মুবারিজুনরা ছিলেন চ্যাম্পিয়ন মল্লযোদ্ধা, তারা খেলাফায়ে রাশেদিনের হয়ে লড়তেন। সেকালের রেওয়াজ অনুযায়ী যুদ্ধ শুরু হতো ডুয়েল বা দ্বন্দ্বযুদ্ধ দিয়ে। এসব ডুয়েলের ফলাফল সাধারণ সেনাদের মনোবলে দারুণ প্রভাব ফেলত, তাই মুবারিজুনদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এরকম আরেকটা এলিট ফোর্স ছিল মধ্যযুগের ইউরোপিয়ান নাইটরা। এখনকার দিনের কমান্ডোরাও অনেকটা একই ভূমিকা পালন করে থাকেন।
ট্রোজান ওয়ার হিরো একিলিসও ছিলেন একজন এলিট যোদ্ধা। ট্রয়ের রাজপুত্র হেক্টরকে দ্বন্দযুদ্ধে হারানো একিলিস ছিলেন একজন অসাধারণ দক্ষ ইনফ্যান্ট্রিমেন (পদাতিক যোদ্ধা)। ট্রোজান ওয়ারে তিনি গ্রিক সেনাপতি আগামেননের হয়ে ট্রোজানদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সানজুর পাঠক হিসেবে আপনি তার ‘আর্ট অব ওয়ার’ এ একিলিসের স্কিল অনুসন্ধান করলে হতাশ হবেন। সানজুর আর্ট অব ওয়ার বস্তুত আগামেননদের জন্য লেখা। তাই সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের ডাক দেবার আগে আপনাকে পূর্বাপর অনেক কিছুই ভাবতে হবে। আর সেসব ভাবনা নিয়েই সানজুর তের অধ্যায়ের দ্বিতীয় অধ্যায়, নাম ‘ওয়েজিং ওয়ার।’
কথায় আছে, সৌখিনরা ভাবে যুদ্ধের ট্যাকটিক্স নিয়ে, আর পেশাদাররা ভাবে যুদ্ধের লজিস্টিক নিয়ে। কারণ যুদ্ধ পরিচালনা বেশ খরচের ব্যাপার। চলুন সানজুর জবানিতে খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ আগের সময়কার যুদ্ধের খরচের বৃত্তান্তটা শুনি।
গড়পরতায় একেকটা সামরিক অভিযানে চার ঘোড়ায় টানা চ্যারিয়ট বা রথ লাগে ১,০০০টি, আরো ১,০০০টি লাগে চার ঘোড়ায় টানা মালবাহী ওয়াগন; আর লাগে এক লাখ বর্মসহ যোদ্ধা। এমন একটি বাহিনী নিয়ে ১,০০০ লি দূরে গিয়ে যুদ্ধ করতে আনুষাঙ্গিক খরচ সহ প্রত্যেকদিনের জন্য গুণতে হয় ১,০০০ স্বর্ণমুদ্রা। তাহলেই ভাবুন আধুনিক একেকটা যুদ্ধের খরচ কী হতে পারে! এক গালফ ওয়ারের খরচই ছিল প্রায় ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, টাকার অঙ্কে পরিমাণটা বুঝতে হলে আপনাকে ৪৫ এর পর ১৩টা শূন্য বসাতে হবে! এবার আপনার ট্রেজারির সামর্থ্য বুঝে আপনিই সিদ্ধান্ত নিন যুদ্ধে করতে চান কিনা, আর যদি চান তাহলে কতগুলো ডিভিশন নিয়ে কত দিনের জন্য লড়তে চান।
স্থিতিকাল
মানুষ জেতার জন্যই যুদ্ধ করে। যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হতে থাকে সৈনিকের অস্ত্রের ধার আর মনোবল ততই কমতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে রাষ্ট্রের সম্পদ চরমভাবে বিনষ্ট হয়। সম্পদের ঘাটতি রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেয় আর এই অবস্থায় স্বভাবতই আপনার প্রতিবেশীরা আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেবার চেষ্টা করবে। তখন যত ভাল উপদেষ্টা আর সভাসদই আপনার থাকুক না কেন, কার্যকর কোনো পরিকল্পনাই আর আপনার পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।
ভিয়েতনামের যুদ্ধ, আফগানিস্তানের যুদ্ধ, গালফ ওয়ার অথবা দুটো বিশ্বযুদ্ধই দেখুন। কোনো পক্ষই কিন্তু এসব দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে তেমন লাভবান হতে পারেনি। তাই আক্রমণ যখন করবেন তখন শত্রুর চোখের পলক পড়ার আগেই সর্বশক্তিতে আক্রমণ করুন আর যুদ্ধ যত সংক্ষিপ্ত করা যায় ততই মঙ্গল। কারণ দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ শেষে কোনো দেশ লাভবান হয়েছে, এমন উদাহরণ ইতিহাসে নেই!
রসদ
যুদ্ধের কুফল সম্পর্কে যদি আপনি ওয়াকিবহাল না থাকেন তাহলে যুদ্ধ করে লাভবান হবার কৌশল আপনি কখনই রপ্ত করতে পারবেন না। একজন কৌশলী সমরবিদ এমনভাবে যুদ্ধ পরিকল্পনা করেন যেন একই যুদ্ধ চলাকালে দ্বিতীয়বার নতুন করে সৈন্য সংগ্রহের প্রয়োজন না পড়ে, আর রসদও যেন দুবারের বেশি সরবরাহ করতে না হয়। অবশ্য ভিনদেশে দীর্ঘদিন যুদ্ধরত সেনাবাহিনীর রসদ যোগাতে যেকোনো রাষ্ট্র্রকেই ভুগতে হয়, আর ভুগতে হয় সেই রাষ্ট্রের জনগণকেও।
যুদ্ধ লাগলে দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়বেই, এর প্রভাব দেশের জনগণের ওপরও পড়ে। ফলে দেশের সার্বিক উৎপাদন হ্রাস পায় আর দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দশ ভাগের তিন ভাগ কমে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধ সরঞ্জামাদি মেরামত আর রসদ যোগাতে সরকারি রাজস্বের দশ ভাগের চার ভাগ খরচ হয়ে যায়। তাই আপনি যদি বিচক্ষণ সেনাপতি হন, আপনি চাইবেন শত্রুর রসদ ছিনিয়ে নিয়ে চলতে। কারণ এই প্রেক্ষাপটে শত্রুর এক দফা রসদ আপনার নিজের ২০ দফা রসদের সমান।
প্রতিদান
প্রাচীনকালে রাজারা যেকোনো যুদ্ধজয়ের পর গনিমতের মালামাল (লুন্ঠিত শত্রু সম্পদ) সৈন্যদের মাঝেই ভাগ করে দিতেন, কারণ একটা যুদ্ধ শেষে আপনার সৈন্যদের কিছু তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি থাকা উচিত। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের জন্য আগে শত্রুকে তো পরাস্ত করতে হবে, আর সেটা সম্ভব যদি আপনি আপনার সৈন্যদের ঠিকমতো তাতিয়ে দিতে পারেন।
হানদের রাজত্বকালে কুয়েই চউ প্রদেশের পু ইয়াং আর পান হাং বিদ্রোহীদের দমন করতে চিন চউ-এর রাজা তু শিয়াং অভিযান চালালেন। প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহীরা পিছু হটল আর তু শিয়াং এর বাহিনী গনিমতের মাল লুটে আরাম আয়েশে মত্ত হয়ে উঠল। অথচ বিদ্রোহীরা তখনও বেশ শক্তিশালী আর তারা পাল্টা আক্রমণের পায়তারা করছিল।
তু শিয়াং দেখল আরাম আয়েশে মত্ত তার এই সেনাবাহিনী যুদ্ধের কোনো মুডেই নেই। তাই তাদের যুদ্ধের মেজাজে ফিরিয়ে আনতে তিনি এক ফন্দি করলেন; তিনি তার সৈন্যদের জন্য একটা শিকারের প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন। পরদিন সবাই শিকার করতে বেরিয়ে যেতেই তু শিয়াং তাদের সব ব্যারাকে আগুন লাগিয়ে দেবার নির্দেশ দিলেন। শিকার শেষে ফিরে এসে সৈন্যরা জানল যে দুষ্ট বিদ্রোহীরা সুযোগ পেয়ে তাদের সব আরাম হারাম করে দিয়ে গেছে। সৈন্যরা সবাই তখন রোষের আগুনে জ্বলছে আর এই সুযোগে তু শিয়াং তাদের এই বলে উস্কে দিল যে, তারা যদি তাদের সেরাটা উজাড় করে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে এই বিদ্রোহীদের পুরোপুরি নিকেশ করে পুড়ে যাওয়া সম্পদের ১০ গুণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সৈন্যদের মাঝে জেদ আর প্রতিহিংসা তখন তুঙ্গে, আর তু শিয়াং পরদিন সকালেই ক্রোধান্ধ এই সেনাদের নিয়ে স্পিরিটেড এক আক্রমণে বিদ্রোহীদের নির্মূল করলেন।
বিজয়ই মুখ্য
রাগ অথবা ক্ষোভের কারণে মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে এড্রিনালিন প্রবাহিত হয়, এর জৈব-রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় মানুষের মন থেকে ভয়ডর উবে যায় আর শরীরে অমানুষিক শক্তি ভর করে। তীব্র ঘৃণা আমাদের হৃদয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্রোধের সঞ্চার করে। শত্রুর বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের মাঝে এমন প্রতিশোধস্পৃহার জন্ম দেয় যে, শত্রুকে শোচনীয় পরাজিত করতে আমরা উন্মাদ হয়ে লড়ি। তাই বর্বরতা আর বিশ্বাসঘাতকতাকে বারবার প্রচার করে আপনার সৈন্যদের রাগ, ঘৃণা আর প্রতিশোধস্পৃহাকে তাতিয়ে দিন।
সানজু বলেন, সৈন্যরা প্রতিপক্ষের সেনাদের মারে, কারণ তারা হত্যার জন্য তাতিয়ে থাকে, আর তারা পরাজিত শত্রুর মাল লুটে নেয়, কারণ তারা ভাবে এটা তাদের প্রাণপণ যুদ্ধের তাৎক্ষণিক পুরস্কার। তাই যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ১০টি চ্যারিয়ট আটক করতে পারবেন, প্রথম চ্যারিয়টটি যারা দখল করল, তাদের পুরস্কৃত করুন। শত্রুর পতাকা নামিয়ে নিজের পতাকা চড়ান, নিজের চ্যারিয়টের সাথে শত্রুর চ্যারিয়টও যুদ্ধে কাজে লাগান।
কিন্তু যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভাল আচরণ করুন, যেন তাদেরও কাজে লাগানো যায়। এভাবেই যুদ্ধে জিতে আরো শক্তিশালী হওয়া যায়। মনে রাখতেই হবে যে, যুদ্ধে জিততে পারাটাই মুখ্য। যুদ্ধের সেনাপতিদের বলা হয় জনতার ভাগ্যবিধাতা, তাদের উপরই জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে। তাই বুদ্ধিমান সেনাপতি মাত্রই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সম্ভাবনাকে সবসময় সযত্নে এড়িয়ে চলেন, আর দ্রুততম সময়ে যুদ্ধের নিস্পত্তি করতে ব্রতী হন।
এতক্ষণ তো জানা গেল আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সানজুর আর্ট অফ ওয়্যার এর ১ম অধ্যায় কেমন হতে পারে সেই সম্পর্কে। সানজুর কথাগুলো এতক্ষণ লেখক আমাদেরকে আমাদের পরিচিত নানা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছিলেন। কেমন হয় যদি সানজুর মূল বক্তব্যগুলো কেমন ছিল সেটা জানা যায়? মেজর ডেল এইচ খান রোর বাংলার পাঠকদের জন্য নিয়ে হাজির হয়েছেন সানজুর মূল লেখা নিয়েই, যা এখন থেকে আমাদের পরিচিত উদাহরণ ব্যাখ্যার পরই থাকবে। উল্লেখ্য, সানজুর মূল বক্তব্যের এই অংশটুকু আগে কোনো মাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি ডেল এইচ খানের পক্ষ থেকে। ফলে রোর বাংলার পাঠকগণ এক আলাদা স্বাদই পেতে যাচ্ছেন আজকের লেখার পরবর্তী অংশ থেকে। – সম্পাদকীয়
অধ্যায় দুই: যুদ্ধ ঘোষণা
সানজুর দ্য আর্ট অব ওয়ার এর দ্বিতীয় অধ্যায়টির চৈনিক নামের সরল বাংলা হতে পারে ‘যুদ্ধ ঘোষণা‘। এ অধ্যায়টিকে আর এল উইং ‘যুদ্ধার্থে আহ্বান করা’ (Challenge) হিসেবে নামকরণ করেছেন। তবে লিওনেল গিলেস, র্যালফ ডি সয়্যার, স্যামুয়েল বি গ্রিফিথ আর চাও-হউ উই সহ বেশিরভাগ অনুবাদকই এ অধ্যায়টিকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ (Waging War) হিসেবে নামকরণ করেছেন। যুদ্ধব্যয় আর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে দ্রুততম সময়ে জয়ী হবার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সমর প্রস্তুতি আর সমরসম্ভারের আয়োজনে সার্বিক যুদ্ধব্যয় সম্পর্কে সানজু বলেন,
(১) যুদ্ধের অভিযান শুরু করতে ন্যূনতম ১০০০টা দ্রুতগতির চ্যারিয়ট, ১০০০টা ওয়াগন আর এক লক্ষ বর্মসহ যোদ্ধা প্রয়োজন হয়।
(২) এক লক্ষ সৈন্যের এমন একটা সেনাদলকে ১০০০ লি দূরে যুদ্ধে পাঠাতে রসদ আর আনুসাঙ্গিক খরচাদি সহ দৈনিক ১০০০ ধাতব মুদ্রা ব্যয় হয়।
সংক্ষিপ্ততম সময়ে যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সানজু বলেন,
(৩) যুদ্ধে বিজয়ই মূল লক্ষ্য। কিন্তু যুদ্ধ লম্বা সময় ধরে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে অস্ত্রের (আক্রমণের) ধার কমতে থাকে, আর সৈন্যদের মনোবলও দমে যেতে থাকে। সবচেয়ে বেশি শক্তিক্ষয় হয় নগর অবরোধ করতে গেলে!
(৪) সেনাবাহিনী যখন দীর্ঘ অভিযানে লিপ্ত হয় তখন রাষ্ট্রের তহবিলে টান পড়বেই।
(৫) যখন তোমার অস্ত্রের ধার কমে যায়, মনোবল দমে যায়, শক্তি হ্রাস পায় আর রাজকোষ শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকে; তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র নায়কেরা তোমার দুরবস্থার সুযোগ নেবার চেষ্টা করবেই। এমন দুরবস্থায় তোমার যত ভাল উপদেষ্টাই থাকুক না কেন, আসন্ন বিপদ ঠেকাতে ভাল কোনো পরিকল্পনা করতে পারা কঠিন।
(৬) তাই যুদ্ধে তাড়াহুড়া নিয়ে করা নিয়ে অনেক বোকামির কথা হয়ত আমরা শুনে থাকি, কিন্তু অযথা দীর্ঘ যুদ্ধে চাতুর্যের তেমন কোনো পরিচয় দেখতে পাওয়া ভার।
(৭) এ কারণেই এমন কোনো দীর্ঘ যুদ্ধের উদাহরণ পাওয়া যায় না যেখানে কোনো রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে লাভবান হয়েছিল। (৮) তাই যুদ্ধে জড়ানোর কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যার পরিষ্কার ধারণা নেই, যুদ্ধ কিভাবে লাভজনক উপায়ে জেতা যায় সে ব্যাপারেও তার স্পষ্ট ধারণা থাকার কথা না।
যুদ্ধে রসদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সানজু বলেন,
(৯) যুদ্ধে যারা সিদ্ধহস্ত তারা নতুন করে সৈন্য সংগ্রহ কিংবা ৩য় দফা রসদ সরবারহের আগেই যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করে। (১০) তারা নিজ দেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে, আর শত্রুর রসদ দখল করে নিজেদের চাহিদা মেটায়। তাই তাদের রসদের অভাব হয় না।
(১১) রাষ্ট্রকে যখন দীর্ঘদিন ধরে দূরদেশে অভিযানরত সেনাবাহিনীকে রসদ সরবরাহ করে যেতে হয়, সে দেশের জনগনকে দারিদ্র্য গ্রাস করতে বাধ্য।
(১২) যেখানেই সেনাদল জমায়েত করে সেখানেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবার কারণে জনগণের সম্পদের অপচয় হয়। আর রাস্ট্রের সম্পদ যখন কমে যায় তখন জনগণের উপর করের বোঝা বেড়ে যায়।
(১৩) বিরতিহীন সমর অভিযানের কারণে নাগরিকদের ১০ ভাগের ৭ ভাগ সম্পদ বিনষ্ট হয়।
(১৪) রাষ্ট্রীয় বাজেটের শতকরা ৬০ ভাগ খরচ হয়ে যায় অভিযানরত সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে।
(১৫) অভিযান চলাকালে শত্রুর কাছ থেকে পাওয়া রসদ নিজেদের রসদের চেয়ে ২০ গুণ বেশি মূল্যবান। তাই অভিজ্ঞ জেনারেল মাত্রই শত্রুর রসদ দিয়ে চলমান অভিযান শেষ করার চেষ্টা করেন।
যুদ্ধে যোদ্ধাদের জন্য প্রণোদনা ব্যবস্থা সম্পর্কে সানজু বলেন,
(১৬) যুদ্ধে সৈন্যরা শত্রু সৈন্যদের হত্যা করে, কারণ শত্রুর প্রতি তাদের প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করে।
(১৭) তারা গনিমতের মাল গ্রহণ করে, কারণ তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা চাই।
(১৮) তাই রথযুদ্ধে যখন ১০ এর বেশি রথ দখল করা যায়, তখন প্রথম রথটা যারা দখল করে, তাদের পুরস্কৃত কর। শত্রুর পতাকা সরিয়ে সেই স্থানে নিজেদের পতাকা লাগাও, তারপর নিজেদের রথের সাথে শত্রুর কাছ থেকে দখল করে নেয়া রথও যুদ্ধে কাজে লাগাও।
(১৯) যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর, আর তাদের যত্ন নিও।
(২০) একেই বলে যুদ্ধে জেতা আর সেই সাথে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠা।
যেকোনো যুদ্ধের মুখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে সানজু বলেন,
(২১) অতএব লম্বা সামরিক অভিযান নয়, বরং যুদ্ধে বিজয়ই মুখ্য। আর তাই যুদ্ধের সময় যে জেনারেল সমরবিদ্যায় পারদর্শী, রাস্ট্রের ভবিতব্য তার উপরই নির্ভর করে আর জনগণ তাকেই তাদের ভাগ্য বিধাতা হিসেবে মেনে নেয়।
এই সিরিজের আগের পর্বসমূহ
১) কেন পড়বেন সানজু’র ‘দ্য আর্ট অফ ওয়্যার’?
২) সানজু: এক রহস্যময় চীনা সমরবিদ এবং দুর্ধর্ষ সেনাপতি
৩) রণ পরিকল্পনা সাজাবেন যেভাবে
ফিচার ইমেজ: Nathan Rouse