আমরা সকলেই বিল এর (ফটোগ্রাফির) জন্য পোশাক পরে তৈরি হতাম।
– অ্যনা উইন্টোর, এডিটর-ইন-চিফ, ভগ আমেরিকা
ফ্যাশন জগতের সাথে ফটোগ্রাফির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। যদিও আধুনিক প্রযুক্তি চিরাচরিত ফটোগ্রাফির জগতে বেশ খানিকটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, বিশেষত স্ট্রিট স্টাইলের জগতে আধুনিক সেলফির প্রয়োগ ও কার্যকারিতা চিরাচরিত ফটোগ্রাফির তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু এই সেলফির ভীড়েও বিল কানিংহ্যাম চিরাচরিত ক্যামেরার সাহায্যে স্ট্রিট স্টাইল ফ্যাশন ফটোগ্রাফির এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করে গেছেন।
তার শিল্পচর্চার কল্যাণে নিউ ইয়র্কের স্ট্রিট স্টাইল ফ্যাশনের এক ভিন্ন রূপ দর্শকের সামনে উপস্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু ফ্যাশনের বহুল বৈচিত্র্যময় তথা বিচিত্র পোশাক ও অনুষঙ্গকে ৩৫ মিমি লেন্সের সাহায্যে জনসম্মুখে তুলে ধরার নিরলস এই শিল্পী বরবারই ছিলেন প্রচারবিমুখ। ২০১০ সালে প্রামাণ্য চিত্র ‘বিল কানিংহ্যাম নিউ ইয়র্ক’ এর পরিবেশনার পরই তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন।
আটপৌরে গতবাঁধা জীবন তিনি বরাবরই এড়িয়ে চলেছেন। স্বচ্ছন্দ্য ও স্বাধীনতা তার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে আজীবন বহু চাহিদা সম্পন্ন চাকরি তার পিছু পিছু ঘুরলেও তিনি তার সবগুলোকেই বিনা দ্বিধায় উপেক্ষা করেছেন। উইলিয়াম জন ‘বিল’ কানিংহ্যাম জুনিয়র ১৯২৯ সালের ১৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মাসাচ্যুসেটস এর বোস্টনে জন্মগ্রহণ করেন।
একটি আইরিশ ক্যাথলিক পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশনের প্রতি তার ছিল অপ্রতিরোধ্য ঝোঁক। কিশোর বয়সেই তিনি কুড়িয়ে পাওয়া বিভ্ন্নি জিনিস দিয়ে তার মায়ের জন্য একটি হ্যাট তৈরি করেছিলেন, যা তিনি তাকে ১৯৩৯ সালে অনুষ্ঠিত নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার এ পরে যাওয়ার জন্য উপহার দেন। কিন্তু তার মা কখনই সেটি পরেননি। তার ভাষ্যমতে, তার পরিবার কখনই তার সঠিক মূল্যায়ন করেনি, এমনকি তাকে নিয়ে বেশ খানিকটা হতাশও ছিল।
শুধু পরিবারই নয়, বিল হতাশ করেছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কেও। স্কুলের পাঠ শেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার জন্য বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু মাত্র দুই মাস পরেই সেখান থেকেও তাকে বিদায় নিতে হয়। এরপর পরিবারের চাপে তিনি নিউ ইয়র্কে এসে কাকার অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন। পরিবারের আশা ছিল তিনি কাকার বিজ্ঞাপণী সংস্থায় ও ব্যবসায়ে যোগ দিবেন। কিন্তু এবারেও পরিবারকে হতাশ করে তিনি কাকার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে চলে যান এবং ইস্ট ৫২ স্ট্রিটে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করেন।
এই অ্যাপার্টমেন্টটি একই সাথে তার ঘর ও শো-রুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তিনি ফেডোরা ও ট্যুক জাতীয় হ্যাট ও টুপি তৈরি করতেন। এভাবেই ফ্যাশন জগতের সাথে তার সরাসরি কাজের শুরু হয়। একই সময়ে কিছু বাড়তি উপার্জনের জন্য তিনি উইমেন্স ওয়্যার ডেইলি তে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রকাশক জন ফেয়ারচাইল্ড এর সাথে বিতর্কের কারণে তিনি ১৯৬০-এর শুরুর দিকে এই কাজটি ছেড়ে দেন।
বিতর্কের বিষয় ছিল- আন্দ্রে ক্যুরিজেস ও ইভস্ স্যাঁ লরঁ এর মধ্যে কে তুলনামূলক ভালো ডিজাইনার। প্রকাশক আন্দ্রেকে নিয়ে বিলের লেখা আর্টিকলটি প্রকাশ না করলে, তিনি এই কাজটি ছেড়ে দেন। এতটাই দৃঢ় ছিল তার স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব।
অর্থ সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তু। আর স্বচ্ছন্দ ও স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।
– বিল কানিংহ্যাম, প্রয়াত স্ট্রিট স্টাইল ফটোগ্রাফার, নিউ ইয়র্ক টাইমস্
১৯৬৭ সালে তিনি প্রথম একটি ক্যামেরার অধিকারী হন। আর তখন থেকেই তার চিত্রকার হিসেবে জীবনের শুরু হয়। তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে, কোনো অফিসে নয়, বরং স্ট্রিটেই তার কাজের মূল ক্ষেত্র বিস্তৃত। এসময় থেকেই তিনি দ্য ডেইলি নিউজ ও শিকাগো ট্রিবিউনের জন্য কাজ করা শুরু করেন। আর সত্তর এর দশকের শুরুর দিকে তিনি দ্য টাইমস এর সাথে নিয়মিতভাবে কাজ করা শুরু করেন।
প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় এই প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করলেও একজন স্টাফ হিসেবে যোগদানের জন্য সম্পাদকের দেওয়া প্রস্তাব তিনি বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে যখন বাইসাইকেল চালিয়ে ছবি তোলার কাজ করা অবস্থায় একটি ট্রাক তার সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। তারপরই তিনি টাইমস এর প্রস্তাব গ্রহণ করেন। কারণ এই চাকুরির সূত্রে তিনি স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা লাভ করতে পারতেন।
যখন তুমি কারো কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে শুরু করবে, তখনই তোমাকে অন্য কেউ বলে দিবে কী করবে আর কী করবে না। সুতরাং এই সুযোগটাই কাউকে দিও না।
– বিল কানিংহ্যাম, প্রয়াত স্ট্রিট স্টাইল ফটোগ্রাফার, নিউ ইয়র্ক টাইমস্
সদা বিনয়ী এই মানুষটির জীবনযাপন পদ্ধতিও ছিল খুবই সাধারণ। তিনি কোনো মুভি দেখতে যেতেন না। তার কোনো টেলিভিশন ছিল না। ২০১০ সাল পর্যন্ত কার্নেগি হলে একটি স্টুডিওতে তিনি বাস করতেন যেখানে একই সাথে সারি সারি ফাইলে তিনি তার সকল ছবির নেগেটিভ জমা করে রাখতেন। তিনি একজনের জন্য তৈরি একটি সাধারণ বিছানায় ঘুমাতেন এবং একটি শেয়ারকৃত শাওয়ারেই গোসল করতেন। আর প্রতিদিন ওয়েস্ট ৫৫ স্ট্রিটের স্টেজ স্টার ডেলিতে মাত্র ২ ডলারের বিনিময়ে পাওয়া এক কাপ কফি, একটি সসেজ, ডিম ও চিজ দিয়ে সকালের নাস্তা করতেন।
কখনো কখনো সপ্তাহে প্রায় ২০টির মতো ফ্যাশন সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কাজ করলেও তিনি এগুলোর কোনোটিতেই আপ্যায়ন গ্রহণ করেননি বা অতিথিদের সাথে যোগ দেননি। বরং তাকে সেই স্থানেই পাওয়া যেত যেখান থেকে কোনো একটি বিশেষ পোশাক বা অনুষঙ্গের ছবি সবচেয়ে ভালভাবে তোলা যাবে। এমনকি নিজের জীবন নিয়ে তৈরি উপরোক্ত প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানেও তিনি শুধুমাত্র ছবি তুলেছেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্পর্কে লিখলেও ঠিক কী উপলক্ষে তারা একত্রিত হয়েছিলেন সে বিষয়টি তিনি তার কলামে খুব সহজেই এড়িয়ে যান। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেই প্রামাণ্য চিত্রটি কখনোই দেখেননি- এমনটাও শোনা যায়। কখনো নিউ ইয়র্কের নামীদামী হোটেল-রেস্তোরাঁতে আগত অভিজাত শ্রেণীর পরিহিত পোশাক-পরিচ্ছদ তার ছবির বিষয়বস্তু হয়ে উঠতো।
কখনওবা শহরের প্রত্যন্ত অলিগলির ক্রপটপ পরিহিত হিপি। এমনকি বেশ কিছু কুকুরকেও তার মডেল হিসেবে দেখা যায়। তার ছবির বিষয়বস্তু হয়ে ওঠার জন্য শুধুমাত্র একটিই যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল স্বকীয়তা। তার অসংখ্য ছবিতেই পোশাক পরিহিত বা অনুষঙ্গ ব্যবহারকারী ব্যক্তির চেহারা দেখা যেত না। কিন্তু কোনোভাবে বিল কানিংহ্যামের ছবির বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারাটাই ছিল এক ধরনের অর্জন।
এভাবেই স্বকীয় স্টাইলের খোঁজেই তিনি আবিষ্কার করেন বর্তমান ফ্যাশন জগতের সবচেয়ে বড় বিস্ময় আইরিস অ্যাফেল। এই বৃদ্ধা তার বৈচিত্র্যময় অনুষঙ্গ ও অত্যন্ত স্বকীয় পোশাকের কারণে বিলের নজরে পড়েন। আইরিসের প্রায় সকল অনুষঙ্গই বিশেষভাবে তৈরি। তবে তার সবচেয়ে স্বকীয় অনুষঙ্গ হলো বেশ বড় আকারের মোটা ফ্রেমের গোলাকার চশমা জোড়া। ৯৪ বছর বয়সে একটি ম্যাগাজিনের কভার গার্ল এর মর্যাদা লাভকারী এই ফ্যাশন সচেতন বৃদ্ধাকে বিল কানিংহ্যাম সর্বপ্রথম জনসম্মুখে তুলে ধরেন।
বিল তখন আমার ছবি তুলেছিল যখন আমাকে কেউ চিনতোই না। ৯৪ বছর বয়সে আমি যে কভার গার্ল হতে পেরেছি তা সহ ফ্যাশন জগতে আমার সার্বিক সাফল্যের পেছনে তার অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
– আইরিস অ্যাফেল, বিশিষ্ট মার্কিন ব্যবসায়ী
একটি ভাল শটের জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিও নিয়েছেন। সেসময়ে তিনি প্রায় ৩০টি বাইসাইকেল চালিয়েছেলেন। একটির পরে আরেকটি, কারণ সেগুলো কখনো চুরি হয়ে যেতো আবার কখনোবা অতিরিক্ত জীর্ণতার কারণে পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়তো। তার কাজের ধরন যারা জানতেন তাদের কেউই তাকে ছবি তোলা অবস্থায় দেখলে কোনোরকম কথা বলত না বা বিরক্ত করতেন না।
কারণ তিনি এমন ছিলেন যে, একটি ভাল শটের জন্য মানুষের মাথা ডিঙ্গিয়েও ছবি তুলতে দ্বিধা করতেন না। তার স্বকীয় ফটোগ্রাফি কৌশলের কারণে গ্রাজিয়া ম্যাগাজিনের ফ্যাশন ডিরেক্টর রেবেকা লোথর্প তাকে গ্র্যাণ্ডফাদার অফ স্ট্রিট স্টাইল ফটোগ্রাফি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। রেবেকা একজন যুদ্ধের স্থির-চিত্রকারের সাথে তার তুলনাও করেন।
তিনি যেভাবে ছবি তোলেন, তাতে তাকে অনায়াসেই একজন যোদ্ধা ফটোগ্রাফার বলা যায়। এমন একজন যাকে কোনোকিছুই তার প্রত্যাশিত ছবিটি তুলতে বাধা দিতে পারবে না।
– রেবেকা লোথর্প, ফ্যাশন ডিরেক্টর, গ্রাজিয়া আমেরিকা
ফ্যাশনের সদা পরিবর্তনশীল ট্রেণ্ড ও স্বকীয় স্টাইলিং এর খোঁজে জীবনভর ছুটে বেড়ালেও বিল নিজে কখনোই ব্যক্তিগত ফ্যাশন নিয়ে সচেতন ছিলেন না। বরং তার সাদামাটা নীল রঙের ফ্রেঞ্চ ওয়ার্কার্স জ্যাকেট, খাকি প্যান্টস ও কালো স্নিকার্সের কল্যাণে তিনি খুব সহজেই সবার মাঝে পরিচিতি লাভ করেন এবং একজন আইকনে পরিণত হন।
এই চিরাচরিত পোশাক ও তার বাইসাইকেল নিয়েই তিনি শহরের সকল আনাচে কানাচে ফ্যাশন ফটোগ্রাফি করে বেড়াতেন। কোনো কিছুই তার নজর এড়াতো না। ফ্যানি প্যাক, বার্কিন ব্যাগ, জিংঘ্যাম শার্ট বা ফ্ল্যুরোসেন্ট বাইকার শর্টস; সবই তার ক্যামেরায় ধরা পড়তো।
এভাবে ছবি তুলতে তুলতেই তিনি নিজেই একজন তারকায় পরিণত হন। এমনকি কালেভদ্রে তিনি অন্যদেরকেও তাকে নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ দিতেন। ১৯৯৩ সালে ‘কাউন্সিল অফ ফ্যাশন ডিজাইনার্স অফ আমেরিকা’ তাকে পুরস্কৃত করলে তিনি বাইসাইকেল চালিয়েই মঞ্চে উঠে তা গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে তিনি ফ্রান্সে গেলে দেশটির সরকার তাকে ‘লিজিয়ঁ অফ অনার’ খেতাবে ভূষিত করে।
নিউ ইয়র্কের বার্জডর্ফ গুডম্যানে তার একটি লাইফ-সাইজ ম্যানেক্যুইন তৈরি করে সাজিয়ে রাখা হয়। ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্ক ল্যাণ্ডমার্কস্ কনজার্ভেন্সি তাকে একজন ‘লিভিং ল্যাণ্ডমার্ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। একই বছরে দ্য নিউ ইয়র্কার এর ‘অন দ্য স্ট্রিট এণ্ড ইভনিং আওয়ার্স’ কলামে তাকে শহরের ‘আনঅফিসিয়্যাল ইয়ারবুক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ফ্যাশন সম্পর্কে তার ভিন্নধারার কিন্তু একই সাথে বিনোদনমূলক উপস্থাপনাকে তুলে ধরে।
২০১৬ সালের ২৫ জুন ৮৭ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে বিল কানিংহ্যাম মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার কাজের জন্য তাকে ফ্যাশন জগতের একজন নৃবিজ্ঞানী বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। তিনি কোনো বিশেষ উদ্দ্যেশ্য নিয়ে একটি দলের সহায়তায় বেছে নেওয়া পোশাক, অনুষঙ্গ ও মেকাপধারী অভিনেত্রীদের ছবি তুলতে পছন্দ করতেন না।
তার ছবির বিষয়বস্তু বরাবরই ছিল স্বকীয় এবং মৌলিক। তিনি স্ট্রিটকেই ফ্যাশন জগতের বিকাশের সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করতেন। তার কৃতিত্ব এই যে আজ তিনি বেঁচে না থাকলেও তার কাজের মাধ্যমে এই সত্যটি গোটা ফ্যাশন বিশ্ব উপলব্ধি করতে পারছে।
স্ট্রিট স্টাইলের মাধ্যমেই ফ্যাশনকে সবচেয়ে ভালোভাবে তুলে ধরা সম্ভব- এটা সবসময়ই এমন ছিল, সবসময়ই এমন থাকবে।
– বিল কানিংহ্যাম, প্রয়াত স্ট্রিট স্টাইল ফটোগ্রাফার, নিউ ইয়র্ক টাইমস