বায়ার্ন মিউনিখের ষষ্ঠ, নাকি পিএসজির প্রথম?

১.

‘আগুন ঝরা ফর্ম’ – শব্দটার সাথে সম্ভবত ক্রীড়াপ্রেমীরা পরিচিত। এই রকম ফর্মে থাকলে যেকোনো দলকেই দুমড়েমুচড়ে হারাতে দলটাকে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। তবে এই ধরনের দলগুলোও সবসময় সর্বোচ্চ সফলতা পায় না। দেখা গেল, খুব ভালো খেলতে খেলতে নিজেদের যেকোনো একটা খারাপ দিনে প্রতিপক্ষ সুযোগ নিয়ে নেয়। তবে ফর্মে থাকার পাশাপাশি সফলতা পাবার দলগুলোর সংখ্যা খুবই কম।  

বিগত দশকে কয়েকটা দলকে সফলতার পাশাপাশি এই রকম ফর্মে দেখতে পারার সুযোগ অনেকের হয়েছে। এর একটা হচ্ছে ক্রিকেটে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা। আরেকটা হলো ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৭  সালের অস্ট্রেলিয়া। এই সময়টাতে সব ধরনের ফরম্যাটের ক্রিকেটেই অস্ট্রেলিয়া রাজত্ব করেছে। প্রতিপক্ষ দলগুলো এই সময়টাতে কোনোরকম মানসম্মান নিয়ে বাচতে পারলেই বর্তে যেত।

এই ধরনের দলগুলোকে কোনো দলের পক্ষে হারানো খুবই কঠিন ছিল। তবে খেলাধুলায় মাঝে মাঝে কোনো কোনো খেলোয়াড়ের এমন দিনও আসে, যেদিন বাকি সবাইকে ছাপিয়ে সেই খেলোয়াড়টা পারফরম্যান্স দিয়ে সবার নজর কেড়ে নেন। প্রবল প্রতাপশালী দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়া দলকেও মাঝে মাঝে তাই থামতে হয়েছে শচীন-লারার সেঞ্চুরি কিংবা শোয়েব আখতার-অনিল কুম্বলে এবং অন্য কোনো বোলারের ভয়ংকর কোনো স্পেলের সামনে।  

Image Credit: Alexander Hassenstein/Getty Images

চলতি মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখ রয়েছে এমন আগুনঝরা ফর্মে। চলতি মৌসুমে একমাত্র দল হিসেবে প্রতিটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে মিউনিখ। টুর্নামেন্টে সবচাইতে বেশি গোল (৪২টি) করেছে তারা, সেটাও দ্বিতীয় স্থানে থাকা পিএসজির চাইতে বিশাল ব্যবধানে (২৫টি) এগিয়ে। অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন সবসময়ই বড় দল। চলতি মৌসুমসহ রিয়াল মাদ্রিদ (১৬)-এর পর সর্বোচ্চ ফাইনাল বায়ার্নই (১১) খেলেছে। একমাত্র এসি মিলানই (১১) তাদের সমানসংখ্যক ফাইনাল খেলতে পেরেছে।

তাছাড়া, মেসি-রোনালদোর আগমনের পর ২০০৯ সাল থেকে চলতি আসর পর্যন্ত মাদ্রিদের (৪) সাথেই যৌথভাবে সবচাইতে বেশি ফাইনাল খেলছে বায়ার্ন। ঐতিহ্য, আভিজাত্য কিংবা চলতি ফর্ম – কোনোভাবেই বায়ার্ন মিউনিখকে পেছনে রাখার কোনো সুযোগ নেই।

২.

Image Credit: Catherine Ivill/Getty Images

এই দলটাকে কি প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলা পিএসজি টক্কর দিতে পারবে? কেবলমাত্র দল হিসেবে বায়ার্নকে আটকানোটা খুবই কঠিন। তবে দল হিসেবে খেলার পাশাপাশি যদি কোনো খেলোয়াড় একক নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেন, তাহলে জয় পাওয়াটা খুবই সম্ভব।

তাহলে প্রশ্ন, তেমন কোনো খেলোয়াড় কি পিএসজিতে রয়েছে?

খুঁজে দেখলে পাওয়া যায়, পিএসজিতে অন্তত তিনজন খেলোয়াড় আছেন, যারা কি না নিজেদের দিনে যেকোনো প্রতিপক্ষকেই উড়িয়ে দিতে পারেন। এবং এরকম বড় উপলক্ষ পেলে তারা নিজেদেরকে আলাদাভাবে সামনে নিয়ে আসেন। এমবাপ্পে গোল করেছেন ২০১৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে, ডি মারিয়া ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে নেইমার যেন ফাইনাল ম্যাচগুলোতে অনন্য।  

৩.

পিএসজি আজ তাকিয়ে থাকবে তাদের দিকেই; Image Credit: David Ramos/Getty Images

ব্রাজিলের হয়ে নেইমার ২০১৩ সালে স্পেনের বিপক্ষে কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে গোল করেছেন এবং ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হয়েছেন। ক্যারিয়ারের একমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা ফাইনালেও (২০১৫) বার্সার হয়ে গোল করেছেন। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের কোপা দেল রে’র ফাইনালেও গোল পেয়েছেন। ২০১৩ সালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে সুপার কোপায় নেইমারের করা অ্যাওয়ে গোলেই জয় পায় বার্সেলোনা। ব্রাজিলের ইতিহাসের একমাত্র অলিম্পিক জয়ে ফাইনালে দলের পক্ষে একমাত্র গোলটিও নেইমারের করা। সান্তোসের হয়ে কোপা লিবার্তোরেসের ফাইনালেও গোল পেয়েছেন নেইমার।

পিএসজির হয়ে এই পর্যন্ত ৮টি শিরোপা জিতেছেন নেইমার। তবে অন্য সবার মতো নেইমারও জানেন যে, এই দিনটির জন্যেই পিএসজি তাকে রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি দিয়ে দলে ভিড়িয়েছে। দলগত সফলতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্জনের জন্যেও এই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাটা যে তার জন্য কতটা জরুরী, সেটা নেইমার নিজেও সম্ভবত জানেন। একটা সময় মেসি-রোনালদোর পর সময়ের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বার্সেলোনা ছাড়ার পর থেকেই যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন।

নিজেকে আবার লাইমলাইটে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আজকের ম্যাচের চাইতে বড় উপলক্ষ নেইমার আর কোথায় পাবেন?

এই ট্রফি জয়ের নেশায় মত্ত হয়েই মাঠে নামবে দুই দল; Image Credit: UEFA

৪.

সমস্যা হচ্ছে, উপরে উল্লেখিত যে বিষয়গুলো আপনি পড়লেন, তার সব কয়টিই কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখ ম্যানেজমেন্টের লোকেরা জানেন। হয়তো এর চাইতে বেশি কিছুই জানেন। তারাও নিশ্চয়ই চাইবেন, আজকের ম্যাচের জন্য এমন কোনো পরিকল্পনা সাজাতে, যাতে করে ফলাফলটা নিজেদের পক্ষে আসে।

তাছাড়া দল হিসেবে খেলা বায়ার্ন মিউনিখের কিছু খেলোয়াড়ও ব্যক্তিগতভাবে ফর্মে আছেন। পুরো মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লেভানডস্কির সামনেও আছে দুটো অপুর্ব সুযোগ। চ্যাম্পিয়নস লিগের আসরে এখন পর্যন্ত কোনো খেলোয়াড়ই পারেননি প্রতিটি ম্যাচে গোল করতে। ফাইনাল ম্যাচে মাত্র ১টি গোল করতে পারলেই এই বিস্ময়কর রেকর্ডটি গড়ে ফেলবেন ‘লণ্ডভন্ডস্কি’। এছাড়া এক আসরে রোনালদোর সর্বোচ্চ গোলের (১৭টি) রেকর্ড ভাঙতে তার প্রয়োজন আর মাত্র (!) ৩টি গোল।

ব্যক্তিগত অর্জনটা সম্পন্ন করতে পারলেই যদি দলকে শিরোপা জয়ের পথে এগিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আর সমস্যা কী!

লেভানডস্কি পারবেন আকাশ ছুঁতে? Image Credit: 2018 DFL/Bundesliga

৫.

তবে সবকিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা দুই দলেরই লড়াই।

এই পর্যন্ত মুখোমুখি হওয়া ৯টি ম্যাচে পিএসজি জয় পেয়েছে ৫টি ম্যাচে, আর বায়ার্ন জয় পেয়েছে ৪টি ম্যাচে। তবে সর্বশেষ দুই ম্যাচে জয় পাওয়া দলটির নাম বায়ার্ন মিউনিখ। হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াইয়ে কে জয়ী হয়, সেটা দেখার জন্য রাত জেগে বসে থাকলে আপনার কষ্টটা যে একেবারে বৃথা যাবে না, সেটা বলে দেওয়াই যায়।

This article is in Bangla language. It is the preview on the UEFA Champions Trophy final, that is going to take place today in Lisbon.

Feature Image: Visionhaus

Related Articles

Exit mobile version