এর আগে কোনো টেস্ট ম্যাচই একটা শহরতলীর নাম আর দুই ডিজিটের একটা সংখ্যা দিয়ে পরিচিত ছিল না। কিন্তু ২১ জুলাই, ১৯৮১ সালে হেডিংলিতে এমন কিছু ঘটেছিল যা রূপকথা বললেও হয়তো কম বলা হবে। ‘হেডিংলি ‘৮১’ নামে অনন্য ও সর্বজনবিদিত এই টেস্ট ম্যাচ ছিল কিংবদন্তি ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর ভাষায় “The most sensational test match of all time.“
অথচ অজি ফাস্ট বোলার টেরি অল্ডারম্যানের বলে বব টেইলর যখন রে ব্রাইটের হাতে ক্যাচ দিয়ে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরলেন, তখন অজিদেরকে আরেকবার ব্যাট করানোর জন্য ইংল্যান্ডের আরো প্রয়োজন ৯২ রান।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসলেন তরুণ স্বর্ণকেশের গ্রাহাম ডিলি। যোগ দিলেন আগের টেস্টেই তার অধিনায়ক থাকা ইয়ান বোথামের সাথে। সম্ভবত আলোকবর্ষ পরে বোথামের চেহারায় ছিল না দুশ্চিন্তার ছাপ, মাথায় ছিল না কোনো বোঝা। ডিলি উইকেটে আসামাত্রই বললেন, “Let’s give it some humpty.“
একটা জয় সবসময় যেকোনো দলের জন্য টনিকের ন্যায় কাজ করে। প্রথম ম্যাচে জয়, দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র, তৃতীয় ম্যাচে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া- ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত অ্যাশেজ পারফরম্যান্স অধিনায়ক কিম হিউজের সাথে ডেনিস লিলি, রড মার্শদের বিবাদকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আগের দুই টেস্টে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় বিদায়ঘন্টা বেজে গিয়েছিল বোথামের অধিনায়কত্বের। তুলনামূলক পান্ডিত্যপূর্ণ চেহারা ও তাত্ত্বিক ব্যক্তি মাইক ব্রিয়ারলিকে দেয়া হলো অধিনায়কত্ব।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিউজ টস জিতে নিলেন ব্যাটিং। উইকেটে ভালো বাউন্স ছিল। গুড লেন্থে পড়ে লাফিয়ে উঠছিলো বার বার। বৃষ্টিতে প্রথম দিনের খেলার অনেকাংশই ভেসে যায়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বুক চিতিয়ে লড়েন জন ডাইসন। প্রায় পাঁচ ঘন্টার লড়াইয়ে ডাইসন করেন ১০২, পরে এই ইনিংসকে নিজের সেরা ইনিংস বলেছিলেন তিনি। অধিনায়ক হিউজ সাড়ে চার ঘন্টা ব্যাট করে করেছিলেন ৮৯।
এক সপ্তাহের কিছু আগে লর্ডসে দুই ইনিংসেই শূন্য অর্থাৎ পেয়ার পেয়েছিলেন ইয়ান বোথাম। অধিনায়কত্বের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকতে যথেষ্ঠ ছিল এটা। দ্বিতীয় টেস্টের শেষ বিকেলে নীরবে মাঠ ছাড়ছিলেন, এমসিসির সদস্যদের সাথে ঠিক চোখাচোখি হচ্ছিল না, অধিনায়কত্বের ব্যাটন যে হাতবদল হয়ে গেছে!
বোথাম অধিনায়ক থাকাবস্থায় যতটুকু বোলিং করতেন, ব্রিয়ারলি তার চেয়ে বেশি চাচ্ছিলেন ‘বোলার’ বোথামের কাছ থেকে। দ্বিতীয় দিন চা বিরতির আগে-পরে টানা ২২.২ ওভার বল করেছিলেন বোথাম। এসময়ে ৪৮ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। বোথাম ইনিংস শেষ করেন ৯৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। অজি অধিনায়ক হিউজ ইনিংস ঘোষণা করেন ৯ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে। হুংকার দেন, “এই উইকেটে চারশো, হাজার রানের সমান।“
হিউজের কথাই সত্যি মনে হচ্ছিল যখন প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ৭৮ থেকে ১৭৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। বব উইলিস, ক্রিস ওল্ড আর গ্রাহাম ডিলির মতো ভুল করেননি জিওফ লসন ও টেরি অল্ডারম্যান। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়েছিলেন ডেনিস লিলিও। শুধু ইংল্যান্ডের হয়ে কিছুটা প্রতি-আক্রমণ করেছিলেন বোথাম। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছড়িয়ে ৮ চারে ৫০ বলে ৫০ রান করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ২২৭ রানে পিছিয়ে থাকতেই অলআউট হওয়া ইংল্যান্ডকে ফের ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। দিন শেষ হওয়ার আগেই লিলির বলে গ্রাহাম গুচ সাজঘরে ফিরেছিলেন শূন্য রানে।
জিওফ বয়কট দারুণ সংগ্রাম করলেন প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে। তার ৪৬ রান ছাড়া, টপ অর্ডারের কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল না, লিলি আর অল্ডারম্যানের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন সবাই।
পিটার উইলি বেশ কিছুক্ষণ ধরে আক্রমণাত্মক শট খেলে অজিদের বিভ্রান্ত করতে যাচ্ছিলেন। বোলার লিলি অধিনায়ক হিউজের কাছে ফ্লাই স্লিপে ফিল্ডার চাইলেন। হিউজ নিষেধ করলেন। কিছুক্ষণের মাঝেই বল ঠিক এই জায়গা দিয়েই উড়ে গেল। গোঁফে তা দিতে দিতে রাগান্বিত ভঙ্গিতে অধিনায়কের দিকে তাকালেন লিলি। এবারও রাজি হলেন না হিউজ। ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। কোমরে হাত দিয়ে এমনভাবে তাকালেন যেন কিম হিউজকে এখনই খেয়ে ফেলবেন লিলি!
এবার দায়িত্ব নিলেন উইকেটরক্ষক রড মার্শ। নিজে গিয়ে হিউজকে বলে ফ্লাই স্লিপে ফিল্ডার দাঁড় করালেন। লিলি বল করলেন। খাটো লেন্থের বল, কাট করতে চাইলেন উইলি। বল জমা পড়লো সেই ফ্লাই স্লিপে দাঁড়ানো ডাইসনের হাতে। ধারাভাষ্যে রিচি বেনো বললেন, “Superb captaincy. One of the best pieces of tactical thinking I’ve seen in a long time.“
উইকেটে আসলেন বোথাম। ছয় উইকেট ও প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক করে ছিলেন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। শুরু করলেন নান্দনিক এক কাভার ড্রাইভ দিয়ে। দুটো শট মাঝব্যাটে খেলে ফেলেই হয়ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন দিনটা তারই হতে যাচ্ছে। দুবার অবশ্য বল স্লিপের উপর দিয়ে উড়ে গেল। এদিকে অল্ডারম্যানের বলে লেগ বিফোর হয়ে ফিরে গেলেন বয়কট।
স্কোরবোর্ডে রান যখন ৭ উইকেটে ১৩৫, তখন উইকেটে আসলেন গ্রাহাম ডিলি। বোথাম তার সাথে মিলে এগিয়ে গেলেন “Give it a humpty” এর দিকে!
লাঞ্চের সময় ল্যাডব্রোকস অস্ট্রেলিয়া হারার উপর ৫০০-১ এ বাজি প্রস্তাব করেছিল। এমনকি রূপকথার কারিগর স্বয়ং স্যার ইয়ান বোথাম হোটেল থেকে চেক আউট করে ফেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার জয় সেসময় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার।
বল সুইং করা সত্ত্বেও বাঁহাতি গ্রাহাম ডিলি কাভারের দিকে ব্যাট ঘোরাচ্ছিলেন, যদি পরাজয়ের ব্যবধান কিছু কমানো যায় বা অজিদেরকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে পাঠানো যায় এই ভেবে। বেশিরভাগ সময়ই বল ব্যাটের বাইরের কানায় লাগছিল, তবে ভাগ্য সহায় ছিল।
অপরপ্রান্তে বোথাম দুর্দান্তভাবে ড্রাইভ করছিলেন, কোনো কোনো সময় তিন স্টাম্প থেকে সরে গিয়ে বোলারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাচ্ছিলেন। মোটামুটি অর্ধেকের মতো মাঝব্যাটে লাগেনি, কিন্তু আউট হননি। বল মাঝব্যাটেই লাগুক, আর কানায়ই লাগুক, গিয়ে পড়ছিলো বাউন্ডারির বাইরে না হয় মিড অন-মিড অফের মাঝখানে কিংবা স্লিপ ফিল্ডারদের পেছনে।
ডেনিস লিলি এই ইনিংসের ব্যাপারে বলেছিলেন, “Bloody lucky innings. I expected to get him virtually every ball.“
মাঠের যেকোনো প্রান্তে ফিল্ডার থাকুক আর না থাকুক, বোথাম প্রতি-আক্রমণ শুরু করেছিলেন, ব্যাট ঘোরাচ্ছিলেন উইন্ডমিলের মতো। ইনিংসটা ছিল দুর্দান্ত সাহস আর সৌভাগ্যের সমন্বয়- এমন ইনিংস শতাব্দীতে হয়তো একবারই আসে।
‘শ্যাম্পেনের বোতলগুলো কখন খুলবো’ এই চিন্তায় থাকা ইংল্যান্ডের ফিল্ডারদের কপালে হঠাৎই চিন্তার ভাঁজ দেখা দিল। অল্ডারম্যানের বলে বিশাল ছয় হাঁকালেন বোথাম। ধারাভাষ্যে ভেসে উঠল বেনোর কণ্ঠ, “Don’t even bother looking for that. It’s gone into the confectionary stall & out again.“
গ্রাহাম ডিলি অবশেষে আউট হলেন ব্যক্তিগত ৫৬ রানে, তার আগে কেবল ৮০ মিনিটে বোথামের সাথে যোগ করেন ১১৭।
দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসলেন ক্রিস ওল্ড। ইংল্যান্ড মাত্র ২৫ রানে এগিয়ে। ওল্ড চোখ বন্ধ করে ব্যাট ঘোরাচ্ছিলেন। অন্যপ্রান্তে জিনিয়াস বোথাম তার স্বভাবসুলভ শ্বাসরুদ্ধকর স্ট্রোকপ্লে চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
বোথামের সাথে ৬৭ যোগ করলেন ওল্ড, ততক্ষণে তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছে গেছেন বোথাম। বোথাম বুঝে গিয়েছিলেন, আজ দিনটা তারই। ওল্ড ২৯ রান করে যখন ফেরত যাচ্ছেন তখন ৯২ রানে এগিয়ে ইংল্যান্ড। এগারোতম ব্যাটসম্যান বব উইলিসের সাথে শেষ বিকেলে ৩২ রান যোগ করলেন বোথাম। চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেট হাতে রেখে ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল ১২৪ রানে।
সিডনি সান পত্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ার অবশ্যম্ভাবী জয় সম্পর্কে অজি অধিনায়কের সাথে কথা বললেন ফ্রাংক কুক। ড্রেসিংরুমে স্টিভ রিক্সন ও গ্রায়েম বিয়ার্ড শ্যাম্পেনের বোতল সাজাচ্ছিলেন পরের দিনের উদযাপনের জন্য। এতটাই নিশ্চিত ছিলেন জয় সম্পর্কে তারা!
সকালেই আউট হয়ে যান বব উইলিস। ১৪৮ বলে ২৭ চার ও ১ ছয়ে অপরাজিত ১৪৯ রান নিয়ে দৌঁড়ে মাঠ ছাড়েন ইয়ান বোথাম। টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে যেটা আলোচিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
১৩০ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। ব্রিয়ারলি নতুন বল দিলেন ডিলি আর বোথামকে। ডিলি প্রথম ইনিংসে ভালো বোলিং করেননি। তবু এত কম রান নিয়ে ডিলিকে শুরুতেই আক্রমণে আনাটা সম্ভবত যুক্তিযুক্ত ছিল না।
বোথামও শুরুতে সুবিধা করতে পারেননি। শুরু করলেন বাজে বল দিয়ে। চার মারতে ভুল করলেন না গ্রায়েম উড। পরের বল ছিল হাফভলি, ফলাফল আবারো চার। গ্রায়েম উডকে বোথাম আউট করতে পারলেও অন্যপ্রান্তে ডিলি খরুচে বোলিং করছিলেন।
৬ষ্ঠ ওভারে ব্রিয়ারলি আক্রমণে আনেন উইলিসকে৷ মন্ত্র শুনিয়ে দেন, “Faster and straighter.“
বাতাসের বিরুদ্ধে ভালই বোলিং করছিলেন উইলিস। তবে কাঙ্ক্ষিত উইকেট পাচ্ছিলেন না। অধিনায়ককে জানালেন এই প্রান্ত থেকে বল করা কঠিন হচ্ছে, ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন উইলিস। তার কথা শুনলেন অধিনায়ক। প্রান্তবদল করে বাতাসের অনুকূলে নতুন উদ্যমে বোলিং করতে প্রস্তুত হলেন উইলিস।
স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ৫৬। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭৪। অন্যপ্রান্ত থেকে বল করতে এসেই ট্রেভর চ্যাপেলকে আউট করলেন উইলিস। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নামলেন অধিনায়ক হিউজ। মধ্যাহ্ন বিরতি ঘনিয়ে আসছিল। হিউজ কোনোমতে বিরতির আগ পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে চাইলেও বাগড়া দিলেন উইলিস। স্লিপে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ইয়ান বোথাম।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসলেন গ্রাহাম ইয়ালপ, উদ্দেশ্য বিরতির আগপর্যন্ত নিরাপদে কাটিয়ে দেয়া। কিন্তু বব উইলিস তা হতে দিলেন কই! খাটো লেন্থের বল হেলমেট বরাবর ধেয়ে আসছিল, কোনোমতে ব্যাট লাগিয়েছিলেন ইয়ালপ। কিন্তু শর্ট লেগে বল তালুবন্দি করতে ভুল করেননি মাইক গ্যাটিং।
অন্যপ্রান্তে ক্রিস ওল্ড মিতব্যয়ী বোলিং করছিলেন। রে ব্রাইট দুটো বাউন্ডারি মারার আগের স্পেলে ৮ ওভারে কেবল ১১ রান দিয়েছিলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পরে এলান বোর্ডারকে শূন্য রানে ফেরান ওল্ড।
অন্যপ্রান্ত থেকে উইলিস বল হাতে তান্ডব চালাচ্ছিলেন। খাটো লেন্থের বলগুলো হেলমেট বরাবর বিষাক্তভাবে লাফিয়ে উঠছিলো। ডাইসন ও রড মার্শকে ফেরানোর পর জিওফ লসনকে উইকেটের পেছনে বব টেইলরের ক্যাচ বানান উইলিস। ছয় ওভারের মাঝেই ছয় উইকেট পেয়ে যান তিনি। স্কোরবোর্ড বলছে ৭৫ রানে ৮ উইকেট। প্রায় নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে ইংরেজ শিবির।
তবে লিলির অভিজ্ঞতা শেষদিকে নাটকীয়তার জন্ম দেবার আভাস দিচ্ছিল। উইলিসের খাটো লেন্থের বল স্লিপের উপর দিয়ে উড়ে গেল, চার। গ্রাহাম গুচকে ফ্লাই স্লিপে দাঁড় করালেন ব্রিয়ারলি। এবার থার্ডম্যান আর ফ্লাই স্লিপের মাঝামাঝি দিয়ে বল বাউন্ডারির বাইরে চলে গেল। আত্মবিশ্বাসী লিলি এবার কাট করে পেলেন বাউন্ডারির দেখা। অন্যদিকে রে ব্রাইটও দুটো বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জমিয়ে তোলেন খেলা। স্কোরবোর্ডে উঠল ৮ উইকেটে ১১০, জয় থেকে ২০ রান দূরে অজিরা।
এবার মাইক গ্যাটিং দৌঁড়ে গেলেন ব্রিয়ারলির কাছে। অধিনায়ককে বললেন, “ববকে বলো স্টাম্প বরাবর বল করতে। ডেনিস (লিলি) আউট হয়ে যাবে।” উইলিস মধ্য স্টাম্প বরাবর বল করলেন। লিলি সময়মতো ড্রাইভ করতে পারলেন না, বল জমা পড়লো সেই গ্যাটিংয়ের হাতেই।
হাতে ১ উইকেট। টান টান উত্তেজনা। ওল্ড মার খাওয়ায় এবার বোথামকে আক্রমণে আনলেন ব্রিয়ারলি। দুবার আউট সুইংগারটা ঠিকঠাক হলো বোথামের, দুবারই শেষ ব্যাটসম্যান অল্ডারম্যানের ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে গেল, দুবারই ক্যাচ ফেলে দিলেন ওল্ড। কিন্তু এসবের থোড়াই কেয়ার করলেন বব উইলিস। পরের ওভারে রে ব্রাইটের মধ্য স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে আনন্দে ভাসালেন হেডিংলির দর্শকদের। এমন কীর্তি গড়লেন বোথাম-উইলিসরা, যেটা সেই ১৮৯৪-৯৫ সালে করেছিলেন তাদের পূর্বসূরিরা।
বব উইলিস ৪৩ রানে ৮ উইকেট নিলেও অজি বোলারদের উপর তান্ডব চালিয়ে ২য় ইনিংসে ১৪৮ বলে ১৪৯ রানে অপরাজিত থাকা বোথাম জিতলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। প্রথম ইনিংসেও ৫০ রানের পাশাপাশি ম্যাচেও নিয়েছেন ৭ উইকেট। ২য় ইনিংসে এমন ব্যাটিং করেছিলেন যে ফিল্ড সেট করা কঠিন হয়ে পড়েছিল অজি অধিনায়কের জন্য।
স্টিভ রিক্সন আর গ্রায়েম বিয়ার্ড হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি চতুর্থ দিন বিকেলে তাদের শ্যাম্পেন দিয়ে উদযাপন করার প্রস্তুতি প্রস্তুতিতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে!