Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাপোলো ১৩ চন্দ্রাভিযান: দুর্ঘটনা মোকাবেলার গল্প || পর্ব ৫

অ্যাপোলো-১৩ চন্দ্রাভিযান : দুর্ঘটনা মোকাবেলার গল্প (পর্ব ৪) এর পর থেকে। 

দুর্ঘটনার পর ছয় মিনিট সময় পেরিয়ে গেছে।

ক্রাঞ্জ তখন লিবারগটের কাছ থেকে পরামর্শ শুনতে চান। ক্রাঞ্জ এ রকম পরিস্থিতি নিয়ে একবার বলেন, ফ্লাইট কন্ট্রোলারদের জন্য সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি হচ্ছে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ ব্যক্তি হওয়া। এ রকম পরিস্থিতি আসে যখন কোনো সমস্যার কথা একেবার শেষ সময়ে জানা যায় ও ফ্লাইট কন্ট্রোলারদের নিজেদেরকে এটা সমাধান করতে হয়। তিনি যদি কোনো ভুল করে থাকেন, সেটা হবে পুরো বিশ্বের সামনে ভুল করা। এর ফলে পুরো মিশনই বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে।

লিবারগটের পরিস্থিতিটাও ছিল এমনই। তার টেলিমেট্রি স্ক্রিনে নভোচারীদের চেয়েও বেশি তথ্য জানার সুযোগ ছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তিনি বুঝতে পারছিলেন না কোথা থেকে শুরু করবেন। তার সামনের প্রায় অর্ধেক হলুদ বাতিই জ্বলন্ত ছিল। এর আগে তার এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল কেবল একবার, অ্যাপোলো-১২ মিশনে উত্তরণের অল্প সময় পরে। তখন মহাকাশযানে আলোক রশ্মি এসে আঘাত করছিল। কিন্তু এখন দুই লাখ কিলোমিটার দূরের মহাকাশে কোনো আলো ছিল না। তিনি তাই কী কী তথ্য জানেন সেগুলো একত্রিত করছিলেন। মেইন বাস বি’র ভোল্টেজ কেন কমে যাচ্ছে সেটার উত্তর বের করাই ছিল তার মূল চ্যালেঞ্জ। তার কনসোলের সামনে মহাকাশযানের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার একটা নকশা রাখা ছিল।

এটা ছিল অনেকটা চেইনের মতো। প্রথমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ট্যাংক থেকে জ্বালানি কোষে, জ্বালানি কোষ থেকে মেইন বাস, বাস থেকে মহাকাশযানের যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ শক্তি গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল। সে মুহূর্তের নকশাটা ছিল এ রকম (হাইড্রোজেন ট্যাঙ্ক দেখানো হয়নি) :

অক্সিজেন ট্যাংক থেকে মেইন বাসের বিদ্যুৎ প্রবাহের নকশা; Image Source: New Yorker

জ্বালানি কোষ ১ ও ২ থেকে মেইন বাস এ’তে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল, যা তখনো সচল ছিল। অন্যদিকে মেইন বাস বি শুধুমাত্র ৩ নাম্বার জ্বালানি কোষ থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছিল। লিবারগটের এটা বের করতে খুব বেশি সময় লাগেনি যে এই তিন নাম্বার জ্বালানি কোষটি কাজ করছিল না। তারপর দেখতে পেলেন এক নাম্বার জ্বালানি কোষটিও বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না। অর্থাৎ, মহাকাশযানের দুইটি জ্বালানি কোষই কাজ করছিল না, যা এর আগে কখনো হয়নি। পরিস্থিতিটা ছিল এমন, মহাকাশযানে কেবল দুই নাম্বার জ্বালানি কোষ থেকে মেইন বাস এ’তে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেই একমাত্র কার্যকর জ্বালানি কোষ থেকে পাওয়া বিদ্যুতের পরিমাণও কমে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। তবে সেটা তখনো লিবারগটকে অক্সিজেন নিয়ে চিন্তিত করার মতো পর্যায়ে ছিল না।

লিবারগট জানতেন আপাত দৃষ্টিতে দুই নষ্ট জ্বালানি কোষ অক্সিজেন ব্যবহার করেছে অক্সিজেনের দুটি ট্যাঙ্ক থেকে। অবশিষ্ট কার্যকর জ্বালানি কোষটিও যেহেতু ওই দুটি অক্সিজেন ট্যাঙ্কই ব্যবহার করছে, তিনি তাই অক্সিজেন ট্যাঙ্কের দিকে আর মনোযোগ দিলেন না। সেটার যৌক্তিক কারণও ছিল। দুই অক্সিজেন ট্যাঙ্ক প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছিল বলা যাবে না। তবে ট্যাঙ্ক থেকে জ্বালানি কোষ পর্যন্ত অনেকগুলো নল ছিল। সেগুলোতে সেফটি ভালভও লাগানো ছিল। অক্সিজেন ট্যাঙ্ক ও জ্বালানি কোষগুলো এই ভালভগুলো দিয়ে আলাদা করা ছিল। ভালভগুলো দিয়ে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক থেকে শুধু বের হয়ে আসতে পারত। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য জ্বালানি কোষের নিজস্ব ভালভও ছিল, যাকে বলা হতো রিয়েক্ট্যান্ট ভালভ। অক্সিজেন ট্যাঙ্কের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার জ্বালানি সরবরাহ ও পানি উৎপাদন ছাড়াও দুই ট্যাঙ্ক দিয়ে কমান্ড মডিউলে শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা হতো। ক্যাবিনে ছোট একটি জরুরি ট্যাঙ্ক ছিল, যার নাম সার্জ ট্যাঙ্ক। এছাড়া তিনটি এক পাউন্ডের অক্সিজেনের বোতল ছিল, যা কমান্ড মডিউল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ব্যবহার করার জন্য ছিল।

ফ্লাইট কন্ট্রোলার লিবারগট; Image Source: NASA

দুই জ্বালানি কোষের নিষ্ক্রিয় অবস্থা এতটা বিস্ময়কর ছিল যে, লিবারগট নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এমন পরিস্থিতি হওয়া সম্ভব। তার বিশ্বাস না করার কারণ ছিল ফ্লাইট কন্ট্রোলারদের কার্যপ্রক্রিয়াটাই এমন যে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে কাজ করা। এছাড়া টেলিমেট্রির ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দেওয়াও একটা কারণ ছিল। ফ্লাইট কন্ট্রোলারদের কার্যক্রমের আদর্শ পদ্ধতি অনুসারে লিবারগটের অক্সিজেন নিয়ে এমন চিন্তা করার আগে তাকে আগে নিশ্চিত হওয়া লাগত যে কোষগুলো আসলেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। হয়তো কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি থাকতে পারত, অথবা তুলনামূলক সরল কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারত। নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত লিবারগট কোষগুলো নিয়ে কোনো রিপোর্টই করেননি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, 

আপনি অযথা ক্রুদের আতঙ্কিত করতে পারেন না। আপনি যদি এক্ষেত্রে নিশ্চিত না হন, এটা কোনো দায়িত্বশীল আচরণ হবে না।

লিবারগটের কাছে মনে হলো এটার খুব ছোট একটা ব্যাখ্যা হতে পারে। নয়টা বাজার আট মিনিট পর যে ঝাঁকুনি বা বিস্ফারণ যাই হয়েছিল, সেটার কারণে জ্বালানি কোষ থেকে বাসের সংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি তাই ক্রাঞ্জকে পরামর্শ দেন সুইগার্ট যেন দেখেন এই কোষগুলো আদৌ বাসের সাথে যুক্ত আছে কীনা। নভোচারীরা যেকোনো সংযোগ চালু বা বন্ধ করে থাকেন তাদের সামনে কনসোলে থাকা সুইচ দিয়ে। সুইগার্ট তখন জানান সুইচ টিপেও কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না। তার মানে এটা সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ছোট কোনো সমস্যা ছিল না। লিবারগট এটা থেকে কোনো ধারণাই করতে পারছিলেন না। এদিকে লাউজমা বারবার ক্রাঞ্জকে তাগদা দিয়ে যাচ্ছিলেন নভোচারীদের কোনো নির্দেশ দেওয়ার জন্য এবং ক্রাঞ্জ লিবারগটের কাছে উত্তর জানতে চাইছিলেন। লিবারগট তখন কোনঠাসা হয়ে পড়েন।

অবশেষে তিনি নভোচারীদের পরামর্শ দেন দুই নিষ্ক্রিয় কোষ থেকে সার্কিট সরিয়ে অন্য বাসের সাথে যুক্ত করতে। এতে লিবারগট হয়তো নিশ্চিত হতে পারবেন কী হচ্ছে সেখানে। তাছাড়া জ্বালানি কোষগুলো ফ্ল্যাশলাইট ব্যাটারির মতো জায়গা পরিবর্তন করলে ভালোই কাজ করে। ক্রাঞ্জ অবশ্য এই পরামর্শ উপেক্ষা করলেন। কারণ তাকে অনেক সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছিল। কেউই জানতেন না সমস্যাটা আসলে ঠিক কোথায়। তিনি এমন কিছু করতে চাচ্ছিলেন না যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায়। ওই মুহূর্তে মহাকাশযানের পুরো বিদ্যুৎ চালনা হচ্ছিল মেইন বাস এ থেকে। তিনি এই বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঝামেলা করতে চাইলেন না। ক্রাঞ্জ আপাতত কোনো পরিবর্তন আনার আগে সুচিন্তিত ও সুশৃঙ্খল মতামত বিবেচনা করতে চাইলেন। দুর্ঘটনার তখন সাত মিনিটও পার হয়নি।

ফ্লাইট ডিরেক্টর ক্রাঞ্জ; Image Source: NASA

লিবারগট তখন ক্রমাগত বিদ্যুৎ প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকা সচল বাসে প্রবাহ চালু রাখতে বিকল্প আর একটি উপায়ই দেখতে পাচ্ছিলেন। সেটা হচ্ছে স্পেসক্রাফটের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির জন্য মজুদ করে রাখা ব্যাটারিগুলো। কিন্তু সমাধানটা তখন যথেষ্ট মনে হচ্ছিল না। তারপরও লিবারগট সেই পরামর্শ দিলেন। এদিকে টেলিমেট্রিতে দেখলেন নভোচারীরা ইতোমধ্যে বাসের সাথে ব্যাটারি সংযুক্ত করা শুরু করে দিয়েছেন।

মূল চাপটা ইইকমের ওপর পড়লেও অন্য ফ্লাইট কন্ট্রোলাররাও এই পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। কন্ট্রোল রুমে সবার কথাবার্তা ছিল অস্বাভাবিক রকম শান্ত। কিন্তু তাদের একজন বলছিলেন সবার কণ্ঠ শুনে বোঝা যাচ্ছিল তারা মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। বিস্ফারণের সময় স্পেসক্রাফটটি সাবমেরিন ধ্বংসকারী অস্ত্রের মতো উপর-নিচ ও পাশাপাশি কাঁপছিল।

লাভেল ও সুইগার্টের সামনে ড্যাশবোর্ডে দুটি একইরকম বল উদভ্রান্তের মতো ঘুরছিল। এগুলোকে বলা হতো ফ্লাইট ডিরেক্টর এটিটিউড ইন্ডিকেটর বা এফডিএআই, যা এক প্রকার ত্রিমাত্রিক কম্পাস। এগুলো নির্দেশ করত মহাকাশযানের গতিপথ কোন দিকে। প্রকৃতপক্ষে বলগুলো তখন স্থির অবস্থাতেই ছিল। বরং স্পেসক্রাফটই ঘুরছিল। স্পেসক্রাফটের গাইড্যান্স কম্পিউটার উপযুক্ত সময়ে সার্ভিস মডিউলের বাইরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৬টি ছোট থ্রাস্টার রকেট নিক্ষেপ করে যানটাকে স্থির রাখে। কিন্তু এটাও কাঁপুনি দূর করতে পারল না। লাভেল তখন নিজ হাতে রকেট নিক্ষেপ করতে চাইলেন। কিন্তু এতেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো না। কারণ স্পেসক্রাফট থেকে কিছু নির্গত হলেই একে ধাক্কা দিচ্ছিল ও কাঁপুনির সৃষ্টি করছিল।

স্পেসক্রাফটে থাকা তিন নভোচারী; Image Source: NASA

লাভেলের প্রতিকূল অবস্থার একটা কারণ ছিল ১৬টা থ্রাস্টার কাজ করত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই বিদ্যুৎ আসত মেইন বাস থেকে। মেইন বাসগুলো প্রত্যেকে আটটা করে থ্রাস্টারের বিদ্যুৎ সরবরাহ করত। এদিকে আটটা থ্রাস্টারের বিদ্যুতের উৎস মেইন বাস বি ছিল নিষ্ক্রিয়। সক্রিয় মেইন বাস এ’এর পক্ষে ১৬টি থ্রাস্টার পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। তাই লিবারগটের ডান পাশে বসা গাইড্যান্স অ্যান্ড নেভিগেশন কন্ট্রোল অফিসার বাক উইলাহবিকে খুঁজে বের করতে হচ্ছিল কোন থ্রাস্টারগুলো ভালো কাজ করছে।       

জিএনসি বিশেষভাবে লাভেলের কাছে চাচ্ছিলেন স্পেসক্রাফটটাকে স্থির অবস্থায় আনতে। সুবিধাজনক অবস্থানে আসলে একে তাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় অগ্রসর করতে চেয়েছিলেন তিনি। এতে প্রতি বিশ মিনিটে একবার মহাকাশযানটি ঘুরলে এর প্রতিটি অংশে সূর্যের আলো পড়বে। জিএনসির দায়িত্বের থাকা গাইড্যান্স অ্যান্ড নেভিগেশনের সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও স্পেসক্রাফটের প্রপালশন সিস্টেমের কিছু অংশ তাপমাত্রার চরম অবস্থার প্রতি সংবেদনশীল ছিল। তাপ নিয়ন্ত্রিত অগ্রসর ব্যবস্থা না থাকলে স্পেসক্রাফটের যে অংশ সূর্যের আলোর দিকে, সে অংশ ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হয়ে যেতে পারত। অন্যদিকে যে অংশ সূর্যের বিপরীত দিকে থাকত, সে অংশের তাপমাত্রা শূন্যে নেমে আসত। লাভেল থ্রাস্টারের সাথে বাসের সংযোগ ঘটালেও স্পেসক্রাফট তখনো শান্ত হয়নি।

কন্ট্রোল রুমে কাজ করা ফ্লাইট কন্ট্রোলাররা; Image Source: NASA

স্পেসক্রাফটের উপাদানগুলো এত পরস্পর নির্ভরশীল যে, একটি অংশে সমস্যা দেখা গেলে অন্য অংশগুলোতেও একত্রে সমস্যা দেখা যায়। এর অস্থির অবস্থার কারণে বেতার যোগাযোগ রক্ষা করা হুমকির মুখে পড়ে। কারণ অ্যান্টেনাকে পৃথিবীর দিকে রাখাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। দুর্ঘটনার পর ক্রাঞ্জের বাম পাশে বসা রেডিও কন্ট্রোলার ইনকো উপদেশ দেন কাঁপতে থাকা অ্যান্টেনাটা সরিয়ে সর্ব্বমুখী অ্যান্টেনা ব্যবহার করতে। এটা নির্দিষ্ট কোনো দিকে রাখতে হবে না। স্পেসক্রাফটে চারটা সর্ব্বমুখী অ্যান্টেনা ছিল। যেহেতু স্পেসক্রাফট অস্থির অবস্থায় ঘুরছিল, ইনকো এখানে যে অ্যান্টেনাটা পৃথিবীর কাছে সেটা নিয়ে কাজ করার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু স্পেসক্রাফটের এই কম্পন এতটাই বেশি ছিল যে, কখনো কখনো ইনকো বা নভোচারীরা কেউই বুঝতে পারছিলেন না কোন অ্যান্টেনাটা পৃথিবীর নিকটবর্তী আছে। এর মাঝে আবার কয়েকবার পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

নভোচারীরা অ্যান্টেনা, থ্রাস্টার ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে তাদের আসলে এত বড় বিপদ নিয়ে চিন্তা করার মতো অবস্থাও ছিল না। একই অবস্থা ছিল ফ্লাইট কন্ট্রোলারদেরও। কিন্তু একজন এই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা আলাদা ছিলেন। তিনি হলেন টেলমু, লুনার মডিউলের দায়িত্বে থাকা রবার্ট হেসেলমেয়ার। লুনার মডিউল নিষ্ক্রিয় থাকলেও এর কিছু অংশের যন্ত্রপাতি গরম রাখার জন্য কমান্ড মডিউল থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছিল। তিনি নীরবে দেখে যাচ্ছিলেন লুনার মডিউলের বিদ্যুৎ প্রবাহ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। যখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল, তখন তিনি ব্যাপারটা ক্রাঞ্জকে জানান। ক্রাঞ্জ তখন হেসেলমেয়ারকে বলেন, এটা নিয়ে তার সাথে পরে আলোচনা করতে, কারণ ওই মুহূর্তে তাকে আরো বড় সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছিল। হেসেলমেয়ার চিন্তিত হতে থাকলেন। কারণ তার কাছে মনে হচ্ছিল কমান্ড মডিউলে যদি খারাপ কিছু হয়, তবে নভোচারীদের লাইফবোট হিসাবে লুনার মডিউলকে ব্যবহার করতে হতে পারে। তিনি তার কনসোলে এ ধরনের লাইফবোট ব্যবস্থার পদ্ধতি খুঁজতে লাগলেন।

এরপর দেখুন- অ্যাপোলো ১৩ চন্দ্রাভিযান: দুর্ঘটনা মোকাবেলার গল্প || পর্ব ৬

Related Articles