বেলজিয়ামের ‘সোনালী প্রজন্ম’ নিয়ে গত ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকেই বেলজিয়াম সমর্থকসহ আরও অনেকের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। সত্যি বলতে, বেলজিয়াম দলটিরও যেকোনো শিরোপা জয়ের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে দৌড় থেমে যায় সেবারের ‘ডার্ক হর্স’ বেলজিয়ামের। বিশ্বকাপের পর ইউরো’১৬ তে আবারো অন্যতম শক্তিশালী দল নিয়ে অংশগ্রহণ করলেও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল ওয়েলসের বিপক্ষে হেরে আবারও কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে যায় বেলজিয়ামের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন।
সবকিছু বিবেচনায় ২০১৪ সালের বেলজিয়াম দল ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে বিবেচিত হলেও চার বছর পর আরও পরিপক্ক ও শক্তিশালী এই বেলজিয়ামকে হয়ত অনেকেই আর ‘ডার্ক হর্স’ মানতে চাইবে না। আসলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বেলজিয়ামের পারফর্মেন্স, দলে তারকা খেলোয়াড়দের সমাবেশ ও বিশ্বকাপ আসরকে যদি দারুণ অনিশ্চয়তার মাপকাঠিতে বিবেচনা করা হয়, তাহলে সব মিলিয়ে বেলজিয়াম এবারের আসরে অন্যতম ফেভারিট দল। ‘ডার্ক হর্স’ নাকি ফেভারিট এই প্রশ্নটা আপাতত তোলা থাকুক, কারণ উত্তরের অপেক্ষা আর অল্প কিছু দিনের।
বেলজিয়ামের ‘সোনালি প্রজন্ম’ ও একরাশ হতাশা কিংবা নতুন প্রত্যাশা
বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের অর্জন তেমন বলার মতো নয়। বিশকাপে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন ১৯৮৬ সালের আসরে চতুর্থ হওয়া এবং গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে বেলজিয়াম প্রত্যাশানুযায়ী গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পা রাখে নক আউট পর্বের শেষ ষোলোতে, সেখানে দলটির প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ী বেলজিয়াম কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো শক্তিশালী আর্জেন্টিনার। ফুটবল বিশ্বকাপের দুবারের চ্যাম্পিয়ন ও ঐতিহ্যবাহী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বেলজিয়ামের ১-০ গোলের পরাজয় হয়তো খুব একটা দাগ কাটেনি বেলজিয়ানদের মনে। কিন্তু ইউরো ‘১৬ আসরে একই পর্যায় থেকে ওয়েলসের বিপক্ষে ৩-১ গোলের পরাজয় বেলজিয়াম ও সমর্থকদের জন্য ছিল বড় রকমের ধাক্কা।
গত বিশ্বকাপ ও ইউরোতে বেলজিয়ামের পারফর্মেন্স একপাশে রেখে আবারও সময় এসেছে সামনে চোখ রাখার, মিশন রাশিয়া বিশ্বকাপ। জি গ্রুপে বেলজিয়ামকে খেলতে হবে পানামা, তিউনিশিয়ার মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে এবং এই গ্রুপে একমাত্র শক্তিশালী প্রতিপক্ষ শিরোপার অন্যতম দাবিদার ইংল্যান্ড।
রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্তিনেজ নিয়ে যাচ্ছেন অভিজ্ঞ ও তরুণ খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত এক দল, যাদের অনেকেই ইউরোপের সেরা লিগে খেলে থাকেন এবং সেখানে তারা নিয়মিত পারফর্মার। ২৩ জনের মধ্যে কমপক্ষে ১৮ জন খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপ ‘১৪ কিংবা ইউরো ‘১৬ আসরের বেলজিয়াম দলে ছিলেন। বয়স বিবেচনায় দলটির মূল খেলোয়াড়েরা বেশ কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত একসাথে খেলে আসছে এবং বলতে গেলে এই ‘সোনালি প্রজন্মের’ বিশ্বকাপ জয়ের সবচেয়ে ভালো সুযোগ এবারের টুর্নামেন্ট। কারণ চার বছর অনেক সময় ও কাতার বিশ্বকাপের পূর্বেই তাদের অনেক খেলোয়াড় নিজেদের সেরা সময় পার করে ফেলবে। তাছাড়া এই প্রজন্মের পর আবার কবে নাগাদ এরকম শক্তিশালী দল বেলজিয়াম পেতে যাচ্ছে, এই ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বেলজিয়াম ছিল অপ্রতিরোধ্য, ১০ ম্যাচের একটিতেও না হেরে জায়গা করে নিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। রেকর্ড ৯টি জয় ও মাত্র ১টি ড্র’তে দুর্দান্ত বেলজিয়াম গোল করেছে ৪৩ টি ও হজম করেছে মাত্র ৬ গোল! গ্রিসের বিপক্ষে ড্র এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে নাটকীয় জয় ব্যতীত বাকি সব ম্যাচেই বেলজিয়াম প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, আক্রমণের পাশাপাশি দলটির রক্ষণভাগও যথেষ্ট শক্তিশালী। বাছাইপর্বে দলটির মূল স্ট্রাইকার লুকাকু করেছেন ১১ গোল এবং আক্রমণভাগে চেলসির তারকা হ্যাজার্ডও খেলেছেন সামর্থের সবটুকু দিয়ে। ৬ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট করে ক্লাবের মতো জাতীয় দলেও যে তিনি সমান কার্যকর তা প্রমাণ করেছেন ইতিমধ্যে। হ্যাজার্ডের সাথে দলে রয়েছেন তার ভাই দহগান হ্যাজার্ডও। তাছাড়া বেলজিয়াম দলের আরেক মধ্যমণি কেভিন ডি ব্রুইনা রয়েছেন তার সেরা ফর্মে, ম্যানচেস্টার সিটির লিগ জয়ের মৌসুমে তার অসাধারণ পারফর্মেন্স বিশ্বকাপেও দেখতে চাইবেন কোচ।
বেলজিয়ামের ২৩ সদস্যের দল নিয়ে তেমন একটা খুঁত বা বিতর্ক না থাকলেও, রোমায় অসাধারণ ফর্মে থাকা তারকা মিডফিল্ডার নাইনগোলানকে দলে না নেওয়ার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন কোচ মার্তিনেজ। অবশ্য, তারকা ঠাসা বেলজিয়াম দল কতটা ভালো করতে যাচ্ছে, তা অনেকটা নির্ভর করবে কোচ মার্তিনেজের কৌশলের উপর এবং দুর্দান্ত সব খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে একক ইউনিটের শক্তিশালী দল হিসেবে কতটা গড়ে তুলতে পেরেছেন তার উপর।
বেলজিয়াম দল
গোলরক্ষক: মিনিওলে, কোয়েন, কর্ত্যুয়া।
ডিফেন্ডার: আল্ডারওয়েল্ড, বোয়াটা, কোম্পানি, মুনিয়ের, ভার্মালেন, ভার্তোগেন।
মিডফিল্ডার: কারাস্কো, ডি ব্রুইনা, মুসা দেম্বেলে, ডেনডনকার, ফেল্লাইনি, ইডেন হ্যাজার্ড, দহগান হ্যাজার্ড, ইয়ানুযাই, মের্তেনস, তিলেমানস, উইটসেল।
ফরোয়ার্ড: বাতুসুয়াই, লুকাকু, সাদলি।
কেমন হবে বেলজিয়ামের খেলার ধরণ
কোচ মার্তিনেজ বেলজিয়ামকে খুব সম্ভবত খেলাবেন ৩-৪-৩ ফর্মেশনে। কোচের এই ফর্মেশন অনুযায়ী সম্ভাব্য একাদশ বিবেচনা করলে দেখা যাবে, গোলরক্ষক কর্ত্যুয়ার সামনে থাকবে আল্ডারওয়েল্ড, কোম্পানি ও ভার্তোগেন। আক্রমণ ও রক্ষণের সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে উইংব্যাক হিসেবে ডান ও বাম উইংব্যাক সামাল দেওয়ার দায়িত্ব বর্তাতে পারে যথাক্রমে মুনিয়ের ও কারাস্কোর উপর। মিডফিল্ড সামলানোর প্রধান দায়িত্বটা থাকবে মূলত ডি ব্রুইনার উপরে, সাথে থাকতে পারে উইটসেল। তাছাড়া মাঝমাঠে প্রয়োজন মতো নিয়মিত বদলি হিসেবে নামতে পারেন ফেল্লাইনি। কোচ মার্তিনেজ চাইছেন ডি ব্রুইনা আধুনিক প্লে মেকারের ভূমিকা পালন করুক। তিনি মনে করেন, এতে দলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে এবং এই পরিকল্পনার কার্যকরিতা তিনি বাছাইপর্বেই পেয়েছেন।
উইং কিংবা ১০ নম্বর হিসেবে আগে খেললেও, মার্তিনেজের পরিকল্পনা অনুসারে ব্রুইনার নতুন ভূমিকা হ্যাজার্ডকে আক্রমণভাগে বাড়তি সুবিধা দেবে। হ্যাজার্ডের গোল করা ও করানোর সাবলীল সামর্থ্যের কারণে ও বাম থেকে আক্রমণভাগের কেন্দ্রে কাট-ইন করে খেলার জন্য তার কিছুটা বাড়তি জায়গা দরকার, যা ব্রুইনার ভূমিকার এবং কোচের পরিকল্পনার সাথে অনেকটা মানিয়ে যাবে। লেফট উইং পজিশনে হ্যাজার্ড এবং তার ডানপাশে থাকতে পারে মের্তেন্স। নাপোলিতে মের্তেন্স অনেকটা ডিপ স্ট্রাইকার পজিশনে খেললেও জাতীয় দলে তাকে সম্ভবত নামতে হবে রাইট উইং পজিশনে এবং এই ভূমিকায় মের্তেন্স কত কার্যকরী হবেন তা সময়ই বলে দিবে। এই দুজনের সামনে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবে ইউনাইটেড তারকা লুকাকু। লুকাকুর বদলি হিসেবে মার্তিনেজের রয়েছে বাতসুয়াই ও নাসের সাদলি, প্রয়োজনে যাদের উপর যথেষ্ট ভরসা রাখতে পারবেন বেলজিয়াম কোচ।
ফর্মেশন ও বাছাইপর্বে বেলজিয়ামের ৪৩ গোলের পরিসংখ্যান দেখে সহজেই বলা যায় যে, আক্রমণাত্মকভাবে খেলবে দলটি। বাছাইপর্বের প্রতিপক্ষের সাথে বিশ্বকাপের প্রতিপক্ষ তুলনা করলে, বেলজিয়ামের রক্ষণভাগ এখন পর্যন্ত তেমন একটা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়নি। রক্ষণে তাদের কিছুটা সমস্যায় ফেলতে পারে কারাস্কোর রক্ষণের দায়িত্ব পালনে কিছুটা হিমশিম খাওয়া। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, উইং ব্যাকরা আক্রমণে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের প্রতি-আক্রমণের শিকার হলে দলটির রক্ষণ অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে যাবে। এই অবস্থায় ভরসা অসাধারণ ফর্মে থাকা গোলরক্ষক কর্ত্যুয়া এবং তার সামনের ডিফেন্ডারত্রয়ী।
উল্লেখিত পরিস্থিতির সাথে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে বেলজিয়াম যখন কৌশলগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা দলের মুখোমুখি হবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, গত নভেম্বরে মেক্সিকোর বিপক্ষে তাদের ৩-৩ ফলাফলের ম্যাচটির কথা। ম্যাচটিতে মেক্সিকোর বিপক্ষে দলটি নিজেদের স্বভাবসুলভ প্রাধান্য বজায় রাখতে পারেনি এবং সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে মার্তিনেজের আক্রমণাত্মক কৌশলের উইং ব্যাক নিয়েই। ম্যাচ শেষে ব্রুইনা তাদের অবস্থার বর্ণনা করেছেন এভাবে, “মেক্সিকো কৌশলগতভাবে আমাদের চেয়ে ভালো ছিল। তারা আমাদের উইং ব্যাকদের চাপে রেখেছিলো এবং আমরা মাঝমাঠে সাঁতরে বেড়িয়েছি- এখানে সবসময় পাঁচজনের বিপরীতে সাতজন ছিল।”
মূল খেলোয়াড়
পুরো বেলজিয়াম দল তারকাসমৃদ্ধ হলেও, দলটির বিশ্বকাপ যাত্রার অনেকটা নির্ভর করবে হ্যাজার্ড, ব্রুইনা, লুকাকু, ভার্তোগেন ও কর্ত্যুয়ার উপরে। চেলসিতে হ্যাজার্ডের এই মৌসুমে আশানুরুপ না হলেও বাছাইপর্বে জাতীয় দলের হয়ে অসাধারণ খেলেছেন। মাঝমাঠ থেকে ব্রুইনা ও গোলমুখে লুকাকুর সাথে তার স্বাভাবিক বোঝাপড়া ঠিক থাকলে নিজেদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেগ পেতে হবে না দলটির। প্রতিপক্ষের অর্ধে এই উইঙ্গারের গতি, ড্রিবলিং এবং স্কিলের মিশেলে গোলের সুযোগ তৈরি ও নিজেই গোল করার অসাধারণ সামর্থ্য রয়েছে হ্যাজার্ডের।
হ্যাজার্ডের সাথে মূল মঞ্চের আলোকিত মুখ অবশ্যই ডি ব্রুইনা, বিশ্বকাপে তিনি নামবেন সিটির হয়ে অসাধারণ মৌসুম কাটানো প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে। প্লে মেকারের ভূমিকায় তার পারফর্মেন্সের দিকে আবারও তাকিয়ে থাকবে সমর্থকেরা। নিজের সেরা ফর্ম ধরে রাখলে এবং রক্ষণ ভেদ করা অসাধারণ সব গোলের সুযোগ তৈরি করা ব্রুইনাকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে যেকোনো দলের রক্ষণভাগের।
হ্যাজার্ড, ব্রুইনা, মের্তেন্সের পারফর্মেন্সের সাফল্যকে পূর্ণতা দেওয়ার গুরুদায়িত্ব থাকবে দলের স্ট্রাইকার লুকাকুর উপরে। বাছাইপর্বের মতো ফর্ম ধরে রাখতে পারলে তো কথাই নেই, কিন্তু যদি গোলমুখে নিস্প্রভ লুকাকুকে দেখা যায়, তাহলে বাড়তি চাপ পড়বে মাঝমাঠ থেকে রক্ষণ পর্যন্ত।
টটেনহ্যাম সতীর্থ আল্ডারওয়েল্ডের সাথে রক্ষণের দ্বায়িত্বে বড় ভূমিকা রাখতে হবে ভার্তোগেনকে, কেননা কোম্পানির শতভাগ ইনজুরিমুক্ত হওয়া না হওয়ার জটিলতায় কিছুটা শংকা থাকতে পারে বেলজিয়াম রক্ষণভাগে। প্রিমিয়ার লিগে আল্ডারওয়েল্ডের সাথে একই দলে খেলায় একটা ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে দুজনের মধ্যে, যা বাড়তি সুবিধা দিবে তাদের।
চমক দেখাতে পারেন যে খেলোয়াড়
পিএসজিতে নিয়মিত একাদশে না খেলে, বদলি খেলোয়াড় হয়ে খেললেও মুনিয়ের জাতীয় দলে কোচের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন তার রাইট উইং ব্যাক ভূমিকায়। বাছাইপর্বে জিব্রাল্টারের বিপক্ষে ৩ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করে দেখিয়েছিলেন অতিমানবীয় পারফর্মেন্স। বাছাইপর্বে দেশের হয়ে তিনি করেছেন ৫ গোল ও অ্যাসিস্ট সংখ্যা মোট ৭টি। উইং ব্যাক হিসেবে তার পারফর্মেন্স হয়তো ভিন্ন আঙ্গিকে সার্থকতা বিচার করে দিতে পারে মার্তিনেজের ৩-৪-৩ ফর্মেশনের।
বেলজিয়ামের গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোর সূচী
১৮ জুন, রাত ০৯:০০: পানামা
২৩ জুন, সন্ধ্যা ০৬:০০: তিউনিশিয়া
২৮ জুন, রাত ১২:০০: ইংল্যান্ড
রাশিয়া বিশ্বকাপে কতদূর যেতে পারে বেলজিয়াম
জি গ্রুপে দলটির ও প্রতিপক্ষের সামর্থ্য ও শক্তির বিচারে নকআউট পর্বে অবশ্যই যেতে হবে বেলজিয়ামকে। কে হবে এই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন? যেহেতু এই গ্রুপে বেলজিয়ামের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ইংল্যান্ড, সেহেতু গ্রুপের সেরা কে তা নির্ভর করবে তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ের উপর। রাউন্ড ১৬-তে বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ হতে পারে গ্রুপ এইচের কলম্বিয়া বা পোল্যান্ড, যদি তাদের কেউ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স আপ হয়। সাধারণ হিসাব মতে বেলজিয়াম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে এবং এই পর্ব থেকেই অগ্নিপরীক্ষা শুরু হবে বেলজিয়ামের। ব্রাজিল ও বেলজিয়াম উভয়েই যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে পা রাখে তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। শক্তি ও সামর্থ্যের বিচারের হিসাব মিলিয়ে বেলজিয়াম কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখার পর, এখন ‘যদি’, বিশ্বকাপের চমক ও অনিশ্চয়তার সাহায্য নিয়ে তাদের পরবর্তী ম্যাচগুলো বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।
বেলজিয়াম যদি কোয়ার্টার ফাইনালে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে পরাজিত করতে পারে, তাহলে সেমিফাইনালে তারা মুখোমুখি হতে পারে ফ্রান্স কিংবা উরুগুয়ের। সত্যি বলতে, বেলজিয়াম যদি ব্রাজিলকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে পা রাখে, তাহলে এবারে তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা তৈরি হবে। যা-ই হোক, এই বেলজিয়ামের অন্তত কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত অনায়াসে পৌঁছানো উচিত।
বিশ্বকাপ হলো সত্যিকার অর্থেই ‘চমকের বাক্স’ এবং প্রতিবারই কোনো না কোনো চমক এই আসর থেকে গোটা ফুটবল বিশ্ব পেয়ে থাকে। বেলজিয়াম তাদের ‘ডার্ক হর্স’ তকমা দূর করে নিজেদের নতুন করে পরিচিত করিয়ে দিতে পারবে কি? নাকি এই ‘ডার্ক হর্স’ উপাধির সময়কাল আরও দীর্ঘায়িত করতে যাচ্ছে তারা? এখন সময়ের অপেক্ষা।
ফিচার ইমেজ- Getty Images