ভল্ট ভেঙ্গে স্বর্ণ বা হীরা বা অর্থ চুরি নিয়ে দারুণসব গল্প লেখা হয়েছে, বানানো হয়েছে চলচ্চিত্র। কিন্তু বাস্তবের সাথে কি আর গল্পের তুলনা হয়?
২০০৩ সাল। অ্যান্টওয়ার্প ডায়ামন্ড ডিস্ট্রিক্ট—পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গাগুলোর একটি। প্রতিবছর এখানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের হীরা হাতবদল হয়। একদল ব্যবসায়ীর সাহায্য নিয়ে, লিওনার্দো নোটারবার্টোলোর নেতৃত্বে স্কুল অব তুরিন নামের একদল চোর সেখানকার ভল্টটি ভেঙ্গে রাতের অন্ধকারে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের হীরা রাতারাতি উধাও করে দিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, আজতক তার ৮০ শতাংশের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
চোরদের একজন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলে তার প্যানিক আটাক হয়। ফলে চুরির বেশ কিছু প্রমাণ তারা পথিমধ্যে ফেলে দিয়ে আসে। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু চুরির পদ্ধতি বা এর পেছনের গল্প তারা বের করতে পারেনি। নোটারবার্টোলোকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু কোনোরকম স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি তারা। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হয়নি। ঘটনার ৬ বছর পর, ২০০৯ সালে নোটারবার্টোলো উইয়ার্ড ম্যাগাজিন-এর এক সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়। ইতালিয়ান টানের ফ্রেঞ্চে সে বলে,
আমি এমনিতে চোর বা মিথ্যেবাদী হতে পারি। কিন্তু আপনাকে আমি একটা সত্যি ঘটনা শোনাতে চাই।
এভাবেই জানা যায় পৃথিবী শ্রেষ্ঠ এক চুরির আদ্যোপান্ত। চলুন, ফিরে যাওয়া যাক মূল চুরির প্রায় ১৮ মাস আগের এক রৌদ্রজ্জল সকালে।
১
২০০১ সাল। গ্রীষ্মকাল। দ্য ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্টের মূল সড়কের পাশের একটা ছোট্ট ক্যাফেতে বসে এক্সপ্রেসো কফিতে চুমুক দিচ্ছিল লিওনার্দো নোটারবার্টোলো। গাদাগাদি করে রাখা আধ-ডজন টেবিল যে কারো বিরক্তি উদ্রেক করবে। কিন্তু নোটারবার্টোলোর এখানে আসার কারণ আছে। কোনার জানালা দিয়ে চুপচাপ হীরা হাত বদল হওয়ার কেন্দ্র—দ্য ডায়মন্ড সেন্টার দেখাটা ওর অভ্যাস। বিভিন্ন দেশের লোকজন দ্রুত পা চালিয়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। হাতের সাথে শেকল দিয়ে ব্রিফকেস বাঁধা। কখনো এসে থামছে আর্মার্ড কার।
হাতে হ্যান্ডগান আর চাকা লাগানো বিশালাকার কালো স্যুটকেস নিয়ে লোকজন সদর্পে পা বাড়াচ্ছে ভেতরের দিকে। এই ছুটে চলা দেখতে ওর ভালো লাগে। এখানে জীবনের ছোঁয়া আছে। ব্রিফকেস হোক কিংবা কোটের পকেট, প্রতি মুহুর্তে লাখ লাখ টাকার হীরা প্রতিনিয়ত হাত বদল হচ্ছেই। দিনশেষে এসব হীরা চলে যাবে মাটির নিচের সুরক্ষিত ভল্টে।
অনেকেই জানে না, এই জায়গাটা শুধু ধনীদের-ই নয়, চোর-বাটপারদেরও আড্ডাখানা।
বছরখানেক আগে এখানে এসেই ডায়মন্ড সেন্টারে ছোট্ট একটা অফিস ভাড়া নিয়েছিল নোটারবার্টোলো। নিজেকে সে ইতালির তুরিন শহরের হীরা আমদানিকারক বলে পরিচয় দিয়েছিল। ভালো জামা-কাপড় পরা, ক্যাশ টাকা দিয়ে টুকটাক হীরা কেনা আর আনন্দ-ফুর্তি করা—এই হচ্ছে ওর জীবন। হীরা ব্যবসায়ীরা ওকে সানন্দে বরণ করে নিয়েছিল। তখনো তারা জানত না, পৃথিবী শ্রেষ্ঠ এক চোর ঘাঁটি গেড়ে বসেছে তাদের মাঝে।
বছর শেষ হতে হতে নোটারবার্টোলো ডজনখানেক চুরি করে ফেলল। ব্যাপারটা শুধু আর টাকা-পয়সার মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। বরং সে বিশ্বাস করত, তার জন্মই হয়েছে চোর হওয়ার জন্য। এসবের শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৫৮ সালে।
তখন নোটারবার্টোলোর বয়স মাত্র ৬। মা ওকে দুধওয়ালার কাছ থেকে দুধ নিয়ে আসতে পাঠিয়েছিল। আর সে ফিরে এসেছিল ৫০০০ লিরা নিয়ে। বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ছয়শ টাকার মতো হবে। দুধওয়ালার বাসায় গিয়ে সে দেখে, লোকটা ঘুমিয়ে আছে। সুযোগ পেয়ে বেচারার ড্রয়ারের উপর হামলে পড়ে নোটারবার্টোলো। মা সেদিন ওকে প্রচুর প্রহার করেছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়ে গিয়েছিল সে।
সেই থেকে শুরু। ছোটবেলায় শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা মেরেছে, কৈশোরেই তালা খোলা আর গাড়ি চুরিতে হয়ে উঠেছে দক্ষ। বয়স বিশ পেরোতেই মেয়েদের অলঙ্কারের উপরে মনযোগ দিয়েছে। দীর্ঘদিন মানুষজনকে অনুসরণ করেছে। বুঝতে চেষ্টা করেছে তাদের মনস্তত্ত্ব। ওরা কীভাবে ভাবে, কীরকম মানুষের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায় ইত্যাদি বোঝার জন্য দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পথে পথে ঘুরেছে। তারপর, ত্রিশের দিকে এসে নিজের মতো লোকজনদের একসাথে জড়ো করতে শুরু করেছে। একা একা এসব আসলে হয় না। দল লাগে। শর্ত একটাই: প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বিশেষত্ব থাকা লাগবে। নোটারবার্টোলোর দলে জায়গা করে নিল অ্যালার্ম অকার্যকর করা, মুহুর্তের মাঝে তালা খুলে ফেলা, ভল্টের পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করায় দক্ষ লোকজন। শেষ পর্যন্ত এই দলটির নাম হয়ে গেল স্কুল অব তুরিন।
দলনেতা নোটারবার্টোলোর বিশেষত্ব হচ্ছে তার ব্যবহার। বড়লোক এবং হীরা ব্যবসায়ীর ভান করে সে যেকোনো অফিস, ওয়ার্কশপ, এমনকি ভল্ট দেখার আমন্ত্রণও পেয়ে যেত। কখনো কখনো সেখান থেকে টুকটাক কিছু কিনেও নিত ক্যাশ টাকা দিয়ে। তারপর, মাসখানেক পরে ফাঁকা করে দিত পুরো ভল্ট।
অ্যান্টওয়ার্প জায়গাটির বিশেষত্ব ছিল, এখানে কেউ কাউকে প্রশ্ন করত না। ফলে দারুণ সব অলঙ্কারের মধ্যেকার ছোট ছোট হীরার টুকরা আলাদা করে সহজেই বিক্রি করে দেওয়া যেত কারো কাছে। মাসে দুইবার এখানে ঘুরতে আসত নোটারবার্টোলো। এর মাঝেই নিজের কাজকর্ম সেরে আবারো বেরিয়ে পড়ত। কখনো ফিরে যেত আল্পসের কাছে, নিজের বাড়িতে। কখনোবা নতুন কোনো কাজের খোঁজে ঘুরে বেড়াত দেশ-দেশান্তরে।
চুরির পণ্য সে সবার কাছে বিক্রি করত না। কিছু নির্দিষ্ট এবং বিশ্বাসী ব্যবসায়ীর কাছেই বিক্রি শুধু করতো। তেমনি একজন ব্যবসায়ী এলো সেদিন। ততক্ষণে নোটারবার্টোলোর কফি শেষ হয়ে গেছে। লোকটা এসেই বলল, “একটু ভিন্নরকম একটা জিনিস নিয়ে তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। বাইরে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে তোমার আপত্তি নেই তো?”
২
কাজের শুরুতে জিনিসটা ছিল সহজ। কেবল একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে নোটারবার্টোলোকে। বিনিময়ে সে পাবে এক লাখ ইউরো। প্রশ্নটা হচ্ছে, অ্যান্টিওয়ার্প ডায়মন্ড সেন্টার থেকে আদৌ চুরি করা যাবে তো?
উত্তরটা যে ‘না’—এটা সে জানত। নিজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলোও এখানকার একটা ভল্টে রাখা আছে। চুরি করা অসম্ভব দেখেই ভল্ট ভাড়া নেওয়া। কিন্তু এক লাখ ইউরো তো কম না। এত টাকার জন্য এটুকু করাই যায়। পুরো জায়গাটার ছবি তুলে বা ভিডিও করে, এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা শক্ত, সেটা সে ওদেরকে দেখাতে চাইছিল।
শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, নোটারবার্টোলোর ভাষ্যমতে, বুক পকেটের কলমের মাথায় লাগানো একটা ক্যামেরা নিয়ে সে ঢুকে গিয়েছিল ডায়মন্ড সেন্টারে। জিনিসটা দেখতে সাধারণ হাইলাইটার বলে মনে হলেও ওর মাথায় লাগানো ক্যামেরাতে ১০০টি ভালো রেজ্যুলিউশনের ছবি তুলে রাখা যেত। মজার ব্যাপার হলো, ডায়মন্ড সেন্টারের ভেতরে ছবি তোলা একদম নিষেধ হলেও, কেউই এই পেনক্যামটা খেয়াল করেনি।
৩
শুরু হলো চুরির প্রথম ধাপ, রেকি করা। শুরু থেকেই বলা যাক। প্রথমে এলাকার মূল রাস্তার পুলিশ বুথ থেকে কাজ করা শুরু করল নোটারবার্টোলো। এই রাস্তাটা এলাকার একেবারে কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছে। বুথের বুলেটপ্রুফ গ্লাসের ভেতরে বসে পাহারা দিচ্ছে দুজন অফিসার। এলাকার তিনটা মেইন ব্লকের পুরোটা জুড়ে জায়গায় জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। এলাকার প্রতি ইঞ্চি জায়গার সবকিছু এই বুথে বসে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে পলায়নরত কোনো গাড়িকে থামানোর জন্য লাগানো আছে ইস্পাতের সিলিন্ডার। বুথে বসে সুইচ টিপে দিলেই সাথে সাথে কাজ শুরু করে দেবে। ধীরে সুস্থে জায়গাটা পেরিয়ে এলো নোটারবার্টোলো। পকেটের পেনক্যামে ছবি তুলে নিচ্ছে।
পা বাড়াল ডায়মণ্ড সেন্টারের দিকে। এলাকার দক্ষিণ মাথায় ১৪ তলা দূর্গমতো একটা বিল্ডিং। একটা প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স আছে এই দূর্গ পাহারা দেয়ার জন্য। গেটের কাছের একটা রুমেই তাদের মূল অফিস। গেটের কাছে মেটাল ডিটেক্টর তো আছেই, সেইসঙ্গে যে কেউ ঢুকতে চাইলে গার্ডের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। নোটারবার্টোলো নিজের সদস্য-আইডি দেখিয়ে জায়গাটা স্বাভাবিকভাবেই পেরিয়ে এলো।
তারপর লিফটে করে ২ তলা নেমে মাটির নিচের একটা বদ্ধ ঘরে এসে দাঁড়াল সে। ভল্টের মূল দরজাটা এখানেই। ৩ টনের একটা ইস্পাতের দরজা ভল্টটাকে সযত্নে আগলে রেখেছে। সেইসঙ্গে আছে ৬ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
একটা কম্বিনেশন হুইল আছে, যাতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যা বসানো আছে। ৪ অংকের একটা সংখ্যা এতে ডায়াল করতে হবে। এই সংখ্যাগুলো আবার বাইরে থেকে খালি চোখে দেখার উপায় নেই। হুইলের উপরে একটা ছোট্ট লেন্স-স্কোপ লাগানো আছে। ওতে চোখ রাখলেই কেবল সংখ্যাগুলো দেখা যাবে। সম্ভাব্য মোট কম্বিনেশন হলো ১০০ মিলিয়ন।
শক্তি খাটিয়েও লাভ নেই। লাগানোর সময়ই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, টানা ১২ ঘন্টা ড্রিল করলেও এই দরজা দিব্যি টিকে যাবে। আবার ড্রিল শুরু করার সাথে সাথে ভাইব্রেশনের ফলে সংযুক্ত সিসমিক এলার্ম বেজে উঠবে। সিসমিক এলার্ম আসলে কোনো কাঁপুনি শনাক্ত করার চেষ্টা করে। একটা নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি হলেই তারস্বরে চিৎকার করে জানিয়ে দেয়, ঝামেলা হয়েছে!
এর পরের স্তরে আছে দরজার সাথে যুক্ত দুটো ধাতব পাত। একটা দরজার গায়ে লাগানো, আরেকটা লাগানো ডান দিকের দেয়ালে। এই পাতদুটো চুম্বকক্ষেত্র তৈরি করে। কোনোভাবে কেউ যদি আগের কোড বাইপাস করে দরজা খুলে ফেলে, তাহলে এসে এদের পাল্লায় পড়বে। দরজা খোলার সাথে সাথে চুম্বকক্ষেত্র বাধা পাবে, ফলে আরেকটা এলার্ম বেজে উঠবে। এই এলার্মটাকে এড়ানোর জন্য দরজা খোলার আগেই পাতদুটোকে বন্ধ করে দিতে হবে। সেজন্য কাছাকাছি লাগানো একটা কি-বোর্ডে একটা কোড টাইপ করতে হবে। সবশেষে, দরজায় লাগানো আছে বিশাল এক তালা। যেটার চাবির খাঁজ-ভাঁজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাকে নকল করা একরকম অসম্ভব। একমাত্র মূল চাবি দিয়েই তালাটা খোলা সম্ভব।
শক্তি খাটিয়ে সবার সামনে দিয়ে ডাকাতি করতে আসলে যে ভয়াবহ বাধার মুখে পড়তে হতে পারে, সেটা নোটারবার্টোলো জানত। ডাকাতি না, করলে চুরিই করতে হবে। এবং সেটা করতে হবে রাতের বেলায়। কারণ, গার্ডরা তখন ভেতরে ঘুরে বেড়ায় না। এই দারুণ নিরাপত্ত ব্যবস্থার উপর তাদের অগাধ আস্থা আছে।
যাই হোক, ঘরের মুখে লাগানো একটা কলিংবেলে চাপ দিতেই গার্ড সিসি ক্যামেরায় টারবার্টোলোকে দেখে ভল্টের দরজা খুলে দিল। এগিয়ে গিয়ে ভল্টে ঢুকল সে। পুরো জায়গাটা জুড়ে আছে পিনপতন নিরবতা। মোশন, হিট এবং লাইট সেন্সর দিয়ে ভল্টটাকে চব্বিশ ঘণ্টা মনিটর করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে একটা সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, ভেতরের মানুষটা কী করছে। সেটা আবার রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে ভিডিওটেপে।
এগিয়ে গিয়ে নিজের সেফ ডিপোজিট বক্সটা হাতে তুলে নিল সে। এই বাক্সগুলোও ইস্পাত এবং তামা দিয়ে তৈরি। খোলার জন্য একটা চাবি এবং একটা কোড লাগবে। মোট ১৭,৫৭৬টি সম্ভাব্য কম্বিনেশন আছে এতে। নিজের বাক্সটা খুলে, কাজ করে আবার আস্তে করে রেখে দিল। তারপর পা চালিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে।
৪
নোটারবার্টোলোর জবাব এবং ভিডিও হস্তান্তরের প্রায় পাঁচ মাস পরে সেই ডিলার আবার যোগাযোগ করল। জানালো, অ্যান্টওয়ার্পের বাইরের এক জায়গায় দেখা করতে চায়। ঠিকানা দেখে পরিত্যক্ত এক ওয়ারহাউজে গিয়ে হাজির হতে হলো। লোকটা ওকে দেখেই বলল, “আসো, তোমাকে কিছু মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।”
ভেতরে ঢুকে দেখল, ডায়মণ্ড সেন্টারের হুবহু একটা রেপ্লিকা। সামনে তিন ইতালিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। নোটারবার্টোলোকে ওরা আসল নাম বলেনি। এরমাঝে একজনের নাম জিনিয়াস। বিশেষত্ব হলো, সে যেকোনো ধরনের এলার্ম অকেজো করে দিতে পারে। লোকটা ওকে জানাল, বেশিরভাগ এলার্ম সে নিজেই অকেজো করে দিতে পারবে, তবে নোটারবার্টোলোকেও টুকটাক কিছু কাজ করতে হবে।
দ্বিতীয়জন দানবাকৃতির লম্বা এক লোক—মনস্টার। সে যেকোনো ধরনের তালা খুলে ফেলতে পারে। সেইসাথে বৈদ্যুতিক এবং যান্ত্রিক কাজকর্মেও তার দারুণ অভিজ্ঞতা আছে। এবং চুরি করে ফেরার পথে ড্রাইভিং করতে পারবে। তৃতীয় মানুষটার নাম চাবির রাজা বুড়ো! নকল চাবি তৈরিতে সে নাকি পৃথিবী সেরা। লোকটা ওকে জানালো, চাবিটার একটা পরিষ্কার ভিডিও লাগবে খালি। বাকিটা সে নিজেই করে নেবে!
পরের ধাপ সেই ভিডিও আনা। কাজটা করার জন্য আঙ্গুলের ডগার চেয়েও ছোট্ট একটা ক্যামেরা লাগিয়ে আসা হলো ভল্টের দরজার মাথায়। গার্ড যখন দরজা খোলার জন্য চাবি বের করলো, মাথার উপরের সেই ক্যামেরায় ভিডিও হয়ে গেল সবকিছু। তখন ছিল সেপ্টেম্বর মাস। ২০০২ সাল।
৫
১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সাল। চুরি করার ২ দিন আগের ঘটনা। ডি বিয়ার কোম্পানির মাসিক শিপমেন্ট এসে হাজির হলো ডায়মণ্ড সেন্টারে। এই কোম্পানিটি ২০০৩ সালে পৃথিবীর হীরা বাজারের ৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানার মতো দেশ থেকে খনি খুঁড়ে বের করে আনতো হীরা। সেসব কেটেকুটে ঠিকঠাক করে বাক্সে ঢোকানো হতো লন্ডনে। তারপর ১২০ টা বাক্সে নিজস্ব পরিবেশকের কাছে পৌঁছে যেত। মজার ব্যাপার হলো, এই পরিবেশকদের বেশিরভাগই নিজেদের হীরা রিসিভ করতো ডায়মণ্ড সেন্টারের মাধ্যমে। ফলে, মাসে মাসে একটা শিপমেন্ট এখানে চলে আসতো। এবং পরিবেশকের হাতে পৌঁছানোর আগে অপেক্ষা করতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ভল্টে।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩। চুরির আগের দিন। নোটারবার্টোলো পকেটে করে মেয়েদের একটা হেয়ার স্পে নিয়ে চলে গেল ভল্টে। বাক্স খুলে নিজের কাজ সারার ফাঁকে যুগ্ম মোশন এবং হিট সেন্সরের উপরে চট করে স্প্রে করে দিল। ভিডিওটেপে সব রেকর্ড ছিল দেখে পুলিশ পরে এটা দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু গার্ড দীর্ঘদিন ধরে ওকে দেখে অভ্যস্ত বলে খেয়াল করেনি ব্যাপারটা।
জিনিসটা খুবই সহজ। যেহেতু সেন্সর শুধু নড়াচড়াই না, সেইসঙ্গে তাপমাত্রাও মনিটর করে, তাই কোনোভাবে দুটোর একটাকে আটকাতে পারলেই আর এলার্ম বাজবে না। হেয়ার স্প্রের তেলতেলে যে আস্তরণ, স্বাভাবিকভাবেই সেটা তাপের কুপরিবাহী। ফলে, সেন্সর তাপের তারতম্য সেভাবে বুঝতে পারবে না। কথা হলো, জিনিসটা কতক্ষণ টিকবে বা কারো চোখে পড়ে যাবে কিনা। এটুকু ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে নোটারবার্টোলো ভল্ট থেকে বেরিয়ে এল। বাকিটা সময়ের হাতে।
৬
মধ্যরাত। ডায়মণ্ড ডিস্ট্রিক্ট জুড়ে শুনশান নিরবতা। ভাড়া করা পিউগোট ৩০৭ গাড়িটা নিয়ে নোটারবার্টোলো একটা বাড়ির সামনে এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমে এল জিনিয়াস, চাবির রাজা বুড়ো, দানব এবং বন্ধু স্পিডি। সবার অমতে স্পিডিকে সাথে নিয়েছিল সে। জানতো না, ওর জন্যেই নিখুঁত এই হীরা চুরিটা কেঁচে যাবে।
বুড়ো একটা তালায় কারিকুরি করতেই সেটা খুলে গেল। হাতে ডাফল ব্যাগ নিয়ে সবাই চট করে ঢুকে পড়ল বাড়িটায়। বাড়ির পেছনে একটা প্রাইভেট বাগান। এটা একইসাথে ডায়মন্ড সেন্টারেরও পেছনের দিক। এই জায়গাটায় কোনো সার্ভেল্যান্স ক্যামেরা ছিল না। জিনিয়াস সবাইকে নিয়ে এলো বাগানটায়। আগে রেখে যাওয়া একটা মই দিয়ে উঠে পড়ল দোতলার বারান্দায়। একটা হিট সেন্সর ছিল বারান্দা মনিটরের জন্য। নিজের তৈরি পলিস্টারের একটা ঢাল ব্যবহার করছিল জিনিয়াস। ফলে, সেন্সর ওকে শনাক্ত করতে পারেনি। বারান্দায় উঠে সেন্সরের সামনে পলিস্টারের ঢালটা বসিয়ে দিল। তারপর সবাই নিরাপদে উঠে এলো বারান্দায়। জানালার এলার্ম অকেজো করে দিল জিনিয়াস। সেখান দিয়ে নেমে এলো সিঁড়িতে। এই সিঁড়ি সোজা নেমে গেছে মাটির নিচের সেই ভল্টে।
দরজার সামনে এসে সবাই স্থির হলো। কোথাও কোনো এলার্ম বাজছে না। ব্যাগ থেকে অ্যালুমিনিয়ামের একটা পাত বের করল জিনিয়াস। ম্যাগনেটিক প্লেট দুটোর ওপর ওটা লাগিয়ে টান দিলে পাতদুটো কিছুটা আলগা হয়ে গেল। জিনিয়াস আস্তে করে পাত দুটোর স্ক্রু খুলে নিল। চুম্বকক্ষেত্রটা এখনো আগের মতোই কাজ করছে, কিন্তু সেটা দরজার উপরে আর নজরদারী করছে না।
চাবির রাজা বুড়োকে আর নিজের কাজ দেখাতে হয়নি। ভিডিও থেকে দেখা গেছে, ভল্ট খোলার আগে গার্ড পাশের একটা ছোট্ট রুমে যেত। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মূল চাবিটাই আছে! তালায় চাবি ঢুকিয়ে ভিডিও থেকে যে কোডটা দেখা গিয়েছিল, সেটা চেপে দিতেই খুলে গেল ভল্টের দরজা। হিট সেন্সরে আগেই যেহেতু হেয়ার স্প্রের আবরণ দেয়া হয়েছিল, কাজেই ওটা আর বেজে ওঠেনি। কিন্তু অনেক বেশি মানুষ ঢুকলে যে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হবে, সেন্সর সেটা শনাক্ত করে ফেলতেও পারে। এদিকে লাইট সেন্সরও আছে। যা করার, আপাতত সেটা অন্ধকারেই করতে হবে।
মন্সটার চুপচাপ এগারো পা হেঁটে, এতোদিনের প্র্যাক্টিস করা নিয়মে রুমের মাঝামাঝি সিলিংয়ের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ দিতেই সেটা খুলে গেল। হিট সেন্সরের কিছুটা আগে তারটা আস্তে করে কেটে দিল সে। ওখানে নতুন একটা তার জুড়ে দিয়ে বাইপাস করে দিল সিগন্যাল। ফলে সেন্সর থেকে সিগন্যাল এলার্মে আর যাবে না। তারপর, লাইট সেন্সরের উপর টেপ দিয়ে ভালো করে মুড়ে দেয়া হলো। একইভাবে মুড়ে দেওয়া হলো সিসি ক্যামেরা। তারপরেও প্রয়োজনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানো ছাড়া বাতি জ্বালায়নি ওরা।
নোটারবার্টোলো গাড়িতে বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে অপেক্ষা করছে। মাটির নিচে ফোনের সিগন্যাল নেই। কিছুক্ষণ পরে স্পিডি নিচ থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ফোন করে জানাল, সব ঠিক আছে।
চাবির রাজা বুড়ো এবারে নিজের কাজ শুরু করলো। প্রতিটা বাক্স নিয়ে, নিজের হাতে বানানো একটা ছোট্ট ড্রিল ধাতব পাত দিয়ে তালার মধ্যে আটকে দিচ্ছিল। যতক্ষণ না তালাটা ভাঙ্গবে, ড্রিলটা মৃদু শব্দে নিজের কাজ করে যাবে। গড়ে তিন মিনিট লেগেছিল তালাগুলো ভাঙ্গতে।
ভোর ৫:৩০ এর মাঝে মোট ১০৯টা বাক্স ভাঙ্গল ওরা। বাক্সের ভেতরের ঝুলিগুলো উপুড় করে দিল ডাফল ব্যাগে। আরো পারতো, কিন্তু সময় ছিল না। ভোর হয়ে গেছে, এখন বের হতে হবে। ভর্তি ডাফল ব্যাগগুলো বয়ে নিতে হবে গাড়িতে। স্পিডি উপরে উঠে ফোনে জানাল, ওরা আসছে।
আগের পথ ধরেই বেরিয়ে এলো ওরা। সবগুলো ব্যাগ গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে এলো নোটারবার্টোলোর অ্যাপার্টম্যান্টে। জীবনের সবচেয়ে বড় চমকটা ওদের জন্য ওখানেই অপেক্ষা করছিল (অন্তত নোটারবার্টোলো তা-ই বলেছে)। ঝুলি খুলে ভেতরে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে ওরা আবিষ্কার করলো, বেশিরভাগ ঝুলিই ফাঁকা!
নোটারবার্টোলো মৃদু গলায় বলল, ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
৭
সেই ডিলারের সাথে চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা গেল না। হিসেব করে দেখা গেল, ১০০ মিলিয়নের জায়গায় ওদের কাছে আছে মাত্র ২০ মিলিয়ন।
নোটারবার্টোলো আর স্পিডি—দুই বন্ধু আলাদা হয়ে গেল। নিজেদের ভাগ বুঝে নিয়ে বাকিরা চলে গেল নিজেদের পথে। সব সাজ-সরঞ্জাম প্রমাণাদি ময়লার ব্যাগে ভরে গাড়ির পেছনের সিটে তুলে নিল দুই বন্ধু। তারপর ই-নাইনটিন হাইওয়ে ধরে গাড়ি ছোটাল। এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে চলে যাবে ফ্র্যান্সে। ওখানেই সব প্রমাণ পুড়িয়ে ফেলবে। এরমাঝেই স্পিডির প্যানিক অ্যাটাক হলো। বাধ্য হয়ে গাড়ি থামাতে হলো। কিছুটা ভেতরের দিকে একটা পরিত্যক্ত জায়গা দেখে স্পিডি বলল, এখানেই পুড়িয়ে ফেলা যাক।
বয়ে আনতে গিয়ে একটা ব্যগ ফেলে দিল স্পিডি। কিছু জিনিস ছড়িয়ে গেলেও যথাসম্ভব সব জড়ো করে পুড়িয়ে ফেলা হলো। যাক, কাজ শেষ!
৮
১৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সকাল। সকাল সকাল নিজের জায়গা দেখে যেতে এসে ভ্যান ক্যাম্প আবিষ্কার করলো, ময়লার পোড়া ব্যাগসহ অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে এমনিতেও লোকজন ময়লা ফেলে যায় মাঝে মাঝে। এ নিয়ে সে বেশ বিরক্ত। কিন্তু এভাবে কেউ পুড়িয়ে যায় না। একটু খেয়াল করে দেখা গেল, একটা খামসহ আরো বেশ কিছু জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভ্যান ক্যাম্প ফোন দিল পুলিশে। বলল, “অ্যান্টওয়ার্প ডায়মণ্ড সেন্টারের খাম পড়ে আছে আমার জায়গায়!”
মাঝরাতের আগেই আধ-ডজন গোয়েন্দা এবং পুলিশের দল হাজির হয়ে গেল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টুকটাক কিছু জিনিস ছাড়া সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলো ঘেঁটে একটা ছেঁড়া কাগজের অনেকগুলো টুকরো পাওয়া গেল। রশিদ। প্রায় অন্ধকারে চালানোর মতো লো-লাইট ভিডিও সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম কেনার রশিদ। ছেঁড়া কাগজের টুকরো জোড়া দিয়ে দেখা গেল, জিনিসটা কিনেছে লিওনার্দো নোটারবার্টোলো।
৯
চুরির ৪ দিন পর নোটারবার্টোলোর নামে ওয়ারেন্ট বের হলো। ততদিনে সে বাসায় ফিরে গেছে। ছেলে-নাতনির সাথে একদিন থেকে আবারো বেরিয়ে পড়েছে। পত্রিকায় কোনো খবর আসেনি। কাজেই, কেউ কিছু টের পেয়েছে বলে মনে হয় না। আগের সিমটা ফেলে দিয়েছিল সে। প্রতিদিন নিয়ম করে পত্রিকা আর টিভিতে চোখ রেখেছে। বেচারা জানতো না, শুক্রবার দিন ইতালির পুলিশ তার বাসা ঘিরে ফেলেছে। গোয়েন্দাদের শত হুমকির মুখেও ছেলে মার্কো দরজা খুলতে রাজি হয়নি। বাবাকে বারবার ফোন দিচ্ছিল সে। ফোন বন্ধ পাচ্ছিল।
সেদিনই নিজের মতো করে অ্যান্টওয়ার্প ডায়মণ্ড ডিস্ট্রিক্টে ফিরে এলো নোটারবার্টোলো। দেখতে এসেছে, সবকিছুর কী অবস্থা। ঝুঁকি ছিল, কিন্তু পত্রিকা বা টিভিতে খবরে কিচ্ছু বলেনি দেখে সে ভেবেছিল, পুলিশ ওর কথা জানে না। চুরির কথা নিশ্চয়ই জানাজানি হয়েছে। কিন্তু কে করেছে, সেটা ওরা এখনো বের করতে পারেনি। তাই এতবড় চুরির খবর এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। তার কারণও আছে। এই চুরির খবর জানাজানি হলে হীরার বাজারের অবস্থা ভয়াবহ অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। ওদিকে বীমা করা হীরার টাকা দিতে গিয়ে খবর হয়ে যাবে বীমা কোম্পানিগুলোর।
নিজের অ্যাপার্টমেন্টের মেইল ম্যানের কাছ থেকে মেইল বুঝে নিচ্ছিল নোটারবার্টোলো। এ সময়ই ডায়মণ্ড ডিস্ট্রিক্টের এক গার্ড ওকে দেখল। সাথে সাথে খবর চলে গেল পুলিশের কাছে। আধা ঘণ্টা পেরোনোর আগেই গ্রেপ্তার হলো সে। ভয়াবহ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেল তার বাসায়। তিনটে সিম পাওয়া গেল, যেগুলো দিয়ে তিন ইতালিয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এলিও ডি’ওনোরিও—জিনিয়াস, ফার্দিনান্দো ফিনোত্তো—মনস্টার এবং পিয়েত্রো তাভানো—স্পিডি। চাবির রাজা বুড়োকে আর পাওয়া যায়নি।
বেলজিয়ামের আদালতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় দশ বছরের জেল হলো ওদের। কিন্তু পুলিশ ২০ মিলিয়ন ডলারের হীরার বাইরে আর কিছু পায়নি। স্বীকারোক্তিও নিতে পারেনি।
১০
৮ জানুয়ারি, ২০০৯। নোটারবার্টোলো জোশুয়া ডেভিস নামে এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়। সেখান থেকেই জানা যায় চুরির বিস্তারিত। তার ভাষ্যমতে, পুরো জিনিসটাই ছিল বীমার টাকা মেরে দেওয়ার কৌশল। সেই ডিলার এবং তার সাথের অনেকে সেদিন ভল্ট থেকে আগেই হীরা সরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু চুরি হওয়ার পরে বীমা কোম্পানিকে ওরা বলেছে, ১০০ মিলিয়ন ডলারের হীরার পুরোটাই চুরি গেছে। ফলে, বীমা কোম্পানি তাদেরকে বীমার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে হীরাগুলোও তাদের হাতে রয়ে গেছে। দ্বিগুণ লাভ!
অথবা, নোটারবার্টোলোর হয়তো পুরোটাই চুরি করেছে। এবং ৮০ মিলিয়ন ডলারের হীরা ওদের কাছেই রয়ে গেছে।
সত্যিটা যা-ই হোক, সেটা এখন আর নিশ্চিত করে জানার উপায় নেই। শুধু শেক্সপিয়ারের কথাটা খুব মনে পড়ে যায়। ট্রুথ ইজ স্ট্র্যাঞ্জার দ্যান ফিকশন!