নতুন করে জানলে অনেকেই অবাক হবেন, ১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানে জন্মলগ্ন থেকে সুদীর্ঘ ২৩ বছর কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। গভর্নর জেনারেল আর সামরিক জেনারেলগণই ২৩ বছর পাকিস্তানকে শাসন করেছে। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পতনের পরে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেই আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিলেন যে, খুব তাড়াতাড়ি দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হবে। জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ একসাথে হবে। তারিখও নির্ধারণ করা হল। ঘোষণা এল, ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদ এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
’৭০ এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের অন্য চারটি প্রদেশের ন্যায় একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পশ্চিমের প্রদেশগুলো হলো পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ। জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণে জাতীয় পরিষদের মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে পূর্বাংশ পায় ১৬২টি আসন এবং পশ্চিমাংশ পায় ১৩৮টি আসন। জাতীয় পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা আসন রাখা হয় ১৩টি। তন্মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান পায় ৭টি আসন। প্রাদেশিক পরিষদের মোট আসন ৬২১টি। ২১ টি সংরক্ষিত। বাকি আসনগুলো দু’ভাগে ৩০০টি করে দুই পাকিস্তানের জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়। পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশে ৩০০, পাঞ্জাবে ১৮০, সিন্ধুতে ৬০, বেলুচিস্তানে ২০ এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ৪০টি করে প্রাদেশিক সংসদীয় আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রদেশভিত্তিক দল
পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই পুরো পাকিস্তানের শাসনকাঠামো, দেশনীতি ও শাসনকার্য পরিচালনা করেছে পাঞ্জাবের হোমরা-চোমড়াগণ। পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের মধ্যে বিত্ত-বৈভব-প্রভাবে পাঞ্জাবই ছিল সর্বাগ্রে। জনসংখ্যায় পূর্ব পাকিস্তান বড় হলেও দুই পাকিস্তানের বিশাল ব্যবধানের কারণে এবং পাঞ্জাবি শাসক-আমলাগণের শাসনতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে পূর্বাংশের জনগণ বিরাট বৈষম্যের শিকার হয়। সামরিক আমলে পূর্ব পাকিস্তানে উন্নয়ন, অবকাঠামো ও শিল্পোন্নয়ন খাতে একদম নগণ্য পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো, পূর্ব পাকিস্তানের কনজিউমিং পাওয়ার কম। উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তগুলোও পূরণ করতে পারেনি পূর্ব পাকিস্তান।
সত্তরের নির্বাচনের ঘোষণা আসার সাথে সাথে প্রদেশভিত্তিক দলগুলো আবার নড়েচড়ে বসে। পূর্বাংশে আওয়ামী লীগের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা বাকি দলগুলোর প্রভাব ম্লান করে দেয়। পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ছিল সবার আগে। ১৯৬৭ সালে ভুট্টো পিপিপি গঠন করেন এবং তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সভাপতি। বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ওয়ালী খানের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বেশ জনপ্রিয় ছিল।
এ দুই দলের পরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল পিএমএল (কাইয়ুম), পিএমএল (কনভেনশন) ও পিএমএল (কাউন্সিল)। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশগুলোতে আঞ্চলিক দলগুলোর সমান জনপ্রিয়তার কারণে আওয়ামীলীগের ন্যায় এককভাবে কোনো দলকে ভূমিধ্বস বিজয় এনে দিতে পারেনি। মোট ২৪টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের সবকটি আসনে প্রার্থী দাঁড় করালেও পশ্চিমে মনোনয়ন দিয়েছিল মাত্র ৮ জন প্রার্থীকে। এদের কেউই জিততে পারেনি। পিপিপি পূর্ব পাকিস্তানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। পশ্চিমেরও সবকটি আসনে প্রার্থী না দিয়ে জনপ্রিয় এলাকাগুলোতে প্রার্থী দেয় তারা। পিপিপির দেওয়া ১২০টি মনোনয়নের ১০৩টি ছিল পাঞ্জাব আর সিন্ধু প্রদেশে বাকি ১৭টি বেলুচিস্তান আর নর্থ-ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ারে।
জামায়াতে ইসলাম প্রার্থী দিয়েছিল ১৫১টি আসনে। পিএমএল (কনভেনশন), পিএমএল (কাইয়ুম) ও পিএমএল (কাউন্সিল) প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল যথাক্রমে ১২৪, ১৩৩ ও ১১৯টি আসনে। দুই পাকিস্তানের মোট রেজিস্ট্রার্ড ভোটার ছিল ৫,৬৯,৪১,৪০০ জন। তন্মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ৩,১২,১১,২২০ জন। সরকারি তথ্যমতে, ৬৫% ভোট পড়েছিল এ নির্বাচনে।
নির্বাচনী প্রচারণা
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে থেকেই দলগুলো প্রচারণা শুরু করেছিল। আওয়ামীলীগ ১৯৭০ সালের ৭ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামে। ৬ দফাকে নির্বাচনি ম্যানিফেস্টো বানায় আওয়ামীলীগ। জনমনে এমন ধারণার সৃষ্টি হয় যে, নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে ভোট দেওয়ার অর্থ ঐতিহাসিক ৬ দফার পক্ষে রায় দেওয়া এবং একমাত্র তার ফলেই পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। একটি পোস্টার সেসময় ব্যাপক জয়প্রিয়তা লাভ করে। ‘সোনার বাঙলা শ্মশান কেন’ শীর্ষকে নুরুল ইসলাম দুই পাকিস্তানের বৈষম্য তুলে ধরে একটি পোস্টার তৈরি করেন। শিল্পী হাশেম খান সেটি আঁকেন।
বঙ্গবন্ধু ’৭০ এর নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানেও নির্বাচনী সভা করেছিলেন। করাচির ভিক্টোরিয়া রোডে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামীলীগের অফিস। পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব খোরশেদ আলম, আইসিএস। তিনি পাঞ্জাবের একটি আসন থেকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন করে হেরে গিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু করাচি বিমানবন্দরে নামলে উৎফুল্ল জনতা স্লোগানে ফেটে পড়ে। ‘নুহে লায়েহে কিস্তি উসমে সাওয়ার হোকে আয়েহে শেখ মুজিব’ (নুহ আনলো নৌকা, সেটায় চড়ে এলেন শেখ মুজিব), ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে ফেটে পড়ে জনতা। ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধুর বন্ধু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইউসুফ হারুন গাড়ি পাঠিয়ে তাকে নিজের হোটেল হোটেল বিক্সলারি-তে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু সেখান থেকে নিস্তার পার্কে নির্বাচনী জনসভায় যান। সেখানে আগাগোড়া উর্দুতে নির্বাচনী ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান। বঙ্গবন্ধু উপবিষ্ট কামারুজ্জামানকে প্রশ্ন করেছিলেন, “কামারুজ্জামান, মাস্টার্ড ওয়েল কো ক্যায়া বোলতাহে।” কামারুজ্জামান, সরিষার তেলকে কী বলা হয়?
কামারুজ্জামানের জবাব দেন, “ভাইয়া, হাম নেহি জানতা। খলিল আহমেদ তিরমিজী সে পুছলেতা।” কামারুজ্জামান নিজে জবাবটি জানতেন না বিধায় তার পাশে উপবিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদ প্রার্থী (লান্ডি এলাকা) খলিল আহমেদ তিরমিজির কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন বলে জানালেন। অতঃপর তিরমিজির কানে কানে কিছু বলার পরে তিনি মুখ খুললেন, “তিরমিজি নে বোলা, সসসো কা তেল বোলতা।” তিরমিজি বলছেন, এটাকে সরিষার তেল বলা হয়।
বঙ্গবন্ধু কথাটির জের ভাষণের ভেতরও টেনে বললেন, “ইহাকা লোক এক লাফজ বাংলা নেহি বোলসাকতা। হাম লোক উর্দু টুটাফুটা জো জানতা, চালাইয়ে লেতাহে” (এখানকার লোকজন বাংলা একদমই জানে না, আমরা উর্দু যৎসামান্য যা জানি তাতে কাজ চালিয়ে নিতে পারি)। এটি বলেই তিনি আবার ফিরে আসেন সরিষার তেল প্রসঙ্গে। এ পর্যায়ে বলেন, “ইহাপর দাই রুপেয়া, হামারা মুল্লুক মে সাড়ে তিন রুপেয়া, কায়কো? একই পাকিস্তান।” এখানে সরিষার তেল দু’ টাকা, আমাদের দেশে সাড়ে তিন টাকা, কেন? অথচ একই পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুই অংশের অর্থনীতিতে যে চরম বৈষম্য বিরাজ করছিল বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বিষয়গুলো দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেছিলে।
দক্ষিণ বঙ্গে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও পশ্চিমা নেতৃবর্গের ঔদাসীন্য
নির্বাচনী জনসংযোগ চালানোর একপর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ববাংলার কিছু এলাকায় প্রবল বন্যা হয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুললে ইয়াহিয়া খান নির্বাচন পিছিয়ে দেন। জাতীয় পরিষদের ভোটগ্রহণ ৭ ডিসেম্বর এবং প্রাদেশিক পরিষদের ভোটগ্রহণ ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। বন্যা আঘাত হানার পরে, ১২-১৩ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়। সরকার থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ পাঠাতে বিলম্ব করা হয়। বিদেশ থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রী সরকারি গুদামে আটকে রাখা হয়। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। প্রায় ১০ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল তাতে।
বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছুটে যায় দুর্গত এলাকায়। সরকারের তোয়াক্কা না করে ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন তারা। আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রবল ঘৃণাবোধের জন্ম হয় বাঙালি মনে। নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভরাডুবির এটিই ছিল সবচেয়ে তাজা কারণ।
ভোটের ফলাফল
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামীলীগ এককভাবে বিজয়ী হয়। জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ পায় ১৬০টি আসন। বাকি দুটো আসন পান নুরুল আমিন ও চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়।
নুরুল আমিন ’৬৯ সালে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) নামে একটি দল গঠন করেন। পিডিপি থেকে একমাত্র তিনিই জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজা ত্রিদিব রায় চাকমা সার্কেল থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।
জাতীয় পরিষদের ফলাফল ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হল:
দলের নাম |
প্রাপ্ত শতকরা ভোট (শতাংশ) |
প্রাপ্ত আসনসংখ্যা |
আওয়ামী লীগ |
৩৮.৩% |
১৬০ |
পিপিপি |
১৯.৫% |
৮১ |
পিএমএল (কাইয়ুম) |
৪.৫% |
৯ |
পিএমএল (কনভেনশন) |
৩.৫% |
৭ |
পিএমএল (কাউন্সিল) |
৬.০% |
২ |
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি |
২.৩% |
৬ |
জামায়াত-ই-ইসলামী |
৬.০% |
৪ |
জমিয়ত-উলামা-ই ইসলাম |
৪.০% |
৭ |
মারকাজি জমিয়তন-উলামা-পাকিস্তান |
৪.০% |
৭ |
পিডিপি |
২.৯% |
১ |
স্বতন্ত্র |
৭.১% |
১৪ |
মোট |
১০০% |
৩০০ |
পাকিস্তানের চারটি প্রদেশে জাতীয় পরিষদের আসনগুলো ভাগ করা ছিল এভাবে– পাঞ্জাবে ৮২টি, সিন্ধুতে ২৭টি, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ২৫টি এবং বেলুচিস্তানে ৪টি। ভুট্টোর পিপিপি ৮১টি আসনের অধিকাংশই পেয়েছিল পাঞ্জাব আর সিন্ধু থেকে। পাঞ্জাব থেকে ৬২, সিন্ধু থেকে ১৮ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে একটি আসন লাভ করেছিল। বেলুচিস্তানে পিপিপি কোনো আসন পায়নি। বেলুচিস্তানের ৪টির মধ্যে ৩টি আসন পেয়েছিল ওয়ালি খানের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। আওয়ামী লীগ পশ্চিমের চারটি প্রদেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের কোনোটিতেই একটিও আসন পায়নি।
প্রাদেশিক পরিষদে পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল পিপিপি। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পিএমএল (কাইয়ুম) সবচেয়ে বেশি আসন পায়। বেলুচিস্তানে এককভাবে এগিয়ে ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
’৭০ এর নির্বাচন প্রকৃতই ছিল একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। নির্বাচনকে অবাধ ও প্রশ্ননিরপেক্ষ করতে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের প্রার্থীদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নির্বাচনের ফলাফল বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তানে এবং ভুট্টোকে পশ্চিম পাকিস্তানে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করে।
নিয়মানুসারে, শেখ মুজিব সরকার গঠন করবেন। কিন্তু জে এ ভুট্টো বেঁকে বসেন। পাকিস্তানের নিয়ন্তা পাঞ্জাব প্রদেশে ভুট্টো ছিলেন ব্যাপক প্রভাবশালী। তিনি বলেন যে পিপিপি পশ্চিম পাকিস্তান তথা প্রাদেশিক পরিষদের দুটো প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে, আর, শেখ মুজিব মাত্র একটি প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন তবে তিনি রাজধানী অচল করে দেবেন এবং সবচেয়ে খারাপ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন। তিনি সেনা সরকারের নিকট একটি নতুন শাসনবিধি পেশ করেন। বিরোধী দলের আসনে বসার বদলে তিনি জাতীয় পরিষদ দু’ভাগ করে দুই অংশে দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার দাবি তোলেন। এটি সবমহলে ব্যাপক আলোচনা-সামালোচনার জন্ম দেয়। ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু ১ লা মার্চ বেতারে অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা আসলে পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ ফুঁসে ওঠে। শুরু হয় সর্বাত্মক আন্দোলন। ’৭০ এর নির্বাচন বাঙালিকে যে স্বাধিকারবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিল সেই বোধই পরবর্তীতে স্বাধীনতার চেতনায় তাদের দীক্ষিত করে।