কার্ডিফ-রূপকথা তখন মাত্র এর ঘন্টাছয়েক অতীত। মাঠের উৎসব-টুৎসব শেষে দলের সবাই ফিরে গেছে হল্যান্ড হাউস হোটেলে যে যার রুমে। কিন্তু হাবিবুলের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি তখনো। ওই স্বপ্নঘোরেই বলেছিলেন,
‘মানুষ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, আর আমি জেগে জেগেও দেখি। প্রায়ই কল্পনা করি, ডাবল সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে টেস্ট জেতাচ্ছি, শেষ বলে ছক্কা মেরে জেতাচ্ছি ওয়ানডে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া? না, অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কথা আমি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি।’
বাশারের কথাগুলো এখন প্রায় বছর পনেরো পুরনো। বাশার খেলা ছেড়ে হয়েছেন জাতীয় দলের নির্বাচক, অস্ট্রেলিয়ার সেই স্বর্ণালি দিনও আর নেই। হাবিবুল বাশারের কল্পনাতেও যা কখনো আসেনি, সেটাও এখন ধরা দিচ্ছে ঘোরতর বাস্তব হয়ে। সাতদিনের মধ্যে চারবার অস্ট্রেলিয়াকে হারের স্বাদ দিয়েও তো তৃপ্তি হচ্ছে না অনেকের, বসে যাচ্ছেন লাভ-লোকসানের হিসাব মেলাতে। খানিকটা দ্বিধান্বিত মনেও জানিয়ে রাখাটাই ভালো, এই লেখকও ওই দলেই আছেন।
লাভের অঙ্কটাই আগে কষা যাক! টি-টোয়েন্টির আবির্ভাবলগ্নে এই ফরম্যাটের ক্রিকেটটা বাংলাদেশের জন্য অর্ডার দিয়ে বানানো হয়েছে মনে হলেও কিছুটা সময় গড়াতেই ওই ভাবনা মরীচিকা বলে প্রমাণিত। এখনো তো এই সংস্করণে বাংলাদেশের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০ নম্বরে, জেতার পরও আছে সেখানেই। র্যাঙ্কিংয়ের অবস্থানে বিশাল রদবদল ঘটে গেলেও অবশ্য কিছু যেত-আসত না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে হলে আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে জিতে তবেই উঠতে হবে; ফরম্যাটটায় বাংলাদেশের দশা বোধ হয় এই তথ্যেই অনেকটা বোঝা হয়ে যায়।
কিছুই যখন বদলাচ্ছে না, অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সাফল্যটা তাহলে কোথায়? বাশারের উদাহরণেই ফেরত যাওয়া যাক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০৫ সালের ওই জয় পাওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেয়েছিল নয়বার। লম্বা বিরতি দিয়ে জয়গুলো আসত বলে খেলোয়াড়েরা জেতার অনুভূতির সঙ্গেই ছিলেন অপরিচিত। জেতার জন্যে যে হিসাব-নিকাশগুলো করতে হয়, সে কৌশলগুলোও অজানা ছিল তাদের। একটা কথা খেলোয়াড়দের মুখে মুখে তাই হরহামেশাই শুনবেন আপনি, ‘জয় পাওয়ার জন্য জেতার অভ্যাসটা খুব জরুরি।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে যেন সেই অভ্যাসটাই হলো বাংলাদেশের। ফরম্যাটের সুরটা এখনো ঠিকঠাক ধরা যায়নি বলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেনতেনভাবে জয় পেলেও তা খেলোয়াড়দের উদ্দীপ্ত করত। আর এবারের সিরিজে জয় পাওয়ার ধরনটাই এমন যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবার কথা অনেক অনেক বেশি।
কেন? প্রশ্নের উত্তরটা আসলে ম্যাচের স্কোরকার্ডেই লুকিয়ে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের চার ম্যাচেই আগে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ, এবং ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বড় যে লক্ষ্যটা দাঁড় করতে পেরেছিলেন, সেটা ১৩১। ভালো বোলিংয়ের তাড়না তো প্রতিদিনই থাকে, কিন্তু এই সিরিজে বোলারদের প্রতিদিনই নামতে হয়েছে একটা চাপ সঙ্গী করে, একটা ওভারেই ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে যেতে পারে। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে সাকিব আল হাসানের একটা ওভারেই যেমন গিয়েছিল।
ওই একটা উদাহরণকে দৈব দুর্বিপাকে ঘটা দুর্ঘটনা বললে বাকি সময় ক্রিকেটাররা স্নায়ু হারাননি একটিবারের জন্যেও। এই অভিজ্ঞতাগুলোও তো তাদের সপক্ষে কাজ করার কথা সামনের স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তগুলোতে। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানও তখন মনে করিয়ে দিতে পারবেন, চাপ নেওয়ার কোনো কারণই নেই। তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও চাপের মুহূর্তে ভালো বল করে এসেছিলেন।
প্রশ্ন হতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করাকে কেন এভাবে ‘বিশেষ’ নজরে দেখতে হবে? দেখতে হবে আসলে তাদের ক্রিকেট-সংস্কৃতির কারণে। হারার আগে হার না মানা, মাঠে প্রতিপক্ষের টুঁটি চেপে ধরে মাঠের বাইরে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া – অর্থাৎ যেসব গুণকে আমরা ক্রীড়াসুলভ মানসিকতা বলে মানি, অজি ক্রিকেটাররা তো সেসবকে আরও উঁচুতে তুলে ধরতেই খেলতে নামেন। যার একটা প্রমাণ এবারের সিরিজেও তারা রেখেছেন। পান থেকে চুন খসলেই যেখানে হাজারটা অজুহাত খুঁজে নেন বাকি সবাই, সেখানে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ, মার্কাস স্টোইনিসদের না আনাকেও হারের অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায়নি অস্ট্রেলিয়া। সিরিজে একের পর এক ম্যাচ হেরেও অজিরা বড় করে দেখেছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কৃতিত্বকে।
আর বাংলাদেশও তো এই সফর শুরু করেছিল তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাসকে বাইরে রেখে। আর জৈব-সুরক্ষা বলয়ের কড়াকড়িতে সুযোগ ছিল না বাড়তি খেলোয়াড় ঢোকানোরও। আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহান, শামীম পাটোয়ারী, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদদের মতো অনভিজ্ঞ ক্রিকেটাদের ওপর আস্থা রাখা ছাড়া বাংলাদেশের উপায়ও ছিল না কোনো। কতটা অনভিজ্ঞ তারা? অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আফিফ খেলেছিলেন মোটে ১৪৪ বল, নুরুল হাসান সোহান জাতীয় দলে ফিরেছেন চার বছর বিরতির পর, শরিফুল-নাসুম-শামীমদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা দুইয়ের অঙ্কও ছোঁয়নি।
সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জলে নামা একঝাঁক ক্রিকেটার সবচেয়ে উঁচু ঢেউ সামলানোর অনুভূতিটা পেয়ে গেলেন শুরুতেই। আর শুধু অনুভূতি পাওয়াই তো নয়, শামীম ছাড়া বাকি চারজনই জয়ের মঞ্চ গড়তে ভূমিকা রেখেছেন কমবেশি; ব্যাটিংয়ের কথা উঠলে দু’দল মিলিয়ে উজ্জ্বলতম তারকা তো আফিফ হোসেন ধ্রুবকেই বলতে হবে। আর সবাই যখন টাইমিং মেলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন, তিনি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। মিচেল স্টার্ককে কাভার দিয়ে মারা দুই চার কিংবা সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে নেমেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে এক্সট্রা কাভার দিয়ে মারা ছক্কা – সিরিজ হাইলাইটসের তিনটা দৃশ্যেই তো আফিফকে রাখতে হচ্ছে।
কিন্তু সব তরুণ কি আলো ছড়াতে পারলেন? নাঈম শেখের উদাহরণটাই নিন। ২০১৯ সালে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার উত্তাল সময়টায় অভিষেক, অভিষেক সিরিজেই ৮১ রানের ইনিংসে দেখিয়েছিলেন সোনালি দিনের আশা। কিন্তু রোদের কিরণ ছড়াতে সময় নিচ্ছেন অনেক, আর এই সিরিজে তো ঢেকে গেলেন নিকষ কালো মেঘেই। সিরিজে ১০৩ বল খেলে রান করেছেন ৯১। রান না করতে পারার চেয়েও তাঁর ব্যাটিংয়ের সতর্ক ধরন প্রশ্ন তুলেছে বেশি। ইনিংস উদ্বোধনে নেমেও বলগুলো যেন ধীরেসুস্থেই খেলতে চেয়েছেন। শেষ টি-টোয়েন্টিতে ২৩ বল খেলে পাঁচটা বল আক্রমণ করার বিপরীতে রক্ষণাত্মক ভঙিতে খেলতে চাইলেন ন’টা বল; টি-টোয়েন্টিতে ‘ইন্টেন্ট’ বলে যে শব্দটার চর্চা হয়ে আসছে সকল মহলে, নাঈম শেখকে তো সেই শব্দ প্রয়োগের ত্রিসীমানাতেও দেখা যাচ্ছে না!
নাঈম শেখ তা-ও রান করে গিয়েছেন কিছু। সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দের উদ্বোধনী জুটিতে নাঈমের সঙ্গী ছিলেন যিনি, সেই সৌম্য সরকার তো রানও পাননি। ২, ০, ২, ৮ – এমন চার স্কোরের পর তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওপেনিং পজিশন থেকে; শেষ ম্যাচে করেছিলেন ১৭ বলে ১৬। সিরিজের তিন ম্যাচেই আউট হয়েছেন বল লেগে টানতে গিয়ে, আত্মবিশ্বাসের অভাবটা ফুটে উঠছিল স্পষ্ট – এমন ‘জঘন্য’ ব্যাটিংয়ের পর তাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলের বদলে খেলা সংশোধনাগারে জায়গা দেওয়াই শ্রেয়।
এতটুকু পড়ে সৌম্য অবশ্য প্রশ্ন তুলতে পারেন,
‘এক সিরিজের ব্যর্থতাতেই ভুলে গেলেন কি? এর আগের আট ইনিংসেই আমার টাইমলাইনটা না এমন — ৬৮, ৮, ৫০, ১০, ৫১, ৫, ২০*, ৬২*? আর এবারের সিরিজে ব্যর্থতার পেছনে কি উইকেটেরও দায় নেই?’
আছে, এবং বেশ বড় আকারেই আছে। আদর্শ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বলতে যে দৃশ্যগুলো তো ভেসে ওঠে চোখের সামনে — ব্যাট চলবে সপাটে, মাঠে নামবে চার-ছক্কার ফুলঝুরি, মাঠের পাশে ক্ষণে ক্ষণেই জ্বলে উঠবে আলোর রোশনাই, দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকবে চিয়ারলিডারদের বন্দোবস্ত… তার কোনোটাই পাওয়া যায়নি এবারের সিরিজে। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনাটা উইকেট প্রসঙ্গেই থামছে। কিউরেটর বানিয়েছেন টেস্টের পঞ্চম (কিংবা ষষ্ঠ) দিনের শেষ বিকেলের উইকেট, বল ব্যাটসম্যান অব্দি পৌঁছুতে পৌঁছুতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ঘুরে আসা যায়। এমন উইকেটে হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশনে ভর করে চলা সৌম্যকে দুর্দশায় পড়তে হওয়াই তো স্বাভাবিক।
আর ক্ষতিটা তো কেবল সৌম্য সরকারেরই হলো, তেমনটাও তো মনে হচ্ছে না। টেস্টে ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার প্রথা সব দেশের ক্রিকেটমহলেই চালু আছে। কিন্তু একদিবসী ক্রিকেটে সব দেশই এখন নির্বাচন করছে এক তরিকা, ‘যত রান, তত দর্শক।’ ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আজকাল তাই ৩৫০ রানও অনতিক্রম্য মনে হয় না, ২০০’র বেশি স্কোরও হরহামেশাই হচ্ছে টি-টোয়েন্টিতে। আইসিসি আয়োজিত আসরগুলোতে এমন ব্যাটিং-স্বর্গ উপহার না দেওয়া হলেও কিছুটা ব্যাটসম্যান-বান্ধব উইকেট বানানোরই চেষ্টা থাকে।
কিন্তু তাদের এসব অলিখিত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাংলাদেশ হাঁটতে চাইছে উল্টোপথে। ব্যাটসম্যানদের রান করাকে যথাসম্ভব কঠিন করে তোলার নির্দেশনাই যেন দেওয়া হচ্ছে মাঠকর্মীদের, আর এবারের সিরিজে তারা তো সে নির্দেশনা মেনে চলেছেন অক্ষরে অক্ষরে।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে রান করা কতটা দুরূহ ছিল, তার প্রমাণ মিলছে পরিসংখ্যানে। দু’দল দশ ইনিংসে রান তুলেছে ১,০৬২ — পাঁচ ম্যাচের সিরিজে আগের সর্বনিম্ন সংগ্রহের চেয়েও যা ৪২৬ রান কম। দু’দলের ব্যাটসম্যানরা ১৩.৯৭ রান তুলতেই হারিয়েছে একটা করে উইকেট, কমপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এটাও সবচেয়ে কম। রান করার জন্য পরিস্থিতি প্রতিকূল ছিল বলে বাংলাদেশ মনোযোগ দিয়েছিল উইকেট ধরে রেখে খেলাতেই। সিরিজ-জয়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও যা স্বীকার করেছেন অকপটে,
‘অবশ্যই এখানে রান তোলা কঠিন ছিল। তবে আমরা কিছু কাজ করেছি এবং উইকেট ধরে রেখে খেলে ১২০-১৩০ রান করার চেষ্টা করেছি। ম্যাচগুলোও তাই জিতেছি।’
কিন্তু এরকম উইকেট ধরে খেলা কিংবা ১২০-১৩০ রানের স্কোরগুলো যে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজে কোনোরূপ কোনো সাহায্য করবে না, তা বলে দেওয়া যায় ঘোষণার সুরেই। ব্যাটসম্যানদের তখন পরিস্থিতির দাবি মেনেই ব্যাট ঘোরাতে হবে সপাটে। দিনদুয়েকের জন্য ক্রিকেট কোচিং ম্যানুয়ালের দীক্ষা পাওয়া মানুষটিও জানেন, যে টেকনিকে খেললে উইকেটে টিকে থাকা যায় সহজে, মারকাটারি ব্যাটিং দাবি করে পুরোদস্তুর ভিন্ন টেকনিক। প্রশ্নটা হচ্ছে, এমন মন্থর উইকেটে পরের পর ম্যাচ খেলতে থাকা একটা দেশের ব্যাটসম্যানরা কী করে মানিয়ে নেবেন ওসব ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে? জয়টা যেমন অভ্যাসের কারণে সহজে পাওয়া যায়, চার-ছক্কাগুলোও তো নিরন্তর অনুশীলনেরই ফসল, না?
বোলারদেরও কি অনুশীলন হলো? পরিসংখ্যান বলছে, বোলাররা কাটিয়েছেন ঈর্ষাজাগানিয়া এক সফর, ওভারপ্রতি রান বিলিয়েছেন ছয়েরও কম (৫.৮৫)। সেখানেই জাগছে খটকা। জিম্বাবুয়ে সফরে বেধড়ক মার খেয়ে আসা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে নেমেই ১০ রানে পেয়ে গেলেন ৩ উইকেট। সাইফউদ্দিনের জায়গায় অন্য কোনো অর্বাচীন বোলারকে নামিয়ে দিলেও ফারাক খুব একটা হতো বলে মনে হচ্ছে না। এই উইকেটে সাফল্যের তরিকা তো একটাই, ‘বলের গতি কমিয়ে যাচ্ছেতাই করে যাও, বাকি কাজ করার দায়িত্বটা উইকেটই বুঝে নেবে।’
অথচ ড্যারেন গফের কথা মানলে, এখন বোলারদের যাচ্ছেতাই করলে তো চলছে না-ই, চোখ রাখতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানের শেষ মুহূর্তের নড়াচড়ার ওপরেও। প্রস্তর যুগের ‘সিধা খেলো’ টোটকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনকার ব্যাটসম্যানরা একেকজন গুরু মানছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে, শট খেলছেন উইকেটের সবদিকে। বোলারদের তাই আশ্রয় নিতে হচ্ছে নাকল বল, ওয়াইড ইয়র্কার, স্লোয়ার বাউন্সার, এক্সপ্রেস পেস, ক্যারম বলসহ ছয়-সাত রকমের বৈচিত্র্যের। ব্যাটসম্যানদের নড়াচড়া লক্ষ্য করে শেষ মুহূর্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, স্নায়ু শীতল রাখতে পারবার ক্ষমতাও এখন ভালো বোলার হবার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। টানা স্লোয়ার করে গিয়ে বোলাররা কেমন প্রস্তুতি নিলেন, আক্রমণের মুখে নিজেদের কতটুকু ধরে রাখতে পারবেন– প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে। সিরিজ শেষের খেরোখাতা মেলাতে বসলে আমিনুল ইসলামের কথাকেই তাই মেনে নিতে হচ্ছে বেদবাক্য হিসেবে,
‘আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, কিন্তু ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি খুব একটা হয়নি।’
ভয় তাই হচ্ছেই। প্রস্তুতি ছাড়া আত্মবিশ্বাসটা আবার না বুমেরাং হয়ে বিশ্বকাপে ফেরত আসে!