সন্তান জন্মদানে সক্ষম প্রতিটি নারীর জীবনের অবধারিত একটি ঘটনার নাম পিরিয়ড। এই একটি জীবনপ্রক্রিয়া ছাড়া আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে মানব জাতির বিস্তার ঘটা হয়তো সম্ভবই হতো না। অথচ এখনও, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই স্বর্ণযুগে এসেও এই স্বাভাবিক ও সার্বজনীন ব্যাপারটিকে নিয়ে আমাদের দেশসহ পৃথিবীর নানা জায়গায় চলে আসছে অসংখ্য অহেতুক গোপনীয়তা, কুসংস্কার, ট্যাবু।
কিন্তু দিন বদলাবে কীভাবে? সমাজের অনেক গভীর থেকে কুসংস্কারগুলোকে শেকড়সহ উপড়ে ফেলার উপায় কী? এই প্রশ্নের উত্তর আসলে দেশের প্রতিটি ঘরেই আছে। নারীর পরিবারের সদস্যরা যদি তার পিরিয়ড সম্পর্কে যথাযথভাবে জানেন এবং নিজেদের দায়িত্বটুকু ঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে এমন লক্ষ লক্ষ পরিবারের বদলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বদলে যেতে পারে গোটা দেশ।
পিরিয়ড নিয়ে জানা শুরু হোক পিরিয়ড শুরুর আগেই
মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই প্রথমবার পিরিয়ডের সময় মেয়েরা ঘাবড়ে যায়, ভয়ঙ্কর কোনো রোগ হলো কিনা- ভেবে দুশ্চিন্তায় ভোগে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে পরিচালিত একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ৩৬ শতাংশ মেয়ে প্রথমবার পিরিয়ড হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানতো না।
শুরুতেই পিরিয়ডকে ট্যাবু হিসেবে জেনে বেড়ে ওঠার কারণে পরবর্তী সময়ও তারা এই বিষয়ে জানতে বা আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করে। ফলে পিরিয়ড সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়, যেমন- পিরিয়ডের সময় নিজের ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব, প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম, অনিয়মিত পিরিয়ড, অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ, মেনোপজ এসব বিষয়েও তারা একেবারে অজ্ঞ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ওদিকে পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছেলেদেরকে পিরিয়ড সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না দেওয়ার ফলে তাদেরও ভুল তথ্য জানবার ঝুঁকি থাকে। ফলস্বরূপ স্বাভাবিক এই শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়াটিকে অনেকে তাদের বিকৃত আনন্দের উৎস বানিয়ে নেয়।
একারণেই মা-বাবা, বড় ভাই-বোন বা বয়োজ্যেষ্ঠ যে কোনো স্বজনেরই উচিত মেয়ে ও ছেলে উভয়কে বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে এই স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে অবগত করা এবং তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলা। একই সঙ্গে এটি যে কোনো ‘রোগ’ নয়, সে ব্যাপারেও তাদের আশ্বস্ত করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক স্কুল-কলেজেও বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সংক্রান্ত অধ্যায়গুলো বাদ দিয়ে পড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। এমন প্রবণতা থেকে শিক্ষকদের বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি।
সাধারণত পিরিয়ডের মতো বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে প্রজনন সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিধায় বড়রা এ ব্যাপারে ছোটদের সঙ্গে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। কেউ এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান, কেউ আবার ভুল বা অবাস্তব ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এমনটা না করে বরং বয়স উপযোগীভাবে এই তথ্যগুলো ধীরে ধীরে ছেলেমেয়েদেরকে জানানো প্রয়োজন, প্রয়োজন ধৈর্য্য সহকারে তাদের জিজ্ঞাসাগুলোর ঠিক ঠিক জবাব দেওয়া। তা না হলে নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণের কারণে তারা জবাব খুঁজবে ভুল উৎস থেকে, এরপর বিভ্রান্ত হবে ভুল তথ্য জেনে।
স্যানিটারি প্যাড কিনতে প্রতিকূলতা
আমাদের দেশের প্রায় সমস্ত জায়গাতেই দোকানে স্যানিটারি প্যাড কিনতে গেলে হরহামেশা হয়রানির শিকার হতে হয় মেয়েদের। দোকানদার বা আশেপাশের লোকজনের ভ্রূকুটি, অশোভন ইঙ্গিত ও মন্তব্যের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদেরকে। সামাজিকভাবে পিরিয়ড সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলোকে দূর করে এটিকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে সবার কাছে তুলে ধরতে পারলেই কেবল মানুষের এমন নেতিবাচক আচরণ বন্ধ করা সম্ভব।
দেখা যায় অনেক মেয়েই তাদের প্যাড কেনার ব্যবস্থা করেন মা-বাবার মাধ্যমে। কিন্তু এই কাজটিতে তাদের ভাইদের অংশগ্রহণ থাকে না বললেই চলে। মনে রাখা দরকার, ‘পিরিয়ড মেয়েলি ব্যাপার’ বলে পুরুষদের যে চিন্তা তৈরি হয়, সেটাকেই আরও উসকে দেয় পরিবারের ছেলেদের এই বিচ্ছিন্নতা। যে পরিবারের সন্তান পিরিয়ডকে স্বাভাবিকভাবে নিতে দেখেই বড় হয় এবং পিরিয়ড বিষয়ে সঠিক শিক্ষা পায়, সে পরিবারের সন্তান নিশ্চয়ই পিরিয়ডকে ঘৃণ্য মনে করবে না। পরিচিত কোনো মেয়েকে মাসের কয়েকটি দিন নামাজ-রোজা থেকে বিরত থাকতে দেখলে খারাপ উদ্দেশ্যে তার কারণ জানতে চেয়ে হয়রানি করবে না। কোনো মেয়ের পোশাকে পিরিয়ডের রক্তের দাগ লেগে থাকতে দেখে কুৎসিত রসিকতায় লিপ্ত হবে না। তাই সন্তানকে সভ্য আচরণে অভ্যস্ত করতে হলেও অত্যন্ত জরুরি এসব শিক্ষা।
তবে কেবল পারিবারিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই একটি সমাজের আমূল পরিবর্তন করতে পারে না। সেজন্যই প্রয়োজন হয় সামাজিকভাবে শিক্ষা ও সচেতনতাকে ছড়িয়ে দেওয়া ও রপ্ত করা। এখানেই চলে আসে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বের কথা। প্রশাসন থেকে শুরু করে গণমাধ্যম কিংবা সরকারি-বেসরকারি-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান- সকলেই সেই দায়িত্বের অংশীদার। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড সেনোরা এক্ষেত্রে হতে পারে দারুণ উদাহরণ। নারীর পিরিয়ডের সময় পরিবারের বাবা, ভাই ও স্বামীদের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন করে তুলতে নিয়মিতই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ‘সংকোচ নয়, সচেতনতা’ এমন শ্লোগান দিয়ে সেনোরা নির্মাণ করেছে অসাধারণ সব বিজ্ঞাপন, যেখানে তারা দেখিয়েছে, নারীর পিরিয়ডকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতিতে পরিবারের পুরুষদের পাশে থাকাটা কোনো সংকোচের বিষয় নয়, বরং সেটাই স্বাভাবিক দায়িত্ব। নারীদের স্বাস্থ্য-সচেতনতা নিয়ে সেনোরার এই নিয়মিত উদ্যোগগুলো দেখে যদি দেশের সব স্তরের প্রতিষ্ঠানই এ নিয়ে আরও উৎসাহী হয়ে উঠে, তাহলেই সম্ভব একটি বড় আকারের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা।
স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারে অনাগ্রহ কিংবা অপারগতার আরেকটি কারণ এর তুলনামূলক উচ্চমূল্য। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পণ্য হওয়া স্বত্ত্বেও দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে প্রতি মাসে প্যাড কেনা প্রায় বিলাসিতারই সামিল। অপরদিকে যেসব পরিবারে সম্পূর্ণ উপার্জন ও ব্যয়ভার পুরুষ সদস্য বহন করেন, সে সকল পরিবারে নারীদের মধ্যে প্যাড কিনতে কিছুটা অনীহাও কাজ করে। এসব ক্ষেত্রে পুরুষ সদস্যগণ স্ব-উদ্যোগে মাসিক খরচের একটি অংশ প্যাড কেনার জন্যে বরাদ্দ করে দিতে পারেন। অনেক পরিবারে আবার মেয়েদের স্যানিটারি সামগ্রী কেনার পেছনে টাকা খরচ করাকে অপচয় বলে মনে করা হয়। তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্যে স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি পণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব এবং অস্বাস্থ্যকর কাপড়, টিস্যু ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। একই সঙ্গে সর্বস্তরের নারীদের জন্যে সর্বনিম্ন খরচে মানসম্পন্ন স্যানিটারি পণ্য সহজলভ্য করা নিয়েও চেষ্টা থাকা দরকার।
শুধু স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারই নয়, জানতে হবে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা
স্যানিটারি প্যাড কতক্ষণ ব্যবহার করা যাবে, কখন এবং কীভাবে বদলাতে হবে, নিজেকে কীভাবে পরিস্কার রাখতে হবে, ব্যবহৃত প্যাড কোথায় কীভাবে ফেলতে হবে, ব্যবহার্য কাপড় ধোয়া ও শুকানোর স্বাস্থ্যকর নিয়ম কী- এমন খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়ে মেয়েদের স্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। প্রাথমিকভাবে এই নিয়মকানুনগুলো শেখানোর দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদেরই।
একই সাথে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজসেবক এবং গণমাধ্যমগুলোকেও। প্রয়োজনমতো পরিস্কার হওয়া ও প্যাড পরিবর্তনের সুবিধার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থানগুলোতে (যেমন শপিং মল, স্টেশন) নারীদের জন্যে পর্যাপ্ত আলো, পানি ও ময়লা ফেলার ব্যবস্থাসম্পন্ন পরিস্কার টয়লেট থাকা জরুরি। এসব স্থানে ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে স্যানিটারি পণ্য সংগ্রহ করার ব্যবস্থা থাকলে নারীরা দারুণ উপকৃত হবে।
প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম এবং পারস্পরিক সম্পর্কে জটিলতা
প্রতি মাসে পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই মেয়েদের প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) দেখা দিতে পারে। এটি মূলত কিছু শারীরিক ও মানসিক উপসর্গের সমষ্টি, যা পিরিয়ড শুরুর সাথে কমে আসতে থাকে। ঋতুচক্রে শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণেই এর উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এ সময় নারীরা পেট, স্তন, মাথা, পিঠ, অস্থিসন্ধি ও পেশীতে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। শরীর ভারী বোধ হওয়া, ব্রণ, ঘুম ও হজমে সমস্যা, ক্লান্তি অনুভব করা, নির্দিষ্ট কিছু খাবারের (যেমন- আইসক্রিম, আলুর চিপস, চকলেট ইত্যাদি) প্রতি সাময়িক আসক্তি তৈরি হওয়া, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন যেমন- মনোসংযোগ করতে সমস্যা হওয়া, উদ্যম হারিয়ে ফেলা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, পছন্দের কাজেও আগ্রহ না থাকা এমন প্রায় দেড়শত রকমের উপসর্গ PMS এর অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ৮৬% নারী PMS এর এক বা একাধিক উপসর্গে ভুগে থাকেন বলে জানিয়েছেন। নারী একাই এ পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দিতে পারেন, তবে সবার আন্তরিক সহযোগিতায় তা তুলনামূলক সহজ হয়ে ওঠে।
এ সময় নারীরা সাধারণত একটু বাড়তি বিশ্রাম, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার প্রয়োজন অনুভব করেন। কিন্তু তাদের এই বাড়তি প্রয়োজনটুকুকে প্রায়শই অলসতা বা কাজ না করার অজুহাত ভেবে তাদেরকে ঘরে এবং কর্মস্থলে হেয় করা হয়। এসময়কার নাজুক মানসিক অবস্থাকে সামলে উঠতে গিয়ে নারীরা নিজেরাই নাজেহাল হতে থাকেন। ঠিক তখন তাদের আপনজনেরা সহমর্মী আচরণের পরিবর্তে উল্টো ঐ নারীকেই তার আচরণের জন্যে দোষারোপ করলে তিনি আরও অসহায় বোধ করতে থাকেন। বিশেষত কর্মক্ষেত্র এবং দাম্পত্যে এমন ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে।
পিরিয়ডের সময় স্ত্রীর মানসিক অস্থিতিশীলতা, হুটহাট রেগে যাওয়া, অতিসংবেদনশীলতার কারণে অনেক স্বামীই শারীরিক ও মানসিকভাবে স্ত্রীকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন এসময়। এই ব্যাপারটি স্ত্রীকে আরও বেশি মর্মাহত করে। এর পরিবর্তে স্বামীরা পিরিয়ড ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে, স্ত্রীর PMS এর সময়কার আচরণের ধরন বোঝার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এলেই পরিস্থিতি অনেকটা সহজ হয়ে যায়। স্বামীকে স্ত্রীর সমস্যার সবটা বুঝতে হবে বা সুপারহিরোর মতো সেগুলোর সমাধান করে দিতে হবে- ব্যাপারটা তা নয়। বরং “স্ত্রী নিজে তার এই পরিবর্তিত আচরণের জন্য দায়ী নয়”- এটুকু বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী আচরণ করা, আগেভাগে স্যানিটারি সামগ্রী কিনে মজুদ রাখা, সময় করে স্ত্রীর খোঁজখবর নেওয়া, তার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটানো, একসাথে হাঁটতে যাওয়া, পিরিয়ডের সময় সাময়িকভাবে স্ত্রীর কোনো খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেলে তা হাতের কাছে প্রস্তুত রাখা, গরম সেঁক দেওয়ার জন্যে হট ওয়াটার ব্যাগ এগিয়ে দেওয়া- এমন ছোটখাটো, সহানুভূতিশীল কিছু আচরণেই সম্পর্কে তিক্ততা এড়ানো সম্ভব।
একই ভাবে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদেরও উচিৎ তাদের নারী সহপাঠীর প্রতি খেয়াল রাখা। কারো পিরিয়ড চলছে জানার পর তার সাথে আচার আচরণে বাড়তি সহনশীল থাকা, হঠাৎ কারো পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে তাকে সাহায্য করাটাই বন্ধুদের দায়িত্ব। যেসকল প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মী রয়েছেন, তাদের উচিৎ পিরিয়ডের সময়ও স্বচ্ছন্দ্যে কাজ করার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। নারীদের এই বিশেষ সময়ের জন্যে আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, বিশ্রামঘর, পৃথক টয়লেট, হ্যান্ডওয়াশ/স্যানিটাইজার এবং PMS এর উপসর্গজনিত কষ্ট লাঘবের জন্যে কিছু ঔষধ ফার্স্ট এইড বক্সে মজুদ রাখাও জরুরি দরকার।
বাংলাদেশ জনতাত্ত্বিক ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০০৪ অনুযায়ী, চিকিৎসাসেবা নেওয়ার ব্যাপারে দেশের অর্ধেকেরও বেশি নারী স্বামীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। এমনকি পরিবারের পুরুষ সদস্যটি যদি মনে করেও থাকেন যে তার স্ত্রী বা কন্যার চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তারপরও এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী একা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে পারেন না। এছাড়া প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি তো আছেই। যার ফলে পিরিয়ডে যথাযথ পরিচর্যার অভাবে উদ্ভূত মারাত্মক সব রোগবালাই অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার বাইরেই থেকে যায়।
এক্ষেত্রেও বিকল্প নেই পারিবারিক সচেতনতার। পিরিয়ডে পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়মকানুন যেমন নারীদের সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে, তেমনি কী কী লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, সেই বিষয়েও পরিবারের সদস্যদের জেনে রাখতে হবে। নিশ্চিত করেই বলা যায়, পিরিয়ড নিয়ে যদি বাসার সবাই সচেতন থাকে, তাহলে বাসার স্ত্রী-কন্যা-মায়ের সাথে স্বামী-বাবা-সন্তানের সম্পর্কগুলো আরও সহজ আর সুন্দর হবে, পরিবার হবে নির্ভরতার প্রথম জায়গা।
পিরিয়ড প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ঘটনা, তবে গোপনীয় নয়। এটি নিয়ে অহেতুক লুকোছাপা কেবল জটিলতা আরও বাড়াবে। তাই পিরিয়ড নিয়ে কোনও কুণ্ঠা নয়, হীনমন্যতা নয়। বরং পৃথিবীর বুকে নিজের প্রজাতির ধারা অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়ার সক্রিয় অংশীদার হিসেবে নারী গর্বিত হোক। পরিবার তার এই পদচারণায় পাশে থাকুক সহায়ক হয়ে, বাধা হয়ে নয়।