গতানুগতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণত শহুরে আফগান নারীদের অধিকার নিয়েই বেশি আলোচনা করা হয়। আড়ালে রয়ে যায় গ্রামীণ আফগান নারীদের চাওয়া-পাওয়ার কথা। অথচ এরাই মূলত আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্বশীল নারী। কারণ আফগানিস্তানের ৭০% মানুষই গ্রামে বসবাস করে। সেই নারীদের কথাই নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনের একটি দীর্ঘপাঠ প্রবন্ধে তুলে এনছেন সাংবাদিক আনন্দ গোপাল।
সেই সাথে প্রবন্ধটিতে উঠে এসেছে আমেরিকান বাহিনীর এবং তাদের সহযোগী আফগান ন্যাশনাল আর্মির সীমাহীন অমানবিকতার কথা, আফগান জনগণের উপর চালানো তাদের গণহত্যার কথা এবং তালেবানদের বিজয়ের পেছনের কারণগুলোর কথা।
আমাদের এই সিরিজটি দীর্ঘ এই চমৎকার প্রবন্ধেরই অনুবাদ। মোট সাতটি পর্বে করা অনুবাদ সিরিজটির এটি দ্বিতীয় পর্ব। সবগুলো পর্বের লিঙ্ক এখানে: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব | ৬ষ্ঠ পর্ব | ৭ম পর্ব
শাকিরা যখন প্রথমবার তার বাবার বাড়ির দরজার ফাঁক দিয়ে আমির দাদোকে দেখে, তখন দাদো একটি পিকআপ ট্রাকে বসে ছিল। প্রায় এক ডজন সশস্ত্র লোক তার পেছনে পেছনে এমনভাবে গ্রামের মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে হেঁটে যাচ্ছিল, “যেন সে-ই ছিল দেশের রাষ্ট্রপতি”। গাঢ় কৃষ্ণবর্ণের দাড়ি এবং প্রকাণ্ড ভুঁড়িওয়ালা দাদো ছিল একজন ধনী ফল বিক্রেতা, যে পরে মুজাহেদিন কমান্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। সোভিয়েতদের পরাজয়ের আগেই সে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাশালী নেতাদের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে।
আমির দাদো ছিল সাংগিন উপত্যকার উপরের দিকের এলাকার বাসিন্দা, যেখানে শত শত বছর ধরে তার গোত্র আলিকোজাইদের বিশাল সামন্তবাদী আবাদি জমির মালিকানা ছিল। উপত্যকার নিচের অংশটি ছিল দরিদ্র গোত্র ইসহাকজাইদের বাসস্থান, শাকিরা নিজে যে গোত্রটির সদস্য। শাকিরার চোখের সামনে দিয়ে দাদোর লোকেরা ঘরে ঘরে গিয়ে “ট্যাক্স” দাবি করছিল এবং বাড়িগুলোতে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে দাদোর লোকেরা আবারও ফিরে আসে। এবার তারা শাকিরার পরিবারের বসার ঘর তছনছ করে। শাকিরা ভয়ে এক কোণে গিয়ে লুকিয়ে ছিল। এর আগে কখনও অপরিচিত কেউ তার বাড়ির পবিত্রতা লঙ্ঘন করেনি। তার মনে হচ্ছিল কেউ যেন তাকে নগ্ন করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সোভিয়েত সমর্থন থেকে বঞ্চিত আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকার ভেঙে পড়ছিল। ১৯৯২ সালে মুজাহেদিনদের একটি উপদল লস্করগাহ শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। শাকিরার এক চাচা সেখানে বাস করতেন। তিনি ছিলেন একজন কমিউনিস্ট, যার মসজিদের প্রতি আগ্রহ কম ছিল এবং পশতু সুরের প্রতি দুর্বলতা ছিল। কিছুদিন আগেই তিনি সানা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। মেয়েটি নিজের চেয়ে বয়সে চার গুণ বড় এক পুরুষের সাথে জোরপূর্বক বিয়ের আয়োজন থেকে পালিয়ে এসেছিল। দম্পতিটি লিটল মস্কো নামে পরিচিত লস্করগাহের একটি মহল্লায় নতুন করে জীবন শুরু করে, যে এলাকাকে সানা “নারীদের স্বাধীনতার ভূমি” বলে অভিহিত করত। কিন্তু মুজাহেদিনরা যখন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখন তারা পান কিল্লায়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
একদিন সন্ধ্যায় শাকিরা যখন গরু দেখাশোনা করছিল, তখন দাদোর লোকরা তাকে অস্ত্র হাতে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। “তোমার চাচা কোথায়?” তাদের মধ্যে একজন চিৎকার করে ওঠে। এরপর যোদ্ধারা জোর করে ঘরে ঢুকে পড়ে। তাদের নেতৃত্বে ছিল সানার বঞ্চিত বাগদত্তা। “পেয়েছি তাকে!” সে বলে ওঠে। বন্দুকধারীরা সানাকে টেনে বের করে নিয়ে যায়। শাকিরার অন্যান্য চাচারা যখন হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে, তখন তাদেরকে আটক করা হয়। পরের দিন সানার স্বামী দাদোর বাহিনীর কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে এবং সানাকে ছেড়ে দিয়ে তাকে আটক করার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করে। কিন্তু তাদের দুজনকেই আটক করে দাদোর ধর্মীয় আদালতে পাঠানো হয় এবং এরপর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর কিছুদিন পরেই মুজাহেদিনরা কাবুলের কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করে। সেই সাথে তারা তাদের গ্রামাঞ্চলের রীতিনীতি রাজধানীতে নিয়ে আসে। তাদের নেতৃবৃন্দ — যারা বিপুল পরিমাণ মার্কিন অর্থ সাহায্য পেয়েছিল — তারা ফরমান জারি করে যে, “মহিলারা একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এবং অতি জরুরি প্রয়োজনে যখন বের হবে, তখনও নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে।” একইভাবে মহিলাদের “সুন্দরভাবে বা গর্বের সাথে হাঁটা”ও নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় পুলিশ শহরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে। তারা মহিলাদেরকে গ্রেপ্তার করে এবং অডিও-ভিডিও ক্যাসেট আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এতকিছু সত্ত্বেও মুজাহেদিনদের নতুন সরকার দ্রুত ভেঙে পড়ে এবং দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পান কিল্লায়ে শাকিরা রাতের বেলা গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুরু করে। মাঝে মাঝে সাথে পুরুষদের চিৎকারও শোনা যেত। সকালবেলা গরু দেখভাল করার সময় সে দেখতে পেত প্রতিবেশীরা কাফনে মোড়ানো লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার পরিবার উঠোনে জড়ো হয়ে নিচু স্বরে এলাকা ছেড়ে পালানোর উপায় নিয়ে আলাপ করত। কিন্তু রাস্তাগুলো বিভিন্ন মুজাহেদিন গ্রুপের চেকপয়েন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। বিশেষ করে গ্রামের দক্ষিণে গেরেশ্ক শহরে নাইন্টি থার্ড ডিভিশন নামের একটি মিলিশিয়া একটি সেতুর উপর কুখ্যাত একটি ব্যারিকেড স্থাপন করেছিল। সেখানে পুরুষদের ছিনতাই বা হত্যা এবং নারী ও অল্প বয়সী কিশোরদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার কাহিনী শোনা যেত। শাকিরার বাবা আগে মাঝে মাঝে গেরেশ্ক বাজারে পণ্য বিক্রির জন্য সেতু পাড়ি দিত, কিন্তু শাকিরার মা তাকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে শুরু করে।
উত্তরে আমির দাদো এবং দক্ষিণে নাইন্টি থার্ড ডিভিশনের মাঝামাঝি আটকা পড়ে শাকিরাদের পরিবার মরিয়া হয়ে উঠছিল। এরপর শাকিরার বয়স যখন ষোল বছর, তখন এক বিকেলে সে রাস্তার দিক থেকে একটি চিৎকার শুনতে পেল: “তালেবানরা এসেছে!” সে দেখতে পেল, সাদা টয়োটা হাইলাক্সের একটি বহরের উপর চড়ে সাদা পতাকাবাহী একদল কালো পাগড়িওয়ালা যোদ্ধা শহরে প্রবেশ করছে।
শাকিরা এর আগে কখনও তালেবানদের নাম শোনেনি। কিন্তু তার বাবা ব্যাখ্যা করল, এর সদস্যরা হচ্ছে তাদের আশেপাশের দরিদ্র মাদ্রাসা ছাত্রদের মতো, যাদেরকে তারা সারাজীবন ভিক্ষা চাইতে দেখে এসেছে। তাদের অনেকে মুজাহেদিনদের পতাকাতলে যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু এরপর সোভিয়েতদের প্রস্থানের পর যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে মাদ্রাসায় ফিরে গিয়েছিল। এখন তারা দাবি করছে, তারা বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানোর জন্য পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে।
অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে তালেবানরা গেরেশ্ক সেতু আক্রমণ করে এবং নাইন্টি থার্ড ডিভিশনকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। এরপর যখন তারা সাংগিন উপত্যকায় নেমে আসে, তখন স্বেচ্ছাসেবীরা দলে দলে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য ভিড় করে। শাকিরার ভাই বাড়িতে এসে খবর দেয়, তালেবানরা আমির দাদোর ঘাঁটিও দখল করে নিয়েছে, আর যুদ্ধবাজ নেতা দাদো তার লোকদের ফেলে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। “সে চলে গেছে,” শাকিরার ভাই বলতে থাকে। “সে আসলেই পালিয়ে গেছে।” তালেবান শীঘ্রই দাদোর ধর্মীয় আদালত ভেঙে দেয়। তারা মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা সানা এবং তার স্বামীকে মুক্ত করে এবং চেকপয়েন্টগুলো উঠিয়ে দেয়। পনেরো বছর পর অবশেষে সাংগিন উপত্যকায় শান্তি নেমে আসে।
আমি যখন শাকিরা-সহ উপত্যকার অন্যান্য মহিলাদেরকে তালেবানদের শাসন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বলেছিলাম, তখন তারা তালেবানদের আন্দোলনকে বিশ্বজনীন কোনো মানদণ্ডের প্রেক্ষিতে বিচার করতে রাজি হয়নি। তারা তাদেরকে তুলনা করেছিল কেবলমাত্র নিজেদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে। “তারা ছিল তুলনামূলকভাবে নমনীয়,” পার্শ্ববর্তী গ্রামের অধিবাসী পাজারো মন্তব্য করেছিল। “তারা আমাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করত।” মহিলারা তালেবানদের অধীনে তাদের জীবনকে দাদো এবং মুজাহেদিনের আমলের জীবনের মতো বলেই বর্ণনা করেছিল, কিন্তু পার্থক্য ছিল তালেবানদের সময় বিপজ্জনক চেকপয়েন্টগুলো উঠে গিয়েছিল, আর রাতের বেলা অপরিচিতদের জোর করে ঘরে ঢুকে পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
শাকিরা আমার কাছে তার নতুন প্রশান্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল: শান্ত সকালে নান রুটি দিয়ে সবুজ চায়ে চুমুক দেওয়া, আর গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় ছাদের উপর সময় কাটানো। তার মা-চাচী আর দাদীরা তার বিয়ের উপযুক্ততা সম্পর্কে বিচক্ষণতার সাথে অনুসন্ধান করতে শুরু করেছিল। গ্রামাঞ্চলে বিয়ে মানে দুটি পরিবারকে একত্রিত করার বন্ধন। শীঘ্রই সোভিয়েতদের হাতে নিখোঁজ এক দূর আত্মীয়ের ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়।
শাকিরা তার স্বামীকে প্রথমবার দেখে তাদের বিয়ের আসরে: তার স্বামী অসহায়ভাবে গ্রামের মহিলাদের দ্বারা বেষ্টিত অবস্থায় বসেছিল। মহিলারা তাকে তার বাসর রাতের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করে উত্যক্ত করছিল। “ওহ, সে ছিল একটা বোকা!” হাসতে হাসতে স্মরণ করে শাকিরা। “সে এতই নাস্তানাবুদ হয়েছিল যে, সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। মানুষ গিয়ে তাকে ধরে ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল।”
উপত্যকার অনেক উদ্যোক্তা যুবকের মতো শাকিরার স্বামীও আফিম পাচারের কাজে নিযুক্ত ছিল, এবং শাকিরা তার চোখ থেকে উঁকি দেওয়া সংকল্পের দ্যুতি পছন্দ করেছিল। তারপরেও সে চিন্তিত ছিল যে শুধু এই সংকল্প যথেষ্ট না-ও হতে পারে। তালেবানরা নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার পরপরই যুবকদেরকে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অভিযান চালু করে। নর্দার্ন অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত একদল মুজাহেদিন যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করার জন্য তরুণদেরকে তারা উত্তর আফগানিস্তানে পাঠাতে শুরু করে।
একদিন শাকিরা দেখতে পায়, ক্ষেতের উপর একটি হেলিকপ্টার নেমে আসছে এবং জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা ব্যক্তিদের মৃতদেহ নামিয়ে রেখে যাচ্ছে। ডাক পড়ার ভয়ে উপত্যকার পুরুষরা বন্ধুদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে শুরু করে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে শুরু করে। ধনীরা টাকা দিয়ে সেনাবাহিনী থেকে বাইরে থাকার পথ কিনে নিতে পারত, কিন্তু দরিদ্র বর্গা চাষিরা ছিল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। শাকিরা আমাকে বলেছিল, “এটাই ছিল তালেবানের সত্যিকারের অবিচার।” টহলরত তালেবান যোদ্ধাদের ঘোরাঘুরির দৃশ্য শাকিরার মনের মধ্যে ঘৃণার জন্ম দিতে থাকে।
২০০০ সালে হেলমন্দ প্রদেশ ভয়াবহ রকমের খরা প্রত্যক্ষ করে। তরমুজের ক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে যায়, ভারবাহী প্রাণীদের ফুলে ওঠা লাশ রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে থাকে। নির্দয়তার আকস্মিক ঝাপটা হিসেবে এরকম একটা মুহূর্তকেই তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা ওমর আফিম চাষ নিষিদ্ধ করার জন্য বাছাই করেন। ফলে উপত্যকার অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। পাজারো স্মরণ করে, “আমাদের খাওয়ার কিছুই ছিল না। জমি থেকে আমরা কিছুই পাচ্ছিলাম না এবং আমাদের পুরুষরা আমাদের সন্তানদের খাবার জোগাড় করতে পারছিল না। বাচ্চারা কাঁদছিল, চিৎকার করছিল, আর আমাদের মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি ব্যর্থ হয়েছি।”
শাকিরা সে সময় গর্ভবতী ছিল। সে বাসি নান রুটির টুকরো সবুজ চায়ের মধ্যে ডুবিয়ে তার ভাগ্নে এবং ভাতিজাদের খাওয়াত। তার স্বামী পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল সেখানকার মাঠে তার ভাগ্য পরীক্ষা করার জন্য। শাকিরাকে সারাদিন এই চিন্তা আচ্ছন্ন করে রাখত যে সে হয়তো মৃত বাচ্চা প্রসব করবে, তার স্বামী হয়তো আর কখনও ফিরে আসবে না, সে হয়তো একা হয়ে যাবে। প্রতিদিন সকালে সে বৃষ্টির জন্য, মুক্তির জন্য প্রার্থনা করত।
এরকম সময়ে একদিন রেডিওতে ঘোষণা আসে যে আমেরিকায় একটি হামলা হয়েছে। হঠাৎ করেই আলোচনা শুরু হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ থেকে সৈন্যরা তালেবানকে উৎখাত করতে আসছে। অনেক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো শাকিরার হৃদয়ে আশা দোলা দিয়ে যায়। কিন্তু তার সেই আশা ভঙ্গ হতেও বেশি সময় লাগে না।
২০০৩ সালের এক রাতে শাকিরা অপরিচিত কিছু মানুষের অদ্ভুত কণ্ঠস্বর শুনে ঘুম ভেঙে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে বসে। নিজেকে ঢাকার জন্য সে পড়িমড়ি করে ছুটে যায়। দৌড়ে বসার ঘরে পৌঁছার পর আতঙ্কের সাথে সে আবিষ্কার করে, তার দিকে রাইফেলের নল তাক করে রাখা হয়েছে। লোকগুলো ছিল তার জীবনে দেখা যেকোনো মানুষের চেয়ে বড় আকারের। এবং তাদের সবার পরনে ছিল ইউনিফর্ম। বিস্মিত হয়ে সে বুঝতে পারে, এরা আমেরিকান সৈন্য। কালাশনিকভ রাইফেল হাতে এবং ডোরাকাটা রুমালে মুখ ঢাকা কৃশকায় কিছু আফগান পুরুষও তাদের সাথে ছিল। বিশাল দাড়িওয়ালা এক লোক সেই আফগানদেরকে হুকুম দিচ্ছিল। সে ছিল আমির দাদো!
পরবর্তী পর্বে থাকছে কীভাবে আফগানিস্তান দখল করার পর আমেরিকা একের পর এক কুখ্যাত যুদ্ধবাজ মিলিশিয়া নেতাদেরকে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল এবং কীভাবে তাদের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে একের পর এক নিরীহ আফগান বেসামরিক নাগরিকদেরকে তুলে নিয়ে গুয়ান্তানামো কারাগারে প্রেরণ করছিল। পড়তে ক্লিক করুন এখানে।