আপনার কফি সবচাইতে সেরা হয়? আপনার মতো ভালো কফি কেউ বানাতে পারে না? তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্য। আপনি যা মনে করতেন এতদিন, সেটাকেই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। আপনি যখন ‘যার যার কফি, তার তার পছন্দ’ এমন কিছু ভেবে নিশ্চিন্ত মনে কফি পান করেছিলেন, ঠিক সেসময় আসলেই একটা ‘পারফেক্ট কফি’ কী সেটা খুঁজে বের করেছেন এই গবেষকেরা। জানতে চান, এই একেবারে ঠিকঠাক কফি তৈরির পেছনে প্রধান ভূমিকা কোনটি পালন করে? না, কফি পাউডার বা চিনি না। গবেষকেরা অনেক খুঁজে বের করেছেন যে, পানিই সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এক কাপ ভালো কফি বানানোর পেছনে। কফি পান করতে খুব পছন্দ করেন? চলুন না, একবার চোখ বুলিয়েই নিন!
‘ফুড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় সাতটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদগ্রহক ব্যবহার করা হয়েছে। কফি তৈরির ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে গিয়ে দেখা হয়েছে কোন পর্যায়টি একটি কফির স্বাদ কতটা ভালো হবে বা না হবে সেটা নির্ধারণ করে। মোট ৩৬টি ভিন্ন ভিন্ন কফির ফ্লেভার ব্যবহার করা হয়েছে পরীক্ষার সময়। ফ্রুটি, নাটি, ফ্লোরালসহ নানা স্বাদের এই কফিগুলো ভিন্ন ভিন্ন কফি বিন থেকে ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় চেখে দেখেছেন গবেষকেরা। চেষ্টা চালিয়েছেন এর মধ্যে সবচাইতে ভালো স্বাদের কফিটিকে খুঁজে বের করার। এর শেষমেশ দেখা গিয়েছে, কফি তৈরির সময় পানির তাপমাত্রা কত আছে তার উপরে নির্ভর করেই কফির স্বাদ ভালো বা খারাপ হয়।
পানি যে কফিতে খুব বড় ভূমিকা পালন করে তা তো বোঝা গেল। তবে কিছু কথা থেকে যায় এরপরেও। এমআইটি’র কেমিস্ট ক্রিস্টোফার এইচ. হেন্ডন কফির স্বাদ ভালো হওয়া এবং না হওয়া নিয়ে দুজন মানুষের কথোপকথন শোনার পর ব্যাপারটি নিয়ে আগ্রহী হন এবং বুঝতে পারেন, কফিতে কোন রকমের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং পানিতে কতটা ম্যাগনেসিয়াম আছে, তার উপরেও নির্ভর করে কফির স্বাদ কেমন হবে। হেন্ডন যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন স্থানের পানি সম্পর্কে জানার পর বুঝতে পারেন, কফির স্বাদ একেক স্থানে ভিন্ন ভিন্ন হচ্ছে পানির মধ্যে থাকা খনিজের কারণে।
কফি সাধারণত প্রায় একইরকম অবস্থায় থাকে। কফির স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু পানিতে মেশানোর পর সেটার স্বাদ কেমন হবে তা নির্ভর করে পানির উপরে। পানির মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ বেশ কিছু উপাদান থাকে, যেগুলো পানিকে কফি কড়া বা সাধারণ বানানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই যেমন- ম্যাগনেসিয়াম একটু আঠালো ধরনের উপাদান। তাই পানিতে যদি এই উপাদানটি বেশি পরিমাণে থাকে, সেক্ষেত্রে কফি বিন মেশালে কফির স্বাদ কড়া হয়ে যায়। এছাড়া পানিতে অনেক বেশি বায়োকার্বোনেট থাকলেও কফির স্বাদে তিক্ততা বেশি হয়ে যায়। অন্যদিকে সাধারণ পানিতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এক্ষেত্রে কফির তিক্ততা কম পাওয়া যায়। ‘জার্নাল অব এগ্রিকালচার এন্ড ফুড কেমিস্ট্রি’তে হেন্ডন নিজের এই গবেষণা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ‘ওয়াটার ফর কফি’ নামে একটি বইও প্রকাশ করেন তিনি। তিনি নিজের লেখায় কফির স্বাদে পানির ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন। বিস্তারিতভাবে পানি কোথা থেকে আসছে এবং এর প্রভাব কীভাবে কফিতে পড়ছে তা নিয়ে লেখেন তিনি। আর হ্যাঁ, তাপমাত্রার ব্যাপারটি তো আছেই! হেন্ডন শুধু পানির ধরনকেই নয়, পানির তাপমাত্রাকেও কফির স্বাদ বাড়ানো ও কমানোর জন্য দায়ী করেছেন।
কফি খুব যে গরম হতে হবে তা নয়। তবে, এমনটাও নয় যে কফির স্বাদ ঠিক রাখতে সবসময় একই রকম তাপমাত্রা ব্যবহার করতে হবে আপনাকে। মূলত, একেক রকমের কফি বিনের জন্য আলাদা আলাদা তাপমাত্রার পানির প্রয়োজন হয়। গবেষণায় পাওয়া তথ্যানুসারে, অ্যারাবিকা কফি বিন ব্যবহার করতে চাইলে পানির তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ভালো। অন্যদিকে, রোবাস্তা বিনের জন্য আরেকটু কম তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা উচিত। ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কফি পান করলেই সবচাইতে বেশি ভালো স্বাদ পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা। অন্যদিকে, ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় পানি পান না করাটাই ভালো বলে মনে করেন তারা। কারণ, এক্ষেত্রে জিভ পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ছোটোখাট সমস্যা হতে পারে। তবে পানির তাপমাত্রা এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করলেও অন্যান্য আরো কিছু ব্যাপার আছে যেগুলো আপনার কফির স্বাদ বাড়াতে বা কমাতে সাহায্য করে। কতটুকু পানি আপনি ব্যবহার করছেন কফিতে, কফি বিন তাজা আছে কি না, কফি ঠিক কতটা ভালোভাবে মেশানো হয়েছে- এই সবকিছুই এক কাপ কফির স্বাদকে বদলে দিতে পারে।
এক কাপ কফি আপনাকে শুধু ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করবে না। সঠিকভাবে কফি পানের মাধ্যমে আপনি নিজের ওজন কমাতে পারবেন সহজে। ত্বকের ক্যান্সার থেকে আপনাকে দূরে রাখবে কফি। টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। এমন আরো অনেক কারণ আছে কফি পান করার। তবে হ্যাঁ, এজন্য আপনাকে অবশ্যই চিনির পরিমাণ, কফির পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। আর স্বাদ বাড়ানোর জন্য তো গবেষকদের নির্দেশনা আছেই। তো, হয়ে যাক এক কাপ কফি!