যুগে যুগে এমন অনেক ফুটবল ট্যাকটিক্সই এসেছে যা নিজের চিহ্ন রেখে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। কাতেনাচ্চিও এমনই এক ধরনের ফুটবল ট্যাকটিকস। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ‘মিসআন্ডারস্টুড’ ট্যাকটিক্সও সম্ভবত এটাই। ইদানিং বিভিন্ন লিগে ছোট দলগুলোকে দেখা যায় বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদের ডিফেন্সে ‘বাস পার্কিং’ করতে, আর কোনোভাবে একটা গোল পাওয়ার আশায় ওঁত পেতে থাকতে। অনেকেই এই বাস পার্কিংকেই ‘কাতেনাচ্চিও’ বলে দাবি করে থাকলেও কাতেনাচ্চিওর ট্যাকটিক্স ‘বাস পার্কিং’ থেকে অনেকটাই আলাদা। বলা চলে, ফুটবলের ইতিহাসে দাগ কেটে যাওয়া অন্যতম এক ট্যাকটিক্যাল সেটআপ হলো এই কাতেনাচ্চিও।
কাতেনাচ্চিও একটি ইতালিয়ান শব্দ, যার অর্থ ‘ডোর বোল্ট’ – বাংলায় যার অর্থ হলো দরজার খিল। এই শব্দটা দিয়েই কাতেনাচ্চিওর মূলমন্ত্র অনেকটা বোঝানো সম্ভব। কীভাবে? একটু পরে আসছি সেই আলোচনায়। ও আচ্ছা, শব্দটা ইতালিয়ান হলেও কাতেনাচ্চিওর জন্ম কিন্তু ইতালিতে নয়।
‘কাতেনাচ্চিও’ মূলত খুব গোছানো এবং কার্যকর একটি ডিফেন্সিভ সেটআপ হলেও এর একমাত্র মূলমন্ত্র কিন্তু ডিফেন্সই নয়, পাশাপাশি কাউন্টার অ্যাটাকে গিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙাও।
কাতেনাচ্চিও সর্বপ্রথম ব্যবহার করা ব্যক্তি হলেন অস্ট্রিয়ান ফুটবল কোচ কার্ল রাপ্পান। ১৯৩০ সালের দিকে রাপ্পান ছিলেন সুইজারল্যান্ডের একটি ক্লাব সার্ভেটের কোচ। জেনেভার এই ক্লাবটি ছিল আধাপেশাদার, যার ফলে শারীরিক এবং টেকনিক্যাল দিক দিয়ে পেশাদার দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে গিয়ে বেশ হ্যাপা পোহাতে হতো দলটিকে। কোচ হিসেবে রাপ্পান তখন ভাবলেন এমন এক ফুটবল সিস্টেমের কথা, যার সাহায্যে তার দল নিজেদের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে তো পারবেই, পাশাপাশি প্রতিপক্ষের ফিজিক্যাল এবং টেকনিক্যাল দিক দিয়ে যে সুবিধাগুলো পায় সেগুলো যাতে না পায় তা নিশ্চিত করা। তিনি বের করলেন এমন এক সিস্টেম যা হবে রক্ষণভিত্তিক যেন প্রতিপক্ষের প্রেসিং সামলে উঠে গিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে তাদের সাথে পাল্লা দেয়া যায়। তার অধীনে তখন সার্ভেট ক্লাব অনেকটাই ভালো খেলা শুরু করেছিল এই নতুন সিস্টেমে। এই সিস্টেমের নাম দেয়া হয়েছিল ‘ভেরু’, ফ্রেঞ্চ থেকে ইংরেজিতে যার তরজমা ‘বোল্ট’।
সে সময়টাতে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছিল ২-৩-৫ ফরমেশন। মূলত এই ফরমেশনকেই নিজের এবং দলের সুবিধামত ডিফেন্সকে প্রাধান্য দিয়ে রাপ্পান সাজিয়েছিলেন তার ‘ভেরু’। এই ফরমেশনে খেলা শুরু হয় ডিফেন্সে দুইজন ফুলব্যাক নিয়ে। মিডফিল্ডে থাকেন তিনজন হাফব্যাক। অ্যাটাক ফ্রন্টে থাকেন একজন স্ট্রাইকার, যার দুইপাশে থাকে দুইজন ইনসাইড ফরওয়ার্ড, আর দুই প্রান্তে থাকে দুইজন উইঙ্গার। যেকোনো লং বলের সাহায্যে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলা দলের জন্য এই ট্যাকটিক্সটি স্বাভাবিকভাবেই খুব কার্যকরী ছিল।
এই জায়গায় রাপ্পান নিজের মেধা খাটালেন। রাপ্পানের সিস্টেমে দুইজন হাফব্যাক নিচে নেমে এসে দুই ফুলব্যাকের সাথে মিলে গড়তেন ব্যাক ফোর। অ্যাটাক ফ্রন্ট থেকে দুইজন ইনসাইড ফরওয়ার্ড নেমে আসতো মিডফিল্ডে, গড়ে তুলতো থ্রি-ম্যান মিডফিল্ড। দুই হাফব্যাকের কাজ ছিল প্রতিপক্ষের অ্যাটাকের সময় তাদের উইঙ্গারদের আটকে দেয়া। ফলে অ্যাটাক অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যেত। ফুলব্যাকরা তখন হয়ে যেতেন সেন্টারব্যাক।
ধরা যাক ডান পাশ থেকে আক্রমণ আসছে। হাফব্যাকের দায়িত্ব থাকে উইঙ্গারকে থামানো। দুই সেন্টারব্যাকের একজন উপরে উঠে যান ইনসাইড ফরওয়ার্ডকে আটকাতে, অপর সেন্টারব্যাক খুব দ্রুত সরে আসেন অন্য সেন্টারব্যাকের ফেলে যাওয়া জায়গা পূরণ করতে। এই সেন্টারব্যাককেই বলা হয় ‘দ্য বোল্ট’।
ডিফেন্স লাইনের পর গোলকিপারের আগে বোল্টই থাকতেন ডিফেন্সের লাস্ট ম্যান। এই বোল্টের দায়িত্ব খেলাভেদে পরিবর্তন হতো। প্রতিপক্ষের আক্রমণের সময় কঠিন ম্যানমার্কিং করতে হতো এই খেলোয়াড়কে। কখনো বা হাফব্যাকের সাথে মিলে উইং থেকেই থামিয়ে দিতেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ, প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়েই মিডফিল্ডের দিকে এগিয়ে যেতেন পূর্ণোদ্যমে। রাপ্পানের ‘ভেরু’ সিস্টেমের মূল কৌশলটা ছিল এই জায়গাতেই।
১৯৩৭ সালে রাপ্পান দায়িত্ব পান সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলের। নিজের ‘ভেরু’কে রাপ্পান কাজে লাগান সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলেও, সাফল্যের দেখা পান সেখানেও। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের ঠিক আগে এক প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় রাপ্পানের সুইজারল্যান্ড। টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডে জার্মানিকেও হারায় এই দলটা।
চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকে ইতালিতে সুইস ফুটবলের প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়ে। ইতালির অনেক ক্লাবের কোচই এই সিস্টেমে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের দল সাজান। কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবলে ডিফেন্সে সর্বপ্রথম অতিরিক্ত একজন খেলোয়াড় ব্যবহার করেন জিউসেপ্পে জিপো ভিয়ানি। ইতালিয়ান ক্লাব স্যালেরনিটানার কোচ ছিলেন ভিয়ানি। এই সিস্টেম ব্যবহার করে ১৯৪৭ সালে ভিয়ানি নিজের দলকে তুলে এনেছিলেন সিরি-আ’তে। ভিয়ানির এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হন আরো অনেক ইতালিয়ান কোচ। তবে যে ব্যক্তিটির নাম না বললেই নয়, তিনি হলেন নেরিও রোক্কো।
নিজ জন্মভূমি ত্রিয়েস্তের ক্লাব ত্রিয়েস্তিনার কোচ ছিলেন রোক্কো। ত্রিয়েস্তিনায় ডিফেন্সে অতিরিক্ত একজন খেলোয়াড় ব্যবহারের আইডিয়া কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে তখন সিরি-আ’তে চলছিল তোরিনোর রাজত্ব। নিজের গেমপ্ল্যান কাজে লাগিয়ে রোক্কো তার দল ত্রিয়েস্তিনাকে নিয়ে সিরি-আ শেষ করেছিলেন পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থেকে। ত্রিয়েস্তিনা থেকে বের হওয়ার পর ইতালির দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব পান্দোভার দায়িত্ব নেন রোক্কো। সেখানেও নিজের ‘ভেরু’কে কাজে লাগিয়ে সাফল্য পান তিনি। সিরি-বি থেকে সিরি-আ’তে প্রমোশন পায় রোক্কোর পান্দোভা। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে এসি মিলানের দায়িত্ব পান রোক্কো। ‘ভেরু’ ব্যবহার করে ১৯৬৩ সালে মিলানের হয়ে নিজের প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নেন এই ইতালিয়ান। তবে এসি মিলানের হয়ে সাফল্য আসলেও ‘ভেরু’ আদতে পূর্ণতা পেয়েছিল অন্য একটি ক্লাবে, এসি মিলানেরই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব ইন্টারে।
ভায়াদোলিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, সেভিয়া এবং সর্বশেষ বার্সেলোনা ঘুরে আসা হেলেনিও হেরেরা ১৯৬০ সালে দায়িত্ব নেন ইন্টার মিলানের। ইন্টার মিলানের দায়িত্ব নিয়ে হেরেরা গড়ে তোলেন সর্বজয়ী একটি দল, ইতিহাসের পাতায় যার নাম ‘গ্রান্দে ইন্টার’। হেরেরা এমন একজন কোচ, যার দলের খেলোয়াড়দের চেয়ে তিনি নিজে বেশি জনপ্রিয়। মানুষ এই সর্বজয়ী দলটাকে চেনে ‘হেরেরার ইন্টার’ হিসেবে। তার হাত ধরেই এই ফুটবল সিস্টেম পরিচয় পায় ‘কাতেনাচ্চিও’ হিসেবে।
বার্সেলোনা থেকে এসে ইন্টারেও একই ধরনের পজেশনভিত্তিক ট্যাকটিক্স ব্যবহার করেন হেরেরা। এই ট্যাকটিক্সে প্রথম দুই মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল করা সত্ত্বেও ইন্টার মৌসুমে শেষে হয় যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়। হুমকির মুখে পড়ে ইন্টার মিলানে হেরেরার কোচিং ক্যারিয়ার। চাকরি বাঁচাতে নিজের খেলার সিস্টেমে পরিবর্তন আনেন তিনি, তৈরি করেন কাতেনাচ্চিওর নীল নকশা।
হেরেরার অনুপ্রেরণা ছিল মিলানের কোচ রোক্কো। হেরেরা সিদ্ধান্ত নেন, ডিফেন্সে রোক্কোর অতিরিক্ত একজনকে খেলানোর এই কনসেপ্ট তিনি ব্যবহার করবেন তার খেলায়। আরমান্দো পিচ্চি ইন্টার মিলানে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একজন রাইটব্যাক হিসেবে। হেরেরা খেলার মাঠে পিচ্চির রোল পালটে দেন, রাইটব্যাক পিচ্চিকে তিনি নামিয়ে দেন ডিফেন্স লাইনের পিছনে। থ্রি-ম্যান ডিফেন্সের এই প্ল্যানে পিচ্চির রোল ছিল ‘লিবেরো’ বা ‘সুইপার’ হিসেবে। খেলোয়াড় হিসেবে বেশ ভার্সেটাইল হওয়ার নতুন ভূমিকায় মানিয়ে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি এই ইতালিয়ানকে। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বলের দখল নিয়ে নিতে পারতেন খুব সহজে। দারুণ সব পাস দিয়ে করতেন কাউন্টার অ্যাটাকের সূচনা।
হেরেরা নিজের দল সাজান ৫-৩-২ বা ১-৪-৩-২ ফরমেশনে। দলকে তিনি সাজান চারটি ভাগে। প্রথম ভাগে থাকে একজন ‘লিবেরো’ বা ‘সুইপার’, দ্বিতীয় ভাগে থাকেন দুইজন ডিফেন্ডার। প্রতিপক্ষের খেলার উপর ভিত্তি করে ডিফেন্ডার চারজনও হয়ে যায়, থাকেন পাঁচজন মিডফিল্ডার (প্রয়োজন অনুসারে তিনজন) এবং দুইজন ফরওয়ার্ড। হেরেরার দলে ফরোয়ার্ড দু’জনের একজন ছিলেন সান্দ্রো মাজোলা। দারুণ টাচ, ক্ষিপ্র গতি এবং অসাধারণ ফিনিশিংয়ের অধিকারী মাজোলার নাম বেশিরভাগ সময়ই থাকতেন ম্যাচের স্কোরশিটে। সেই সাথে নিজের পার্টনার বেনিয়ানিমো ডি জিয়াকোমোকেও করে দিতেন গোলের সুযোগ। মিডফিল্ডে প্লেমেকার হিসেবে বলের যোগান দিতেন প্লেমেকার লুই সুয়ারেজ মিরামন্তেস। হেরেরা কখনোই ‘বাস পার্ক’ করতেন না। ডিফেন্সের খাতিরে খেলার ফ্লুইডিটি জলাঞ্জলিও দিতেন না তিনি। কাতেনাচ্চিওর মূল লক্ষ্যই ছিল প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যচ্যুত করে কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়া।
ডান প্রান্তে খেলতেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার জেয়ার দা কস্তা। স্বভাবে ফরোয়ার্ড হলেও হেরেরার সিস্টেমে তিনি ছিলেন হাফব্যাক হিসেবে। দল যখন ডিফেন্স করতো, হেরেরা থাকতেন রাইটব্যাক হিসেবে। আবার দলের আক্রমণে জের হয়ে যেতেন রাইট উইঙ্গার। বাঁ প্রান্তে খেলতেন জিয়াসিন্তো ফাচেত্তি; ছিলেন লেফটব্যাক, কিন্তু জেরের মতো হেরেরার অধীনে তিনিও হয়ে গিয়েছিলেন হাফব্যাক। জেরের মতোই ডিফেন্সে এবং অ্যাটাকে সমানতালে অবদান রাখতেন এই ইতালিয়ান লেফটব্যাক। সুইপার পিচ্চি কিংবা প্লেমেকার সুয়ারেজের যোগান দেয়া বল গোলপোস্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন জের কিংবা ফাচেত্তি। হেরেরা প্ল্যানের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই দুই হাফব্যাক। দলের আক্রমণের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা অনেকটাই নির্ভর করতো এই খেলোয়াড়ের উপর। রক্ষণেও এই দুই হাফব্যাক ছিলেন বেশ তৎপর।
খেলার সিস্টেমে এই পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় হেরেরাকে। এরকম রক্ষণভিত্তিক ট্যাকটিক্স ছোট দলগুলোর টিকে থাকার জন্য যথাযথ হলেও ইন্টার মিলানের মতো জায়ান্টের সাথে একেবারেই যাচ্ছিল না বলেও অনেকে মতামত দিয়েছিল। কিন্তু তাদের মতামতে গা করেননি হেরেরা। তার এই সিস্টেমই তাকে এনে দিয়েছিল ইন্টারের হয়ে ব্যাপক সাফল্য। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ সালের চার বছরে তিনবার ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয় ইন্টার। ১৯৬৩ এবং ১৯৬৫ সালে ইন্টার ঘরে আনে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নের শিরোপা। ইউরোপ-ইতালি জয়ের পাশাপাশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপও জিতেছিল হেরেরার ইন্টার, তাও টানা দু’বার। ১৯৬৪ সালে একবার, আরেকবার ১৯৬৫ সালে।
১৯৬০ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কাতেনাচ্চিওকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন হেরেরা। রক্ষণভিত্তিক বেশ অসাধারণ একটি ফুটবল ট্যাকটিক্স হলেও কাতেনাচ্চিওর রাজত্ব খুব বেশিদিন টেকেনি। ১৯৬৭ সালের ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে সেল্টিকের কাছে হেরে বসে হেরেরার ইন্টার।
১৯৬৮ সালে ইন্টার ছাড়েন হেরেরা, যোগ দেন রোমাতে। রোমাতেও হেরেরা ব্যবহার করেন নিজের কাতেনাচ্চিও, কিন্তু সেখানে তার একমাত্র অর্জন কেবল একট কোপা ইতালিয়া। ১৯৭২ সালে আরও একবার ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে উঠেছিল ইন্টার মিলান। এবার কাতেনাচ্চিও পরাজিত হয় আয়াক্সের টোটাল ফুটবলের কাছে। ধীরে ধীরে কাতেনাচ্চিওর প্রভাব স্তিমিত হতে থাকে। অনেক কোচই চেষ্টা করেছেন কাতেনাচ্চিওকে ব্যবহার করে সাফল্য পাবার, কিন্তু হেরেরার মতো সাফল্য কেউই অর্জন করতে পারেনি।
তবে ফুটবলে কাতেনাচ্চিওর প্রভাব একেবারে কম নয়। কাতেনাচ্চিওর ফলে ‘লিবেরো’র মতো অসাধারণ একটি কনসেপ্ট তৈরি হয় ফুটবলে। কাতেনাচ্চিওর ফলে ইতালিতে ডিফেন্সিভ ফুটবলের ঐতিহ্য চালু হয়। তিন দশক ধরে রক্ষণভিত্তিক ফুটবল খেলার উপর নির্ভরশীল ছিল ইতালি জাতীয় দল, যার ফলে ফুটবল পেয়েছে পাওলো মালদিনি, ফ্রাঙ্কো বারেসি, ফ্যাবিও ক্যানাভারোর মতো বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি ডিফেন্ডার। বলা হয়, ২০১০ সালে মরিনহোর ট্রেবলজয়ী ইন্টারের পেছনে বড় অবদান এই কাতেনাচ্চিও ট্যাকটিক্সের।
অনেক ফুটবলবোদ্ধাই কাতেনাচ্চিওকে আখ্যায়িত করেছেন ‘অ্যান্টি-ফুটবল’ হিসেবে। এমনকি ইতালিয়ানরাই তাদের এই ইতিহাস নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করে না। তবে যে যা-ই বলুক না কেন, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল ফুটবল ট্যাকটিক্স হিসেবেই লেখা থাকবে এই কাতেনাচ্চিওর নাম।