হলি রোমান এম্পায়ারের পতন
প্রুশিয়া নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও অস্ট্রিয়া দ্বিতীয় কোয়ালিশনের যুদ্ধ শুরু করে। ফরাসি সেনাদলের নেতৃত্ব ততদিনে তুলে নিয়েছেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। তার হাতে একের পর এক পরাজয়ে দ্বিতীয় ফ্রান্সিস বাধ্য হন লুনভিল চুক্তির মাধ্যমে জার্মানিতে হলি রোমান এম্পেররের অবশিষ্ট ক্ষমতাও জলাঞ্জলি দিতে। রাইনল্যান্ডসহ সমস্ত জার্মান ভূখন্ড বের হয়ে যায় এম্পায়ার থেকে। রাজকীয় প্রতিনিধিদল ১৭ এপ্রিল ১৮০৩ সালে জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমের রিগেন্সবুর্গ শহরে একটি রিপোর্ট তৈরি করে পেশ করেন। সেই মোতাবেক এম্পায়ারের অন্তর্গত এলাকা ভাগাভাগি হয়ে যায় ফরাসি এবং জার্মান রাষ্ট্রগুলোর ভেতরে।
ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যবর্তী বাভারিয়া, ব্যাডেন এবং ভুর্তেমবার্গ বিশেষভাবে লাভবান হলো। ব্যাডেন পেল সবথেকে বড় পুরস্কার, ৪৪০ বর্গ কিলোমিটার ফ্রান্সকে দিয়ে তার প্রাপ্তি ছিল ৩,০০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি, যার পুরোটাই আগে ছিল হলি রোমান এম্পেররের অধীন। তৃতীয় ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের কপালও খুলে গেল। প্রুশিয়া ২,৬৪২ বর্গ কিলোমিটার আর ১,২৭,০০০ নাগরিক হারিয়ে বিনিময়ে পেল ১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা এবং নতুন প্রায় পাঁচ লাখ অধিবাসী। তাদের উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি ছিল হিল্ডাসাইম, পাডাবোর্ন, মুন্সটার, এরফুর্ট, এশফেল্ড, এসেন, ওয়েরডেন এবং কুয়েডলিং বার্গ অঞ্চল, সাথে পূর্বের হলি রোমান এম্পায়ারের রাজকীয় নগরী নর্ডহাউজেন, মুলহাউজেন আর গস্লার।
জার্মান রাষ্ট্রগুলো এম্পায়ারের আওতামুক্ত হয়ে গেলে ইলেক্টরদের দলে ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হ্রাস পায়। হলি রোমান এম্পায়ার ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের অন্যতম প্রতীক, যার উদ্দেশ্যই ছিল ক্যাথলিসিজমের ঝান্ডা বহন করা। কিন্তু জার্মান ভূখণ্ডের পুনর্গঠনের পর তার কাঠামো এবং উদ্দেশ্য দুই-ই হুমকি মুখে পড়ে। দ্বিতীয় ফ্রান্সিস অনুধাবন করলেন হলি রোমান এম্পায়ারের দিন ফুরিয়ে এসেছে। তিনি ১৮০৪ সাল থেকে হলি রোমান এম্পেরর পরিচয়ের বদলে নিজেকে অস্ট্রিয়ার বংশানুক্রমিক সম্রাট (hereditary Emperor of Austria) ঘোষণা করেন।
১৮০৫ সালে তিনি তৃতীয় কোয়ালিশনের সংঘাতে আবার নেপোলিয়নের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। এবারো নেপোলিয়ন তাকে নাকানি চুবানি খাওয়ালেন। ১২ জুলাই, ১৮০৬ সালে অ্যাক্ট অফ জার্মান কনফেডারেশন স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জার্মানিতে হলি রোমান এম্পায়ারের সমস্ত দাবি পরিত্যাগ করা হলো। আনুষ্ঠানিকভাবে হলি রোমান এম্পায়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ৬ আগস্ট, ১৮০৬ সালে, ভিয়েনাতে। হাবসবুর্গ সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস নামে অস্ট্রিয়া ধরে রাখলেন। ইউরোপিয়ান শক্তিগুলোর কাছে তখন হলি রোমান এম্পেরর ছিল একটি মেয়াদোত্তীর্ণ ধারণা, তারা তাই এর বিলুপ্তি নিয়ে মাথা ঘামালো না।
প্রুশিয়ার রাজা- রানী
নেপোলিয়নের উত্থানের সময়ের প্রুশিয়ান রাজা তৃতীয় ফ্রেডেরিক উইলিয়াম জন্মেছিলেন ১৭৭০ সালের ৩রা আগস্ট, পটসড্যামে। তরুণ বয়সে বাবার অবহেলা তাকে হীনম্মন্যতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল, যা আজীবনই তাকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। ১৭৯৩ সালের মার্চে প্রুশিয়াতে এক অনুষ্ঠানে তার সাথে দেখা হয় রাজকন্যা লুইসা (Louisa of Mecklenburg-Strelitz) এবং তার ছোট বোন ফ্রেডেরিকার। লুইসা ছিলেন অখ্যাত এক জার্মান গ্র্যান্ড ডাচি ম্যাক্লেনবার্গ-স্ট্রেলিৎজের গ্র্যান্ড ডিউক এবং তার স্ত্রী হেসে-ডার্মাস্টাডের ফ্রিডরিকার মেয়ে। তাদের পরিবার অভিজাত হলেও হনজোলার্ন রাজবংশের মতো সম্পদশালী ছিল না। ফলে লুইসা ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের তুলনায় দরিদ্রভাবেই বেড়ে উঠেছিলেন। কিন্তু লুইসাকে তরুণ রাজপুত্রের মনে ধরে, ২৪ ডিসেম্বর বার্লিনে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ছোট বোন ফ্রেডেরিকাকে সঁপে দেয়া হলো ফ্রেডেরিকের ভাই লুইসের হাতে।
বাবার তুলনায় ফ্রেডেরিক উইলিয়াম চারিত্রিকভাবে শক্ত এবং নীতিবান ছিলেন। রাজা হয়েই তিনি সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধে মনোযোগী হন। অপ্রয়োজনীয় অনেক বিলাস পরিহার করে তিনি রাজপরিবারের খরচও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। কিন্তু শাসক হতে গেলে যে দৃঢ়তার প্রয়োজন তার মধ্যে সেটা ছিল না। ১৮০৩-১৫ সাল অবধি চলমান নেপোলিয়নিক যুদ্ধে পক্ষ বেছে নিতে তার দোদুল্যমান মনোভাব প্রুশিয়াকেই ধংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেবার জন্য তিনি মন্ত্রিদের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করতেন, যারা নিজেরাই ছিল অযোগ্য। পরবর্তীতে নেপোলিয়ন যখন প্রুশিয়ান বাহিনীকে চূর্ণ করে দেন তখনই কেবল তিনি সংস্কারের পথে হাঁটেন। তিনি আগে থেকেই এই কাজ করলে অনেক রক্তপাত হয়তো এড়ানো সম্ভব ছিল।
রাশিয়ান সম্রাট প্রথম আলেক্সান্ডারের সাথে ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের ছিল গভীর বন্ধুত্ব। তাদের দোস্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অনেক সময়ই প্রুশিয়ার রাজা অন্ধভাবে রাশান জারকে সমর্থন করতেন। তবে তার আলোর রেখা ছিলেন রানী লুইসা। দৃঢ়চেতা রানী প্রয়োজনে স্বামীকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতেন। একমাত্র তার প্রভাবেই মাঝে মাঝে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতেন। লুইসার অবস্থান সব সময়েই ছিল নেপোলিয়নের বিপক্ষে, এবং প্রুশিয়ার উপর নেপোলিয়নের থাবা বিস্তৃত হলে তার প্রেরণাতেই কার্ল স্টেইন এবং কার্ল ভন হার্ডেনবার্গের মতো বিচক্ষণ রাজনীতিবিদেরা ফরাসি দখলদারিত্বের সময় প্রুশিয়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচী হাতে নেন। তবে খুব বেশি সফল তারা হতে পারেননি, যার অন্যতম মূল কারণ ছিল ১৮১০ সালে রানীর মৃত্যু।
এরপর ফ্রেডেরিক উইলিয়াম আরো ত্রিশ বছর বেঁচেছিলেন এবং নেপোলিয়নের পরাজয়ের পর তিনি আবার প্রুশিয়ার হাল ধরেন। তবে সত্যিকার অর্থে যোগ্য একজন নেতা পেতে প্রুশিয়াকে আরো কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়। সেই নেতা ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ, হনজোলার্ন রাজপরিবারের কোনো শাসক নন।
বর্ধিষ্ণু রাষ্ট্র
তৃতীয় ফ্রেডেরিক উইলিয়াম শাসক হিসেবে দুর্বল হলেও তার সময় অর্থনৈতিকভাবে পিতার সময়কার দুরবস্থা থেকে প্রুশিয়া বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ১৭৯৫ সালে ফ্রান্সের সাথে শান্তিচুক্তির পর প্রায় এক দশক পর্যন্ত মোটামুটি শান্তি বিরাজ করে। এসময় পোল্যান্ডের অংশসহ প্রুশিয়ার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দশ মিলিয়ন, দুই লাখ সেনার একটি পেশাদার বাহিনীও নিয়োজিত ছিল রাষ্ট্রের সুরক্ষার কাজে। কোষাগারে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার জমা ছিল। বার্লিন ছিল দৃষ্টিনন্দন একটি শহর। ইউরোপিয়ান নগরগুলোর মধ্যে এখানেই সম্ভবত জীবনযাপনের খরচ ছিল সবথেকে কম।
রাজপরিবারের সাথে সাধারণ জনগণের দূরত্বও বেশি ছিল না । দরবারে রাজা- রানী সামাজিক শ্রেণীর কথা মাথায় না রেখে সবার সাথে সমানভাবে মেলামেশা করতেন। প্রুশিয়ান ঐতিহাসিকেরা দাবি করেন রানী লুইসা চলতেন সাধারণভাবে। পোশাকের পেছনে তার খরচ ছিল প্যারিস বা লন্ডনের কোনো অভিজাত নারীরর থেকেও অল্প। কিন্তু একটা ব্যাপারে সবাই একমত ছিলেন যে রানীর মানুষকে প্রভাবিত করবার অপূর্ব ক্ষমতা ছিল, যা নেপোলিয়ন নিজেও স্বীকার করেছিলেন।
তৃতীয় কোয়ালিশন
১৮০৪ সালে অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড এবং রাশিয়া ফ্রান্সের বিপক্ষে যুদ্ধের তোড়জোড় শুরু করলে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম ফরাসীদের তার নিরপেক্ষতার ব্যাপারে নিশ্চিত করেন। তিনি অঙ্গীকার করলেন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রুশিয়ান ভূখণ্ড তিনি ব্যবহার করতে দেবেন না। সেই বছরেই ফ্রান্সে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নেপোলিয়ন নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করলেন। তিনি উপাধি নিলেন এম্পেরর অফ দ্য ফ্রেঞ্চ। পরের বছর অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, সুইডেন, হ্যানোভার, সার্ডিনিয়া আর নেপলস মিলে তৃতীয় কোয়ালিশন গঠন করে। সম্মিলিত বাহিনীর সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় অর্ধ মিলিয়ন।
তৃতীয় কোয়ালিশন প্রুশিয়াকে জোটে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করল। কারণ প্রুশিয়ান ভূখণ্ড ব্যবহার করে সহজেই ফ্রান্সের দিকে আক্রমণ চালানো যাবে, আবার প্রয়োজনে পিছিয়েও আসা সম্ভব হবে। ফ্রেডেরিক উইলিয়াম আর তার মন্ত্রীপরিষদ দ্বিধায় পড়ে গেলেন। আসলে ফ্রান্সের সাথে তাদের গাঁটছড়া বাধার অন্যতম কারণ ছিল হ্যানোভারকে প্রুশিয়ার সাথে সংযুক্ত করার স্বপ্ন। হ্যানোভার ইংল্যান্ডের অধীনস্থ হওয়ায় প্রুশিয়ার একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না, চাই ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী মিত্রের সহযোগিতা। কোয়ালিশনের প্রস্তাব ফ্রান্সকে জানিয়ে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম বার্তা দিলেন যদি হ্যানোভার প্রুশিয়ার হাতে তুলে দিতে ফ্রান্স সহায়তা করে তাহলে তারা ফরাসি স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
ফ্রেডেরিকের এই কাজ যে প্রুশিয়াতেই সবার মনঃপুত হয়েছিল তা নয়। রানী লুইসা এবং রাজার ভাই লুইসসহ রাজনীতিবিদদের একাংশ ছিল নেপলিয়নের সাথে যুদ্ধের পক্ষপাতী। একটি ঘটনাতেই তাদের ফরাসি বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফরাসি এক সেনাদল ভুল করে প্রুশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল। ফরাসি সরকার দ্রুতই এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও প্রুশিয়ান যুদ্ধপন্থীরা একে দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত বলে সবাইকে খেপিয়ে তুলবার চেষ্টা করতে থাকে।
এই অবস্থায় রাশান জার প্রথম আলেক্সান্ডার বার্লিনে এলেন। ফ্রেডেরিক উইলিয়াম তাকে পরম বন্ধুস্থানীয় মনে করতেন। ফলে আলেক্সান্ডারের চাপাচাপি তিনি ফেলতে পারলেন না। ১৮০৫ সালের ৩রা নভেম্বর তিনি রাশিয়ার সাথে ফ্রান্সের বিপক্ষে চুক্তি করলেন। ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দুই রাষ্ট্রনেতা তাদের স্ব স্ব দেশের মধ্যে চিরকালীন বন্ধুত্বের শপথ নেন। ১৫ ডিসেম্বর তারা নির্ধারণ করলেন প্রুশিয়ার তরফ থেকে ফ্রান্সের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার জন্য। বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রুশিয়া ভিয়েনাতে প্রতিনিধি প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দিল। ফ্রান্সে বসে নেপোলিয়ন তাদের সাক্ষাতের খবর ঠিকই পেলেন।
ফরাসি বিজয় এবং প্রুশিয়ার ইউ টার্ন
যে পরিকল্পনা আলেক্সান্ডার আর ফ্রেডেরিক উইলিয়াম করেছিলেন ডিসেম্বরের আগেই সব পানিতে ভেসে গেল। যে মাসে তারা চুক্তি করলেন, ঠিক সেই মাসেই নেপোলিয়ন ঢুকে পড়লেন ভিয়েনাতে। অস্ট্রিয়ানরা অপেক্ষা করছিল আলেক্সান্ডারের জন্য। তিনি আসলে অস্ট্রো-রাশান সম্মিলিত বাহিনী বর্তমান চেক রিপাবলিকের অন্তর্গত অস্টারলিৎজ শহরের কাছে ১৮০৫ সালের ২ ডিসেম্বর ইতিহাসবিখ্যাত এক যুদ্ধে (Battle of Austerlitz) মুখোমুখি হয়। নেপোলিয়নের কাছে শোচনীয়ভাবে তারা পরাস্ত হলে ফ্রান্সিস প্রেসবার্গ চুক্তির মাধ্যমে ২৭ ডিসেম্বর এবারের মতো ফ্রান্সের সাথে সংঘাতে ক্ষান্ত দেন।
প্রচুর অস্ট্রিয়ান অঞ্চল ফ্রান্স নিয়ে যায়। জার্মানিতে নেপোলিয়ন তৈরি করেন ছোট ছোট অনেকগুলো রাষ্ট্রের সমষ্টি, বা কনফেডারেশন অফ রাইন যা সেদিক থেকে শত্রু আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি বাফার জোন হিসেবে কাজ করবে। এই কনফেডারেশনে অন্যতম ছিল বাভারিয়া, ভুর্তেমবার্গ, নাসাউ আর হেসে। এরা তার প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়ে তাকে ৬৩,০০০ সৈন্যের প্রতিশ্রুতি দিল। নেপোলিয়ন এই কনফেডারেশনের মাধ্যমে একীভূত জার্মানির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দেন।
প্রুশিয়ান এক মন্ত্রী, হগিৎজ তখন ভিয়েনাতেই। উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধের পরিকল্পনা। কিন্তু অস্ট্রিয়াকে রণেভঙ্গ দিতে দেখে তিনি বুঝলেন হাওয়া কোনদিকে বইছে। ধুরন্ধর হগিৎজ এই পরিস্থিতিকেও প্রুশিয়ার অনুকূলে নিয়ে আসার কথা ভাবলেন।
নেপোলিয়ন তখন ভিয়েনাতে। হগিৎজ অস্টারলিৎজের বিজয়ের পর সম্রাটের সাথে দেখা করে তাকে অভিনন্দন জানালেন। প্রুশিয়ার পক্ষ থেকে ফ্রান্সের সাথে হ্যানোভার নিয়ে চুক্তি করার বিষয়ে কথা বলার অনুমতি চাইলে ক্রোধান্বিত নেপোলিয়ন তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন আলেক্সান্ডারের সাথে ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের সাক্ষাৎ তার অজানা নেই। তিনি চাইলে এক মুহূর্তে প্রুশিয়াকে পায়ের তলায় পিষে দিতে পারেন।
হগিৎজ ভড়কে না গিয়ে কূটনৈতিকভাবে নেপোলিয়নের কথার জবাব দিয়ে গেলেন। অবশেষে সম্রাট তাকে শর্ত দিলেন প্রুশিয়া যদি প্রকাশ্যে নিরপেক্ষতা ত্যাগ করে ফরাসিদের সাথে যোগ দেয়, এবং দক্ষিণ দিকে কিছু দুর্গম এলাকা তাদের কাছে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়, তাহলে হ্যানোভার এবং জার্মানিতে ইংল্যান্ডের যত সম্পত্তি সবই প্রুশিয়ার হবে। তার আরেকটি শর্ত ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হার্ডেনবুর্গের অপসারণ, যাকে নেপোলিয়ন তীব্র ফরাসি-বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইংল্যান্ডে প্রুশিয়ার বিরুদ্ধে বিপুল জনমত তৈরি হয়। সাগরপথে ব্রিটিশ নৌবাহিনী প্রুশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করে।