিলেন খালেদ হোসাইনি। খবরটি ছিল তালেবান আফগানিস্তানের দৈনন্দিন জীবনে কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তা নিয়ে। এই খবরটিতে বলা হয়, তালেবান আফগানিস্তানের জনপ্রিয় খেলা ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। এটা শুনে হোসাইনি মর্মাহত হলেন। ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি তার ব্যক্তিগত মুগ্ধতা আছে। তিনি যখন কাবুলে ছিলেন তখন বন্ধুবান্ধব ও কাজিনদের সাথে ঘুড়ি ওড়াতেন। এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি তখনই গল্প লিখতে বসে গেলেন এবং ২৫ পৃষ্ঠার একটি ছোটগল্প লিখে ফেললেন। ২০০১ সালের মার্চ মাসে তিনি গ্যারেজে এই পান্ডুলিপিটি আবারও খুঁজে পান। তখনই তিনি গল্পটি বড় করতে শুরু করেন এবং আমরা পাই তার অনবদ্য সৃষ্টি ‘দ্য কাইট রানার’।
‘দ্য কাইট রানার’ উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে দুই আফগান বালক আমির ও হাসানের পারস্পরিক সম্পর্কের গল্প। বইটিতে পুরুষদের মধ্যকার পিতৃত্ব, ভ্রাতৃত্ব প্রভৃতি সম্পর্ক আলোচিত হয়েছে। এখানে হোসাইনির শৈশবের ছাপ আছে। বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র আমিরের মতো একই এলাকায় থাকতেন তিনি, আমির ও তিনি একই স্কুলে পড়েছেন, আমিরের মতো তিনিও ছোটবেলায় গল্প লিখতেন। তবে বইটির বাকি অংশ কাল্পনিক।
২০০৭ সালে ‘দ্য কাইট রানার’ উপন্যাসটি নিয়ে হলিউডে মুভি নির্মিত হয়। মুভিটি সেই বছর সেরা বিদেশি ভাষার সিনেমা হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন লাভ করে। হোসাইনির এই উপন্যাসে সহিংসতা উঠে এসেছে ভিন্নরুপে। এতে হাসান এলাকার খারাপ ছেলেদের হাতে ধর্ষিত হয়! হোসাইনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই ঘটনাটি মূলত রুপক। আমি এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি আফগানিস্তান নির্মম বর্বরতার স্বীকার, কিন্তু সবাই চেয়ে চেয়ে দেখছে। কেউ কিছু করছে না।” গল্পে আমির হাসানকে নির্যাতিত হতে দেখেও তার পাশে দাঁড়ায়নি।
আ থাউজেন্ড স্প্লেন্ডিড সান
‘আ থাউজেন্ড স্প্লেন্ডিড সান’ উপন্যাসে নারীদের মধ্যেকার সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে। এই উপন্যাস লেখার অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন জানতে চাইলে হোসাইনি বলেন,
আমি ২০০৩ সালে যখন আফগানিস্তানে যাই, তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সত্যিকার চিত্র দেখতে পাই। জানতে পারি যুদ্ধের সময় মহিলাদের সাথে কী ঘটেছিল, তারা কেমন জটিলতার মধ্যে দিয়ে গেছে, কত কষ্ট সহ্য করেছে। অনেক মহিলার ব্যক্তিগত জীবনের গল্পও আমি তাদের কাছ থেকে শুনেছিলাম। গল্পগুলো শুনে আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। মনে হয়েছিল এই গল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
এই উপন্যাসটি লেখা তার কাছে প্রথম উপন্যাসের তুলনায় বেশ কঠিন ছিলো। কারণ এতে তার চরিত্রগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থা তার নিজের তুলনায় ভিন্ন ছিল। তাছাড়া মহিলারা ভিন্ন এক আবেগীয় জগতে বাস করে। একজন পুরুষ হিসেবে সেই জগতের নির্ভুল চিত্র উপস্থাপন তার জন্য কঠিন ছিল বৈ কি।
এই উপন্যাসের গল্প আবর্তিত হয়েছে দুজন আফগান নারীর জীবনকে কেন্দ্র করে। উপন্যাসটির শুরুর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন,
প্রথমে আমি ছিলাম ভেন্ট্রিলোকুইস্ট, আমার চরিত্রগুলো আমার ছুড়ে দেয়া কথাগুলোই বলতো। পরে চরিত্রগুলো আমার উপর জয়ী হলো আর আমি পরিণত হলাম তাদের মুখপাত্রে। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা আফগান মহিলাদের জীবন নিয়ে রচিত মর্মস্পর্শী এই উপন্যাস পড়লে উপন্যাসের বোরকা পরা, চেহারাহীন, নামহীন মহিলাদেরও যে আলাদা জীবন আছে, স্বপ্ন আছে, গল্প আছে পাঠক সেটাই অনুভব করবেন।
এন্ড দ্য মাউন্টেন ইকোড
হোসাইনির তৃতীয় উপন্যাস ‘এন্ড দ্য মাউন্টেন ইকোড’ তার অন্য দুই উপন্যাসের মতোই কয়েক প্রজন্ম ধরে বিস্তৃত পারিবারিক উপন্যাস। এই উপন্যাসটি শুরু হয়েছে গ্রামীণ আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে। তারপর উপন্যাসের চরিত্রগুলো বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র আবদুল্লাহ ও পারীর বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং পুনর্মিলনকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে মূল গল্প। প্রথমে যখন হোসাইনি বইটি লিখতে শুরু করেন, তখন তার মাথায় শুধু একটি দৃশ্য ছিল। রেডিও হাতে এক লোক মরুভূমির মাঝখানে হাঁটছে। তার সাথে দুটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। তিনি জানতেন না তারা কারা। ধীরে ধীরে তিনি গল্পটিকে বিস্তৃত করেন। এই বইটিতে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা অতটা প্রকট নয়। তবে বইটিতে স্মৃতি নিয়ে চমৎকার নাটকীয়তা আছে যা পড়লে পাঠক দ্বন্দ্বে পড়বেন যে, স্মৃতি কি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ। বইটির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে অনেকগুলো চরিত্রের জবানীতে। হোসাইনির চমৎকার গল্প বলার ধরনে চরিত্রগুলোর প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও তাদের ফিরে পাওয়ার আনন্দের গল্পগুলো জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে বইটিতে।
সী প্রেয়ার
২০১৫ সালে তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা তিন বছর বয়সী সিরিয়ান শিশু আয়লান কুর্দির ঘটনাটি বিশ্ববাসীকে বাকরুদ্ধ করে এবং পৃথিবীকে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। হোসাইনি জাতিসংঘের হয়ে শরণার্থীদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তার ‘সী প্রেয়ার’ বইটিতে এই অভিজ্ঞতাগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে। এক বাবার তার সন্তানকে বাঁচানোর সংগ্রামের গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে হোসাইনির এই বইটি।