মানুষের বেড়ে উঠা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস তৈরি হওয়ার প্রাথমিক জায়গাটি হচ্ছে পরিবার, শিশুর বেড়ে উঠায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে সামাজিক কাঠামোরও। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধের বিকাশ ঘটেছে, পারিবারিক কাঠামো দূর্বল হয়েছে, অস্থিতিশীল হয়েছে সামাজিক কাঠামো। ভঙ্গুর পারিবারিক আর সামাজিক কাঠামোর পার্শ্ব ফলাফল হিসেবে উত্থান ঘটেছে পরিবার থেকে বিচ্যুত শিশুর। অভিভাবকহীন এসব শিশুর প্রাথমিক জায়গা হয় পথে, তাদের সাথে যুক্ত হয় অভিভাবক থাকার পরেও পরিবার ছাড়তে বাধ্য হওয়া শিশুরা। সাধারণভাবে, এদের ডাকা হয় ‘পথশিশু’ নামে।
বর্তমান পৃথিবীর সব প্রান্তেই পথশিশুদের উপস্থিতি রয়েছে। পথশিশু যেমন আছে বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পথশিশু আছে ইউরোপের দেশগুলোতে, পথশিশু আছে আফ্রিকার সদ্য স্বাধীন রিপাবলিকগুলোতে, আছে এশিয়ার দেশগুলোতেও। সাধারণত, পথশিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ে মেগাসিটিগুলোতে, যেখানে জীবন আর অর্থনীতির চাকা তুলনামূলকভাবে বেশি গতিশীল।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পথশিশুদের বেড়ে উঠার পদ্ধতি আলাদা, তাদের গড়ে উঠার জীবনবোধ হয় আলাদা, জীবনধারণের উপায় আর পদ্ধতিতেও আছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যকে বিবেচনা করে, এই আর্টিকেলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে থাকা পথশিশুদের জীবনাচার নিয়ে আলোচনা করা হবে, ব্যাখ্যা করা হবে তাদের অপরাধী হয়ে উঠার পথ পরিক্রমা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পথশিশু
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একটা দীর্ঘ সময় ছিল ইউরোপীয় উপনিবেশ শাসনের অধীনে, বৈশ্বিক দক্ষিণের এই দেশগুলো স্বাধীনতা পেয়েছে গত শতাব্দীতে। অধিকাংশ দেশেই শাসনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা এসব দেশে তুলনামূলকভাবে কম, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়নি, রাজনীতিতে ধর্মীয় নেতাদের সীমাহীন প্রভাব রয়েছে, রাষ্ট্র নাগরিকদের অধিকাংশ মৌলিক অধিকারই পূরণ করতে পারে না।
এসব দেশের আরেকটি সার্বজনীন দিক হচ্ছে, বিভিন্ন বড় শহর আর উপশহরে পথশিশুদের উপস্থিতি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতে এক কোটি দশ লাখ পথশিশু রয়েছে, বাংলাদেশে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা প্রায় ষোলো লাখ। পাকিস্তানেও প্রায় পনেরো লক্ষ পথশিশু রয়েছে, যাদের বড় অংশের আবাস ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোরের মতো বড় বড় শহরগুলো। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাতে পথশিশুর সংখ্যা পনেরো থেকে বিশ হাজারের মধ্যে, ভূবেষ্টিত দেশ নেপালে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা পাঁচ হাজারের মতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে প্রকৃত হিসাবে কত পথশিশু রয়েছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলেই প্রায় লক্ষাধিক পথশিশু আছে। ভুটানে পথশিশু থাকার কোনো তথ্য শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে নেই।
এই পথশিশুদের মধ্যে আবার দুইটি বড় ভাগ আছে। একশ্রেণির পথশিশু দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় এসে পথে কাঁটায়, যারা আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক কুঁড়োয়, রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে বসা বিভিন্ন দোকানে কাজ করে, জুতা সেলাইয়ের কাজ করে। দিনের শেষে একটা নির্দিষ্ট আয় নিয়ে এরা ঘরে ফিরে যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তাদের বসবাস সাধারণত হয় বস্তিতে। দ্বিতীয় শ্রেণির পথশিশুরা অর্থনৈতিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য প্রথম শ্রেণির শিশুদের মতোই কাজ করে, তবে দিনের শেষে এসেও এরা সাধারণত পথেই থেকে যায়, পথই হয় তাদের আবাসস্থল। পথশিশুদের মধ্যে আবাসস্থল নিয়ে এই বিভাজন থাকলেও, পথের সাথে তারা আত্মিককভাবে জুড়ে যায়, এখান থেকেই তাদের বন্ধুমহল গড়ে উঠে, একটা ভিন্ন সমাজ গড়ে তোলে নিজেদের মধ্যে।
পথশিশুরা কীভাবে অপরাধের সাথে জড়ায়?
পথশিশুদের প্রত্যেকের পথে আসার আলাদা প্রেক্ষাপট আছে, নিজেদের আলাদা ব্যক্তিত্ব আছে, আছে জীবনবোধের বৈচিত্র্যও। এই বৈচিত্র্যের মধ্যেও, প্রত্যেকের এসে সম্মিলন ঘটে অর্থনৈতিক প্রয়োজনের জায়গাটিতে, নিরাপত্তার প্রয়োজনে গড়ে উঠে গ্রুপ। একেকটি গ্রুপে তিন থেকে পনেরো জনের মতো পথশিশু থাকে, যারা একসাথে দিনের বেলায় কাজ করে এবং দিনশেষে একসাথে পথে বা বস্তিতে রাত্রিযাপন করে। পথশিশুদের গ্রুপগুলোর মধ্যে এলাকা ভাগ করা থাকে সাধারণত। যেসব এলাকাতে পথশিশুদের গ্রুপগুলো কাজ করে, সাধারণত সেসব এলাকাতে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদেরও সংগঠন থাকে। অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সংঘগুলোর সাথে তাদের একধরনের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। যোগাযোগের একপর্যায়ে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সংগঠনগুলোর সাথে পথশিশুদের গ্রুপগুলো একীভূত হয়ে যায়।
একীভূত অপরাধী সংগঠনগুলো একটি সুস্পষ্ট চেইন অব কমান্ড বা পদসোপান মেনে চলে। সংগঠনের শীর্ষে থাকে একজন ‘মাস্তান’, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যিনি ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত হন, ক্ষেত্রবিশেষে তার পরিচয় হয় ‘গডফাদার’ হিসেবেও। শীর্ষ পর্যায়ে থাকা মাস্তানের অধীনে কয়েকজন সহকারী কাজ করে, যারা বয়সে তুলনামূলকভাবে মাস্তানের বয়সের চেয়ে কম এবং পথশিশুদের বয়সের চেয়ে বেশি হয়। অপরাধী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কাঠামো সাধারণত এই একজন মাস্তান এবং কয়েকজন সহকারীকে নিয়েই গঠিত হয়। সহকারীদের মধ্যে একজন অন্যদের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হন সাধারণত, যিনি পরিচিতি পান মাস্তানের ডানহাত হিসেবে। অপরাধী সংগঠনগুলর তৃণমূল কাঠামোতে থাকে পথশিশুদের গ্রুপগুলো, একটি অপরাধী সংগঠনের অধীনে কয়েক ডজন পর্যন্ত পথশিশুদের গ্রুপ থাকতে পারে।
একজন সহকারীর অধীনে সাধারণত একটি পথশিশু গ্রুপ থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে একজন সহকারীর অধীনে থাকে কয়েকটি গ্রুপও। পথশিশুদের গ্রুপে সাধারণত কাঠামোগত পদসোপন থাকে না। মাস্তানের সহকারীই সাধারণত গ্রুপের প্রধান হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়াতেই, পথশিশুরা অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবেই, অর্থনৈতিক প্রয়োজন আর নিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধী সংগঠনগুলোর সাথে জড়িয়ে যায়।
চাঁদাবাজি ও এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ
পথশিশুদের অপরাধী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। তার মধ্যে প্রাথমিক ব্যবহার হয় চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে। মূল অপরাধী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে ফুটপাতের দোকান, ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে পথশিশুদের গ্রুপগুলো চাঁদা আদায় করে। এই চাঁদা মূল অপরাধী সংগঠনের ‘ফান্ডে’ জমা হয়, সেখান থেকে একটা অংশ পথশিশুদের দেওয়া হয় ‘কমিশন’ হিসেবে।
দক্ষিণ এশিয়ার কিছু কিছু জায়গাতে নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে চাঁদা আদায় করে অপরাধী সংগঠনগুলো। নিরাপত্তা চাঁদার অর্থ, ব্যবসায়িক বা অন্যান্য কাজে অপরাধী সংগঠনগুলোর সদস্যরা ব্যবসায়ীদের বিব্রত করবে না। বর্তমানে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শহরতলিতে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হলে চাঁদা দিতে হয়, নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে চাঁদা দিয়ে হয়, চাঁদা দিতে হয় রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদেরও। এসব চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে পথশিশুরা ব্যবহৃত হয় ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে।
এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাতেও পথশিশুদের গ্রুপগুলো ব্যবহৃত হয়। এরজন্য অন্য পথশিশুদের গ্রুপের সাথে সংঘাতে জড়ায় স্থানীয় পথশিশুদের গ্রুপগুলো, এ ধরনের সংঘাত অনেক সময়ই নশৃংস রূপ নেয়।
রাজনৈতিক প্রয়োজনে সংঘাত ও সহিংতা
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে সংঘাত তৈরির ক্ষমতাকে রাজনৈতিক প্রতিপত্তির গুরুত্বপূর্ণ একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেকোনো রাজনৈতিক দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে রাস্তায় তাই নিয়মিত আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যাত্রীবাহী বাসে আগুন জ্বালানো হয়, আগুন জ্বলে পণ্যবাহী ট্রাকেও। অনেক সময় এসব সহিংসতার শিকার হয় রেলক্ষেত্রও।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো সরকারপক্ষকে চাপে রাখতে প্রায় নিয়মিতভাবেই হরতাল ডাকে। হরতালের দিন গণপরিবহন চলতে দেওয়া হয় না, চলে না ব্যক্তিগত যানবাহনও। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে, সাধারণতভাবে বন্ধ থাকে অফিস আদালতও। অনেক সময়ই, অগ্নিকাণ্ড, বাস পোড়ানো, ট্রাক পোড়ানোর ঘটনাগুলোতে হরতালের সফলতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনীতিবিদদের হয়ে এসব সংঘাত তৈরি, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটায় পথশিশুদের গ্রুপগুলো, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ এর মধ্যে।
অপরাধী সংগঠনের যেই সাংগঠনিক কাঠামো এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার শীর্ষে সাধারণত থাকে একজন মাস্তান। এই মাস্তানকে তার অপরাধমূলক কাজ পরিচালনার আইনি সুরক্ষা প্রদান করেন রাজনীতিবিদেরা। বিনিময়ে, রাজনীতিবিদেরা প্রয়োজনের সময় অপরাধী সংগঠনের মাস্তানের কাছে সংঘাত তৈরির নির্দেশনা দেন। মাস্তান কাজে লাগায় তার নিয়ন্ত্রণে থাকা পথশিশুদের গ্রুপগুলোকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই প্রক্রিয়াটি গড়ে উঠেছে, কারণ এখানকার রাজনীতিতে সংঘাত তৈরির ক্ষমতাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং পথশিশু গ্রুপগুলো খুব অল্প খরচে রাজনীতিবিদদের চাহিদামতো সংঘাত তৈরি করে দেয়, ঘটায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
এসব অপরাধের সাথে যুক্ত হতে পথশিশুদের সাধারণত বিবেকবোধে বাঁধে না। দোভাষীর মাধ্যমে একাধিক অপরাধী পথশিশুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লন্ডনের কিংস কলেজের আইন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি অ্যাটিকসন শেপার্ড। তার নেওয়া সাক্ষাৎকার বলছে, পথশিশুরা এসব অপরাধ করার সময় বা করার পরে অপরাধবোধে ভোগে না, কারণ এটিকে তারা দেখে তাদের ‘নিয়মিত কাজ’ বা ‘চাকরি’ হিসেবে।
মাদক ব্যবসা
ফুল বিক্রি করে পথশিশুদের যা আয় হয়, মাদকের ব্যবসায় আয় হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থনৈতিক প্রয়োজনগুলোকে সামনে রেখে তাই পথশিশুরা অল্প বয়সেই মাদক ব্যবসার বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে যায়। অপরাধী সংগঠনগুলো তখন পথশিশুদের দিয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদে মাদকের পরিবহন করে, মাদক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয় পথশিশুরাই। এই প্রক্রিয়াতে, একসময় তারা নিজেরাও অল্প বয়সেই বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। ফলে, পথশিশুরা বেড়ে উঠার সাথে সাথে মাদক ব্যবসার একটা অলঙ্ঘনীয় ফাঁদে আঁটকে যায়।
ভাড়াটে অপরাধী
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পথে বেড়ে উঠা শিশুদের অপরাধের ধরন বদলাতে থাকে। শুরুতে হয়তো যারা ফুল বিক্রি করে খাবার জোগাড় করতো, ময়লার ভাগাড়ে প্লাস্টিক কুড়াতো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে অপরাধী সংগঠনগুলর সাথে যুক্ত হয় মাদক ব্যবসায়, যুক্ত হয় সংঘাত তৈরি সহ চাঁদাবাজি, আগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। এর পরবর্তীতে এরা মাদক ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত হয়। সর্বশেষ ধাপে পথশিশুরা কাজ করে ভাড়াটে অপরাধী হিসেবে, অনেকে তৈরি করে নিজের গ্যাং।
ভাড়াটে অপরাধী হিসেবে পথশিশুরা সাধারণত ১৫ বছরের পরে কাজ করে। অনেক সময় ভাড়াটে অপরাধের ফরমাশ আসে পথশিশুর যুক্ত থাকা অপরাধী সংগঠনের মাস্তানের কাছ থেকে, অনেক সময় পথশিশুরা ‘ফ্রি এজেন্ট’ হিসেবেও কাজ করে। দক্ষিণ এশিয়াতে এ ধরনের অপরাধী খুঁজে পাওয়া কঠিন না। অর্থের যোগানের উপর ভিত্তি করে এরা যেকোনো ধরনের অপরাধ করতে পারে, হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত।
পথশিশুদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়ভার
পৃথিবীর সব প্রান্তেই পথশিশুদের উপস্থিতি আছে, শিল্পোন্নত দেশ থেকে শুরু করে অনুন্নত দেশে। আছে বড় বড় শহরগুলোতে, পথশিশুদের উপস্থিতি আজকাল নজরে আসে ছোট শহরগুলোতেও। পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের পথশিশুরাই রাস্তায় এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে বেড়ে উঠে, যে প্রক্রিয়াতে সে অপরাধী হয়ে নিজস্ব সত্ত্বার প্রকাশ ঘটায়। পথশিশুদের এই বিচ্যুতির বড় দায় রাষ্ট্রের। একজন নাগরিক হিসেবে, প্রত্যেক শিশুর শিক্ষার অধিকার আছে, স্বাস্থ্যসেবা পাবার অধিকার আছে, অধিকার আছে বেড়ে উঠার জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ পাবার। একজন শিশু পরিবার থেকে এসব সুবিধা ও সুযোগ না পেলে, রাষ্ট্র এসব সুবিধা ও সুযোগ প্রদানের জন্য দায়বদ্ধ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করছে না। এসব দায়িত্ব অনেক সময় পালন করছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠছে অনাথ ও পিতামাতাহীন শিশুরা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো রাষ্ট্রের সামগ্রিক এই জায়গাতে ক্ষয় আটকাচ্ছে। কিন্তু, আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ আলাদা হবে। ফলে, রাষ্ট্রের বদলে এসব দায়িত্ব যখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পালন করতে হচ্ছে, তখন দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রকাঠামো এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন নতুন জটিলতার উপস্থিতি দেখা যায়।