ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধে আর্জেন্টিনা কেন ব্রিটেনের কাছে পরাজিত হয়েছিল?

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সংঘটিত আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সংঘটিত এই যুদ্ধটি ছিল উত্তর–ঔপনিবেশিক যুগে অতীতের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য একটি প্রাক্তন উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের (ব্রিটেন) প্রচেষ্টা এবং দক্ষিণ গোলার্ধের একটি রাষ্ট্রের (আর্জেন্টিনা) সরকার কর্তৃক একটি ভূমি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিরোধকে নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রচেষ্টার সম্মিলিত ফল।

১৯৮২ সালে সংঘটিত ৭৪ দিনের এই যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনা ব্রিটিশ–শাসিত ‘ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ’ এবং ‘দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ’ দখল করে নেয়, কিন্তু পরবর্তীতে ব্রিটেন অঞ্চলদ্বয় পুনর্দখল করে নেয় ও আর্জেন্টাইন সৈন্যরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি ব্রিটিশ–শাসিত দ্বীপপুঞ্জ, যেটির আয়তন ১২,২০০ বর্গ কি.মি.। দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দুইটি ব্রিটিশ–শাসিত ভূখণ্ড, যেগুলোর মোট আয়তন ৩,৯০৩ বর্গ কি.মি.। আর্জেন্টিনার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জগুলোকে আর্জেন্টিনা নিজস্ব ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে থাকে, এবং স্প্যানিশ ভাষায় দ্বীপগুলো ‘ইসলাস মালভিনাস’ নামে পরিচিত। ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড থেকে ফকল্যান্ড, দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচের দূরত্ব প্রায় ৮,০০০ মাইল।

এই ভূখণ্ড নিয়ে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যেকার বিরোধ প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। ১৭৬৪ সালে ফ্রান্স প্রথম ভূখণ্ডটিতে উপনিবেশ স্থাপন করে, এবং ১৭৬৫ সালে ব্রিটেনও সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৭৬৬ সালে স্পেনের সঙ্গে একটি সমঝোতা অনুযায়ী ফরাসিরা ভূখণ্ডটি ত্যাগ করে, এবং ১৭৭৪ সালের মধ্যে ব্রিটিশরাও সেখান থেকে চলে যায়। ১৮১১ সালে স্প্যানিশরা ভূখণ্ডটি ত্যাগ করে, এবং ১৮২০ সালে আর্জেন্টিনা (তদানীন্তন ‘রিও দে লা প্লাতার সংযুক্ত প্রদেশসমূহ’) ভূখণ্ডটির ওপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে।

১৮৩২ সালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বিরোধের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভূখণ্ডটি দখল করে নেয়, কিন্তু ১৮৩৩ সালে তারা সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার পর ভূখণ্ডটিতে স্বল্প সময়ের জন্য আর্জেন্টাইন সার্বভৌমত্ব পুনঃস্থাপিত হয়। কিন্তু একই বছরে ব্রিটেন ভূখণ্ডটি দখল করে নেয় এবং সেটিকে একটি ‘মুকুট উপনিবেশে’ (Crown Colony) পরিণত করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যগুলোর পতন ঘটে, এবং এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্রিটেনের সিংহভাগ উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু তারপরও বিশ্বের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের ওপর ব্রিটিশ কর্তৃত্ব বজায় থাকে। ফকল্যান্ড, দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ ছিল সেরকম ভূখণ্ড। সেসময় ভূখণ্ডটির সিংহভাগ অধিবাসী ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনকারীদের বংশধর, এবং তারা ব্রিটেনের অন্তর্ভুক্ত থাকতেই আগ্রহী ছিল। এ সময় আর্জেন্টিনা ভূখণ্ডটির ওপর তাদের দাবি অব্যাহত রাখে, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে উভয় পক্ষ কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধ সংক্রান্ত একটি মানচিত্র; Source: Wikimedia Commons

এ সময় আর্জেন্টিনায় তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনায় ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের কাঠামোয় পরিবর্তন আসে এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল লিওপোলদো গালতিয়েরির রাষ্ট্রপতিত্বে একটি নতুন সামরিক সরকার দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ সময় আর্জেন্টিনা তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি ছিল এবং আর্জেন্টিনা জুড়ে সরকারবিরোধীদের (বিশেষত বামপন্থীদের) ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চলছিল।

দেশটির জনসাধারণ ক্রমশ সামরিক শাসনের ওপর মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল। এমতাবস্থায় আর্জেন্টিনার সামরিক শাসকশ্রেণি জনসাধারণের মধ্যে দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করার মধ্য দিয়ে তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ফকল্যান্ড ও তার নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জগুলো আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অভিযানের সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন রোসারিও’ (Operation Rosario)।

১৯৮২ সালের ২ এপ্রিল আর্জেন্টিনা অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ফকল্যান্ড, দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দখল করে নেয়, কিন্তু ব্রিটেন ভূখণ্ডটি পুনর্দখলের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করে। ৮,০০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভূখণ্ডটি পুনর্দখলের জন্য অভিযান শুরু করে এবং জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অবশেষে ১৯৮২ সালের ১৪ জুন ফকল্যান্ডে অবস্থানরত আর্জেন্টাইন সৈন্যরা ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং এর মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। এখন পর্যন্ত ফকল্যান্ড, দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণাধীন, কিন্তু আর্জেন্টিনা ভূখণ্ডটির ওপর থেকে সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাহার করে নেয়নি।

ফকল্যান্ড যুদ্ধে ২৫৫ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত ও ৭৭৫ জন আহত হয়, এবং ১১৫ জন ব্রিটিশ সৈন্য আর্জেন্টাইনদের হাতে বন্দি হয়। অন্যদিকে, ৬৪৯ জন আর্জেন্টাইন সৈন্য নিহত ও ১,৬৫৭ জন আহত হয়, এবং ১১,৩১৩ জন আর্জেন্টাইন সৈন্য ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হয়। যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেন ২টি ডেস্ট্রয়ার, ২টি ফ্রিগেট, ১টি ল্যান্ডিং শিপ, ১টি ল্যান্ডিং ক্রাফট, ১টি কন্টেইনার শিপ, ২৪টি হেলিকপ্টার ও ১০টি জঙ্গি বিমান হারায়, এবং ১টি ব্রিটিশ বোমারু বিমানকে ব্রাজিলে অন্তরীণ করে রাখা হয়। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনা এই যুদ্ধের সময় ১টি ক্রুজার, ১টি সাবমেরিন, ৪টি কার্গো ভেসেল, ২টি প্যাট্রল বোট, ১টি সশস্ত্র ট্রলার, ২৫টি হেলিকপ্টার, ৩৫টি জঙ্গিবিমান, ২টি বোমারু বিমান, ৪টি মালবাহী বিমান, ২৫টি কাউন্টার–ইনসার্জেন্সি বিমান এবং ৯টি সশস্ত্র প্রশিক্ষণ বিমান হারায়। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে এই যুদ্ধে ব্রিটেনের তুলনায় আর্জেন্টিনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বেশি।

ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় ল্যাটিন আমেরিকার মান অনুযায়ী আর্জেন্টিনার সশস্ত্রবাহিনী তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ছিল। ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ রাষ্ট্র এই যুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে কূটনৈতিকভাবে সমর্থন করে। তদুপরি, যুদ্ধক্ষেত্র ছিল আর্জেন্টিনার সন্নিকটে, অন্যদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছানোর জন্য ব্রিটিশদেরকে ৮,০০০ মাইল পাড়ি দিতে হতো। যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশরা যুদ্ধক্ষেত্রের আকাশে পূর্ণ আধিপত্য (total air superiority) স্থাপন করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন বিজয় লাভ করে এবং আর্জেন্টিনা পরাজিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, আর্জেন্টিনা কেন এই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল? বস্তুত এই যুদ্ধে আর্জেন্টিনার পরাজিত হওয়ার নানাবিধ কারণ ছিল।

যুদ্ধের সময় আর্জেন্টাইন আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ‘এইচএমএস অ্যান্টিলোপ’; Source: Wikimedia Commons

প্রথমত, ফকল্যান্ড যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক লড়াইয়ে ব্রিটেন অধিকতর সাফল্য অর্জন করে। যুদ্ধ শুরুর পরবর্তী দিন অর্থাৎ ১৯৮২ সালের ৩ এপ্রিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ৫০২ নং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন এক্ষেত্রে ভোটদানে বিরত থাকে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আর্জেন্টিনাকে ফকল্যান্ড ও সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ড থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার এবং ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনা উভয়কে কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানায়। এর ফলে আর্জেন্টিনা কার্যত ‘আগ্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ফকল্যান্ডে ব্রিটেনের সামরিক অভিযান কার্যত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে বৈধতা লাভ করে।

তদুপরি, ‘কমনওয়েলথ অফ নেশনস’ এর রাষ্ট্রগুলোর সিংহভাগ সাধারণভাবে এই যুদ্ধে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে এবং কতিপয় কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র কার্যত এই যুদ্ধে ব্রিটেনকে সমর্থন করে। আর্জেন্টিনা এই যুদ্ধ আরম্ভ করায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা আর্জেন্টিনা থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়, এবং নিউজিল্যান্ড থেকে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়। অর্থাৎ, এই যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনা ‘ব্রিটিশ অ্যাংলো–স্যাক্সন বিশ্বে’র সক্রিয় বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। অনুরূপভাবে, ‘ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি’র অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোও এই যুদ্ধে আর্জেন্টিনার বিরোধিতা করে এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

দ্বিতীয়ত, ফকল্যান্ড যুদ্ধ শুরুর আগে আর্জেন্টিনার ডানপন্থী সামরিক সরকার ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র। বস্তুত আর্জেন্টাইন সামরিক সরকার দেশটির বামপন্থীদের বিরুদ্ধে যে দমননীতি পরিচালনা করছিল, সেটির পরিচালনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্জেন্টিনাকে কোনো প্রকার সহায়তা প্রদান করা থেকে বিরত থাকে, কারণ আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ব্রিটেনও ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতি ঘনিষ্ঠ মিত্র, এবং যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে আর্জেন্টিনার চেয়ে ব্রিটেনের ভূকৌশলগত গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। এজন্য প্রথমে মার্কিনিরা আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য মধ্যস্থতা করে, কিন্তু আর্জেন্টিনা শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে দৃঢ়ভাবে ব্রিটেনের পক্ষ অবলম্বন করে।

শুধু তাই নয়, মার্কিন নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা ছিল যে, যুদ্ধটি দীর্ঘস্থায়ী হলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়ন আর্জেন্টিনাকে সহায়তা প্রদান করতে শুরু করবে এবং এর ফলে আর্জেন্টিনা সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করতে আরম্ভ করে, যাতে যুদ্ধটি দ্রুত সমাপ্ত হয় এবং দক্ষিণ আমেরিকায় সোভিয়েত অনুপ্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এই উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনার কাছে অস্ত্র রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, কিন্তু ব্রিটেনকে ব্যাপকভাবে সামরিক সহায়তা প্রদান করতে শুরু করে। মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এই নীতির প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করে।

যুদ্ধের সময় দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ‘এইচএমএস ব্রোডসওয়ার্ড’ ও ‘এইচএমএস হারমিস’; Source: Wikimedia Commons

যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনকে ২০০টি ‘সাইডউইন্ডার’ এয়ার–টু–এয়ার মিসাইল, ৮টি ‘স্টিঙ্গার’ সারফেস–টু–এয়ার মিসাইল, ‘হার্পুন’ অ্যান্টি–শিপ মিসাইল ও মর্টার সরবরাহ করে। তদুপরি, ব্রিটিশ সামরিক অভিযান পরিচালনার সুবিধার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে ২০ লক্ষ গ্যালন জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সদর দপ্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ব্রিটিশ সাবমেরিনগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্রিটিশরা মার্কিন যোগাযোগ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। এমনকি, ব্রিটিশদের যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে মার্কিনিরা তাদেরকে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যও সরবরাহ করে, যদিও মার্কিনীরা সেসময় একথা অস্বীকার করেছিল।

এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রয়োজন হলে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীকে মার্কিন ট্যাঙ্কার বিমান থেকে জ্বালানি সরবরাহ করা হবে, যাতে করে ব্রিটিশরা ফকল্যান্ডে তাদের পূর্ণ বিমানশক্তি ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া মার্কিনিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেন যদি কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হারায়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে ব্রিটিশ–নির্মিত ‘সি হ্যারিয়ার’ বিমান বহনে সক্ষমে একটি ‘ইয়ো জিমা’ শ্রেণির উভচর অ্যাসল্ট শিপ প্রদান করবে এবং মার্কিন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা সামরিক কন্ট্র‍্যাক্টর হিসেবে সেই জাহাজটি পরিচালনা করবে। অবশ্য মার্কিনিদের এই দুইটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন হয়নি, কারণ এসবের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে, ফকল্যান্ড যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে তাদের মিত্র আর্জেন্টিনার বিরোধিতা করে।

তৃতীয়ত, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আর্জেন্টিনার অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী ছিল ফ্রান্স। স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট সামরিক সরঞ্জাম ও খুচরো যন্ত্রাংশের জন্য আর্জেন্টিনা ফ্রান্সের ওপর নির্ভরশীল ছিল। যুদ্ধ চলাকালে একটি ফরাসি অস্ত্র বিশেষজ্ঞ দল আর্জেন্টিনায় উপস্থিত ছিল, এবং কিছু কিছু সূত্রের দাবি অনুযায়ী, তারা যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনাকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিল। কিন্তু এদিকে যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে এবং যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনার নিকট অস্ত্র রপ্তানির ও আর্জেন্টিনাকে অন্য কোনো ধরনের সহায়তা প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে আর্জেন্টিনা বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হয়। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশদের যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে ফ্রান্স সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অবস্থিত ফরাসি নৌ ও বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের জন্য ব্রিটেনকে অনুমতি প্রদান করে।

যুদ্ধ চলাকালে ফরাসিরা ব্রিটিশ বৈমানিকদেরকে ‘অসদৃশ বিমান প্রশিক্ষণ’ (dissimilar aircraft training) প্রদান করে এবং এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ বৈমানিকরা আর্জেন্টাইন বিমানবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ফরাসি–নির্মিত বিমানগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ লাভ করে। তদুপরি, আর্জেন্টিনা যাতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ফরাসি–নির্মিত ‘Exocet’ অ্যান্টি–শিপ মিসাইল ক্রয় করতে না পারে, সেজন্য ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থা ব্রিটিশদের সহায়তা করে এবং আর্জেন্টাইনদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। সামগ্রিকভাবে, যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনার প্রতি ফ্রান্সের শত্রুভাবাপন্ন ভূমিকা যুদ্ধে আর্জেন্টিনার পরাজয়ে অবদান রাখে।

ফরাসি–নির্মিত আর্জেন্টাইন বিমানবাহিনী কর্তৃক নিক্ষিপ্ত ‘Exocet’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ জাহাজ ‘আরএফএ স্যার ট্রিস্ট্রাম’; Source: Wikimedia Commons

চতুর্থত, আর্জেন্টিনার প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিলি এই যুদ্ধে ব্রিটেনের পক্ষ অবলম্বন করে এবং আর্জেন্টিনার জন্য সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। আর্জেন্টিনা ও চিলির সীমান্তবর্তী বিগল চ্যানেলে অবস্থিত কতিপয় দ্বীপ নিয়ে রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে বিরোধ চলছিল এবং ১৯৭৮ সালে এই বিরোধের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার উপক্রম হয়েছিল। এজন্য ফকল্যান্ড যুদ্ধ চলাকালে চিলি ব্রিটেনকে সহায়তা করে। তারা আর্জেন্টাইন সশস্ত্রবাহিনী সম্পর্কে সংগৃহীত যাবতীয় তথ্য ব্রিটেনকে সরবরাহ করে এবং যুদ্ধ চলাকালে নিয়মিতভাবে আর্জেন্টাইন বিমানবাহিনীর গতিবিধি সংক্রান্ত তথ্য ব্রিটিশদের জানিয়ে দেয়।

তদুপরি, চিলির সঙ্গে বিরোধের কারণে ফকল্যান্ড যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ডে তার পূর্ণ সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেনি। এ সময় চিলিয়ান–আর্জেন্টাইন সীমান্ত বরাবর চিলি সৈন্য সমাবেশ করে রেখেছিল এবং আর্জেন্টাইন সরকার আশঙ্কা করছিল যে, ফকল্যান্ডে আর্জেন্টিনার ব্যস্ততার সুযোগে চিলি আর্জেন্টিনার পাতাগোনিয়া অঞ্চলে আক্রমণ চালাতে পারে।

বাস্তবিকই চিলি আর্জেন্টিনার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং ফকল্যান্ড যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিত। এজন্য সম্ভাব্য অতর্কিত চিলিয়ান আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আর্জেন্টাইন সরকার তাদের শ্রেষ্ঠ পার্বত্য রেজিমেন্টগুলোসহ অধিকাংশ সৈন্য চিলিয়ান–আর্জেন্টাইন সীমান্ত বরাবর মোতায়েন করে রাখতে বাধ্য হয়। ফলে আর্জেন্টিনা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাদের পরিপূর্ণ শক্তি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়।

পঞ্চমত, আর্জেন্টিনায় তরুণদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের নিয়ম বিদ্যমান ছিল, এবং এজন্য আর্জেন্টাইন সৈন্যদের সিংহভাগই ছিল অনভিজ্ঞ ও স্বল্পপ্রশিক্ষিত তরুণ। আর্জেন্টাইন সশস্ত্রবাহিনীর অফিসার কোরও ছিল তুলনামূলকভাবে কম দক্ষ। অন্যদিকে, ব্রিটিশ সৈন্যরা ছিল পেশাদার এবং তুলনামূলকভাবে সুপ্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ। ব্রিটিশ অফিসার কোরও ছিল তাদের আর্জেন্টাইন প্রতিপক্ষের তুলনায় বেশি দক্ষ। সেসময় ব্রিটিশ সৈন্যদেরকে তদানীন্তন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল, তাই তাদের গুণগত মান ছিল আর্জেন্টাইন সৈন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।

তদুপরি, ব্রিটিশরা এই যুদ্ধ চলাকালে ‘স্পেশাল এয়ার সার্ভিস’ (এসএএস) এবং মেরিন ও গ্রেনেডিয়ার ইউনিটদ্বয়সহ তাদের সবচেয়ে দক্ষ ইউনিটগুলোকে ব্যবহার করে। তাদেরকে মোকাবেলা করার মতো উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আর্জেন্টাইন কনস্ক্রিপ্ট (conscript) সৈন্যদের ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে আর্জেন্টাইন সৈন্যরা দুর্বল অবস্থানে ছিল।

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী স্ট্যানলেতে একদল বন্দি আর্জেন্টাইন সৈন্য; Source: Wikimedia Commons

ষষ্ঠত, যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টাইন সরকার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরিত সৈন্যদের পর্যাপ্ত রসদপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। এর ফলে আর্জেন্টাইন সৈন্যরা খাদ্য, যুদ্ধের উপযোগী পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রীর অভাবে ভুগছিল। যুদ্ধের সময় ফকল্যান্ডের আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত শীতল ও বৃষ্টিবহুল, কিন্তু এই পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য আর্জেন্টাইন সৈন্যদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক তাঁবু ও স্লিপিং ব্যাগ ছিল না। শুধু তাই নয়, স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে আর্জেন্টাইন সৈন্যদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ গুলি পৌঁছায়নি। এর ফলে আর্জেন্টাইন সৈন্যদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল সীমিত।

সপ্তমত, যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টাইন বিমানবাহিনী বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের আকাশে ব্রিটিশদের পূর্ণ আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। কিন্তু তাদের এই সাফল্য যুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে বিজয় এনে দিতে পারেনি। তাদের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ছিল সীমিত, ফকল্যান্ডে অবস্থিত বিমানঘাঁটিগুলো কার্যত তাদের জন্য ব্যবহারোপযোগী ছিল না, এবং আর্জেন্টিনার মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত নিকটতম বিমানঘাঁটিগুলো ছিল ফকল্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০ মাইল দূরে। এমতাবস্থায় যুদ্ধ চলাকালে আর্জেন্টিনার পক্ষে তাদের বিমানশক্তিকে পূর্ণরূপে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।

অষ্টমত, ফকল্যান্ড ও সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ড দখলের পর আর্জেন্টাইন সৈন্যরা সেখানে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। ব্রিটিশ নৌবহর অঞ্চলটিতে পৌঁছানোর পূর্বে তারা যতটুকু সময় পেয়েছিল, সেটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আর্জেন্টাইন নৌবাহিনী গুণগত ও সংখ্যাগত দিক থেকে ব্রিটিশ নৌবহরের সমকক্ষ ছিল না, এবং আর্জেন্টাইন বিমানবাহিনীর একার পক্ষে ব্রিটিশ নৌবহরকে কার্যকরভাবে বাধা দেয়া সম্ভব ছিল না। ফলে ব্রিটিশ নৌবহর যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছানোর পর ফকল্যান্ডে মোতায়েনকৃত আর্জেন্টাইন সৈন্যরা কার্যত আর্জেন্টিনার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশরা সহজেই তাদেরকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়।

যুদ্ধের পর ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী স্ট্যানলেতে পরিত্যক্ত আর্জেন্টাইন অস্ত্রশস্ত্র; Source: Wikimedia Commons

সর্বোপরি, আর্জেন্টিনার সামরিক সরকার যুদ্ধের আগে বেশকিছু ক্ষেত্রে গুরুতর গাফিলতির পরিচয় দেয়। যুদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সত্ত্বেও তারা আর্জেন্টাইন সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তোলেনি। বস্তুত যুদ্ধ শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আর্জেন্টাইন স্টাফ অফিসারদের যুদ্ধের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সৈন্যদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তোলা সম্ভব হয়নি। স্বভাবতই যুদ্ধ জয়ের জন্য একটি সশস্ত্রবাহিনীর যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন, সেটি আর্জেন্টাইন সশস্ত্রবাহিনীর ছিল না। 

আর্জেন্টাইন সামরিক সরকারের ধারণা ছিল, ফকল্যান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ব্রিটেন যুদ্ধ করবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ব্রিটেনকে তারা একটি ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। এই ভ্রান্ত ধারণা তাদেরকে যুদ্ধ শুরু করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে। এটি তাদের গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার পরিচায়ক, কারণ তারা ফকল্যান্ড সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত নীতি ও মনোভাব জানতে সক্ষম হয়নি। স্বভাবতই ব্রিটিশদের ফকল্যান্ড পুনর্দখলের সিদ্ধান্ত আর্জেন্টাইন সামরিক সরকারকে অপ্রস্তুত করে তোলে এবং তাদেরকে অনিবার্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়।

ফকল্যান্ড যুদ্ধে আর্জেন্টাইন পরাজয় আর্জেন্টিনার সামরিক সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। ১৯৮৩ সালে আর্জেন্টিনায় সামরিক শাসনের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ড ও তার সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডের ওপর নিজস্ব সার্বভৌমত্বের দাবি পরিত্যাগ করেনি, এবং ভবিষ্যতে এই ভূখণ্ড নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের মধ্যে নতুন করে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

Related Articles

Exit mobile version