এই প্রজন্মের সেরা গোলরক্ষক কে?
এই প্রশ্নের উত্তরে জিয়ানলুইজি বুফন ও ইকার ক্যাসিয়াসের নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাবে। আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, দুইজনের অর্জনের খাতাই কানায় কানায় পূর্ণ। একজন ইতালির হয়ে বিশ্বজয় করেছেন, অন্যজন স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। দুইজনই ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে গেছেন। তাই এই দুইজনের শ্রেষ্ঠত্বের দ্বৈরথ নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।
তবে একজন গোলরক্ষক আছেন, যিনি এই দুই মহারথীর মতো স্পটলাইট না পেলেও পারফরম্যান্সের দিক থেকে এই দুইজনের থেকে খুব একটা পিছিয়ে থাকতেন না। তিনি চেলসি ও চেক প্রজাতন্ত্রের সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক পিটার চেক।
১৯৮২ সালের ২০শে মে চেক প্রজাতন্ত্রের প্লাজেনে জন্মগ্রহণ করেন পিটার চেক। মাত্র সাত বছর বয়সে স্কোডা প্লাজেনের মাধ্যমে ফুটবলে হাতেখড়ি ঘটে তার। পরবর্তীতে এই ক্লাবটিই ভিক্টোরিয়া প্লাজেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শৈশবে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেই অনেকটা সময় পার করেছেন চেক। পরে অবশ্য নিজের শক্তির জায়গাটা উপলব্ধি করতে পেরে গোলরক্ষক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৯৯ সালে চেক ফার্স্ট লিগের ক্লাব ব্লাসনির হয়ে পেশাদার ফুটবল শুরু করেন, সেখানে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে দুই মৌসুম পরই ঐতিহ্যবাহী চেক ক্লাব স্পার্তা প্রাগে যোগ দেন। ২০০১ সালে টানা ৯০৩ মিনিট ক্লিনশিট অক্ষুণ্ণ রেখে চেক লিগের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েন পিটার চেক। এমন পারফরম্যান্সের কারণে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে তার।
অবশ্য প্রাগে এক মৌসুমের বেশি থাকেননি চেক, আসলে এমন অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর অনেক ইউরোপিয়ান ক্লাবই তাকে দলে নেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ৫.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ফ্রেঞ্চ ক্লাব রেঁনেতে যোগ দেন তিনি। এখানে দুই মৌসুম কাটিয়ে যোগ দেন ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে।
চেলসিতে যোগদানের আগে জাতীয় দলের হয়ে ২০০৪ ইউরোতে দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দেন পিটার চেক। তার এই পারফরম্যান্সে চেক প্রজাতন্ত্র সেই আসরের সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়, তবে সেই আসরের চমক গ্রিসের কাছে সিলভার গোলে হেরে সেখানেই চেকদের ইউরো অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘটে। দল ফাইনালে না উঠলেও অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে পিটার চেক ঠিকই সেই আসরের অলস্টার টিমে জায়গা করে নেন।
এদিকে চেক যখন চেলসিতে যোগদান করেন, তখন দলটির প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক ছিলেন কার্লো কুদিসিনি। কিন্তু প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির সময়ে তিনি কনুইয়ে আঘাত পেলে তৎকালীন চেলসি কোচ জোসে মরিনহো চেককে প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হিসেবে বেছে নেন। প্রিমিয়ার লিগে নিজের অভিষেক ম্যাচে শক্তিশালী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ক্লিনশিট রেখে দারুণভাবে শুরু করেন তিনি।
নিজের প্রথম মৌসুমটা স্বপ্নের মতো কাটে চেকের, পুরো মৌসুমে তিনি গোল হজম করেছিলেন মাত্র পনেরটি! তার এই পারফরম্যান্সে ভর করে সেই আসরের শিরোপা জিতে নেয় চেলসি, আর তিনি জিতে নেন গোল্ডেন গ্লাভস। পরের মৌসুমেও এই পারফরম্যান্স ধরে রাখেন চেক, চেলসিও আবার জিতে নেয় লিগ শিরোপা। আর প্রথমবারের মতো ‘চেক ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার’ জিতে নেন তিনি।
২০০৫-০৬ মৌসুম শেষে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে যান পিটার চেক। প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-০ গোলে শুরুটাও দারুণ করেছিল তার দল। কিন্তু ঘানা ও ইতালির কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় চেকদের। সেই বছরেই তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি আসে। ১৪ অক্টোবর প্রিমিয়ার লিগে রিডিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডার স্টিফেন হান্টের হাঁটুর সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন চেক।
আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে তার জীবন নিয়েও সংশয় দেখা যায়। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তি পেলেও এই ইনজুরির কারণে তাকে তিন মাস মাঠের বাইরে কাটাতে হয়। ২০০৭ সালের ২০ শে জানুয়ারি লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের মাধ্যমে আবারো ফুটবলে ফিরে আসেন চেক। তবে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় মাথায় বিশেষ ধরনের হেডগার্ড পরে খেলতে নামেন তিনি, সাধারণত রাগবি খেলোয়াড়দেরই এই ধরনের হেডগার্ড পরতে দেখা যায়। পরে মাথার যন্ত্রণা পুরোপুরি সেরে গেলেও হেডগার্ড পরার অভ্যাসটি তিনি ছাড়েননি, ক্যারিয়ারের বাকিটা সময় এই হেডগার্ড পরেই প্রতিটি ম্যাচ খেলেছেন।
এমন গুরুতর একটা ইনজুরি থেকে ফেরা সত্ত্বেও নিজের পারফরম্যান্সে সেটার ছাপ পড়তে দেননি চেক, লিগে টানা ৮১০ মিনিট চেলসির গোলবার অক্ষুণ্ণ রাখেন যার পুরস্কারস্বরূপ এপ্রিল মাসে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি।
তবে ২০০৮ সালের অনুশীলনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আবারও দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে যেতে হয় এই গোলরক্ষককে। সেই বছরের এপ্রিলেই উইগানের বিপক্ষে ম্যাচের মাধ্যমে আবার খেলায় ফিরে আসেন তিনি। ২০০৭-০৮ মৌসুমটা চেক ও তার দল চেলসির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে ওই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের জন্য। চেলসির মালিকানা কেনার পর থেকে রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচের স্বপ্ন ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাটা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে নিয়ে আসার, আর সেই স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্বদেশী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালের ১২০ মিনিট শেষ হয় ১-১ গোলের ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে ব্লুজদের শিরোপার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান পিটার চেক। তবে চেলসি অধিনায়ক জন টেরি মাঠে হোঁচট খেয়ে পেনাল্টি মিস করলে শিরোপা জয়ের বড় সুযোগ হাতছাড়া হয় দলটির। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে রেড ডেভিলদেরই জয় হয়, একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে চেলসি।
সেই বছর চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে অস্ট্রিয়া-সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ইউরো খেলেন চেক, তবে আগের আসরের সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি দলটি। গ্রুপপর্বেই বিদায়ঘন্টা বাজে চেক প্রজাতন্ত্রের।
২০০৮-০৯ মৌসুমে তৎকালীন চেলসি কোচ লুই ফেলিপে স্কলারির সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন চেলসির কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়, যেখানে চেক নিজেও ছিলেন। ফলে, সেই মৌসুমে চেলসির লিগ পারফরম্যান্স সুবিধার ছিল না। তবে কার্লো আনচেলত্তির অধীনে পরের মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি, তিন মৌসুম পর আবারও প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে নেয় চেলসি। আর গোল্ডেন গ্লাভস জিতে দলের সেই সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখেন পিটার চেক।
২০১০-১১ মৌসুমে লিগে রানার্সআপ হয় চেলসি, তবে নিজের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের কারণে প্রথমবারের মতো চেলসির বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পিটার চেক। কিন্তু লিগে চেলসির এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে বিশাল এক ধাক্কা আসে ২০১১-১২ মৌসুমে।
নতুন কোচ আন্দ্রে ভিয়াস-বোয়াসের অধীনে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে সেই মৌসুমের শুরু থেকেই লিগে হোঁচট খেতে থাকে চেলসি। ফলে মৌসুমের মাঝপথেই ভিয়াস-বোয়াসকে বরখাস্ত করে রবার্তো ডি মাতেও’কে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয় চেলসি। মাতেও আসার পর পারফরম্যান্স ছকে কিছুটা উন্নতি আসলেও সেই মৌসুমে লিগ টেবিলে শীর্ষ চারে জায়গা পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, পরের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগটা দর্শকসারিতে বসেই দেখতে হবে চেলসিকে।
তবে পৃথিবীতে অসম্ভব বলে যে কিছু নেই, সেই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেটাই যেন আরেকবার প্রমাণ করে দেয়। যে চেলসি লিগে সেবার ষষ্ঠ স্থানে ছিল, সেই দলটিই সবাইকে অবাক করে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চলে যায়। আর তাদের এই পারফরম্যান্সে বড় অবদান রাখছিলেন দলটির গোলরক্ষক পিটার চেক। বিশেষ করে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে নাপোলি ও সেমিফাইনালে গার্দিওলার বার্সার বিপক্ষে চেকের অতিমানব হয়ে ওঠাই চেলসির জয়ের মূল কারণ ছিল।
তবে রূপকথার শেষটা নিজেদের করে নেওয়ার যুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয় লন্ডনের দলটিকে। প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ এমনিতেই তখন আগুনে ফর্মে, সাথে সেবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালটা বায়ার্নের ঘরের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায় অনুষ্ঠিত হওয়াটা মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে চেলসির উপরে আসে।
পর্বতসম বাধার কথা জেনেই ফাইনাল খেলতে নামে চেলসি, খেলার শুরু থেকেই তাদের রক্ষণসীমানায় আক্রমণের ফোয়ারা বইয়ে দেয় বায়ার্ন মিউনিখ আর অতন্দ্র প্রহরীর মতো সেই আক্রমণ নস্যাৎ করতে থাকেন চেক। তবে চেকের গড়া সেই প্রাচীর ভেঙে খেলার ৮৩ মিনিটে গোল আদায় করে নেন থমাস মুলার। কিন্তু ৮৮ মিনিটে দ্রগবার গোলে শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখে চেলসি, খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে আরো বড় নাটকের দেখা মেলে। যে দ্রগবা অন্তিম মুহূর্তে গোল করে চেলসির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, সেই দ্রগবাই ডি-বক্সে বায়ার্নের রিবেরিকে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দিয়ে বসেন। এই দফায় চেলসিকে বাঁচিয়ে দেন পিটার চেক, রোবেনের নেওয়া পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে খেলা নিয়ে যান টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারের শুরুতেও বেকায়দায় পড়ে যায় চেলসি, প্রথম শটে গোল করতে ব্যর্থ হুয়ান মাতা। এই অবস্থায় চেক অনবদ্য কিছু না করলে চেলসির স্বপ্নপূরণকে অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। তবে অনবদ্য কাজটি করার পথই বেছে নিলেন চেক, বায়ার্নের চতুর্থ ও পঞ্চম পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দিয়ে চেলসিকে জয়ের দোরগড়ায় পৌঁছে দেন তিনি। শেষ শটে গোল করে বাকি কাজটুকু সেরে ফেলেন দিদিয়ের দ্রগবা।
পুরো অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনা তখন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে, এভাবে চেলসির কাছে তাদের দল হেরে যাবে, সেটা বিশ্বাস করতেও যেন কষ্ট হচ্ছিলো। অন্যদিকে, নিজেদের ক্লাব ইতিহাসের সেরা অর্জনে চেলসির খেলোয়াড়েরা তখন বাঁধনহারা উল্লাসে ব্যস্ত। চার বছর আগে মস্কোর সেই ফাইনালের দুঃস্মৃতি দূর করে এমন এক অর্জনের বড় কারিগর ছিলেন পিটার চেক, তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়।
এই সাফল্যের সুখস্মৃতি অবশ্য বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি ব্লুজরা, পরের আসরেই চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ে যায় চেকের দল। তবে সেই মৌসুমে চেলসির হয়ে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতে নেন চেক। ২০১৩-১৪ মৌসুমে চেলসি লিগ শিরোপা না জিতলেও চেক ঠিকই জিতে নেন গোল্ডেন গ্লাভসের পুরস্কার।
দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, গোল্ডেন গ্লাভস জেতার পরের মৌসুমেই চেকের ক্যারিয়ারের গতিপথ অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়। তার বদলে থিবো কোর্তোয়াকে চেলসির প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হিসেবে বেছে নেন তৎকালীন চেলসি বস জোসে মরিনহো। যে গোলবার সামলানোর অধিকার শুধু তারই ছিল, সেখানে আরেকজনকে রাজত্ব করতে দেখাটা তার জন্য সুখকর ছিল না। তাই চেলসির সাথে প্রায় এক যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করে ২০১৫ সালে আর্সেনালে যোগ দেন চেক।
আর্সেনালে যোগ দেওয়ার পর চেকের ক্যারিয়ারের শেষের শুরু হয়ে যায়। পুরনো ক্লাবের মায়া কাটাতে না পারা, কিংবা বয়সের ভারে ফর্ম হারিয়ে ফেলা – কারণ যা-ই হোক না কেন, আর্সেনালে তার পারফরম্যান্স বেশ বিবর্ণ ছিল। এরই মাঝে ২০১৬ সালের ৮ জুলাই জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন পিটার চেক। অবসরের আগে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে তিনি খেলেছেন ১২৪টি ম্যাচ, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এদিকে ২০১৮-১৯ মৌসুমে আর্সেনালে যোগ দেন তরুণ জার্মান গোলরক্ষক বার্নাড লেনো। মৌসুমের শুরুতেই হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ায় লেনোর কাছে জায়গা হারান চেক। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এই মৌসুম শেষেই অবসরের ঘোষণা দেন এই বর্ষীয়ান গোলরক্ষক। এই মৌসুমের ইউরোপা লিগ ফাইনালই হতে যাচ্ছে তার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
বিদায়বেলায় পিছনে ফিরে তাকালে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব বেশি অপূর্ণতা থাকার কথা নয় পিটার চেকের। দীর্ঘ সময়জুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন দারুণ এক উচ্চতায়। চেকের ব্যাপারে তার সাবেক কোচ জোসে মরিনহো বলেন,
‘সেই সময়ে তরুণ চেককে আমি চেলসির নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক হিসেবে ঠিক করেছিলাম, এটা ভাবলে এখন আমার গর্ব হয়। সেদিনের পর থেকে নিজের পেশাদারিত্ব, পারফরম্যান্স ও সাফল্য দিয়ে অন্যরকম এক ইতিহাস গড়েছে সে।’
সমকালীন আরেক সেরা গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস তো চেককে সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন।
তবে ক্যাসিয়াস ও বুফনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নিয়ে মাতামাতির কারণে মিডিয়ার কাছ থেকে নিজের প্রাপ্য জায়গাটা কখনোই সেভাবে পাননি পিটার চেক। অথচ পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে বাকি দুইজনের তুলনায় চেক কোনো অংশেই কম ধারাবাহিক ছিলেন না। আসলে নিজের জাতীয় দল চেক প্রজাতন্ত্রের নাজুক পারফরম্যান্স তাকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিয়েছে। সেই যা-ই হোক, অন্তত বিদায়বেলায় যেন তিনি তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পান, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।