হিটলার – আমি তো ইহুদীদের হত্যা করতে চাই না, তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে চাই।
মুফতি – তাহলে তো তারা সবাই আমাদের দেশে (প্যালেস্টাইন) এসে জুটবে।
হিটলার – তাহলে আমি কী করতে পারি?
মুফতি – আপনি তাদের মেরে ফেলুন, পুড়িয়ে মেরে ফেলুন!
হিটলার – বাহ! চমৎকার বুদ্ধি! আপনাকে ধন্যবাদ মুফতি সাহেব!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অসংখ্য ঘটনার মাঝে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ঘটনাটি হলো ‘হলোকাস্ট’। ৬০ লক্ষ ইহুদীকে নৃশংসভাবে হত্যা করার এই চূড়ান্ত অমানবিক ঘটনাটি কেন ঘটেছিল, তা নিয়ে ইতিহাসবিদগণ কম গবেষণা করেননি। জল ঘোলা হয়েছে অনেক, তথাপি সমাধান আসেনি। হিটলারের মনে কেন এই নৃশংস বুদ্ধির উদয় হয়েছিল, তা আজও রয়েছে ধোঁয়াশার মাঝেই। ইতিহাসবিদ আর পণ্ডিতগণ প্রচুর পড়াশোনা করেও যে বিষয়টি উদঘাটন করতে পারেননি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কোনো এক অলৌকিক ক্ষমতাবলে সে কাজটি করে ফেলেন। তিনি জেনে গেছেন হলোকাস্টের বুদ্ধি হিটলারের মাথায় কোথা থেকে এসেছিল। কোথা থেকে? একজন ফিলিস্তিনির মাথা থেকে!
উপরের কাল্পনিক কথোপকথনটি নেতানিয়াহুর, যা একইসাথে হাস্যকর এবং অযৌক্তিক কল্পনা। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ব জায়নবাদী কংগ্রেসের উদ্বোধনী বক্তৃতায় এমন ধারণাই পোষণ করেছিলেন তিনি। তার মতে, হলোকাস্টের বুদ্ধিটা এসেছিল তৎকালীন প্যালেস্টাইনের গ্র্যান্ড মুফতি হাজী আমিন আল হুসাইনির মাথা থেকে! হিটলার ইহুদীদের হত্যা করতে চাননি, তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন হুসাইনি, এমনটাই দাবি করেন নেতানিয়াহু। এই ধারণার বিপরীতে আরেকদল একেবারে বিপরীত মেরুতে গিয়ে দাবি করেন, হুসাইনি কখনোই ইহুদীদের মৃত্যু কামনা করেননি, বরং তিনি হলোকাস্টের প্রতিবাদ করেছিলেন! কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দুটি দাবিই ভুল। সত্যটা কী তা জানার চেষ্টা করা যাক তাহলে চলুন।
কে এই মুফতি?
হিটলারের সম্বন্ধে নতুন করে কিছু বলার অবশিষ্ট নেই। তবে, মুফতি হাজি আমিন আল হুসাইনির সম্বন্ধে জানা এ আলোচনার জন্য জরুরি। মুফতি আমিনকে আরবদের ইতিহাসের অন্যতম কট্টর জাতীয়তাবাদী বললেও ভুল হবে না। ১৯২১ সালে তাকে জেরুজালেমের মুফতি নিয়োগ করা হয়, যখন প্যালেস্টাইন ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্ষমতা গ্রহণ করেই তিনি প্যালেস্টাইনে ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করেন এবং এ অঞ্চলে জায়নবাদীদের একটি ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের তীব্র বিরোধীতা করেন। অবশ্য স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনে তার মনোযোগ ছিল না, তার ইচ্ছা ছিল একটি বৃহৎ আরব ফেডারেশন গঠন করা, যার আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
প্যালেস্টাইনে ইহুদীদের অভিবাসন সবচেয়ে বেশি হয় ১৯৩৬-৩৭ সালে। সে সময় ইহুদীদের অবৈধ স্থাপনা ও বাড়িঘর নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান মুফতি আমিন। তার নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিরা সংঘটিত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ‘প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট’ নামক আন্দোলনের তিনিই নেতৃত্ব দেন। প্রতিবাদ সহিংস রূপ নিলে ব্রিটিশদের তোপের মুখে পড়েন মুফতি। তাকে গ্রেফতারের পরোয়ানা জারি হয়। গ্রেফতার এড়াতে তিনি প্রথমে লেবানন, পরে ইরাক এবং সবশেষ জার্মানি পাড়ি দেন। উল্লেখ্য, জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি পার্টির ক্ষমতা গ্রহণ এবং যাবতীয় ইহুদীবিরোধী নীতির সমর্থক ছিলেন তিনি। নিজেদের সীমান্তে ইহুদী আগ্রাসনের কারণে ইহুদীদের প্রতি তিনি বরাবরই বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করেন।
হিটলার আর মুফতির মধ্যে যেসব কথা হয়
নেতানিয়াহু নিজের মনগড়া তথ্য উপস্থান করলেও তা ইতিহাসবিদ, গবেষক, সমালোচক কারো কাছেই পাত্তা পায়নি, কেননা হিটলার আর মুফতির মধ্যকার কথোপকথনের সম্পূর্ণটাই প্রকাশ করেছে জার্মানি। দুই নেতার এই আলোচনাটি হয় ১৯৪১ সালের ২৮ নভেম্বর। এই আলোচনার বিষয়বস্তুর চেয়েও এর সময়কাল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তখনো যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ায়নি, ইহুদী হত্যা ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে, তবে ইহুদী নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত তখনই নেয়া হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা, জার্মানি তখন সবে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছে, লেনিনগ্রাদ দখল করে তারা বীরদর্পে এগোচ্ছে মস্কোর দিকে, পুরো বিশ্ব তখন ধরে নিয়েছে হিটলারের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন অনিবার্য। এরকম এক সময়ে হিটালারের সাথে দেখা করতে যান মুফতি, যখন হিটলার রাশিয়া জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত আর তার চেয়েও বেশি নিশ্চিত মুফতি আমিন নিজে।
মুফতি আমিন তার কথোপকথন শুরুই করেছিলেন জার্মানির প্রতি তার এবং সম্পূর্ণ আরবের (যদিও তিনি পুরো আরবের প্রতিনিধিত্ব করতেন না) সমর্থন প্রকাশ করে। তার ভাষ্য ছিল এই যে, আরবদের এবং জার্মানদের স্বার্থ একই, কেননা উভয়ের শত্রু একই। ব্রিটিশ, ইহুদী এবং কমিউনিস্টদের সাধারণ শত্রু উল্লেখ করে তিনি পুরো আরবজুড়ে বিদ্রোহ ঘটানোর প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবনায় ছিল নাৎসি বাহিনীর সাথে আরবরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে যুদ্ধ করে প্যালেস্টাইন এবং ইরাক থেকে ব্রিটিশদের তাড়াবে, প্যালেস্টাইনে ইহুদী বসতি নির্মাণ বন্ধ করবে, এমনকি লেবানন, সিরিয়া থেকে ফরাসিদেরও ঝেটিয়ে বিদায় করবে। কোনো সন্দেহ নেই, তার উদ্দেশ্য ছিল কেবলই আরবদের স্বাধীনতা। তথাপি, নাৎসিদের সমর্থনে তাদের জন্য মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালাতেও তিনি সম্মত হয়েছিলেন, যা ছিল তার একটি বড় ভুল।
যা-ই হোক, হিটলার কিন্তু মুফতি আমিনের প্রস্তাবে সরাসরি সম্মতি দেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ইহুদীবাদ ও কমিউনিজমের বিরুদ্ধে একটি ভাবাদর্শগত যুদ্ধ বলে উল্লেখ করে তিনি আরবদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং যুদ্ধে আরবদের অংশগ্রহণকেও স্বাগত জানান। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে আরব বিদ্রোহের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি চাইছিলেন, রাশিয়ায় জার্মানির অবস্থান আরো শক্ত হলে তবেই আরবদের নিয়ে মাথা ঘামাতে। তবে প্যালেস্টাইনে ইহুদী বসতি নির্মাণ বন্ধের বিষয়ে তিনিও শতভাগ একমত ছিলেন। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের হয়ে প্রায় হাজার দশেক আরব যোদ্ধা যুদ্ধ করেছিল।
হলোকাস্টের সিদ্ধান্তে মুফতির প্রভাব কতটুকু?
নেতানিয়াহুর ২০১৫ সালের এ দাবি নানা কারণে কেবল অযৌক্তিকই নয়, হাস্যকরও বটে। প্রথমত, ইহুদীদের ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা নাৎসি জার্মানির প্রথম থেকেই ছিল। তবে তা সর্বোচ্চ ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত। এরপরই, হিটলার ভিন্ন কিছু ভাবতে শুরু করেন। এরই মাঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ইহুদীদের মাদাগাস্কার দ্বীপে নির্বাসিত করা হবে। কিন্তু, ১৯৪০ সালের ‘ব্যাটেল অব ব্রিটেন’ হারার পর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। সম্ভবত তখন থেকেই হলোকাস্টের পরিকল্পনা শুরু হয়ে থাকতে পারে। পরিকল্পনা হোক না হোক, হত্যাকাণ্ড ততদিনে শুরু হয়ে যায়। জুন মাসে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণের সাথে শুরু হয় ‘আইনসাটজখুপেন’ (নাৎসিদের ছোট ছোট কিলিং স্কোয়াড) এর ইহুদী নিধন। সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের বাবি ইয়ার গিরিখাতে দুই দিনের অভিযানে ৩৪ হাজার ইহুদী হত্যা করে নাৎসিরা! অথচ মুফতি আর হিটলারের সাক্ষাৎ হতে তখনো আরো দু’মাস বাকি।
এদিকে, মুফতি আমিনের ইহুদী বিদ্বেষী মনোভাবের কারণও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ছিল। প্রথমত, মুসলিম আর ইহুদীদের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই শত্রুভাবাপন্ন। তার উপর প্যালেস্টাইনে ইহুদীদের অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে ইহুদীদের দখলদারিত্ব সেই বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালে। বিশ্বযুদ্ধের আগে ফিলিস্তিনে বসবাসরত সময়ে কিংবা ১৯৪১-৪৫ পর্যন্ত বার্লিনে থাকাকালীন মুফতি আমিনের ইহুদীবিরোধী অবস্থানের কথা সর্বজনবিদিত। সাথে এটাও পরিষ্কার যে, তার বিরোধ ছিল কেবলই ইহুদীদের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে, তাদেরকে হত্যা করবার জন্য মদদ তিনি দেননি, দেয়ার প্রয়োজনও ছিল না।
তাছাড়া, ঐ সময়ে মুফতি নিজেই এমন কোনো অবস্থানে ছিলেন না যেখান থেকে হিটলারকে তিনি প্রভাবিত করতে পারবেন। গ্রেফতার এড়াতে দেশান্তরি হওয়া মুফতি আমিন বরং পরাক্রমশালী হিটলার, নাৎসি বাহিনীর জাঁদরেল প্রধান হিমলার আর উপদেষ্টা আইখম্যানের সামনে অনুরোধ করার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেননি। তিনি ৩টি বিষয়ে মূলত জোর দিয়েছিলেন। আরব অঞ্চলে নাৎসি প্রচারণা চালিয়ে তাদের জন্য সমর্থন জোগাড় করা, নাৎসিদের সাথে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে আরবদের অংশগ্রহণ এবং এসবের বিনিময়ে প্যালেস্টাইনে ইহুদী বসতি স্থাপন বন্ধে নাৎসিদের হস্তক্ষেপ। অর্থাৎ, মূল ছিল সেই ইহুদী বসতি স্থাপন বন্ধ করা। এসব আলোচনা থেকে হিটলার হলোকাস্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এমনটা ভাবাও পাগলামি বৈ কিছু না।
হলোকাস্টের সিদ্ধান্তের প্রকৃত চিত্র
হলোকাস্ট বা ‘দ্য ফাইনাল সল্যুশন’ এর সিদ্ধান্তে মুফতি আমিনের কোনো প্রভাব ছিল না তা প্রায় সকল ধরনের গবেষণা ও ঐতিহাসিক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বেরি রুবেন এবং জি. শোয়ানিতজের বই ‘নাৎসিস, ইসলামিস্টস অ্যান্ড দ্য মেকিং অব দ্য মডার্ন মিডল ইস্ট’ বইটিকে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্তের প্রামাণ্য দলিল ধরা যেতে পারে। এ বইয়ে রুবেন এবং শোয়ানিতজ স্পষ্ট করেছেন যে, ২৮ নভেম্বর মুফতির সাথে সাক্ষাতের অনেক আগেই হিমলারের সাথে ইহুদী হত্যা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন হিটলার।
আইনসাটজখুপেনের পাশাপাশি নাৎসিদের বিভিন্ন ছোট ছোট বাহিনী ভ্রাম্যমাণ গ্যাসভ্যানে স্থানে স্থানে ইহুদী হত্যা করেছে। ইহুদীদের উপর বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচার চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনাও রাশিয়া আক্রমণেরও বছর তিনেক আগেই পাল্টে যায়। প্রাথমিককালে যেখানে নাৎসিবাহিনীর উর্ধ্বতনদের আলোচনায় বিতর্ক হতো কেন ইহুদীদের হত্যা করা উচিৎ তা নিয়ে। অর্থাৎ, তখনো হত্যা শুরু হয়নি। সেখানে ১৯৪০ পরবর্তী বিতর্কগুলো হতো কেন তাদেরকে হত্যা না করলেও চলবে! অর্থাৎ, ততদিনে পুরোদমে নিধনযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। এক হিসাবে বলা হয়, মুফতির সাথে হিটলারের সাক্ষাতের পূর্বে নাৎসিদের হাতে মারা পড়ে ৭ লক্ষাধিক ইহুদী।
“আন্তর্জাতিক শান্তির বিরুদ্ধে ইহুদীদের ষড়যন্ত্রে যদি আরো একবার বিশ্বযুদ্ধ হয়, তাহলে এবার আর কোনো বলশেভীকরণ ঘটবে না, ইহুদীদের জয় হবে না, বরং তারা ধ্বংস হবে।” – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর মাসখানেক পূর্বে হিটলার
ইহুদী বিদ্বেষের জন্য হিটলারের কোনো বহিঃস্থ প্রভাবের প্রয়োজন ছিল না। ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা ধর্মীয় কারণের দিকে না গেলেও, রাজনৈতিক ফায়দা দিয়েই তা সহজে বোঝা যায়। যেকোনো একনায়ক সাধারণ জনগণের সামনে তার ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য কোনো কাল্পনিক ষড়যন্ত্র বা নেতিবাচক শক্তির বিশ্বাস মানুষের মনে বদ্ধমূল করতে চায়। হিটলার ও তার প্রশাসন তা-ই করেছিল। তারা বিশ্বব্যাপী ইহুদীদের ষড়যন্ত্র নিয়ে এক অলীক ধারণা মানুষের মনমগজে বদ্ধমূল করেছিল, যে ষড়যন্ত্র রুখতে না পারলে জার্মানি, এমনকি বিশ্বশান্তিই হুমকির মুখে পড়বে! গোয়েবলস, হিমলার, আইখম্যানের মতো মানুষজন এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে প্রামাণিকরূপে উপস্থান করতো।
হলোকাস্টের মতো নৃশংস সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে সহায়তা করেছে আরেকটি বিষয়, তা হলো নাৎসিদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। প্রথমদিকে প্রবল বৈশ্বিক সমালোচনা এবং হস্তক্ষেপের কথা ভেবে ইহুদীদের উপর গণহত্যা চালানো থেকে বিরত ছিল নাৎসিরা। কিন্তু রাশিয়া আক্রমণের সময়, অর্থাৎ ১৯৪১ সালের জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত হিটলার ও তার নাৎসিবাহিনীর মাঝে যুদ্ধ জয়ের এক প্রবল আত্মবিশ্বাস জন্মায়। তারা ধরেই নিয়েছিল কয়েকমাসের মধ্যে রাশিয়া তাদের দখলে থাকবে। ফলে, ইহুদী হত্যায় তাদের আর বাঁধা ছিল না! এছাড়াও আরো কিছু ব্যাপার কাজ করেছিল হলোকাস্টের সিদ্ধান্তের পেছনে। ইহুদীদের উপর শারীরিক অত্যাচার চালিয়ে আর স্থানে স্থানে খুনোখুনি করে তাদের ভয় দেখিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়াটা বেশ লম্বাই। কিন্তু এত সংখ্যক নিরীহ মানুষ হত্যার মানসিক ধকল সহ্য করতে পারছিলেন না অনেক নাৎসি কর্মকর্তাও। অনেকে মানসিক সমস্যায় ভোগেন, অনেকে অবসর নিয়ে নেন। এমতাবস্থায় তারা আবিষ্কার করে একত্রে হাজারো মানুষ হত্যার হাতিয়ার গ্যাস চেম্বার আর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প! সেখানে হত্যা করলে একে তো অফিসারদের মানসিক ঝক্কি পোহাতে হবে না, তার উপর বিশ্বও অত বেশি জানতে পারবে না!
সবমিলিয়ে নেতানিয়াহুর বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা অপবাদ হিসেবেই প্রমাণিত হয়। প্রথমেই বলা হয়েছে, মুফতি আর হিটলারের সাক্ষাতের সময়টা বেশ জরুরি। এ সময়ের কারণেই মনে হয়েছে হিটলারের সিদ্ধান্তে মুফতি আমিনের প্রভাব থাকতে পারে। আবার সময়টা গভীরভাবে ব্যাখ্যা করলেই প্রতীয়মান হয় যে ইহুদী হত্যায় মুফতির কোনো প্রভাব নেই। মুফতির কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সময়ের বক্তৃতায় তার ইহুদীবিদ্বেষই স্পষ্ট। একই সাথে এটিও সত্য যে তিনি ইহুদী হত্যার কথা না বললেও ইহুদী হত্যার বিরুদ্ধেও কিছু বলেননি।