১৬৬৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর এস্টেট জেনারেলদের পক্ষ থেকে পরবর্তী বছরের জন্য তিমি শিকার বন্ধ করা হয়। পরের বছর পয়লা ফেব্রুয়ারির ঘোষণায় সাগরে সেই বছর মাছ ধরাও স্থগিত হয়ে যায়। এসবের উদ্দেশ্য ছিল সব লোকবল রণতরী নির্মাণ আর মেরামতে ব্যবহার করা। পূর্ণোদ্যমে সেই কাজ চলতে থাকে।
চতুর্দশ লুইয়ের সাথে জোট
দ্বিতীয় চার্লস যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ফরাসি রাজাকে স্বপক্ষে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের সাথে বিদ্যমান চুক্তি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় লুই রাজি হননি। ডাচরা এরপর উঠে-পড়ে লাগল লুইকে প্রত্যক্ষভাবে নিজেদের পক্ষে টেনে আনতে।
যদিও সামরিক চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স ডাচদের সাহায্য করতে বাধ্য, তদুপরি সরাসরি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সংঘাতে জড়ানোর মতো কিছু করতে লুই অনিচ্ছুক ছিলেন। ডি উইট চেষ্টা করতে থাকেন তাকে কীভাবে এই লড়াইয়ে জড়িয়ে ফেলা যায়। তার জানা ছিল- ফ্রান্স নেদারল্যান্ডসের সাথে মিলিতভাবে ইংল্যান্ডের সম্মুখিন হলে তার জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বহুগুনে।
ডি উইটের তদবির কাজে দিল। বিভিন্ন উপায়ে তিনি লুইকে বোঝাতে সক্ষম হন যে- ফ্রান্সের স্বার্থ রক্ষার্থে ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধে তার সমর্থন জরুরি। ফলে ২৬ জানুয়ারি, ১৬৬৬ সালে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। ৩০টি রণতরী আর আনুষঙ্গিক জাহাজ নিয়ে ফরাসি কমান্ডার বিউফোর্ট লুইয়ের নির্দেশে ভূমধ্যসাগরের দিকে যাত্রায় প্রস্তুত হলেন।
কাগজে-কলমে শক্তিশালী মনে হলেও আদতে এই বহর ছিল বাতিল আর নিম্নমানের জাহাজে ভর্তি। এদিকে ফরাসিদের দ্বারা যাতে ব্রিটিশ বাণিজ্যের ক্ষতি না হয় সেজন্য রয়্যাল নেভি থেকে স্যার জেরেমি স্মিথ রওনা হন। বিউফোর্ট কিন্তু তখনও বন্দর ত্যাগ করেননি।
ইংল্যান্ডের জানা ছিল না যে ফরাসি নৌশক্তি তখন ভয়ঙ্কর রকম দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে তারা ফ্রান্সকে সমকক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করছিল। মঙ্ক তখন ছিলেন ব্রিটিশ বহরের নেতৃত্বে। তিনি ফরাসি নৌশক্তি সম্পর্কে সঠিক খবর না জানায় সরাসরি ফ্রান্সের মোকাবেলা অনর্থক মনে করলেন। তার নজর ছিল ডাচদের উপর, এবং ইংলিশ চ্যানেলে তাদের আনাগোনা ব্রিটিশদের জন্য অধিক হুমকিস্বরূপ বিবেচনায় তিনি স্মিথকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করেন।
অনুরোধ গৃহীত হলে স্মিথের বহর ভূমধ্যসাগর ত্যাগ করল। এই সুযোগে বিউফোর্ট খোলা সাগরে বেরিয়ে লিসবনের উপকূল অবধি চলে আসেন। ইংল্যান্ডে বসে দ্বিতীয় চার্লস ধরে নিলেন বিউফোর্ট ডাচ নৌবহরের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছেন, যদিও বাস্তবে সেরকম কোনো আদেশ তার উপর ছিল না।
চার্লস যুবরাজ রুপার্টের অধীনে ২০টি জাহাজ মঙ্কের বহর থেকে সরিয়ে পাঠালেন ইংলিশ চ্যানেলের ওয়াইট দ্বীপের দিকে, সেখানে ফরাসিদের দেখা গেছে বলে খবর ছিল। ফলে ব্রিটিশ মূল বহরের শক্তি কিন্তু কিছুটা কমে গেল।
চার দিনের সংঘাত (Four Days’ Battle)
পয়লা জুন, ১৬৬৬।
টেক্সেল থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো ডাচ নৌবহর। ডাচ নৌ ইতিহাসবিদ জেরার্ড ব্র্যান্ডটের মতে এই বহরে ছিল ৮৫টি রণতরী, ৪,৬১৫টি কামান, আর নাবিক ও সেনা মিলিয়ে প্রায় ২২,০০০ লোক। অন্যান্য ঐতিহাসিক জাহাজের সংখ্যা ৯১-১০০ এর মধ্যে বলে ধারণা করেন।
তিনটি স্কোয়াড্রনে ডাচ বহর ভাগ হয়। একটি স্কোয়াড্রনের নেতৃত্বে ডি রুইটার, সাথে ২৮টি জাহাজ। তার তিন প্রধান সহকারী অফিসারের দুজনের নাম ভ্যান নেস (A. van Nes এবং J. van Nes) আর অপরজন ডি লিফড (de Liefde)। দ্বিতীয় স্কোয়াড্রন পরিচালনা করছেন লেফটেন্যান্ট অ্যাডমিরাল এভারস্টজুন (প্রথম অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের অ্যাডমিরাল এভারস্টজুনের ভাই) আর ডি ভ্রাইস, তাদের সাথেও ২৮টি রণতরী। ট্রম্প আর ভ্যান হালস্ট্র সর্বশেষ স্কোয়াড্রনের দায়িত্বে।
ব্রিটিশ বহরে ৬০টির মতো জাহাজ নিয়ে মঙ্ক ফ্ল্যান্ডার্সের উপকূলের দিকে যাত্রা করলেন। অতি আত্মবিশ্বাসী মঙ্ক প্রথম অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের মতো এবারও ডাচদের সহজেই শায়েস্তা করা যাবে বলেই ধরে নিয়েছিলেন, সেজন্য যুবরাজ রুপার্টের অনুপস্থিতিতে সমস্ত কৃতিত্ব একাই হাসিল করতে ডি রুইটারের খোঁজ লাগালেন তিনি।
১০ জুন ফরাসি উপকূলে ডানকার্কের কাছে এসে স্থির হলেন ডি রুইটার। মঙ্কের আবির্ভাব তার অজানা ছিল না, এই পথ ধরেই যেতে হবে তাদের। সুতরাং মঙ্কের সাথে ফয়সালা এখানেই করে ফেলা যায়।
কিছুটা বাঁকা সারিতে সজ্জিত হলো ডাচ নৌবহর। সারির সম্মুখভাগ, যাকে নৌযুদ্ধের পরিভাষায় বলা হয় ভ্যান, তা ছিল উত্তরে এভারস্টজুন আর ডি ভ্রাইসের অধীনে। ডি রুইটারের স্কোয়াড্রন মধ্যভাগ বা সেন্টার তৈরি করেছিল, তাদের অবস্থান ছিল পশ্চিমমুখী। ট্রম্প ডি রুইটারের দক্ষিণ দিক বরাবর সারির পশ্চাৎঅংশ বা রিয়ার হিসেবে অবস্থান নেন। তবে ট্রম্পের বহর কিছুটা দূরে মূল বাহিনী থেকে একটু বিচ্ছিন্ন থেকে যায়, ফলে ডাচ সারির এই অংশ ছিল তুলনামূলকভাবে দুর্বল। সবাই নোঙর ফেলে অপেক্ষা করতে থাকে ব্রিটিশদের আগমনের।
১১ জুন মঙ্ক দেখা পেলেন ডাচদের। ওয়েদার গেজ ছিল তার দিকে। দূরবিন দিয়ে দেখে তিনি ট্রম্পের দিকে ডাচ সারির দুর্বলতা সনাক্ত করতে পারেন। অতর্কিতে সেদিকে আঘাত হেনে ডাচদের ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার মানসে দ্রুত পাল তুলে ছুটলেন তিনি, ফলে অন্যান্য জাহাজগুলো কিছুটা পেছনে পড়ে যায়।
মঙ্ককে দ্রুত আসতে দেখে ট্রম্প অনুধাবন করলেন নোঙর তোলার মতো সময় হাতে নেই, ফলে নোঙরের দড়ি কেটে দিয়ে তিনিও মঙ্কের দিকে অগ্রসর হন। ডাচ সারির অন্য জাহাজগুলোও দ্রুত শত্রুর মোকাবেলা করতে নোঙরের দড়ি কেটে দেয়।
বেলা এগারোটার দিকে মঙ্ক আর ট্রম্পের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়ে গেল। মঙ্কের অন্যান্য জাহাজ পৌঁছে গেলে ডি রুইটার ট্রম্পের সহায়তায় অগ্রসর হন। ডাচদের গোলাবর্ষণে ব্রিটিশ জাহাজের প্রচুর ক্ষতি হতে থাকে, তবে তারাও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যায়।
কয়েকটি ব্রিটিশ জাহাজ মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ডাচরা সেগুলোর উপর হামলে পড়ে। ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার উইলিয়াম বার্কলের জাহাজসহ আরো তিনটি রণতরী এরকম ঘেরাও হয়ে যায়। ডাচ সেনারা তার জাহাজে লাফিয়ে পড়লে হাতাহাতি মারামারি বেধে গেল।আত্মসমর্পণের আহ্বান অগ্রাহ্য করে লড়াই করে নিহত হন বার্কলে।
অন্ধকার নেমে আসতে থাকলেও গোলাগুলি চলতে থাকে। সেই সময় স্যার জন হারম্যানের জাহাজ আটকে যায় ডাচ সারির ভেতর। ডাচদের পাঠানো পর পর দুটি ফায়ারশিপে জাহাজে আগুন ধরে গেলেও হারম্যান অটল, কিছুতেই জাহাজ ত্যাগ করবেন না তিনি। খোলা তরবারি হাতে নাবিকদের চিৎকার করে নির্দেশ দিয়ে গেলেন তিনি। তার উৎসাহে সবাই আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তৃতীয় আরেকটি ফায়ারশিপ আসতে থাকলে সেটিকে গোলা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়।
অন্ধকারের ভেতরেই এরপর এভারস্টজুন এগিয়ে এলেন। তিনি হারম্যানকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। হারম্যান জোরের সাথে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কামান দাগার নির্দেশ দিলেন। ব্রিটিশ তোপে এভারস্টজুনসহ বেশ কয়েকজন অফিসার নিহত হন। হারম্যান এরপর তার জাহাজ নিয়ে ব্রিটিশ ব্যুহে ফিরে এলেন। তার সাথের ৩০০ লোকের মধ্যে বেঁচে ছিল মাত্র ৪০ জন। তার জাহাজও এত খারাপভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল যে তাকে ফিরে যেতে হলো বন্দরে।
রাত হয়ে গেলে সবাই বিরতি নেয়। ব্রিটিশরা প্রথম দিনে তিনটি জাহাজ হারিয়েছিল, তবে তারা দাবি করে- ডাচদের দুটি রণতরীও ধ্বংস হয়ে যায়। পরদিন সকাল ছয়টায় ডি রুইটার তার অ্যাডমিরালদের নিয়ে স্বল্প সময় কৌশল নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। আগের দিন ট্রম্পের কার্যক্রমে তিনি কিছুটা বিরক্ত ছিলেন। ট্রম্প নিজেদের সারি বজায় না রেখে একাই মঙ্কের মোকাবেলায় এগিয়ে যাওয়া ছিল ডাচ রণকৌশলের বিপরীত। তবে ট্রম্পকে সরাসরি তিনি কিছু বললেন না।
একই দিন ডাচদের ১২-১৬টি নতুন রণতরী মূল বহরের সাথে এসে যোগ দিল। ব্রিটিশ নথি অনুযায়ী ডাচদের কাছে ছিল ৮৮টি জাহাজ, মঙ্কের হাতে তার অর্ধেক রণতরী। লড়াই শুরু হলে শান্ত সাগরের কারণে দুই পক্ষেরই গোলাবর্ষণ আরো লক্ষ্যভেদী হয়ে ওঠে। যুদ্ধে অচলাবস্থা চলছে দেখে ট্রম্প আবারো হঠকারী এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন। নিজের কয়েকটি জাহাজ নিয়ে ব্রিটিশ সারির ভ্যান অংশের পাশ থেকে আক্রমণ করতে তিনি এগিয়ে যান। ডি রুইটার যখন তাকে দেখতে পেলেন তখন ট্রম্প বেশ খানিকটা দূরে সরে গেছেন। ডি রুইটার সাথে সাথেই অনুধাবন করলেন মূল বহর থেকে আলাদা হয়ে ট্রম্প কীরকম ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছেন। দ্রুত তিনি ট্রম্পের সাহায্যে চললেন।
এদিকে মঙ্কের বহর গোলা দেগে ট্রম্প আর তার জাহাজগুলোকে নাকাল করে দেয়। ভ্যান হালস্ট্র মারা যান, চারটি জাহাজ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল। মঙ্কের ইচ্ছা ছিল ডি রুইটার যদি ট্রম্পের সাহায্যে এগিয়ে আসতে থাকেন তবে তাকে ঘায়েল করা। তবে ডাচ জাহাজের সংখ্যাধিক্যে আর ডি রুইটারের সমরকুশলতায় তার এই পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখল না। সেদিনের লড়াইও অমীমাংসিতভাবে শেষ হলো।
ডাচরা ক্ষতিগ্রস্ত চারটি জাহাজ টেক্সেলে ফেরত পাঠায়। ব্রিটিশদের তিনটি জাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেগুলো মঙ্কের আদেশে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তিনি বুঝতে পারলেন তার খর্বশক্তির বাহিনী ডি রুইটারের মোকাবেলায় সমর্থ নয়। তিনি ব্রিটিশ উপকূলের দিকে পিছিয়ে যেতে আরম্ভ করেন। উদ্দেশ্য রুপার্টের বহরের সাথে যোগ দেয়া। ডাচরা একটু দূর থেকে তাকে অনুসরণ করতে থাকে।
তৃতীয় দিনে ধাওয়া চলতে থাকে। মঙ্ক তার আঘাতপ্রাপ্ত জাহাজগুলোকে বহরের সামনে রেখেছিলেন, আর ১৬-২৮টি রণতরী, যেগুলো তখনো মোটামুটি অক্ষত, সেগুলো ছিল পেছনে ডাচদের দিকে। স্যার জর্জ আয়েস্কুর রয়্যাল প্রিন্স ছিল অক্ষত রণতরী, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি তীরের কাছে সরে গেলে অগভীর পানিতে আটকে যায়। ডাচরা ফায়ারশিপ প্রেরণ করলে আয়েস্কু বাধ্য হলেন ট্রম্পের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। ডি রুইটার এরপর রয়্যাল প্রিন্স পুড়িয়ে দেন, যাতে ব্রিটিশরা এই জাহাজ ব্যবহার করতে না পারে।
১৩ তারিখ সন্ধ্যায় রুপার্ট আর মঙ্কের বহর একত্রিত হলো। ১৪ তারিখ, যুদ্ধের চতুর্থ দিন ডাচরা ওয়েদার গেজ পেয়ে গেলেও সকাল ৮-৯ টার দিকে ব্রিটিশরাই আগে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। ব্রিটিশরা কয়েকবার ডাচ সারি ভেঙে ফেললেও প্রতিবারই ডি রুইটার সারি পুনর্গঠন করে ফেলেন। ফলে বিরক্ত মঙ্ক সমস্ত কৌশল ঝেড়ে ফেলে একেবারে সরাসরি ডাচদের দিকে ধেয়ে গেলেন। তাদের তুমুল আঘাতে ডাচ সারি আবার দু’টুকরো হয়ে গেল।
ডাচদের একাংশের হাবভাবে মঙ্ক ধরে নিলেন তারা পালাচ্ছে। ফলে তিনি তাড়া করলেন। কিন্তু এ ছিল ডি রুইটারের ফাঁদ, মঙ্ককে রুপার্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিছুদূর গিয়ে পলায়নরত জাহাজগুলি ঘুরে দাঁড়াল। গোলা মেরে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিল ব্রিটিশ জাহাজ।
অ্যাডমিরাল ক্রিস্টোফার মিংস ছিলেন ব্রিটিশ এক জাহাজের নেতৃত্বে। একটি গোলা তার শরীরে লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। কিন্তু কিছুতেই জায়গা ছেড়ে সরলেন না। ক্ষতস্থান হাত দিয়ে চেপে রেখেই আদেশ নির্দেশ দিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আরেকটি গোলা, তার গলায় লাগলে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে দেখা গেল মঙ্ক আর রুপার্টের হাতে অক্ষত কোনো জাহাজ নেই। এমন সময় কুয়াশাও পড়তে শুরু করলে দুই পক্ষই ক্ষান্ত দেয়। ব্রিটিশরা পিছিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ডাচরাও নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে মঙ্কের পিছু না নিয়ে ফিরে গেল অস্টেন্ড শহরের কাছে উইলিঙ্গেন বন্দরে। ব্রিটিশ নথিমতে, তাদের ৯-১০টি জাহাজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, হতাহত হয়েছিল ১,৭০০ জন, ২,০০০ নাবিক আর সৈনিক হয় বন্দি। বিপরীতে ডাচদের হতাহতের সংখ্যা ৫,০০০। ডাচ রেকর্ডে লিপিবদ্ধ হয় ৪-৫টি রণতরী হারানোর কথা। ৬টি ব্রিটিশ জাহাজ তারা দেশে নিয়ে যেতে পেরেছিল।
দুই পক্ষই যুদ্ধে নিজেদের জয়ী দাবি করে। ডি রুইটার দেশে ফিরে গেলে ফ্রান্সে ডাচ রাষ্ট্রদূত চতুর্দশ লুইয়ের কাছে বিজয়ের খবর পৌঁছে দেন। লুই এবং অন্যান্য রাজবর্গ অভিনন্দন প্রেরণ করেন। ৩০ জুন রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসবের দিন ঘোষিত হয়। ডাচরা মনে করছিল ব্রিটিশদের কোমর ভেঙে গেছে, এখন তারা বাধ্য হবে সন্ধির প্রস্তাব পাঠাতে। ওদিকে লন্ডনে বসে নৌ কর্মকর্তারা রাজার কাছে ডাচ বহরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে জাহির করতে থাকেন। ডাচ নৌবহর নিশ্চিহ্ন করা সময়ের ব্যাপার বলে তারা মত দেন।
লড়াইয়ের পূর্ণ চিত্র আস্তে আস্তে পরিস্ফুট হতে থাকলে দুই পক্ষই বুঝতে পারে আসলে সত্যিকারভাবে কেউই জয় দাবি করতে পারছে না। লড়াই অনেকটা অমীমাংসিত থেকে গেছে। ডাচরা যদি মঙ্ককে ১৪ তারিখের পর ধাওয়া করে যেত তাহলে হয়তো এই সংঘর্ষ চূড়ান্ত কোন পরিণতি পেত, কিন্তু নিজেদের ক্ষতির জন্য ডি রুইটারের পক্ষে তা করা সম্ভব ছিল না। ফলে নতুন লড়াইয়ের জন্য দুই নৌবাহিনী আটঘাট বাধতে শুরু করল।