১৯৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
অস্তগামী সূর্যের শেষ লালিমা ছড়িয়ে পড়ছে বসফরাসের আকাশে। ভূমধ্যসাগরের নিকটবর্তী শহর এফেসাস (বর্তমান তুরস্কের সেলসুক) থেকে সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন প্রাক্তন কার্থেজিনিয়ান জেনারেল হ্যানিবাল। এমন সময় তার দিকে এগিয়ে আসলেন এক রোমান। হ্যানিবাল সহজেই তাকে চিনতে পারলেন, সিপিও আফ্রিকানাস।
এই সেই সিপিও। ব্যাটল অফ যামাতে তাকে পরাস্ত করা রোমান সেনানায়ক। সেই যুদ্ধে পরাজয়ের পর রোমের কাছে আত্মসমর্পণ করে হ্যানিবালের জন্মভূমি কার্থেজ। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য রোমের কাছে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় তারা। তারপর থেকেই হ্যানিবাল স্বেচ্ছানির্বাসনে। এই মুহূর্তে তিনি কাজ করছিলেন অ্যান্টিওকাসের সামরিক পরামর্শদাতা হিসেবে।
কিন্তু সিপিও এখানে কেন? আলাপচারিতায় হ্যানিবাল জানতে পারলেন সিপিও এসেছেন রোমান প্রতিনিধিদলের সাথে। তৎকালীন সিরিয়ার শাসক তৃতীয় অ্যান্টিওকাস বসফরাস প্রণালী পার হয়ে এশিয়া মাইনরে তার প্রভুত্ব স্থাপনের চেষ্টা করছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এরপর গ্রিস দখল করে সেখান থেকে রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। রোমান সিনেটের মতিগতি ধারণা করতে তাই তিনি নিজের প্রতিনিধি সেখানে প্রেরণ করেছিলেন। তার জবাবে রোমান প্রতিনিধিদল এফেসাসে এসেছে এবং অপেক্ষা করছে অ্যান্টিওকাসের শহরে আসার জন্য।
বিভিন্ন আলাপ শেষে বিদায়ের প্রাক্কালে হঠাৎ করেই সিপিও জানতে চাইলেন, “আচ্ছা, আপনার মতে সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেল কে?” “অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেট”, কোনো দ্বিধা ছাড়াই হ্যানিবাল উত্তর দিলেন। সিপিওরও দ্বিমত ছিল না। “দ্বিতীয়?” এবার হ্যানিবালের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো পাইরাসের নাম। কারণও ব্যাখ্যা করলেন। পাইরাস শুধু নামজাদা সেনানায়কই নন, তিনিই প্রথম সমরকৌশলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেনাশিবির স্থাপন করার প্রচলন করেছিলেন যা তাকে বিপুল বিজয় এনে দিয়েছিল। রোমের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি এবং তার নাম থেকেই পাইরিক বিজয় কথার উৎপত্তি।
রাজা পাইরাস (৩১৯-২৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের কাজিন পাইরাসের (Pyrrhus) জন্ম মলোসিয়ান রাজবংশে, বাবা এইসিডেস ও মা ফিথিয়ার ঘরে। গ্রিসের উত্তর-পশ্চিমে কয়েকটি গোত্রের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এপিরাস নগরের শাসনকর্তা ছিলেন তিনি। বার বছর বয়সে পাইরাস প্রথম রাজা হন। কিন্তু ৩০৭/৬ থেকে ৩০২/৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত শাসনের পর এক অভ্যুত্থানে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। পরে মিশরের রাজা টলেমি ও সিরাকিউজের আগাথক্লেসের সাহায্যে ২৯৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি সিংহাসন পুনরুদ্ধারে সমর্থ হন। প্রথমে নিওপটলেমাসের সাথে যৌথভাবে ক্ষমতা ভাগাভাগি করলেও শীঘ্রই নিওপটলেমাসকে হত্যা করে নিজেকে তিনি একক রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের মৃত্যুর পর সংঘটিত রাজ্য ভাগাভাগির লড়াইতে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং বিয়েও করেছিলেন অ্যালেক্সান্ডারের এক সেনাপতি, মিশরের ফারাও টলেমির কন্যা অ্যান্টিগোনেকে।
দক্ষ যোদ্ধা ও কুশলী সমরবিদ হিসেবে পাইরাস যথেষ্ট নাম কুড়িয়েছিলেন। যেকোনো যুদ্ধে সেনাবাহিনীর সম্মুখ সারিতে থাকতেন তিনি এবং সাধারণ সৈনিকদের পাশাপাশি লড়াইয়ে অংশ নিতেন। অনেক সময়ই শত্রুবাহিনীর প্রধান যোদ্ধাদের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। সৈন্যবিন্যাস ও কৌশলগত সেনাছাউনি স্থাপনের ক্ষেত্রেও পাইরাসের ছিল অতুলনীয় দক্ষতা। তার দলে তিনি হস্তিবাহিনীর সন্নিবেশ করেছিলেন, এবং মেসিডোনিয়ান বিখ্যাত ফ্যালানক্স (Phalanx) ফরমেশনকে আরো উন্নতরুপে সাজিয়েছিলেন। তাকে গ্রিসের প্রধানতম রাজাদের একজন মনে করা হত। তার সুপ্ত বাসনা ছিল অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের মতো বিশ্বজয় করবেন, এবং এজন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ইতালির দিকে তার চোখ ছিল। কাজেই সেখানকার গ্রীক কলোনি থেকে যখন সাহায্যের আবেদন এসে পৌঁছাল, তখন পাইরাস তার সুযোগ দেখতে পেলেন।
ম্যাগনা গ্রেসিয়া/গ্রেট গ্রিস (MAGNA GRAECIA)
রোমের শৈশবকাল থেকেই গ্রিসের বিভিন্ন রাজ্যের উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা সিসিলি ও ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে এসে কলোনি স্থাপন করেছিল। এসমস্ত এলাকাতে তারা অনেক নগর পত্তন করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ট্যারেন্টাম, সাইবেরিস, ক্রোটন ও থুরি। এই এলাকা পরিচিতি পায় ম্যাগনা গ্রেসিয়া হিসাবে। মূলত গ্রীক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এসব নগর রাষ্ট্র ছিল হেলেনিস্টিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
সমুদ্র উপকূলীয় হবার কারণে তাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত দ্রুত। কিন্তু পারস্পরিক রেষারেষি এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এসব নগররাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা ক্রমে ক্রমে কমে আসে। তাই বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে তারা প্রায়শই দ্বারস্থ হত তাদের মূল গ্রীক রাজ্যের। সহায়তাকারী বাহিনীকে তারা রসদ ও সরঞ্জাম যোগান দিত এবং তাদের লোকবল বৃদ্ধি করতে ভাড়াটে যোদ্ধা বা মার্সেনারি ডেকে আনত।
রোম যখন ইতালির অন্যান্য অংশ নিজের প্রভাব-বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসছিল সেই সময় ম্যাগনা গ্রেসিয়ার প্রধান নগর রাষ্ট্র ছিল ট্যারেন্টাম। স্পার্টান কলোনি হিসেবে ৭০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ট্যারেন্টামে গ্রীকরা প্রথম বসতি স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতকের প্রথমভাগেও ট্যারেন্টাম ছিল সামরিকভাবে শক্তিশালী, কিন্তু চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যভাগ থেকেই বিভিন্ন কারণে তার সামরিক ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। ফলে নানা সময় নিজেদের সুরক্ষার জন্য তারা তাদের মূল গ্রীক রাজ্যের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করত। বিভিন্ন সময় স্পার্টার রাজা আর্কিডেমাস ও এপিরাসের শাসক অ্যালেক্সান্ডার ইতালিতে ট্যারেন্টামের স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছিলেন। তবে স্থলবাহিনীর দুর্বলতা থাকলেও ট্যারেন্টামের শক্তিশালী নৌবহর ছিল।
রোমের সাথে ট্যারেন্টামের বিবাদ
স্যামনাইট যুদ্ধের সময় থেকেই রোমের আগ্রাসি মানসিকতা ট্যারেন্টাম ও ম্যাগনা গ্রেসিয়ার অন্যান্য নগররাষ্ট্রের কাছে হুমকি হয়ে দেখা দেয়। রোমের সামরিক অভিযান তার ক্ষমতাকে খর্ব করে দিচ্ছে এই আশঙ্কায় ট্যারেন্টাম স্পার্টার কাছে সাহায্যের আবেদন জানালে জেনারেল ক্লিওমেনাস ৫,০০০ মার্সেনারি নিয়ে দক্ষিণ ইতালিতে পৌঁছেন। এখানে তিনি ২২,০০০ স্থানীয় যোদ্ধা তার বাহিনীতে যুক্ত করেন।
ক্লিওমেনাস অতর্কিতে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু এলাকা অধিকার করলেও রোম ও তাদের মিত্রবাহিনীর অভিযানে তিনি পিছু হটতে বাধ্য হন। ক্লিওমেনাসের পরাজয় সত্ত্বেও ট্যারেন্টাম ৩০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের সাথে একটি চুক্তি করতে সমর্থ হয়, যেখানে রোম ট্যারেন্টামের ক্ষমতাবলয়কে সম্মান করার অঙ্গীকার করে। দুই পক্ষই এক অপরের সমুদ্রসীমায় জাহাজ নিয়ে প্রবেশ না করার প্রতিজ্ঞা করে।তারপরেও রোম ও ট্যারেন্টামের মন কষাকষি বেড়েই চলছিল।
পাইরাসের অভিযানের প্রেক্ষাপট
লুসেনিয়ানরা থুরি আক্রমণ করলে তাই তারা রোমের কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠায়। রোম দেখতে পায় ম্যাগনা গ্রেসিয়াতে প্রবেশ করার এই তো সুবর্ণ সুযোগ। কেবলমাত্র ইতালির এই অঞ্চলই এখনও তাদের ক্ষমতার বাইরে আছে। সুতরাং তারা লুসেনিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং থুরিতে স্থাপন করে রোমান গ্যারিসন। আস্তে আস্তে তারা ম্যাগনা গ্রেসিয়ার গ্রীক নগর রাষ্ট্র, যেমন- ক্রোটন, লক্রি ও রেগিয়ামের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। নিজের এলাকাতে রোমের প্রভাব বৃদ্ধি ট্যারেন্টামের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। আগুনে ঘি পড়ে ২৮২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, যখন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দশটি রোমান জাহাজের এক বহর ট্যারেন্টামের সমুদ্র সীমানায় প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। ট্যারেন্টাম একে রোমের সাথে চুক্তির বরখেলাপ মনে করে সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করে তাদের প্রধানকে হত্যা করে বেশ কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়।
এখানেই শেষ নয়। তারা থুরিতে হামলা চালিয়ে সেখানে থাকা রোমান গ্যারিসন উচ্ছেদ করে। প্রতিবাদে রোমান সিনেটের দূত পস্টুমিয়াস ট্যারেন্টামের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করলে তারা তাকে অপমান করে এবং রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেয়।
রোম সেনাসমাবেশ শুরু করলে ট্যারেন্টাম আগের মতো মূল গ্রীক রাজ্যের সহায়তা নিতে মনস্থ করে। তাদের মূল গ্রীক রাজ্য, স্পার্টা ভিন্ন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় তারা এপিরাসের রাজা পাইরাসের কাছে আবেদন পাঠায়। তারা পাইরাসকে ট্যারেন্টাম, লুসেনিয়া, মেসাপিয়া ও স্যামনিয়ামের যৌথ বাহিনীর কর্তৃত্ব নিতে বলে। ট্যারেন্টাম উল্লেখ করে যে, তারা পাইরাসকে প্রয়োজনীয় অর্থ ও সরঞ্জামের পাশাপাশি ৩,৫০,০০০ পদাতিক ও ২০,০০০ অশ্বারোহী সেনার যোগান দেবে।
পাইরাস দুটি কারণে ট্যারেন্টামের আবেদনে সাড়া দেন। প্রথমত, ২৮২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কর্সিরা দখল করতে ট্যারেন্টাম তাকে নৌ সহায়তা দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, গ্রিসে পাইরাসের প্রভাব তখন ক্ষয়িষ্ণু। তিনি তাই পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাজ্য বিস্তারের আকাঙ্খা পোষণ করছিলেন। রোম এবং সামগ্রিকভাবে ইতালিবাসী সম্পর্কে তার খুব একটা উচ্চ ধারণা ছিল না, এবং এদেরকে তিনি বর্বর বলেই মনে করতেন। তাই রোমকে পদানত করা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না বলেই তার মনে হয়েছিল।
পাইরাসের আগমন
পাইরাস প্রথমে ৩,০০০ পদাতিক সেনাসহ তার একান্ত বিশ্বস্ত উপদেষ্টা সিনিয়াসকে পাঠালেন ট্যারেন্টামে। সিনিয়াস এসে স্থানীয় গ্রীকদের সংগঠিত করে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন। ইত্যবসরে পাইরাস অ্যাড্রিয়াটিক পার হয়ে তার মূল বাহিনী নিয়ে ২৮০, মতান্তরে ২৮১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দক্ষিণ ইতালিতে অবতরণ করলেন। তার বাহিনীতে ছিল ২০,০০০ পদাতিক, ৩,০০০ অশ্বারোহী, ২,০০০ ধনুর্বিদ, ৫০০ স্লিঙ্গার ও ২০টি হাতি। তিনি ট্যারেন্টামে সিনিয়াসের সাথে এসে যোগ দিলেন। এখানে তিনি স্থানীয় গ্রীকদের প্রশিক্ষণ আরো কঠোর করলেন। আমোদ-প্রমোদের সকল স্থান বন্ধ করে দেয়া হলো। শহরের স্থিতিশীলতা নষ্ট করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান জারি করা হলো।
এদিকে রোমানরা বসে ছিল না। কন্সাল ল্যাভেনিয়াসের অধীনে রোমান বাহিনী রোম থেকে যাত্রা শুরু করেছে এই খবর পেয়ে পাইরাস তাদেরকে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। যদিও তিনি প্রতিশ্রুত বিশাল স্থানীয় বাহিনীর খুবই সামান্য অংশ পেয়েছিলেন, তথাপি নিজের মূল বাহিনীর উপর তার বিশ্বাস ছিল।
পাইরাস উপকূল ধরে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হলেন এবং হেরাক্লিয়ার কাছে সিরিস নদীর তীরে শিবির ফেললেন। নদীর অপর পারে রোমান বাহিনী অবস্থান নিল। নদী তীরবর্তী সমতলভূমি পাইরাসের সেনাদলের ফ্যালানক্স বিন্যাসের জন্য উপযুক্ত ছিল। উপরন্তু রোমান লিজিয়নের বিরুদ্ধে ফ্যালানক্স সারিবদ্ধভাবে অগ্রসর হলে তাদের মধ্যে যে ফাঁকা অংশ তৈরি হবে তা ভরাট করতে পাইরাস স্থানীয় গ্রীক যোদ্ধাদের নিযুক্ত করেন যারা ছিল হালকা অস্ত্রে সজ্জিত।
ব্যাটল অফ হেরাক্লিয়া (২৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
মিত্রদের কাছ থেকে আরো সেনা সাহায্যের আশায় পাইরাস অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার মনোভাব বুঝতে পেরে ল্যাভিনিয়াস রোমান বাহিনী নিয়ে নদী অতিক্রম করে আক্রমণ করেন। প্রচন্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। পাইরাস নিজে তার অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি যখন লড়াই করছিলেন, তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বর্ম দেখে এক রোমান অশ্বারোহী ওপ্লাক্স তাকে আক্রমণ করে। একটুর জন্য পাইরাস বেঁচে যান। এ ঘটনার পর নিজের বর্ম এক সহকারীর সাথে বিনিময় করেন তিনি। তবে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেননি।
এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো রোমান সেনারা গ্রীক ফ্যালানক্সের মুখোমুখি হয়। পাইরাসের পদাতিক সেনাদের জমাট আক্রমণ সত্ত্বেও তারা নিজেদের অবস্থানে অটল ছিল। কিন্তু ব্যবধান গড়ে দেয় হস্তিবাহিনী। রোমানরা এর আগে কখনোই যুদ্ধক্ষেত্রে হাতির মোকাবেলা করেনি। পাইরাসের হাতির ধাক্কায় তাদের অশ্বারোহী বাহিনী এলোমেলো হয়ে গেলে রোমান পদাতিক ব্যুহ ভেঙে পড়ে। তারপরেও রোমানরা নিরাপদে পিছু হটে যেতে সক্ষম হয়।
বিজয়ী হলেও পাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ভয়াবহ। ডাইনসিয়াসের বর্ণনায়, ১৫,০০০ রোমানের বিপরীতে পাইরাস হারান তার ১৩,০০০ সেনা। অন্যদিকে হায়ারোনিমাসের লেখায় পাওয়া যায় ৭,০০০ রোমানের বিপরীতে ৪০,০০ গ্রীক সেনার হতাহতের কথা। তবে দুই ঐতিহাসিকই একমত ছিলেন যে, পাইরাসের বাহিনীর হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল তার মূল বাহিনীর অভিজ্ঞ সেনা এবং অনেক অফিসার।
এই বিদেশ বিভূঁইতে অভিজ্ঞ সেনা হারানোর ক্ষতি পোষানোর ক্ষমতা পাইরাসের ছিল না। রোমের সেই অসুবিধা নেই। এটা তাদের নিজস্ব অঞ্চল, এবং তাদের মিত্ররা রোমকে চুক্তি মোতাবেক সরঞ্জাম ও যোদ্ধা সরবরাহ করে যাচ্ছিল। পাইরাসের বিরুদ্ধে আরেকটি বাহিনী গঠন করা রোমের জন্য কঠিন ছিল না। তদুপরি যুদ্ধে পরাজিত হলেও রোম এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছিল, যা তারা পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে কাজে লাগায়। এটা ছিল রোমের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। তাদের সবচেয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীরাই ছিল তাদের সবথেকে বড় সুহৃদ। কারণ তাদের থেকে শিক্ষা নিয়েই রোম একপর্যায়ে তাদেরকে পরাজিত করেছিল এবং সেই কৌশলই অন্যদের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিল।
সন্ধির প্রস্তাব
ব্যাটল অফ হেরাক্লিয়ার পর ল্যাটিনদের সম্পর্কে পাইরাসের ধারণা পরিবর্তিত হয়। তিনি বুঝতে পারছিলেন তার সীমিত সেনাবাহিনী নিয়ে রোম দখল করা সম্ভব না। গ্রীক যোদ্ধাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব ছিল এবং ট্যারেন্টামের প্রতিশ্রুত বিশাল বাহিনীর কোনো নাম-নিশানা তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না। কাজেই তিনি তার জয়কে পুঁজি করে রোমের সাথে শান্তিচুক্তি করতে সিনিয়াসকে প্রেরণ করলেন।
সিনিয়াস রোমে এসে প্রথমে প্রভাবশালী সিনেটরদের সাথে আলাদা আলাদাভাবে দেখা করেন। প্রত্যেককে তিনি প্রচুর উপঢৌকন দেন। এরপর তিনি সিনেটে দাঁড়িয়ে পাইরাসের প্রস্তাব পেশ করেন। রোমানরা ট্যারেন্টামের এলাকায় অনুপ্রবেশ থেকে বিরত থাকবে এই অঙ্গীকারের বিপরীতে পাইরাস তাদের ইতালির যেসব অঞ্চল এখনো তাদের অধিকৃত নয় সেগুলো দখল করতে সামরিক সহায়তার আশ্বাস দেন। এছাড়াও সিনেট চুক্তি অনুমোদন করলে সকল রোমান যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। পাইরাসের শর্ত ছিল যথেষ্ট নমনীয় এবং রোমের জন্য বেশ সুবিধাজনক। তাই অনেক সিনেটর সন্ধির অনুকূলে ছিলেন।
এমন পরিস্থিতে সিনেটে প্রবেশ করেন বয়োবৃদ্ধ অন্ধ সিনেটর অ্যাপিয়াস ক্লডিয়াস সিকাস, যার নামে নামকরণ করা হয়েছিলো অ্যাপিয়ান রাস্তার (Appian Way)। তিনি সিনেটরদের মনোভাব বুঝতে পেরে কঠিন ভাষায় তাদের মনে করিয়ে দিলেন যে একটি পরাজয়ের পরেই যদি রোমান সিনেট শত্রুর সাথে চুক্তি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে অন্যসব শত্রু তাদের দুর্বল ধরে নেবে। কাজেই পাইরাস ফিরে গেলেও রোমের প্রতিপক্ষ যারা রোমান সেনাদের ভয়ে চুপ আছে তারা বিদ্রোহ করে বসবে। সিনেট তার যুক্তি বুঝতে পারে। তারা সিনিয়াসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পাইরাসকে অবিলম্বে ইতালি ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে জানিয়ে দেয়।
মতান্তরে অনেক ঐতিহাসিক বলে থাকেন, রোমান সিনেট যখন চুক্তি সই করতে যাচ্ছিল তখন কার্থেজের নৌবহর রোমের কাছে এসে পৌঁছে এবং পাইরাসের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শর্তে মৈত্রীচুক্তির প্রস্তাব দেয়, কারণ তারাও পাইরাসকে সিসিলিতে তাদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে হুমকি মনে করছিল। কার্থেজের সহযোগিতার আশ্বাসে সিনেট পাইরাসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে।
ব্যর্থমনোরথে সিনিয়াস ফিরে এলেও রোমানদের আভিজাত্য তাকে মুগ্ধ করেছিল বলে রোমান ঐতিহাসিকরা দাবী করেন ।“সিনেট এক রাজপরিষদ,” পাইরাসকে জানালেন তিনি, “আর রোম হলো এক পবিত্র মন্দির”।
পাইরাস এবার রোমের দিকে অগ্রসর হয়ে শহরের আঠার মাইলের মধ্যে চলে এলেন। কিন্তু তার সাথে রোমের মতো দুর্ভেদ্য নগরী আক্রমণ করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক সেনা ও উপকরণ ছিল না। তদুপরি গ্রীকদের থেকে তিনি এমন কোনো সাহায্য পাচ্ছিলেন না যা তাকে রোমে বিজয়ে সহায়তা করবে। এদিকে শীতও এগিয়ে আসছিল। সবকিছু বিবেচনা করে পাইরাস ফিরে গেলেন ট্যারেন্টামে।
গাইয়াস ফ্যাব্রিকাসের প্রচেষ্টা
রোমান যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির জন্য দেনদরবার করতে রোমান অভিজাত গাইয়াস ফ্যাব্রিকাস ট্যারেন্টামে পাইরাসের সাথে দেখা করেন। সাহসী ও সৎ বলে তার সুনাম ছিল। পাইরাস তাকে অনেক প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানতে চেয়েও ব্যর্থ হন। শেষে পাইরাস ফ্যাব্রিকাসকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করলেন।একটি বিরাট পরদার পেছনে হাতি লুকিয়ে রেখে তিনি ফ্যাব্রিকাসকে আমন্ত্রণ জানালেন পর্দা সরিয়ে পেছনে দেখার জন্য। ফ্যাব্রিকাস যে-ই পর্দা সরালেন অমনি বিশাল হাতি বেরিয়ে এল। হাতির দুই দাঁতের মাঝে দাঁড়িয়েও ফ্যাব্রিকাস ভয়ের কোনো লক্ষণ প্রদর্শন করলেন না। পাইরাস তার সাহসিকতায় বিস্মিত হয়েছিলেন।
ব্যাটল অফ অস্কালাম (২৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
খরস্রোতা এক নদীর ধারে ঘন বনে ছাওয়া এলাকাতে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলো। রোমান বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কন্সাল পাব্লিয়াস সাল্পিসিয়াস স্যাভেরিয়ো এবং পাব্লিয়াস ডেসিয়াস মাস। স্থানটি রুক্ষ ও অসমতল এবং চারদিকে গাছপালা থাকার কারণে প্রথমদিন হস্তিবাহিনী দিয়ে পাইরাস সুবিধা করে উঠতে পারলেন না। হাতির জন্য রোমানরাও কৌশল অবলম্বন করেছিল। তারা কাঠের ওয়াগন তৈরি করে সেখান থেকে হাতির চোখ লক্ষ্য করে গ্র্যাপনেল ছুঁড়ে দেয়। কিংবদন্তি আছে যে, কন্সাল ডেসিয়াস মাস এদিন তার বাবা ও দাদার মতো যুদ্ধে রোমানদের জয়ের লক্ষে আত্মাহুতি দেন। প্রথম দিনের যুদ্ধ শেষ হলো অমীমাংসিতভাবে।
দ্বিতীয় দিন পাইরাস তার বাহিনীকে নদী থেকে দূরে নিয়ে সমতলভূমিতে সাজালেন যেখানে তিনি ফ্যালানক্সের পুরো ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারবেন। এবার তার পদাতিক সেনারা রোমান ব্যুহ ভেদ করতে সমর্থ হলো। পাইরাস তার হস্তিবাহিনীকে কাজে নামালেন এবং রোমান সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো।
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিতে গিয়ে পাইরাস দেখলেন, এবারও তার বাহিনীর বহু অভিজ্ঞ সেনা ও অফিসার মারা গেছে। বলা হয়, তিনি হাহাকার করে বলে উঠেছিলেন, “আর একটা যুদ্ধের পর তো আমার কোনো সেনাবাহিনীই থাকবে না”। এখান থেকেই উৎপত্তি পাইরিক ওয়ার কথার (Pyrrhic War-বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত মূল্যহীন জয়)।
পাইরাসের সিসিলি অভিযান
রোমের সাথে লড়াই এতটা কঠিন হবে পাইরাস চিন্তা করেননি। তিনি ক্রমেই তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছিলেন এবং দ্রুত সাফল্য পাওয়া যাবে এমন কিছু খুঁজছিলেন। এমন সময় সিরাকিউজ থেকে তার কাছে সিসিলিকে কার্থেজের হাত থেকে মুক্ত করার আবেদন জানান হলো। সিরাকিউজের একনায়ক আগাথক্লেস একসময় তাকে সাহায্য করেছিলেন, এবং অ্যান্টিগোনে মারা যাওয়ার পর পাইরাস আগাথক্লেসের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। আগাথক্লেস অনেক আগেই মারা গেলেও তার জামাতা হিসাবে পাইরাসের ছেলে ছিল সিরাকিউজের সিংহাসনের দাবিদার। কাজেই পাইরাস তাদের সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। নিজের অধিকাংশ সেনা ইতালিতে রেখে ট্যারেন্টাম ও গ্রীক মিত্রদের নাখোশ করে ৮,০০০ সেনা নিয়ে তিনি পাড়ি দিলেন সিসিলি।
দুই বছরের মধ্যে পাইরাস সিসিলির বেশিরভাগ অঞ্চল থেকে কার্থেজকে উৎখাত করেন। অবশিষ্টরা আশ্রয় নেয় সিসিলির উত্তর-পশ্চিমে লিলিবিয়াম শহরে।
ব্যাটল অফ লিলিবিয়াম (২৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
লিলিবিয়ামের অবস্থান ছিল সমুদ্রতীরে। দুর্গ পরিবেষ্টিত লিলিবিয়ামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল চমৎকার এবং বন্দর থাকার কারণে তারা সাগরপথে রসদপত্র পরিবহন করতে পারত। এসব কারণে লিলিবিয়াম দখল করা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। পাইরাস তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।
কার্থেজ প্রথমে সন্ধির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মিত্রদের প্ররোচনায় পাইরাস তাতে রাজি হননি। তার দাবী ছিল কার্থেজ সম্পূর্ণভাবে ইতালি থেকে চলে যাবে। তারা পাইরাসের দাবী মানতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি লিলিবিয়াম অবরোধ করলেন। কিন্তু শহর জয় করার কোনো রাস্তাই দেখতে পেলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি পরিকল্পনা করলেন জাহাজে করে সমুদ্রপথে শহর আক্রমণ করার। কিন্তু এরই মধ্যে তার কিছু হঠকারী আচরণে গ্রীক মিত্ররা বিরক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে চলে গেলে তিনি দুই মাস পর অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হন। কিংবদন্তী বলে, যখন পাইরাস সিসিলি ত্যাগ করছিলেন তখন জাহাজ থেকে শেষবারের মতো সেদিকে তাকান। “আহা, কীএক উর্বর ভূমি আমি রেখে যাচ্ছি রোম ও কার্থেজের সংঘাতের জন্য,” ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি।
সিসিলি থেকে সিরাকিউজে ফিরে পাইরাস জানতে পারলেন, তার অনুপস্থিতিতে রোমানরা দক্ষিণ ইতালিতে বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশ করেছে এবং তার মিত্রদের পরাজিত করেছে। কাজেই তিনি ট্যারেন্টামে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তার শতাধিক জাহাজের বহর নিয়ে মেসিনা প্রণালীতে প্রবেশ করলে অতর্কিতে কার্থেজ ও তাদের নতুন মিত্র রোমান নৌবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। পাইরাসের প্রায় ৭০টি জাহাজ ডুবে যায়। অবশিষ্ট জাহাজগুলো নিয়ে তিনি ধুঁকতে ধুঁকতে ট্যারেন্টামে এসে নামলেন।
ব্যাটল অফ বেনেভেন্টাম (২৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
রোমান সেনাবাহিনীর এক ভাগ অবস্থান নেয় লুসেনিয়াতে এবং এক ভাগ স্যামনিয়ামে। এই দুই ভাগ একত্রিত যাতে না হতে পারে সেজন্য পাইরাস তার সেনাদলের একাংশকে লুসেনিয়া পাঠিয়ে দিলেন। নিজের মূল বাহিনী আর মিত্র গ্রীকদের সেনাদল মিলে প্রায় ৮০,০০০ যোদ্ধা সাথে নিয়ে পাইরাস এরপর স্যামনিয়ামের দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে কন্সাল ম্যানিয়াস কিউরিয়াস দেন্তেতাস বেনেভেন্টাম শহরের কাছে অ্যারুসাইন প্লেইনে ঘাঁটি স্থাপন করেছিলন।
পাইরাস রোমান বাহিনীকে চমকে দেয়ার জন্যে রাতভরে মার্চ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরো রাস্তাই ছিল অত্যন্ত দুর্গম ও ঘাস এবং গাছগাছালিতে ভরা। এর মধ্য দিয়ে পথ করে নিতে সেনাদের অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। ফলে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
ভোরের আলো ফুটে উঠছে এই সময় পাইরাসের সেনারা রোমান ক্যাম্পের কাছে এসে পৌঁছায়। দেন্তেতাস তড়িৎ ব্যবস্থা নিলেন। তার যোদ্ধারা পাইরাসের অগ্রগামী দলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। হস্তিবাহিনী নিয়েও পাইরাস সুবিধা করতে পারছিলেন না। তারপরেও পদাতিক ফ্যালানক্সের অবিরাম ধাক্কায় এবং হাতির আক্রমণে একসময় দেন্তেতাস রোমান ফ্রন্টলাইনে ভেঙে পড়ার লক্ষণ দেখতে পান। সাথে সাথে তিনি তার রিজার্ভ বাহিনী মাঠে নামিয়ে দেন। তারা বর্শা মেরে ও আগুনের তীর ছুঁড়ে হাতিগুলোকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিল এবং অগ্রভাগের সেনাদের সাথে মিলে তাদের শক্তিশালী করলো।
রোমান বাহিনী এবার পাল্টা আক্রমণ করলে পাইরাসের প্রতিরক্ষাব্যুহ ভেঙে পড়ে। প্রায় ৩৩,০০০ হতাহত সেনা রেখে পাইরাস পালিয়ে যান। রোমান বাহিনী জয়ী হয়।
পরবর্তী ঘটনা
ব্যাটল অফ বেনেভেন্টাম পর পাইরাস ইতালিতে আর সুবিধা করতে পারেননি। তিনি মূল বাহিনীর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে এপিরাসে ফিরে যান। এরপর থেকে গ্রিসেই তিনি বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে থাকেন। ২৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আর্গোস শহরের ভেতরে এক যুদ্ধ চলাকালে ছাদ থেকে এক মহিলার ছুঁড়ে মারা টাইলসের আঘাতে পাইরাস ঘোড়া থেকে পড়ে যান। তিনি নিজেকে সামলে উঠার আগেই প্রতিপক্ষের এক মার্সেনারি তার মাথা কেটে ফেলে। তার মৃত্যুর সাথে সাথেই গ্রিসের রাজনীতিতে এপিরাস ও মলোসিয়ান রাজবংশের প্রভাব শেষ হয়ে যায়।
এদিকে পাইরাসের ইতালি ত্যাগের পর রোমানরা দক্ষিণ ইতালি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সমস্ত গ্রীক কলোনি রোমান আধিপত্য স্বীকার করে নেয়। ইতালি দখল করে রোম এবার নজর ফেরায় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দিকে। সেখানে অপেক্ষা করছিল তাদের পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী, কার্থেজ।