আন্ডারকভার পুলিশ বা এজেন্টদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে থাকে ব্যাপক কৌতূহল। তাদের সাহস এবং বুদ্ধির চর্চা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্ডারকভার হিসেবে তাদের মতো কিংবা তাদের চেয়ে অধিকতর সাহসী আরেকদল লোক বৃহত্তর গোষ্ঠীর স্বার্থে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, তাদের কথা আমরা কতটুকু জানি?
পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট কোনো আন্ডারকভার মিশনে গেলে যখন সন্ত্রাসীদের ডেরায় অবস্থান করে, তখন যেকোনো মুহূর্তে পর্দা ফাঁস হয়ে গেলে তাকে উদ্ধার করতে চলে আসার জন্য অপেক্ষারত থাকে তার সহযোগীরা। কিন্তু এখানে যে দ্বিতীয় দলটির কথা বলা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে থাকে না কোনো ব্যাকআপ। ফেঁসে গেলেই নিশ্চিত মৃত্যুর কথা মাথায় রেখেই তারা পা বাড়ান অনিশ্চিত পথে। বলছিলাম আন্ডারকভার সাংবাদিকদের কথা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুরাদস্তুর গোয়েন্দা বনে যাওয়া ৫ সাংবাদিকের দুঃসাহসিক গল্প শোনানো যাক আজ।
১) মানসিক রোগী হয়ে মানসিক আশ্রমের পর্দা ফাঁস!
সাংবাদিকতার ইতিহাসে সবচেয়ে পরিচিত এবং উজ্জ্বল নারী সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মার্কিন সাংবাদিক এলিজাবেথ জেন কখরেন। অপরিচিত লাগছে নিশ্চয়ই? আপনি তার নাম শুনে থাকবেন অবশ্যই, কিন্তু তার প্রকৃত নামের সাথে পরিচয় আছে খুব কম সংখ্যক মানুষেরই। নেলি ব্লি ছদ্মনামেই তিনি বিশ্বজোড়া পরিচিত, আসল নাম কখরেন খুব কম মানুষেরই জানা। না জানলেও ক্ষতি নেই, নেলি ব্লি হিসেবেই ইতিহাসে অমর হয়েছেন তিনি। প্রকৃত সত্য উদঘাটনে তিনি যা করেছেন তা করতে পারতো খুব সংখ্যক সাংবাদিকই। আর ১৯ শতকের প্রেক্ষাপটে তার কাজ বিবেচনা করলে তো প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। কী করেছিলেন তিনি?
তখনকার সময় সাংবাদিকতায় নারীদের স্বীকৃতি ছিল না বললেই চলে। নারী বিষয়ক কোনো লেখা কিংবা নারী সাংবাদিকের কোনো লেখা কেবল নারী পাতার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। এমন এক সময়ে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন কখরেন। তিনি ছিলেন ভিন্ন ধাতুতে গড়া মানুষ, যার “কে কী বললো” নিয়ে কোনো পরোয়া ছিল না। সাংবাদিকতার খাতিরে তিনি বিশ্বের যত দেশে ভ্রমণ করেছেন, তা বিশ্বের অনেক বড় বড় সাংবাদিকও করতে পারেননি। তবে নারী সাংবাদিক হিসেবে তিনি তার এই স্বাধীনচেতা কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন না বলে তাকে লিখতে হতো ছদ্মনাম ‘নেলি ব্লি’ ব্যবহার করে। ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ৭২ ডেজ’ এর জন্য সুনাম থাকলেও তার আসল পরিচিতি দুঃসাহসিক আন্ডারকভার সাংবাদিকতার জন্যই।
২০ শতকের শুরুর দিকেই জোসেফ পুলিৎজারের ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন ব্লি। নিউ ইয়র্কের মানসিক আশ্রমগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে শুরু করেন গভীর অনুসন্ধান। আর এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা তাকে জীবনভরই আশ্রমে আটকে রাখতে পারতো! ‘ব্লাকওয়েল’স আইল্যান্ড’ নামক একটি মানসিক আশ্রমে তিনি নিজে পাগল হিসেবে ভর্তি হয়ে যান। ভর্তি হয়ে যাওয়াটাও ছিল নাটকীয়। এক বাড়িতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে কিছুদিন থাকার পরই হঠাৎ একদিন উন্মাদের মতো আচরণ শুরু করলেন তিনি। হাতের কাছে যা পেলেন তা-ই নিয়ে তেড়ে গেলেন প্রতিবেশীদের দিকে, আর ভাঙচুর করলেন অনেক কিছু। ব্যস, প্রতিবেশীরাই তাকে ব্লাকওয়েল আইল্যান্ডে পাঠিয়ে দিল। আর তাতেই তিনি সাক্ষী হন রোগীদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভয়ানক অমানবিক আচরণের।
১০ দিন ব্লাকওয়েলের নারকীয় পরিবেশে আটকে ছিলেন ব্লি। এই দশদিন তিনি ছোট অন্ধকার কক্ষে অর্ধদিবস আটক থেকেছেন, গোসল হিসেবে মাথার উপর সপাৎ করে ঢেলে দেয়া হয়েছে কেবল এক বালতি বরফ শীতল পানি, খাবার হিসেবে পেয়েছেন কাঠের মতো শক্ত রুটি আর পচা বাসি তরকারি। আর এসবের সাথে ছিল নার্সদের প্রহার! ভাগ্যক্রমে তার সহযোগীরা তার খোঁজ করতে করতে এই হাসপাতালে তাকে আবিষ্কার করেছিল। ছাড়া পেয়ে তিনি সেখানকার পরিবেশ বর্ণনা করতে গিয়ে জানান যে, সেখানে পাগল সুস্থ হবে কি, সুস্থ মানুষ বরং কিছুদিন থাকলে বিকারগ্রস্ত হয়ে যাবে! তার তৈরি করা রিপোর্ট প্রকাশের পর পুরো আমেরিকায় মানসিক চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।
২) মৃত্যু যখন হার মানে বীরোচিত সাংবাদিকতার কছে!
কথায় আছে, যেদিক থেকে সাধারণ মানুষ দৌড়ে পালায়, সাংবাদিক ঠিক সেদিকেই ছোটে সংবাদ সংগ্রহের আশায়। তাতে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে, সে চিন্তা মাথায় কাজ করে না। জনকল্যাণে সত্য উদঘাটন করতে গিয়ে প্রতিবছর মৃত্যবরণ করছেন কত সাংবাদিক তার হিসাব নেই, অথচ জীবন উৎসর্গ করে দেয়া এ পেশায় যোগ দিয়ে কতটুকু কৃতিত্ব পান তারা? এ প্রশ্নটি উঠেছিল দুঃসাহসিক ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক টিম লোপেসের মৃত্যুর পর। বছর বছর দুর্নীতির হার বাড়তে থাকা ব্রাজিলে সাংবাদিকতা পেশাটি এমনিতেই যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়বে যদি রিও ডি জেনেইরোর ফাভেলার মতো শহরে কেউ সাংবাদিকতা করতে চান। কেন্দ্রীয় সরকার আর পুলিশ প্রশাসনের ঝামেলা থেকে অনেকটাই মুক্ত থেকে এ শহরে মাদক স্বর্গ গড়ে তোলে মাদক ব্যবসায়ীরা। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্য ফাঁস করবার জন্যই ছদ্মবেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন লোপেস। লোপেসের এ সিদ্ধান্ত ছিল ঠিক যেন বাঘের গুহায় বসে বাঘের সাথে যুদ্ধ করার মতো।
ফাভেলার বস্তিতে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া লোপেস শৈশব থেকেই পথে পথে ঘুরে অভ্যস্ত ছিলেন। তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করবার জন্য রাস্তায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতে তার বেগ পেতে হলো না। শরীতে ৩/৪ টি ছোট গোপন ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন লাগিয়ে তিনি ফাভেলার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন কখনো নেশাগ্রস্ত উন্মাদের রূপে, কখনো মাদক বিক্রেতা হয়ে, কখনো মাদক ব্যবসায়ী রূপে আবার কখনো বা ছিচকে মাদক ক্রেতা হয়ে। কয়েকমাসের মধ্যে তথ্যপ্রমাণ সহ তার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যেখানে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসার সাথে অস্ত্র আর যৌনকর্মী পাচারের মতো ব্যাপারগুলো উঠে আসে। এর ধারাবাহিকতায় বড় করে অভিযান চালায় পুলিশ, ধরা পড়ে অসংখ্যা মাদক সন্ত্রাসী, প্রশংসিত হন লোপেস আর লাভ করেন পুরস্কার। কিন্তু এত বড় কাজ করার পর যে জিনিসটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল লোপেসের, সেই নিরাপত্তাই তিনি পাননি। রাস্তা থেকে হাজারো মানুষের সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা, পিশাচের মতো তার দেহ ক্ষতবিক্ষত করে, শেষে প্রাণবায়ু বের হবার পূর্বে আগুনে পুড়িয়ে দেয়!
৩) দুঃখীদের কাতারে গিয়ে দুঃখের গল্প উদ্ঘাটন
একজন সাংবাদিক তার পেশার প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল, তার কাজের প্রতি কতটা অনুগত, তা জার্মান সাংবাদিক গুন্টার ওয়ালরাফকে দেখলে বোঝা যায়। আন্ডারকভার সাংবাদিকদের মধ্যে যদি তাকে সফলতমও বলা হয় তাতে খুব একটা ভুল বলা হবে না। একবার নয়, দুবার নয়, ১৩ বার নিজেকে পাল্টে ফেলে, ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার খুঁটিনাটি বের করে এনেছেন এই সাংবাদিক। আর এসব করতে গিয়ে কখনো চুল দাড়ি ছেঁটেছেন, আবার কখনো লম্বা চুল রেখেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে মাথা ফাটিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ঘুরেছেন মাসের পর মাস, দাঁত কেটে এবং কালো করে ফোকলা হাসি হেসেছেন, এমনকি গায়ের রঙই বদলে ফেলেছেন! সেজন্যই তো জার্মানির অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর দেয়ালে সাঁটা থাকতো ‘ওয়ালরাফ ওয়ান্টেড’ পোস্টার। কিন্তু তাতে কী? বারবার রূপ বদলানো ওয়ালরাফকে কেউ ধরতে পেরেছে কখনো?
ওয়ালরাফের অনেকগুলো কাজের মধ্যে ১৯৮০’র দশকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং আফ্রিকা হতে জার্মানিতে কাজ করতে আসা অভিবাসীদের নিয়ে তার কাজ ছিল শ্রেষ্ঠ। অভিবাসীদের দুর্দশার স্বরূপ উদঘাটনে তিনি বেশভূষা পরিবর্তন করে, চোখে কালো কন্টাক্ট লেন্স লাগিয়ে আলী নাম নিয়ে একজন তুর্কি অভিবাসী বনে গেলেন। আর এরপর তিনি যা করলেন তা কল্পনার অতীত।
তার একটানা ৭২ ঘণ্টাও কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে, পান থেকে চুন খসলে প্রহার এবং বেতন কেটে নেয়ার ব্যাপার তো আছেই, এমনকি ধর্মান্তরিত হবার জন্য চাপও প্রয়োগ করা হয়েছে বহুবার। তবে তার বর্ণনায় সবচেয়ে কষ্টদায়ক ছিল যে ব্যাপারটি সেটি হচ্ছে, তিনি এসব করতে গিয়ে অনুভব করেছেন অভিবাসীদের জীবনের কোনো মূল্য দেয় না কর্তৃপক্ষ। জীবনের ঝুঁকি আছে এমন কাজে বেছে বেছে মুসলিম আর কৃষ্ণাঙ্গদেরই ব্যবহার করা হয়, দেয়া হয় না ন্যূনতম নিরাপত্তা। উপরন্তু বেতন বৈষম্য তো আছেই। তিনি কতদিন এসব সহ্য করেছেন তা জানেন কি? ২ বছর! এত দীর্ঘদিন কেন থাকতে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “যারা প্রকৃতই অভিবাসী হয়ে কাজ করতে এসেছে, তারা তো জীবনভরই এ কষ্ট করবে!”
৪) ক্রীড়াজগতের কলঙ্কমোচন
আইরিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডোনাল ম্যাকিনটায়ার তার সাংবাদিকতা জীবনে একাধিকবার গুলি খেয়েছেন, বেদম প্রহারের শিকার হয়েছেন, পথেঘাটে লাঞ্চিত হয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি পেয়ে বাসস্থান পরিবর্তন করেছেন ৫০ বারের অধিক! এতকিছুর পরও তিনি সাংবাদিকতা করে গেছেন, ছদ্মবেশে অনুসন্ধান চালিয়ে গেছেন, সফলভাবে অনেক অপকর্মের পর্দা খুলে দিয়েছেন। তবে তার কাজের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং সাহসীকতাপূর্ণ ছিল একটি ফুটবল হুলিগান গ্রুপের অপকর্ম উন্মোচন করা, যারা জড়িত ছিল নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।
প্রথমেই জানা দরকার ফুটবল হুলিগান কী। ইংরেজি শব্দ হুলিগান অর্থ ‘গুণ্ডা’। ফুটবল হুলিগান বলতে একদলে ‘ফুটবলীয় গুণ্ডা’কে বোঝায় যারা ফুটবল খেলা নিয়ে মারামারি করতে ভালোবাসে। এরাও সাধারণ দর্শকদের মতো মাঠে খেলা দেখতে যায় এবং সেখানে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের সাথে ঝগড়া বাঁধায়, ভাংচুর করে। এরকমই একটি হুলিগান গ্রুপের গুমোট ফাঁস করতে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় তাদের গ্রুপে যোগ দেন ম্যাকিনটায়ার। প্রায় ৬ মাস নানা কসরত করে উপেক্ষিত হতে হতে শেষতক লন্ডনের ‘চেলসি হেডহান্টারস’ নামক একটি ফুটবল হুলিগান গ্রুপে নাম লেখান তিনি। তাদের সাথে কাটান আরো ১ বছর। সব তথ্যপ্রমাণ জড়ো করতে গিয়ে তাকে মারামারি করতে হয়েছে, মার খেতে হয়েছে, অনিচ্ছাকৃত মাদক গ্রহণ করতে হয়েছে, এমনকি সমকামীর সাথে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে! শেষতক তিনি সফলভাবে চেলসি হেডহান্টারসের অপকর্ম জনসমক্ষে আনেন।
৫) তথ্য আহরণ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী আর আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর শত্রু!
স্প্যানিশ সাংবাদিক অ্যান্টনিও সালাস, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ, দুঃসাহসিক এবং সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক। আন্ডারকভার সাংবাদিক হিসেবে ডকুমেন্টারি তৈরি করতেন তিনি। ইটিএ গেরিলা সংগঠন এবং আফ্রিকান মানবপাচার বলয়ের উপর অবিশ্বাস্য সব তথ্যপ্রমাণ নিয়ে তৈরি করেন একটি ডকুমেন্টারি। আফ্রিকান অভিবাসীদের সাথে কাজ করতে গিয়ে ছদ্মবেশে নৌকায় পাড়ি দিয়েছেন ভূমধ্যসাগরও। কিন্তু এসব তার গৌণ সাফল্য। তার মুখ্য সাফল্য যে আরো ব্যাপক মাত্রার।
২০০৪ সালে স্প্যানিশ রাজধানী মাদ্রিদের রেলওয়েতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মারা যায় ১৯১ জন মানুষ। সালাস সিদ্ধান্ত নেন যে এই সন্ত্রাসী হামলার গোঁড়া তিনি উন্মোচন করবেন। কিন্তু এজন্য সাধারণ কোনো আন্ডারকভার সাংবাদিক হলে মৃত্যু নিশ্চিত, এ কথা তিনি ভালো করেই জানতেন। তাই নিজের অতীতটাকেই বদলে দেয়ার কাজ শুরু করেন তিনি। স্থানীয়দের বাচনভঙ্গিতে শিখে নেন আরবি ভাষা। ঘোষণা দিয়েই নিজেকে মুসলিম হিসেবে রূপান্তর করেন, যাতে করে জিহাদিরা তার অতীত নিয়ে সন্দেহ করতে না পারে। কোরআন-হাদীস শিখলেন খুব করে, সাথে রাখতে শুরু করলেন নিজের হাতে লেখা এক কপি কোরআন শরীফ। প্রাথমিকভাবে নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাঁড় করানো শেষ হয়ে গেলে তিনি দ্বিতীয় ধাপের কাজ, জিহাদিদের বিশ্বাস লাভের জন্য কাজ শুরু করলেন।
সালাস ব্যাপকভাবে জিহাদি কাগজপত্র ছাপাতে লাগলেন এবং সেগুলো প্রচার করতে লাগলেন। এসব করতে গিয়ে বহুবার পুলিশের জেরার সম্মুখীন হয়েছেন। এসব করতে করতে একসময় সফল হলেন তিনি। ইতিহাসের দুর্ধর্ষতম সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ‘কার্লোস দ্য জ্যাকেল’ যিনি কিনা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন, তার ছোটভাইয়ের সাথে সম্পর্ক গড়তে সক্ষম হন তিনি।
এভাবে করে তিনি জ্যাকেলের (যদিও জ্যাকেল তখন জেলে, কিন্তু তার রেখে যাওয়া সাম্রাজ্য তখনো অক্ষতই ছিল) সাম্রাজ্যের বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদ পর্যন্ত চলে যান। তাকে জ্যাকেলের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তার এই কাজে ছিল দ্বিমুখী মৃত্যু ঝুঁকি। একদিকে জিহাদিরা জানতে পারলে তার রক্ষা হতো না, অন্যদিকে পুরোপুরি জিহাদি হিসেবে নিযুক্ত হবার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে পড়লেও তার শেষরক্ষা হতো না। এভাবে হাতের মুঠোয় জীবন রেখে ৫ বছর জিহাদিদের সাথে জিহাদি হয়ে থেকে শেষপর্যন্ত সাফল্যের সাথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন সালাস। আর বই আকারে প্রকাশ করেন তার ভয়ানক সব অভিজ্ঞতা। সেগুলো স্প্যানিশ বেস্টসেলার হবার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ফিচার ছবি: bilderbay.de