Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল: অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের অনন্য মিশেল

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ভারি মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল, চাপে আছেন। ঘাড়ের উপর স্ত্রীর দেওয়া মামলা, তার সঙ্গে আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এ নিয়ে শাস্তির ভয়। কিন্তু গোদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়েছে অন্য জিনিস। চুপচাপ আছেন, হাসিও যেন টেনেটুনে আসছে না তার ঠোঁটে। তামিম ইকবালের সঙ্গে অনেকক্ষণ গম্ভীর সব আলাপ করলেন। এশিয়া কাপের দল ঘোষণার দিনই সামনে এসেছে তার পারিবারিক মামলার বিষয়টি। কিন্তু কী সৌভাগ্য, শেষ পর্যন্ত ১৫ সদস্যের দলে নাম উঠে গেল ব্যাটসম্যান সৈকতের।

সাব্বির রহমান ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হলেন। মোসাদ্দেককে বেশ কিছু ‘গাইডলাইন’ দিলো বিসিবি। পিছনে যা-ই হোক, এবার এশিয়া কাপই মিশন।

এশিয়া কাপেও এমন উদযাপন চান মাশরাফি; Image Source: AP

সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাচ্ছে ২০১৮ এশিয়া ওয়ানডে কাপ টুর্নামেন্ট। ঈদের পরপর ৩১ সদস্যের দল নিয়ে অনুশীলন ক্যাম্প শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কয়েকদিন পরই মূল দল ঘোষণা করে দিলো। কিন্তু এশিয়া কাপের আগে মাঠের বাইরের বেশ কিছু ঘটনা যেন নাড়িয়ে দিয়েছে দলকে। সাব্বির, সৈকত, নাসিরের ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত জটিলতা। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে পাওয়া আঙুলের চোট সেরে উঠেছিলেন আরও আগে। কিন্তু বল করতে পারলেও, ব্যাট ঠিকভাবে গ্রিপ করতে পারছেন না তিনি। সে কারণে বেশ ভুগতে হয়েছে তাকে উইন্ডিজ সিরিজে। সেখান থেকেই জানা যায়, আঙুলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। সেই অস্ত্রোপচার এশিয়া কাপের আগে হবে নাকি পরে, তা নিয়ে সংশয় ছিল।

অবশেষে বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা, কোচ ও কোচিং স্টাফ, ফিজিও, চিকিৎসক; সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এশিয়া কাপের পরেই হবে সাকিবের অস্ত্রোপচার। তাতে করে শক্তি বাড়ছে দলের।

লক্ষ্য, এশিয়া কাপের শিরোপা। সেভাবেই এগোচ্ছে দল ও রণপরিকল্পনা। কিন্তু দলের সামর্থ্য কতটুকু? শক্তি কিংবা দুর্বলতা? সেটা নিয়েই এই আলোচনা।

১৫ সদস্যের বাংলাদেশ এশিয়া কাপ দল

মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল ইসলাম অপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম শান্ত, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আরিফুল হক ও আবু হায়দার রনি।

ব্যালেন্স স্কোয়াড

এশিয়া কাপের দল নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তার আগে একটু পিছনে তাকাতে হবে। উইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টির পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে সাদা পোশাকের টেস্টে বাজেভাবে হারের পর সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মাশরাফি-সাকিবরা।

মূলত, পুরো সিরিজে সবচেয়ে নেতিবাচক ব্যাপার ছিল তরুণ ক্রিকেটারদের জ্বলে উঠতে না পারা। পঞ্চপাণ্ডব তথা মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের হাতেই এগিয়েছে পুরোটা সফর। সবকিছু মিলে তাই সাব্বির-সৌম্য-লিটন-বিজয়দের নিয়ে কথা হয়েছে। কারণ, ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশের ব্যর্থতা চোখে পড়েছে বেশি।

তামিম ইকবাল। ব্যাটিং লাইনআপের নির্ভরতার প্রতীক; Image Source: The Daily Star

তারই ধারাবাহিকতায় এশিয়া কাপে দল নির্বাচনে সতর্ক থেকেছেন নির্বাচকরা। সাব্বির নিষিদ্ধ, সৌম্য বাজে পারফরম্যান্সের জন্য আগেই দলের বাইরে ছিলেন। উইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সৌম্যকে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দল থেকে তুলে নেওয়া হলো উইন্ডিজ সফরে। কিন্তু সেখানে পুরো ব্যর্থ হয়েছেন। লিটন কুমার দাস শেষ ম্যাচে ৬১ রান করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দেন। এশিয়া কাপে সেই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

বছরের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজে বিজয়কে বসিয়ে দিয়ে অনেকটা হুট করেই মোহাম্মদ মিঠুনকে মাঠে নামিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি পারেননি ভালো কিছু করতে।

পরবর্তীতে মাশরাফি জানিয়েছিলেন, ওই ম্যাচে আসলে তিনি বিজয়-মিথুন দুজনের সঙ্গেই খারাপ করেছেন। অনেকটা সেটার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতেই কি না উইন্ডিজ সফরের সবগুলো ম্যাচে এনামুল হক বিজয়কে মাঠে নামিয়েছেন তিনি। অনেকটা টিম ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে গিয়েই। কিন্তু সেই সুযোগ বিজয় কাজে লাগাতে পারেননি। যথারীতি এশিয়া কাপে বাদ পড়েছেন ওপেনার বিজয়।

জায়গা পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। তিনি কতটা করতে পারেন, সেটাই এবার দেখার বিষয়।

ব্যাটিং লাইনআপে বেশ শক্ত দল গড়েছে বাংলাদেশ। তামিম, সাকিব, মুশফিক; এই তিন জ্যেষ্ঠ টপ অর্ডারের পাশাপাশি তরুণ ব্যাটমস্যান নাজমুল হোসেন শান্তকে দলে নেওয়া হয়েছে। তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন লিটন। মিডল অর্ডারে রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে সঙ্গ দেবেন সৈকত, মিরাজরা। মিঠুন টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার; দুই জায়গাতেই সমান খেলার যোগ্যতা রাখেন। সঙ্গে আছেন অলরাউন্ডার আরিফুল ইসলাম।

ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুন; Image Source: AP

উইন্ডিজ সিরিজের শেষ ম্যাচে হাতে চোট পান নাজমুল ইসলাম অপু। হাতে ২৫টি সেলাই লেগেছে তার। সেই চোট কাটিয়ে ৩ সপ্তাহ পর এশিয়া কাপের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন তিনি। সেক্ষেত্রে সাকিবকে নিয়ে দলে দুজন বাঁহাতি স্পিনার। ডানহাতি হিসেবে মূল দায়িত্ব নেবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সঙ্গে থাকবেন মাহমুদউল্লাহ। প্রয়োজনের সময় বল হাতে তুলে নিতে পারেন সৈকতও।

পেস আক্রমণে মাশরাফির নেতৃত্বে তোপ দাগার অপেক্ষায় রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনি ও মুস্তাফিজুর রহমান।

এলোপাতাড়ি ‘হ্যাঁ/না’ পছন্দ

শুরুতে সাকিব চেয়েছিলেন এশিয়া কাপের আগেই আঙুলের অস্ত্রোপচার করতে। সেভাবেই জানিয়েছিলেন তিনি। এমনকি বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে দলের প্রধান  কোচ স্টিভ রোডসও আলোচনা করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাকিবকে বলে-কয়ে রাজি করান।

সাকিব আল হাসান ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন; Image Source: Daily Ittefaq

এই ইস্যুতে টিম ম্যানেজমেন্ট বনাম বিসিবি সভাপতির একটা অপছন্দ পছন্দের ঝামেলা পার হয়েছে। সভাপতি সিদ্ধান্তটা সাকিবকে নিতে  দিয়েও একরকম নিজের হাতে রেখে দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে জানিয়েছিলেন, সাকিব যদি চান তাহলে অস্ত্রোপচার এশিয়া কাপের আগেই করুক। আর সেটা না হলে এশিয়া কাপের পরে। তাহলে সেটা দলের জন্য ভালো হবে।

তিনি বলেছিলেন, “আমি তাকে বলেছি যদি সম্ভব হয় তাহলে অস্ত্রোপচারটা এশিয়া কাপের পরেই করুক। কারণ, আমি মনে করি, এশিয়া কাপ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।”

শুধু সাকিব নয়। ১৫ সদস্যের দলে জায়গা হয়নি ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহীর। উইন্ডিজ সফরের দুই টেস্টে তিনি একাই ৭ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু এশিয়া কাপের ফরম্যাট ওয়ানডে বলে সেই অজুহাতে তাকে দলে নেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে অভিষেকের পথে তার অপেক্ষা আরও বাড়ছে।

ভয়ে থাকবে প্রতিপক্ষ

২০১৪ সালের শেষদিক থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ সময় পার করছে বাংলাদেশ দল। ২০১২ এশিয়া কাপের এই রানার্সআপ দলটি ২০১৮ সালে এসে অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য; দুদিকেই বড় অর্জন করেছে। কেবল ব্যক্তিগতভাবেই নয়, দলগত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সত্যিই বাংলাদেশ এশিয়া কাপের শিরোপার দিকে নজর রাখতে পারবে।

বিরাট কোহলি নেই এশিয়া কাপে; Image Source: BCCI

প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে সমানে সমানে তাল মেলাবে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে ফরম্যাটে করুণ সময় পার করছে। অন্যদিকে, বিরাট কোহলিকে ছাড়া ভারত এই বাংলাদেশের সামনে নিশ্চিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অন্তত চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও বাংলাদেশ একরকম রানার্সআপ হওয়ার অগ্রীম নিশ্চয়তা দিচ্ছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্ব, রোডসের পরিকল্পনা; দুইয়ে মিলিয়ে সত্যি হতে পারে ৩ আসর আগের সেই অধরা স্বপ্ন।

ফিচার ইমেজ- ESPN Cricinfo

Related Articles