দক্ষিণ আফ্রিকা; সাদাদের বৈষম্যমূলক শাসনের পর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের আগুনে সবকিছু ছারখার করে দিয়ে কালোদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার দেশ। পারমাণবিক বোমা বানানোর পরেও বিশ্বশান্তির নিমিত্তে তা ধ্বংস করে দেয়া মানবিক বোধসম্পন্ন দেশ। আফ্রিকার সবচেয়ে শিল্পোন্নত ও শক্ত মেরুদন্ডওয়ালা অর্থনীতির দেশ। নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা ডেসমন্ড টুটুদের দেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় শরীরের রঙের ভিত্তিতে যে বৈষম্য গড়ে তুলেছিল সাদারা, তা ভেঙে-চুরে চুরমার করে দেয়ার সংগ্রাম পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রেরণা যোগায়। ক্রিকেট সমালোচকদের চোখে ‘চোকার’ হয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের পক্ষে বাজি ধরা লোকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কাগিসো রাবাদাদের বিধ্বংসী বোলিং কিংবা প্রাক্তন হয়ে যাওয়া এবি ডি ভিলিয়ার্সের মারকাটারি ব্যাটিং একজন দর্শকের চোখে লেগে থাকবে বহু দিন। জোহানেসবার্গের সবচেয়ে বড় হীরার খনি কত লোককেই না নিয়ে যায় কল্পনার জগতে! আফ্রিকা বলতেই যে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের কথা প্রচারিত হয়, তা দূর করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার আলো ঝলমলে শহরগুলো।
যে দেশটি বর্ণবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলতে পেরেছে, সে দেশটিই কি না একসময় দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়লো। যে দেশের নেতারা একসময় রাজপথে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সামনে ছিলেন, তারাই কি না দূর্নীতি করে দেশের খেটে খাওয়া জনগণের অর্থ নিজেদের পকেটে ভরলেন। যে দেশের জনগণকে একসময় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নামতে হয়েছিল রাজপথে, তাদেরকে আবার রাজপথে নামতে হলো দুর্নীতির প্রতিবাদে। যে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গঠন করেছিল, সময়ের পরিবর্তনে সেই দল থেকেই নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টের দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে জনগণ তার পদত্যাগ চাইলো। দক্ষিণ আফ্রিকার গণমানুষের ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!
এই যে বর্ণবাদের উপড়ে ফেলার আন্দোলনের মতো মহান একটি সংগ্রামের পরও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা আমূল বদলে গেলেন রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর, এর পেছনে যতটা তাদের দায় আছে, ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসার নিমিত্তে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত গুপ্ত ভাইদের দায়ও আছে। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে সখ্য গড়ে তোলে যেভাবে সুনিপুণ দক্ষতার সাথে রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন গুপ্ত ভাইরা, তাতে বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে যায়। ভাগ্যের অন্বেষণে গুপ্ত ভাইদের দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর দক্ষিণ আফ্রিকার তো বটেই, পুরো পৃথিবীরই সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর একটি হওয়ার গল্প সবাইকে ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর থেকে উঠে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন বহুমাত্রিক ব্যবসার পুরো কলকব্জা দখল করে নেয়া– গুপ্ত ভাইদের উত্থানটা রাতারাতিই বলা চলে। সাহারানপুরে মুদি দোকানদার পিতার উত্তরাধিকারে পাওয়া সাধারণ ব্যবসায় না গিয়ে নিজেরাই নিজেদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পাড়ি জমিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৯৮০’র দশকে উত্তরপ্রদেশের অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসায়ীরাই বহির্বিশ্বের দিকে নজর দেয়া শুরু করেন। চীন, রাশিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল সেসব ব্যবসায়ীদের স্বপ্নের বাজার। সেই হিসেবে গুপ্ত ভাইদের বিদেশ যাত্রা আহামরি কিছু নয়।
অতুল গুপ্ত, অজয় গুপ্ত ও রাজেশ গুপ্ত– তিন গুপ্ত ভাইয়ের মাঝে মেঝো ভাই অতুল গুপ্ত সর্বপ্রথম থিতু হন দক্ষিণ আফ্রিকায়। বর্ণবাদের মূল উৎপাটন করে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন করে পথচলার এক বছর আগে, ১৯৯৩ সালে সেখানে পৌছান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার শহরতলীতে জুতো বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় তার। দেশটিতে সেসময় ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’ বলতে কিছুই ছিল না। সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ডামাডোলে সমাজে টিকে থাকা দায়। শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীরা পাততাড়ি গুটিয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারলে বাঁচে। গৃহযুদ্ধের গন্ধ তখন দক্ষিণ আফ্রিকার অলিতে-গলিতে ভেসে বেড়ায়।
এরকম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মাঝেই ভাগ্যের খোঁজে যাওয়া অতুল গুপ্ত ব্যবসায় লাভবান হতে থাকেন। যেহেতু লড়াইটা চলছিল শ্বেতাঙ্গ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে, তাই ভারতীয়দের চিন্তার তেমন কারণ ছিল না। নির্বিঘ্নে ব্যবসায় মনোযোগী হওয়ার মতো বিষয় অতুলের হাতে ছিল এবং তিনি ব্যবসায় সম্পূর্ণ মনোযোগ বিনিয়োগ করেছিলেনও। এর ফলও আসে হাতেনাতে। জুতোর ব্যবসা থেকে উন্নীত হয়ে দ্রুত কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের ব্যবসায় নিয়োজিত হন। নিজের জন্মস্থানের সাথে মিল রেখে ‘সাহারা’ নামে নিজেই একটি কোম্পানি খুলে বসেন। হাতে মুনাফাও আসতে থাকে তরতর করে।
এরই মধ্যে গুপ্ত ভাইদের বাবা মারা যান। তারা বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। পরবর্তীতে যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসার মাধ্যমে তারা নিজেদের সাম্রাজ্য স্থাপন করেন, তখনও বাবার কথা প্রায়ই স্মরণ করতেন তারা এবং নিজেদের সাফল্যের রূপকার হিসেবে পিতা থেকে পাওয়া ব্যবসায়িক গুণাবলির কথা কৃতজ্ঞতার সাথে প্রচার করতেন। তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানান্তরিত হয়।
আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের হাতে ক্ষমতা আসবে– এ কথা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার অল্প সময় আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কাকপক্ষীটিও জানে। তাই এই রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন কক্ষপথে যাত্রা শুরুর পর অর্থনৈতিকভাবে দারুণ সুবিধা লাভ করা যাবে, এটা সবাই জানতো। ওপেনহাইমার পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় এক শতাব্দী ধরে অপ্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে বিশাল ব্যবসা পরিচালনা করছিল, তারা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা বিখ্যাত নেলসন ম্যান্ডেলাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গুপ্ত ভাইদের সাথেও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সখ্য গড়ে ওঠে। একজন ভারতীয় ব্যক্তি ‘এসোপ পাহাড়’, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে সেসময় থিতু হতে চাচ্ছিলেন, তার সাথে অতুল গুপ্তের দেখা হয়। এসোপ পাহাড় ছিলেন থাবো এমবেকি নামের একজন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যক্তির ‘ডান হাত’। বলে রাখা ভালো, থামো এমবেকি ছিলেন আবার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সহকারী। এভাবে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে গুপ্ত ভাইদের যোগসূত্র তৈরি হয়, যেটি পরবর্তীতে তাদের ব্যবসার অন্তরালে অপকর্মে বিশাল কাজে দিয়েছিল।
আফ্রিকান ন্যাশনাল পার্টির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে ২০০০ সালের দিকে গুপ্ত ভাইয়েরা তাদের প্রথম সাফল্য পায়। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রদেশ গাউটেংয়ের সরকারি স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের জন্য তারা বিশাল চুক্তি করে সরকারের সাথে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তারা একটি পুরো তথ্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম উৎপাদনের কোম্পানি কিনে নেয়, যেটি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এই চুক্তির বলে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় কম্পিউটার ডিস্ট্রিবিউটরে পরিণত হয়।
আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে সম্পর্কের শুরুটা থাবো এমবেকির মাধ্যমে হলেও, পরবর্তীতে জ্যাকব জুমার দলে চলে আসেন গুপ্ত ভাইরা। জ্যাকব জুমা বনাম থাবো এমবেকির রাজনৈতিক লড়াই তখন চরমে। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে যখন জ্যাকব জুমা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হলেন, তখন গুপ্ত ভাইদের দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে জ্যাকব জুমার দলে ভেরার পদক্ষেপ যে সঠিক ছিল, তা প্রমাণিত হয়ে যায়।
জ্যাকব জুমার ছেলে, ডুডুজেন জুমা এবং আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এইস মাগাশুলের ছেলেকে গুপ্ত ভাইয়েরা তাদের ব্যবসার পার্টনার হিসেবে নেন। গুপ্ত ভাইদের মাঝে সবচেয়ে ছোট ভাই রাজেশ গুপ্তের দায়িত্ব পড়ে এই দুই ছেলেকে দেখভাল করার। রাজেশ নিয়মিত তাদেরকে নাইটক্লাবে নিয়ে যেতেন, দুবাইয়ে বিলাসবহুল হোটেলে অবকাশ যাপনে যেতেন, পারিবারিক পার্টিগুলোতে তাদেরকে নিয়ে উপস্থিত হতেন। এই সবকিছু হতো রাজেশের খরচে। তাদেরকে হাতে রাখতে সম্ভাব্য সবকিছু করার চেষ্টা করতো গুপ্ত ভায়েরা। এতে জ্যাকব জুমার পার্টির উচ্চপদস্থ নেতাদের সাথে আরও বেশি করে সখ্য গড়ে ওঠে গুপ্ত ভাইদের। সরকারি চুক্তিগুলো একের পর এক গুপ্ত ভাইদের হাতে আসতে থাকে। এমনকি অন্যান্য কোম্পানিকে সরকারের চুক্তি পাইয়ে দেয়ার জন্যও গুপ্ত ভাইদের দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। বিনিময়ে অন্য কোম্পানিগুলো গুপ্ত ভাইদের মোটা অংকের উৎকোচ দিতে বাধ্য হতো।
একটি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কয়লার খনি কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন গুপ্ত ভায়েরা। গ্লেনকোর নামের সেই সুইস কোম্পানি প্রথমবারই তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার খনি মন্ত্রী নিজে গিয়ে গ্লেনকোর কোম্পানির সাথে মিটিং করেন এবং খনি গুপ্ত ভাইদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য করেন।
ব্যবসায় অনৈতিকভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠার পর গুপ্ত ভাইয়েরা একটি দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশন নিউজ স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এএনএনসেভেন (ANN7) নামের সেই নিউজ চ্যানেলের কাছে সরকারের বিজ্ঞাপনের পেছনে যে বাজেট ছিল, তার সিংহভাগ আসতো। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের উঁচু পর্যায়ের সাথে গুপ্ত ভাইদের যে দহরম-মহরম, সেটিই সরকারের বাজেট গুপ্ত ভাইদের নিউজ চ্যানেলকে দিতে বাধ্য করতো।
গুপ্ত ভাইয়েরা ধীরে ধীরে এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যক্রমেও হস্তক্ষেপ করা শুরু করেন। ২০১৫ সালে মিস্টার জোয়েইনকে জ্যাকব জুমা তার খনিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। অথচ ইতোপূর্বে জাতীয় রাজনীতিতে কেউই তাকে চিনতো না। এমনকি খনি মন্ত্রণালয় সম্পর্কে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না। পরিচিতি কিংবা অভিজ্ঞতা না থাকলেও গুপ্ত ভাইদের সাথে তার ঠিকই ওঠা-বসা ছিল। এটিই খনিমন্ত্রী হিসেবে জ্যাকব জুমার মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল তার জন্য।
২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা হিসেবে জ্যাকব জুমাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এতদিন ধরে যেভাবে জ্যাকব জুমার মাধ্যমে গুপ্ত ভাইয়েরা অনৈতিক ও অবৈধ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তা বন্ধ হয়ে যায়। আর জ্যাকব জুমার দুর্নীতির একটি বড় অংশ ছিল গুপ্ত ভাইদের সাথে। দুর্নীতির তদন্তে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মাঠে নামে।
সরকারি তদন্তের মাধ্যমে গুপ্ত পরিবারের অসংখ্য ই-মেইল ফাঁস হয়। এসব ই-মেইলের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য সবার সামনে চলে আসে। গুপ্ত ভাইয়েরা কীভাবে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতো, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন সরকারি চুক্তি হাতিয়ে নিয়েছিল, কীভাবে কর ফাঁকি দিত তার সব তথ্য প্রকাশ হয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকা থেকে গুপ্ত ভাইদের পাবলিক কোম্পানিকে বের করে দেয়া হয়। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়। তাদের অন্যান্য কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। ছোট-বড় সকল দক্ষিণ আফ্রিকান কোম্পানি তাদের সাথে ব্যবসা করতে অস্বীকৃতি জানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা তাদের মিডিয়া ব্যবসা ও খনিগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে যেখানে গুপ্ত ভাইদের পিতা প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে মন্দিরে যেতেন, সেখানে একটি বিশাল শিব মন্দির গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন গুপ্ত ভাইয়েরা। কাজও শুরু হয়েছিল। যেদিন নির্মাণকাজ শুরু হয়, সেদিন ভারতের প্রায় ২,০০০ বিখ্যাত মানুষকে দাওয়াত দেন তারা। ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় গুরু বাবা রামদেবও এসেছিলেন সেখানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর সেই মন্দিরেরও কাজ আটকে দিয়েছে ভারত সরকার।
দক্ষিণ আফ্রিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়াতে বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন গুপ্ত ভাইয়েরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের সাম্রাজ্য যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া সকল মানুষের কাছেই একটি সতর্কবার্তা। শুধু যে তারা নিজেদের ক্ষতিই করেছেন, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত সকল ভারতীয় নাগরিকেরই ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় নাগরিকরা গুপ্ত ভাইদের অপকর্ম ফাঁসের পর ভারতীয়দের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। আমেরিকাও এই দুই ভাইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।