১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল রাত ১০টা। নিউফাউন্ডল্যান্ড নামক একটি কানাডিয়ান দ্বীপ থেকে প্রায় ৩৭৫ মাইল দূরের উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে তখন হিমশীতল অন্ধকার পরিবেশ। মেঘহীন পরিষ্কার আকাশে চাঁদ নেই, কিন্তু আছে হাজার হাজার নক্ষত্র। সেই নক্ষত্রের নিচে আটলান্টিকের জলে ভাসছে ছোট বড় অনেক বরফখন্ড। তার মধ্যে বিশাল আকৃতির একটি আইসবার্গ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু নক্ষত্রকে আড়াল করে। সেটি হয়তো নজরে আসতো যে কারো, যদি থাকতো একটুখানি চাঁদের আলো।
কয়েক মাইল দূর থেকে রাতের অন্ধকার ভেদ করে ঠিক এদিকেই এগিয়ে আসছে বিশাল আকৃতির এরকম একটি জাহাজ, যেরকমটি তখনকার সময়ে কেউ কখনো দেখেনি। এই জাহাজটির নাম আর এম এস বা রয়্যাল মেইন শিপ টাইটানিক, যার অর্থ বিশাল। গ্রীক মিথলজি থেকে নেওয়া এ নামটি যে এই জাহাজটির জন্যই সবচেয়ে উপযুক্ত, সে বিষয়ে কারো কোনো রকম সন্দেহ থাকার কথা নয়। জাহাজটিতে সাধারণ যাত্রী এবং ক্রু মিলিয়ে মোট ২,২২৪ জন মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিংবা কেউ হয়তো ছাদে বসে আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাঁসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় এই জাহাজটি যেন আটলান্টিকের বুকে ছোট্ট একটি পৃথিবী।
এদের মধ্যেই একজন জন জ্যাকব অ্যাস্টর। তার চেহারা দেখলেই মনে হবে কোনো কিছু একটা নিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত তিনি। এই জাহাজে ওঠার পর থেকেই বেচারাকে যথেষ্ঠই ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সবাই বলাবলি করছে উনিই নাকি এই জাহাজের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। এ ব্যাপারটিকে মোটেও উপভোগ করছেন না তিনি। তার পাশেই প্রিয় পোষা কুকুর কিটি নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে। আর তার স্ত্রী কোনো একটা কিছু নিয়ে কর্মচারী মহিলার সাথে কথা বলছেন। তিনি কাউকে কিছু না বলে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে কেবিনের বাইরে বেরিয়ে আসলেন।
এদিকে বেনজামিন গগেনহেম টাইটানিকে উঠেছিলেন চারজনের একটি দল নিয়ে। এর মধ্যে তিনি তার সহকর্মীকে নিয়ে এক কেবিনে আছেন। তারা দুজনই তখন ঘুমিয়ে আছেন। কেবিনের ভিতরে অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন মারগারেট ব্রাউন। এই জাহাজের প্রথম শ্রেণীর একজন যাত্রী উনি। নাতনীর অসুস্থতার খবর পেয়ে হঠাৎ করেই আমেরিকা যেতে হচ্ছে তাকে। মাইকেল নেভ্রাটিল ডেকে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন একজন অপরিচিত লোকের সাথে। তার দুই ছেলে তখন কেবিনে শুয়ে আছে। তিনি এই জাহাজের দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন যাত্রী। অন্যদিকে ইসিডর স্ট্রাউস তার স্ত্রী আইডা স্ট্রাউসকে সাথে নিয়ে রাতের আটলান্টিক মহাসাগর দেখছেন। একটু দূরেই বসে আছেন জুলিয়া-জোসেফ দম্পতি।
মহাসাগর তখন আশ্চর্য রকমের শান্ত, যা সাধারণত খুব একটা দেখা যায় না। আটলান্টিকের এই অংশটির আবহাওয়া প্রায় সময়েই খারাপ থাকে। কিন্তু এখন এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়। কোনো টর্নেডো নেই, বড় বড় ঢেউ নেই। চারপাশে শুধু মৃত্যুর মতো শীতল অন্ধকার। কিন্তু এই জাহাজটি নাকি কোনোদিনই ডুববে না। জাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে পৃথিবীর কোনো শক্তিই এই জাহাজটিকে ডুবাতে পারবে না। তাই যাত্রীরাও সবাই মোটামুটি নিশ্চিন্ত। আটলান্টিক মহাসাগরের হিমশীতল পানির কথা চিন্তা করে তাই একবারও তাদের কারও গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে না।
হিমশীতল আটলান্টিকে দ্রুতবেগে ছুটে চলছে টাইটানিক। কেউ তখনো জানে না আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
আমরা এবার একটু পেছনে ফিরে যাই।
হোয়াইট স্টার লাইন একটি বিখ্যাত ব্রিটিশ শিপিং কোম্পানী। ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানীটি মূলত ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া রুটের অনেকগুলো ক্লিপার জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করতো। যাত্রীবাহী জাহাজের দুনিয়ায় এই কোম্পানীটি অত্যন্ত প্রভাবশালী মূলত তাদের নানা রকম উদ্ভাবনের কারণে।
আর কুনার্ড(Cunard) ছিল সেই সময়ে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানী। এই কুনার্ডই একসময় তাদের দিকে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল Lusitania এবং Mauretania নামের দুটি জাহাজ তৈরি করে। এ দুটো জাহাজ ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে দ্রুতগামী যাত্রীবাহী জাহাজ। তাদের জাহাজ দুটির পাশে হোয়াইট স্টার লাইনের জাহাজগুলোকে নিছক কৌতুক মনে হতে লাগলো।
হোয়াইট স্টার লাইন কর্তৃপক্ষের তখন মাথায় হাত। এখনই কিছু একটা না করলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবে না। কোম্পানীর চেয়ারম্যান জে ব্রুস ইসময় আমেরিকার অর্থনীতিবিদ জে পি মরগ্যানের সাথে বৈঠকে বসলেন। জে পি মরগ্যানই মূলত পুরো প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ইসময় তার কাছে প্রস্তাব করলেন কিছু জাহাজ বানানোর জন্য যেগুলো আকার এবং সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে হারিয়ে দেবে কুনার্ডের জাহাজগুলোকে। গতির চেয়েও জাহাজের আকৃতি এবং জাহাজটি কতটা বিলাসবহুল সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার কাছে। এখান থেকেই মূলত হোয়াইট স্টার লাইনের অলিম্পিক ক্লাস জাহাজের যাত্রা শুরু যা তাদেরকে ইতিহাসে স্থান করে দিয়েছে। তারা এই অলিম্পিক ক্লাসের অধীনে তিনটি জাহাজ নির্মানের ঘোষণা দেয়। এগুলো হলো অলিম্পিক, টাইটানিক এবং ব্রিটানিক।
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেন্টাইল মেরিন কোম্পানির অর্থায়নে গ্রেট ব্রিটেনের বেলফাস্টের হারল্যান্ড এন্ড ওলফ্ শিপইয়ার্ডে শুরু হয় টাইটানিক জাহাজ তৈরীর কাজ। প্রকৃতপক্ষে টাইটানিক এবং অলিম্পিক দুটো জাহাজের নির্মাণকাজ একসাথেই শুরু হয়েছিল। জাহাজ দুটোর গঠন এবং ডিজাইনও ছিল মোটামুটি এক। ১৫,০০০ মানুষ কাজ শুরু করে সেই শিপইয়ার্ডে।
জাহাজ নির্মাণের এই পুরো কাজটি শ্রমিকদের জন্য যথেষ্ঠ বিপদজনক। কারণ এরকম বড় একটি স্ট্রাকচার দাঁড় করানো সেই সময়ের প্রেক্ষিতে খুবই কঠিন একটি কাজ। নানা রকম সতর্কতাও শেষপর্যন্ত নির্মাণ চলাকালীন সময়ে শ্রমিকদের প্রাণহানি থামাতে পারেনি। নয় জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পুরো সময়টাতে। আর গুরুতরভাবে আহত হয় প্রায় ২৪৬ জন মানুষ। টাইটানিকের শুরুটা হলো মৃত্যু দিয়েই।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল। একটি ইতিহাস রচিত হলো ঐদিন। শেষ হলো টাইটানিক তৈরীর পুরো কাজ। তখন পর্যন্ত জাহাজটি মানুষের দ্বারা নির্মিত সর্ববৃহৎ চলমান কোনো বস্তু! আর খরচ কত হয়েছিল টাইটানিক তৈরীর জন্য? টাকার অঙ্কটা নেহায়েত মন্দ নয়। প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন (বর্তমান প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন) ডলার! তাও আবার ১৯১২ সালের হিসেব অনুসারে।
আমরা যদি এখন শিপইয়ার্ড থেকে তাকাই তাহলে প্রায় তিনটি ফুটবল মাঠের সমান এই বিশাল জাহাজটিকে মনে হবে কোনো ভাসমান সুরম্য অট্টালিকা। ৮৮২ ফুট ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ৯২ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রস্থ এবং প্রায় ১৭৫ ফুট উচ্চতার এই বিশাল জাহাজটির ওজন হচ্ছে ৪৬,৩২৮ টনের মতো! টাইটানিকের ডেক মোট দশটি, যার মধ্যে আটটি যাত্রীদের জন্য। তবে টাইটানিকের চারটি চিমনি ছিল সবচেয়ে নজরকাড়া ব্যাপারগুলোর একটি। এর মধ্যে তিনটি চিমনি ছিল সক্রিয় এবং চতুর্থটি ব্যবহার করা হতো বায়ু চলাচলের জন্য কিংবা বলা যায় খানিকটা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য। কারণ যাত্রাপথে ৯২টি বয়লার এবং ১৬২টি ফার্নেস থেকে কয়লা পুড়বে দৈনিক ৬৫০ টনের মতো করে!
যাত্রা শুরুর আগেই ততদিনে বিখ্যাত হয়ে গেছে টাইটানিক। কারণ ব্যয়বহুলতা এবং চাকচিক্যের দিক থেকে সে ছাড়িয়ে গেছে তখন পর্যন্ত নির্মিত সকল জাহাজকে। তখনকার সময়ের সকল আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছিল এ জাহাজটিতে। ওয়্যারলেস বা তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনও অতটা প্রচলিত ছিল না। কিন্তু টাইটানিকের বোট ডেকের কাছে ছিল বিখ্যাত মার্কনী রুম। যেখানে রেডিও অপারেটররা ২৪ ঘন্টা বার্তা পাঠাতো এবং গ্রহণ করতো। এছাড়া টাইটানিকের অভ্যন্তরে ছিল সুদৃশ্য সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্কোয়াস খেলার কোর্ট (একধরনের র্যাকেট খেলা), ব্যয়বহুল তুর্কি বাথ, ডাইনিং রুম, ফটোগ্রাফি ডার্ক রুম, বিশাল এবং ব্যয়বহুল ক্যাফে এবং ফার্স্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস উভয় যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশাল লাইব্রেরী।
এর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও ছিল খুবই উন্নত ধরনের। জাহাজের ফার্স্ট ক্লাসের জন্য তিনটি এবং সেকেন্ড ক্লাসের জন্য একটি সহ মোট চারটি লিফটের ব্যবস্থাও ছিল। সবথেকে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি ছিল তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য সুযোগ সুবিধা। তাদের কেবিনগুলো এবং ডাইনিং রুম দেখলে যে কারও চোখ কপালে উঠে যাবে।
মূল যাত্রা শুরুর আগে আরও একটি ধাপ পার হতে হবে টাইটানিককে। আর তা হলো ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য সমুদ্র পরীক্ষা (Sea trial)। মোট কথা, জাহাজকে সাগরে নামিয়ে বিভিন্ন কারিকুরি দেখানো হবে আর কি। ১৯১২ সালের ২ এপ্রিল ভোর ৬ টায় কারিকুরি দেখানোর জন্য বেলফাস্ট থেকে আইরিশ সাগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় টাইটানিক।
বিভিন্ন কোম্পানীর পরিদর্শক এবং বেশ কয়েকজন ক্রু অংশগ্রহণ করেন টাইটানিকের সমুদ্র পরীক্ষায়। বিভিন্ন গতিতে টাইটানিক চালিয়ে দেখা হয়। তখন তার সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয় প্রায় ২১ নট অর্থাৎ ঘন্টায় ৩৯ কিলোমিটারের মতো। পূর্ণগতিতে চলতে থাকা টাইটানিককে থামাতে কত সময় লাগবে সেটাও পরীক্ষা করা হয় বিপরীতদিকে ইঞ্জিন চালিয়ে। দেখা গেল ৭৭৭ মিটার যাওয়ার পর ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মাথায় পুরোপুরি থেমে যায় সে। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর সমুদ্র পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বেলফাস্টে ফিরে আসে টাইটানিক এবং পরিদর্শকরা টাইটানিককে আগামী ১২ মাসের জন্য সমুদ্রে চলাচলের অনুমতি দেয়।
এরপর মাত্র একঘন্টা পর সাউদাম্পটনের উদ্দেশ্যে বেলফাস্ট ছেড়ে যায় এবং ৪ এপ্রিল মধ্যরাতে পৌছায় সেখানে। সাউদাম্পটনে পৌছানোর পর হোয়াইট স্টার লাইন কতৃপক্ষ কয়েকবার বৈঠকে বসলেন নিজেদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য। জাহাজের সব টিকেট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
এরকম একটি জাহাজে ভ্রমণ করার জন্য যে আগ্রহী লোকের অভাব হবে না তা বোঝাই গিয়েছিল। টাইটানিকের প্রথম যাত্রার রুট হলো ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন শহর থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর। যেকোনো ছোটখাট জাহাজের পক্ষে বৃটেন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যাওয়াটা খুবই বিপজ্জনক। কেননা হঠাৎ সামুদ্রিক ঝড়- জলোচ্ছ্বাসে পড়ার আশঙ্কা সবসময়ই ছিল। এই জন্যই রীতিমতো হুড়োহুড়ি করেই বিক্রি হলো টাইটানিকের প্রথম যাত্রার টিকিট। কিন্তু তারপরও টাইটানিকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার চেয়ে যাত্রীসংখ্যা ছিল অনেক কম।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর ভাড়া ছিল ৪,৩০০ ডলার এবং তৃতীয় শ্রেণীর ভাড়া ছিল ৩৬ ডলার। ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীদের জন্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্যাকেজটিতে খরচ পড়েছিল প্রায় ৪,৩৫০ ডলার, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৯৫,৮৬০ ডলার বা বর্তমান বাংলাদেশী টাকায় ৬৭ লাখ টাকারও বেশি!
এখনও ছয় দিন বাকি টাইটানিকের প্রথম যাত্রার। কিন্তু এই সময়টুকু জাহাজের কর্মীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে এখন। এত বেশী সংখ্যক যাত্রীর জন্য প্রায় এক সপ্তাহের থাকা ব্যবস্থা করা চাট্টিখানি কথা নয়। তাছাড়া হোয়াইট স্টার লাইন কতৃপক্ষ টিকেটের চড়া দাম পুষিয়ে দেয়ার জন্য সকল শ্রেণীর যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই টাইটানিকে প্রয়োজনীয় রসদ মজুদ করা শুরু হলো।
টাইটানিকে মজুদকৃত খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণটা উল্লেখ করা যাক। টাইটানিকে মজুদ ছিল প্রায় ১০ হাজার পাউন্ডের মতো তাজা মাছ-মাংস, ৪ হাজার পাউন্ড শুকনো মাংস, সাড়ে সাত হাজার পাউন্ডর মতো বেকন এবং হ্যাম, দুই টনের মতো সসেজ, এক টনেরও বেশী আইসক্রিম, ৪০ টন আলু, ৪০ হাজার ডিম, ১৫০০ গ্যালন দুধ, ৩৬ হাজার কমলা, ১ হাজার পাউন্ড আঙ্গুর, ১ হাজার পাউন্ড চাল এবং শুকনো বীন, ৬০০ গ্যালন কনডেন্সড মিল্ক, ২০০ ব্যারেল ময়দা, ৬ হাজার পাউন্ড মাখন, ১ হাজার কোয়ার্টস ক্রীম, প্রায় ৩ টনের মতো টমেটো, সাড়ে ৩ হাজার পাউন্ড পিয়াজ, ১০ হাজার পাউন্ড চিনি, ৭ হাজার লেটুস পাতা, ১ হাজার মিষ্টি রুটি, ৮ শত পাউন্ড চা, ২ হাজার পাউন্ড কফি, ১ হাজার পাউন্ডের মতো জ্যাম এবং আরো অনেক কিছু!
এছাড়া জ্বালানী হিসেবে জাহাজের বাংকারে মজুদ করা হলো ৬,৬১১ টন কয়লা। এখান থেকে জাহাজটির প্রতিদিন ছয়শ টনের মতো কয়লা লাগবে।
প্রথম যাত্রার জন্য সকল প্রস্তুতি ধীরে ধীরে সম্পন্ন হলো।
আগামী ১০ এপ্রিল এখান থেকেই নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হবে টাইটানিক।