বিড়াল, কুকুর, খরগোশ থেকে শুরু করে নানারকম পাখী- পোষা প্রাণী হিসেবে মানুষ আপন করে নিয়েছে এমন অনেককেই। প্রাণীগুলোও মানুষের সাথে মিশেছে বন্ধুর মতন, হয়ে গিয়েছে খুব কাছের একজন। তবে এর উল্টো ঘটনাও কিন্তু কম না। জেনেই হোক কিংবা না জেনে, অনেক সময় নিজের মানুষ বন্ধুটির মৃত্যু ডেকে এনেছে এই পোষা প্রাণীরাই। আর একেকজনের মৃত্যু যেভাবে হয়েছে সেটা দেখলেও অবাক হতে হয়। চলুন আজ তাহলে একটু অবাক হওয়া যাক।
তোতা যখন ভয়ংকর
১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর। নিজের বাড়িতে বেশ ভালোই ছিলেন ৬৬ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা ফ্যানি স্টুয়ার্ট। তার সর্বক্ষণের একমাত্র সঙ্গী ছিলো পোষা তোতা ডলি। স্টুয়ার্ট যেমন ডলিকে ভালোবাসতেন, তেমনি ডলিও ভালোবাসতো স্টুয়ার্টকে। কিন্তু এই ডলিই শেষ পর্যন্ত স্টুয়ার্টের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সেদিন ডলি হঠাৎ করেই রান্নাঘরের স্টোভের গ্যাস রেগুলেটরের উপরে বসে পড়ে। ফলে রেগুলেটর ঘুরে যায় আর পুরো ঘর হয়ে পড়ে গ্যাসে ভর্তি। স্টুয়ার্ট জানতেন না কিছুই। প্রতিবেশীরা পাশের বাড়ি থেকে গ্যাসের গন্ধ পেয়ে খুঁজতে গিয়ে দেখেন স্টুয়ার্ট মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর পুরো ঘরে গ্যাসের কটু গন্ধ। মাঝখানে একবার জ্ঞান ফেরে স্টুয়ার্টের। এই কান্ড যে ডলির সেটা জানান তিনি সবাইকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রাণের তোতার জন্য মারা যান ফ্যানি স্টুয়ার্ট।
বিড়ালের কামড়
২০১৬ সালে টরেন্টো জেনারেল হাসপাতালে ৬৮ বছর বয়স্ক একজন অসুস্থ মানুষ ভর্তি হন। পেটব্যথা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়ার মতন বেশকিছু সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখতে পান মানুষটির শরীরে একধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে। পেনিসিলিন দিয়ে কিছুদিনের মতন চিকিৎসা চালালেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। ১৩ দিন পর মারা যান মানুষটি।
তার মৃত্যুর পরেই বুঝতে পারে চিকিৎসকেরা যে ঠিক কী কারণে এমনটা হয়েছে। মূলত, এই ঘটনার ২ মাস আগেই মানুষটির পোষা বিড়াল তার হাত কামড়ে দেয়। তখন সেটা মারাত্মক কিছুতে রূপ নেয়নি। কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপান করার কারণে বিড়ালের মুখ থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবেই জেঁকে বসার সুযোগ পেয়েছে মানুষটির শরীরে ধীরে ধীরে। ব্যস, এটুকুতেই সব শেষ। কে জানতো, বিড়ালের ছোট্ট একটা কারণে মরতে হবে তাকে?
কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে
১৯৮১ সালে নিজের বন্ধুর কুকুর মুজিকে নিয়ে ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন অ্যালেন কিরওয়ান। তাকে বারবার সাবধান করে দেওয়া হয়েছিলো পার্কের হট স্প্রিঙয়ের ব্যাপারে। সেখানে তখন তাপমাত্রা ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে একবার তাতে পা ডোবানো আর মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাওয়া ছিলো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিরওয়ানের কি মাথা খারাপ? কেন তিনি ঐ গরম পানিতে ডুবতে যাবেন? হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন কিরওয়ান। কিন্তু কে জানতো এই হাসি বেশিক্ষণের জন্য নয়?
হট স্প্রিঙয়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন কিরওয়ান। এমন সময় মুজি দৌড়ে গিয়ে গরম পানির ভেতরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার ইচ্ছে ছিল একটা ডাইভ দিয়ে চলে আসা। এর ভেতরে যদি মুজিকে পাওয়া যায় তো ভালো, নাহলে ফিরে আসবেন তিনি। ২৪ বছর বয়স্ক কিরওয়ান ঘটনার ভয়াবহতা তখনো আন্দাজ করতে পারেননি হয়তো। যতক্ষণে তীরে উঠে এলেন ততক্ষণে শরীরের ১০০ শতাংশ জ্বলে গেছে তার। পরদিনই মৃত্যুবরণ করেন কিরওয়ান।
কুকুরের গুলিতে মৃত্যু
পেরি আলভিন প্রাইস ছিলেন স্বভাব শিকারী। নিজের প্রিয় পোষা কুকুর আর্থারকে নিয়ে শিকার করতে বেরোতেন তিনি। ঘটনাটি ২০০৮ সালের। সেই বছর জানুয়ারির ৫ তারিখে কুকুর আর্থার আর বন্ধু গ্রোবার্গকে নিয়ে শিকারে যান প্রাইস। আর সেখানেই একটা বুনো হাঁসকে গুলি করেন তিনি। হাঁসকে মারার পর সেটাকে নিয়ে আনার জন্য আর্থারের কাছে যান প্রাইস। আর্থার ছিলো দড়ি দিয়ে বাঁধা। তার দড়ি খোলার আগে শটগানটি পাশেই রাখেন প্রাইস। আর ঠিক সেসময়েই ছাড়া পেয়ে প্রথমেই বন্দুকের উপরে পা রাখে আর্থার। ব্যস! সে কেবল এটুকুই করেছিলো। তবে এটুকুর জন্যেই জীবন খোয়াতে হয় প্রাইসকে।
দূর থেকে বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে প্রাইসের কাছে যান গ্রোবার্গ। সেখানে উরুতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি প্রাইসকে। বেশ রক্ত ঝরার কারণে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি তখন এই শিকারীকে। তবে পরবর্তীতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে হত্যাকারী হিসেবে আর্থারকেই দায়ী করে সবাই।
ভালোবাসা যখন মৃত্যুর কারণ
৭৪ বছর বয়সী ফ্লোরেন্স লেনাহানের অসম্ভব ভালোবাসা ছিলো সমস্ত দুঃস্থ প্রাণীদের জন্য। তাই তিনি একে একে নিজের আশ্রয়ে বিড়াল, কুকুর থেকে শুরু করে লামা- সব প্রাণীকেই জায়গা করে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত যে লামার হাতে তার মৃত্যু হয় সে অবশ্য ছোটবেলা থেকেই ফ্লোরেন্সের কাছেই বড় হয়। একদম বাচ্চাকাল থেকে ফিডারে করে দুধ খাইয়ে বড় করেন ফ্লোরেন্স পোষা লামা বেবি ডলকে। অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি লামাটিকে। বেবি ডলও কম ভালোবাসতো না ফ্লোরেন্সকে। আর এই অত্যাধিক ভালোবাসাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ফ্লোরেন্সের জন্য।
সেদিন আর সবদিনের মতোই বেবি ডলের কাছে আসছিলেন ফ্লোরেন্স। তাকে দেখেই দূর থেকে ছুটে আসে লামা। আর কাছাকাছি এসে সামলাতে না পেরে ফ্লোরেন্সের উপর দিয়ে চলে যায় সে। কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান ফ্লোরেন্স। খানিক বাদে ফ্লোরেন্সের বন্ধু কেভিন স্কট আসেন সেখানে আর দেখতে পান ফ্লোরেন্স পড়ে আছে মাটিতে। চেষ্টা করা হয় তাকে বাঁচানোর। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
সাপ যখন শত্রু
গল্পটা আমান্ডা রুথ ব্ল্যাক নামের ২৫ বছর বয়সী এক নারীর। রুথ কাজ করতেন এক সরীসৃপের বিভাগে। রুথ আর তার স্বামীর নিজেরও কিছু সাপ ছিলো। আর সেগুলোর ভেতরে একটি ছিলো ডিয়াবলো। দশাসই চেহারার এই পাইথনটিকে অন্য সব সাপের চাইতে একটু যেন বেশি ভালো লাগতো রুথ দম্পতির। সাপের সাথে অনেক বেশি সহজ ছিলেন রুথ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব কিছুই কোনো সাহায্য করেনি তাকে।
তখন রুথের স্বামী নেভিতে কাজ করছিলেন। সমুদ্র থেকে ফিরে সেবার রুথকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখলেন তিনি। মারা গেছে রুথ। পাশে ডিয়াবলোর খাঁচাটা ফাঁকা। পরবর্তীতে তদন্ত করে জানা যায় যে, ডিয়াবলোকে ঔষধ দেওয়ার সময় মারা যান রুথ। ডিয়াবলো সুযোগ পেয়ে রুথের ঘাড়ে জোরে চাপ দেয়। আর অতিরিক্ত চাপের ফলে মারা যায় রুথ।
পোষা হরিণ
টেক্সাসের জেরাল্ড রাশটনের শখ ছিলো নানা প্রজাতির প্রাণীকে এনে নিজের বাড়ির পেছনে পেলে-পুষে বড় করা। এই প্রাণীদের ভেতরে একটি ছিলো হরিণ। না, কখনো খারাপ আচরণ করেনি হরিণটি রাশটনের সাথে। কিন্তু সেদিন কী হলো কে জানে, রাশটন হরিণের কাছে যেতেই বুনো আচরণ করে তেড়ে আসলো হরিণটি। তারপর সোজা নিজের ধারালো শিং দিয়ে আক্রমণ করলো রাশটনকে। পায়ের নিচে পদদলিত করলো কিছুক্ষণ। দূর থেকে দেখে রাশটনের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসককে জানায়। হরিণটিকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। কিন্তু রাশটন? তাকে আর বাঁচানো যায়নি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।