গোলাপ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর ও স্নিগ্ধ, তেমনি রূপচর্চায় এর ব্যবহারে ত্বকও হয়ে উঠে উজ্জ্বল, সজীব ও স্নিগ্ধ। শুধু তা-ই নয়, গোলাপজল বলিরেখা দূর করে, ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব কমায় এবং রুক্ষ-শুষ্ক চুলকে করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক কিভাবে গোলাপজল দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন এ সংক্রান্ত দশটি উপায়।
ঘরেই বানিয়ে নিন গোলাপজল
গোলাপজল বানানোর প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। প্রথমে গোলাপের পাঁপড়িগুলো আলাদা করে গোলাপের পাঁপড়ি ছিঁড়ে রাখুন। এরপর চুলায় পরিমাণ মতো পানি দিন। পানি ফুটে আসলে পাঁপড়িগুলো রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। গোলাপের পাঁপড়ির রঙ ফিকে হয়ে আসলে ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকলেই পেয়ে যাবেন প্রাকৃতিক গোলাপজল। এয়ার টাইট বয়াম বা স্প্রে বোতলে করে তা সংরক্ষণ করতে পারেন। ফ্রিজে অথবা রুমের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গোলাপজল ভালো থাকবে।
মেকআপ স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন
গোলাপজল ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। কেমিক্যালযুক্ত মেকআপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার না করে ঘরে বানানো গোলাপজল ব্যবহার করুন। এতে করে মেকআপটাও ভালো হবে আর ত্বকও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে।
রুক্ষ-শুষ্ক চুলের সমাধান
রুক্ষ ও শুষ্ক চুল নিয়ে চিন্তা? গোলাপজল তো আছেই! একটি বাটিতে সমপরিমাণ গোলাপজল ও গ্লিসারিন নিন। এরপর এতে তুলা ভিজিয়ে ১০-১৫ মিনিট মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ শেষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
ফেসিয়াল ক্লিনজার
যেকোনো ধরনের ত্বকের সাথেই মানিয়ে যায় গোলাপজল। প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এরপর একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ গোলাপজল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন।
ক্লান্ত চোখের স্বস্তি
অনেকক্ষণ একনাগাড়ে কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বা কাজ করতে করতে চোখ ব্যথা হয়, জ্বালাপোড়া করে বা ক্লান্তিভাব চলে আসে। সেক্ষেত্রে ঠাণ্ডা গোলাপজলে তুলা ভিজিয়ে চোখে দিলে স্বস্তি পাওয়া যাবে এবং চোখের ফোলাভাবও কমে যাবে।
গরমের দিনে ত্বককে সতেজ ও কোমল রাখে
গোলাপজল ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা দান করে ও পুষ্টি যুগিয়ে আপনাকে দিবে সতেজ চেহারা। তাই গোলাপজলের স্প্রে বোতলটি ফ্রিজে রেখে দিন এবং বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে করে নিয়ে যান। সারাদিনে কয়েকবার মুখে স্প্রে করে দিলে আপনি পাবেন একেবারে সতেজ ও সজীব অনুভূতি, আর চেহারায়ও ফুটে উঠবে তার স্পষ্ট ভাব ।
চুলের কন্ডিশনার হিসেবে গোলাপজল
চুলে শ্যাম্পু করার পর এক কাপ গোলাপজল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গোলাপজল দেয়ার পর আর চুলে পানি লাগাবেন না। এভাবেই চুল মুছে শুকিয়ে ফেলুন। গোলাপজল চুলকে গভীর থেকে কন্ডিশনিং করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
ফেশিয়াল টোনার হিসেবে কাজ করে
ঠাণ্ডা গোলাপজলে নরম তুলা ভিজিয়ে পুরো মুখে আলতো করে লাগান। গোলাপজলে আছে অ্যাস্ট্রিজেন্ট যা লোমকূপ বন্ধ করতে সাহায্য করে। লোমকূপ খোলা থাকলে এর ভেতর ময়লা ঢোকে এবং তখন ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল।
গোলাপজলে ঘুচবে ব্রণের সমস্যাও
গোলাপজলে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে ১ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে তা পুরো মুখে দিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে দিয়ে রাখুন। এরপর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে করে আপনার লোমকূপ পরিষ্কার হবে, মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর হবে এবং ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।
মেকআপ রিমুভার হিসেবে গোলাপজল
গোলাপজলের চাইতে ভালো মেকআপ রিমুভার আর হয় না! একটি বাটিতে গোলাপজল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিন। এতে তুলা ভিজিয়ে মেকআপ তুলে ফেলুন। এই মিশ্রণটি খুব সুন্দরভাবে মেকআপ তুলতে সাহায্য করে এবং ত্বকের গভীর থেকে পুষ্টি যোগায়। তবে অবশ্যই আস্তে আস্তে তুলা দিয়ে মেকআপ তুলবেন এবং বিশেষ করে চোখের চারদিকে আস্তে করে তুলা দিয়ে মুছবেন। আর নয়তো মুখে র্যাশ এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে দেয় গোলাপি আভা
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ বেসন এবং এর সাথে গোলাপজল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রোদে পোড়াভাব দূর করে
গোলাপজলে আছে ভিটামিন বি৩ যা ত্বকের রোদে পোড়া ও লালচে ভাব দূর করবে। অ্যালোভেরার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে তা ত্বকে ব্যবহার করলে রোদে পোড়াভাব আর থাকবে না।
পুরো শরীরকে দিন সতেজতা ও স্নিগ্ধতা
বাদাম তেল অথবা নিয়মিত যে বডি লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করেন, তার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পুরো শরীরে লাগান। এছাড়াও গোলাপজল পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে এর সুঘ্রাণ স্ট্রেস কমিয়ে দিবে এবং আপনি সতেজ অনুভব করবেন।
ওয়াক্স বা হেয়ার রিমুভাল এর পর ব্যবহার করতে পারেন
হাত-পা এর অবাঞ্ছিত লোম উঠানোর পর জ্বালাপোড়া ভাব বা র্যাশের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে এই সমস্যাটি দূর করতে সেই জায়গাগুলোতে গোলাপজল দিতে পারেন।
বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতে গোলাপ জল
গোলাপজল নিয়মিত ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ছাপ সহজে পড়বে না। কারণ এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ-এর গুণ যা বয়সের সাথে সাথে বলিরেখা, চোখের নিচ ফুলে যাওয়া ও বয়সের ছাপের সমস্যাটি এড়াতে বেশ কার্যকরী।
ঠোঁটকে সুন্দর রাখে
বীটমূল পেস্ট করে তার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে দিন। এই পেস্টটি ঠোঁটে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে উঠিয়ে ফেলুন। এই পেস্টটি ব্যবহারে আপনার ঠোঁট নরম ও সুন্দর হবে।
বডি অয়েল হিসেবে কাজ করে
গোসলের পর যদি আপনার শরীর থেকে মনকাড়া একটা গন্ধ আসে, তাহলে তো অবশ্যই ভালো লাগবে, তাই না? আর আপনার এই ভালো লাগার ব্যবস্থা আছে গোলাপজলে। বাদাম তেলের সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে একটি সুন্দর বোতলে ভরে ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিন। গোসল করে এসে পুরো গা হাত-পা মুছে এই বডি অয়েলটি ব্যবহার করুন সারা শরীরে।
ত্বককে রাখে দাগমুক্ত
গোলাপজল ত্বকে নতুন কোষ তৈরিতে এবং লেবুর রসের মধ্যে যে অ্যাসিড আছে তা দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। তাই ত্বকে ব্রণের বা অন্য যেকোনো দাগ দূর করতে লেবুর রসের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
গোলাপ জলের একটি, দুটি নয়, রয়েছে বেশ কয়েকটি গুণ যা রূপচর্চায় বেশ কার্যকরী। তাই আপনার ত্বকের চাহিদা ও সমস্যা বুঝে সেই অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল।