সারাবিশ্বের ক্রীড়াজগতকে সহজভাবে বিভক্ত করা যায় না। অঞ্চলভেদে বিভিন্ন মহাদেশে ভিন্ন ভিন্ন খেলা বেশি প্রচলিত। সারাবিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফুটবল। তবে অঞ্চলভেদে জনপ্রিয়তা এবং বিনিয়োগ হিসেব করলে উত্তর আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াজগত একটু ভিন্ন এবং বৈচিত্র্যময়। ইউরোপ যখন ফুটবল আর টেনিসের নেশায় বুদ হয়ে আছে তখন আমেরিকানরা বেসবল, বাস্কেটবল, গলফ নিয়ে ব্যস্ত। তবে সেখানে ফুটবলের জনপ্রিয়তা একেবারেই কম নয়। আবার উল্লেখিত নামগুলোর চেয়ে বেশিও না। অন্তত বিনিয়োগ, স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতি এবং জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয়তা এমনটাই প্রমাণ করে।
এত এত খেলাধুলার মাঝে আমেরিকান ফুটবল লিগ এনএফএল (NFL) এখন অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সফলতম আসর পরিচালনা করেছে। উত্তর আমেরিকায় ক্রীড়াজগতের বিগ থ্রি অথবা বিগ ফোর হিসেবে পরিচিত কয়েকটি খেলার মধ্যে এটি একটি। সাধারণ দৃষ্টিতে অনেকেই এই খেলাকে রাগবি ভেবে ভুল করেন। যদিও আমেরিকান ফুটবল শুধুমাত্র আমেরিকাতেই খেলা হয়, অন্যদিকে রাগবি সারাবিশ্বে প্রচলিত। এই দুই খেলার মাঝে নিয়মগত পার্থক্য ছাড়াও আরো অনেক তফাৎ রয়েছে।
রাতারাতি রাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক খেলাধুলায় বেশ সমালোচিত হয় আমেরিকান ফুটবল লিগ। আর এই সমালোচনার জবাবও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ১৯৪৭ সালে কার্যকর হওয়া বাৎসরিক কর ছাড়ের যে সুযোগ ছিল তা পরিত্যাগ করেছে তারা। এতে করে সংস্থাটির আয় মোটেও কমেনি, বরঞ্চ কয়েক শতাংশ বেড়েছে বলেই ধারণা মার্কিন সাংবাদিকদের। বর্তমানে এনএফএল সবচেয়ে বেশি আয় করে টেলিভিশন সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান হতে। ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী তাদের আয়ের ৫০% অর্থের যোগানদাতা চুক্তিবদ্ধ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। সেবার বছর শেষে এনএফএলের রাজস্ব ছিল ১২ বিলিয়ন ডলার।
তবে এটি ছাড়াও আরো একাধিক খাত রয়েছে যেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে সংস্থাটি। টিকেট বিক্রি, পণ্য বিক্রি, লাইসেন্স স্বত্ব এবং কর্পোরেট স্পন্সরশিপ থেকেও নিয়মিত অর্থ আয় করছে তারা। ২০১৫ সালের পর নানারকম বিতর্কে জড়িয়েও এনএফএলের আয় কমেনি। স্বায়ত্তশাসিত বলে তাদের আয়ের ব্যাপারে এখন আর সরাসরি জানার সুযোগ নেই। তবে বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্রমতে- ২০১৮ সালে এনএফএলের আয় ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৬ সালে ১৩.৩ বিলিয়ন, ২০১৭ সালে ১৪.২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল সংস্থাটি। এনএফএল এর কমিশনার রজার গুডেলের প্রত্যাশা- ২০২৭ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বাৎসরিক আয় ২৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকবে।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াজগতে সাড়াজাগানো এনএফএলের ব্যবসায়ীক পন্থা, আকর্ষণীয় সম্প্রচার চুক্তি, পণ্য বিক্রয়, টিকেট বিক্রিসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিজনেস মডেল
সর্বমোট ৩২টি দলের সমন্বয়ে ন্যাশনাল ফুটবল লিগ অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে একমাত্র অলাভজনক দলটি হলো গ্রিন বে পেকার্স। বাকি ৩১টি দল আলাদা আলাদা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত। এনএফএলের কর্তৃপক্ষ দুভাবে অর্থ আয় করে। সিংহভাগ অর্থ আয় হয় জাতীয় পর্যায় থেকে। এছাড়াও আঞ্চলিক খাত থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে সংস্থাটি।
জাতীয় আয়ের উৎসের মধ্যে টেলিভিশন সম্প্রচার চুক্তি, পণ্য বিক্রয় এবং লাইসেন্স চুক্তি উল্লেখযোগ্য। কোনোপ্রকার পরোক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়াই সবগুলো ক্ষেত্রে এনএফএল কর্তৃপক্ষ চুক্তি করে থাকে। এসব খাত থেকে আয় করা অর্থ মৌসুমভিত্তিক পারফরম্যান্স এবং দর্শক জনপ্রিয়তা অনুযায়ী ৩২টি দলের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। গ্রিন বে পেকার্সের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী এনএফএল ২০১৮ অর্থবছরে জাতীয় খাত থেকে ৮.১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি দলকে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিল এনএফএল। বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যাশনাল ফুটবল লিগের ম্যাচ সম্প্রচার করে সেগুলো হলো সিবিএস স্পোর্টস, ফক্স স্পোর্টস, এনবিসি, ইএসপিএন, এনএফএল নেটওয়ার্ক এবং টেলেমুন্ডো দেপোর্টেস।
দলগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টিকেট বিক্রি, বিভিন্ন রকম ছাড়, কর্পোরেট স্পন্সরশিপ থেকে অর্থ আয় করে। একে এনএফএলের আঞ্চলিক আয়ের উৎস হিসেবে ধরা হয়। গ্রিন বে পেকার্স ২০১৮ সালে স্থানীয় উৎসগুলো থেকে আয় করেছে ১৯৬ মিলিয়ন ডলার, যা তাদের গত অর্থবছরের মোট আয়ের ৪৩%। দলটি ২০১৮ সালে সর্বমোট ৪৫৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। এই হিসেবে অন্য দলগুলো হয়তো কয়েকগুণ বেশিই আয় করছে। তবে আয়ের সাথে সাথে ব্যয়ও বেড়েছে ক্লাবগুলোর।
গতবছর পেকার্স শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের পেছনেই ২১৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এছাড়াও স্টেডিয়াম পরিচর্যা, মার্কেটিং এবং দলের আনুসাঙ্গিক বাবদ খরচ করেছে আরও ২০৮ মিলিয়ন ডলার। সর্বোপরি মৌসুম শেষে তাদের লাভ ছিল মাত্র ৩৮.৫ মিলিয়ন ডলার যা লাভের দিকথেকে খুবই স্বল্প। ফোর্বসের তথ্যমতে ২০১৮ সালে এনএফএলের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করেছে ডালাস কাউ বয়েজ। ৮৬৪ মিলিয়ন ডলার আয় করা ক্লাবটির লাভের পরিমাণ ছিল ৩৬৫ মিলিয়ন ডলার।
টেলিভিশন সম্প্রচার চুক্তি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত ২০ বছরে টেলিভিশনে সর্বাধিক উপভোগ করা খেলাগুলোর মধ্যে আমেরিকান ফুটবল লিগ অন্যতম। এনএফএল সপ্তাহে সোম, মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার সম্প্রচার করা হয় বলে এর দর্শক জনপ্রিয়তা অন্য খেলার চেয়ে বেশি। আর এই কারণে সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগের চেয়েও বেশি অর্থ ব্যয় করে এনএফএলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান সিবিএস স্পোর্টস, এনবিসি এবং ফক্স স্পোর্টস ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৯.৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠানগুলো যত বেশি সময় নেবে অর্থের পরিমাণও নির্দিষ্ট হারে বাড়বে।
একই বছর ইএসপিএনও চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র সোমবার রাতের ম্যাচগুলো সম্প্রচার করবে চ্যানেলটি। আর এই বাবদ ১৫.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে তারা। ইএসপিএনের দেখাদেখি মঙ্গলবার রাতের ম্যাচগুলো সম্প্রচারের জন্য নতুন চুক্তি করেছে ফক্স স্পোর্টস। ২০১৮ সালে এনবিসি এবং সিবিএসকে বাদ দিয়ে বাৎসরিক ৩.৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি।
পণ্যদ্রব্য এবং লাইসেন্সিং চুক্তি
জাতীয় খাতে আয়ের সিংহভাগ টেলিভিশন সম্প্রচার চুক্তির মাধ্যমে অর্জিত হলেও পণ্যদ্রব্য বিক্রি এবং লাইসেন্সিং চুক্তির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করে এনএফএল। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এনএফএলের বিজ্ঞাপন সম্বলিত পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। ২০১৮ সালে বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জামাদি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল তারা। এই চুক্তিতে তাদের সঙ্গে অংশীদার ছিল অনলাইন বিপণী প্রতিষ্ঠান ফ্যানাটিক্স। এই চুক্তির মাধ্যমে ফ্যানাটিক্স নাইকির তৈরি এনএফএলের বিভিন্ন পণ্য বিক্রির একচেটিয়া স্বত্বাধিকার পায়।
এই চুক্তিটি কেমন অর্থের বিনিময়ে হয়েছে তা এখন অবধি নিশ্চিত নয় মার্কিন পত্রিকাগুলো। তবে এটি সম্প্রচার চুক্তির চেয়েও কম হবে বলেই ধারণা ক্রীড়া সাংবাদিকদের। শিকাগোভিত্তিক নেভিগেট রিসার্চের মতে বাণিজ্যিক খেলাধুলায় এমন বৈপ্লবিক অর্থ আয়ে বিভিন্ন সংস্থা কিংবা ক্লাবের পণ্যবিক্রয়, কিংবা বিজ্ঞাপন থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় হয় তা সম্প্রচার চুক্তির চেয়েও কয়েকগুণ কম। সে হিসেবে এনএফএল বাৎসরিক আয়ের মাত্র ১০ শতাংশ সেখান থেকে পেয়ে থাকে।
টিকিট বিক্রি এবং ছাড়
টেলিভিশন সম্প্রচার খাতের চেয়ে হিসেবে কম হলেও টিকেট বিক্রিই স্বতন্ত্র দলগুলোর আয়ের অন্যতম একটি মাধ্যম বলা যায়। লিগের স্টেডিয়ামগুলোতে গড় দর্শক ধারণক্ষমতা ৭০,০০০। গত কয়েক বছরের হিসেবে প্রায় সব ম্যাচের সবগুলো টিকিটই বিক্রি হয়েছিল। যদিও এটি দলগুলোর জন্য লাভজনক ভূমিকা পালন করতে পারেছে না। লাভের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য দলগুলো প্রতিবছর ৭ শতাংশ হারে টিকিটের দাম বাড়িয়েছে। এক হিসেবে দেখা যায় ২০০০ সালে এনএফএলের একটি ম্যাচের টিকিটের গড় দাম ছিল ৩০ ডলার যা ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ ডলারে।
প্রতিবছর টিকিটের দাম বাড়িয়েও খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে না পারায় বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে দলগুলো। তবে এনএফএল কর্তৃপক্ষ সবগুলো দলকে স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, প্রতিবার দাম বাড়ালে তা দর্শকমহলে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে বেশি দর্শক টিকিট কেটে ম্যাচ উপভোগ করলে বেশি অর্থ আয়ের সুযোগ পাবে দলগুলো। গ্রিন বে পেকার্স ২০১০ সালের পর এখন অবধি স্টেডিয়াম সংস্কারে ৩৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ফলশ্রুতিতে তাদের টিকিট বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৪৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭১ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকেছে।
বর্তমানে আয়ের পরিমাণ বাড়াতে স্টেডিয়ামে কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। যদিও এভাবে আয়কৃত অর্থের পরিমাণ তেমন বেশি নয়। কারণ এসব অনুষ্ঠানে আয়ের পাশাপাশি ব্যয়ও থাকে অত্যধিক। এক হিসেবে দেখা যায়, স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে এনএফএলের প্রতিটি দল গড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
কিন্তু এই আয়ের ৫৫ শতাংশ গায়ক, অভিনেতা বা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করা ব্যক্তিদের পরিশোধ করতে হয়। এছাড়াও স্টেডিয়াম সাজাতে খরচ হয় আরও প্রায় ১০%। অন্য কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা হলে সেখানকার কোচদের এবং কর বাবদ ৫% করে অর্থ ব্যয় হয়। অতঃপর মাত্র ৮ শতাংশ লভ্যাংশ কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে যা একেবারেই কম। তবে স্টেডিয়ামে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে খাবার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র সোডা এবং বিয়ার বিক্রি করে টিকেটের দামের চেয়ে বেশি অর্থ আয় করে তারা।
কর্পোরেট স্পন্সর
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের জন্য নিজেদের মনোগ্রাম, লোগো খেলোয়াড়দের জার্সিতে ব্যবহারের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৮ সালে এই খাত থেকে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল এনএফএল। যদিও এসবের মধ্যে সবথেকে ব্যয়বহুল চুক্তিগুলো হয় স্টেডিয়ামের নামকরণের ক্ষেত্রে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, মিট লাইফ স্টেডিয়াম এবং ডালাসের এটি অ্যান্ড এটি স্টেডিয়ামের নামকরণ চুক্তি বাবদ বছরে ১৯ মিলিয়ন ডলার আয় করে দুটি দল। সে হিসেবে বলা যায় অন্যদলগুলোও কম-বেশি আয় করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অনেকে হয়তো ইন্টারনেটের যুগে টেলিভিশনকে ভুলতে বসেছে। কিন্তু খেলাধুলার ক্ষেত্রে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে টেলিভিশন সম্প্রচার পদ্ধতি। আমেরিকান ফুটবলের ক্ষেত্রে অন্তত জোর দিয়ে বলা যায় আরও কয়েক দশক টিভি চ্যানেলই উপভোগ করা যাবে এটি। আর এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় এনএফএল কর্তৃপক্ষ যতটুকু সম্ভব অর্থ আদায় করে নিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে টেলিভিশন সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করা।
টেলিভিশনের পাশাপাশি স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন এনএফএল সম্প্রচারে আগ্রহী হয়েছে। ২০১৭ সালে ‘ভার্সন’ ২.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ৫ বছর অনলাইন স্ট্রিমিং পরিচালনার স্বত্ব কিনে নেয়। অতঃপর ২০১৮ সালের এপ্রিলে অ্যামাজন বৃহৎ পরিসরে সম্প্রচারের জন্য বাৎসরিক ১৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। আগামী দুই দশকে স্ট্রিমিং পদ্ধতি টেলিভিশন সম্প্রচারকে পেছনে ফেলবে বলে ধারণা প্রযুক্তিবিদদের। আর এমনটা হলে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আয়ের সুযোগ পাবে এনএফএল।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এনএফএল এখন অবধি জুয়াকে অবৈধ বলেই ঘোষণা দিয়ে আসছে। কিন্তু গত মে মাসে জুয়াকে বৈধ করা যায় কি না এমন একটি প্রস্তাব দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অতঃপর জুলাইয়ে ৮টি রাজ্যে জুয়াকে বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং আরও ৭টি রাজ্যে বৈধ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যদি জুয়া সবখানে বৈধ ঘোষণা করা হয় তবে এনএফল প্রতিটি স্টেডিয়ামে নতুন করে ক্যাসিনো স্থাপন করবে। এছাড়াও জুয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কক্ষ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
প্রতিবন্ধকতা
বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক ইতোমধ্যেই জানেন যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে আমেরিকান ফুটবল তথা ন্যাশনাল ফুটবল লিগ পছন্দ করেন না। জাতীয় সংগীত চলাকালে খেলোয়াড়দের হাঁটু ক্র্যাক না করার জন্য গত দুই বছরে একাধিকবান সাবধান করেছেন তিনি। এতে করে অনেক সমর্থকই এনএফএল বয়কট করে। আর এই কারণে স্পষ্টভাবে বলা যায় আমেরিকান ফুটবল লিগ ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হবে নাহয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/
ফুটবল নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ