আহত বাঘ নাকি তখনই মানুষ শিকারে নামে, যখন সে বুড়িয়ে যায় কিংবা আহত হয়।
বাংলাদেশ যে তাদের সেরা সময় কাটাচ্ছে, এটা বোধহয় সবচেয়ে আশাবাদী মানুষটিও বলতে পারবেন না। এবারের আসরে বাংলাদেশ রীতিমতো বিধ্বস্ত। ইনজুরি-ক্লান্তি-ফর্মহীনতার সঙ্গে যুঝতে থাকা বাংলাদেশ এই আসর শুরু হওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছে তাদের অবিসংবাদিত সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘অলিখিত’ সেমিফাইনালের আগে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে।
ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় কাটালেও পাঁজরের ভাঙা হাড়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াস্বরূপ সারা শরীরে টেপ জড়িয়ে রোজ খেলতে নামতে হচ্ছে মুশফিকুর রহিমকে, সঙ্গে যোগ হয়েছে হ্যামস্ট্রিংয়ের অস্বস্তি। অধিনায়ক মাশরাফির হাঁটুতে আট অপারেশনের ধাক্কা, মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে মোড় বদলে দেওয়া উড়ন্ত ক্যাচের ‘বদৌলতে’ হাতের একটি আঙুলও স্থানচ্যুত হয়েছে। গরমের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে তাদেরকে, অংশগ্রহণকারী সবগুলো দলের তুলনায় সবচেয়ে কম বিশ্রামের সময় পাওয়া দলটি তাই কিছুটা হলেও ক্ষীণশক্তির।
অন্যদিকে ভারত এখন রীতিমতো উড়ছে। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে প্রশ্ন ছিলো না কখনোই, এমনকি বেঞ্চের সামর্থ্য বিচারের স্বার্থে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নামানো দ্বিতীয় সারির ব্যাটিং অর্ডারও লেটার মার্কস নিয়ে উৎরে গেছে। পর্যাপ্ত বিকল্পের পাশাপাশি অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং ওপেনিংয়ে সঙ্গী শিখর ধাওয়ান রয়েছেন দারুণ ছন্দে, বোলিংয়েও কুলদ্বীপ-চাহালদের ছান্দসিক স্পিন প্রদর্শনীর পাশাপাশি ভুবনেশ্বর-বুমরাহর বুদ্ধিদীপ্ত পেস আক্রমণ ভারতকে রেখেছে বেশ স্বস্তিতে। বিরাট কোহলিকে এই আসরে না পেলেও তাতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে, বরং বেশ মোটা দাগে বাকি দলগুলো থেকে আলাদা করার মতো ব্যাটিংই করে এসেছে তারা। কাগজে-কলমেও এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সেরা দল তারাই।
২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনালেও দেখা হয়েছিলো বাংলাদেশ এবং ভারতের। অনেকটা একই রাস্তায়ই যেন ফাইনালে উঠে এসেছিলো ভারত। গ্রুপপর্বে দুই দলের দেখা, তাতে ভারতের পরিষ্কার ব্যবধানে জয়লাভ। ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাদেজা সেবারও ছিলেন ভারতের স্কোয়াডে, সমানে আলো ছড়িয়েছিলেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। গোটা টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে স্পষ্ট ফেভারিট হিসেবেই ফাইনালে উঠে এসেছিলো ভারত।
অন্যদিকে তামিম ইকবালকে ছাড়াই টুর্নামেন্ট শুরু করা বাংলাদেশ সেবারও পাকিস্তানকে হারিয়েই ফাইনালে উঠে আসে। তবে বাংলাদেশের মিল যেন এখানেই শেষ, বাকিটাতে কেবলই বিয়োগ-যন্ত্রণা। গত আসরে গোটা টুর্নামেন্টে আলো ছড়ানো সাব্বির রহমান ফাইনালেও দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন, হয়েছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। বোলিং আক্রমণের পুরোধা হয়ে ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি, তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য ছিলেন তিন তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন এবং আবু হায়দার রনি। সাকিব আল হাসান ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন, সৌম্য সরকার তখনও আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করছিলেন।
কিন্তু সময় এবং ফরম্যাটের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে প্রেক্ষাপটও। শৃঙ্খলাজনিত কারণে নিষিদ্ধ হওয়াতে এবার দলের সঙ্গে নেই সাব্বির, স্কোয়াডের বাইরে থাকা তাসকিন-আল আমিনরা নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন। তামিম-সাকিব ইতোমধ্যে ফিরে গেছেন দেশে, সৌম্যকে আক্ষরিক অর্থেই ‘উড়িয়ে’ আনা হয়েছে টপ অর্ডারের ব্যাটিং-দৈন্য পিছনে ফেলার উদ্দেশ্যে। তামিমবিহীন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ যেন ‘মস্তকবিহীন ধড়’, খেলা শুরু হতে না হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে গোটা টপ অর্ডার। এই অবস্থায়ও বাংলাদেশ যে উঠে এসেছে ফাইনালে, তাতে সামর্থ্যের চূড়ান্ত পরীক্ষাই দিতে হয়েছে তাদেরকে।
মহাদেশীয় সাম্রাজ্যের লড়াইয়ে আগামীকাল ভারত যখন হীনশক্তি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামবে, বাংলাদেশের সঙ্গী হবে আরো একটা ব্যাপার। ১৯৯৭ সালের পর এখন পর্যন্ত বহুজাতিক কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে জিততে পারেনি বাংলাদেশ, এশিয়া কাপে এর আগের তিন আসরে দুবারই ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ কোনোবারই শিরোপার স্বাদ পায়নি।
আগামীকালের ফাইনালে তাই পরিষ্কার ফেভারিট ভারত। কাগজে-কলমে কিংবা নিরেট বাস্তবতার নিরিখে, যেকোনো বিবেচনায় বাংলাদেশের তুলনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে থেকেই খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ বরাবরই শুধু ক্রিকেটীয় সামর্থ্য দিয়েই ম্যাচ জেতে না, বরং তাদের অধিকাংশ জয়ের পিছনে থাকে সুগভীর আবেগ। একবার মোমেন্টামে কোনো বুস্ট পেলেই হলো, উজ্জীবিত বাংলাদেশ নিজের দিনে যেকোনো দলকেই উড়িয়ে দিতে সক্ষম। মাশরাফির যোগ্যতম নেতৃত্বে আহত বাঘের ‘ভারতবধের’ প্রত্যাশাতেই এশিয়া কাপ ফাইনাল দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকবেন কয়েক কোটি ক্রিকেটভক্ত।
রোহিত – ধাওয়ান জুটি
বাংলাদেশের বোলারদের জন্য সবচেয়ে বড় দুই হুমকি হতে যাচ্ছেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। এই টুর্নামেন্টটা দারুণ যাচ্ছে দুজনের জন্যই, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকাতে দুজনই রয়েছেন শীর্ষ তিনে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ‘ক লিখতে কলম ভাঙা’ শিখর ধাওয়ান এই টুর্নামেন্টে যেন ‘বিরাটকায় দৈত্য’ হয়েই দেখা দিয়েছেন, দুই সেঞ্চুরিতে ইতোমধ্যেই ৮১.৭৫ গড়ে করে ফেলেছেন ৩২৭ রান। অন্যদিকে রোহিত শর্মার গড় রীতিমতো ভীতি জাগানিয়া, ১৩৪.৫০ গড়ে চার ইনিংসে তার সংগ্রহ ২৬৯ রান। ভারতের অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়কের এই জুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার আগেই ভাঙতে না পারলে দুজন যে বোলারদের নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়তে পটু, সেটা বলাই বাহুল্য।
ভারতের ব্যাটিং কম্বিনেশন
ভারতের আরেকজন ছন্দে থাকা টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল। এই টুর্নামেন্টে খেলতে পেরেছেন মাত্র একটি ম্যাচ, তাতেই ৬০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেছেন। ফলে এই পারফরম্যান্সের পরও তাকে বাদ দেওয়াটা ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য মধুর সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।
তবে ভারত টুর্নামেন্টের ফাইনালে এসেছে টপ অর্ডারের ব্যাটে চড়ে, সেখানে মিডল অর্ডার যেন কিছুটা ম্লান হয়েই ছিলো। অম্বাতী রায়ুডু এখন পর্যন্ত ৫৭ গড়ে ১৭৩ রান করলেও এখনও দেখার বাকি, দীনেশ কার্তিক শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনের মুহূর্তে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন কি না। এখানেই চলে আসে রাহুলের প্রসঙ্গ, কার্তিক অপরীক্ষিত থাকার কারণে শেষ মুহূর্তে দলে ঢুকে যেতে পারেন রাহুল। তবে খেললে নিয়মিত ওপেনিং পজিশন ছেড়ে দিয়ে হয়তো ওয়ানডাউন পজিশনে খেলতে হতে পারে তাকে।
ভারতের জন্য আরেকটি শঙ্কার ব্যাপার মহেন্দ্র সিং ধোনির নিষ্প্রভতা। পাঁচ ম্যাচের তিন ইনিংসে ব্যাটিং করে ১৩.৬৬ গড়ে করতে পেরেছেন মাত্র ৪৪ রান, যার এক ম্যাচেই ছিলো ৩৩ রান। ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসার পরও ধোনির এই অধারাবাহিকতাই অধিনায়কের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তার স্বাভাবিক ‘নাম্বার সিক্স’ পজিশন ছেড়ে দিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বরে ব্যাটিং করা আদৌ কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটা ভাবারও অবকাশ চলে আসে।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার
লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুমিনুল হক এবং নাজমুল হোসেন শান্ত- এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন খেলতে যাচ্ছেন এই ফাইনাল, তবে সঙ্গে বেশ কিছু ‘যদি-কিন্তু’ রয়েছে। বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশনে খেলা ব্যাটসম্যানদের কারো অবস্থাই খুব একটা সুবিধার নয়, বিশ রানের মধ্যেই দুই-তিন উইকেট পড়ে যাওয়াটাও হয়ে গেছে খুবই সাধারণ দৃশ্য। তামিম ইকবালকে ছাড়া বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে খুবই ভঙ্গুর মনে হচ্ছে, যেখানে পাঁচ ম্যাচে সর্বোচ্চ রান মাত্র ১২ গড়ে ৬০ রান সংগ্রহ করা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাসের। বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ; শান্ত তিন ইনিংসে করতে পেরেছেন ২০ রান, বাংলাদেশ থেকে ‘এসওএস’ পেয়ে উড়ে আসা সৌম্য সরকার পাকিস্তানের বিপক্ষে দৃষ্টিকটুভাবে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেছেন কোনো রান যোগ করার আগেই। ফাইনালের এই দ্বৈরথ জিততে হলে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে এই ম্যাচে ভালো খেলতেই হবে, প্রতি ম্যাচেই নিশ্চয়ই মুশফিকুর রহিমের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে পার পাওয়া যাবে না!
বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার সঙ্কট
সাকিব আল হাসান ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় যেই সমস্যাতে পড়েছিলো, সেটা হলো পঞ্চম বোলার সঙ্কট। টিম কম্বিনেশনের স্বার্থে বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকে অন্তর্ভুক্ত না করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পার্টটাইম অফ স্পিন এবং সৌম্য সরকারের ডিবলি-ডবলিতেই ভরসা রেখেছিলেন মাশরাফি, দুজনই আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন দারুণভাবে। তবে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে হয়তো পঞ্চম বোলার হিসেবে রিয়াদ-সৌম্যে ভরসা রেখে মাঠে নামাটা হয়ে যাবে বড় একটা জুয়া, তাই এ ম্যাচে পঞ্চম বোলার হিসেবে দলে ফিরতে পারেন অপু। সেক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ উঠে আসতে পারেন উপরের দিকে।
জুনিয়রদের নিষ্প্রভতা
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ’র ব্যাট এই টুর্নামেন্টেও যথারীতি আলো ছড়াচ্ছে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিমের ঝলমলে ২৯৭ রান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৫২ রান ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ যেন তাসের ঘর; জুনিয়রদের মধ্যে চাপের মুখে মিঠুনের দুটি দারুণ ফিফটিসহ ১৩৫ রান ছাড়া বাকি আর কারো তেমন পারফরম্যান্স নেই। তামিম-সাকিবের নির্ভরতাটাও বাংলাদেশ পাচ্ছে না, অগত্যা আরেকবার ভরসা রাখতেই হচ্ছে তরুণদের উপরেই। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত লিটন দাসের জন্য হয়ে উঠতে পারে শেষ লাইফলাইন, এটা মিস করলে হয়তো আসন্ন বিশ্বকাপের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা দূরেই সরে যাবেন তিনি। অন্যদিকে শান্ত দলে এসেছেন সম্ভাব্য সবগুলো ধাপ পার হয়েই, তবু তার ব্যাটিংয়ে অপরিণতির ছাপটা স্পষ্ট। অধিনায়ক মাশরাফির কপালে তাই ভাঁজ না পড়ে উপায় নেই, ওপেনিং জুটিতে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানও যে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না! জুনিয়ররা এই ম্যাচেও এগিয়ে এসে হাল ধরতে না পারলে যে বাংলাদেশের জন্য খুব বড় আশা নেই, সেটা বলাই বাহুল্য।
নজর থাকবে যাদের উপরে
-
মুশফিকুর রহিম
পাঁজরের ভাঙা হাড় নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা মুশফিকুর রহিম এই টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে যেন সোনা ফলাচ্ছেন। প্রথম ম্যাচেই ১৪৪ রানের মহাকাব্য, এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৯ রানের অনবদ্য আরেকটি ইনিংস – এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তিনিই। ভঙ্গুর ওপেনিং জুটির পরও মুশফিকুর রহিমের নির্ভরতাই বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রথম শিরোপার। এখন পর্যন্ত গোটা টুর্নামেন্টে ৭৪.২৫ গড়ে ২৯৭ রান করা মুশফিকুর রহিমই তাই ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
-
মুস্তাফিজুর রহমান
আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে ইনজুরি নিয়েও দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ জেতানো মুস্তাফিজুর রহমান পাকিস্তানের বিপক্ষে যেন ফিরে পেয়েছেন পুরোনো সেই ছন্দ। কাটার-ইনসুইংয়ের বিষময় ছোবলে যেকোনো ব্যাটসম্যানকে অপ্রস্তুত করে দেওয়াতে তার বিশেষ জুড়ি নেই। তাই ট্রেডমার্ক ইয়র্কারগুলো এখন পর্যন্ত খুব একটা দেখা না গেলেও তূণের বাকি অস্ত্রেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের শিকার করার সামর্থ্য পুরো মাত্রায়ই রয়েছে ‘দ্য ফিজ’-এর। এই পর্যন্ত টুর্নামেন্টে আট উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট-সংগ্রাহক মুস্তাফিজুর রহমানই নতুন বলে তাই ভারতের সবচেয়ে বড় হুমকি হতে চলেছেন।
-
মেহেদী হাসান মিরাজ
গত এক বছরে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে উন্নতি করা খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের অন্য জুনিয়রদের তুলনায় এই অফ-স্পিনিং অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্স রীতিমতো ঈর্ষণীয়। বল হাতে চতুর এবং মিতব্যয়ী বোলিং ফিগার, ফিল্ডিংয়ে শতভাগ নিবেদন এবং ব্যাট হাতে সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা এই ম্যাচেও বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।
-
জাসপ্রিত বুমরাহ
বাংলাদেশের যদি থাকেন মুস্তাফিজুর রহমান, ভারতেরও তবে রয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এই মুহূর্তে র্যাঙ্কিংয়ে সবার উপরে অবস্থান করা এই বোলার ডেথ ওভারে ইয়র্কারের পর ইয়র্কার দিয়ে যেতে অত্যন্ত পারঙ্গম, কৌশলের সঙ্গে ক্ষুরধার ক্রিকেটমস্তিষ্ক বুমরাহকে করে তুলেছে আরো দুর্দান্ত। তিন ম্যাচে সাত উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক বুমরাহ নিঃসন্দেহে এই ম্যাচেও বাংলাদেশকে বেশ কঠিন সময়ই উপহার দিতে চলেছেন।
-
রবীন্দ্র জাদেজা
বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটির মাধ্যমে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনটা রাজসিক হয়েছে রবীন্দ্র জাদেজার জন্য। ভারতের নিয়মিত অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার পরিবর্তে দলে ঢুকেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ নিয়মিত দেখিয়ে চলেছেন জাদেজা, বল হাতে টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক তিনিই। তবে এখন পর্যন্ত সেভাবে ব্যাটিং প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাননি, একটিমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করে তাতে করতে পেরেছেন ২৫ রান। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজিবুল্লাহ জাদরানের হাতে ধরা পড়ার ফলে টাই হয়ে যাওয়া ম্যাচটি নিঃসন্দেহে কিছুটা হলেও পীড়া দিচ্ছে জাদেজাকে, হয়তো বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই শাপমোচনের লক্ষ্যেই নামবেন তিনি।
-
দীনেশ কার্তিক
এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তিনি ততটা চেনাতে পারেননি আলাদা করে। পাঁচ ম্যাচ খেলে চার ইনিংসে তার রান সাকুল্যে ১০৯, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে স্ট্রাইকরেটটাও ততটা আকর্ষণীয় নয়। তবু এই ম্যাচে তাকে নজরে রাখতেই হবে, কারণ নিদাহাস ট্রফিতে দীনেশ কার্তিকের সেই বীরত্ব। রীতিমতো দানব হয়ে ওঠা সেই ম্যাচে তিনি মাঠে নামার মাত্র দশ বলের মধ্যেই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। এই ম্যাচে তাই কিছুটা মনোযোগ দাবি করেন দীনেশ কার্তিকও, যদিও শেষ মুহূর্তে তাকে টপকে একাদশে ঢুকে যেতে পারেন লোকেশ রাহুল।
সম্ভাব্য একাদশ
-
বাংলাদেশ
লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েস, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ।
-
ভারত
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, অম্বাতী রায়ুডু, দীনেশ কার্তিক, মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, যুযবেন্দ্র চাহাল, কুলদ্বীপ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহ।
ফিচার ইমেজ: tigercricket.com.bd