গত ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? লড়াইটা ছিলো জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনার। অন্যভাবে বলা যায়, লড়াইটা ইউরোপ বনাম লাতিন আমেরিকারও। যদিও জার্মানি জেতায় সেবার ইউরোপিয়ানদেরই জয় হয়। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ শিরোপা লাতিন আমেরিকার দল ব্রাজিল জিতেছে। আর্জেন্টিনা জিতেছে দুইবার, উরুগুয়েরও বিশ্বকাপের শিরোপা আছে। বিশ্বকাপের অর্জন তাদের কম কিন্তু নয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই মনে করে, চলমান ফুটবল যুগে লাতিন আমেরিকান দল বরাবরই পিছিয়ে। যদিও এর পেছনে যথাযথ যুক্তিও আছে। ২০০২ সালে সর্বশেষ লাতিন আমেরিকান দল হিসেবে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতার পর আর কোন অর্জন নেই। ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে কোন লাতিন আমেরিকান দল ফাইনাল খেলেনি। এরপর ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা। আর এবার? ফাইনালে তো দূরের কথা, শেষ চারে কোন লাতিন আমেরিকান দল নেই।
তাই ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া ফাইনালের টিকেট কাটার পর নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে দুই ইউরোপিয়ান দলের লড়াই। বিশ্বকাপে অবশ্য এমনটা নতুন নয়। বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের ইতিহাসে এমনটা হয়েছে ৮ বার। তাই পেছনে ফিরে গিয়ে অল-ইউরোপিয়ান ফাইনালের স্মৃতিকে একবার অনুভব করা যাক।
ইতালি ২-১ চেকোস্লোভাকিয়া (১৯৩৪ বিশ্বকাপ)
প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে কোন ইউরোপিয়ান ক্লাব পৌঁছাতে পারেনি। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো লাতিন আমেরিকার দেশের ভেতর। উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচে সেবার বিশ্বকাপ ঘরে নেয় উরুগুয়ে। পরবর্তীতে বিশ্বকাপের ফাইনালে লাতিন আমেরিকার দল তেমন সুবিধা করতে পারেনি। পৌঁছাতে পারেনি ফাইনালেও। ইতালি ও চেকোস্লোভাকিয়ার ফাইনাল ম্যাচটি ছিলো সম্পূর্ণ ইউরোপিয়ানদের লড়াই। ১৯৩৪ বিশ্বকাপের মুকুট ঘরে তুলতেও ইতালিকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। চেকোস্লোভাকিয়া প্রথম গোল করে এগিয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে গোল পায় ইতালি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। মাঠের লড়াইয়ে চেকোস্লোভাকিয়া ইতালির সাথে পাল্টা লড়াই করে গেলেও শারীরিকভাবে তারা তেমন শক্তিশালী ছিলো না। অপরদিকে, ইতালি চেকোস্লোভাকিয়ার তুলনায় দু’দিকেই এগিয়ে ছিলো। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই ইতালির হয়ে গোল করেন স্কিয়াভো। ২-১ জিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতে জিউসেপ্পি মিয়াজ্জার ইতালি।
ইতালি ৪-২ হাঙ্গেরি (১৯৩৮ বিশ্বকাপ)
১৯৩৪ সালের পর আরও একবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালি। ইতিহাসের ৩য় বিশ্বকাপেই ইতালিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে টানা দুই বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড। ইতালির কোচ তখনও ভিত্তোরিও পোজজো। কোচ হিসেবে তিনিও টানা দুইবার বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। ইউরোপে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। এ কারণেই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে। গৃহযুদ্ধের কারণে স্পেনও অংশ নিতে পারে না বিশ্বকাপে। তাই ইতিহাসের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ কিছুটা জৌলুস হারিয়েই অস্থির একটি সময়ে শুরু হয়। স্বাগতিক ফ্রান্স হেরে যায় নিজেদের মাঠেই। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইতালি। সেখানে ইতালির জন্য অপেক্ষা করছিলো হাঙ্গেরি। ফাইনালে হাঙ্গেরিকে কোনো সুযোগ দেয়নি ইতালি। জিনো কোলাউসি ও সিলভিও পিউলার জোড়া গোলে ৪-২ ব্যবধানে হাঙ্গেরিকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জেতে ইতালি। এরপর বিশ্বযুদ্ধের কারণে দীর্ঘ ১২ বছর অনুষ্ঠিত হয়নি বিশ্বকাপ। তাই জুলেরিমে ট্রফিটা ১২ বছর নিজেদের করে রেখেছিলো ইতালি।
পশ্চিম জার্মানি ৩-২ হাঙ্গেরি (১৯৫৪ বিশ্বকাপ)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের পরে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ বিশ্বকাপের মঞ্চে নিষিদ্ধ ছিলো পশ্চিম জার্মানি ও জাপান। তাই এ বিশ্বকাপ পশ্চিম জার্মানির জন্য ছিলো নিজেদের ফিরে পাবার। জার্মানি ফুটবল তখন খুবই সাধারণ পর্যায়ে। ক্লাবগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই, ভাতা নেই, নেই কোন পর্যাপ্ত ফুটবলের সামগ্রী। বিশ্বকাপের মূলমঞ্চে জায়গা পাওয়া তাদের জন্য স্বপ্ন ছিলো। কিন্ত তারাই গেল বিশ্বকাপ ফাইনালে। ফাইনালে জার্মানির বিপরীতে পুসকাসের ভয়াল হাঙ্গেরি। যারা কোরিয়াকে ৯-০ এবং জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে এসেছে। পুঁচকে জার্মানির সামনে তারাই ফেভারিট। প্রথমবারের মত বিশ্বকাপটা তাদের হাতেই উঠতে যাচ্ছিলো। জিবর আর পুসকাস মাত্র ৮ মিনিটে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। কিন্ত জার্মানি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ২ গোলে সমতায় আসার পর ৮৪ মিনিটে হেলমুট রানের জয়সূচক গোলে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জেতে পশ্চিম জার্মানি। এ জয়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধে নুয়ে পড়া একটি জাতিতে যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিলো।
ইংল্যান্ড ৪-২ পশ্চিম জার্মানি (১৯৬৬ বিশ্বকাপ)
১৯৬৬ বিশ্বকাপ মাতিয়েছিলেন দু’জন। পর্তুগালের ইউসেবিও ও ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। ফুটবলের জন্ম ইংল্যান্ডে, অথচ তারা প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৫০ সালে। তবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মত মঞ্চে গিয়ে ধারাবাহিক উন্নতি করতে থাকে ইংলিশ’রা। যার ফলাফল জিওফ হার্স্টের কাঁধে ভর করে ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপ মুকুট। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ১৬ দলে লাতিন আমেরিকার দল ছিলো মাত্র ৩টি। বিপরীতে ইউরোপ থেকেই এসেছিলো ১০টি দল। কিন্ত দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা তেমন পাত্তাই পায়নি বাকি দলের কাছে। ব্রাজিল পর্তুগাল আর হাঙ্গেরির বিপক্ষে সুবিধাই করতে পারেনি। আর আর্জেন্টিনা হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। অপরদিকে উরুগুয়ে ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে পশ্চিম জার্মানি।
তবে পশ্চিম জার্মানি দারুণ খেললেও জিওফ হার্স্টের কাছেই পিছিয়ে যায় তারা। হার্স্ট করেন বিশ্বকাপ ফাইনালের একমাত্র হ্যাটট্রিক। ইংল্যান্ড পশ্চিম জার্মানিকে হারায় ৪-২ গোলের ব্যবধানে। যদিও ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর আর একবারও বিশ্বকাপের শিরোপা ছোঁয়া হয়নি ফুটবলকে জন্ম দেওয়া দেশটির।
নেদারল্যান্ডস ১-২ পশ্চিম জার্মানি (১৯৭৪ বিশ্বকাপ)
জুলেরিমে ট্রফির অধ্যায় শেষ। ২০ বছর পর পশ্চিম জার্মানি আবার স্বরূপে, বিপরীতে নেদারল্যান্ডস মেতেছে নতুন এক নেশায়। ইয়োহান ক্রুয়েফ এবং তাদের টোটাল ফুটবল। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ভেতর সে বছর সুযোগ পেয়েছিলো আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও চিলি। আর্জেন্টিনা দলের অবস্থা তেমন সুবিধাজনক ছিলো না আর চিলি তো একেবারে আনকোরা।
ফাইনালে টোটাল ফুটবল ও ক্রুয়েফের হল্যান্ডের বিপরীতে ব্যাকেনবাওয়ার ও জার্ড ম্যুলারের জার্মানি। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচটি ছিলো উত্তেজনায় ঠাসা। ম্যাচে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথমবারের মত পেনাল্টিতে এগিয়ে গিয়েছিলো নেদারল্যান্ডস। কিন্ত ক্রুয়েফের স্বপ্নভঙ্গ হয় অদম্য জার্ড ম্যুলারের কল্যাণে। ২০ বছর পর সে বছর আবারও বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছিলো পশ্চিম জার্মানি। আর হতভাগ্য নেদারল্যান্ডসের এখনও বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
ইতালি ৩-১ পশ্চিম জার্মানি (১৯৮২ বিশ্বকাপ)
দ্বাদশ বিশ্বকাপ বসেছিলো স্পেনে। এ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের একটি ম্যাচ বেশ বিখ্যাত। পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে সেমিফাইনালটিকে তো শতাব্দীর সেরা বিশ্বকাপ ম্যাচও বলা হয়। ১২০ মিনিটেও খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। অতঃপর টাই-ব্রেকার। কিন্ত তাতেও ফলাফল নির্ধারণ করা গেলো না। তাই ম্যাচের ফলাফল পেতে সাডেন ডেথ পথকেই বেছে নিতে হয়। উত্তেজনায় ঠাসা সে ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি ৮-৭ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। অপর সেমিফাইনাল ম্যাচে পোল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পায় ইতালি।
তারদেল্লির জোড়া গোলে ম্যাচের ভাগ্য অনেক আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো। যদিও শেষ পর্যন্ত ১ গোল ফেরত দিতে পেরেছিলো জার্মানি। তাই ৩-১ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে সেবারের বিশ্বকাপ জেতে ইতালি। একইসাথে শীর্ষ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পাওলো রসি।
ইতালি ১(৫)-(৩)১ ফ্রান্স (২০০৬ বিশ্বকাপ)
২০০৬ বিশ্বকাপ অনেক দিক থেকে ঐতিহাসিক মর্যাদা বহন করে। এ বিশ্বকাপেই বিশ্ব দেখেছিলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির আগমন, জার্মান শিবিরের তরুণদের মেলা আর জিদানের বুড়ো হাড়ের ভেলকি। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল উভয় দলই ছিলো বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট। কিন্ত আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ হয় তারুণ্যে ভরা জার্মানির কাছে। আর ব্রাজিলের বিশ্বকাপ সমাপ্তি হয় জিদান ও অঁরির ফ্রান্সের কাছে হেরে। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেওয়া জার্মানিও হেরে বাদ পড়ে আন্ডারডগ ইতালির কাছে। অনেক যুদ্ধ ও রোমাঞ্চের পর ফাইনালে পৌঁছায় ইতালি ও ফ্রান্স। যেখানে রচিত হয় ভিন্ন এক কাহিনী।
স্বাভাবিকভাবে, ফাইনালে ফেভারিট ছিলো ফ্রান্সই। ম্যাচের শুরু থেকে জিদান ও অঁরির সামনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো ফ্যাবিও ক্যানাভারোর রক্ষণ। ৭ মিনিটে জিদান গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে নিয়ে গেলে ম্যাচে সমতায় ফেরায় মাতেরাজ্জি। ১১০ মিনিটের লড়াইয়ের পর সবাই যখন টাই-ব্রেকারের জন্য প্রস্তুত তখন জিদান ইতালির খেলোয়াড় মাতেরাজ্জিকে ঢুস মেরে দেখলেন লাল কার্ড। মাঠ ছেড়ে তার প্রস্থানের পাশাপাশি যেন ফ্রান্সের সব স্বপ্নও চুরমার হয়ে গেলো। টাই-ব্রেকারে থ্রিজিগুয়েট একমাত্র পেনাল্টি মিস করলেন আর অন্যদিকে ইতালির খেলোয়াড়েরা পাঁচটা শটের পাঁচটাতেই গোল করলেন। জিদানবিহীন ফ্রান্স টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হেরে যায়। চতুর্থবারের মতো স্বপ্নের সোনালি ট্রফিটা জিতে নেয় ইতালি।
নেদারল্যান্ডস ০-১ স্পেন (২০১০ বিশ্বকাপ)
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি সহ ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, জার্মানির মত ইউরোপিয়ান দেশগুলো ফেভারিট ছিলো। আর লাতিন আমেরিকার দলগুলোর ভেতর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে ছিলো শিরোপা প্রত্যাশী। কিন্ত গ্রুপ পর্বেই হোঁচট খেলো ইতালি ও ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালেই বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। একমাত্র লাতিন আমেরিকার দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে উরুগুয়ে সক্ষম হলেও, তারা বাদ পড়ে নেদারল্যান্ডসের সাথে হেরে। তাই ফলাফল, আরও একবার অল-ইউরোপিয়ান ফাইনাল লড়াই।
নেদারল্যান্ডস তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপ ফাইনালে। তাদের সামনে আরও একটি সুযোগ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ছুঁয়ে দেখার। কিন্ত স্পেন যে তখন সোনালি সময় পার করছে। ক্যাসিয়াস, পুয়োল,জাভি, ইনিয়েস্তা, তোরেস, ভিয়াদের নিয়ে গড়া এ দলটি ভিন্ন কথা বলে। তবুও নেদারল্যান্ডস প্রাণপণে চেষ্টা করে গেছে স্পেনকে থামানোর। সাফল্য হয়ত পেতেই পারতো যদি ইনিয়েস্তা শেষ মুহূর্তে একমাত্র গোল না করতেন। ১-০ গোলে হেরে যায় নেদারল্যান্ডস। স্পেন জিতে নেয় তাদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ। সে বছর উরুগুয়ের স্ট্রাইকার দিয়েগো ফোরলান গোল্ডেন বল ও জার্মানির তরুণ স্ট্রাইকার টোমাস ম্যুলার জিতে নেন গোল্ডেন বুট।
ফিচার সোর্স: Fifa.com