ক্রিকেট। বাংলাদেশের মানুষদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খেলা। বাংলাদেশের মানুষদের যেমন একসাথে কাঁদায়, ঠিক তেমনি একসাথে হাসায় এ ক্রিকেট। মাঠে খেলে ১১ জন, কিন্তু বাইরে যেনো সারা দেশ তাদের সাথে খেলতে নেমে যায়। আর সেই খেলাতেই বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচে এক অবিস্মরণীয় বিজয়ের আনন্দে এখনো উদ্বেল সারা বাংলাদেশ।
হ্যাঁ, বলছিলাম ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশের শেষ টেস্ট ম্যাচটির কথা। যেখানে এক অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আমাদের টাইগাররা। টান টান উত্তেজনার এ ম্যাচের শেষ সেশনে ১০ উইকেট নিয়ে উড়তে থাকা ইংল্যান্ডকে নামিয়ে আনে মাটিতে। মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সাকিব আল হাসানের অসাধারণ বোলিং এ ১০৮ রানের বিপুল ব্যবধানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে নেয় প্রথম টেস্ট ম্যাচ। শুনিয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে নতুন রাজার আগমনী বার্তা। মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে লেখা হয় নতুন এক মহাকাব্য। শেষ ম্যাচটি জিতে ১-১ এ সিরিজ ড্র করে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ান ট্রফিটি রেখে দেয় নিজেদেরর ঘরেই। তো চলুন দেখে নেয়া যাক ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশের শেষ টেস্ট সিরিজটির ১৮ টি বিরল রেকর্ড।
১। বাংলাদেশের মাটিতে এক টেস্টেই ৪০ উইকেট
এই সিরিজেই প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে কোন টেস্ট ম্যাচে দুই দলের মোট ৪০ উইকেটের পতন ঘটলো। তাও আবার সিরিজের দুই টেস্ট ম্যাচেই এ ঘটনা ঘটলো। অর্থাৎ, গোটা সিরিজে মোট ৮০ উইকেটের পতন ঘটে যা এর আগে বাংলাদেশের মাটিতে কখনই ঘটেনি। এর আগে ২ বার বাংলাদেশের মাটিতে এক টেস্টে ৩৯ উইকেট এর পতন ঘটেছিল।
২। কনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ১০ উইকেট
মেহেদী হাসান মিরাজ টেস্ট ক্রিকেটের ৫ম কনিষ্ঠতম বোলার যিনি এক টেস্টে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন। তার উপড়ে আছেন এনামুল হক জুনিয়র, ওয়াসিম আকরাম, শিভারামাকৃষ্ণ এবং ওয়াকার ইউনুস।
৩। ৪ ইনিংসে ৩ বার ৫ উইকেট শিকার
ইতিহাসের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে প্রথম দুই টেস্টেই তিনবার ৫ উইকেট নিয়ে মাইল ফলক সৃষ্টি করেছেন মিরাজ। এর আগে এ কীর্তি করতে পেরেছিলেন নরেন্দ্র হিরওয়ানি, ক্ল্যারি গ্রিমেট, টম রিচার্ডসন, সিডনি বার্নেস ও রডনি হজ।
৪। কম রানে হারার রেকর্ড
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানের হারটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে হারার রেকর্ড। এর আগে ২০১২ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭৭ রানের ব্যবধানে হারে। এতদিন সেটাই ছিল বাংলাদেশের রেকর্ড।
৫। অভিষেক টেস্টেই সিরিজ সেরা
অভিষেক টেস্টে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া নবম ক্রিকেটার আমাদের মেহেদী হাসান মিরাজ। এর আগে রোহিত শর্মা, জেমস প্যাটিনসন, ভারনন ফিলান্ডার, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, অজন্তা মেন্ডিস, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, জ্যাক রুডলফ ও সৌরভ গাঙ্গুলি অভিষেক টেস্টেই সিরিজ সেরা হয়েছিলেন।
৬। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জেতা ১০ম জয়
১ম টেস্টে ২২ রানের জয়টি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জেতা ১০ম জয়। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জেতা ১০ টি জয়ের ৯ টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আরেকটি এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়া বাদে ইংল্যান্ড আর কোন দেশের সাথে এতো কম ব্যবধানে জেতেনি।
৭। ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু
পৃথিবীর ইতিহাসের ১০ জন ব্যাটসম্যান টেস্টে ছক্কা মেরে নিজের রানের খাতা খুলেছেন মেহেদী হাসান রাব্বি। জেনে আশ্চর্য হবেন যে এই ১০ জন ব্যাটসম্যানের ৪ জনই বাংলাদেশি।
৮। বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগার
মিরপুরের ২য় টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজের ১৫৯ রান দিয়ে ১২ উইকেট শিকার বাংলাদেশের কোন বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে খেলা টেস্ট ম্যাচে এনামুল হক জুনিয়র ২০০ রানের বিনিময়ে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন। এতদিন এটাই বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগার ছিল।
৯। সাব্বিরের বিশ্ব রেকর্ড
চতুর্থ ইনিংসে ৭ নম্বর বা, তারপরে ব্যাট করতে নামা কোন খেলোয়াড় হিসেবে সাব্বিরের অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসটিই এখন সর্বোচ্চ। চতুর্থ ইনিংসে ৭ নম্বর বা, তারপরে ব্যাট করতে নেমে আর কোন খেলোয়াড় এতো রান করতে পারেন নি।
১০। ২ টেস্ট সিরিজে স্পিনারদের সর্বোচ্চ উইকেট শিকার
২ টেস্ট সিরিজে এই সিরিজটিতেই স্পিনাররা সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন। এই সিরিজে স্পিনাররা মোট ৬২ টি উইকেট নিয়েছে। এর আগে ১৯৯৮ সালে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মাঝে অনুষ্ঠিত এক দুই টেস্ট সিরিজে স্পিনাররা ৫৫ উইকেট নিয়েছিল। এতদিন সেটিই ছিল বিশ্ব রেকর্ড।
১১। কুক-ডাকেটের জুটিঃ
কুক এবং ডাকেটের এবারের জুটিতে এশিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে মাত্র তৃতীয়বারের মতো ওপেনিং জুটিতে শত রান করে ইংল্যান্ড।
১২। এক সিরিজে ৮০ উইকেট
টেস্ট ইতিহাসে ২ টেস্ট সিরিজে এবারই মাত্র ৫ম বারের মতো ৮০ উইকেটের পতন ঘটেছে। এর আগে ২০০৫ সালেই শেষবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তান সিরিজে এ ঘটনা ঘটেছিলো।
১৩। অফ স্পিনার দিয়ে শুরুর রেকর্ড
এই প্রথম ইংল্যান্ড দল কোন টেস্ট ম্যাচে ২ জন অফ স্পিনারকে দিয়ে বোল করিয়ে কোন ইনিংস শুরু করেছে। প্রথম টেস্টের ২য় ইনিংসে তারা এ কাজ করে। এ টেস্টের ২য় ইনিংসের শুরুতেই মঈন আলী এবং গ্যারেথ বেটি বোল করেন। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লর্ডসে ২ স্পিনার মন্টি পানেসার এবং পিটারসেনকে দিয়ে বোল করিয়েছিল ইংল্যান্ড, কারণ মাঠে পেসারদের বল করার জন্য পর্যাপ্ত আলো ছিল না। এরও আগে ১৯৬৪ সালে দুই স্পিনার দিয়ে বল করিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে দুইজন অফ স্পিনার দিয়ে শুরু এবারই প্রথম।
১৪। অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেও ম্যাচ হারা
অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেও টেস্ট হারা ৬ নম্বর খেলোয়াড় হলেন আমাদের সাব্বির রহমান। এর আগে ১৯২৪ সালে ফ্রিম্যান, ১৯৭৩ সালে এফ হায়েস, ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদ ওয়াসিম, ২০০৫ সালে কেভিন পিটারসেন এবং ২০০৮ সালে টিম সৌদি অভিষেক টেস্টের শেষ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারেন নি।
১৫। অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি
সাব্বির রহমান অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি খেলোয়াড়। পৃথিবীর ইতিহাসে এ কীর্তি গড়া ৪৫তম খেলোয়াড় তিনি।
১৬। এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি
বাংলাদেশের বোলারদের মাঝে এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন মিরাজ। তিনি এই সিরিজে ১৯ টি উইকেট শিকার করেছেন। এর আগে এক সিরিজে ১৮ টি করে উইকেট নিয়ে এই রেকর্ড যৌথভাবে সাকিব আল হাসান এবং এনামুল হক জুনিয়রের ঝুলিতে ছিল।
১৭। দুই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশি স্পিনারদের নেয়া সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড
দুই টেস্টের এই সিরিজে বাংলাদেশি স্পিনাররা ৪০ টি উইকেটের মাঝে মোট ৩৮ টি উইকেট নিয়েছে। এটি দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে স্পিনারদের নেয়া সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটিও বাংলাদেশেরই ছিল। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মট ৩৩ টি উইকেট শিকার করেছিল বাংলাদেশি স্পিনাররা।
১৮। ইংল্যান্ডের স্পিনারদের রেকর্ড
২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের স্পিনারদের নেয়া সর্বোচ্চ উইকেটের টেস্টের সিরিজ এটি। তারা মোট ২৪ টি উইকেট নিয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের স্পিনাররা ইন্ডিয়ার সাথে ১৯ উইকেট নিয়েছিল।